এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৭

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৭
তানিশা সুলতানা

বিল না মিটিয়েই গটগট পায়ে স্থান ত্যাগ করে তারেক। চায়ের দোকানদারের মিটমিট হাসি গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছিলো। একটা ছেলে কতোটা বেয়াদব হলো এভাবে পাবলিক প্লেসে মানসম্মান নিয়ে টানাটানি করতে পারে?
তারেক হতাশ হয়। দুনিয়ায় এর ছেলে ছিলো না? এই ছেলেকে সে জীবনেও মানবে না। দরকার পড়লে মেয়ে কে টে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিবে তবুও এই ছেলের কাছে দিবে না।
অর্ণব নিজ পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে হাজার টাকার দুটো নোট গুঁজে দেয় চা ওয়ালার হাতে। এবং বলে
“আমার শালি হয়েছে। মিষ্টি খেও।

বাড়ির সামনেই তামিম ফোন হাতে দাঁড়িয়ে আছে। খানিকটা দূরে রিতি নামের মেয়েটা। দুজনই একবার ফোনের স্কিনে তাকাচ্ছে তো আরেকটা দুজন দুজনের দিকে তাকাচ্ছে। তারেক ভ্রু কুচকে তাকায়৷ এখানে হচ্ছে টা কি?
ঠিক তখনই তারেকের আঁখি পল্লব বড়বড় হয়ে যায়। তামিম দুই আঙুলে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দেই আঙুল রিতির দিকে তাক করে। এটাকে কি বলে? কিসস?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শুকনো ঢোক গিলে তারেক। নিজ কপালে হাত বুলিয়ে এগিয়ে যায় তামিমের পানে৷ প্রথমেই ফোনটা টেনে নেয়৷ দৃষ্টি রাখে ফোনের স্কিনে। স্পষ্ট লেখা দেখতে পায় রিতি লিখেছে
“বাবু তুমি পিএসসি পাস করলেই আমরা বেবি নিয়ে ফেলবো”
বিষম খান তারেক। রিতি ততক্ষণে দৌড়ে পালিয়েছে। তামিম চোরের মতো এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কোন দিক দিয়ে দৌড় দিলে বাবা ধরতে পারবে না?

কিন্তু একটু পরে তো ঠিকই বাড়িতে ফিরতে হবে। তখন তো উত্তমমধ্যম দিবে।
বুদ্ধি মানের কাজ হবে এখনই ঝামেলা মিটিয়ে ফেলা। তাই আলতো হেসে তামিম বলে
“আসলে বাবা বয়স তো কম হলো না৷ একটু প্ল্যানিং করছিলাম আর কি।
তারেক তামিমের গোলগাল মুখ খানায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে
“কতো হলো তোর বয়স?
” এই তো ১১ বছর। তিন মাস পরপ বারো হবে।
তারেক তামিমের কান টেনে ধরে।

“১১ বছর বয়সেই বাচ্চার প্ল্যানিং করছো তুমিৃ তোমাকে আমি আজকে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো।
তামিম কৌশলে বাবার হাত ছাড়িয়ে নেয়। ফিসফিস করে বলে
“বাবা রিতি দেখছে তো। বাড়িতে গিয়ে যত খুশি মারিও। এখন হবু বউমার সামনে মানসম্মান নষ্ট করিও না। অনেক তেল দিয়ে পটিয়েছি।
তারেক দাঁতে দাঁত চেপে পায়ের জুতো খুলে নেয়। তামিম ” ওরেহহহ নানির মাইয়া। আমারে বাঁচা” বলেই ভৌ দৌড় দেয়৷
তারেক হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে
“এমপি বাড়ির বাঁদর আমার ঘরে কি করে আসলো খোদা?”

বরাবরই পরিবারের সকলের সামনে অর্ণব চৌধুরী গম্ভীর। এই যে চোখে চমশা পড়ে পায়ের ওপর পা তুলে ল্যাপটপে কিছু একটা দেখছে৷
পাশেই সকলেই গল্প করছে চেঁচামেচি করছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। বরং ক্ষণে ক্ষণে গম্ভীর স্বরে অথৈকে আদেশ করছে
“আস্তে কথা বল”
অথৈ তার কথার কোনো দামই দিচ্ছে না।
নিধি এবং নয়না এসেছে আর্থির বিয়ে উপলক্ষে। বিয়ে না মেটা ওবদি ওরা যাবে না। আদিল এবং সিনথিয়াও এসেছে। পড়ালেখা শেষ করে ভালো একটা কোম্পানিতে জব পেয়েছে আদিল। এখন আবার নতুন করে মেয়ে খোঁজা হচ্ছে। সুমির আফসোস এখনো মেটে নি৷ তন্নিকে মারাক্তক ভালো লেগেছিলো কি না?
কথায় কথায় সুমি বেগম বলে ওঠে

“অথৈ তন্নি মেয়েটার সাথে কথা বলিস?
অথৈ এক পলক ভাইয়ের দিকে তাকায়। কিছু বলবে বলে হা করে তখনই আদিল বলে ওঠে
” বলে না। আমার সাথে দেখা হয়েছিলো।
অর্ণবের মনোযোগ ল্যাপটপ থেকে বেরিয়ে গিয়েছে তন্নি নামটা শোনার পরপরই। এখন আদিলের সাথে দেখা হয়েছিলো শুনে রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে।
আশা বেগম সকলের জন্য মুড়ি মেখে এনেছে। মুড়ির থালা সকলেী মাঝখানে রেখে তিনিও বসে পড়ে সুমি বেগমের পাশে এবং একটু বিরক্ত হয়েই বলে
“ওই মেয়ের নাম আর নিস না। সে অতীত। ভুলে যাওয়াই ভালো৷

আর্থি মাকে সামর্থন করে বলে
” হ্যাঁ সেটাই। বাদ দাও ওর কথা।
সুমি বেগম এক মুঠো মুড়ি হাতে তুলে নিয়ে আফসোসের সুরে বলে
“বাদ দিতে পারি না তো আমি। এখনো চোখ গেঁড়ে আছে আমার। কি সুন্দর মেয়ে। আমার ঘরে তুলতে পারলে সংসার আলোকিত হতো। কিন্তু তোর ছেলে তো সবটা নষ্ট করে দিলো।
হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ফেলে অর্ণব৷ নয়না বলে ওঠে
“এখন আবার প্রস্তাব দিতে পারেন তো৷ তন্নি সিঙ্গেল রয়েছে।
কথা খানা সুমির পছন্দ হলো বেশ। আদিলের পানে তাকায়। মৃদু হাসছে ছেলেটা৷ পরমুহূর্তেই অর্ণবের পানে তাকায়। এবং প্রশ্ন করে

” তোর কেনো আপত্তি আছে অর্ণব? আবার ঝামেলা পাকাবি না তো?
অর্ণব শব্দ করে ল্যাপটপ বন্ধ করে ফেলে। পূর্ণ দৃষ্টিতে সুমি বেগমের দিকে তাকায়।
“সে আমার বউ। তাকে ডিভোর্স দেই নি আমি। আর জীবনে দিবোও না। তাকে আমি না পেলে খু ন করে ফেলবো। তবুও অন্য কারো হতে দিবো না। মাইন্ড ইট
নিজ বক্তব্য শেষ করে চলে যায় অর্ণব। আদিল ভেংচি কারে। নিধির বুক কাঁপে। তাকিয়ে থাকে শূন্যে। “অর্ণবকে পাওয়ার স্বপ্ন কি পূরণ হবে না?”
“দেখলি আশা? তোর ছেলের কথা শুনলি?
অথৈ বিরক্ত স্বরে বলে
“তুমি শুধু তোমার ছেলের জন্য পছন্দ করেছিলে। চার বছর পেরুলো ভুলতে পারলে না। আমার দাভাই ১০ বছর হলো তাকে নিয়ে সংসার সাজানোর স্বপ্ন দেখেছে৷ ও কি করে ভুলবে খালামনি?
বুঝে শুনে কথা বলো না তুমি।

সাথীকে আশিক বিয়ে করবে এমন খবর শোনার পরে খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে তন্নি। অনাথ অসহায় মেয়েকে আশিক কেনো বিয়ে করছে? দয়া দেখাচ্ছে?
তৈরি হতে হতে নিজ মনে আওড়াতে থাকে তন্নি। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে। কাল ইনকোর্স পরিক্ষাও রয়েছে। সব পেছনে ফেলে যেতেই হচ্ছে সাথীর বিয়েতে। মেয়েটা এখন তন্নির দায়িত্বে রয়েছে। তার ভালো মন্দ দেখার অধিকারও তন্নির।
মেরুন রংয়ের শাড়ি তন্নির ফর্সা গায়ে বেশ ফুটে উঠেছে। হাঁটু ওবদি লম্বা চুল গুলো খোলাই রেখেছে। মুখে হালকা পাউডার এবং ঠোঁটে লিপস্টিক। ব্যাস তন্নির সাজ কমপ্লিট। তামিম বেশ বায়না করছিলো ওর সাথে যাবে। কিন্তু তন্নি নিবে না। ভাড়ি বজ্জাত ছেলে। কি থেকে কি করবে তার কোনো হদিশ নেই।
তারেক রহমান আজকে কোর্টে যায় নি। উঠোনে বসে পেপার পড়ছে। তন্নি পার্স হাতে নিয়ে বাবার সামনে এসে দাঁড়ায়

” বাবা যাচ্ছি।
তারেক পেপার থেকে নজর ফিরিয়ে মেয়ের পানে তাকায়।
“কোনো সমস্যা হলপ আমায় কল করবে। টাকা নিয়েছো?
” হ্যাঁ বাবা।
“মেয়েটাকে ভালো একটা শাড়ি কিনে দিও। আর আশিকের মতিগতি ভালো না লাগে তখুনি আমায় কল করবে।
” ঠিক আছে
বাবার সাথে কথা শেষ করে মেইন গেইট পেরিয়ে বের হয়।
রিকশা কিংবা অটো কিছুই নেই৷ অগত্য তন্নি এগোতে থাকে বাজারের উদ্দেশ্যে। বাজারপ অহরহ গাড়ি বসে আছে যাত্রী নেই। অথচ রাস্তা ঘাটে গাড়ি পাওয়া মুশকিল।
মেইন রোডে উঠতেই চোখে পড়ে কালো রংয়ের বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের একখানা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। রোদের আলোতে কালো রং চিকচিক করছে।
তন্নি মনে মনে আওড়ায়

“আলালের ঘরের দুলালের গাড়িও তো এমন।
তখনই গাড়ির কাঁচ নেমে যায়। এবং দৃশ্যমান হয় দুলালের আদল খানা। মনে মনে হাসি তন্নি। মন ঠিক বলছিলো।
দুলাল চোখ হতে সানগ্লাস খুলে গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে
” বউ গাড়িতে বসো।
তন্নির হাসি পায়। টুপ করে হাসি গিলে দ্রুত পা চালাতে চালাতে জবাব দেয়
“সরি ভাইয়া। তন্নি যারতার গাড়িতে ওঠে না।
অর্ণব বিরক্ত গলায় বলে

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৬

“সিনক্রিয়েট না করতে চাইলে উঠে এসো।
তন্নি থামে না। সে যেনো পণ করেছে গাড়িতে উঠবেই না। এবার অর্ণব ধমকে বলে ওঠে
” গড প্রমিজ
আমাকে নামতে হলে ঠোঁটে চুমু খেতে খেতে গাড়িতে তুলবো।
থেমে যায় তন্নির পা। সাথে সাথেই খুলে যায় গাড়ির দরজা। তন্নি তারাহুরো করো অর্ণবের কোলের ওপরই বসে পড়ে।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৮