এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৮
তানিশা সুলতানা
আড়চোখে পাশে বসা বাঁদরটাকে পর্যবেক্ষণ করছে তন্নি। লোকটা আগে পরিপাটি ছিলো না তবে এখন রূপ চর্চায় বেশ সময় ব্যয় করে। দুই হাতে পেশি শার্ট ভেদ করে ফুলে উঠেছে। নিয়মিত ব্যায়াম করার ফল নিশ্চিয়।
কপাল সমান চুল গুলো জেল দিয়ে স্যাট করে নিয়েছে৷ বা হাতের কবজিতে কালো বেল্ট এর ঘড়ি ঝুলছে। ফর্সা লোমশ যুক্ত হাতে বেশ মানিয়েছে।
হালকা কালচে রংয়ের অধরে নজর পড়তেই বুক কেঁপে ওঠে। শয়তান ছেলে অধর গোল করে শিশ বাজাচ্ছে। এতো আকর্ষণীয় লাগছে। নজর ফেরানো দায়।
তন্নির ইচ্ছে করছে একটু ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সাহসে কুলাবে না।
মনে পড়ে সেইদিনের কথা। যেদিন তারা গোটা একটা রাত একসাথে কাটিয়েছিলো। চুমুর বর্ষণ নেমেছিলো তন্নির অধরে।
ইসস কি যে লজ্জা জনক পরিস্থিতি।
শুকনো ঢোক গিলে তন্নি। নজর ফিরিয়ে এদিক সেদিক তাকায়। এসির বাতাসেও অস্থির লাগছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।
অর্ণব আড়চোখে তাকায় তন্নির পানে। গাল দুটো লাল হয়ে গিয়েছে। চতুর অর্ণব চট করেই বুঝে ফেলে লজ্জা পাচ্ছে।
মুখ বাঁকায় অর্ণব। পরপরই ভ্রু কুচকে বলে
“ধরলাম না ছুঁইলাম না তাতেই লজ্জা পাচ্ছো?
বাচ্চার মুখ কি দেখানোর ইচ্ছে নেই আমায়?
নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা করতে থাকা তন্নি স্থির হয়ে যায়। মাথা নুয়িয়ে মুখ আড়াল করার চেষ্টা করে। নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত। আশ্চর্য চুমু খেয়েছে একশো বছর আগে। আজকে লজ্জা পাওয়ার কি হলো? তন্নি আসলেই তুই নেকা।
জবাব না পেয়ে অর্ণব পাল্টা প্রশ্ন করবে তখুনি ফোন বেজে ওঠে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে পকেট থেকে ফোন বের করে। স্কিনে আকাশের নামখানা ভাসছে। চটজলদি রিসিভ করে অর্ণব। স্পিকার অন করে ফোনটা রেখে দেয় সামনে এবং গম্ভীর স্বরে বলে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” বল
আকাশ অসহায় গলায় বলে ওঠে
“ভাই আমি বিয়ে করেই বাসর সারতে চাই। বউ পাশে রেখে কিংবা বউ দূরে রেখে থাকতে আমি পারবো না। কিন্তু এই মাইয়া বলে কি না বিয়ে করলেও তাকে সময় দিতে হবে।
তন্নির আঁখি পল্লব বড়বড় হয়ে যায়। কি বলছে এসব? অর্ণব তন্নির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। তারপর বলে
” এখনই টেস্ট করতে গিয়েছিলি না কি?
“ব***লের টেস্ট।
শাড়ি কিনেছি সেটাই দিতে গিয়েছিলাম। তখন বাংলা সিরিয়ালের নায়িকাদের মতো বললো।
ভাই এখনো সময় আছে বিয়ে বন্ধ কর।
রোমাঞ্চ করতে পারবে এমন মেয়ে লাগবে আমার। ঘরের বাইরে কিংবা সোফায় ঘুমতে পারবো না আমি।
” শা লা চুপ যা।
চার বছর হলো বিয়ে করেছি এখনো বাসর করতে পারলাম না৷ আর বিয়ের আগেই বাসর নিয়ে মাতামাতি। পুরুষ মানুষ তুই?
পুরুষ মানুষ হতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে। প্রতিদিন আমার কাছে এক ঘন্টা করে ক্লাস নিবি। শেখাবো তোকে। এখন রাখ। ড্রাইভ করছি
কল কাটে অর্ণব। তন্নি ফের মাথা নিচু করে ফেলে। অধর কোণে ফুটে উঠে হাসির রেখা পরপরই মিলিয়ে যায়। অনুভব করে তন্নির কোনো ফ্রেন্ড নেই। মনের কথা শোনার মতো মানুষ নেই। এই যে আকাশ যেমন নিরদ্বিধায় অর্ণবকে মনের কথা শেয়ার করলো, খুনসুটিতে মেতে উঠলো তন্নির এমন কেউ নেই। মনের কথা মনে জমতে জমতে পঁচন ধরেছে।
জীবনে একজন বন্ধুর বড্ড প্রয়োজন।
অথৈয়ের সাথে দুরত্ব তৈরি হওয়ার পর থেকে আর কাউকে বন্ধু বানাতে ইচ্ছে হয় নি। নতুন কলেজের অনেকেই পরিচিত হতে চেয়েছিলো তন্নির সাথে কিন্তু অতি সাবধানে এড়িয়ে গিয়েছে ওদের।
নিঃসঙ্গতায় কলেজ পাস করেছে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তন্নি। জানালায় মাথা এলিয়ে দেয়৷ ঘুম পাচ্ছে। কাল সারা রাত ঘুম হয় নি। এমনিতেও এখন নির্ঘুম রাত কাটে। বেসামাল কিছু স্মৃতি ঘুম কেড়ে নিয়েছে। লেজ ছাড়া এক বাঁদরের চিন্তায় দুচোখের পাতা এক করতে পারে না।
“হাতটা ধরবে মায়াবতী?
ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে ওঠে অর্ণব। তন্নি চমকায়। কেনোনা সবেই দুচোখের পাতা এক করেছিলো।
চোখ খুলে এক পলক তাকায় অর্ণবের হাতের পানে। পরপরই মুখের দিকে তাকায়। পুরুষালি শক্তপোক্ত হাতের ওপর নিজের নরৃ তুলতুলে হাত খানা রাখে।
অর্ণব শক্ত করে ধরে।
তন্নি বিরবির করে আওড়ায়
” বাবাকে মানিয়ে আমাকে কাছে টেনে নিন না অর্ণব। আপনার বিরহে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি”
অর্ণবের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না তন্নির বলা কথা।
সাথী এবং আকাশের বিয়ের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। সাথীকে খুশি মনে বরণ করে নিয়েছে আশিকের বাবা মা। কিন্তু টেনশনে আছে আশিক। বিয়ের পরেও সাথী কথা বলে নি আশিকের সাথে। মাইয়া মানুষ এমন কেন? কথা কেনো বলে না? এড়িয়ে কেনো চলে?
ফুল সাজানো রুমে সাথীর বসে আছে অথৈ এবং তন্নি। ক্ষণে ক্ষণে কুঁকড়ে যাচ্ছে সাথী। তন্নির হাতখানা শক্ত করে আঁকড়ে ধরছে। বেশ অবাক হয় অথৈ এবং তন্নি।
“তুমি কি ভয় পাচ্ছো সাথী?
অথৈ সাথীর মাথায় হাত বুলিয়ে প্রশ্ন করে।
জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে রিনরিনিয়ে জবাব দেয়
“আমি অসুস্থ আপু। উনি যদি আমার সাথে জোরজবরদস্তি করে।
স্পষ্ট ভয় ফুটে উঠেছে সাথীর চোখে মুখে। চোদ্দ বছর বয়স মেয়েটার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে জীবন এখানে এসে দাঁড়িয়েছে৷ এখন তো ওর স্কুলে যাওয়ার কথা। পড়ালেখা নিয়ে চিন্তা করার কথা।
সাথীর কপালে চুমু খেয়ে তন্নি আশ্বাস দিয়ে বলে
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৭
” আশিক ভাইয়া ভীষণ ভালো মানুষ। তুমি তার সাথে কথা বলছো না বলে ভয় পাচ্ছে। একটু কথা বললেই হবে শুধু। তোমার অনুমতি ছাড়া ছুঁবে না তোমায়। আমি কথা দিলাম।
ভরসা পেলো বোধহয় সাথী। একটু স্থির হয়ে বসেছে।
তখনই অর্ণব এবং আশিক প্রবেশ করে রুমে।