এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৫০

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৫০
তানিশা সুলতানা

স্তব্ধ নিধি বড়বড় নয়নে তাকিয়ে আছে অর্ণবের পানে। মুখের কথা যেনো তার হাওয়া হয়ে গিয়েছে। মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়েছে। অর্ণব বিয়ে করেছে?
যেনো পৃথিবীতে অষ্টম আশ্চর্য জনক কোনো ঘটনা ঘটেছে। যেমন আসমানে চাঁদ দুটো উঠেছে বা জমিনে চাঁদের আগমন ঘটেছে।
নিধির এহেম দৃষ্টি দেখে তন্নি কটমট নয়নে তাকায় অর্ণবের পানে৷ যেনো এখনো চোখ দিয়ে খু ন করে ফেলবে। ইনোসেন্ট অর্ণব ইশারায় বোঝায় “তার কোনো দোষ নেই”
কিন্তু তন্নি তা বুঝলে তো।
সে মুখ বাঁকিয়ে প্রস্থান করে। তন্নি বের হতেই নিধি কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে
“বিয়ে করেছো অর্ণব?
বিরক্ত হলো বোধহয় অর্ণব। চোখ মুখ খিঁচে খাটের ওপর বসে। বালিশের তলা থেকে ফোনখানা তুলে তাতে মনোযোগ দেয়৷
নিধি ফের প্রশ্ন করে

” কেনো করলে? তুমি জানো না আমি তোমাকে ভালোবাসি?
অর্ণব এক পলক তাকায় নিধির পানে৷ পরপরই আবার ফোনের স্কিনে দৃষ্টি রাখে৷ এবং ঠান্ডা স্বরে বলে
“আমি ভালোবাসতে বলি নি তো।
দায় ছারা জবাব। দুই গাল বেয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। দৃষ্টি ফেলতে ভুলে গিয়েছে যেনো। সত্যিই তো ভালোবাসতে বলে নি। তবে কি জিজ্ঞেস করে ভালোবাসা উচিত ছিলো?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ভালোবাসা কি বলে কয়ে জিজ্ঞেস করে হয়? ভালোবাসা তো ভালোবাসাই। সেটা আপনাআপনি হয়ে যায়৷ নিধির অনেক কথা বলার ছিলো। সাজিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছিলো মনের মধ্যে। কিন্তু হঠাৎ মনে হলো ” কি দরকার এতো কথা বলে বা প্রশ্ন করে? তার অন্য কাউকে ভালো লেগেছে সে বিয়ে করে নিয়েছে। দোষ তো আর নেই তার”
বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে নিধির। মাথা নিচু করে চলে যায় অর্ণবের কক্ষ থেকে। দরজা ওবদি গিয়ে একবার পেছন ফিরে তাকায়। পরপরই দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অর্ণব৷ উটকো ঝামেলা। বউ বোধহয় এখন ভীষণ অভিমান করেছে৷ এবার বউয়ের অভিমান ভাঙাতে হবে।

পানজাবির হাতা কনুই ওবদি ভাজ করতে করতে রুম থেকে বের হয় অর্ণব৷ বাহহহ খুব সুন্দর সাজিয়েছে বাড়িটা। অতিথিও চলে এসেছে। কিন্তু এতোসব হলো কখন? অর্ণব টেরই পেলো না। খিধায় পেট চো চো করছে। কিছু খাওয়া উচিত। কিন্তু তাকে এখন খেতে কে দিবে? বাড়ির মানুষকে তো দেখাই যাচ্ছে না৷
ভাবনার মাঝেই খেয়াল করে আশিক এবং সাথী আসছে। দুজনই মেচিং করে ড্রেস পড়েছে। দেখতে ভালোই লাগছে। ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসে অর্ণব৷ আশিক এসেই অর্ণবকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে

“ভাই কাল বাসর করতে দিছে বউ। কি যে লজ্জা জনক ব্যাপার।
অর্ণব নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয় আশিককে৷ কলার ঠিক করতে করতে ভাব নিয়ে বলে
” কাল আমারও বাসর ছিলো।
“বলিস কি মামাহহ? কেমন এনজয় করলি?
” মারাক্তক
যাহহ সামনে সপ্তাহে চাচ্চু ডাক শুনতে পাবি।
আশিকের হাসি মুখ কালো হয়ে যায়। ললাটে ভাজ পড়ে

“প্রথম বাসরেই প্রেগন্যান্ট?
” হবে না? আমার নাম অর্ণব চৌধুরী
সাথী হাঁটতে হাঁটতে অথৈয়ের কক্ষে চলে গিয়েছে।
দুই বন্ধুর কথপোকথনের মধ্যেই তামিম আসে। ভাড়ি চিন্তিত সে। গোলগাল মুখ খানা ফুলিয়ে রেখেছে।
“কি হয়েছে শালা বাবু?
” আর বলিও না দুলাভাইয়া৷ জীবনটা ছারখার। লাবিবা পাত্তাই দিচ্ছে না।
তামিমকে ঠিক চেনে না আশিক। চিনবে কি করে? আজকেই তাদের ফাস্ট মিট। তাই অর্ণবকে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কে?
অর্ণব ছোট করে জবাব দেয় “বউয়ের ভাই”

“শালা বাবু
বললেই হলো পাত্তা দিবে না? জামা ধরে ঘুর ঘুর করো পেছন পেছন দেখবা। ঠিক পাত্তা দেবে।
আশার আলো খুঁজে পায় তামিম চটজলদি চলে যায় লাবিবার নিকট। ধরে ফেলে ফ্রক এর হাতা।
সাথে সাথে রাগান্বিত লাবিবা তামিমের দিকে ঘুরে চোখ পাকিয়ে। লাগিয়ে দেয় একটা থাপ্পড়। এবং হিসহিসি করে বলে
” অসভ্য তামিম৷ তোকে আমি মে রে ফেলবো।
তামিম লাবিবার মাথায় গাট্টা মেরে বলে
“আমাকে মে রে ফেললে তুমি তো বিধবা হয়ে যাবে লাবিবা। তখন কি হবে তোমার?
তন্নি এসেছে অর্ণব খাবে কি না জিজ্ঞেস করতে। সে আবার মেহেদী নিতে বসবে। অর্ণব ওবদি পৌঁছানোর আগেই লাবিবা দৌড়ে আসে। নালিশের সুরে বলে
“আপু তামিম আমার জামা ধরে টানাটানি করে।

তন্নি চোখ পাকিয়ে তাকায় তামিমের দিকে৷ ইনোসেন্ট তামিম সাথে সাথে দুই হাত ওপরে তুলে। এবং বলে
” আমু কিছু করি নি৷ দুলাভাইয়া আমাকে বলেছিলো লাবিবার জামা টানতে৷
অর্ণব বড়বড় নয়নে তাকায় তামিমের পানে। বিচ্ছুটা তাকে ফাঁসিয়ে দিলো? কতো বড় বেয়াদব। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আশিক বলে
“হ্যাঁ হ্যাঁ আমিও শুনেছি। অর্ণব বলেছে।
তন্নি ফোঁস করে শ্বাস টানে। যেমন তার ভাই তেমন তার বর। দুজনই কোনো অংশে কম নয়।

” লাবিবা যে তোমার ফ্রক টানতে বলেছে৷ তুমি তার চুল টেনে দাও।
অনুমতি পেয়ে লাবিবা ফট করে মুঠো করে ধরে তামিমের চুলের গোছ। ইচ্ছে মতো টেনে দৌড়ে পালিয়ে যায়। মাথা ভনভন করছে তামিমের। বসে পড়ে ফ্লোরে। হতাশার সুরে বলে
“আপির কথার সারমর্ম ছিলো দুলা ভাইয়ার চুল টেনে দেওয়া। বলদ মাইয়্যা আমার চুল কেন টানলো?

ছাঁদে মেহেদীর অনুষ্ঠানে জন্য স্টেজ সাজানো হয়েছে। মূলত হলুদ এবং মেহেদী দুটোই এখানে হবে। ইতোমধ্যে মেয়েরা গোল হয়ে বসে পড়েছে মেহেদী লাগাতে। চার জন প্রফেশনাল মেহেদী আর্টিস্ট আনা হয়েছে। দুজন আর্থিকে রাঙাচ্ছে মেহেদীর রং এ। দুই হাতের তালুতে বড় বড় অক্ষরে লিখে দিয়েছে সিফাত এর নাম।
তন্নির দুই হাতেই ইতোমধ্যেই মেহেদী দেওয়া শেষ হয়েছে। এখন পায়ে দিয়ে দিচ্ছে। তখনই অর্ণব এসে বসে পড়ে তন্নির পেছনে।

সেই বিকেল থেকে অনুষ্ঠান শুরু করলেও এখন রাত হয়ে গিয়েছে। মেহেদীর চিকন সুর দ্বারা নিখুঁত এবং সুন্দর ডিজাইন আর্ট করার দারুণ সময় লেগেছে অনেক৷ এখনো শেষ হওয়ার নাম নিচ্ছে না। কারেন্ট চলে গিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। গরমের সিজনে এই এক সমস্যা যখন তখন কারেন্ট গায়েব হয়ে যায়। আর আসার নাম নেয় না।
চারিপাশে অন্ধকারে ছেড়ে আছে। শুধু হাতের ওপরে পড়েছে আলো। তন্নির যেহেতু হাতের কাজ শেষ তাই পায়ের ওপর আলো জ্বলছে৷
পিঠের ওপরের গরম নিঃশ্বাসের আবরণ অনুভব করতেই শিওরে ওঠে তন্নি। ঘাড় বাঁকিয়ে পেছনে তাকানোর চেষ্টা করে। তবে পারে না। কেনোনা শক্ত দুটো হাতে ইতোমধ্যেই তন্নি শাড়ির ফাঁকে ঢুকে পড়েছে। গলায় খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির অস্তিত্ব টের পেয়েছে।

আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে তন্নি। আপনাআপনি একটা হাত চলে যায় অর্ণবের বাহুতে। খাঁমচে ধরে সেথায়।
চারিপাশে এতো হইচই আড্ডা মিউজিক কোনো কিছুর শব্দই তন্নির কানে আসছে না। তার মন এবং মস্তিষ্ক দুটোই অন্য ঘোরে চলে গিয়েছে।
অর্ণব ঠোঁট জোড়া এবার ঘাড় ছেড়ে কানের কাছে এসে থামে। ছোট করে কামড় বসায় কানে। এবং পরপরই ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দেয়। হাঙ্কি স্বরে বলে
“চলো রুমে যাই।

হুশ ফিরলো বোধহয় তন্নির৷ সে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় অর্ণবের হাত দুটো। যে কোনো মুহুর্তে কারেন্ট চলে আসতে পারে। আর আলোয় ঝলমল করে উঠবে চারিপাশ। তখন তাদের এমন অপ্রস্তুত ভঙ্গিমায় কেউ দেখে নিলে?
মানসম্মান থাকবে না।
তাই মোচড়ামুচড়ি শুরু করে দেয়।
অর্ণব বোধহয় বিরক্ত হলো। তাই খামচে ধরে তন্নির উদর। হিসহিসি করপ বলে
” বোয়াল মাছের মতো লাফাচ্ছো কেনো?
তন্নিও সেভাবেই জবাব দেয়
“কেউ দেখে ফেলবে।
” তাই তো বললাম চলো রুমে।
“মেহেদী লাগাচ্ছি আমি।

” এসব লাগিয়ে কি হবে? কেনো লাভ আছে? তার থেকে ভালো আমাকে সময় দাও। ২০২৫ সাল আসার আগেই মাম্মাম ডাক শুনিছে দিবো।
লজ্জায় কান গরম হয়ে ওঠে তন্নির। থাপ্পড় মারে অর্ণবের বাহুতে। অর্ণবও কি মনে করে ছেড়ে দেয় তন্নিকেৃ তখনই ফট করে কারেন্ট চলে আসে।
হৈ হুল্লোড় করে ওঠে সকলেই। অথৈয়ের নজর পড়ে অর্ণবের পানে। তার মেহেদী নেওয়া শেষম তাই ভ্রু কুচকে এগিয়ে আসে। অর্ণব এর সাদা পানজাবির বাহুতে মেহেদীর দাগ স্পষ্ট।
“তুই এখানে কেনো?

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৯

এতোক্ষণে সকলের নজর পড়ে অর্ণবের পানে। চোখে মুখে একই প্রশ্ন ” এখানে কেনো?”
অর্ণব দাঁড়িয়ে পড়ে। অথৈয়ের মাথায় চাটি মেরে বলে
“এসেছিলাম দেখতে। তোরা কি করছিস?
” বুঝলাম তাহলে তোর পানজাবিতে মেহেদী লেগে আছে কেনো?
অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে অর্ণব৷ লজ্জায় তন্নির মাথা কাটা যাচ্ছে। সকলেই মিটমিট করে হাসছে।
“আমি ভদ্র ছেলে। কিছু করি নি আমি।

এক মায়াবতীর প্রেমে শেষ পর্ব