এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৭
তানিশা সুলতানা
গ্রাম ছাড়িয়ে শহরের রাস্তায় ঢুকেছে অর্ণবের গাড়ি। বড় বড় গাড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তন্নি মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কাঁদছে। মাঝেমধ্যে ফুঁপিয়ে উঠছে বা নাক টানছে। অর্ণবকে খুবই ধৈর্য শীল দেখাচ্ছে। সে ধৈর্য নিয়ে তন্নির কান্নার আওয়াজ শুনছে। না থামতে বলছে আর না আগ্রহ দেখাচ্ছে। এখানেই তন্নির দুঃখ হচ্ছে। মানুষটা এমন কেন?
বলা নেই কওয়া নেই নিয়ে যাচ্ছে। তার যখন যা মন চাইবে তাই করবে? অপর পাশের মানুষের মনোভাব একবারও জানতে চাইবে না?
তন্নির কান্নার আওয়াজ বাড়িয়ে দিতে তন্নির মুঠো ফোন কেঁপে ওঠে। ছোট একটা বাটন ফোন তার। বাবা কিনে দিয়েছে মাস খানিক আগে।
তন্নির হাত কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাগের চেইন খুলে ফোন বের করে। চোখের পানি বাঁধ মানছে না তার। এক হাতে মুখ চেপে ধরে কেঁদে ওঠে।
অর্ণব বুঝে যায় কলটা কে করেছে। তাই তন্নির হাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায় ফোন। তন্নি বড়বড় চোখ করে তাকায় অর্ণবের দিকে। এবার কি সে কল রিসিভ করার চিন্তা ভাবনা করছে না কি?
তন্নির ভাবনা শেষ হতে না দিয়ে খট করে রিসিভ করে অর্ণব। কানে নেয় ফোন। ভেসে আসে তারেকের কর্কশ গলার ধ্বনি।
“কোথায় তুমি? স্কুল থেকে কল এসেছে। তুমি না কি স্কুলে যাও নি?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আপনার মেয়ে আমার সাথে আছে। এক বছর পরে দুটো বাচ্চা কোলে নিয়ে আপনাকে সালাম করতে চলে যাবো। ভালো থাকবেন। বছর ঘোরার আগে ভুলেও মেয়ের কথা চিন্তা করবেন না।
বলেই কেটে দেয় কল। তন্নি আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে। কাঁদতে ভুলে গিয়েছে সে। পাথর হয়ে গিয়েছে যেনো। কি বললো সে? বাবা কিভাবে রিয়েক্ট করবে? তন্নিকে তো মেরেই ফেলবে এবার।
দুঃখে কষ্টে যন্ত্রণায় তন্নি গাড়ির জানালায় মাথা ঠেকিয়ে শব্দ করে কাঁদতে থাকে।
অর্ণব এবার বিরক্ত হয়৷
নাক মুখ কুঁচকে ধমকে বলে
“জাস্ট সাট আপ।
আর একটু আওয়াজ বের হলে এখানেই রেখে যাবো।
ম্যাজিকের মতো তন্নির কান্না থেমে যায়। দুই হাতে মুখ চেপে ধরে সে কান্না আটকে আছে। মনে মনে ইচ্ছে মতো বকা দিচ্ছে অর্ণবকে। একটা মানুষ এতো খারাপ হয় কি করে?
তারেক আহমেদ সাথে সাথে কল করেছে আর্থিকে। আর্থি যেনো ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিলো। রিং হওয়ার সাথে সাথে কল তোলে।
একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
“আংকেল ভালো আছেন?
“ তন্নি কোথায়?
শুকনো ঢোক গিলে আর্থি।
“ত…তন্নি আ..আমার কাছেই। ন..নানু বাড়ি যাচ্ছি ওকে নিয়ে।
আর্থির কথা যেনো বিশ্বাস হলো না তারেকের।
“তন্নির ফোন ওই লেজ ছাড়া বাঁদরটার হাতে গেলো কি করে?
আর্থির হাত পা কাঁপছে এবার। মিথ্যে বলতে সে ভালোই পারে। তবুও একজন উকিলের সামনে মিথ্যে বলা চারটিখানি কথা নয়।
“ ব্যাগ গুলো নিয়ে পাপা আর দাভাই গাড়িতে যাচ্ছে। ব্যাগেই তন্নির ফোন ছিলো।
তারেক আর্থিকে ধমক দিতে গিয়েও দেয় না।রাগ চেপে বলে
“নেহাৎ জরুরি কাজে চিটাগং যাচ্ছি। নাহলে ওই লেজ ছাড়া বাঁদরের একটা বিহিত করেই ছাড়তাম।
ফিরে নেই আমি। তন্নিকেও দেখবো।
বলেই কল কাটে।
আর্থি যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।
সাড়ে পাঁচ ঘন্টা জার্নি করে অবশেষে নির্দিষ্ট বাড়িটার কাছে পৌঁছায় অর্ণব। তন্নি ঘুমিয়ে পড়েছে বেশ কিছুখন আগে। ঘুমন্ত মায়াবতীকে বুকের মধ্যে আগলে নিয়ে ড্রাইভ করেছে অর্ণব।
বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে এক পলক দেখে নেয় তন্নির মুখখানা। দ্রুতই নজর ফিরিয়ে নেয়।
এই মুখের দিকে তাকালে মাথা নষ্ট হয়ে যায় অর্ণবের। ইচ্ছে করে এখুনি বিয়ে করে বাসর সেরে ফেলতে।
আর যখন নাক ফুলিয়ে কান্না করে। তখন টুপ করে কয়েকটা চুমু খেয়ে নিতে ইচ্ছে করে।
অর্ণব মাঝেমধ্যে গভীর চিন্তার সাগরে ডুব দেয়। এই টুকুনি একটা মেয়ে। সে কি অর্ণবের চুমুর ভর সইতে পারবে? আলবাত পারবে না। তাই তো অর্ণব বিয়ের চিন্তা দূরে রাখে। পরে দেখা গেলো বাসর রাতেই চুমুর প্রভাবে বউ কুপোকাত।
সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার।
তন্নিকে পাঁচ মিনিট ঘুমতে দেয় অর্ণব। তারপর বোঁচা নাক খানা ধরে টান দেয়। তন্নি ব্যাথা পেয়ে হকচকিয়ে ওঠে। মাথা তুলতে গিয়ে অর্ণবের থুতনিতে মাথায় গুঁতো খায়। চোখ মুখ কুঁচকে সোজা হয়ে বসে। এক হাত নাকে আর আরেক হাত মাথায়।
টকটকে লাল হয়ে গেছে ফর্সা নাক টা। চোখের কোণেও পানি জমেছে তন্নির৷
অর্ণবের সেদিকে হেলদোল নেই। সে আরামসে সিট বেল্ট খুলে বেরিয়ে যায়।
“ট্যাবলেট দ্রুত বের হয়ে আমার পেছনে দৌড় দাও।
নাহলে রেখেই চলে যাবো।
অর্ণবের বলতে দেরি তন্নির গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দিতে দেরি নেই।
এখানে রেখে গেলে তন্নি ফিরবে কি করে?
দোতালা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজায় অর্ণব। তন্নি চিন্তিত। কার বাড়ি এটা? কোথায় নিয়ে এলো ওকে?
তন্নির চিন্তা ভাবনার মাঝেই দরজা খুলে দেয়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মধ্যবয়ষ্ক এক সুন্দরী মহিলা। তিনি অর্ণবকে দেখেই খুশি হয়ে যায়।
“আব্বা আসছিস তুই?
অর্ণব তাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। তন্নি ঢুকবে কি ঢুকবে না ভেবে পাচ্ছে না। তখনই মহিলাটি তন্নির থুতনিতে হাত দিয়ে বলে
“ আব্বা তন্নি না?
অর্ণব সোফায় হাত পা ছড়িয়ে বসে বলে
“নাহহহ
আমার নানী।
একে কয়েক বালতি পানি খাওয়াও আগে। কান্না করতে করতে গাড়িকে পদ্মা নদী বানিয়ে দিয়েছে।
হেসে ফেলে মহিলাটি। তন্নি কাঁদো কাঁদো ফেস করে তাকায় অর্ণবের দিকে। অর্ণব তাকিয়েই ছিলে বিধায় চোখাচোখি হয়ে যায়।
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৬
“আম্মু
একে পানির সাথে গ্লুকোজ মিশিয়ে খাইয়ে আমার রুমে পাঠাও।
মাথা ব্যাথা করছে চুল টেনে দিবে।
বলতে বলতে এক রুমের দিকে চলে যায়।