এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৯

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৯
তানিশা সুলতানা

মেজাজ তুরুঙ্গে তারেক রহমানের। একমাত্র মেয়ে তার। বড় আদরের। সারাক্ষণ গম্ভীর মুখে থাকলেও ছেলে মেয়েকে তিনি ভীষণ ভালোবাসে।
সেই কলিজার টুকরোর জন্মদিন আজকে। প্রতি বছর জন্মদিন তারেক সবার আগে মেয়েকে Wish করে। কিন্তু এবার পারছে না৷ মেয়েটা তার বহু দূরে।
ঘড়ির কাটায় রাত ১২ টা ৬ মিনিট বাজে৷ তন্নির রুমে বিছানায় বসে আছে তারেক। কয়েকবার কল করেছে তন্নির নাম্বারে। ফলাফল শূন্য। কল রিসিভ হচ্ছে না।
তারেক বেশ জানে তার বোকাসোকা মেয়েটার ফোন এখন অন্য কারো দখলে। বোকার রাণী তার থেকে ফোন চাইতে পারছে না।
তারেক একবার ভাবে আর্থিকে কল করবে। আবার ভাবে “যাকক একটা রাতেরই তো ব্যাপার। দিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে দিবো”
তবুও আর ঘুমতে পারে না তারেক। মেয়ের টেডি জড়িয়ে বসে থাকে।

অনির সাথে ঘুমচ্ছে তন্নি। ঘুমচ্ছে বললে ভুল হবে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মনটা পড়ে আছে বাড়িতে। বাবার জন্য মন খারাপ করছে। তাছাড়া এই অচেনা পরিবেশে তার একটু ভয়ও করছে। তন্নি কখনোই রুমের লাইট বন্ধ করে না। অন্ধকারে সে ভীষণ ভয় পায়। কিন্তু আজকে অর্ণবের মামি লাইট বন্ধ করে চলে গিয়েছে৷ তন্নি চেয়েও কিছু বলতে পারে নি৷ অন্ধকারে ভয় পেয়ে অনির দিকে চেপে শুয়ে আছে। ভয় টেনশন সবটা মিলিয়ে এই শীতেও তন্নির শরীর ঘেমে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসছে।
হঠাৎ দরজা খুলে কেউ ভেতরে ঢুকে পড়ে। তন্নি কান খাঁড়া করে থাকে। বুঝতে চাচ্ছে ঠিক কে আসলো। কিন্তু পায়ের শব্দ শুনে কি আর মানুষকে চেনা যায়?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তবে তন্নি বুঝতে পারছে কেউ তার পাশে এসে বসেছে। অতঃপর তন্নি বুঝে যায় এটা অর্ণব। লোকটার শরীরে একটা অদ্ভুত ধরণের সুভাষ রয়েছে। যেটা নাকে লাগলেই তন্নি বুঝতে পারে মানুষটা আশেপাশে আছে। সুভাষটা ভীষণ আনকমন। এমন সুভাষ আর কোথাও পাই নি তন্নি।
অর্ণব গালে হাত দিয়ে খানিকখন তাকিয়ে থাকে তন্নির মুখের দিকে। ড্রিম লাইটের হালকা আলোতে মায়াবতীকে ভীষণ আদূরে লাগছে। এই মেয়েকে বাবার কলিজা হতে বের করে এতোদূরে নিয়ে আসার একটাই কারণ। সেটা হচ্ছে প্রাণ ভরে দেখা। এই মেয়েকে দেখার তৃষ্ণা মেটেই না অর্ণবের৷
কি আছে এর মধ্যে?
অর্ণব দীর্ঘ শ্বাস ফেলে খানিকটা শব্দ করে বলে

“কবে বড় হবে? তোমাকে পাওয়ার এক অদ্ভুত নেশা আমাকে ভালো থাকতে দিচ্ছে না”
অর্ণবের এমন কন্ঠে তন্নির চোখের পাতা কেঁপে ওঠে। জোর করে বন্ধ করে রাখতে পারছে না চোখ দুটো। অর্ণব ঠিক বুঝতে পারে তার হৃদয়হরণী জেগে আছে। এবং তার সকল কথা শুনে ফেলেছে।
অর্ণব ফ্লোর থেকে উঠে খাটে বসে তন্নির ঠিক মাথার কাছে। জায়গা কম থাকায় চেপেই বসেছে।
তন্নি তারাহুরো করে উঠে বসে। বালিশের পাশ থেকে ওড়না নিয়ে বুকে চাপিয়ে নেয়। মাথা নিচু করে ফেলে।

“ঘুমাও নি?
অর্ণব ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করে। তন্নি মাথা নারিয়ে “না” বোঝায়।
অর্ণব তন্নির বালিশ নিজের কোলে নিয়ে গোল হয়ে বসে।
“হ্যাপি বার্থডে অথৈয়ের তন্নি।
তন্নি মৃদু হেসে থ্যাংক্স বলে।
অর্ণব নিজের প্যান্টের পকেট থেকে একটা ছোট লাল রংয়ের বক্স বের করে।
তন্নি উৎসুক চোখে তাকিয়ে থাকে। সে দেখতে চায় কি আছে এই বক্স এ।

অর্ণব ধীরে সুস্থে বক্স খুলে। সে চকচক করছে একখানা আংটি। অন্ধকারেও জ্বল জ্বল করে জানান দিচ্ছে এটা হিরে। তন্নি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে৷ এই আংটি কি এবার তাকে পড়তে বলবে?
পড়তে হবে? ভাবতেই ভয় পায় তন্নি৷ এউ আংটি পড়ে বাসায় যাবে কি করে? বাবা ঠিক প্রশ্ন করবে। তন্নি মিথ্যে বলতে পারে না। ধরা পড়ে যাবে। তখন তো তন্নিকে খুব বকবে।
ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে তন্নি।
অর্ণব বক্স হতে আংটি খানা মুক্ত করে। এবং তন্নির বা হাত টেনে নিয়ে আনামিকা আঙুল আংটি পড়িয়ে দেয়।
তন্নি যেনো ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে।
অর্ণব তন্নির নরম তুলতুলে হাত খানা নিজের শক্তপোক্ত পুরুষালি হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে ধীর গলায় বলে

” এই আংটি পড়িয়ে তোমাকে আমার জন্য ফিক্সড করে রাখলাম। খবরদার এই আংটি খুলবে না।
তন্নির চোখের কোণে টলমল করে পানি। অর্ণবের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার একটু চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অবশেষে নাক টেনে বলে
“বাবা দেখলে কি বলবো? ভীষণ বকবে আমায়।
অর্ণব বিরক্ত হয়। বাবার ভয়ে কেনো মিউমিউ করবে। অর্ণব তো ঠিকই বাবার সামনে হিংসের মতো চলে।

” আমি কিচ্ছু জানি না। যেদিন দেখবো তোমার হাতে আংটি নেই সেইদিনই তোমাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।
বুঝেছো?
তন্নি জবাব দেয় না। অর্ণব চাপ দেয় তন্নির হাতে। পূণরায় বলে
“বুঝো নি?
তন্নি আবারও মাথা নারিয়ে হ্যাঁ বোঝায়।
” স্পিক আপ
খানিকটা ধমকের সুরে বলে অর্ণব।
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে বলে
“বুঝেছি। খুলবো না।
অর্ণবের যেনো উত্তর পছন্দ হলো না। সে ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলে
” আমায় বিয়ে করতে চাও না?
তন্নি চট করেই জবাব দেয়
“চাই না। আমার বিয়ের বয়স হয় নি।
মুখ বাঁকায় অর্ণব।
ভ্রু কুচকে বলে

“হাহহ বিয়ের বয়স হয় নি। অথচ একটু ছুঁয়ে দিলেই কাঁপা-কাঁপি শুরু করে দাও। শোনে মেয়ে কাঁপা-কাঁপি তারাই করে যারা বিয়ে করতে চায়।
তন্নি ঘোর প্রতিবাদের সুরে বলে
” আপনি অদ্ভুত ভাবে ছুঁয়ে দেন। যেভাবে ছুঁলে সবাই কাঁপবে।
অর্ণব একটু এগিয়ে বসে বলে
“আচ্ছা!
আমাকে ছুঁয়ে দাও তো দেখি আমি কাঁপি কি না?
তন্নি হাত এগিয়ে দেয় অর্ণবকে ছোঁয়ার জন্য। আবার কিছু একটা মনে করে হাত পিছিয়ে নেয়।

” ছেলে মানুষ কাঁপে না।
বাঁকা হাসি অর্ণব। তন্নির মাথায় গাট্টা মেরে নেমে পড়ে বিছানা হতে।
“মাথা মোটা
ঘুমাও
বলতে বলতে রুমের লাইট অন করে দিয়ে দরজা আটকে চলে যায়। তন্নির নিজের হাতের অনামিকা আঙুলের দিকে তাকায়। জ্বল জ্বল করছে আংটি খানা। দারুণ মানিয়েছে হাতে।

নিধি অর্ণবের বড় মামির বোনের মেয়ে৷ অর্ণবের সাথে দারুণ বন্ধুত্ব। এই বন্ধুত্ব ছোট বেলা হতেই। তারা একই স্কুলে পড়েছে, একই ভার্সিতে থেকেও মাস্টার্স করছে।
অর্ণব গোপালগঞ্জ চলে আসাতে সেও চলে এসেছিলো। নিধির বাবার বাড়ি মানিকগঞ্জ। অর্ণবদের বাড়ির পাশপাশি।
ঢাকায় গিয়েছিলো বেড়াতে। অর্ণব এসেছে শুনে সে অতি দ্রুত চলে এসেছে।
অর্ণব ঘুম থেকে উঠে ছাঁদে চলে যায় একটু এক্সারসাইজ করতে।
টিশার্ট খুলে দুটো পুশআপ দিতেই নিধি সেখানে উপস্থিত হয়। বরাবরই মর্ডান মেয়ে নিধি। পোশাকআশাকেও রয়েছে আভিজাত্যের ছোঁয়া। আজকেও তার ব্যতিক্রম নয়৷ কালো জিন্স এবং গোলাপি টিশার্টে দারুণ ভাবে সাজিয়েছে নিজেকে।
নিধি খানিকক্ষণ চুপচাপ দেখতে থাকে অর্ণবকে৷ জিম করা বড়ি বরাবরই নিধিকে ঘায়েল করে। কতোবার যে লুকিয়ে দেখেছে।
খালি গায়ে পুশআপ দেওয়ার দৃশ্য নস্টালজিক বানিয়ে দেয় নিধিকে।
হঠাৎ অর্ণবের চোখ পড়ে নিধির দিকে
সে উঠে পড়ে। কাঁধে ঝোলানো টিশার্ট পড়তে পড়তে হেসে বলে

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৮

” আরেহহ নিধি কখন এসেছো?
নিধিও হেসে জবাব দেয়
“উমম ফিফটিনস মিনিট হলো।
” আচ্ছা
হঠাৎ আসলে যে?
আমি আজকেই চলে যাবো।
“গ্রেট
আমিও যাবো৷ একটা কাজে এসেছিলাম। এক সাথেই যাওয়া যাবে।
” সরি নিধি। আমি একা আসি নি। নো প্রবলেম
আমি উবার কল করে দিবো তোমায়।
নিধি কিছু বলতে যায়। তখনই অনি চলে আসে।
“দাভাই তন্নি কাঁদছে। তাকে আমি বকি নি মারিও নি তবুও কাঁদছে।
বিচলিত হয় অর্ণব।
সে দৌড়ে নামতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে। নিধি ভাবনায় পড়ে যায়। ” কে এই তন্নি?”

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১০