এক রহস্যময় ভালোবাসা পর্ব ৩

এক রহস্যময় ভালোবাসা পর্ব ৩
Chadny islam

ইরা খুব আকুতি মিনতি করে বললো গাড়িতে থাকা লোকটি কে । লোকটি কে ইরা আগে কখনো দেখে নি। কিছু সময় নিয়ে তাকিয়ে দেখছে একে অপরকে। ইরার শরীরে কলেজ ড্রেস পড়া।ড্রেস টা সাদা হওয়ায় বৃষ্টির কারনে শরীরের কিছু জায়গা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। এতে বেশ বিরক্ত হচ্ছে ইরা।

কালো গাড়িতে থাকা লোকটা ইরা কে গাড়ির ভেতরে আসতে অনুরোধ করে।ইরা সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে বসলো গাড়ির ভেতরে। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বেজার কারনে ঠান্ডা হেসকি তুলছে বার বার। পাশের সিটে বসে থাকা লোকটা ইরা কে টিস্যু বক্স এগিয়ে দেয়।ইরা টিস্যু বক্স টা হাতে নিয়ে শরীরের কিছুটা পানি মুছে নিলো। গাড়িতে থাকা লোকটা অভাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইরার দিকে। সে এতটা সুন্দর নারীকে আগে কখনো দেখে নি। ফর্সা মুখ টা বৃষ্টি তে ভেজার ফলে আরও সৌন্দর্য হাজার গুন বেড়ে গেছে। গোলাপি ঠোঁট টা আরও টকটক করছে মাথায় হিজাব থাকার কারনে চুল গুলো স্পর্শ নয়। তবে যেকোনো পুরুষ এক দেখায় এই মেয়ের প্রেমে পরে যেতে বাদ্য।বয়স কেবল আঠারো কোমল কেশরী। গাড়িতে থাকা লোকটা বার বার ইরা কে দেখছে এতে বেশ হয়ে যাচ্ছে ইরা। গাড়ীতে থাকা লোকটা ইরা কে নাম জিজ্ঞেস করলে ইরা বলে। তার নাম আরশি চৌধুরী ইরা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

গাড়িতে থাকা লোক টার বার বার মনে হচ্ছে এই মেয়ের পরিবার কে সে হয়তো আগে থেকে চেনে।তাই আবার ও প্রশ্ন করে আপনি কি চেয়ারম্যান আজাদ চৌধুরীর মেয়ে।ইরা বেশ কৌতুহল হয়। তাকে তো বিশেষ করে কেউ চিনে না তাহলে এই ছেলে কি করে বুঝলো আমি চেয়ারম্যান এর মেয়ে।ইরা সম্মতি জানিয়ে বললো হ্যা আমি চেয়ারম্যান এর মেয়ে তবে আপনি আমার বাবা কে কিভাবে চেনেন।এই বার গাড়িতে থাকা লোকটার মনে হলো যে এই মেয়ের বয়স সত্যিই কম তা না হলে এই প্রশ্ন কিভাবে করে বোকার মতোন। তার বাবা চেয়ারম্যান দশ গ্রামের দশ জন মানুষ চিনবে জানবে এটাই স্বাভাবিক। ইরা উল্টো প্রশ্ন করলো আপনাকে তো আমি চিনি না আপনার নাম কি!!

__ছেলেটা মিষ্টি করে হাসি দিয়ে বললো! থাক না কিছু অজানা পরিচয় ।
ইরা আর জিজ্ঞেস করলো না বাইরে চোখ পরতেই দেখে সে বাড়ীর সামনে চলে এসেছে। ইরা তো এই লোকটা কে বাড়ীর ঠিকানা টাও দেয় নি! তাহলে কি করে বাড়ি চিনলো। ইরা আর প্রশ্ন না করে গাড়ি থেকে নেমে গেলো আর ভাবলো থাক না অচেনা কি হবে এত জানা শোনা হয়ে। ইরা বাড়ির ভেতরে যাওয়ার আগে আবার ও তাকালো সেই গাড়ির দিকে সেই গাড়িটা এখনো দাড়িয়ে আছে। ইরা কে দেখছে গাড়িতে থাকা লোকটা হাত দিয়ে ইশারা করে বাই বললো।তারপর গাড়ির গ্লাস উপরে তুলে চলে গেলো লোকটা। ইরা ও বাড়ির ভেতরে চলে যায়।ইরা মা সালমা চৌধুরী তারাতারি করে আসেন মেয়ের কাছে। এখনো ইরার বাবা আসেন নি। তাই হয়তো গাড়ি টাও পাঠানো হয় নি কলেজে।ইরা কে তারাতারি করে সাওয়ারে পাঠিয়ে তিনি গরম পানি করে আনলেন। অতিরিক্ত বৃষ্টি তে বেজার কারনে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।

গাড়িতে থাকা লোকটা সেই মুহূর্তে কল করলো তার বাবা ইখলাস খান কে । ইরা কে বেশ পছন্দ হয়েছে তার। তাই চেয়ারম্যান বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর জন্য বললো । কলের অপর প্রান্তে থাকা ইখলাস খান জানাই ঠিক আছে। প্লিজ ক্যাম ব্যাক টু হোম। আই ওয়েটিং ফর ইউ।
আদিল কে সঙ্গে নিয়ে আশরাফ সিকদার গিয়েছেন জন সমাবেশে। সামনের ইলেকশনে যে ভাবেই হোক আদিল কে দেখতে চাই। আদিল আর আশরাফ সিকদার বসে আছেন একটি গাড়িতে। আশরাফ সিকদার এর শএুর অভাব নেই।সামনে পেছনে গাড়ি আসছে সারি সারি করে আসছে বডিগার্ড রা। কোনো সমস্যা জেনো না নয়। করা নজরে রাখতে হয় আশরাফ সিকদার কে।আশরাফ সিকদার কোথাও গেলে আদিল ও সাথে যায়।যে ভাবেই হোক বাবা কে পোট্রেক্ট করতে হবে বলে।

অহনা সিকদার মিটিং কাজে সব সময় এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করে থাকেন। তার এখন মনে হচ্ছে আদিল কে ভালো একটা পরিবারের মেয়ের সাথে বিয়ে করিয়ে দিতে । অহনা সিকদার এর একমাএ বান্ধবী সোনালী তালুকদার।তারা সহ পরিবারে ইউএসএ থাকেন। সোনালী তালুকদার এর মাএ মেয়ে আইরা তালুকদার। আইরা দেখতে ঠিক বিদেশি দের মতোন দেখতে।ফর্সা গায়ের রং সর্ট হেয়ার ইস্টাইস্টিস যথেষ্ট স্মার্ট সুন্দর। মডার্ন মেয়ে দের মতোন তার চলা ফেরা। যথেষ্ট শিক্ষীত বুদ্ধিমতি। সোনালী তালুকদার অনেক আগে থেকেই অহনা সিকদার এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে ছিলেন। অহনা সিকদার এখন মনে হচ্ছে এই বার এই বিষয় টা নিয়ে ভাবা উঠিত। আগামী দুই দিনের মধ্যে সোনালী তালুকদার কে বলা হবে তার মেয়ে মিস আইরা কে নিয়ে যেনো হৃদয়পুরের সিকদার বাড়িতে আসে। অতিদ্রুত এনগেজমেন্ট এর ব্যাবস্থা করতে চান অহনা সিকদার। যে ভাবেই হোক রাজনীতি থেকে আদিল কে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।

বিকেল গড়িতে রাত ইরা বৃষ্টিতে ভেজার ফলে সারা শরীরে জ্বরের তাপমাত্রা বেশ অনেক খানি বেড়েছে। আজাদ চৌধুরী প্রথমে বাড়িতে প্রবেশ করেই দেখেন ইরার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। তাই তাকে নিয়ে বাড়ীর পাশে থাকা ডক্টর কে দেখিয়ে মেডিসিন খাওয়ে ছিলো। কিন্তু অতিরিক্ত ঠান্ডা কারনে জ্বর বাধিয়ে ফেলেছে। আজাদ চৌধুরীর যথেষ্ট ভরসা ছিলো মেয়ের উপর। সে কখনো ছেলে মানুষি করবে না। কিন্তু আজ একটু গাড়ি পাঠাতে লেট হয়েছে বিদায় একা একা বৃষ্টিতে ভিজে বাড়িতে চলে এসেছে। সালমা চৌধুরী মেয়ের মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছেন। আজকে রাতে সালমা চৌধুরী মেয়ের কাছেই থাকবে ইরা বুঝতে মেরে। সালমা চৌধুরী কে বার বার নিষেধ করলো।

__আম্মু তুমি সুয়ে পরো আমি ঠিক হয়ে যাবো সকালে। ইরা বেশ জুর করেই পাঠিয়ে দিলো সালমা চৌধুরী কে যদি সালমা চৌধুরী ইরার সাথে এই রুমে থাকে তাহলে সারা রাত দুই চোখের পাতা এক করবেন না। সারা রাত জেগে বসে থাকবে মেয়ের পাশে।
ইশান বিকেলে বেশ ব্যাস্ততার জন্য বিকেলে আদিলের সাথে দেখা করতে পারে নি। তবে রাতে চলে এসেছে আদিল দের বাসায়।বাড়িতে যাওয়ার সাঙ্গে সঙ্গে দেখা আশরাফ সিকদার এর সাথে। আশরাফ সিকদার ঈশান কে জিজ্ঞেস করলো!!

__তোমাকে আজ কাল বেশি দেখায় যাই কোথাই থাকো তুমি??
__আসলে আংঙ্গেল আব্বুর শরীরের কন্ডিশন আগের থেকে অনেক টাই গুরুতর। আজকাল কোম্পানির পাশাপাশি হসপিটালে ও বেশ দৌড়াদৌড়ি করতে হয়।
আশরাফ সিকদার ঈশান কে জিজ্ঞেস করলেন!
বাবা তুমি তো কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করছো। তাতে সমস্যা হয় না কোম্পানি সামলাতে।
ঈশান কিছুটা নরম কন্ঠে জানায়!

__সমস্যা হয় তো বেশ! তবে কি করার আমি ছাড়া তো আর কেউ নেই সামলাোর জন্য।তাছাড়া আব্বুর বিশ্বস্ত পি.এ আছে আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেন৷
আরশাফ সিকদার ঈশান এই মাথায় হাত রেখে বললেন চিন্তা করো ঠিক হয়ে যাবে তোমার বাবা। কথা শেষ করে ঈশান উপরে যেতে চাইলে আশরাফ সিকদার ঈশান কে জিজ্ঞেস করলেন বিয়ে করবে কবে তোমরা।আমরা কি নাতি নাতনির মুখ দেখবো না নাকি???
আশরাফ সিকদার যথেষ্ট মিশুক মানুষ সবাই সাথে খুব তারাতাড়ি মিশে যায়। ঈশান আশরাফ সিকদার কে জানায় মেয়েই তো খুজে পাচ্ছি না আংকেল। আপনার একটা মেয়ে থাকলে আমার জন্য বেশ সুবিধা হতো। আপনাকে অতিরিক্ত সুসংবাদ দিতাম!!ঈশান কথা শেষ করে হাসতে হাসতে চলে গেলো আদিলের রুমে।
ঈশান এর এমন অদ্ভুত হাসি দেখে আদিল রাগে কটমট করতে করতে বললো!!!

___পাবনা ওই দিকে সোজা গিয়ে বামে!!!
ঈশান এর হাসি কমা দূরের কথা আরও বেড়ে গিয়ে আদিল কে বললো !!
__চল দুইজনে এক সাথে যাই রাস্তা চিনতে সুবিধা হবে!!
অহনা সিকদার বেশ কিছু পর আদিলের রুমে আসলেন৷সোনালি তালুকদার এর মেয়ে আইরা তালুকদার এর বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে। ঘরে প্রবেশ করে দেখেন ঈশান বিছানায় ভিমরি খেয়ে সুয়ে আছে সাথে আদিল ও। অহনা সিকদার আদিলের দিকে প্রশ্ন ছুরে বললেন!!
__আমি তোমার এনগেজমেন্টের ডেট ঠিক করেছি আদিল!
আদিল অহনা সিকদার এর কথাই বেশ হবাক হলেন??
__মানে!! কি বলছো মম???

__অহনা সিকদার নিজের চোয়াল শক্ত করে বললেন!! মাই ডিসিশন ইস ফাইনাল ডিসিশন !! কোনো এক্সকিউজ শুনতে রাজি নয় আমি!!!এনগেজমেন্ট এর জন্য পিপারেশন নাও আদিল!! রাইট নাও???
অহনা সিকদার নিজের মতামত জানিয়ে চলে গেলেন রুম থেকে। তার সিদ্ধান্ত মানেই মানতে সবাই বাধ্য। আদিল তো জানেই না মেয়ে টাকে। অহনা সিকদার কে কার সাথে এনগেজমেন্ট তা জিজ্ঞেস না করে উল্টো রাগিয়ে দিলো এখন সে জানবে কিভাবে মেয়ে টা কে!!! আদিল এর মতোন কনফিউজে আছে ঈশানের ও।আদিল দ্রুত গতিতে কল করে তার ড্যাড আশরাফ সিকদার কে। কল পাওয়ার সাথে সাথে আশরাফ সিকদার চলে আসেন আদিলের রুমে।
আশরাফ সিকদার কিছু খুশি খুশি মনে প্রশ্ন করেন ছেলেকে!!!

__হাই জেন্টাল ম্যানরা লাল পানি খাওয়ানোর জন্য কি গুরুতর কল করেছো।
__আদিল রাগে চোখ মুখ কটমট করতে করতে বললো!! তোমার বউ আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না ড্যাড।
আশরাফ সিকদার মনে মনে বললো!
__আমাকেই শান্তিতে থাকতে দেই না আর! টুম তো ছোটা বাচ্চা। আশরাফ সিকদার আদিলে কে জিজ্ঞেস করলেন! কি করেছে আমার বউ তোমার সাথে!! সব সময় আমার বউয়ের দুষ দিবা না আমার মন খারাপ হয় বুঝছো!!!
আদিল বেশ রেগে গিয়ে বললো!!!
তোমার বউকে তুমি সামলাতে পারো না!!! আমার বিয়ে নিয়ে টানাটানি করছে কেনো??? এত দিন ছিলো রাজনীতি নিয়ে আর এখন পরেছে আমার বিয়ে নিয়ে।।

__আরশাফ সিকদার নিজের মুখ টাকে গোমরা করে বললেন!!!বউ কে সামলাতে বেশ কষ্ট হয় আমার।আজকে পরেছে তোমার বিয়ে নিয়ে কালকে পরবে আমার বিয়ে নিয়ে।সবি কপাল!!!
ঈশান বাপ ছেলের এমন কথা শুনে ব্যাবা চ্যাকা খেয়ে বসে আছে। এদের দেখলে কে বলবে এরা বাপ ছেলে।দেখে মনে হয় বন্ধ।ঈশান মুখ টাকে গোমরা করে বেশ অভিমানি হয়ে বললো!!!

__আংঙ্গেল আপনার একটা মেয়ে থাকলে আমার জন্য সুবিধা হতো আশেপাশে আর খুজতে হতো না!ফ্যামিলি প্লানিং কি এখনো করছেন নাকি শেষ করে ফেলেছেন।
আশরাফ সিকদার বিছানা থেকে উঠতে উঠতে ঈশান কে উদ্দেশ্য করে বললেন!! ফ্যামিলি প্লানিং শেষ করে ছিলাম। ছেলের যা অবস্থা মনে হচ্ছে আমার আবার শুরু করতে হবে।
ইশান বিছানা থেকে সোজা উঠে বসলো আর বললো!! আংঙ্গেল তাহলে আমার ওডার টা নিয়ে যান!!
__আদিল বেশ অবাক হয়ে বললো!!!
__ মানে???

এক রহস্যময় ভালোবাসা পর্ব ২

ঈশান ঠোঁট আঙুল দিয়ে ইশারা করে চুপ করতে বলে আর বলে বড় দের মাঝে ছোট দের কথা বলতে নেই।
এখন বুঝতে পারছি আংঙ্গেল কেনো আবার এই বয়সে ফ্যামিলি প্লানিং করতে চাইছেন???
আশরাফ সিকদার ঈশান এর কথাই সম্মতি জানিয়ে বললেন!! আহারে আমার নিজের জন্য!কেউ একজন এত দিনে আমার মনে কথা বুঝলো!!! আশরাফ সিকদার উওর করতে করতে চলে গেলেন নিজের রুমে। কিন্তু আদিল যায় জন্য আসতে বলে ছিলো তার বাবা কে লাস্ট পযন্ত কি না সেটাই শুনতে পারলো না।

এক রহস্যময় ভালোবাসা পর্ব ৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here