এক রহস্যময় ভালোবাসা পর্ব ২৯
Chadny islam
ঘড়ির কাটার টিংটং শব্দ তুলে বলে দিচ্ছে গভীর রাত এখন!প্রায় বারোটা কাটাই চারিদিকে শুনশান অন্ধকার। আদিল স্থির নয়নে তাকিয়ে আছে ইরার দিকে ইরার লাস্ট কথাটা শুনে আদিল এর স্টোক হওয়ার উপক্রম। আজকে যে শুধু রাগ হচ্ছে এমন টা হয়।ভিষণ মন খারাপ হচ্ছে। ইরা আদিল এর মন খারাপ টা বুঝতে পেরে আদিল এর পাশে গিয়ে বসলো আদিল কে মানানোর জন্য আদিল এর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো!!
___সরি..!
আদিল নিশ্চুপ কোনো কথা বলছে না। হয়তো আজকে তার সত্যিই অনেক কষ্ট হচ্ছে। আদিল এর এমন গোমরা মুখ দেখে ইরার ও বেশ খারাপ লাগলো! তবুও আদিল কে উদ্দেশ্য করে বললো!!
___কেউ সরি বললে ইট’স ওকে বলতে হয় আপনি কি এই টাও জানেন না!
আদিল ইরার দিকে তাকিয়ে নিষ্পাপ গলাই বললো!!
____তুমি কি তোমার স্বামী হিসাবে আমাকে সত্যিই মেনে নিতে পারছো না।
ইরা অসহায় দৃষ্টিতে বললো!!
“” এমন টা বলবেন না প্লিজ! আমি মেনে নিয়েছি আপনাকে!
“”তাহলে সময় কেনো চাইছো?? আমি কি তোমাকে ভালোবাসতে পারি না। তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার রাখতে পারি না!
ইরা মাথা নত করে ফেললো তাকে বুঝাবে কি করে! তার একটা প্যারসোনাল সমস্যা আছে।শুধু তারি নই পৃথিবীর প্রত্যেক টা নারীর আছে। ইরা কে চুপ করে থাকতে দেখে। আদিল বললো!!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
___আমার একটা হেল্প করবা??
“”কি হেল্প??
“”আমাকে হয় ওয়াশরুমের ভেতরে আর নয়তো রুমের বাইরে ফেলে দাও৷ আমি ডিস্টার্ব আমার লাইফ নিয়ে।
ইরার আদিল এর কথা টা এক দম ভালো লাগলো না! সে সত্যিই ইচ্ছে করে কোনো কিছু করছে না। ইরা ভিষণ রেগে গিয়ে স্পষ্ট গলাই বললো!!
___পিরিয়ড হয়েছে আমার! এখন আপনি চাইলে এখন…….
কথা শেষ করার আগেই আদিল এক শক্ত থমক দিয়ে ইরা কে থামিয়ে দিয়ে রাগান্বিত গলাই বললো!!!
____সেট আপ!! ঘুমাও গুড নাইট!
বলেই আদিল নিজের জামা কাপড় চেন্স করে বিছানার উপর এক পাশ ঘুরে সুয়ে পরলো।ইরা ফ্যাল ফ্যাল করে কিছুখন তাকিয়ে রইলো আদিল এর দিকে। তারপর ইরা কি করবে বুঝতে না পেরে নিজেও ড্রেস চেন্স করে রুমের লাইট ওফ করে মাঝে একটা বড় সাইজের কোল বালিশ রেখে সুয়ে পরলো।
সবাই ছাদে এক সাথে
আশরাফ সিকদার প্রিয়াশ ঈশান আদিব সবাই ছাদে বসে রিল্যাক্সে লাল পানি খাচ্ছে। প্রিয়াশ বরাবরি সবার থেকে ভালো করে মদ মেশাতে পারে! তাই আপাতত এই কাজ টাই করছে। সবার শরীরের কথা চিন্তা করে অতিরিক্ত মদ্রপান করলো না বিশেষ করে আশরাফ সিকদার । তার হার্টে সমস্যার! রিফাত ওয়াশ রুমে যাবে বলে ছাদ থেকে নেমে রুমের ভেতরে প্রবেশ করলো।রিফাত তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। কলি জুথী এখনো ঘুমাই নি। প্রায় বেশ অনেক রাত পযন্ত তারা এত গল্প আড্ডা দিতে ব্যাস্ত ছিলো যে ঘড়ির কাটা চোখেই পরে নি। কলির ভিষণ খোদা লাগছে। সে হালকা খাবার নেয়ার জন্য কিচেনে এসেছে।
কলি খেয়াল করে নি রিফাত কে কলির বলা কিছু কথার জন্য সেদিন এর পর থেকে রিফাত আর কলির সাথে কথা বলে না ইগনোর করে দূরে দূরে থাকে। কলি খাবার নিয়ে উপরে যাবে তখনি সোফার দিকে চোখ পরতেই দেখে রিফাত জগ থেকে গ্লাসে পানি ডালছে। কলি হাতের পিলেট টা নিয়ে এগিয়ে যায় রিফাত এর দিকে। কলি কে দেখে রিফাত চলে যেতে চাইলে কলি রিফাত এর হাত দরে কিছু একটা একটা বলতে চাইলে রিফাত এক ঝটকাই নিজের হাতটা সরিয়ে নেই কলির থেকে।রিফাত এর এমন ব্যাবহারে কলি চোখ ভিজে উঠে নিমিষেই ।রিফাত কোনো রকম কলির সাথে কথা না বলে বরং কলি কে উপেক্ষা করে উপরে ছাদে চলে যায়। কলি বেশ কিছু খন সেখানেই দাড়িয়ে মন খারাপ করে বসে থাকে কেনো করে রিফাত এমন ভালোবাসা কি কখনো ধনী গরিব থেকে হয়। তাকে কে বুঝাবে এই কথাটা ।
পরের দিন সকাল বেলা_____′″
হালকা মিষ্টি রোদ এসে আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছে!রুমের ভেতরে পুরো শুনশান কোনো আওয়াজ নেই।ইরা ঘুম গুম জড়ানো অল্প ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে বুঝতে পারলো।তার খুব থেকে খুব কাছে কেউ। নিশ্বাস এর গরম উষ্ণ আর্দ্র হাওয়া ভেসে আসছে। তার শরীর টাকে নারাতে পারছে না। মনে হচ্ছে শক্ত কিছু দিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। ইরা অল্প অল্প করে তাকাই। ঘুম এর রেশ এখনো কাটে নি অল্প চোখ মেলে তাকাতেই দেখে আদিল দুই হাতে আঁকড়ে ঝাপটে দরে সুয়ে আছে তাকে।আদিল আরেক টু টেনে ইরার কোমর দরে নিজের কাছে টেনে আনলে।ইরা ছটপট করে উঠে বিরক্ত বোধ করে। তার এত কাছে আাসাটা মেনে নিতে পারছে না।ইরা আদিল কে নিজের তেকে ছাড়াতে চাইলে। আদিল এক থমকে থামিয়ে দিয়ে বলে!!!
___কি হচ্ছে এসব এমন করছিস কেনো?? ঘুমাতে দে আমাই।
ইরা গাল ফুলিয়ে বললো!!
____আমাকে ছেড়ে দিয়ে তারপর ঘুমান!
আদিল যেনো ইরার কথাই পাওাই দিলো না বরং আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে বললো!!
___ইউ আর মাই প্রোপার্টি! সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি.
ইরা মুখ ঘোমরা করে বললো!!
___ইস্টুপিট আপনি একটা। আমি কিভাবে আপনার প্রোপার্টি হলাম! আমি আপনাকে ডিস্টার্ব করছি না বরং আপনি আপনাকে ডিস্টার্ব করছেন।আপনার পালোয়ান এর মতোন শক্ত বডি দিয়ে আমারে দরে রেখেছেন। ছাড়ুন বলছি। নয়তো চেঁচাবো!!
আদিল ইরার কথাকে পাওা না দিয়ে ইরার উপরে উঠে সুয়ে পরলো। আদিল দাঁতে দাঁত পিসে বললো!!
___তুমি কার প্রোপার্টি!! আর আমি কাকে যেনো ডিস্টার্ব কর ছিলাম এখন বলো আমি শুনছি!
আদিল এর এমন কান্ডে ইরা বেশ লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো! তার সাথে কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না! তার রাগ হচ্ছে কিন্তু দেখাতে পারছে না।আদিল আস্তে আস্তে ইরার মুখের কাছে নিজের মুখ ঠেকালে ইরা চিৎকার করে বলে!!
___প্লিজ প্লিজ সারুন! আমাকে যেতে হবে।
“””কোথাই যাবেন ম্যাডাম??
“”সবাই আমার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছে!!
“””কেউ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে না ম্যাডাম! আগে শিখে যান স্বামী কে কিভাবে ভালোবাসতে হয়।
“”আপনি আমাকে ছাড়ুন আমি ইউটিউব দেখে শিখে নিব নি।
“””এইটা রান্না করার রেসিপি না ইডিয়েট! যে সব কিছু ইউটিউবে পাওয়া যাবে বা ইউটিউব থেকে শিখে নিবে! এইটা স্বামীর ভালোবাসা স্বামীর কাছেই শিখতে হয় ম্যাডাম।
“”না কোনো প্রয়োজন নেই আমার আপনাকে ।আপনে বাজে নষ্ট খারাপ অসভ্য মার্কা কথা বলেন আমাকে! ছি কি বাজে স্বামী আমার!
আদিল ঠোঁটে ঠোট কামড়ে হাসি সংবরন করে বললো!!
____পৃথিবীতে সব স্বামী রাই বাজে নষ্ট খারাপ হয় মেডাম।আপনি পৃথিবীতে শুদ্ধ ছেলে পেতে পারেন তবে আমি ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আপনি একটা শুদ্ধ স্বামী ও পাবেন না।
আমি এত কিছু জানি না! আমার স্বামী বাজে আর অসভ্য মার্কা কথা ও বলে! আপনার ওজন এতো বেশি কেনো!মনে হচ্ছে আটার বস্তা আমার উপরে রাখা হয়েছে আমি গলে যাচ্ছি তো সরেন আমার উপর থেকে।
আদিল উপর থেকে সরে যেতে যেতে বললো!!
___সালি তুমি বিশ্ব জাহান্নামি!! তোমার রেকর্ড বের করবো আমি কিছু দিন পর।
রতন মিয়া চুপচাপ গালে হাত দিয়ে বসে আছেন বাড়ির গেটের সামনে। এই বাড়িতে তেমন কেউ আসে না। সিকদার মহলের মানুষ ছাড়া। তবে অনেক দেশ থেকে লোক আসে বাড়ির দর্শন পেতে। কারন বাড়ি টা অদ্ভুত রকমের ভয়ংকর। বাইরে থেকে একবার দেখলে মনে হবে এই বাড়িতে মানুষ নই বরং ভুতের বসবাস।
ইরা অহনা সিকদার এর সাথে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করছে।হালকা সুতির থ্রি পিস পরেছে মাথায় বড় করে ঘোমটা টানা। অহনা সিকদার যথেষ্ট স্টাইলিশ একজন মানুষ। তার কোম্পানির কাজের পাশাপাশি তার সৌন্দর্য ও মুগ্ধ করার মতোন। একে একে সবাই এসে বসলো ড্রয়িংরুমে।অহনা সিকদার আদিব কে কিছু জিজ্ঞেস করবেন বলে আদিব এর দিকে তাকাতেই দেখেন আদিব এর চোখ ফোলা দেখে মনে হচ্ছে সারা রাত ঘুমাই নি। অহনা সিকদার আদিব এর দিকে তাকাতেই আদিব মাথা নত করে ফেললো। অহনা সিকদার রাগে কটমট করতে লাগলেন আর বললেন???
____রাতে কোথাই গিয়ে ছিলে আদিব?? চোখ মুখ এর এমন অবস্থা কেনো।
অহনা সিকদার কে ভয় পাই না এমন লোক খোজলে হয়তো এই বাড়িতে একটা ও পাওয়া যাবে না।আদিব ভয়ে কাপছে আর আশরাফ সিকদার এর দিকে তাকাচ্ছে! আশরাফ সিকদার আদিব কে না দেখার ভান করে বার বার অন্যদিকে তাকাচ্ছে। অহনা সিকদার ঠিক বুঝতে পারলেন। নিশ্চয় কোনো গাপলা আছে। যদি থেকেও থাকে তাহলে কি সেইটা! অহনা সিকদার আঙুল তাক করে রাগী গম্ভীর গলাই কিছু বলতে যাবেন। তার আগেই আশরাফ সিকদার উঠে দাড়িয়ে বললেন!!
____বুকে ব্যাথা অনুভব করছি।তাড়াতাড়ি ঘরে চলো রাগিনি ।
অহনা সিকদার কপাল কুঁচকে বললেন!!
___বুকে ব্যাথা উঠেছে মেডিসিন খাও। রুমে যেতে বলছো কেনো আজব।
“”রুমে গেলেই ঠিক হয়ে যাবে বুকের ব্যাথাটা চলো না রাগিণী রুমে চলো!!
“”তোমার বয়স কত খেয়াল আছে।একটা ছেলে কে অলরেডি বিয়ে করিয়ে ফেলেছো! আরেক টা কে আরেক কিছু দিন পর করাতে হবে। এই বয়সেই তোমার কোনো লজ্জা সরম হলো না।
আশরাফ সিকদার গাল ফুলিয়ে বললো!!
___লজ্জা সরম কম দামী জিনিস! যেইটা আশরাফ সিকদার ইউস করে না! রুমে যাবা নাকি স্টোক করবো। আহা বুকে ব্যাথা টা বাড়ছে মনে হচ্ছে। বলেই আশরাফ সিকদার অহনা সিকদার এর হাত দরে টেনে রুমে নিয়ে গেলেন।
আদিব সহ পরিবারের সবাই আশরাফ সিকদার এর পাগলামি টাকে বেশ উপভোগ করলো। আশরাফ সিকদার বরাবরি হাসি খুশি থাকেন প্রাণ উজ্জ্বল একটি মানুষ!
আইরা আর সোনালী তালুকদার এক সাথে বেরিয়ে গেলো বাড়ী থেকে কোম্পানির সব কিছু গুজিয়ে চলে যাবেন বাংলাদেশ ছেড়ে। যেই দেশে তার কোনো কদর নেই সম্মান ভালোবাসা নেই সেই দেশে আর এক দিন ও নয়। প্রিয়াশ টেবিলে বসে আইরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছু খন। কালকে আইরা কে বিয়ের প্রপোজাল দিলে আইরা সাথে সাথেই তা রিজেক্ট করে দেই। প্রিয়াশ এর মাথাই এখন কোনো প্ল্যান আসছে না।কি ভাবে কি করবে বুঝতে পারছে না। আইরা কে সত্যি যে ভালো লাগে বিয়ে করতে চাই বুঝতে পারে না ওই মেয়ে। পারুল বা অনন্য মেয়ে দের মতোন আইরা মেয়ে টাকে ব্যানিশ করতে চাই না। প্রিয়াশ কখনো ফিল করে নি। তার মধ্যেও একটা মন আছে কাউকে ভালোবাসার মতোন। সে এত মেয়ে কে ঠকিয়েছে কষ্ট দিয়েছে তার মাসুল হয়তো হবে এই আইরা মেয়ে টা কে হারিয়ে। কলি কলেজ ড্রেস পরে রেডি হয়ে সকালের ব্রেকফাস্ট করে নিলো। কলি আদিব কে গোমড়া মুখে বসে থাকতে দেখে আদিব কে ইঙ্গিত করে বললো!!
____ভাইয়া আম্মু কে বলবো!!!
আদিব অভাক হয়ে বললো!!
__কি বলবি ছোট আম্মু কে??
ওই যে তুমি কালকে বললা। পড়াশোনা করাচ্ছে আমাকে বিয়ে…..
কলির কথা শেষ করার আগেই আদিব কলির মুখ চেপে দরে বললো!!!
____সিক্রেট কথা কাউকে বলতে নেই।ভালো প্লান দিলাম কাজে না লাগিয়ে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিস আমাকে।চল কলেজে টাইম হয়ে গেছে না।
মাইমুনা সিকদার কি বলতে চাস জিজ্ঞেস করলে আদিব বলে !!
___কিছু না ছোট আম্মু কলেজের তাড়া আছে সেটাই বলতে চেয়ে ছিলো। আমি নামিয়ে দিয়ে আসছি কলি কে।
সকালে সবাই খাবার খাওয়া শেষ করে নিলো ঈশান আর জুথী চলে যাবে বাসায়। রিফাত অলরেডি চলে গেছে বাসায়।রিফাত ফ্রেশ হয়ে সোজা কোম্পানির অফিসে চলে যাবে।
আশরাফ সিকদার এর নির্বাচন এর কাজে যাওয়ার কথা ছিলো কালকে। রাতে ছোট খাটো একটা প্রোগ্রাম করা হয়ে ছিলো বলে যেতে পারে নি। তবে আজকে কোনো ভাবেই হাত ছাড়া করা যাবে না যেতেই হবে। সাথে করে নিয়ে যাবে আদিব প্রিয়াশ আর আদিল কে। ইরা সবার খাওয়া শেষ করে আদিল এর খারাপ টা রুমে নিয়ে গেলো। আদিল সকাল সকাল ভারী নাস্তা করে না। হালকা নাস্তা করে। ইরা খাবার নিয়ে গিয়ে টি-টেবিলের উপর খাবার টা রেখে আদিল কে ডাকলো!!
____এই যে শুনছেন! আপনাকে আব্বু তাড়াতাড়ি উঠতে বলেছেন!!
আদিল এর কোনো সারা শব্দ নেই। মনে হয় আবারও ঘুমিয়ে গেছে। তাই ইরা বিছানায় ঠিক আদিল এর পাশে বসে আদিল কে ডাকলো!!!
____এই শুনছেন আপনি!!
আদিল গুম ঘুম জড়ানো কন্ঠে অল্প আওয়াজ তুলে বললো!!
____হুম!!!
ইরা বুঝতে পারলো আদিল কিছুটা হলেও সজাগ আছে। তাই ইরা আদিল এর উপর থেকে কম্ফর্টার টেনে নিচে ফেলে দিলো আর উঠে রুমের এসি টা ওন করে দিলো।ঠিক পাচ মিনিট পর আদিল শীতে কাঁপা-কাঁপি শুরু করতে লাগলো।তাও বিছানা থেকে উঠলো না বরং পিটপিট করে তাকিয়ে রইলো ইরার দিকে! আর ইরা কে উদ্দেশ্য করে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো!!!
___সকাল টা এত মিষ্টি হতে পারে তোমাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। আমার প্রতিটা সকাল এমন মিষ্টি ময় হোক বউ!
ইরা হাসলো ভিষণ হাসলো আদিল এর কথা শুনে! কি আশ্চর্য এখন এই বাজে লোকের কথা শুনলে ও রাগ হয় না। বরং অনেক টাই ভালো লাগে। ভালোবাসা মিষ্টি বাতাসের মতোন হাতছানি দিচ্ছে। ইরার ভাবনার মাঝেই আদিল উঠে ইরা কে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে দরলো। আর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো!!
_____তোমার রুপের আগুনে আমি ঝলসে যাচ্ছি বউ!!
ইরা বাঁকা হেসে বললো!!
___তাহলে আপনার জন্য ফ্রিজের ঠান্ডা বরফ পানি নিয়ে আসি।
আদিল অভাক হয়ে তাকালো ইরার দিকে আর রাগে কটমট টিয়ে বললো!!!
___বাল বউ আনরোমান্টিক হলে যা হয় আর কি??
ইরা আদিল কে কিছুটা রাগানোর জন্য বললো!!
____আচ্ছা আনরোমান্টিক এর মানে কি???
আদিল সত্যিই রেগে গেলো ভিষন!!আর বললো!!
____সালি তোরে ইন্টারে কে ওঠাছে???
ইরা রেগে গিয়ে বসলো আর অভিমান নিয়ে বললো!!
___এক দম আমার পড়াশোনা নিয়ে কথা বলবেন না! আপনি হয়তো জানেন না আমি যথেষ্ট মেধাবী একজন স্টুডেন্ট!
আদিল ভিরভির করে বললো!!
___হুম হালকা করে তার প্রমান পেয়ে গেলাম।
ইরা রেগে গিয়ে বললো!!
___কি বললেন।
“””কিছু না।
ইরা বেশ বিরক্ত ফিল করছে তাই রেগে গিয়ে আদিল কে উদ্দেশ্য করে বললো!!
___আমাকে এই ভাবে দরে রেখেছেন কেনো!!
আদিল আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে দরে বললো!!
___আমার বউ আমি দরবো না তো কে দরবে তাহলে বউ কে।
কলির কলেজের সামনে
আদিব গাড়িতে চুপ করে বসে আশেপাশে দেখছে। তার চোখ খুজছে কলির বেস্ট টু মানে রিমঝিম কে। কালকে এত বার বলার পরে ও কেনো আসলো না।ওই মেয়ের জন্য পরিবারের কাছে কত গুলা মিথ্যা কথা বলেছে! সেই টা কি ওই মেয়ে জানে। তার ছোট্ট মন টাকে নিমিষেই ভেঙে দিলো।আজকে শুধু একবার দেখা হোক ওই মেয়ের খবর আছে। কলি গাড়ির বাইরে থেকে আদিব ডাকছে তাই আদিব গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। আদিব গাড়ি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে কলি বাইনা ভাইয়া..
“””কি হয়েছে!! ছাগলের মতোন ভ্যা ভ্যা করসিস কেন??
____আমি ফুচকা খাবো!!
আদিব রাগে কটমট করে উঠলো আর বললো!! । ___বাইরের আন হেলদি খাবার খেলে তখন শরীর খারাপ করবে। ছোট আম্মু অনেক বকা দিবে কোনো প্রয়োজন নেই। যা ক্লাসে যা!!
আদিব এর কথা শুনে কলি মুখটা বাঁকিয়ে সামনে দিকে হাটা শুরু করলো! আর আদিব কে বললো!!
____ভাইয়া আমাকে কিন্তু রিমঝিম যেতে বলেছে ফুচকা খাওয়াবে বলে আজকে ওর জন্মদিন তো তাই।
“””আদিব যেনো বোকা বনে গেলো। এখন কি করবে ঠিক না পেয়ে ছুটলো কলির পিছু পিছু।
সিকদার মহলে
আশরাফ সিকদার বেশ কিছু খন যাবত বসে বসে অপেক্ষা করছেন আদিল এর জন্য।আজকে কোনো এক্সকিউজ চলবে না বলে আদিল কে সাথে করে নিয়ে যাবে। আশরাফ সিকদার বেশ বিরক্ত ফিল করছেন তাই কিছুটা গলা উঁচিয়ে ডাকলেন আদিল কে।তার ডাকের আগেই আদিল এসে হাজির! আশরাফ সিকদার কপাল কুঁচকে ফেললো আর বললেন!!!
____মেয়ে দের মতোন মেকাব করা শুরু করছো নাকি?? যে এত বেশি সময় লাগে।
আদিল রেগে গম্ভীর গলা ছেড়ে বললো!!
____আমি অরিজিনাল সুন্দর আমার ওই সব মেকাব এর প্রয়োজন পরে না ড্যাড!! তাছাড়া তুমি হয়তো ভুলে গেছো আমি বিবাহিত নতুন বউ আছে আমার ঘরে।তাই যখন তখন ডাকলেই তো চলে আসা যাই না।
“”তাই নাকি মাই স্যান! নেক্সট টাইম থেকে তোমাকে আর ডাকবো না। সোজা ঘরে গিয়ে তোমার কানে দরে টেনে নিয়ে আসবো। তখন আমি ও দেখবো তোমার ঘরের নতুন বউ টা আমার কি করে!!
“”ড্যাড এক দম এই রকম বাজে কাজ করবা না। আমার একটা সম্মান আছে! তাছাড়া আমাদের প্যাইবেসি বলে ও একটা ব্যাপার সেপার আছে। আমি কি তোমার আর তোমার বউয়ের প্যারসোনাল মোমেন্ট গিয়ে ডিস্টার্ব করি।
“””বেহায়া ছেলে বাবা হই তোমার! আমার বউ তোমার মম হয়।
“””তাতে কি তোমার তো বউ হয়৷
“””বেহায়া ছেলে আমার সম্মান টা বরবাদ করে দিলা!!
“” তুমিই না বলো ড্যাড! তোমার সম্মান নাকি ভুড়ি ভুড়ি! তাহলে এত আগে শেষ হলো কিভাবে?? চিন্তার বিষয় চুরি হয়ে গেছে মনে হয়।
“””আমার সাথে ফাজলামি করো বেহায়া ছেলে। আজকে তোমাকে যদি নাকের জলে চোখের জলে না করেছি তবে তুমি আমার নাম টা পাল্টে দিও।
“”আচ্ছা মি.আপনার নাম টা যেনো কি??
“”আশরাফ সিকদার আর পেরে উঠলেন না ছেলের সাথে কিভাবে পেরে উঠবে। বাপ যদি থাকে ডালে ডালে তো ছেলে থাকে পাতায় পাতায়! আহা কবে এই ছেলে কে একটু টাইট দিতে পারবো।
আশরাফ সিকদার আদিল প্রিয়াশ বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘন্টা খানেক পর। ইরা নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দুতলার রুমের বাইয়ের দিকে সিড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে পড়ে। সিকদার মহলের পিছনের সাইড টা মুটামুটি জঙ্গল থাকাই তেমন কেউ আসে না। দুইতলার এই সিড়ি দিয়ে মনে হয় অনেক দিন যাবত কেউ আসে নি। গত কাল চাবি টা পেয়ে ছিলো আদিল এর কার্বাড এর ভেতরে থেকে। অহনা সিকদার ফিরবে সেই চার টার পরে। আশরাফ সিকদার এবং আদিল কখন ফিরবে জানে না।
তবে ইরা শুনেছে গত কাল কের কাজ আর আজ কাজ মিলিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হবে। মাইমুনা সিকদার কে বলে এসে ছিলো ঘুমাবে কেউ জেনো তাকে না ডাকে। নতুন বউ হয়তো রাত জেগে ছিলো ঘুমাতে পারেনি। তাই মাইমুনা সিকদার বলেন তুমি ঘুমাও খাওয়ার সময় মতোন চলে এসো।ইরা ঠিক আছে বলে চলে এসে ছিলো! ইরা সোজা একটা রিকশা করে চলে যায় সেই Black Rose বাড়ির দিকে! সেখানে যেতে আপাতত ঘন্টা খানেক সময় লাগবে৷ ইরার হাতে টিফিন বক্স রতন মিয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। আগে বাসার ভেতরের দেখা শোনা প্লাস রান্নাবান্নার সব কাজ পারুল করতো। কিন্তু এখন তো পারুল নেই। নতুন একটা কাজের মেয়ে আনতে গেলে ও বেশ কিছু দিন সময় লাগবে। তাছাড়া ও বাড়ী টা বেশ ভুতরে তেমন কেউ কাজ করতে ইচ্ছে প্রকাশ করে না।
দেখতে দেখতে ঘন্টা খানেক এর মধ্যে চলেই আসলো সেই ভয়ংকর বাড়ীর সামনে। রতন মিয়া গেটের সামনে বসে আছেন চেয়ারে। ইরা রিকশা থেকে নেমে গিয়ে ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে রতন মিয়া গেট টা খোলে দেয়। ইরার হাতের খাবার টা রতন মিয়ার হাতে দেয়।ইরা কে বাড়িতে আসতে দেখে রতন মিয়া বেশ কিছু টা ভয় পাই। রতন মিয়া ভয়ে ভয়ে ইরা কে জিজ্ঞেস করেন!!!
____মেডাম এই সময়ে আপনি এই হানে কোনো দরকার।
ইরা আশে পাশে চোখে ঘুরিয়ে পুরো বাড়ি টা ভালো ভাবে দেখে নিলো চোখের পরার মতোন কিছু না পেলে বাড়ীর বাইরে রাখা একটি বড় গাড়ী চোখে হবে। গাড়িটা সে চিনে তবে অল্প পরিচিতি।ইরা কেনো ভাবে রতন মিয়ার সন্দেহের কারন হতে চাইলো না বলে! রতন মিয়া কে শান্ত গলাই বললো!!
____হ্যা আম্মু শুনে ছিলো। পারুল এই বাড়িতে এখন আর থাকে না।আপনার খাবার খাওয়া একটু সমস্যা তাই আমাকে দিয়ে খাবার টা পাঠিয়ে দিলো। প্লিজ খাবার টা শেষ করে আমাকে টিফিন বক্স টা দিয়ে দিন। আম্মুর অনেক পছন্দের এই বক্স টা তাই সাথে করে নিয়ে যেতে বলেছে।
রতন মিয়ার ইরার কথা টা সত্যি বলেই মনে হলো। রতন মিয়া চেয়ারে বসেই টিফিন বক্স বের করে খাওয়া শুরু করতে লাগল তখনি ইরা বেশ অভাক হয়ে বললো!!
___এই খানে কেনো রুমে গিয়ে খাবার টা খান৷
ইরার কথাই জেনো রতন মিয়ার খাবারের ভিষণ উঠে গেলো।ইরা পানি এগিয়ে দিয়ে বললো!!
___ঠিক আছেন আপনি??
রতন মিয়া সম্মতি জানিয়ে বলে!!
___হ্যা ঠিক আছি। বলেই আবার খাওয়া শুরু করলো।
।
ইরা বাড়ির আশপাশ করা নজর রেখে তাক করে দেখ ছিলো। রতন মিয়া এক লোকমা খাচ্ছে তো আরেক বার ইরা কে দেখছে। খাওয়া শেষ করে রতন মিয়া টিফিন বক্স ইরার হাতে দিয়ে বললো!!
____মেডাম এহন আপনি চইলা যান। আমি খাবার খেয়ে নিয়েছি।আর হুটহাট এই বাড়িতে আসবেন না। আপনি এক জন নারী!!
রতন মিয়া কথা শেষ করে চেয়ারে গিয়ে বসলেন! হাতে গুনা পাঁচ মিনিট পর রতন মিয়া চেয়ারেই ঘুমিয়ে পরলেন। ইরা বেশ সময় নিয়ে দেখলো বিষয় টা। তারপর ছুটলো রতন মিয়ার রুমের দিকে।এদিক সেদিন না তাকিয়ে সোজা রুমে প্রবেশ করলো। তেমন কিছুই চোখে পরছে না ইরা ছোট একটা ঘর।ইরা এই এদিক সেদিক খুঁজতে শুরু করলো কিছুই তো নেই।তবে কি সত্যি কিছুই নেই। ইরা নিরাশ হয়ে বসে পরলো। কিভাবে এখন পারুল এর সন্ধান করবে সে। ইরা আরেকটু সামনে এগতেই দেখে আলমারি পাশেই ছোট একটা দরজা। খুবি ছোট ইরা আর চিন্তা ভাবনা না করে দরজার সামনে গেলো আশ্চর্য দরজা টা খোলা তাহলে কি ভেতরে কেউ আছে। ইরা ভয়ে ভয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। ভেতরে বেশ অন্ধকার চারিপাশ টা ভয়ংকর বাজে গন্ধ আসছে নাকে ভেসে। ইরা অল্প অল্প করে এগোয় সামনের দিকে সামনে এগোতেই দেখে একটা দরজা যেখানে বড় করে লেখা গুপ্ত ঘর! আর পাশেই আরেক টা ছোট দরজা যেখানে স্পষ্ট বড় করে লেখা “অজানা রহস্যইরা এগোলো গুপ্ত দরকার দিকে। দরজা খুলে যা দেখলো ইতিমধ্যে তা দেখে শরীরের শীরা অপশীরার প্রতি টা লেম দাঁড়িয়ে গেছে।ইরা অভাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাপা কাপা গলাই বললো!!
____আপনি এই খানে কেনো……?
কলি আগে আগে চলে গেলো ফুচকার দোকানে ফুচকা খাবে বলে। আদিব ও কলির পেছন পেছন যাচ্ছে। কলি অনেক দ্রুত হাটছে। আদিব রিলাক্সে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। কি বলবে আদিব রিমঝিম কে! তাকে ভালো লাগে নাকি ভালোবাসে!! কি বলবে সে নাকি কালকে কেনো আসনি এইটা বলবে। আদিব এর হঠাৎ করে কালকের কথা মনে আসাতে রেগে উঠে। কিছুটা রাগী রাগী মুখ নিয়ে এগোতে থাকে। ফুচকার দোকানের সামনে যেতেই দেখে রিমঝিম সত্যি এসেছে ফুচকা খাচ্ছে। তাহলে সত্যি আজ রিমঝিম এর জন্মদিন আদিব এর মুখ জুড়ে ভেসে আসে হাসির রেখা। আদিব আরেকটু এগিয়ে গেলো আর রিমঝিম কে উদ্দেশ্য করে বললো!
___জন্মদিন এর অনেক অনেক শুভেচ্ছা মিস রিমঝিম!
রিমঝিম যেনো বেশ অভাক হলো আদিব এর কথাই কার জন্মদিন আজ। কাকে জন্মদিন এর শুভেচ্ছা জানালো আদিব! রিমঝিম অভাক হয়ে বললো!!
___ভাইয়া কার জন্মদিন! আপনি কাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন!
আদিব অবাক হয়ে রইলো! আর বার বার কলির দিকে তাকালো তাহলে কি কলি মিথ্যা কথা বলেছে আজকে কি রিমঝিম এর জন্মদিন নয়। আদিব আমতা আমতা করে বললো!!
___ক.কলি যে বললো আজকে তোমার জন্মদিন!
কলি ফিক করে হেসে দিলো সে তো দুষ্টমি করে বলে ছিলো। কিন্তু আদিব তো সত্যি সত্যি ভেবে নিয়েছে। আদিব বেশ লজ্জা পেলো কলি বিষয় টা বুঝতে পেরে বললো!!
__সরি ভাইয়া আমি তো একটু মজা কর ছিলাম তোমার সাথে আর তুমি তো সিরিয়াসলি ভেবে নিয়েছো।
কলি রিমঝিম কে বললো!!
__আরে আমি ভাইয়া কে বলে ছিলাম দুষ্টমি করে তাই তোকে ওয়িশ করছে ভাইয়া।যাক হোক ভাইয়া কে তোর ট্রিট দেয়া উঠিত কিন্তু।
ঠিকি তো বলেছে কলি!জন্মদিন হোক বা না হোক ওয়িশ তো করছে। তাই আদিব কে রিমঝিম এক পেলিট ফুচকা এগিয়ে নিয়ে দিয়ে বললো!!
___ভাইয়া এই টা আপনার জন্য প্লিজ খান!! কিন্তু আজকে আমার জন্মদিন না পরের মাসে চার তারিখে অবশ্যই ওয়িশ করবেন আমাকে!
আদিব রেগে ফুসফাস করে বললো!!
____আমি ফুচকা খাই না! থ্যাংক্স!!
আদিব বেশ কিছু খন চুপ করে রইলো! ওরা খাচ্ছে বেশ তৃপ্তি নিয়ে।কি আছে এই ফুচকায় তার জানা নেই। তবে শুনে ছিলো ফুচকা নাকি মেয়ে দের ইমোশন!আদিব ভাবছে কালকে কেনো আসলো না!এই রিমঝিম আজকে কি আবার জিজ্ঞেস করবে কি না?? আদিব এর ভাবনা শেষ হতে না হতেই কলি আর রিমঝিম হাঁটা শুরু করলো কলেজের দিকে। আদিব অভাক নয়নে তাকিয়ে দেখছে। কি মনে করে যেনো আবার ডাকলো পেছন থেকে!!
___রিমঝিম!!
একবার ডাকে আদিব! সাথে সাথে ডাকটা পৌঁছে যায় রিমঝিম এর কানে পেছন ফিরে তাকিয়ে আদিব এর বেশ কাছে এসে জিজ্ঞেস করে!!
____কিছু বলবেন ভাইয়া।
আদিব রাগে কটমট করতে করতে বললো!!
____আমি তোমার কোনো জনমের ভাই!!?
রিমঝিম এর সহজ সরল উক্তি!!
___আপনি আমার কোনো জনমের ভাই নন! কলি আমার বেষ্ট টু আপনি যেহেতু কলির ভাই তাই মানে আমার ও ভাই।
“”হ্যা বোন। আমাকে জাতীর ভাই বানিয়ে দাও!!
“”মানে!??
আদিব বিরক্তি নিয়ে বললো!!
___পরের থেকে আর ভাইয়া ডাকবা না আমাকে। আমাদের এমনিতেই জায়গা সম্পত্তি বেশ কম। এখন যদি আবার বোন বানাই ভাগ দিতে হবে না বলো তুমি। আমরা দুই ভাই বেশ কিপটা বুঝছো। আমাদের ড্যাড সে তো বিশ্ব কিপটা!আমাদের জায়গা সম্পত্তির ভাগ দিতে হবে বলে আজকে আমাদের আর কোনো বোন নেই!! দুঃখ হয় আমার নিজের জন্য!
কলি আর রিমঝিম যেনো বেশ অভাক হলো!আদিব কে দেখে মনে হয় না এত বেশি কথা বলে। আজকেই প্রথম দেখলো এত বেশি কথা বলতে!তাও আবার কিনা সবাই কে পরিচয় করিয়ে দিলো কিপটা নাম দিয়ে। কলি রাগে কটমটিয়ে বললো!!
____ভাইয়া বড় আব্বু একটু ও কিপটা না।আমাকে কয়েক দিন আগেই একটা আইফোন কিনে দিছে। বড় আব্বু বলেছে তোমার জন্য একটা সরকারি হসপিটাল খুলে দিবে আর তুৃমি কিনা আব্বু কে কিপটা বলছো।
আদিব মুখ বাঁকিয়ে বলে!!
___আইছে আমার বাপের চামছা। তোর আইফোন আজকেই আমাকে দিয়ে দিবি।এই ফোনের জন্য তুই এত বেশি পাকনামি করিস।
“””একদম না বড় আব্বু বলেছে ফোন টা শুধুই আমার!
বলে কলি রিমঝিম কে টেনে নিয়ে গেলো কলেজের ভেতরে।
গুপ্ত ঘরে
অল্প আলোয় স্পষ্ট মুখটা ভেসে আসলো মুখটা যা দেখে ইরা ভয়ে টুকরে উঠে মিনমিন করে বললো!!
____ভাইয়া আপনি এই খানে করছেন।
ইরার কথাই গুপ্ত ঘরে থাকা প্রত্যেক টা মানুষ চমকে উঠে। হাতে গুনা পাচ থেকে সাত জন মানুষ তাও তাদের কে দেখে মনে হচ্ছে ডক্টর! প্রিয়াশ অভাক হয়ে তাকিয়ে বললো!!
___এই মেয়ে তুমি এখানে আসলে কি ভাবে??
ইরা চমকে উঠে ভয়ে প্রিয়াশ এর কথা ঠিক কতটা ভয়ংকর শুনা যাচ্ছে তা হয়তো বলে বোঝানো যাবে না। ইরা প্রিয়াশ এর দিকে চিৎকার করে রাগী গলাই কাপতে কাপতে বললো!!!
____এ..এইটা পারুল না।কি করছেন ওর সাথে। ইরা দৌড়ে পারুল এর কাছে যেতে চাইলে প্রিয়াশ এক উচ্চ থমক দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে!!
___আর এক পা সামনে এগোলে এখানে মেরে ফেলে দিবো। বাঁচতে চাইলে যাও এখান থেকে।
ইরা অভাক হয় প্রিয়াশ এর এমন থমকে।তাছাড়া ঘরের বাজে গন্ধে বমি আসার অবস্থা প্রায় সারা শরীর কাপছে।চোখ বেরে পানি ঝড়ছে।রুম টাও বেশ অন্ধকার। ইরা রেগে গেলো প্রিয়াশ এর উপর কেনো করছে এমন পারুল এর সাথে। ইরা তাও সামনের দিকে এগোনের চেষ্টা করতে লাগলো!! আর বললো!!
___ভাইয়া পারুল কে ছেড়ে দিন! ওকে মারবেন না প্লিজ!
ইরার কথা শুনে আশেপাশের প্রত্যেক টা মানুষ শব্দ করে হেসে ফেললো।এ কেমন অদ্ভুত হাসি ভয়ংকর লাগছে সবাই কে। এদের দেখে মনে হচ্ছে ডক্টর। এত গুলা ডক্টর এই অন্ধকার ঘরে কি করে। ইরা আবার ও একটু এগোতে চেষ্টা করলে।একটা ডক্টর ইরার দিকে বাজে নজরে তাকিয়ে প্রিয়াশ কে উদ্দেশ্য করে বললো!!
___আজকে রাত টা তো এই পাখি কে দিয়েই কাটানো যেতে। সি ইসট বেরি হটস…
সাথে সাথে আশেপাশের প্রত্যেক টা লোক সম্মতি জানিয়ে বললো ঠিক বলেছো। তবে প্রিয়াশ এর মুখটা ফেকাসে হয়ে গেলো! আদিল যদি কোনো ভাবে জানে তার বউ এর দিকে কেউ বাজে নজর দিছে। সব গুলো কেই জান্ত পুতে ফেলবে এই খানেই।প্রিয়াশ ইরা কে মানানোর জন্য বললো!!
___তোমাকে যেতে বলছি যাও ইরা। বের হও এখান থেকে নয়তো শেয়াল কুকুরের এর খাবার হয়ে রাস্তায় পরে থাকবে।
ইরা বাঁকা হেসে বললো!!
___আপনার সাহস দেখে আমি অভাক হচ্ছি।আপনার কি বুক কাপছে না। কি করছেন এই গুলা বেঁচে থাকতে চাইলে আপনারা এখান থেকে চলে যান।
ইরার ছোট খাটো থ্রেটে সবাই হিহিহি করে হেসে ফেললো।আরেক জন এগিয়ে গেলো ইরার দিকে ইরার চুলের মুঠি শক্ত করে টেনে দরে বললো!!
____এই সব মাগী কই থেকা আহে!!
লোক টার কথা শেষ করার সাথে সাথে ইরা চুলের মুঠি থেকে নিজের চুল ছাড়িয়ে সর জুড়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় লোক টার গালে। থাপ্পড় টার এত শব্দ হয় যে এক সাথে সবাই নিশ্চুপ হয়ে যায়।ইরা আরেক টু এগিয়ে আরেক টা থাপ্পড় মারতে গেলে ডক্টর টা ইরার হাত দরে ইরার পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দাতে দাঁত পিসে কিরমির করতে করতে বললো!!
____মা…গী তোর সাহস হইলো কেমনে আমার শরীরে হাত তুললি।
লোকটা প্রিয়াশ কে ইশারা করে বললো!!
____আজকে রাতের জন্য অন্য মেয়ে নই! আজকে এই মেয়ে কেই চাই আমাদের। এই মেয়ের কত তেজ আমি ও দেখবো।
লোকটা বাকি ডক্টর দের ইশারা করতেই একটা চেয়ার নিয়ে আসে। আর সাথে সাথে ইরা কে চেয়ারের সাথে বেঁধে ফেলে।এত গুলা পুরুষ এর সাথে ইরার মতোন সাধারণ একটা মেয়ে কখনো পেরে উঠবে না। তাকে স্পর্শ করছে বাজে ভাবে। ঘৃনা লাগছে নিজের প্রতি! ভিষণ ঘৃনা প্রিয়াশ কেনো আটকালো না এদের কে তাহলে কি প্রিয়াশ ও এদের মতোন ছি….
পারুল এর মরা বডি থেকে কি বের করছে এরা। লাশ টা থেকে বাজে গন্ধ আসছে। গা গলিয়ে বমি আসতে শুরু করলে ইরা গলগল করে বমি উগরে বের করে দিলো।ইরার এমন বাজে অবস্থা দেখে প্রিয়াশ পানি এনে ইরা কে মুখে চেপে পানি টা মুখে ডেলে দিলো। ইরা কে পানি টা খাওয়ানো শেষ করে পানির বোতল টাকে এমন এক আচার মারে আর দাঁতে দাঁত পিসে বলে!!!
____মরার পাখনা গজাইছে তাই এই খানে আসছিস। কে দিছে তোরে এত সাহস।
ইরার চোখ বেড়ে ঝড়ছে অজস্র পানি সে তো পারুল কে খুজতে এসে ছিলো। আর পেয়ে ও গিয়ে ছিলো তবে মৃত কিন্তু পারুল এর মরার পর ও শেষ রক্ষা হলো না। ইরা শক্ত গলাই কম্পিত শুরে বললো!!.
___বাঁচতে চাইলো পারুল কে ছেড়ে দে।
পাশ থেকে এক লোক স্বশব্দে হেসে হিহি বলে উঠল!!
__আমরা আর বাঁচতে চাই না তো! মরে যেতে চাই কে মারবে আমাদের কে তুই মারবি??
অন্য আরেকটা ডক্টর চেতে গিয়ে বললো!!
___ সালির বেডির সাথে এত কিসের আলাপ তোর। পার্টি করমো রাতে। ঘুমের ইনজেকশন মার সালিরে।
বলেই একজন ডক্টর একটা ইনজেকশন বের করে আনলো ইরার হাত বাধা থাকাই কোনো রকম বাঁধা প্রোয়গ করতে পারলো না ইরা। ডক্টর টা হাতের এক বাহু টেনে নিয়ে একটা ইনজেকশন লাগিয়ে দিলো।
“”””””” ইরা চিৎকার করে আদিল কে ডাকলো কিন্তু সে তো আশে পাশের কোথাও নেই।তাকে বাঁচাবে কে সে তো এখনি মরতে চাই না! অনেক গুলো দিন বাঁচতে চাই ওই খারাপ মানুষ টার সাথে ইরা চিৎকার করে উঠে আমরা এক সাথে চাই আমাকে বাঁচান! প্লিজ আমাকে নিয়ে যান এখান থেকে কোথায় আছেন আপনি।
বলতে বলতে ইরা চেয়ারেই ঘুমিয়ে যায় না চাইতেও। প্রিয়াশ এত খন খেয়াল না করলেও এখন খেয়াল করে দেখলো ইরার ফোন টা মাটিতে পরে গেছে হয়তো থাপ্পড় মারা সময় কোনো ভাবে মাটিতে পরে গেছে প্রিয়াশ ফোন টা হাতে তুলে সাথে সাথে বন্ধ করে দিলো। আর পাশের সব ডক্টররা মিলে পারুল এর বডি থেকে একটা একটা করে সব প্রয়োজনীয় জিনিস বের করে নিচ্ছে। যে গুলা ভালো দামে সেল করা হবে।
পার্টি অফিসে
নির্বাচন অফিসে বসে আছে আদিল আর আদিব। আশরাফ সিকদার ভাষণ দিচ্ছেন। বেশ কিছু খন রাজনৈতিক সমাবেশ থেকে ভাষন শেষ করে এসে বসলেন আদিল এর পাশে। সাথে সাথে একজন ওয়েটার এসে আশরাফ সিকদার কে পানি দিয়ে গেলেন। আশরাফ সিকদার পানির গ্লাস টা হাতে নিয়ে আদিল কে উদ্দেশ্য করে বললেন!!
___দেখলা তোমার বাবা একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি সুন্দর ভাষন দিলো।
আদিল যেনো অভাক হলো এ কাকে দেখেছে। আদিল হিহি করে হেসে বললো!!
___নিজের প্রশংসা নিজে করা মানেই মূখ্যতা!তুমি মন্ত্রীর পরিচয় দিলে না ড্যাড মূখ্য তার পরিচয় দিলা।
আদিল এর এমন উওর শুনে আদিব হিহি করে হেসে দিলো। আশরাফ সিকদার চোখ গরম করে তাকালে আদিব এর হাসি মুখটা নিমিষেই ফেকাসে হয়ে গেলো! আশরাফ সিকদার গম্ভীর গলাই বললেন!!!
____বেহায়া ছেলে! বাবা হই তোমার সম্মান দিয়ে কথা বলো!!
আদিল আশরাফ সিকদার কে রাগানোর জন্য বললো!!!
___সম্মানিত পিতা মহাশয় আপনাকে আরও বেশি সম্মান দিয়ে বলছি! আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য নন। আসন টা ছেড়ে দিন এবং আমাকে দিয়ে দেন!!!
আশরাফ সিকদার বাঁকা হেসে বললেন!!
___মনে হচ্ছে তুমি আমার শশুর লাগো! চাইবা আর আমি তোমার মেয়ে কে পাওয়ার লোভে তোমার কাছে দিয়ে সব বেচে দিবো। আমি একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমি এত টাও লোভী নয়!!
___নানা ভাই যে কি দেখে তোমার কাছে তার মেয়ে কে বিয়ে দিয়ে ছিলো।কষ্ট হচ্ছে নানা ভাই এর জন্য।
___বেহায়া ছেলে বাবা হই তোমার। একদম আমার রাগিণী কে নিয়ে কোনো কথা বলবা না!
___তুমি শুধু বার বার আমার আমার করছো কেনো ড্যাড।তুমি কি ভুলে যাচ্ছো আমাদের মম আগে পরে তোমার রাগিনি।
আশরাফ সিকদার ঠোঁট বাঁকিয়ে বললেন!!
____এমন ভাবে বলছো যে মনে হচ্ছে! আমি বিয়ে করার আগেই তোমরা পৃথিবীতে আসছো।
আদিল গলা খাঁকারি দিয়ে বললো!!
____ড্যাড ছেলে হই তোমার মুখে লাগাম টানো!!
“””কেনো এখন লাগাম টানবো কেনো! তোমরা কিছু বললে কিছু হয় না আর আমি বললেই সব দুষ আমার! আমি একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমার কোনো লাগাম থাকবে না এটাই স্বাভাবিক “!
“””ড্যাড তোমার যে যুক্তি পুরাই ইলাম অপুর মতোন! কখন জানি সবাই তোমাকে বলে উঠবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশরাফ সিকদার সবাই কে কপি করছে তখন তোমার কি হবে ড্যাড!!
আশরাফ সিকদার গম্ভীর গলাই বললেন!!
___আশরাফ সিকদার এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সে কাউকে কপি করে না! বুঝছো মাই ভয়!
আদিল ফোন টা হাতে নিয়ে আশরাফ সিকদার এবং আদিব এর থেকে বেশ কিছুটা দূরে সরে আসে। সেই সকালে বাসা থেকে বের হয়ে ছিলো তার পর থেকে তো বেশ ব্যাস্ত ছিলো তাই তার প্রেত্নী বউটার কোনো খোঁজ খবর নেয়া হয় নি। আদিল এর ফোনে সেব করা নাম টা জলজল করছে প্রত্নী বউ! আদিল ইরার নাম্বারে কল করলে সাথে সাথেই ফোন টা বন্ধ বলে!
আদিল আরেক টা কল করলো সেম তাও বন্ধ বলছে। আদিল ফোনটা পকেটে ডুকিয়ে নিলো। আর ভাবলো কিছুখন পর আবার চেষ্টা করা যাবে। হয়তো ফোনে চার্জ শেষ। নয়তো নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না।বউ আমার মহা ব্যাস্ত মনে হয় ঘুম নিয়ে।
আদিল আশে পাশে ভালো ভাবে দেখে নিলো তারপর আদিব কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো!!
__প্রিয়াশ কোথাই আশে পাশে তো দেখছি না।
আদিব বলে!!
___প্রিয়াশ ভাই এর বন্ধুরা এসে ছিলো তাই তাদের সাথে চলে গেছে। আজকে আর আসবে না।
দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য মাইমুনা সিকদার ইরা কে ডাকতে উপরে আসলেন। মাইমুনা সিকদার কয়েক বার ডাকলেন ইরা কে কিন্তু কোনো আওয়াজ আসতে না দেখে তিনি ভাবলেন হয়তো ইরা ঘুমাচ্ছে। তাই তিনি আর রুমের ভেতরে প্রবেশ করলেন না। নিচে গিয়ে নিজের খাবার টা শেষ করে ইরার খাবার টা বেরে রেখে গেলেন টেবিলের উপরে।
রাত সাত টা
অহনা সিকদার অফিস এর কাজের অতিরিক্ত পেসার থাকাই মাথা ব্যাথা করছিলো। তাই হালকা মেডিসিন নিয়ে সুয়ে পরেছে। কলির কলেজে ফাস্ট সেমিস্টার এর পরীক্ষা সে জন্য সন্ধ্যার পর থেকে পরতে বসছে। মাইমুনা সিকদার বসে আছেন কফি খাচ্ছেন। বাড়ির কাজের কিছু মহিলা মিলে রাতের জন্য রান্না করছেন।মাইমুনা সিকদার কফি খেতে খেতে হঠাৎ করে মনে পরলো ইরার কথা। তিনি তৎক্ষনাৎ উঠে চলে গেলেন ইরার রুমের সামনে সেই আগের বারের মতোন রুম টা বন্ধ। তাই দেখে মাইমুনা সিকদার দরজার বাইরের থেকে বার বার ডাকলেন ইরা কে।! মাইমুনা সিকদার এর এমন ডাকে তৎক্ষনাৎ গুম ভাঙে অহনা সিকদার এর। তারাতাড়ি করে আসেন ইরার রুমের সামনে মাইমুনা সিকদার কে উদ্দেশ্য করে বলেন অহনা সিকদার !!
____কি হয়ছে????
মাইমুনা সিকদার কিছুটা ভয়ার্ত গলায় বললো!!
___ভাবী ইরা তো দরজা খুলছে না। আমি দুপুরেও ডেকে গিয়ে ছিলাম। তখন ভেবে ছিলাম হয়তো ঘুমিয়েছে মেয়েটা তাই চলে গিয়ে ছিলাম। এখন তো সাত টার ওপরে বেজে গেছে ইরা তো ওঠছে না দেখে ডাকতে আসছি।কিন্তু দরজা তো খুলছে না আর ভেতর থেকে কোনো শব্দ ও আসছে না।
সবার কে এমন চিল্লাতে দেখে কলি ও ছুটে আসে। অহনা সিকদার বার বার দরজায় করা নারছেন আর ইরা কে ভেতরে ভেবে বললেন!!
____কি ছেলে মানুষি হচ্ছে ইরা। রুমের দরজা খোলো।
অহনা সিকদার আরও কঠিন হয়ে শক্ত গলাই ডাকলো ইরা কে! কি অদ্ভুত কোনো শব্দ নেই তাহলে কি ইরা ভেতরে নেই। অহনা সিকদার তৎক্ষনাৎ কল করলো আদিল এর নাম্বারে! একবার রিং হওয়ার সাথে সাথে কল রিসিভ করলো আদিল!!
___হ্যা মম বলো!!
অহনা সিকদার নিজেকে বেশ শান্ত করে বললেন!!
____কোথাই আছো এখন??
“”বাড়িতে আসছি মম। আর মাএ বিশ লাগবে। কিছু হয়েছে মম। কিছু বলবা।
অহনা সিকদার ছেলে কে টেনশন না দিয়ে বরং বুঝিয়ে বললো!!
____না তাড়াতাড়ি বাসায় আসো।
বলেই অহনা সিকদার কল টা কেটে দিলেন তিনি আর ইরার দরজার সামনে দাড়ালেন না।সোজা গিয়ে বসলেন ড্রয়িংরুমে সাথে গেলো মাইমুনা সিকদার আর কলি। সবার চোখ মুখ গোলাটে চিন্তার ছাপ। এত কিছু হয়েছে তবুও আদিল কে কোনো কিছু জানানো হয় নি।সে বিষয় টা কেমন ভাবে নিবে আদিল। অহনা সিকদার হাঁটা হাটি শুরু করলেন অপেক্ষা করতে লাগলেন ছেলের জন্য।আমেরিকা থেকে পাগলামি করে চলে এসে ছিলো যে ছেলে। তাকে যদি বলা হয় তোমার বউ রুমের দরজা খুলছে না সেই দুপুর থেকে। তখন কি হবে। একজন মা হওয়ার পর ও বেশ ভয় কাজ করছে তার মাঝে। ইরার জন্য যে ভালোবাসা দেখেছে আদিল এর চোখে। এক মিনিটে সব কিছু এলোমেলো করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।অহনা সিকদার এর ভাবনার মাঝেই দরজায় কড়া নাড়লো কেউ। কলি ছুটে গিয়ে দরজা খোলে দিলো। আদিব কলির মাথাই টোকা মেরে বললো!!
____তোর ফোন টা আমাকে দিয়ে দে। নয়তো…
কলি উওর করলো না চলে আসলো দরজা টা খোলে দিয়ে সবাই এক এক করে ভেতরে প্রবেশ করলো! আদিল উপরে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো! কেনো সারা দিন তাকে ইগনোর করলো তার প্রেন্তী বউ টা!তার ছোট বউ টা কি জানে না তার বাজে স্বামী টা তাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে কতটা মিস করে। অহনা সিকদার এর ফর্সা উজ্জ্বল মুখটা নেতিয়ে আছে। চিন্তার ছাপ দেখে আশরাফ সিকদার অহনা সিকদার এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন!!
____কি হয়েছে রাগিণী তোমাকে এত বেশি আপসেট লাগছে কেনো।
অহনা সিকদার গম্ভীর গলাই বললেন!!
___ইরা তো দুপুর থেকে রুমের দরজা খোলছে না। কি হয়েচে বুঝতে পারছি না।
অহনা সিকদার এর পর পর কথা গুলো তৎক্ষনাৎ আদিল এর কানে গিয়ে পৌঁছালো! আদিল অহনা সিকদার কে কোনো প্রশ্ন না করে রুমের সামনে গিয়ে ডাকতে শুরু করলো। এক বার দুই বার তিন বার নয় আর ও বেশ কয়েক বার ডাকলো ইরা কে। কিন্তু ইরা সত্যি কোনো ডাক শুনছে না আদিল রেগে যাচ্ছে ভিষণ রেগে যাচ্ছে। হাতে থাকা কালো সুট টা এক ঝটকাই নিচে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে ডাকলো অহনা সিকদার কে!এত খনে আদিল এর ডাকের আগেই চলে এসেছে পরিবারের সবাই।আদিল রাগে কাঁপছে ঠকঠক করে। এই মূহুর্তে ওই মেয়ে কে কাছে পেলে মাথায় উপর তোলে এক আচার মারতে এইটা কোনো দরনের মজা৷ আশরাফ সিকদার বিষয় টা মুটেও ভালোর লক্ষণ হিসাবে দেখলেন না। ইরা কে খুব বেশি ভালো করে না চিনলে ও জানে ইরা এমন মজা করার মতোন মেয়ে নায়।তাই আশরাফ সিকদার আদিব কে বললেন!!
___রুমের দরজা ভেঙে ফেলো বয়।
আদিব আর এক মিনিট ও দেরি করলো না সাথে সাথে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো।কিন্তু আদিব একা পেরে উঠলো না সাথে আদিস সিকদার ও ধাক্কা দিতে লাগলেন!! বেশ কিছু মিনিট পর দরজা ভেঙে ভেতরের দিকে পরে গেলো । আদিল সবার প্রথমে রুমের ভেতরে প্রবেশ করলো। ইরা কে ডাকলো। তাও উওর করলো না ইরা। সবাই এদিক সেদিক খুঁজতে শুরু করলো ইরা কে।কলির চোখ পরতেই ছোট দরজার দিকে দেখে দরজা টা খোলা সবাই কে ডেকে বলে!!
___ওই দরজা টা খোলা কেনো??
আদিল এগিয়ে যায়। সত্যি দরজাটা খোলা হয়তো ইরা চলে যাওয়া সময় ভুলে গেছে দরজা টা লাগাতে।আদিল শরীরের ভার ছেরে দিয়ে বিছানায় বসে পরলো আর ভাবলো তাহলে কি ইরা পালিয়ে গেলো তাকে ছেরে।কিন্তু কেনো আমি কি কোনো রকম বাজে আচরণ করি। কেনো করো এমন আমরা তো বসে ও কথা বলতে পারলাম সব কিছু ঠিক করতে পারতাম। আমাকে না বলে চলে যাওয়ার কি মানে হতে পারে বেইমানি করলা কেনো আমার সাথে। আমাকে নিষ্ঠুর ভাবে ঠকিয়ে দিয়ে কোথাই হারিয়ে গেলে। স্বাথপর পৃথিবীতে আমি তো তোমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে ছিলাম। তোমাকে ছারবো না আমি। আদিল সিকদার এর অশান্ত মন কে শান্ত করার জন্য তার পেত্নী বউ টাকেই চাই।
সোনালী তালুকদার কোথা থেকে যেনো এসে আহাজারি করে কান্না করছেন। কি হয়েছে তার। কান্নার শব্দ পেয়ে সবাই ছুটে আসেন নিচে। অহনা সিকদার সোনালি তালুকদার কে তুলে সোফায় বসালেন। এক গ্লাস পানি খাইয়ে জিজ্ঞেস করলেন!!
এক রহস্যময় ভালোবাসা পর্ব ২৮
____কি হয়েছে কান্না করছো কেনো।
সোনালি তালুকদার এর কান্না যেনো থামছেই না তার হাত পা কাঁপছে ভয়ে নেতিয়ে আছে কান্নারত গলায় বললেন!!
___আই…আইরা কে পাচ্ছি না সকাল থেকে!! আমি কোথায় খুঁজি নি আমার মেয়ে টা কে আমি কোথাও পাচ্ছি না।আমার মেয়ে টা তো সব কিছু ছেড়ে চলে যাবে বলে ছিলো। কোথায় চলে গেলো!!!!
