একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১৪

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১৪
রনীতা তুশ্মি

—“এইসময় কোথায় যাচ্ছো! খাবার খাবে না?”
বাড়ি থেকে বের হতে নিলেই হঠাৎ পেছন থেকে লুসিয়ার কন্ঠস্বর শুনে কেনীথের পা জোড়া থেমে যায়। কেনীথ পিছনে ফিরে তাকিয়ে বললো,
—“কাজ ফেলে রেখে লাভ নেই। খাবারে মিষ্টি রেখো! এসে মিষ্টি মুখ করতে হবে। ”
কথা শেষ করে কেনীথ আর এক মূহুর্তেও দাঁড়ানোর প্রয়োজন মনে করলো না।ত্বরিত বাড়ি থেকে বের হতে নিলে পিছন থেকে আবারও আতং*কিত সুরে লুসিয়া বললো,
—“একা যাবে নাকি! আমি লোক পাঠাচ্ছি তুমি…….! ”
—“নে নুজনো (প্রয়োজন নেই) ”

পিছনে না ফিরেই যেতে যেতে কেনীথ তীক্ষ্ণ কন্ঠে কথাটা বলেই সে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। এদিকে পিছনে স্তব্ধ পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা লুসিয়া কেনীথের যাওয়ার পানে চেয়ে শুধু এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এছাড়া আর তার করারও বা কি রয়েছে। কেনীথ যা ভাববে তাই করবে সেখানে তার মতো নামকরা মাফিয়ার কথাও মূল্যহীন। লুসিয়া পরবর্তীতে নিজের উপর তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে মনে মনে বললো,
—“এতো বড় মাফিয়া হয়ে লাভটা কি হলো! এই নাতীকেই তো আজ পর্যন্ত ঠিক করতে পারলি না।ঠিক করা তো না হয় পরের কথা, ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে সাধারণ কথাটাও বলতে পারিস না!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

লুসিয়ার মনে যথেষ্ট চিন্তা হচ্ছে কেনীথকে নিয়ে পরবর্তীতেই আবার ভাবছে, ও পারবে! নিশ্চিত ও পারবে! কিন্তু একা যাওয়াতে মনে মধ্যে ক্ষুদ্র ভয়ভীতি বারবার জেগে উঠছে। যতই সে একজন কঠিন আর পাষাণ হৃদয়ের মানুষ হোক না কেনো, দিনশেষে তার একমাত্র নাতী আর নাতনির কাছে সে আর সকল দাদী নানীর মতোই।
কেনীথ সবসময় তার ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও রোজের প্রতি লুসিয়া অনেক বেশি অবসেসড। তার এতো চিন্তা থাকতো না যদি রোজ তার মতো হতো। কিন্তু এমনটা তো হয়নি। মেয়েটা অনেক বেশি নরম হৃদয়ের। ওর জীবনের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যটাও খুব সাধারণ অথচ ও প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠছে চারপাশের মারা*ত্মক সব বিপদের মাঝে। হঠাৎ রোজের কথা মাথায় আসতেই লুসিয়া চমকে উঠলো। এতক্ষণে তো মেয়েটা নিচে চলে আসতো তবে আসলো না কেনো। তার হঠাৎ কিছু ঠিক মনে হচ্ছে না। কেনীথের সাথে আবার কোনো…….
লুসিয়া আর একমুহূর্ত দেরী না করে উপরে গিয়ে রোজের রুমে তাকে খুঁজতে লাগলো। তবে সেখানে গিয়ে না পাওয়ায় সন্দেহ হলো নিশ্চিত কেনীথের রুমে রয়েছে।

কেনীথের রুমে গিয়ে প্রথমে কোথাও নজরে না এলেও পরবর্তীতে যা দেখলো তাতে তিনি চমকে উঠলেন। বারান্দা থেকে অনবরত ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ আসছে। লুসিয়ার আর বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে।
তাড়াতাড়ি বারান্দায় গিয়ে দেখলো রোজ দেওয়ালের সাথে পিছ ঠেকিয়ে হাঁটুতে হাত দিয়ে ঢেকে মুখ গুঁজে অনবরত ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে। তবে এরচেয়ে বেশি বিস্মিত হলো যখন আশেপাশে পুরো বারান্দাটায় একবার চোখ বুলিয়ে দেখলো। পুরো বারান্দা জুরে সাজিয়ে রাখা কালো আর লাল গোলাপ গুলো আর এখন একটাও আস্ত নেই। গাছ থেকে সবগুলো গোলাপ কলি সহ ছিঁড়ে পাপড়িগুলোকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ভাবে বারান্দার ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে।

প্রিয়ে নাতনিকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে তার মতো কঠিন হৃদয়ের মানুষটার মনের ভেতরে উদ্বেগের সঞ্চার হলো। যে নাতনী নিজের হাতে এই গাছগুলোকে পরিচর্যায় বড় করেছে। বাড়ির সার্ভেন্টেদেরও কখনো তার কাজে সাহায্য করতে দেয়নি সেই কিনা শেষে এগুলোর এই অবস্থা করেছে। হুট করেই মনে হলো কেনীথকে ডেকে এনে কোনো ভুল করেনি তো! কেনীথ নিশ্চয় এমন কিছু বলেছে যাতে মেয়েটা যেন তেন নয় বরং প্রচন্ড রকমের কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু কেনীথকে না এনেও কি উপায় ছিলো। রোজের জন্যই তো তাকে আনা। রোজ যত বড় হচ্ছে শ*ত্রুপক্ষ ততই রোজকে লুসিয়ার দূর্বলতা ভেবে তার সাম্রাজ্য শেষ করতেই রোজের ক্ষ*তির পূর্বপরিকল্পিত ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
লুসিয়া আর এসব না ভেবে রোজের কাছে দু হাঁটু গেঁড়ে বসে ওকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে মৃদু স্বরে বলতে লাগলো,

—“মোয়া দরোগায়া ভনুচকা! (আমার প্রিয় নাতনী) ; কেনীথ তোমায় কি বলেছে। ”
রোজ কোনো উত্তর দিলো না। সে ওভাবেই মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে। রোজকে দেখে মুহূর্তেই লুসিয়ার চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো। তবে নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও বলতে লাগলো,
—“এভাবে কেনো কাঁদছো। তুমি জানো তুমি এভাবে কাঁদলে আমার কষ্ট হয় তবুও কেনো কষ্ট দিচ্ছো আমায়! ”
এবারও রোজ কিছু বললো না।
—“রোজ…..!!!”
এবার রোজ ত্বরিত মাথা তুলে লুসিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলতে লাগলো,
—“ডাকবে না আমায় এই নামে! আমার নাম রোজ না! শুনেছো তুমি! আমার নাম রোজ না! চাইনা আমার এই কু*ৎসিত নাম। এখন থেকে আমার আশেপাশে আর কোনো গোলাপ দেখতে চাইনা। আমি ঘৃণা করি এসব। আই যাস্ট হেইট রোজ!!!”

এটুকু বলে রোজ আর কিছু বলতে পারলো না। সোজা লুসিয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। রোজের এমন অবস্থা দেখে লুসিয়ার গলা কাঁটা বিঁধে যাওয়ার মতো অবস্থা। চোখে পানি ছলছল করছে অথচ সে কাঁদতে পারছে না।এই মেয়েটাকে সে ছোট্ট দেখে নানা বিপদের মাঝেও আগলে রেখেছে আর আজ ………লুসিয়ার কেনো যেনো বারবার মনে হচ্ছে রোজের এই অবস্থার জন্য কোনো না কোনা ভাবে সেই দায়ী।
—-“ভানুচকা! মোয়া ভানুচকা! কি বলেছে কেনীথ! বলো আমায়া। ”
রোজ লুসিয়ার কাছে কাঁধে মুখ গুঁজে থাকা অবস্থাতে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো,
—“ওকে খুঁজে পেয়েছে। তুমি বলেছিলে ও কখনোই কেনীথের লাইফের ফিরে আসবে না। কিন্তু ওকে কেনীথ খুঁজে নিয়েছে। কেনো এতোদিন মিথ্যা বলেছিলে, তুমি মিথ্যা না বললে তো আমি এই আশা কখনোই করতাম না।দেখতাম না কেনীথকে নিয়ে সপ্ন। সবাই ধোঁকা দিয়েছে। সবাই আমার সাথে মিথ্যে খেলা খেলেছে। আমার চাই না এমন জীবন। কেনীথ আমাকে শুধু তার বোনের নজরেই দেখে ও কখনো আমাকে ভালোবাসেনি। কেনীথ শুধু ওকেই ভালোবাসে আমাকে না!”

রোজ কথা শেষ করে আবারও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। অন্যদিকে লুসিয়া রোজের কথায় চমকে উঠলো। রোজকে দু হাত দিয়ে সোজা করে ওর কান্নারত লাল হয়ে যাওয়া ফর্সা ত্বক আর ফোলা ফোলা রক্তিম চোখের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত সুরে বললো,
—“তুমি কার কথা বলছো! তুমি যা বলছো..……..এসব কি কেনীথ তোমায় নিজে বলেছে। ”
রোজের গাল চোখের অশ্রুতে সম্পূর্ণরূপে সিক্ত। লাল ঠোঁটটা বারবার কেঁপে উঠছে। লুসিয়ার কথা শুনে ঠোঁট চেপে ধরে শুধু মাথা ঝাঁকালো। তার এই স্বীকারোক্তিতে রোজ ভেবেছিলো লুসিয়া খুশি হবে কিন্তু এমন কিছুই হলো না।লুসিয়া চোখমুখ আরো ভীতিকরে রুপান্তর হলো। রোজ নিজের কান্নাকে কিছুটা থামিয়ে বললো,
—“তোমার তো খুশি হওয়ার কথা। খুশি হওনি তুমি! দেখো বাবুশকা, মেয়েটা কত লাকি তাই না! ও কেনীথকে পাবে আর আমি…….. চিরকাল শুধু কষ্টই পাবো!”
লুসিয়া কিছু নিয়ে চিন্তিত ছিলো এবার রোজের কথা শুনে চিন্তিত শুরে বললো,
—“প্রে করো রোজ, মেয়েটার জন্য প্রে করো। তুমি যা বলছো তাই যদি সত্যি হয় তবে ওই মেয়েটা পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের অধিকারী হতে চলেছে। আর এখন যার জন্য তুমি কেঁদে কেঁদে এই বেহাল দশা করেছো সে শুধু তোমার কাজিন কিংবা অসম্পূর্ণ ভালোবাসা নয়! সে যে কতটা ভয়ং*কর আর মারা*ত্মক তা তোমার চিন্তা ভাবনার জগতের চেয়ে বহু দূরে। ”

রোজ লুসিয়ার কথাগুলো এবার মনোযোগ দিয়ে শুনো তার দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটাকে নিয়ে এমন কথা তো কেনীথও বলেছিলো। এসবের মানে কি! কেনীথ তাহলে ওই মেয়েটাকে ভালোবাসে না! ও কি কেনীথের শত্রু! কিন্তু তা কি করে হয় কেনীথ আর ওর তো……….
ও কিভাবে কেনীথের শত্রু হতে পারে। এতো প্রশ্নের মাঝেও রোজ এসবের উত্তর না খুঁজে হঠাৎ মনে মনে অন্য সিন্ধান্ত নিলো। যদি কেনীথ আর ওই মেয়ের মাঝে কিছু নাই হয় তবে কেনীথকে তার নিজের করেই ছাড়বে আর তা যেকোনো মূল্যে। কিন্তু যদি কেনীথ সত্যি সত্যিই ওই মেয়ের হয়ে যায় তবে তাদের মাঝে সে কখনোই বাঁধা হবে না।কিন্তু কেনীথকে সে মৃত্যুর পরও কখনো ভুলতে পারবে না। রোজ এতোটুকু বিশ্বাস করে যে কাউকে ভালোবাসলে পৃথিবীর যেকোনো পরিস্থিতি, পদ্ধতি কিংবা পরিণতির পরও ভালোবাসা যায়।
এরই মাঝে হঠাৎ একজন কালো পোশাক পড়া লোক রুমে এসে নক করলে সে শব্দ লুসিয়া শুনে তাকে ভেতরে আসার পারমিশন দেয়। সেই মূহুর্তেই লোকটি বারান্দায় এসে লুসিয়ার দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে কুর্নিশ করে বলতে থাকে,

—“বস! একটি বিষয় জানানোর ছিলো! ”
—“হুম! ”
—“কেনীথ স্যার Custom Glock 17 এর দুটি গান নিয়ে গিয়েছেন। ”
লুসিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,
—“এগুলো ছাড়া সেফটির জন্য আর কিছু নেই নি! ”
—“নো বস! তবে কিছু অদ্ভুত জিনিস নিয়ে গিয়েছে। একটা সিসার বল নিয়ে গিয়েছে। আই ডোন্ট নো! এসব দিয়ে তিনি কি করবেন।
লুসিয়ার চোখমুখ আরেকটু কুঁচকে বললো,
—“ও করতে চাইছে টা কি! ”

সের্গেইভিচ নিকিতা রাশিয়ার নামকরা আরো এক বড় মাফিয়া। সঙ্গে কাতেরিনা লুসিয়ার সবচেয়ে বড় শ*ত্রুর মধ্যে একজন। নিকিতার সাথে লুসিয়াদের শ*ত্রুতা বহু পুরুনো। শুধু তাই নয় বরং এই সের্গেইভিচ নিকিতাদের বড় এক স্ব*রযন্ত্রের কারণেই রোজের বাবাকে নিজের জীবন ত্যাগ করতে হয়ছিলো। আর এই ঘটনার পর তাদের শ*ত্রুতা যে আরো বেশি পরিপক্ব হয়ে উঠেছে।
আর এবার তাদের নজর গিয়েছে রোজের উপর। তাদের জানা মতে পৃথিবীতে এখন লুসিয়ার দূর্বলতা হিসেবে রোজই রয়েছে আর রোজকে কোনো ভাবে হাতে পেয়ে গেলে লুসিয়াকে শেষ করা বা হাতের খেলা হয়ে যাবে।
রাশিয়ার মাটিতে বিশাল বড় এড়িয়া আরো এক রাজকীয় আধুনিক স্টাইলের বাড়ি। চারপাশে কালো পোশাক আর রাইফেল হাতে বিশাল নিরাপত্তা কর্মীর টহল। দীর্ঘ এক রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছাতে হবে এই বাড়ির দোরগোড়ায়।
কেনীথ নির্বিকারে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। একটা সময় পর বাড়ির সামনে আসতেই গার্ডরা সব এসে ওখানেই আঁটকে দিলো। কেনীথও থেমে গেলো। বাঁকা হেসে গাড়ি থেকে বের হয়ে পরনের কালো লেদার জ্যাকেটটা কিছুটা স্টাইলের সাথে ঠিক করে সামনের দিকে এগোতে নিলেই কয়েকজন লোক এসে কেনীথের পরিচয় জানতে চাইলে সে লুসিয়ার লোক বলে নিজের পরিচয় দেয়। এরপর বডি চেক করে দুজন লোক এগিয়ে এলে কেনীথ বাঁধা দিয়ে নিজের জ্যাকেট থেকে দুটো গান বের করে দেখায়।

কিন্তু লোকদুটো তা নিতে চাইলে কেনীথে না দিয়ে তাদের দিকে ভ্রু উঁচিয়ে বাঁকা হাসে। তা দেখেই আর কেউ তাকে বাঁধা না দিয়ে ভেতরের যাওয়ার পারমিশন দেয় তবে কেনীথের পেছনে আরো চারটি লোক রাইফেল হাতে পেছনে পেছনে যেতে লাগে। বিষয়টি বুঝতে পেরে কেনীথ আবারও বাঁকা হাসলো।
ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই সোফায় পায়ের উপর পা তুলে কালো লাক্সারিয়াস সুট পড়ে ড্রিংকসে্ মেতে থাকা সের্গেইভিচ নিকিতাকে দেখে কেনীথ মুচকি হাসলো। এদিকে লোকটির নজর কেনীথের দিকে পড়তেই মধ্যবয়সী লোকটি কপাল কুঁচকে তাকালো।
কেনীথ ধীরে ধীরে ঠিক মুখ বরাবর সোফাটায় হেলান দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে গিয়ে বসে পড়লো। এদিকে তার পেছনে নিকিতার চারজন গার্ড তো রাইফেলের ট্রিগারে ধরেই রেখেছে। এদিকে ওদিক মনে হলেই সোজা কেনীথের মাথায়….!
নিকিতার এমন জিজ্ঞাসা সূচক চেহারা দেখে পেছন থেকে একজন লোক তাকে জানালো কেনীথ লুসিয়ার লোক। এটা শুনে লোকটি হেসে বললো,

—“আর কেউ আসেনি! এ একা এসেছে নাকি! ”
এটা শুনে কেনীথের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোক গুলো বললো,
—জ্বী বস! ”
এটা শুনে যেন লোকটির আরো হাসি পেলো। কেনীথকে তাচ্ছিল্যের সুরে জিজ্ঞেস করলো,
—“কি রে, একা এসেছিস নাকি! মরণের ভয় নেই নাকি তোর! তোর ম্যাডামের কি লোকজন সব কমে গিয়েছে যে আমার এরিয়ায় একাই চলে এসেছিস। ”
কেনীথ কিছুই বললো না বরং একই ভাবে বাঁকা মুচকি হেসে নিকিতাকে দেখে চলেছে। এদিকে নিকিতা কোনো উত্তর না পেয়ে কিছুটা কপাল কুঁচকে কেনীথকে দেখতে লাগলো। এরপর ম*দের গ্লাসে একবার চুমুক দিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে বললো,

—“ভাবসাব তো ভালোই দেখছি! একা যখন এসেছিস তাহলে ছোট খাটো খেলোয়াড় তো তুই না। নিশ্চিত লুসিয়ার অতি বিশস্ত কেউই হবি! তোর চেহেরাটা নতুন, কোথা থেকে আনিয়েছে তোকে? নাকি পুরাতন খেলোয়াড় ;এতোদিন গর্তে ছিলি! ”
কথা শেষ করেই আবারও লোকটি জোরে জোর হাসতে লাগলো। নেশার মাত্রাটা একটু বেড়ে গিয়েছে বিধায় উল্টোপাল্টা বকে যাচ্ছে। কিন্তু এবারও কেনীথ কি বললো না বিধায় লোকটির এবার কিছুটা রাগ হলো। কিছুটা মেজাজ দেখিয়ে ভদকার গ্লাসটা কাঁচের টেবিলের উপর শব্দ করে রেখে সামনের দিকে ঝুঁকে বললো,
—“ফাজলামি করতে এসেছিস! কথা বলিস না কেনো। লুসিয়া কোন উদ্দেশ্য পাঠিয়েছে তোকে বল! ”
এরপর সাথে সাথেই বললো,

—“এর কাছে কোন অ*স্ত্র পেয়েছিস!
—“জ্বী বস! এর কাছে গান….
কথা শেষ করার আগেই কেনীথ কিছু না বলে জ্যাকেট থেকে গানটা বের করে টেবিলের উপর রাখলো। তখনই লোকটি তা দেখে তাচ্ছিল্যের সাথে হেঁসে বললো,
—“এটা কি! তুই কি এটা দিয়ে আমাকে মা*রতে এসেছিস নাকি! ”
কেনীথ এবারও কিছু না বকে লোকটির দিকে হাসি মুখেই তাকিয়ে রইলো। এবার লোকটি নিজের কন্ঠ স্বরকে কিছুটা তীক্ষ্ণ করে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললো,
—“কে রে তুই! তোর নাম কি! ”
কেনীথ মুচকি হেসে বললো,
—“ভিকে! আ’ম ভিকে, দ্যাটস মিন ভাম্পায়ার কেনীথ! ”
এটা শোনা মাত্রই আশেপাশের সার্গেইভিচ নিকিতার মাঝে তো কোনো হেলদোল হলো না কারণ সে এই নামের সাথে এই প্রথমবার পরিচিত কিন্তু চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় শ’খানের লোকগুলো নিজেদের রাইফেল মূহুর্তেই হাত থেকে ফেলে দিয়ে হাঁটু গেড়ে নিচের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে বসে পড়লো। হঠাৎ এমনটা হওয়ায় নিকিতার নেশাগ্রস্ত মস্তিষ্ক চমকে উঠলো। সে ত্বরিত দাঁড়িয়ে আশেপাশে তাকিয়ে জোরে জোরে চেঁচিয়ে বললো,

—-“এসব হচ্ছেটা কি!
যেসকল সোলজার কিংবা বডিগার্ড নিজেদের আত্মসমর্পণ করেছে তারা ব্যতীত আরো কিছু লোক হয়েছে যারা একই ভাবে স্থির রয়েছে। একদিকে কেনীথের পেছনে রাইফেল হাতে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা লোক অন্যদিকে নিকিতার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আন্ডারবস, ক্যাপো আর অ্যাসোসিয়েট সহ তার আরো কিছু বিশস্ত বডিগার্ড তার প্রটেকশনের জন্য সজাগ হয়ে দাঁড়িয়ে।
নিকিতা নিজের কর্মীদের এই হাল দেখে সম্পূর্ণ বিস্মিত অন্যদিকে কেনীথের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা তার লোকেরা এখনো কিছু করছে না বিধায় সে রেগে গিয়ে হুং*কার দিয়ে তাদের উদ্দেশ্য বললো,
—-“মাথা খারাপ নাকি, এখনো একে শুট করা হচ্ছে না কেনো! ”
তার এই হুংকারে কেনীথের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোর মাঝে কোনো হেলদোল হলো না।তারা অকপটে একই ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। যেন তাদের করার কিছুই নেই৷
এদিকে নিকিতার পাগল প্রায় অবস্থা। সে এগুলোকে বাস্তবতা নাকি নেশার ঘোর ভাববে তাই বুঝে উঠতে পারছে না। তার এতোগুলা কর্মী সবাই কেনো এমন বিহেভ করছে! এদের হয়েছেটা কি! তার কিছুই জানা নেই নিকিতার।
এদিকে নিকিতা রেগে পেছনের আশেপাশে তাকিয়ে বললো,

—“আমার মাথা দেখছিস তোরা! একে শুট করছিস না কেনো! এই আমাদের শ*ত্রু,মেরে ফেল একে। ”
নিকিতার কথা শুনে তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা চারজন বডিগার্ড কেনীথের দিকে রাইফেল তাঁক করলো অন্যদিকে আন্ডারবস, অ্যাসোসিয়েট তার প্যান্টেলওন নিজেদের গান ট্রিগারে আঙ্গুল রেখে কেনীথের দিকে তাক করতেই নিকিতার মুখে হাসি ফুটলো। বেচারা তো ভেবেছিলো এরাও না আবার তার সাথে কোনো গেম খেলে বসে।
তবে তার এই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।কেনীথ পুরো সময়টা নির্বিকারে বসে রইলেও যখনই নিকিতার লোকগুলো তার দিকে নিজেদের গান তাক করতেই মূহুর্তেই কেনীথ নিজের গান দুটো টেবিলের উপর থেকে নিয়ে অকপটে একেরপর এক ট্রিগারে চাপ দিয়ে নিজের টার্গেট মতো নিকিতার লোকদের দিকে গুলি ছুঁড়েছে।
আর অদ্ভুত বিষয় হলো প্রত্যেকটি গুলি হয় ঠিক মাথায় লেগেছে নয়তো সোজা বুকে। বেঁচে থাকার শেষ আশ্বাসও যেন না থাকে তাই হয়তো এমন নিশানা। যা কোনো সুদক্ষ স্নাইপার দ্বারাই সম্ভব।

কেনীথের লাইফস্টাইল, চিন্তাভাবনা বরাবরই অন্যদের চেয়ে আলাদা আর অদ্ভুত। সে কখনো নিদিষ্ট একটা প্রফেশনে নিজেকে জড়ায়নি। সে চাইলে তার পারিবারিক পেশা অনুযায়ী একজন দক্ষ মাফিয়া হয়ে গড়ে উঠতে পারতো কিংবা সাধারণ মানুষ হয়েই বাকিটা জীবন কাঁটাতে পারতো কিন্তু সে তা করেনি। তার মনের ইচ্ছেতে যখন যা প্রয়োজনে হয়েছে তখন সে তাই শিখেছে নয়তো করেছে। কখনো সুদক্ষ স্নাইপার, কেমিস্ট, কখনো কিংবা মাফিয়া না হয়েও মাফিয়ার চেয়ে দক্ষ আর চতুর।

আশেপাশে সবাই যখন নিকিতার হাতের বাহিরে৷ তখন নিজের বাঁচার শেষ আশাটুকুও শেষ হয়ে গেলো যখন নিজের বিশস্ত লোকেদের নিজের সামনেই শেষ হতে দেখলো। তবে পেছনে তাকিয়ে একজনকে দেখে তার মনে আবারও আশার আলো দেখা দিলো। কেনীথ সবাইকে মা*রলেও নিকিতার ক্যাপোকে সে কিছুই করেনি। লোকটি নির্বিকার দাঁড়িয়ে রইছে। ক্যাপো হলো মাফিয়াদের এমন একটি পদ যা সকল গার্ড কিংবা সোলজারকে নিয়ন্ত্রণ করে।
নিকিতা তার ক্যাপোর কাছে গিয়ে পাগলের মতো উত্তেজিত হয়ে বলতে লাগলো,
—“এসব কি হচ্ছে! তুমি কিছু করছো না কেনো। এরা সবাই কেনো আমার কথা অমান্য করছে। তুমি এদের বলো ওকে শেষ দিতে। তুমি কেনো ওদের আদেশ করছো না! প্লিজ এভাবে চুপ থেকো না, প্লিজ কিছু করো! তুমি কিছু বুঝতে পারছো না, ও আমাদের দুজনকেও মেরে ফেলবে! ”

কিন্তু লোকটি মুচকি হেসে নিকিতার দিকে তাকিয়ে বললো,
—“সরি ব্রো! আই কান্ট হেল্প ইউ। ”
এটা শুনে যেন লোকটি বিস্মিত হলো। তার সাথে হচ্ছে টা কি! যে লোকটা তাকে সবসময় বস বলে ডাকে সে কেনো এমন বিহেভ করছে। কিছুই মাথায় ঢুকছে না। সবাই কেনো তার সাথে এমন ব্যবহার করছে। এরা তো তার লোক।
এরই মাঝে সেই লোকটি নিকিতার কাছে আরেকটু এগিয়ে এসে মুখের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসয়ে বলতে লাগলো,
—“আমার সামনেই আমার প্রিয়তমাকে ছিঁড়েখুঁড়ে শেষ করেছিলি তুই। কি ভেবেছিলি আমি সেসব ভুলে যাবো!”
এই বলেই বিস্মিত চোখে তাকিয়ে থাকা নিকিতার মাথায় গানের নিচের অংশ দিয়ে সজোরে আঘাত করতেই সে মূহুর্তেই সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
এরপর সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে গান হাতে নিয়ে দেখতে থাকা কেনীথের দিকে তাকাতেই সেও তাকালো এরপর দুজনেই বাঁকা হাসতেই কেনীথ তাকে একটি সিসার ছোট বল ছুঁড়ে মারতেই সে তা মূহুর্তেই ক্যাচ ধরলো। অন্যদিকে কেনীথ নির্বিকারে তাকে বললো,
—“এটাকে গলানোর ব্যবস্থা করো! আজ সব কর্মের ফল পাবে ও! ”

বাড়ির কিচেনে ছোট ডাইনিং টেবিলের উপর হাত পা বেঁধে শুয়ে রাখা হয়েছে নিকিতাকে। চারপাশে চকচকে আলো দিয়ে সজ্জিত বাড়িটার কিচেন এরিয়ায় অনেকগুলো আলো বন্ধ করে কিছুটা অন্ধকার রুপ দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ পরিবেশটাকে। বলতে গেলে ডাইনিং টেবিলের আশেপাশে কয়েকটা লাইট ব্যতীত বাকি সব লাইট বন্ধ করা।
অন্যদিকে বাড়ির সব গার্ডদের দুরে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা। আজ কেনীথের পৈ*শাচিকতার সাক্ষী সকলে হতে চলেছে।
—“বস! উঠুন, দেরী হয়ে যাচ্ছে তো। ”

হঠাৎ কারো কন্ঠ স্বর শুনে নিকিতার জ্ঞান ফিরতে লাগলো। আওয়াজটা সে ধ্যানের মধ্যে অনেকবারই শুনছিলো একটা পর্যায়ে তার মস্তিষ্ক সক্রিয় হলে নড়াচড়া করতে গিয়ে বুঝতে পারে তাকে বেঁধে আটকে রাখা হয়েছে। ত্বরিত আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো তার একপাশে কেনীথ আর অন্যদিকে তার ক্যাপো দাঁড়িয়ে রইছে।
ওদের দু’জনকে দেখেই নিকিতা আ*তংকিত হয়ে নড়েচড়ার পাশাপাশি চি*ৎকার করতে চাইলে তা আর হয়ে উঠলো না। আওয়াজ করতে গিয়ে তার মনে হলো তার মুখও শক্ত স্কচটেপ দিয়ে আটকানো। লোকটার দমবন্ধ হয়ে আসতে লাগলো আ*তংকে। তার আস্তানাতেই অন্য কেউ এসে তাকে শেষ করে যাবে আর সে কিছুই করতে পারবে না এর চেয়ে দুভার্গ্য আর কি হয়!
নিকিতার ছটফট দেখে কেনীথ মুচকি হাসলো। এবং পাশে থাকা ক্যাপোকে বললো,

—“লাল হয়েছে তো! ”
ক্যাপো রোমান নির্বিকারে উত্তর দিলো
—“হুম!”
কিন্তু সে জানে না এটা দিয়ে কেনীথ কি করবে।
—“তাহলে আর দেরী কিসের নিয়ে এসো! ”
কেনীথ আর রোমান দুজনের হাতেই থার্মাল গ্লাভস আর মুখে মাক্স পড়া। কেনীথ তাকে সিসার বলটা দেওয়ার পর রোমান তা গলানোর পূর্ণ ব্যবস্থা করে ফেলেছে। যেহেতু সিসাকে লাল লাভার মতো তৈরি করতে অতিরিক্ত তাপ চাই সেহেতু বলটিকে গলাতে কিছু অতিরিক্ত যন্ত্রেরও ব্যবস্থা করেছে।
কেনীথের হাতে রোমান গলানো লাভার কাস্ট আয়ারনের পাত্রটা দিতেই দিতেই কেনীথ তা খুব সাবধানে গ্রিপিং টুলস দিয়ে জিনসটাকে নাড়িয়ে দেখতে লাগলো। একদম লাল লাভার মতো টগবগে। কেনীথ সেটা নিয়ে নিকিতার কাছে কাছে গিয়ে কিছুটা ব্যঙ্গ করে বললো,
—“সার্গেই…ভিচ নিক্কিতা!
তো নিকি! জীবনের শেষ সময়ে কেমন অনুভূতি হচ্ছে?”
তার এই কথা শুনে নিকিতার ছটফট যেনো আরো বেড়ে গেলো অন্যদিকে রোমানের মাঝে কিছুটা ভীতি সৃষ্টি হচ্ছে কেনীথের পরবর্তী কার্যক্রমের কথা চিন্তা করে। তাই কিছুটা নিজেকে তটস্থ করে কেনীথের উদ্দেশ্যে বললো,
—“স্যার! আপনি এটা দিয়ে কি করবেন। ”
কেনীথ রোমানের কথা শুনে নিকিতার দিক থেকে নজর সরিয়ে রোমানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো এরপর অকপটে বললো,

—“তুমি চাইলে এখান থেকে যেতে পারো! এখন যা হবে তা তোমার সহ্য না-ও হতে পারে। ”
রোমান কিছু বললো না।সে যদিও কিছুটা ভীত কিন্তু সে নিকিতার ক*রুণ মৃ*ত্যুটা নিজ চোখে দেখতে চায়। যত হৃদয়বিদা*রক কিংবা লো*মহর্ষক হোক না কেনো সে কিছুতেই এখান থেকে সরবে না। আজ থেকে কিছু বছর আগেই এই নিকিতাই তার একমাত্র প্রিয়তমা স্ত্রীকে তার চোখের সামনে শেষ করেছে আর সে তখন কিছুই করতে পারেনি শুধু আজকের দিনের অপেক্ষায়।
রোমান একই ভাবে স্থায়ী হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো বিধায় কেনীথ ওকে দেখে মুচকি হাসলো। যতই রোমান নিজেকে শক্ত রাখুক। সে যা করতে চলেছে তা কখনোই সে এভাবে স্থায়ী হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে পারবে না। শুধু সে কেনো, এই বাড়িতে থাকা প্রত্যেকটা মানুষ সহ সকল জড়বস্তু গুলোও আজ নিজ চোখে না হলেও নিকিতার মর্মা*ন্তিক মৃ*ত্যুর আত্নচিৎকারে লোম*হর্ষক ভাবে শিহরিত হবে।
কেনীথ আর বেশি দেরী করতে চাইলো না। নিকিতার মুখ থেকে স্কচটেপটা উঠয়ে নিতেই নিকিতা অনুরোধ করে নিজের জান ভিক্ষা চাইতে লাগলো। কিন্তু কেনীথের মতো এক হৃদয়বিহীন ব্যক্তির কাছে এসবের কোনো মূল্য নেই। কেনীথ নিকিতার অনুরোধ দেখে মুচকি হেসে বললো,

—“কিছু বছর আগে ঠিক এভাবেই হয়তো আন্দ্রে নিকোলাই নামের কেউ নিজের জীবনের ভিক্ষা চেয়ে আকুতি মিনতি করেছিলো কিন্তু…… তুই সেইদিন আর তাকে বাঁচতে দিসনি। গুনে গুনে বিশটা গু*লি করে তার বুক ঝাঁঝড়া করে দিয়েছিলি। মনে আছে সেই কথা নাকি ভুলি গিয়েছিস।
একমিনিট তুই জানিস আমি কেনো তার কথা বলছি! কারণ সে শুধু কাতেরিনা লুসিয়ার ছেলেই ছিলো না বরং আমার একমাত্র মামাও ছিলো। তার সাথে তুই যা করেছিস আজ ঠিক তোর সাথেও তাই হবে।

কিন্তু এছাড়া তোর সাথে আরেকটি বোঝাপড়া বাকি রয়েছে। তুই এবার বাবুশকাকে শেষ করার জন্য তার দূর্বলতার দিকে নজর দিয়েছিস। তুই রোজকে নিজের টার্গেট বানিয়ে নিজের মৃ*ত্যু নিজেই ডেকে এনেছিস। তোর বোকামির জন্যই আজ তোর করুন মৃ*ত্যুর সাক্ষী এই পুরো বাড়িটার একেকটা মানুষ সহ ইট, পাথরগুলোও হয়ে থাকবে।
এই বলেই কেনীথ যা করলো তা দেখার শক্তি কিংবা মস্তিকের সবলতা রোমানের হলো না। সে নিকিতার আত্মচিৎকারে মূহুর্তেই নিজের চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে দু কান চেপে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো।
অথচ কেনীথ হাসি মুখে নির্বিকারে প্রথমে নিকিতার একচোখে গরম সিসার লাভা ঢেলে তার হৃদয়বিদারক লো*মহর্ষক চিৎকার আর গলা কা**টা মুরগীর মতো ছটফাটানি উপভোগ করতে লাগলো। এ যেন এক পৈ*শাচিক আনন্দ।

অথচ নিকিতার এমন করুন দশা দেখে শুধু রোমান নয় দূরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যেকটি বডিগার্ড আর সোলজারদেরও ঠিক একই অবস্থা। তাদের হাঁটু সহ সারা শরীর ক্রমশে কাপছে আর নিকিতার একেকটা চিৎ*কার লোম*হর্ষক ভাবে সারা শরীরে শিহরণ জাগাচ্ছে।
রোমানের সত*র্কতা অনুযায়ী তারা প্র্যত্যেকেই জানতো কেনীথ অত্যন্ত বিপ*দজন*ক আর ভ*য়ংক*র কিন্তু সে যে এমন পি*শাচের কিংবা ন*রপশু কিংবা জা*নো*য়ারের চেয়ে নিষ্ঠুর হৃদয়রের তা তাদের জানা ছিলো না।
অথচ এদিকে কেনীথ শান্ত হলো না। সে আবারও ঠিক একই ভাবে দ্বিতীয় চোখেও সিসার লাল লাভা ঢেলে দিতেই আবারও সেই একই ঘটনা। হৃদ*য়বিদা*রক চিৎ*কারে এখন প্রত্যেকের হয়তো শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।
একটা পর্যায়ে নিকিতা ছটফট করতে করতেই টেবিল থেকে উল্টো দিক হয়ে সোজা নিচে পড়তে গেলো। কিন্তু এখনো ওর দেহ থেকে প্রাণটা চলে যায় নি। কেনীথ ওর এহেন অবস্থায় আবারও হাসলো।

এরপর ওর কাছে গিয়ে শক্ত বুট জুটো পড়া পা দিয়ে তাকে ঢেলে উল্টে দিলো। নিকিতার চেহারাটা সম্পূর্ণ ভ*য়ংক*র আর বি*ভৎ*স হয়ে গিয়েছে। বিশেষত চোখের অংশের দিকে কোনো সাধারণ মানুষের তাকানোর মানসিক ক্ষমতা নেই কিন্তু কেনীথের যেন এসব দেখে শান্তি হলো।
নিকিতা চোখে কিছু দেখতে না পেলেও তার শ্রবণ শক্তি এখন কিছুটা সক্রিয় তবে মস্তিষ্ক যেন ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে।
কেনীথ সটানভাবে দাঁড়িয়ে গ্লাভস আর মাক্সটা খুলে জ্যাকেট থেকে গান দুটো বের করলো। এরপর তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
—“গুনে গুনে বিশটা তাই না! ”
এটা বলতে দেরী নেই আর হিং*স্র কেনীথের অনবরত ট্রিগারে চাপ দিতে দেরী নেই। একের পর এক গুলি ছুঁড়ে নিকিতার বুকটাকে ঝাঁঝড়া করার খেলায় মেতে উঠলো। অথচ তার এই শুট করার শব্দ যতদূর পৌঁছাচ্ছে ততোদূর যেন এক লো*মহর্ষক রোমাঞ্চকর উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। অথচ কেনীথ অকপটে দুটো গানের ট্রিগার চেপে গুনে গুনে দশ বার করে মোট বিশবার শুট করার পরই ক্ষান্ত হলো।

কেনীথ বাড়িতে ফিরতেই লুসিয়া তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
—“তুমি ঠিক আছো! কিছু হয়নি তো। ”
কেনীথ লুসিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। লুসিয়া ওর হাসি দেখে জিজ্ঞেস করলো,
—“কি করেছো তুমি! ওখানকার কি খবর। ”
কেনীথ একটা ব্লাক ফাইল লুসিয়ার হাতে দিয়ে বললো,
—“কর্মের ফল ভোগ করেছে! ”
এরপর যেতে যেতে বললো,
—“খাবার রেডি আছে তো! খিদে পেয়েছে, ফ্রেস হয়ে খাবার খাবো।……… ওহ! মিষ্টির ব্যবস্থা করো, মিষ্টি মুখ করতে চেয়েছিলাম। ”
কেনীথের এমন অকপটে বলা কথাগুলো শুনে লুসিয়া চিন্তিত স্বরে পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলো,
—“তুমি কি ওকে………! ”
কেনীথ পিছনের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বললো,

—“আজ হোক বা কাল! একদিন না একদিন তো সবাইকে ম*রতে হবে। আর শ*ত্রুকে বাঁচিয়ে রাখার তো কোনো প্রশ্নই নেই! ”
কেনীথ কথা বলা শেষ করে চলে গেলেও লুসিয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। তার মস্তিষ্কে অনেক কিছুই চলছে কিন্তু কেনীথ…….. কিছুই বলার নেই ওর সম্পর্কে!
লুসিয়া শুধু ফাইলটা আর রোজের বিষয়টিকে নিয়ে নিকিতার সাথে বোঝাপড়া করতে বলেছিলো কিন্তু কেনীথ তো তাকে পুরো শেষ করেই দিয়ে এসেছে। বিষয়টি কিছুটা অবিশ্বাস্য ঠেকলেও লুসিয়া মনে মনে খুশিই হলো এতোদিনে শ*ত্রু আর তার ছেলের খু*নির প*তনের খবর শুনে। কিন্তু যখন সে এটা জানবে যে নিকিতার মৃত্যু ঠিক কিভাবে হয়েছে তা জানার পর হয়তো সে কেনীথকে নিয়ে আবারও প্রচন্ড বিস্মিত হবে। তার নাতী যে সম্পূর্ণ পি*শাচে পরিণত হয়েছে এটা হয়তো এবার সে পুরোপুরি জেনে যাবে।

খাবার টেবিলে বসে লুসিয়া আর কেনীথ খাবার খাচ্ছিলো। বিশাল বড় টেবিলের সম্পূর্ণ জায়গা জুরে সাজিয়েগুছিয়ে নানা পদের খাবার। কেনীথ আর লুসিয়া অল্প কিছু খাবার নিয়েই নিজেদের খাবার খেতে শুরু করেছে। কেনীথ একবার খেয়াল করে দেখলো সবগুলো খাবারই তার পছন্দের। আগে যখন রাশিয়াতে থাকতো তখন সে এসব খাবারই বেশি পছন্দ করতো। যেমন: চেরনিকা, তুরোন,ক্যাসিয়েনকী, বোর্ষ্চ, খলাবি, পেলমেনি, নাচিনকি ইত্যাদি। খেতে খেতেই হঠাৎ কেনীথ লুসিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,

—“এতো সব খাবার তুমি বানিয়েছো নাকি! খাবারের টেস্ট তো সব তোমার হাতের রান্নার মতোই লাগছে! ”
লুসিয়া কেনীথের কথা শুনে মুচকি হাসলো। যতটা হতাশ সে কেনীথকে নিয়ে হয়েছিলো কেনীথের এই কথাটা শোনার পর মনে হলো কেনীথ তাহলে তাকে পুরোপুরি হতাশ করেনি। লুসিয়া কেনীথের কথা উত্তরে বললো,
—“এসব আমি বানাইনি! আলেসিয়া বানিয়েছে। শুধু তোমার জন্যই এতো খাটাখাটুনি করেছে। ”
রোজের কথা শুনেই কেনীথ থম মেরে গেলো। মুখ ফসকে এ কথাটা বলে যেন ভুল করে ফেলেছে। এজন্যই এখানে সে বেশিক্ষণ থাকতে চায় না। আর এতোবছর পর এসে নতুন করে আর কোনো ভুলও করতে চায় না। আপাতত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে যেতে পারলেই হলো।
কেনীথ চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে বিঁধায় লুসিয়া আবারও কিছুটা হতাশ হয়ে বললো,
—“কেনীথ! তুমি জানো আলেসিয়া তোমার জন্য কতটা অবসেসড। আমি জানি ও যা চাইছে তা তুমি কখনোই তা করবে না কিন্তু প্লিজ যাওয়ার আগে আর ওকে কষ্ট দিও না। ও হৃদয়ের দিক থেকে আমাদের মতো না, ও প্রচন্ড দূর্বল। তোমার সামন্য কথাতেই মেয়েটা প্রচন্ড কষ্ট পেয়ে ভেঙ্গে গিয়েছে। ”
এতোকিছু শোনার পর কেনীথ কিছুই বলছে না দেখে লুসিয়া শান্ত কন্ঠ অনুরোধ সরূপ বললো,
—“কেনীথ! লাস্ট একটা রিকোয়েস্ট করছি। মেয়েটা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বেশি কিছু না, প্লিজ ওকে খাওয়ানোর ব্যবস্থাটা করো। না খেয়ে থাকলে মেয়েটা একদম অসুস্থ হয়ে যাবে। ”
লুসিয়ার কথা শুনে কেনীথ তার দিকে তাকালো। লুসিয়ার এমন অনুরোধে কেনীথ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,
—“ওকে!”

খাবার সাজানো প্লেট নিয়ে রোজের রুমের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দরজায় নক করতেই বুঝলো দরজা খোলা। একবার আলেসিয়া নামে ডাকার পরও কোনো আওয়াজ এলো না। কেনীথ দরজায় হালকা ধাক্কা দিয়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখলো পড়ার টেবিলে উপর বসে রোজ কিছু লেখালেখি করছে।
এসে যেমন পরিপাটি রোজকে কেনীথ দেখতে পেয়েছিলো এখন আর তেমন নেই। তাকে দেখে মনে হচ্ছে উষ্কখুষ্ক এলোমেলো চুলে টেবিলে বসে কিছু লেখতে না বরং যু*দ্ধ করছে। কেনীথ ধীরে ধীরে রোজের কাছে গিয়ে পেছন থেকে দাঁড়িয়ে ওর কার্যকলাপ দেখতে লাগলো,।
টেবিলের উপর গোলাপের পাপড়িগুলোকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলে রেখেছে আর কিছু সাদা কাগজে অনবরত “Kenneth+Rose” লিখছে আর কাটছে। নিজের মন আর মস্তিষ্কের সাথে যেন এক বড়সড় যু*দ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দেখে কেনীথের মাঝে কোনো করুনা না হলেও সে মুচকি হাসলো। এই লোকটা ভারী অদ্ভুত! মানুষকে কষ্ট দেওয়াটাই হয়তো এর কাজ।

—“আলেসিয়া! ”
কোনো সারা শব্দ করলো না রোজ। একই ভাবে নিজের কাজ করতে লাগলো। কেনীথ আবারও ডাকলো,
—“আলেসিয়া! ”
এবারও একই ঘটনা। কেনীথ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,
—“রোজ! ”
এবার রোজ ত্বরিত কেনীথের দিকে ফিরে তাকালো। কেনীথ ওর চেহারা দেখে কিছুটা অবাক হলেও তার মুখের কোনো পরিবর্তন করলো না। চোখমুখ কেঁদে কেঁদে লাল বানিয়ে ফুলিয়ে ফেলেছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে সিক্ত চেহারায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে। একটা মেয়ে এই কিছু মূহুর্তেই এতোটা বি*ধ্বস্ত রুপে কিভাবে পরিণত হতে পারে! এতে কেনীথের করুনা হলো না বরং রোজকে তাচ্ছিল্যের সাথে সম্পূর্ণ একজন ব্রেইনলেস ভাবলো। শুধুমাত্র তার জন্য এতো পাগলামির কোনো অর্থই নেই কেনীথের কাছে। এগুলো তার কাছে শুধু আবেগের বশে করা বোকামি করা।

—“এসব পাগলামো কেনো করছিস! ”
—“কেনো এসেছো এখানে! ”
রোজের অকপটে বলা কথা শুনে কেনীথও নির্বিকারে বললো,
—” অনেক রাত হয়েছে, খাবার খেয়ে নে! ”
রোজ কেনীথের কথায় তাচ্ছিল্যের সাথে মৃদু হাসলো।
—“আমি না খেলে কি হবে! ”
—“অসুস্থ হয়ে যাবি! ”
—“তুমি তো হার্টলেস, এতে তোমার কি! ”
কেনীথ ছোট করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অকপটে বললো,
—“তোর শরীর! তুই না খেলে তুই নিজে অসুস্থ হবি! এতে আবার আমার কি হতে পারে! ”
রোজের মেজাজ খারাপ হলো। কিছুটা তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,
—“তবে এখানে কি ড্রামা করতে এসেছো! তোমাকে এখানে আসতে কে বলেছে। বলেছি না আমার সামনে আসবে না। ”
কেনীথ প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে বললো,

—“বাবুশকা রিকোয়েস্ট করেছিলো তাই এসেছি। তুই যখন চাস না আমি আর তোর সামনে আসি তবে আর আসবো না। খাবারটা খেয়ে নিস!”
কথাটা বলেই কেনীথ রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলেই আচমকা বিকট শব্দে পিছন ফিরে তাকালো। নম্র মেয়েকে হঠাৎ ফুঁসতে থাকা হিং*স্র সাপের মতো আচরণ করতে দেখে কেনীথের আর কিছুই বলার নেই।
কেনীথ ফিরে আসতে নিলেই রোজ বসা থেকে দাঁড়িয়ে খাবারের প্লেটটা নিয়ে সজোড়ে ফ্লোরে ফেলে দেওয়াতে তা বিকট শব্দে রুপ নিয়েছে। আর এখন সে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে কেনীথের দিকে ক্ষি*প্ত চোখে তাকিয়ে।
কেনীথ জানতো এমন কিছুই হবে তবে যাওয়ার আগে লুসিয়ার রিকোয়েস্ট রাখাটাও রোজের জন্য প্রয়োজন ছিলো। তার এতোটুকু সাক্ষাৎতে রোজকে আরেকটু ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম কেনীথ। কেনীথ রোজকে আরেকটু কষ্ট দিতে বললো,

—“ভালো থাকিস! কাল ভোরের ফ্ল্যাটে চলে যাচ্ছি৷ আই প্রমিজ, আর কখনো তোর সামনে আসবো না।”
কথাটা বলেই কেনীথ রুম থেকে বেড়িয়ে পড়তে উদ্বেগ হলো।
এদিকে রোজ কেনীথর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কেঁপে কেঁপে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
—“ভালো থাকিস, হাহ!!! ভালো আর থাকতে দিলে কই আমায়! সম্পূর্ণরুপে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছো আমায়।”
কিছুটা আস্তে কথাটা বলার পর কেনীথকে শোনানোর জন্য জোর আওয়াজে বললো,
—“যত যাই করো না কেনো! তোমায় আমি কখনো ভুলবো না। তুমি অন্য কারো হয়ে গেলেও না! শুনেছো তুমি! তুমি আমার অসম্পূর্ণ ভালোবাসা হলেও আমি তোমাকেই ভালোবাসি! ”
যেতে যেতে কেনীথ রোজের কথার প্রতিটা শব্দ শুনতে পেলেও তার মাঝে কোনো হেলদোল হলো না। সে অকপটে সমান পায়ের তালে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আর কেনীথ চলে যেতেই রোজ ফ্লোরে বসে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।

কেনীথ সিঁড়ির কাছে আসতেই লুসিয়া ওকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—“খেয়েছে! ”
কেনীথ কিছু বললো না তাই লুসিয়া কপাল কুঁচকে রোজের রুমের দিকে নিজের কর্ণকে দৃঢ় করতেই রোজের কান্নার আওয়াজ পেলো। তা দেখে কেনীথের দিকে তাকাতেই কেনীথ নির্বিকারে বললো,
—” এইটুকু প্রয়োজন ছিলো। নাহলে ফিউচারে ওর এক্সপেকটেশন আরো বেড়েই চলতো। ”
কেনীথকে লুসিয়া বলেছিলো ওকে খাওয়ানোর জন্য এদিকে এই ছেলে গিয়ে ওকে আরো কষ্ট দিয়ে এসেছে। সত্যিই সম্পূর্ণ হার্টলেসে পরিণত হয়েছে। লুসিয়ার রাগও হচ্ছে আবার তার চোখে পানিও চিকচিক করছে।
—-” কবে যাচ্ছো তুমি! ”
লুসিয়ার কথা শুনে কেনীথ হাসলো। লুসিয়া আর তার মাঝে মুখের শব্দের চেয়ে চোখ আর মনের কথাটাই বেশি হয়। কিন্তু লুসিয়া কেনীথের মস্তিষ্কের খবর কখনোই জানতে পারেনি।
—“ভোরের ফ্লাইটেই চলে যাবো। ”
যদিও লুসিয়ার এই প্রশ্নটা করতে যথেষ্ট খারাপ লাগছিলো কিন্তু কেনীথ যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে তাতে ওর চলে যাওয়াটাই উত্তম।

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১৩

কেনীথ আর দাঁড়ানো না বরং সেখান থেকে চলে আসতে নিলে লুসিয়া পেছন থেকে বললো,
—“যাই করো না কেনো! ওই মেয়েটার কিছু করো না। ওর কিন্তু কোনো দোষ নেই। ”
লুসিয়ার কথা শুনে কেনীথ পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,
—“কি আর করার! আমাদের ভাগ্যে যা রয়েছে তাই-ই তো হবে! ”

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১৫