একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৬
রনীতা তুশ্মি
“কি হলো, আমার জান-প্রাণ,কলিজা, ফুসফুস! তোমার চেহেরার রং এভাবে উড়ে কেনো গেলো। বউ আমি তোমার, এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গিয়েছো আমায়?”
কেনীথ চোখেমুখে এখনো বিস্ময়। বুঝতে পারছে না এসব নেশার জন্য নাকি এখনো সে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে। এদিকে মেয়েটি খানিকটা কেনীথের দিকে ঝুঁকে এলো। কেনীথের বিস্মিত চোখ জোড়ার দিকে নিজের শান্ত চোখের আ’গুনের ন্যায় জ্ব’লন্ত তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নি’ক্ষেপ করলো।
সেই সাথে কেনীথের গ্রীবাটা ধরে খানিকটা টেনে নিজের মুখের কাছে আনলো। কেনীথের চোখ থেকে নজর সরিয়ে মেয়েটি ওর গ্রীবার নিচের অংশে লক্ষ করলো। ফর্সা ত্বক ছিঁড়ে র”ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। মেয়েটি কিঞ্চিৎ হেসে কেনীথের ক্ষত জায়গাটা দিকে নিজের মুখটা আরেকটু এগিয়ে নিলো। নিমিষেই মেয়েটির জলে ভেজা চুলগুলো কেনীথ উন্মুক্ত বুকে আছড়ে পড়লো।
এদিকে মেয়েটিক মূহুর্তেই নিজের নাক ডগা দিয়ে কেনীথ র”ক্তপ্রবাহের ক্ষ”ত জায়গায় খানিকটা ঘষে নিলো।নিমিষেই কেনীথ অদ্ভুত শিহরণে জেগে গিয়ে খানিকটা কেঁপে উঠলো।
এদিয়ে মেয়েটি এটাও দিব্যি আন্দাজ করে পুনোরায় মুচকি হাসলো। নিজের নাকের ডগায় খানিকটা র*ক্তের ফোঁটাও লেগে গিয়েছে। মেয়েটি কেনীথের মুখের একদম কাছ এসে ফিসফিসিয়ে বললো,
“আমার জামাইটা মনে হয় একটু বেশিই সুশীল হয়ে গিয়েছে। নিজের বউয়ের স্লিট ড্রেসের উম্মুক্ত পায়ের দিকে চোখ পড়তেই চোখ ফিরিয়ে নেয়। অথচ কত সুন্দর পরিকল্পনা করে নিজের শা”লীর সাথে রাত কাটানোর প্লান করেছে। এতোটা সুশীল না হলেও পারতে, জান।”
মেয়েটি খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথেই নিজের কথা শেষ করলো। তবে মেয়েটি যেই না নিজের মুখটা তুলে সরে আসতে ধরেছে, ওমনি কেনীথ ক্ষি”প্ত বাঘের ন্যায় বাম হাতের থাবায় মেয়েটির ঘাড়ের পেছন থেকে চেপে ধরলো। যার দরূন মেয়েটি আর কেনীথ দু’জনেই আবারও একে অন্যের একদম মুখোমুখি।
মেয়েটি এবার খানিকটা অভিনয় করে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ব্যাথা পাচ্ছি তো…”
মেয়েটির কথা শেষ হওয়ার আগেই কেনীথ শক্ত হাতে ওর ঘাড়টা আরো জোড়ে টেনে ধরলো। এবার মেয়েটির ঠোঁটের কোণা থেকে পুনোরায় হাসি ফুটে উঠলো। তার ভেজা ঠোঁটের কোণা হতে যেন রুক্ষ হাসিটা সরছেই না। এদিকে কেনীথ এতোটুকু ধ্যানে ফিরেছে যে এসব মিথ্যা কিংবা তার স্বপ্ন-ভ্রম নয়। এগুলো সত্যিই। তবুও কেনীথ খানিকটা কষ্ট করেই অস্ফুটস্বরে বললো,
“তুই… তুই কি সত্যিই তারা?”
মেয়েটি বিস্তৃত হেসে বললো,
“কেনো, ইরা হওয়ার কথা ছিলো বুঝি?”
কেনীথের চোখমুখ শক্ত হলো। যেন কিছু বলতে চাইছে কিন্তু কি বলবে জানে না। শ্বাস ভারী হয়ে উঠেছে। কেমন যেন শ্বাস আঁটকে আসছে। মেয়েটি আর কেনীথের চোখ একে অন্যের দিকে তাকিয়ে। দুজনের মধ্যে ব্যবধানটাও খুব ক্ষীণ। দুজনের নাকের ডগায় এক ক্ষুদ্র সং”ঘর্ষ এই হলো বলে!
আবার অদ্ভুত ভাবে কেনীথের অ্যাডামস্ অ্যাপেলটা ওঠানামা করছে। শুষ্ক ঠোঁট জোড়াও কিঞ্চিৎ কাঁপছে। চোখজোড়াও যেন জলে আচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে, পালাতে চাইছে যেন বিস্মিত চোখগুলো।
এদিকে কেনীথের এসব সুক্ষ্ম প্রতিক্রিয়ার সবটাই মেয়েটির চোখে ধরা দিলো। মেয়েটির আবারও কিঞ্চিৎ হাসলো। তবে সঙ্গে কেনীথের জন্য আরো একটা বিস্ময়কর কাজ করে বসলো। আচমকা কেনীথের শুষ্ক ঠোঁট জোড়ায় নিজের ভেজা ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। যদিও ঘটনাটা খুব অল্প মূহুর্তের জন্যই ঘটলো। কিন্তু এদিকে কেনীথ পুরো হতভম্ব। নিমিষেই আনায়াকে অনেকটা ধাক্কা দিয়ে পেছনে সরে এসে সোজা দাঁড়িয়ে পড়লো।
কেনীথ মেয়েটির দিক থেকে ঘুরে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস ফেললো। কি বলবে ও, কি করবে ও কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। এখনো সবকিছু নেশার রিয়াকশন মনে হচ্ছে তার। তবে এটুকু বুঝে গিয়েছে যে এসব সত্যিই। কিন্তু মস্তিষ্ক যেন কোনো ভাবেই এটা বিশ্বাস করে মেনে নিতে পারছে না।
এদিকে কেনীথের অবস্থা পেছন থেকে দেখতে দেখতে মেয়েটি হাসলো। কেনীথের ধাক্কার ফলে অনেকটা বিছানায় পড়ে গিয়েছিলো। তবে আপাতত এখন বিছানায় নিজের ডান হাতের ভরে আধশোয়া হয়ে বসে রইছে। পরনের হাঁটু পর্যন্ত ধবধবে বাথরোবটা আরো খানিকটা উঁচুতে উঠে গিয়েছে। অতচ মেয়েটি নির্বিকার ভঙ্গিতে নিজের পা দুটো দুলিয়ে যাচ্ছে। তার মাঝে কোনো হেলদোলই নেই। আশেপাশের সবকিছু যেন সে উপভোগ করতে ব্যস্থ৷
এদিকে কেনীথ এতোক্ষণে নিজেকে যতটা পেরেছে স্বাভাবিক করেছে। জানে না ঠিক কোথায় থেকে কিভাবে কি বলে শুরু করা উচিত। কেননা এখানে সে এক অপ্রকাশিত মানবকে দেখছে, অথচ যে কিনা এতো বছর পর্যন্ত তার কাছে ছিলো মৃ’ত। তবে কিছু কিছু বিষয় হয়তো তার মস্তিষ্কে খেলতে শুরু করেছে। অনেকটা আন্দাজও করে নিয়েছে। তবুও যেন বিস্ময় কাটছে না। কেনীথ জোরে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পেছনে ঘুরে তাকালো। আর যাই হোক, বরাবরের মতো নিজের মধ্যে কাঠিন্যতা বজায় রাখতে হবে।
কেনীথ ঘুরেফিরে তাকাতেই মেয়েটি আবারও মুচকি হাসলো। অনেকটাই ফিট আর ছিপছিপে মসৃণ গড়নের, চোখেমুখে টানটান সৌন্দর্য। কেনীথের ভাবনা অনুযায়ী অনেকটাই শুকিয়ে গিয়েছে ও। যদিও এটা একদম সুষম কাঠামোর গঠনের মধ্যেই পড়ে তবুও সেই আগের আনায়ার মতো সেই নমনীয় ভাবটা কম। গাল দুটো আগে খানিকটা ফোলা ফোলা ছিলো অথচ এখন একদম খাপেখাপে। অতিরিক্ত চর্বি কিংবা অস্বাভাবিক রোগা ভাবটাও শরীরের কোথাও নেই।
শরীরের প্রতিটি অংশ যেন একে অপরটির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সোজা মেরুদণ্ড, উঁচু কাঁধ-গ্রীবা, কথাবার্তার ভঙ্গিমা,ভারসাম্যপূর্ণ চলাফেরা, শান্ত চোখের আগুনের ন্যায় জল*ন্ত চাহনির হাসি কিংবা গোলাপি ঠোঁটের কোণায় থাকা রুক্ষ হাসি ; সবই যেন কেনীথের কাছে নতুন। এছাড়া সর্বকালে শালীনতায় ঘেরা আনায়াও যেন আজ গায়েব। সবসময় মস্তিষ্কের কথা শুনতে থাকা কেনীথের মস্তিষ্কও আজ এই আনায়াকে মানতে পারছে না। বহুরূপী মনে হচ্ছে। অথচ তার চিরকালের অবহেলিত মন তাকে বারবার বলছে ” এটাই তোর আনায়া! এটাই তোর তারা!”
কেনীথ ভাবছে ঠিক কার কথা শোনো উচিত। এদিকে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে শুধু সময় অতিবাহিত হচ্ছে। একজন নির্বিকার, তো অন্যজন দিশেহারা।
এরই মাঝে কেনীথ সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে কড়া কন্ঠে বললো,
“মিস আনায়া, রাইট! আপনি…”
কেনীথের কথা শেষ হওয়ার আগেই আনায়া বাঁধা দিয়ে বললো,
“নো! ঠিক হলো আবার কিভাবে? ভুল বললে তো! মিস না মিসেস হবে। বাচ্চা কালেই বিয়ে গিয়েছে আমার। আর বিয়েটা আপনার সাথেই হয়েছে মিস্টার। ভুলে গিয়েছিলে বোধহয়, এখন মনে পড়েছে কি?”
কেনীথের চোখমুখ শক্ত হলো। বলতে চাইছে অন্যকিছু আর বলছে ভিন্ন কিছু। এদিকে আবার আনায়ার নির্বিকার ভাবভঙ্গির হাস্যরসের সব কথাবার্তা। মুডের ঠিক কি অবস্থা, নিজেও বুঝতে পারছে না। এদিকে কেনীথ কিছু না বলে চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইছে বিধায় আনায়া নিজেই কেনীথের কাছে এগিয়ে এলো। কেনীথ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে অকপটে বললো,
” কিসের গেইম খেলছিস তোরা? কে কে রয়েছে তোর টিমে? বাবুশকা, পাভেল…সাথে আরো কেউ?”
কেনীথ কথা শোনা মাত্রই আনায়া কিঞ্চিৎ গা দুলিয়ে মুচকি হাসলো,
“দেখেছো, এই না হলো আমার জামাই। কিছু বলতেও হলো না, এমনিতেই সব বুঝে গিয়েছে।”
কেনীথ এবার আর কিছু বললো না। চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইছে। এদিকে আনায়া এবার বিছানা থেকে উঠে এসে কেনীথের একদম কাছে এসে দাঁড়ালো। ওর নজর কেনীথের উন্মুক্ত বুকের দিকে চলে গিয়েছে। আলতোভাবে আঙ্গুল দিকে কেনীথের বুকের বা পাশে গ্লাইড করতে লাগলো। কেনীথ আনায়ার হাত ধরে ওকে সরিয়ে দেওয়ার আগে আনায়া নির্বিকারে হেসে বলতে লাগলো,
“উফ! তোমার এই হৃদয়টা তো মনে হয় অনেক বড় তাই না। কত জন যে এই হৃদয়ে জায়গা পেয়েছে কে জানে। চিন্তা নেই, অল্প সময়ের জন্য এলেও এটাকে খুব সুন্দর করে ধুয়েমুছে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো। তুমি আমার সঙ্গে না গেলেও চলবে।”
কেনীথের আনায়ার এমন রংতামাশা ঠিক সহ্য হচ্ছে না। খপ করে আনায়ার হাতের কব্জিটা শক্ত করতে ধরলো। তবুও আনায়া কেনীথের বক্ষস্থলের দিক হতে নজর সরিয়ে কেনীথের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। কিন্তু কেনীথ গাম্ভীর্যের সাথে বললো,
“কিসের জন্য এসেছিস? উদ্দেশ্য কি? আমায় মা”রার জন্য নিশ্চয় এতোগুলা বছর পর এখানে আসিস নি!তবে…”
“আরে! আরে! কিসব কথা বলছো। আমি কি তোমায় মা”রতে পারি?”
এই বলেই আনায়া কেনীথের বাধন থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। অতঃপর কোনো কিছুরই তোয়াক্কা না করে সুন্দর করে কেনীথের গলায় নিজের দু-হাতে মালার মতো পেঁচিয়ে ধরলো।
এদিকে কেনীথ কিছুই বলছে না। শুধু চুপচাপ শক্ত মুখে সটানভাবে দাঁড়িয়ে রইছে।অথচ আনায়া নিজের পা দুটো উঁচিয়ে কেনীথের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
“ঠিক বলেছো,সুইটহার্ট! তোমায় মা”রার হলে এতোগুলো বছর অপেক্ষা করতাম না আমি। আমার তো অন্যকিছু চাই।”
কেনীথের কপালে নিমিষেই ভাজ পড়লো। এদিকে আনায়া মুখ তুলে পুনোরায় কেনীথের নজরের সাথে নজর মিলিয়ে শক্ত চোখে তাকালো। কেনীথ কঠিন কিছু শোনার জন্য হয়তো প্রস্তুতি নিচ্ছিলো কিন্তু আনায়া নিজের ভাবভঙ্গি পরিবর্তন করলো। মুচকি হেসে কেনীথের মাথায় নিজের হাতটা দিয়ে চুল এলোমেলো করে দিলো। বাম হাত কেনীথের গলার সাথে পেঁচিয়ে আনায়া এখন কেনীথের গায়ের সাথে লেপ্টে রয়েছে। আনায়া কিছুটা ইনোসেন্ট মুখ বানিয়ে বলতে লাগলো,
“এসব কি করেছো? এতো সুন্দর বড় বড় চুল গুলো কেটে ফেলেছো! ভেরী ব্যাড, আমার পছন্দ ছিলো তো তোমার বড় চুল গুলো। এই হেয়ার স্টাইলটা একটুও পছন্দ হলো না আমার।”
আনায়ার নির্বিকার কথাবার্তায় কেনীথ নিরেট কন্ঠে আনায়ার উদ্দেশ্যে বললো,
“এসব হেঁয়ালি কথাবার্তা শুনতে চাই নি আমি। দয়া করে এটা বলুন যে আপনাদের কি চাই? আমার কাছে এমন কি রয়েছে যা আপনাদের প্রয়োজন। আর সেটার জন্য আপনি এতবছর পর হুট করে আমার সামনে হাজির হয়েছেন।”
কেনীথের কথায় আনায়া খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলো। চুল থেকে হাত সরিয়ে পুনোরায় দু-হাত দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরে কেনীথের গায়ের সাথে লেপ্টে গেলো। দুজনের মধ্যে দুরত্বটা পুনোরায় ক্ষীণ হলো। তবে এত সব কিছুতে কেনীথের বিশেষ কোনো পদক্ষেপ কিংবা ভূমিকা নেই। সে শুধু সটান ভাবে দাঁড়িয়ে রইছে। আর হাত দুটো প্যান্টের দু-পকেটের কাছে খানিকটা মুঠো করা।
এদিকে আনায়া নির্বিকার ভঙ্গিমায় হেসে হেসে বললো,
“অনেক মিস করেছি জান! সত্যিই অনেক মিস করেছি তোমায়। তোমার অসাধারণ সব অত্যা”চার গুলো,শারীরিক-মানসিক সবদিক থেকে আমায় ধ্বং”স করার তোমার অত্যন্ত সুদক্ষ সব কলাকৌশল কিংবা নিজের আক্রোশ মেটাতে চারপাশের মানুষগুলোকে ধ্বং”স করা, এভভভরিথিং! খুব মিস করেছি আমি এসব।
তবে সে যাই বলো, কাল রাতে মিস-টিসের সবটাই মিটে গিয়েছে। নাইস পারফরম্যান্স জান!”
আনায়া এটুকু বলেই শয়তানি হাসিতে মুচকি হেসে কেনীথের উদ্দেশ্য বাম চোখ মা”রলো। এদিকে কেনীথ খানিকটা অস্থির হয়ে উঠেছে। ও দ্রুত গাম্ভীর্যের সাথে বললো,
“ছাড় আমায়!”
আনায়া ইনোসেন্ট মুখ বানিয়ে বললো,
“কেনো? আচ্ছা, তোমার কি আমায় অসহ্য লাগছে?”
কেনীথ নিরেট কন্ঠে বললো,
“বুঝতে পারছিস যখন, ছাড় আমায়!”
আনায়া কপাল কুঁচকে বললো,
“কি বলো এসব! তোমার জন্য এতো বছর ধরে, এতো কষ্ট করে,পুরো গরম গরম হটপট প্যাকেজ হয়ে এলাম। কই আমায় একটু কিসমিস দিবা, তা না!
সেই তখন থেকে মুখে একটাই কথা, ছাড় আমায়!ছাড় আমায়!
ছাড়ার জন্য এসেছি নাকি। যখন ছাড়তে হবে তখন এমনিতেই ছেড়ে দেবো। এতো আলগা ঢং করতে হবে না।”
কেনীথ এবার পুরো অসহ্য রকমের অস্থির। আনায়াকে পাত্তা না দিয়ে পাশে খানিকটা মুখ ফিরিয়ে উঁচু গলায় ডাকতে লাগলো,
“পাভেল! পাভেল! পাভে…”
কেনীথের চিল্লাচিল্লিতে আনায়া পুনোরায় কপাল কুঁচকে মুচকি হাসলো। কেনীথের দিকে মুখ উচিয়ে মুচকি হেসে বললো,
“দেবর সাহেবকে ডেকে লাভ নেই। উনি এতোক্ষণে হাওয়া হয়ে গিয়েছেন।”
কেনীথ আনায়ার দিকে মুখ ফিরিয়ে রাগা”ন্বিত চোখে তাকালো। মনে মনে হিসহিসিয়ে বললো,
“হাওয়া হয়ে আর যাবে টা কোথায়! সবকিছুর কা”লপ্রিট ওই শয়”তান। ওকে একবার হাতে পাই শুধু, মে’রে, ছিঁ’ড়ে মাটিতে গেঁ’ড়ে রাখবো।”
এদিকে কেনীথের ভাবভঙ্গি দেখে আনায়ার ঠোঁটে কিঞ্চিৎ শয়তানি হাসি ফুটে উঠলো,
“রাগ হচ্ছে তাই না! মা’রতে ইচ্ছে হচ্ছে? কা”টতে ইচ্ছে হচ্ছে?
ওসব বাদ দেও। আমি আছি তো। আমার মতো একটা ঝাক্কাস বউ থাকতে ওসব করে টাইম ওয়েস্ট করার কোনো মানে হয়? ওহ হ্যাঁ, অনেক হিসাব-নিকাশও বাকি রয়েছে। ওসবও তো এবার শেষ করতে হবে তাই না?”
—“তবে সেটাই ক্লিয়ার করে বল। তোর উদ্দেশ্য যেটাই থাকুক, আমার মনে হয় না তা সাধারণ কিছু। নয়তো এতো বছর ধরে এতো বড় গেইমটা কখনোই সাজাতিস না তোরা। কি চাস, সেটা শুধু ক্লিয়ার করে বল।”
এইটুকু বলেই কেনীথ নিজের গলা থেকে আনায়ার হাত দুটো সরিয়ে নিতে চাইলো। কিন্তু আনায়া আরো শক্ত করে, পারলে অনেকটা খামচে কেনীথের গলা দুহাতে পেঁচিয়ে ধরলো। অতঃপর কেনীথের একদম নিকটে নিজের শক্ত মুখটা এগিয়ে অনেকটা দাঁত খিঁচে হিসহিসিয়ে বলতে থাকলো,
একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৫ (৩)
—“এতো তাড়া কিসের আমার জান, প্রাণ, কলিজা, ফুসফুস! যথেষ্ট সময় রয়েছে তো। সব কাজ শেষ না করা অব্দি, যাচ্ছি না আমি। আর তোমাকেও ছাড়ছি না।
দ্য রিয়েল গেম হ্যাজ অনলি জাস্ট বিগান, মাই সুইটহার্ট।”