একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৬ (৩)
রনীতা তুশ্মি
“এতো কিছু জেনেছিস যখন এটা জানিস নি যে ওই সাইত্রিশ জন মেয়ের কি করা হয়েছে?”
আনায়া কেনীথের কথা আর ভাবভঙ্গিতে খানিকটা থমকে গেলো। তবুও চোখমুখ শক্ত করে নিরেট কন্ঠে বললো,
“মানে? কি বলতে চাইছো? ওদেরকে দিয়ে কি তুমি নিজের হাত পা টিপিয়েছো?
কেনীথ খানিকটা বিরক্ত হলো। তবুও নির্বিকারে খানিকটা হাই তুলে বললো,
” নাহ! উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
এবার আনায়ার চোখেমুখে খানিকটা বিস্ময়ের ছাপ পড়লো। কেনীথ ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো৷
“রাশিয়ায় বসে বসে এসব খবর নিতেন নাকি? আপনাদের ওই প্রাণের চ্যালা পাভেল মহাশয়, এসব বলেনি?”
আনায়া কেনীথের দিকে শুধু তাকিয়ে রইলো। তবে কিছু বললো না। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর পুনোরায় কেনীথের উদ্দেশ্যে বললো,
“তার মানে ইনায়াকে মা”রতেই কি…?
আনায়ার কথা শেষ হবার আগেই কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে বিস্তৃত হাসতে হাসতে বললো,
“তোর-আমার বোন ওরফে আমার গুনধর শালিকা ইরারানী, ইনায়া কিংবা সবশেষে সা”ইকো কি”লার ইনা! ও তোর আমার চেয়ে বহুগুণ এগিয়ে নিজের খেলা খেলছে। তার জীবনের উদ্দেশ্য এখন একটাই, আমাকে শে”ষ করা।”
কেনীথের কথায় আনায়া খানিকটা থমকে গেলো। সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,
“যা বলার ঠিক ভাবে বলো। ও কোথায়? আর সাই’কো কি’লার মানে কি বোঝাতে চাইছো? ইনায়া কোথায়?”
—” জানি না।”
—“জানি না মানে কি?সাত বছর আগে শেষবারও তোমার কাছ থেকে আমি এর যথাযথ উত্তর পাইনি। আজও সেই কথা,তুমি জানো না। তবে পাভেলকে কেনো বলেছিলে ইনায়াকে রিসোর্টে আনতে।”
আনায়া কড়া কথায় কেনীথ কিঞ্চিৎ মুচকি হেসে আবারও বলতে লাগলো,
“কিচ্ছু জানিস না? আমার খোঁজ খবর না নিলেও অন্ত্যত তোর নিজের বোনের খোঁজ তো ঠিকঠাক নিতেই পারতি!”
আনায়া খানিকটা গম্ভীর্যের সাথে বললো,
“জানি তো আমি অনেক কিছুই, আবার কোনো কিছুই না। সবকিছুই যে ধোঁয়াশা! সেই ধোঁয়াশা পরিষ্কার করতেই তো আমার এখানে আসা।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আনায়ার কথা শুনে কেনীথ খানিকটা কপাল কুঁচকে আনায়াকে দেখলো। অতঃপর কিঞ্চিৎ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“ওকে ধরে আনার সাধ্য আমার হয়নি। এমনকি ওর সঠিক খোঁজটাও আমি জানতে পারিনি। কিন্তু গত কয়েকবছরে আমার উপর অসংখ্যবার নানান এ”ক্সিডেন্ট আর কিংবা সাজানো-গোছানো প্লান করে মা’রার চেষ্টা করা হয়েছে। যার পেছনে কোনো না কোনো ভাবেই ইনার নামটা উঠে এসেছে। প্রথম প্রথম বিষয়টা এমন ছিলো যে আমি বাড়ি থেকে বের হওয়া মানেই কিছু একটা আমার সাথে ঘটবে।
এরপর একবার এক পার্টিতে অতিরিক্ত ড্রিংকস্ করে ফেলেছিলাম। তখন একটা মেয়ে আমায় সিডিউস করার চেষ্টা করে আলাদা রুমে নিয়ে যায়। এবং আমায় ছুড়ি দিয়ে মা” রার চেষ্টা করে।
আমি যতই ড্রিংকস করি না কেনো, আমাকে পুরোপুরি সিডিউস করার সাধ্য কারো নেই।এটুকু এবিলিটি রয়েছে আমার। যথারীতি মেয়েটাকে আমার হাতেই শেষ হতে হয়। অবশ্য ওকে তখনই আমি মে’রে ফেলিনি। বরং আলাদা ভাবে পার্টি থেকে ওকে ঐ বাড়িতে নেওয়া হয়।এরপর অনেক জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়েছিলো। শেষমেশ শুধু একটা নাম পরিচয় উঠে এসেছে তা হলো ইনা।
এরপর আমিই প্লান করে অনেকবার পাভেলকে বলে এমন রুমডেটের ব্যবস্থা করেছিলাম। বিশ্বাস কর!তোর বোন একটা চান্সও হাতছাড়া করেনি। গুনে গুনে বাকি ছয়ত্রিশটা মেয়েই ওর পাঠানো লোক ছিলো। প্রত্যেকবারই আমার মা*রার চেষ্টা,কখনো ছু”রির আঘাত, কখনো ড্রিংকস্ এ বি”ষ মিশিয়ে,কখনো আবার আমার গ”লা চেপে। আর ওদের থেকে জিজ্ঞেস সেই একটা নামই বেরিয়ে আসতো, তা হলো ইনা। অবশ্য ও যাদের পাঠিয়েছিলো,তারা কেউই সাধারণ কোনো মেয়ে ছিলো না। এরা নিত্যান্তই সব এক্সপার্ট ছিলো। যাই বলিস না কেনো, ইরা কিন্তু প্রচুর কষ্ট করে যাচ্ছে।”
—“আর তুমি সবাইকে শেষ করে ফেলেছো?”
—“হুম! তো কি করবো। অবশ্য মেয়েগুলো দেখতে সুন্দর ছিলো। ডেট করলে করাই যেত!”
আনায়া কিঞ্চিৎ চোখ ছোট ছোট করে কেনীথের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। কেনীথও বিষয়টা হেসে উড়িয়ে দিলো।
—“এক মিনিট তুমি তবে এতো সিওর হয়ে কিভাবে বলছো যে ইনাই হলো ইরা? ওরা তো শুধু ইনার কথা বলেছিলো।”
কেনীথ আনায়ার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,
“আমি যদি ভুল না হই তবে তুই অনেক কিছুই জানিস।তবে…”
—“বলেছি তো আমি অনেক কিছুই জানি তবে হয়তো কোনো কিছুই না। কনফিউশান অনেক রয়েছে, আগে হিসেব মিলিয়ে ওসব ক্লিয়ার করতে হবে। যাই হোক,যেটা জানতে চেয়েছি তা বলো। তুমি কিভাবে নিশ্চিত যে ইনাই ইরা!”
—“তোর বা”পকে কিভাবে মে’রেছি’লাম মনে রয়েছে তো?”
আনায়া খানিকটা গম্ভীর স্বরে উত্তর দিলো,
—“হুম!”
কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,
“যাক মনে আছে তবে। তো ঘটনা হলো আমার উপর দুই-তিনবার এ্যা”টাক হওয়ার পরপরই আমার কাছে একটা অসাধারণ গিফট আসে। একটা চিঠি আর একটা ডিভিডি। ডিভিডিটা ছিলো মূলত তোর বাপকে মা” রার পুরো ভিডিও ফুটেজটা। যেটা আমি তোকে দেখানোর জন্য ভিডিও করেছিলাম। আর চিঠিতে স্পষ্ট হাতে লেখা ছিলো,
“আমার বাবাকে তুমি যেভাবে মে’রেছো আমিও তোমাকে ঠিক সেভাবেই শেষ করতে চাই ভিকে!তুমি আমার বোনকে শেষ করেছো, আমার পুরো পরিবার ধ্বং”স করেছো। তুমি প্রস্তুত থেকো ভিকে, এই ইনায়া তোমায় কখনো ক্ষমা করবে না।”
এরপরও আর কি বলার আছে। অবশ্য আমারও জীবন নিয়ে ওতো ইন্টারেস্ট নেই। একমাত্র শা”লী নয়তো বউয়ের হাতে ম”রলে, বিষয়টা খুব বেশি খারাপ হবে না মনে হয়।”
কেনীথ হাই তুলতে তুলতে সোফায় গা এলিয়ে দিলো। এদিকে আনায়া খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শোনার পর বললো,
“ইরার কাছে কি করে ওই ভিডিওটা পৌঁছালো?”
এটা শোনা মাত্রই কেনীথের চোখমুখের ভাবভঙ্গি পরিবর্তন হলো। প্র”চন্ড রাগ নিয়ে বলতে লাগলো,
“ওটা তোর ওই গাধাকে জিজ্ঞেস কর!”
আনায়া কপাল কুঁচকে বললো,
“কার কথা বলছো?”
—“আপনার দেবর মশাই!”
—“পাভেল দিয়েছে ইরাকে। মানে পাভেল জানে ইরা কোথায়…”
—“নাহ!বিষয়টা তা নয়। ইরা আমাদের হাতের নাগালে নেই। ও বড় কোনো গেমারের হাতে পড়েছে৷ যেখান থেকে ও খুব সহজেই নিজের প্লান গুলো সাজিয়ে খেলতে পারছে।
আর পাভেলের বিষয়টা হলো…আমার সবকিছুর ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব সবসময় ওর কাছেই ছিলো। আর ওই ভিডিওর ফুটেজটাও যাস্ট একটা কপিই থাকার কথা ছিলো। কিন্তু পাভেল আমাকে কিছু না জানিয়েই ওই ফুটেজটাও আলাদা করে আমার সব ইনফরমেশনের সাথে এড করে রেখে দিয়েছিলো। যেটা ঘটনা ঘটার পর পাভেল স্বীকার করে এন্ড ওর ধারণা ফুটেজটা কেউ হ্যাক করেই সরিয়ে নিয়েছিলো। এছাড়া অবশ্য আর কোনো অপশনও নেই।”
আনায়া জোরে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। মনের মধ্যে আরো অনেক প্রশ্ন জমে রইছে। তবে এসবের কূলকিনারাটা কোথায় তাই বুঝতে পারছে না। আনায়া আবারও বললো,
“তার মানে তোমরা কেউ জানো না ইনায়া কোথায় তাই তো?”
কেনীথ নির্বিকারে উত্তর দিলো,
—“হুম!”
—“কাউকে কি সন্দেহ হয়, যে কিনা ইরাকে হেল্প করছে!”
কেনীথ কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
“নাহ, তেমন কেউ সন্দেহের তালিকায় থাকলে ইনার খোঁজ পাওয়াই যেত।”
দুজনের মধ্যেই পিনপতন নীরবতা। আনায়া অনেককিছুই ভাবতে বসে গিয়েছে। কিন্তু কোনাটারই তাল খুঁজে পাচ্ছে না। তবে হুট করেই কেনীথের উদ্দেশ্যে বললো,
“তবে, সকাল বেলা কেনো ঘুম থেকে উঠেই তুমি ইরার নাম নিলে? মানে চাইলিছে,যেন ওখানে ওই অবস্থায় আমার জায়গায় ইরা থাকে?”
কেনীথ এবার খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বললো,
“হেই, কি শুরু করেছিস তুই!কাজের কথা… ”
—“উত্তর দেও আমার।”
—“এ্যাই, খবরদার,তোর এই তেজ অন্তত আমায় দেখাতে আসবি না। আর এটা তো আমার তোদের জিজ্ঞেস করার কথা। ইনাকে যে পাভেল কখনোই রিসোর্টে আনতে পারতো না তা তো আমার জানা কথা। যে কাজ গত সাত বছরে করতে পারেনি সেটা কিনা ও এক বেলায় করবে, এমন অমূল্য পদার্থ পাভেল নয়।
আর আমার নিজের প্রতিও যথেষ্ঠ কনফিডেন্স রয়েছে। অন্তত নেশা করে কারো সাথে…সত্যি করে বলতো! তোরা আমার ড্রিংস এ কিছু মিশিয়ে ছিলি, তাই না! আর আমি যখন রুমে গিয়েছিলাম তখন কেউ ছিলো না।কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখি তুই আমি…অথচ আমার রাতের কিছুই মনে নেই।
আমাকে কি গাধা পেয়ছিস?এখন আবার আমাকেই ব্লেইম করছিস।”
—“আরেহ ব্লেইম কখন করলাম। শুধু জিজ্ঞেস করেছি তুমি ইরাকে কেনো সরি বলছিলে।”
কেনীথ খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলতে লাগলো,
“তুইও জানিস, আমি ওকে বোনের মতো মানি। আর ঘুম থেকে উঠে মাথা কাজ করছিলো না। সবকিছু গুলিয়ে ফেলেছিলাম।আর ভেবেছি ওটা…ইরা হয়তো। মানে… পাভেল হয়তো সত্যি সত্যিই…।”
কেনীথ এটুকু ইতস্ততভাবে বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এদিকে আনায়া কেনীথের দিকে তির্যক চাহনিতে তাকিয়ে ছিলো। তবে আনায়া কিছু বলার আগেই হুট করে কেনীথ বললো,
“কিন্তু তুই আমায় এটা বল যে, তোরা কেনো গতকাল রাতে আমার সাথে এমনটা করলি। ইচ্ছে তো করছে তোদের দুজনকে ধরে মে”রে কুঁ”চিকুঁ’চি করে কা”টাতে।”
আনায়া ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কি করেছি?”
—“কি করেছিস মানে! একটানা সাত বছর স্টিল ভার্জিন ছিলাম আমি। যেটা তুই একরাতে শেষ করে দিয়েছিস৷”
কেনীথ কথাটা খুব গর্বের সাথে বলতেই আনায়া চোখমুখ কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে বললো,
—“জীবনে একবার আকাম-কুকাম করার পর, সে আবার ভার্জিন থাকে কি করে? যাই হোক,যা করছো আমার সাথেই করেছো, নিজের বউয়ের সাথেই করেছো। এতো হা-হুতাশের কিছু নেই।
আর সাত বছর তোমাকে একা ছেড়ে দিয়েই সমস্যাটা হয়েছে। আমার সাথে একবার ডাক্তারের কাছে যাবে।চেক-আপ করাতে হবে।”
—“আমি একদম ঠিক আছি। সামান্য হাত পা কেটে যাওয়াতে ডাক্তার কে দেখাতে যাবে?”
—“হাত পায়ের জন্য না। তোমার মাথায় যে সমস্যা তা আমার জানা। ওটা আর না ঠিক করলেও চলবে। তবে দেখতে হবে তোমার সিস্টেমে কোনো গড়বড় রয়েছে কিনা। একবার ভালোমতো চেক-আপ করা প্রয়োজন।”
—“থা”প্পড়ে গাল ফাটিয়ে দেবো৷ বেহা’য়াপনা ছেড়ে কাজের কথা বল, অ’সভ্য!”
কেনীথ আনায়ার কথা প্রথমে বুঝতে পারেনি। তবে বোঝা মাত্রই মেজাজটা পুরো বিগড়ে গিয়েছে। আনায়ার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বললো। তবে কেনীথের কথায় আনায়ার পাত্তা না দিয়ে নির্বিকারে বললো,
“ভুল বলিনি মনে হয়। যাই হোক,কাজের কথায় আসি।”
এই বলেই আনায়া হঠাৎ তার দুহাত পেছনের দিকে উঁচিয়ে ঘাড়ের শার্টের কলারের ভেতরে ভেতর দিয়ে হাত ঢোকানোর চেষ্টা করলো। এটা যেন কেনীথ বিরক্তি নিয়ে দেখেও না দেখার ভান করলো। এদিকে আনায়া কয়েকবার চেষ্টা করার পর কেনীথের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললো,
“তাকিয়ে রইছো কেনো, সাহায্য করো!”
কেনীথ কিছুটা তব্দা খেয়ে গেলো। কিসের সাহায্য করতে বলছে বুঝে উঠতে পারলো না। এদিকে আনায়া ত্বরিত কেনীথের দিকে পিঠ দিয়ে ঘুরে বসলো। অতঃপর অকপটে বললো,
“রুমে সিসিটিভি নেই তো?”
কেনীথ পেছন থেকেই অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দিলো,
“নাহ!”
“তাড়াতাড়ি পেছন থেকে শার্টের ভেতরে হাত দেও!”
আনায়ার কথায় কেনীথ কপাল কুঁচকে বললো,
“হেই কি চাচ্ছিস তুই? এসব ফা”লতু কাজ আমি করতে পারবো না।”
আনায়া বিরক্ত হয়ে আর কিছু বললো না। বরং কেনীথের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকার পর আবার সোজা হয়ে বসলো। অতঃপর আচমকাই নিজের শার্টের বোতাম খুলতে বসলো। এটা দেখা মাত্রই কেনীথ আকস্মিক তব্দা খেয়ে গেলো। আনায়ার শার্ট খোলায় এমন তোরজোর দেখে কেনীথ দ্রুত খাবলা দিয়ে ওর হাত টেনে চেপে ধরলো। কিঞ্চিৎ ঢোক গিয়ে কড়া কন্ঠে বললো,
“অ”সভ্য!, বে’হায়া!, নির্ল”জ্জ! এসব তোর জরুরি কাজ? এতো নির্ল”জ্জ কবে হয়েছিস? আসার পর থেকে তোর এই বেহা”য়াপনা সহ্য করছি। আরেকবার এসব করতে দেখলে মে’রে থা”প্পড়ে সোজা ত”ক্তা বানিয়ে দেবো।”
কেনীথের কথায় আনায়া ওর দিকে বিরক্তি নিয়ে প্রচন্ড তাকালো।অতঃপর শার্টের প্রথম খোলা দুটো বাটন লাগিয়ে কেনীথের দিকে ঘুরে বসে বলতে লাগলো,
“সেকেন্ড সেকেন্ড তোমার এতো সাধুগিরি আমার সহ্য হচ্ছে না।”
—“আর তোর বেহা”য়াগিরি আমার সহ্য হচ্ছে না।”
—“কথাবার্তা ঠিক মতো বলো। বারবার কিসের বেহায়া বলছো আমায়? আমি কোনো পরপুরুষের সামনে রয়েছি নাকি? যা করার সব নিজের জামাইয়ের সাথে করছি। আর এসব ড্রেস তো এখন মোটামুটি সবাই পড়ে। আমি পড়লে তোমার এতো কোথায় জ্বলছে?এসব তোমার জেলাসি নয়তো?”
আনায়া কথাগুলো ভ্রু উঁচিয়ে শেষ করতেই কেনীথ স্পষ্ট ভাবে বলতে লাগলো,
“খোসাযুক্ত ফলমূল মানুষ খোসা ছাড়িয়ে খায়। যদি বিক্রেতা মনে করে খোসা ছাড়িয়ে বিক্রি করলে মানুষের শ্রম কমবে এবং ফলের দাম বাড়বে, তবে সেটা তার ভুল ধারনা। খোসাহীন ফল দ্রুত নষ্ট হয়ে মূল্যহীন হয়ে পড়ে। নারীর শালীনতাও ঠিক এমন—শালীনতার আচ্ছাদনে নারী সবচেয়ে সুন্দর ও মূল্যবান। কিন্তু যখনই শালীনতা ত্যাগ করে সমাজে নিজের মূল্য বাড়ানোর চেষ্টা করে, তখনই সে তার প্রকৃত মর্যাদা হারায়। তেমনটা তোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ।”
আনায়া কেনীথের কথা মনোযোগ দিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলো।
“তুমি কবে থেকে এসব সমাজের ধার ধারতে শুরু করেছো। সোসাইটি ম্যাটার করে ব্রো,সরি হাব্বি!”
কেনীথ কিছুই বললো না। বিরক্তি নিয়ে চুপচাপ রইলো। এদিকে আনায়া কেনীথের হাভভাব দেখে আবারও তাচ্ছিল্য করে বললো,
“আমার মহাপণ্ডিত আওলিয়া পীর কেনীথ বাবাজি সাহেব!তোমার মুখে আর যাই হোক, এসব হাদিস মানায় না আমার কলিজা!”
—“যা ভাবার ভাবতে পারিস। তবে সারাবেলা তোর মুখে তুই আমার বউ, এই নাম করে বেহায়াপনা করবি তা দেখতে চাই না আমি।”
—“হেই! বাচ্চাকাল থেকে বউ আমি তোমার।জোর করে এক বাচ্চার মা পর্যন্ত বানিয়েছো। এরপরও তোমার এসব ঢং সাজে?”
যদিও বাচ্চার কথাটা বলতে গিয়ে অদ্ভুত এক অনুভূতিতে গলা শুকিয়ে আসছিলো আনায়ার। তবে আনায়া কথাটা অন্ত্যত স্পষ্ট ভাবে বললো। এদিকে কেনীথ চুপচাপ রইলো। আনায়াও কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর দৃঢ় কন্ঠে পুনোরায় বললো,
“আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, কেউ কি আছে? অন্য কাউকে ভালোবাসো কিংবা…বিয়েও করে নিয়েছো।যদি এমন কিছু না হয় তবে এই আমিতে এতো কিসের সমস্যা তোমার? অতিরিক্ত কথাবার্তা চালচলন পছন্দ হচ্ছে না?আর বেহায়া যে বলছো আমি তো অন্যকোথাও গিয়ে বেহা”য়াপনা করছি না।নিজের জামাইয়ের সাথে এসব করলে ওটাকে বেহা”য়াপনা বলে না।”
—“এই সবসময় এই বউ বউ করবি না তো। কিসের বউ। তুই যে আমার বউ এটার কোনো প্রমাণ আছে? তোর বাপে কোন আমলে নাকি বিয়ে দিয়েছিলো, এই যা! বিয়ের কোনো প্রমাণ থাকলে তবেই বউগিরি দেখাতে আসবি।”
এবার আনায়ার চোখমুখ বেজায় শক্ত হলো। রা”গে ঠোঁট কামড়ে ধরলো। শক্ত হলো দুহাতের মুঠো। কেনীথ আনায়ার দুজনের মাঝে দুরত্ব বেশি নয়।যে কারণে আনায়া কেনীথের দিকে ঝুকে খানিকটা হিসহিসিয়ে বললো,
“আ’লতু-ফা’লতু কথা বলে মেজাজ খারাপ করবে না আমার! আরেকবার এসব কথা বললে খু”ন করে জা’ন হাতে তু’লে জা’হান্নামে পাঠাবো।সমস্যা নেই, সাথে আমিও যাবো।যদি একবার দেখেছি ওখানেও কোনো তিড়িংবিড়িং করেছো তবে…আহ! কিসব বলছি। নিজের সাথে সাথে আমার মাথাটাও শেষ করে দিয়েছো।”
কেনীথকে আর কোনো কিছুর বলার সুযোগ না দিয়ে আনায়া পুনোরায় কেনীথের দিকে পিঠ দিয়ে বললো। অতঃপর দীর্ঘশ্বার ফেলে খানিকটা ধীর সুরেই বললো,
“পিঠে হাত দিয়ে দেখো শার্টে ভেতরে একটা কিছু কাগজ রয়েছে।”
আনায়ার কথা শুনে কেনীথ খানিকটা কপাল কুঁচকে ফেললো।আনায়া আবারও কড়া কন্ঠে বললো,
“তাড়াতাড়ি, বের করো।”
কেনীথ আর দেরী না করে আনায়া ঘাড়ের পেছন থেকে কলারের ভেতর হাত দিয়ে শার্টের খানিকটা নিচে হাত প্রবেশ করাতেই কিছু কাগজের চিকন ঘামের মাথার অংশটা পেলো। যেটা কিনা আনায়ার ইনারের ভেতরে গুঁজে রাখা ছিলো। কেনীথ আচমকাই ঢোক গিললো। তবে ত্বরিত জিনিসটাকে বের করে আনায়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরালো। এদিকে আনায়া পেছনে ঘুরে কেনীথকে দেখতেই ওর চোখমুখ কুঁচকে গেলো। বিরক্তির সাথে বলতে লাগলো,
“বুঝে গিয়েছি, তোমাকে ডক্টর দেখাতেই হবে।”
এটা শুনে কেনীথ অন্যদিকে থেকে আনায়ার দিকে গরম চোখে তাকাতেই আনায়া তাচ্ছিল্য করে বললো,
“আমার দিকে ভাবে না তাকিয়ে ওটা খুলে দেখো।”
কেনীথ আর কিচ্ছু বললো না।যথারীতি আনায়ার কথা মতো কাগজের ভাজটা খুলতে লাগলো। কেনীথ ভেবেছিলো এটা কোনো খাম হবে পরে খেয়াল করে দেখলো এটা যাস্ট কয়েকটা কাগজ খাম আকৃতির ভাজ করা। তবে কাজগুলো খুলে ভালো করে দেখতেই কেনীথের চোখেমুখে গাম্ভীর্যের ছাপ পড়লো। কপালও অনেকটাই কুঁচকে গেলো।
এদিকে আনায়া সিরিয়াস ভঙ্গিতে কেনীথের উদ্দেশ্যে বললো,
“আন্ডারওয়ার্ল্ডের সেরা মাফিয়া খ্যাত আর্তেম দিমিত্রি। অর্থাৎ তোমার নানা কিংবা আমার নানা শ্বশুর।তার ওয়াইফ এবং বর্তমান আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক সেরা মাফিয়া লেডি লুসিয়া বেঁচে থাকার পরও, তিনি তার পুরো প্রোপার্টিস,অ্যাসেটস, পাওয়ার, এভ্রিথিং তোমার নামে করে দিয়ে গিয়েছেন। তাও পস্টহিউমাস ট্রান্সফার অব ওউনারশিপ এগ্রিমেন্টে।
যেটা কিনা উনি মা”রা যাবার অনেক বছর আগেই করেছেন, যখন তুমি নিজেও অনেক ছোট।কিন্তু কথা হলো, এখনো তুমি সেসবের ওউনারশিপ নও। কেননা তিনি তার এগ্রিমেন্টে নিদিষ্ট করে সময়টাও উল্লেখ করে গিয়েছেন। আর্তেম দিমিত্রির সত্তর বছর অর্থাৎ আজ থেকে ঠিক আরো সাত বছর পর তোমার জন্মদিনেই তুমি এসবকিছুর মালিক হবে।
আর সবচেয়ে সুন্দর বিষয়টা কি জানো? আজ থেকে সাত বছর পর যদি তুমি সেই সবকিছুর ওউনারশিপ হওয়ার পরও সেসব অন্যকাউকে নিজ হাতে হস্তান্তর না করো তবে কারো সাধ্য নেই এই বিশাল সাম্রাজ্য অন্য কারো নেওয়ার। এবং এই সাত বছরের মধ্যে যদি কোনো ভাবে তোমার কিছু হয় কিংবা তুমি মা’রা যাও তবে তোমার সঙ্গে সঙ্গে আর্তেম খ্যাত পুরো মাফিয়া সাম্রাজ্য ধ্বং”স হয়ে যাবে।”
আনায়ার কথাগুলো কেনীথ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। সে সঙ্গে পেপারস্ গুলোও মনোযোগ দিয়ে দেখছি। এতোসব কিছু দেখে কেনীথ নিজেই যেন এক বিস্ময়ের জগতে প্রবেশ করলো। এসবের মানেই কি আর আনায়া বোঝাতেই বা চাইছে কি। কেনীথ কপাল কুঁচকে অস্ফুটস্বরে বললো,
“তুই কি বোঝাতে চাইছিস? ঠিকভাবে বল, আর এসব তুই কিভাবে পেয়েছিস। এতসব কিভাবে জেনেছিস? কই, আমি তো এসব কখনোই জানতাম না।”
আনায়া কিঞ্চিৎ রুক্ষ হাসিতে মুচকি হাসলো। মাথাটা হ্যাং হয়ে গিয়েছে। কতসব প্যাচ মিলিয়ে যেন এক জগাখিচুড়ি তৈরি হয়েছে।
—“মিস্টার কেনীথ!এক বড়সড় গেইম খেলা হচ্ছে। আমার প্রাণপ্রিয় নানী শ্বাশুড়ি লুসিয়াকে রেখে আমার নানা শ্বশুর;যে কিনা বেঁচে থাকতেই তার সবকিছু তোমার নামে করে দিয়ে গিয়েছেন। তাও কিনা তুমি অনেক ছোট থাকতেই। আবার তোমার কিছু হলেই সেই পুরো সা”ম্রাজ্যই ধ্বং”স হয়ে যাবে।এতবড় একটা ডিসিশন নিশ্চিয় তার মতো লোক এমনি এমনি নেয়নি।
ওহ হ্যাঁ,পুরোটা বললেও ভুল হবে।খুব অল্প হলেও খুব কিছুটা অংশ কিন্তু রোজের নামেও রয়েছে। তবে সেটা শুধু প্যালেস আর তথাকথিত সামান্য কিছু পাওয়ারের জন্য প্রযোজ্য।যেটাও কিনা আজ থেকে ঠিক সাত বছর পরেই গিয়ে কার্যকর হবে।”
—“এসব না হয় বুঝলাম। কিন্তু তুই বারবার বাবুশকার কথা বলে কি বোঝাতে চাইছিস?তার উপর তুই কিসের… ”
আনায়া তাচ্ছিল্যের সাথে কিঞ্চিৎ হাসলো। অতঃপর চোখমুখ গম্ভীর করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কাটকাট করে বলতে লাগলো,
“হিসেবটা অনেক গড়মিল। কোনো কিছুরই সঠিক কোনো ক্লু নেই। আমার এসবে কোনো সমস্যা ছিলো না। সত্যি বলছি, তোমাদের পাপের সাম্রাজ্যে মিশে যেতে আমার কোনো আফসোস ছিলো না। জীবন তো আমার অনেক আগেই শেষ।
মিসেস লুসিয়ার হয়ে গত সাত বছর ধরে একটানা কাজ করে এসেছি। সবই পাপের খেলা। নিজ হাতে নি’র্দোষ কিংবা দো’ষী ৫৭৩ টা প্রা’ণ নিয়েছি।শুধু জানতাম আমি পাপের খেলায় ডুবে গিয়েছি। শুধু আমি একাই ডুবেছি।
আমার আফসোস ছিলো না। না কিছু হারানোর আর না কিছু পাওয়ার। ভেবেছিলাম এবার হয়তো সবাই ভালো থাকবে। কিন্তু আফসোস… আমার নিষ্পাপ বোনকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি জানি না, ও কোথায়। এতো বছর যখন আমি ওর খোঁজ-খবর জানতে চেয়েছি তখনই আমায় বলা হয়েছে ও একদম ভালো রয়েছে। ও এদকম ঠিক রয়েছে।আমি যেন এসবের চিন্তা না করি। আমিও বিশ্বাস করে নিয়েছি। কিন্তু আমি জানি আমার বোন ঠিক নেই। ওকে প্রতিনিয়ত আমার চেয়েও খারাপ ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এমনকি এতোবছরে মিসেস লুসিয়াস এতো সব কঠোর ব্যবস্থার মাঝে আমি ছিলাম বাহিরের দুনিয়া থেকে প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। আমাকে যা দেখানো হতো তা যেনো ছিলো নিত্যন্তই সাজানো-গোছানো মিথ্যে।আমার প্রতিটা পদক্ষেপ ছিলো বাবুশকার ইচ্ছে অনুযায়ী। আর তুমি জানো?আজ আমি তোমার সামনে রয়েছি শুধুমাত্র এই কারণেই যে, আমি তাদের জানিয়েছি যে এবার তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাই। নয়তো এখানে আসার অনুমতিও পেতাম না আমি।”
কেনীথ বিস্ময়ে কিছু বলতে পারছে না।চোখেমুখে অবাধ নিস্তবতা। এতসব গড়মিল কি করে হলো৷ এরই মাঝে আনায়ার চোখের কোণায় কিঞ্চিৎ জল এসে ভির করেছে। আনায়ার সে-সবে পাত্তা দেওয়ার সুযোগ নেই। সে আগুন ঝড়া চোখে বলতে লাগলো,
একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৬ (২)
“আমি তোমায় একটা কথা পরিষ্কার করে বলছি। তুমি কিংবা তোমার পরিবারের জন্য যদি আমার আর কোনো প্রিয়জনের ক্ষ”তি কিংবা হারাতে হয় তবে আমি আমার এই ব্যার্থ জীবনের সবটুকু দিয়ে হলেও সবকিছু ধ্বং’স করে ছাড়বো।
আই রিপিট, আই উইল ডে”স্ট্রয় এভরিথিং।আনায়াকে তো তুমি নিজ হাতে শেষ করেছো। তাই নিজের জীবনের পরোয়া আর আনায়া করে না। এখন তুমি নিজ চোখের সামনে যাকে দেখছো, এটা অ্যানা! অ্যানা তাইসিয়া;যাকে ভুলবশত হলেও, তোমার বাবুশকা নিজ হাতে বানিয়েছে সবকিছু ধ্বং”স করার জন্য।”