একঝাঁক জোনাকি পর্ব ৩০
ইশরাত জাহান অধরা
“কি হয়েছে অনিমা আপনি এমন করছেন কেন?”
কথাটা শুনেই অনিমা সামনে তাকাতেই দেখল নিহান দাঁড়িয়ে আছে অনিমার দিকে তাকিয়ে।
“শরীর খারাপ লাগছে আপনার?”
অনিমা কয়েক পা এগিয়ে গেলো নিহানের দিকে।চোখে চোখ রেখে বলল,
“কিছুনা এমনিই!মাথা ব্যাথা করছিলো!”
“মাথা ব্যথা করছে?জ্বর এলো নাকি?”
বলেই অনিমার কপালে হাত ছুয়ালো।
“কই না তো!টেম্পারেচার ঠিকই আছে।”
“আপনি যান ফ্রেশ হোন।আমার মাথা ব্যথা একটু পরেই চলে যাবে।”
“সিউর?”
“হুম। নইলে পেইন কিলার খেয়ে নিব!”
নিহান তার জামা কাপড় আলমারি থেকে বের করে ওয়াশরুমের৷ উদ্দেশ্যে রওনা হলো।হঠাত পিছন থেকে অনিমা বলে উঠলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“মাহির!”
মাহির নামটা শুনতেই চমকে নিহান পিছনে তাকালো।অনিমা আবারও বলল,
“আমাকে আগে কেন বললেন না যে আপনি ছোটবেলার পিচ্চি মাহির যে কারোর ধমক শুনলেই ভ্যা করে কেঁদে দিতো?কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে লাল করে ফেলতো মেয়েদের মতো?”
নিহান চোখ বড় বড় হয়ে গেছে বিস্ময়ে।হাত থেকে তোয়াল,কাঁপড় সব মাটিতে পরে গেছে অলরেডি।
“আপনি কিভাবে….”
“সেটা বড় কথা না বড় কথা হলো আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি।আমাকে বললে কি হতো?”
“আপনাকে আগে বললে আপনি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হতেন না।কারন আপনি আগেই বলেছিলেন যে আপনি আমাকে ছোট ভাইয়ের নজরে দেখেন!”
“তাও আপনার বলা উচিত ছিলো।আমাকে জানানো উচিত ছিলো আপনার।এতদিন আপনাকে আমি আননোন পার্সোনের মতো ট্রিট করে এসেছি।”
“আমার ডাইরি পড়েছেন তাই না?”
“হুম!”
“এভাবে কারো পারমিশন ছাড়া ডাইরি পড়াটা কি ঠিক?”
অনিমা হেসে বলল,
“হ্যা ঠিক না। এটা অন্যায়!বাট ডাইরিটা কিন্তু আপনি আমার জন্যই লিখেছিলেন!”
অনিমার কথা শুনে নিহান মাথা নিচু করে হেসে দিলো।
“আপনি এখন আমার থেকে লম্বা হয়ে গেছেন।আগে আমার অর্ধেক ছিলেন!”
“মোটেও না!আমি কোনদিনই আপনার অর্ধেক ছিলাম না।জাস্ট সামান্য খাটো ছিলাম আপনার থেকে!”
“অই একই হলো। আমার থেকে তো ছোট ছিলেন!তাই তো বলি আমার এতকিছু আপনি জানেন কি করে?আমি ফাস্টে আপনাকে স্টকার ভেবেছিলাম।”
নিহান চোখ ছোট করে বলল,
“ডাক্তার বুঝি স্টক করে?”
“নাহ!বাট আপনি করেন ভেবেছিলাম।যেভাবে আমার সবকিছু বলে চমকে দিয়েছিলেন আমাকে! আমার জায়গায় যেকেও থাকলেই ভাবতো যে আপনি তাকে ফলো করছেন!”
“আচ্ছা।মেনে নিলাম আপনার কথা!”
অনিমা নিহানের কাছে গিয়ে গাল ধরে টেনে বলল,
“আমি অনেক খুশি হয়েছে জেনে যে আপনিই ছোট্ট মাহির!আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না মাহির এত্ত বড় হয়ে গেছে।”
হেসে কথাটা বলতেই দেখল নিহান এক দৃষ্টিতে অনিমার দিকে তাকিয়ে আছে।অনিমা বুঝল সে কথার বলতে বলতে নিহানের একদম কাছে চলে এসেছে যে একে অপরের নিঃশ্বাস শুনতে পারছে।অনিমা আশেপাশে তাকিয়ে পিছাতে লাগলো নিহানের থেকে।
“আপনি যান!ফ্রেস হয়ে আসুন!আমি খাবার রেডিইইইই….”
বিছানার কাঠের সাথে বারি লেগে পরে যেতে নিলেই নিহান তার বলিষ্ঠ পুরুষালী হাত দ্বারা অনিমার কোমড় ধরে ফেলল।অনিমা ভয়ে নিহানের শার্ট দুইহাতে খামচে ধরলো।চোখ মুখ খিচেই বলল,
“ছেড়ে দিবেন না প্লিজ!নইলে পরে যাবো!”
নিহান অনিমের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনাকে ছেড়ে দিব বলল কে?”
নিহানের কথা শুনেই অনিমা চোখ দুটো খুলল।নিহানকে এত কাছে দেখে বুক ধক করে উঠলো।দুরে সরার জন্যই তো সরে আসতে চেয়েছিলো।কিন্তু তার বদলে নিহানের আরও কাছে এসে পরেছে।
“এভাবে যে আমার কাছে আসছেন কাজটা কি ঠিক করছেন অনিমা?সেদিন আমার ঠোটে চুমু খেলেন আর আজ….
“এভাবে যে আমার কাছে আসছেন কাজটা কি ঠিক করছেন অনিমা?সেদিন আমার ঠোটে চুমু খেলেন আর আজ….
নিহান কিছুক্ষন চুপ থেকে অনিমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি প্রয়োগ করল।অনিমার ঠোটের দিকে কিছুক্ষন নেশার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
“আপনি কি আমার ধৈর্য পরীক্ষা নিচ্ছেন?মোটেও এ কাজ করবেন না।আমি নিজেকে কন্ট্রোলে রাখছি বলে ভাববেন না সবসময় কন্ট্রোলে থাকব।একদিন কন্ট্রোললেস হয়ে গেলে আই গেস বিষয়টা আপনার জন্য শুভকর হবে না!”
কথা শুনেই অনিমা তড়িৎগতিতে সরে এলো।
“আমি মোটেও ইচ্ছা করে এমনটা করিনি!এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে।আর আপনাকে ধরতে বলেছে কে?পরলে খাটেই তো পরতাম।”
নিহান বুকে হাত গুজে বলল,
“বেডে সে অরিন শুয়ে আছে সে খেয়াল আছে আপনার?পরলে তো ওর উপরেই পরতেন।আর আজকেরটা না হয় এক্সিডেন্ট বাট সেদিনের কিসটা কি ছিলো?অইটাও ভুলবশত হয়েছিলো?”
কথাটা কানে যেতেই অনিমার সেদিনের দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠলো।এখন ও কি উত্তর দিবে?সেদিনের কিসটা যে ভুলবশত না ইচ্ছাকৃতভাবে দিয়েছে অইটা তো সে নিজেও জানে।হুট করে শুনাদ ভান করে বলল,
“আমাকে যে মারিয়া ডাকলো শুনতে পেরেছেন?”
“নাহ!”
“আমি শুনতে পেরেছি!ও আমাকে ডাকছে। আমি যাচ্ছি। আপনি ফ্রেশ হতে যান!”
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে এলো।অনিমার যাওয়ার দিকে হেসে ফ্লোর থেকে জামা কাপড় উঠিয়ে ওয়াশরুমের ভিতর চলে গেলো।রুম থেকে বেরিয়েই একটা বড় শ্বাস নিলো অনিমা।গালে হাত দিতেই দেখল গরম হয়ে গেছে।আগের নিহানের সাথে এখনের নিহানের বিস্তর তফাত খুঁজে পাচ্ছে।কোন মিলই নেই দুজনের মধ্যে!কেন অইদিন সে কিস করতে গেল নিহানকে?দুর!
“ভাবী!একা একা কি বিড়বিড় করছো?”
“হ্যা?”
মারিয়া অনিমার দিকে তাকিয়ে আছে।অনিমা বিষয়টা বুঝতেই বলল,
“তেমন কিছুনা!তুমি এলে যে?কোন দরকার?”
“না” এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম।হঠাত দেখলাম চোখ বন্ধ করে কি বিড়বিড় করছো। তাই জিজ্ঞেস করলাম!”
“অহ আচ্ছা।”
“ভাইয়া কি এসেছে?”
“হ্যা একটু আগেই!ফ্রেশ হচ্ছে!”
“আমি গেলাম।”
“হুম!”
মারিয়া চলে যেতেই অনিমা কি করবে বুঝলোনা।রুমে আবার ফেরত যাবে? নাহ এরথেকে রান্নাঘরে যাওয়াই ভালো!ভেবে রান্নাঘরে গিয়েই দেখল রহিমা খালা পেঁয়াজ কাটছে।অনিমাকে দেখেই রহিমা অবাক হয়ে বলল,
“একি আপা!আপনি এখানে কেন?কিছু লাগবো?”
“নাহ!”
“তাইলে?”
“আজকে আপনি কি রান্না করবেন?”
“খালাম্মা কইলো মাছ ভুনা করতে।এজন্য পেঁয়াজ কাটতাছি। আপনি কি অন্যকিছু খাইবেন?”
“নাহ নাহ।মাছ ফ্রিজ থেকে বের করেছেন?”
“হো করছি।বেসিনে পানিতে ভিজাইয়া রাখছি।”
“তাহলে আমি এক কাজ করি মাছ ভেজে দিই!আপনার কাজ আগাবে!”
“একি কন আপা?আপনি মাছ ভাজবেন?নিহান ভাই হুনলে রাগ করবো!”
“আরে রাগ করবে না।আর অরিন এখন ঘুমাচ্ছে!একা একা বসে থেকে কি করবো।”
রহিমা অবাক হয়ে বলল,
“আপনি বাচ্চাটারে একা রুমে দিয়ে আসছেন?”
“একা কই?আপনার ভাইজান আছে না?উনি দেখে রাখবে।এমনেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
“আইচ্ছা!”
খাওয়া দাওয়া শেষে রুমে গিয়েই বিছানা গুছিয়ে শুয়ে পরলো।নিহান কিছুক্ষন পর নিহান রুমে ঢুকেই দেখলো অনিমা ঘুমিয়ে গেছে।তাই সে নিজেও বিছানার অপর পাশে শুয়ে পরলো।মাঝরাতে হঠাত ঘুম ভেংগে গেলো নিহানের।বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।কিছুক্ষন পর পর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।জানলার বাইরে তাকিয়ে থেকে অনিমার দিকে তাকাতেই দেখল অনিমা কানে হাত রেখে কাঁপছে।নিহানের ভ্রু কুচকে এলো।শুয়া থেকে উঠে অনিমার কাছে গেলো।
“অনিমা কি হয়েছে?”
নিহানের কন্ঠ পেতেই চোখ খুললো।
“কিছুনা!”
“কিছুনা হলে এভাবে কাঁপছেন কেন?”
অনিমা কিছু বললো না।চোখ বন্ধ করে ফেলল।নিহান কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো।এখন অনিমা স্বাভাবিকই আছে।তাই আর কিছু না ভেবে নিজের জায়গায় এসে শুয়ে পরলো।অনিমার দিকে ফিরেই শুয়েছে।অনিমাকে পর্যবেক্ষন করছে।কিছুক্ষন বাদেই আবার বিদ্যুৎ চমকাতেই কেঁপে উঠলো অনিমা।নিহান হাত বারিয়ে দিয়ে বলল,
“ভয় লাগলে আমার হাত ধরতে পারেন!”
অনিমা ফিরে নিহানের দিকে তাকালো।নিহান ইশারায় হাত ধরতে বলল।
“আমি ভয় পাচ্ছি না।”
বলতে না বলতেই আবার বিদ্যুত চমকাতেই অনিমা নিহানের হাত শক্ত করে চেপে ধরলো।নখের আঁচর নিহানের হাতে লাগতেই নিহান ব্যথায় চোখ মুখ কুচকে ফেলল।পরক্ষনেই ব্যথাটাকে সহ্য করে নিজেও অনিমার হাত চেপে ধরে বলল,
“ভয় পাবেন না!আমি আছি।”
সকালে ঘুম ভাংতেই অনিমা পাশে তাকাতেই নিহানকে চোখে পরলো।কিছুক্ষন নিহানের দিকে তাকিয়ে উঠতেই যাবে হঠাত চোখ পরল নিহানের হাতের দিকে।আংগুলের নিচে নখের আঁচরের দাগ দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো অনিমার।রাতে যখন হাত ধরেছিলো তখনই নখের দাগ বসে গেছে?ভেবে নিজের হাতের দিকে তাকাতেই দেখলো নখের কাছে রক্ত জমে আছে।অনিমা নিজেকে বকলো।ভালো করে নিহানের হাতের দিকে তাকাতেই দেখল নখের আঁচড়টা অনেক গভীর।লোকটা সেসময় বললনা কেন যে তার লাগছে?চুপচাপ সহ্য করে গেছে ব্যথাকে!নিহানের ঘুম ভাংগতেই দেখল অনিমা তাকিয়ে আছে নিহানের দিকে।
“একি আপনি উঠলেন কখন?”
শুয়া থেকে উঠে বসতে বসতে কথাটা বলল।অনিমা কিছু না বলে পাশের সাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে বক্স বের করলো।বিছানা থেকে উঠে নিহানের সামনে গেলো।হাটু গেড়ে মাটিতে বসে নিহানের হাত নিজের কাছে নিয়ে অয়েন্টমেন্ট লাগাতে লাগাতে বলল,
“আমি যে আপনার হাত খামচি দিয়ে ধরেছিলাম বললেন না কেন?”
“টের পাইনি!”
অনিমা ইচ্ছা করে নিহানের খামচি দেওয়া জায়গায় হাত দিয়ে চাপ দিতেই ব্যথায় চোখ মুখ কুচকে নিহান বলে উঠলো।
“আহ!চাপ দিচ্ছেন কেন?ব্যথা পাচ্ছি তো!”
“আপনি না টের পাননি তাহলে এখন ব্যথা পাচ্ছেন কেন?মিথ্যা কথা বলবেন না!আপনি ইচ্ছা করে চুপ করে থেকেছেন!নিজের ভালো তো পাগলও বুঝে!”
নিহান শান্ত কন্ঠে বলল,
“আপনার হাত ছেড়ে দিলে আপনি ভয় পেতেন!”
“ভয় পেলে পেতাম।”
একঝাঁক জোনাকি পর্ব ২৯
নিহান একটা শ্বাস ফেলে বলল,
“কাঁপছিলেন।আমি ঘুমাতে পারছিলাম না। নিজের ঘুমের জন্য চুপ থেকেছি।”
অনিমা কিছু না বলে বেন্ডেজ লাগিয়ে দিলো।