একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১০

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১০
Mousumi Akter

লম্বা কালো ছিপছিপে গঠনের একটি ছেলে কানে ফোন নিয়ে এগিয়ে আসছে এম. এম. কলেজের মাঠের দিকে। তখনই সারাহ’র ফোন বাজছে। একনাগাড়ে তিনবার রিং হলো ফোনে। ছোঁয়া বলল,
‘ তোর ফোন বাজছে সারাহ। মনে হচ্ছে পেছনের ওই শ্যামলা ছেলেটাই ডেলিভারি বয়।’
সারাহ ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ ব্যাগ থেকে ফটাফট টাকা বের কর পাঁচহাজার।’
ছোঁয়া ভ্র উঁচিয়ে প্রশ্ন করল,

‘ কেন?’
‘ কারণ আমি তোর জন্যও অর্ডার দিয়েছি।’
ছোঁয়া গালে হাত দিয়ে কয়েক সেকেন্ড নিরবতা পালন করে উত্তর দিলো,
‘ দিচ্ছিস গিফট তাহলে টাকা কেন? আমিতো আর তোকে বলি নাই আমার জন্য ও গিফট কর।’
সারাহ কপাল ঘুচিয়ে বলল,
‘ তোকে আমি কখন বললাম গিফট দিচ্ছি।’
‘ তাহলে তুই আমার ইনবক্সে ড্রেসের ছবি দেখিয়ে বললি কেন কোনটা নিবি দেখ। ‘

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ কারণ লস গেলে আমার একার যাবে কেন? তোর ও যাক। যদি এ ড্রেসের রং টং উঠে যায় তাহলে বুক ফাঁটা কষ্টে ছারখার হয়ে যাবো যে। যদি দেখি না আমার সাথে তোর ও লস গেছে বিশ্বাস কর আমার একটুও কষ্ট হবেনা।’
সাথে সাথে মৃন্ময় আর দ্বীপ হাতে তালি দিয়ে হেসে উঠল। তন্ময় ও মৃদু হাসছে, ছোঁয়া হাসছে। মৃন্ময় বলল,
‘ এত বুদ্ধি নিয়ে চলিস কীভাবে তুই? আগামি বছর তোকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই।’
ছোঁয়া বলল, ‘ তাই বলে তুই, বাঁশটা আমাকেই দিবি। তন্ময় কিছু বল।’
তন্ময় ছোঁয়ার মুখের ওপর পড়া চুলগুলো কানের নিচে গুজে দিতে দিতে বলল,

‘ আমি কিছু বললে আমার চাকরি থাকবে না। ‘
সারাহ’র ফোন বেজেই যাচ্ছে। তন্ময় বলল,
‘ ফোনটা রিসিভ কর সারাহ, বেজেই যাচ্ছেতো।’
সারাহ ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ বাজুক, আমার থেকে ডেলিভারি চার্য নিবে খানিক ঘুরবে না।’
তন্ময় বলল, ‘ সারাহ তুই পারিস ও বটে।’
মৃন্ময় বলল, ‘ পোশাক ডেলিভারি দিতে যদি হট, হট মেয়েরা আসত তাহলে তন্ময় আর দ্বীপ প্রতিদিন ই অর্ডার দিতো। কারণ হট মেয়ে ওদের খুব পছন্দ।’
তন্ময় গভীর চোখে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ অস্তাগফিরুল্লাহ, কি বললি? আমি? আমার হট মেয়ে পছন্দ। ‘
মৃন্ময় বলল, ‘ যেভাবে চমকালি যেন আকাশ থেকে পড়লি। সারারাত নাভি বের করা মেয়েদের ছবি গুগল থেকে বের করে কে দ্যাখে ভাই?’

তন্ময় এইবার শক্ত কন্ঠে বলল, ‘ আমার ফুলের মত চরিত্রে কলঙ্ক দিলে পাপ লাগবে। ‘
দ্বীপ বলল, ‘ মিথ্যা কথা বলব না, হট মেয়ে আমার পছন্দ বটেই। বিয়ে যদি করি হট মেয়েই করব।’
মৃন্ময় বলল, ‘ শালা আমার। ছত্রিশ ডিগ্রী তাপমাত্রা সহ্য করতে পারোনা, আবার বউ চাও হট। ‘
ওরা পাঁচজন যে যাকে যেভাবে পারে পঁচাতে থাকে। নিজেরাই হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের ওপর গড়িয়ে পড়ে। এরপর ই সারাহ ডেলিভারি বয় এর ফোন রিসিভ করল। ছেলেটা এগিয়ে এসে খুব মেজাজের সাথে বলল,
‘ আপনাকে সেই কখন থেকে ফোন দিচ্ছি আর আপনি ফোন তুলছেন না। আমি কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি।’
সারাহ ছেলেটার দিকে তাকিয়ে খিটমিট মেজাজে বলল,

‘ তা আপনার কাজই তো এটা। দিয়েছেন কেন ফোন? আমি কি পায়ে ধরেছি ফোন দিতে। একবার ফোন না ধরলে একশবার ফোন দিতে থাকেন।’
ছেলেটা বিরক্ত হয়ে সারাহর দিকে তাকালো। বুঝতে পারল, এ মেয়ে যা তা মেয়ে নয়। এর সাথে বাড়াবাড়ি কথা বললে ঝামেলা হতে পারে। ছেলেটা ড্রেসগুলা বের করতেই সারাহর চোখ উল্টে গেলো। মানে কি! মানুষ এত বড় বাটপার হবে কেন? ভিডিওতে একরকম দেখালো পাঠিয়েছে আরেকরকম। সারাহ আর কথা না বাড়িয়ে ছেলেটাকে কুরিয়ার চার্য দিয়ে পোশাক রিটার্ন করলো।
ছোঁয়া বলল,

‘ আমি আগেই জানতাম এমন হবে।’
মৃন্ময় বলল, ‘ একদম ঠিক আছে, অনলাইন থেকে নিতে যাস কেন? ওরা ভালো প্রডাক্ট দেয় নাকি।’
তন্ময় বলল, ‘ সারাহ এখন ভয়ংকর রেগে আছে। এখনি ওই পেজে গালি গালাজ দিবে। ‘
সারাহ বলল, ‘ আমার একশত পঞ্চাশ টাকা এভাবে পানিতে গেলো। আমি ওদের এমন হেনস্থা করব। শোন তোদের ফোন গুলা দে। ওই পেজে সবার আইডি থেকে অর্ডার দে ড্রেস। তোদের ফেইক আইডি গুলা থেকেও অর্ডার দে। ডেলিভারি বয় কল দিলে কেউ রিসিভ করবি না। একদম নাজেহাল করে ছেড়ে দিবো।’

সেদিন কলেজ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় রোশান সারাহ’কে মেসেজ করল, ‘ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া শেষ হলে আমার সাথে দেখা করে যেও।’
সবাইকে বিদায় দিয়ে সারাহ কলেজ গেটে দাঁড়িয়ে রোশানকে মেসেজ করল, ‘ আমি কলেজ গেটে দাঁড়িয়ে আছি। কি বলবেন দ্রুত আসুন।’
রোশান রিপ্লাই করল,
‘ ওকে।’

পাঁচ মিনিটের মাঝে রোশান কলেজে গেটে আসল। সারাহর পাশে এসেই বাইক হর্ণ দিলো। সারাহ পেছনে তাকাতেই রোশানকে দেখেই বলল,
‘ আরেকটু হলে কানটা ফেঁটে যেত আমার।’
রোশান গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ বাইকে ওঠো।’
সারাহ কিছু বুঝে উঠতে না পেরে উত্তর দিলো,
‘ কেন?’
‘ এই রোদে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন না করে আগে ওঠো। পরে উত্তর দিই।’
সারাহ বিড়বিড় করে বলল,
‘ সব সময় মেজাজ আকাশে থাকে ওনার।’
বলেই বাইকে উঠল। বাইক চালাতে চালাতে রোশান প্রশ্ন করল,

‘ ছাতা আনোনি কেন?’
‘ কারণ ছাতা আনলে হারিয়ে ফেলি।’
‘ তুমি কি বাচ্চা, এখনো ছাতা হারিয়ে ফেলো।’
‘ না আপনার মত বুড়ো, হয়েছে?’
এমন সময় রোশান একটা রেস্টুরেন্টের সামনে বাইক স্লো করলো। সারাহ’কে বলল,
‘ নামো।’
সারাহ নেমে দাঁড়িয়ে বলল,

‘ এই কাঠফাঁটা রোদে দাঁড়ালেন কেন? আমি আজ সানস্ক্রিন মেখে আসিনি।’
রোশান সারাহ’র দিকে আড়চোখে তাকালো। সারাহর হাত ধরে রেস্টুরেন্টের ভেতরে নিয়ে গেলো। একটা টেবিলে দু’জনে মুখোমুখি বসল। সারাহ এইবার বুঝল এখানে তারা খেতে এসছে। রোশান বলল,
‘ আগে কিছু খেয়ে নাও, পরে কথা বলি।’
‘ এখানে কেন এসছি আমরা।’
‘ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। ‘
‘ কি আলোচনা। ‘

রোশান সারাহর দিকে একটা টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ আগে মুখটা মুছে নাও। গাল দু’টো লাল টমেটো হয়ে আছে।’
সারাহ টিস্যু টা নিয়ে বলল,
‘ কি আলোচনা করতে এসছি।’
‘ তোমার কোন ডিজাইনের গহনা পছন্দ আমাকে দেখাও। অনুষ্টানের তো বেশীদিন বাকি নেই। আমি চাইছি বিয়ে তোমার, সাজগোজ,গহনা, শাড়ি সব তোমার পছন্দেই হোক। তোমার কোনো শখ অপূর্ণ রাখব না আমি।”
সারাহ’র চোখ দু’টো কেমন আনন্দে চিকচিক করে উঠল। এইভাবে যে রোশান তার পছন্দ, শখের মূল্যায়ন করবে সে তা কল্পনাও করেনি। সারাহ খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,

‘ আমার গহনা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।’
‘ প্লিজ সারাহ! অন্তত একটা পছন্দের গহনা আমাকে দেখাও।’
সারাহ রোশানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আপনার ফোনটা একটু দিবেন স্যার?’
রোশান পকেট থেকে ফোন বের করে সারাহর দিকে এগিয়ে দিলো। তারপর রোশান উঠে গিয়ে খাবার অর্ডার দিতে গেলো। এইদিকে সারাহ সেই পেইজে প্রবেশ করল। সেখানে নক করে বলল,
‘ কিছু মেল আইটেম দেখান?’

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৯

পেজ থেকে কিছু আন্ডারওয়্যার এর ছবি, ওয়ালেট সহ বিভিন্ন মেল আইটেম এর ছবি দেখালো। সারাহ ভীষণ দুষ্টু মেয়ে। শয়তানি বুদ্ধি চাপল মাথায়। ঠোঁট টিপে হাসতে হাসতে বলল,
‘ আন্ডারওয়্যার এর কিছু কালার দেখান।’
ওরা বিভিন্ন কালার সেন্ড করলে সারাহ বললো,
‘ লাল রঙের ছয়টা আন্ডারওয়্যার দিন।’
বলেই সারাহ রোশানের ঠিকানা আর ফোন নাম্বার দিয়ে অর্ডার কনফর্ম করলো।
ডেলিভারি বয় যখন রোশানের কাছে লাল রঙের ওইগুলা নিয়ে আসবে রোশানের রিয়্যাকশন কি হবে? সেটা ভেবেই সারাহ হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১১