একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১৮
Mousumi Akter
গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দ্বীপ। দুই আঙুলের মাঝে চেপে রেখেছে জলন্ত সিগারেট। নাক দিয়ে গলগল করে ছাড়ছে ধোঁয়া। তখন খানিকটা দূরে দৃষ্টি পড়ল। শাড়ি পরিহীতা একজন রমনি তার দিকেই এগিয়ে হলুদ রঙের শাড়ির কুচি দু’পায়ের সাথে বাড়ি খেতে খেতে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। দ্বীপ চোখ তুলে তাকালো। চোখের তারায় চিকচিক করছে শ্যামবর্ণের গোলাকার মুখের আকৃতি পিহু।
যার ঠোঁট জুড়ে ভরাট লালরঙা লিপিস্টিক। এই শ্যামবর্ণের মুখখানা দেখলেই দ্বীপের স্পন্দনে কিছুটা নাড়া দেয়। কি হয় সে জানেনা। হয়ত অনুভূতি খুব একটা গাড় নয়, তাই গভীর কিছু উপলব্ধি হয়না। মুহুর্তের মাঝে নজর গেলো পিহুর হাত ধরে রাখা সাধামাঠা সাজগোজের পিচ্চি মেয়েটার দিকে। কে মেয়েটা? নিশ্চয়ই ওদের আত্মীয় -টাত্মীয় কিছু একটা হবে। পেছনেই মৃন্ময় প্যান্টের পকেটে হাত গুজে হেঁটে আসছে। মৃন্ময়ের চোখের দৃষ্টি সোজা মেয়েটির দিকে। দ্বীপ দূর থেকেই তা খেয়াল করল। মৃন্ময়ের মত বেখেয়ালি ছেলে কখনো এত মনযোগ দিয়ে কাউকে কখনো দেখেনি। চোখের নজরে অন্যরকম দেখাচ্ছে। দ্বীপ তন্ময়কে ডেকে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” তন্ময় সামনে খেয়াল কর।”
তন্ময় আর ছোঁয়া আগেই দেখেছে ওরা আসছে। তাই উত্তর দিলো,
” হ্যাঁ দেখলাম, মনে হচ্ছে নতুন বিয়ে করেছে তাই বউ রেখে আসতে কষ্ট হচ্ছিলো।”
“মেয়েটাকে দেখ, আর মৃন্ময় এর চোখের নজর দেখ, সোজা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। ভাই সামথিং ইজ রং।”
তন্ময় অত্যন্ত বিচক্ষণ ছেলে। সে মৃন্ময়ের চোখের চাহনি দেখেই যা বোঝার তা বুঝে নিলো। মৃন্ময়ের বর্ণনার সাথে মেয়েটির শতভাগ মিল। মৃন্ময় তো এমন একটি মেয়ের কথাই বলেছিলো যে কীনা সহজ-সরল, সাধারণ। মেয়েটির চোখ-মুখের আকৃতি বলে দিচ্ছে এই মেয়েই সেই মেয়ে। তন্ময় দ্বীপ আর ছোঁয়ার উদ্দেশ্য বলল,
” মনে হচ্ছে ভাবি খুঁজে পেয়ে গিয়েছি।”
ওরা আস্তে আস্তে গাড়ির কাছাকাছি চলে এলো। পিহুর আগে থেকেই সবার সাথে পরিচয় আছে। তাই এসেই সবার সাথে কুশল বিনিময় করল। তন্ময়কে বলল,
” কেমন আছেন ভাল ভাইয়া?” ছোঁয়াপু কেমন আছেন?”
ওরা দু’জনেই একসাথে উত্তর দিলো আলহামদুলিল্লাহ।. দ্বীপের দিকে আড়চোখে তাকালো। কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই দ্বীপ বলল,
” আমাকে জিজ্ঞেস করবে না, এতদিন কেমন ছিলাম?”
পিহু মুখ বাকিয়ে উত্তর দিলো,
” কেন এতদিন কি মঙ্গলগ্রহে ছিলেন যে জিজ্ঞেস করব ; এতদিন কেমন ছিলেন?”
দ্বীপ মুখখানা মলিন করে বলল,
” আজ কেমন আছি, এটাতো জিজ্ঞেস করো।”
” জিজ্ঞেস করার সময় তো দিবেন নাকি? তার আগেই তো বকবক শুরু করেছেন।”
দ্বীপ এবার রসিকতার সাথে উত্তর দিলো,
” থাক তোমাকে আর জিজ্ঞেস করতে হবেনা। গতরাতে ভাল ছিলাম না। কারণ গরমে ভাল ঘুম হয়নি, এর আগে কয়েকদিন ও ভাল ছিলাম না। ”
পিহু বলল,
” তা এখন কেমন আছেন? ভাল নাকি খারাপ দ্বীপ ভাই।”
দ্বীপ বিড়বিড় করে বলল,
” তোর বাপের সম্পত্তির ভাগ কি কোনদিন চেয়েছি বোন। আমাকে ঘনঘন ভাই ডাকিস কেন তুই।”
দ্বীপ বিড়বিড় করছে তারমাঝে তন্ময় প্রশ্ন করল,
” এত লেট হলো কেন?”
মৃন্ময় দিব্বি সুন্দর দোষটা পিহুর দিকে ঠেলে দিলো। সে পিহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
” বুঝিস না সাথে মহিলারা আসছে। ওদের সাজগোজের জন্য দেরি হলো।”
পিহু চোখ রাঙিয়ে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি বললে তুমি? আমার সাজগোজের জন্য দেরি হয়েছে। আমি কি আসল।কাহিনী বলে দিবো।”
মৃন্ময় চোখ ইশারা করে বলল,
” না বলিস না। ”
এসময় ছোঁয়া বলল,
” পিহু মেয়েটা কে? ভারী মিষ্টি দেখতে।”
ছোঁয়ার কথা শুনে দ্বীপও বলল, ” আসলেই তো মেয়েটা খুব মিষ্টি দেখতে। ”
পিহু বলল, ” আমাদের আত্মীয় হয়।”
দ্বীপ বলল, ” তাহলে তো আমাদের ও আত্মীয় হয়।”
তন্ময় বলল, ” সম্পর্কে আমাদের কি হয় ছোট আপু নাকি।”
ছোঁয়া বলল, ” কি মৃন্ময় তোর কি হয় বোন? তোর বোন হলে আমরাও বোন ডাকব।”
মৃন্ময় চটজলদী উত্তর দিলো, ” ইম্পসিবল! ও আমার বো, বো, উ। ”
তরী মৃন্ময়ের কথা শুনে মৃন্ময়ের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। তন্ময় বলল,
” কি বললি? বউ?”
মৃন্ময় মাথার পেছনে হাত দিয়ে চুলকাতে চুলকাতে বলল,
” একটা সেন্টেন্স তো শেষ করতে দিবি ভাই তোরা। বলতে গেলাম বোন হতে যাবে কেন? আমার তো বোন নামক শাঁ’ কচু’ ন্নি আছেই। আরেকটা শাঁ’ কচু’ ন্নি দিয়ে কি করব। দ্বীপের তো আর বোন নেই। তাই ও দ্বীপের অফিসিয়াল বোন। একদম মায়ের পেটের আপন বোন। ”
বলেই তরীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” তোমার কি তাকে ভাই হিসাবে মেনে নিতে আপত্তি আছে পিচ্চি। ও আগে কালা ছিলো, এখন ক্রিম ট্রিম মেখে ফর্সা হয়েছে।”
দ্বীপ কপাল কুচকে দুইচক্ষুর মনিদয় বড় করে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়েই আছে। কীভাবে তাকে পঁচাচ্ছে সেটা দেখেই যাচ্ছে। তরী মৃদু হেসে জবাব দিলো,
” ভাই ডাকতে আপত্তি থাকবে কেন?”
ছোঁয়া বলল,
” তা তোর কি হয় মৃন্ময় সেটা তো বল।”
মৃন্ময় কিছু বলার আগেই তরী বলল,
” কাকু, উনি আমার কাকু হন। ”
মৃন্ময় এর ফিলিংস এর রফাদফা হয়ে গেলো। মুখখানা একদম ফ্যাকাসে হয়ে এলো। দেখতে কেমন বোকাসোকা দেখাচ্ছে। দ্বীপ,তন্ময়,ছোঁয়া,পিহু সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠে বলল,
” হে হে মৃন্ময়ের ভাতিজি পেয়ে গিয়েছি।”
মৃন্ময়কে জব্দ করার মতন একটা ধারালো অস্ত্র ওরা খুঁজে পেয়েছে এবার। সবাই মিলে গাড়িতে উঠল। মৃন্ময় ড্রাইভারের পাশে বসল। একদম পেছনে ছোঁয়া আর তন্ময়। মাঝের সিটে পিহু,তরী আর দ্বীপ। দ্বীপ তরীর সাথে গল্প করতে করতে যাচ্ছে। দ্বীপ যে তরীর সাথে গল্প করছে এটা মৃন্ময় সহ্য করতে পারছে না। গাড়ি খানিক দূর গেলে মৃন্ময় ড্রাইভারকে বলল,
” গাড়িটা থামান তো।”
ড্রাইভার গাড়ি থামালে মৃন্ময় কিছুক্ষণের জন্য বাহিরে গেলো। একটা প্যাকেট সহ ফিরে এসে দ্বীপকে বলল,
” যা সামনের সিটে যা।”
দ্বীপ আন্দাজ করতে পেরে বলল,
” কেন কাকু?”
মৃন্ময়ের কাঁটাঘায়ে লবনের ছিটা লাগল।
দ্বীপের হাত ধরে সিট থেকে নামিয়ে নিজে গিয়ে দ্বীপের সিটে বসল। দ্বীপ বাধ্য হয়ে ড্রাইভারের সিটে গিয়ে বসল।
সারাহ অধীর আগ্রহে বসে আছে ওর বন্ধুদের জন্য। ওরা আসলে তবেই মেহেন্দি অনুষ্টান শুরু হবে। আজ সারাদিন সে কিছুই খায়নি। এইদিকে ক্ষুদায় ম’রে যাচ্ছে ওইদিকে মনের অবস্থা ভাল নয়। দু’টো মিলিয়েই মেজাজ আরোও খিটখিটে হয়ে আছে। এরই মাঝে পাশের বাসার একজন সারাহ’কে দেখে বলছে,
” আহারে!মেয়েটা কত শুকিয়ে গিয়েছে আর কালো হয়ে গিয়েছে। শরীরের অবস্থা একদন কাহিল হয়ে গিয়েছে। এত শুকিয়ে গেলে কীভাবে সারাহ। আগের গায়ের রং কেমন কাঁচা হলুদের মত ছিলো। এখন কেমন কালচে হয়ে গিয়েছে। ”
সারাহ চোখ কপালে তুলে ভয়ানক বিরক্তিকর মুখভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে মহিলাটির দিকে। মহিলাটি যে রিতীমত তাকে তেল দিচ্ছে সে সেটা বুঝতে পারল। এমন আলগা পিরিত সারাহ’র কখনোই পছন্দ নয়। এমন অনেক মানুষ আছে তাদের সাথে দেখা হলেই বলবে, এমন শুকিয়ে গিয়েছো কেন? শরীরের এমন হাল কেন? সারাহ বরাবরই মানুষের মুখের উপর উত্তর দেয়। মহিলাটিকে বলল,
” আপনি আমাকে মোটা দেখেছিলেন কবে আন্টি? আমি তো জন্ম দেখেই স্লিম। বরং লাস্ট দু’মাসে আমার ওজন বেড়েছে পাঁচ কেজি। আমাকে কালো বলছেন কি দেখে। আমি আগেও ফর্সা ছিলাম এখনো ফর্সা।বরং এখন আরো আগের চেয়ে বেশী ফর্সা হয়েছি। কারণ এখন আমি ব্রান্ডের ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার করি। মাসে মাসে ফেসিয়াল করি। আর এখন আমার মুখে দামি হলুদের মেকাপ করা।দেখতে একদম পুতুলের মত লাগছে। ”
মহিলাটির মুখের ওপর একদম ঝামা ঘষে দিলো সারাহ। পাশের কয়েকজন মুখ চেপে হাসছে। সারাহ’র মা এসে সারাহ’কে ধমক দিয়ে বলল,
” এসব কি হচ্ছে।”
মহিলাটি বলল,
” শোনো বিয়ের পর যেন এমন মুখ চালিওনা। পরের বাড়ির ভাত খাওয়া অত সোজা নয়।”
” ভাত খাওয়ার অত ইচ্ছা আমার ও নেই। আমাকে নিয়মিত পিজ্জা আর বার্গার দিলেই হবে। ”
সারাহ’র আম্মু সারাহ’কে বলল,
” ছিঃ ছিঃ এসব কি হচ্ছে।”
“আম্মু উনি উপরে তেল দেয়, আড়ালে বদনাম করে। এইজন্য এমন করলাম। তুমি এই কূটনি মহিলাকে কেন দাওয়াত দিয়েছো। উনি পাড়ার সব অবিবাহিত মেয়েদের বলে বুড়ি, বিয়ে হচ্ছেনা আরোও অনেক কিছু। মানুষের ওপর ওপর আলগা পিরিত করে আর তার আড়ালে বদনাম করে।”
” সে করুক, তাই বলে তুমি এমন করবে। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ভুলেও এমন করোনা কিন্তু।”
সারাহ মুখ বাঁকিয়ে বলল,
” দেখতে হবে মেয়েটা কার? কার পেট থেকে ডাউনলোড হয়েছি সেটা দেখো আগে।”
সারাহ’র আম্মুর দুই ঠোঁটের মাঝ বরাবর খানিকটা ফাঁকা হয়ে গেলো। হা করে তাকিয়ে রইলো মেয়ের দিকে। এই মেয়ে তো তাকেও ছাড়ছেনা। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে কি করবে।
এমন সময় হাজির হলো ছোঁয়া, তন্ময়, মৃন্ময়, দ্বীপ, পিহু আর তরী। মৃন্ময় ফোনে আগেই তরীর ব্যাপারে জানিয়েছে। তাই তরীকে দেখে চিনতে অসুবিধা হয়নি সারাহ’র। সে তরীকে দেখেই কোনো ভনিতা ছাড়াই বলল,
” এই প্রিটি গার্ল নিশ্চয়ই তরী?”
তরী মৃদু হেসে জবাব দিলো,
” হ্যাঁ, আমাকে চিনেন আপনি?” তবে তাকে এত সহযে চিনে ফেলার জন্য দারুণ অবাক হলো। তরীর মনে এক গাঁদা প্রশ্ন।
সারাহ বলল, ” কি ভাবছো? আমি কীভাবে তোমায় চিনলাম?”
তরীর অবাকভাব একটুও কমেনি। সে অবাক হয়েই উত্তর দিলো,
” জি।”
সারাহ মশকরা করে বলল,
” আগের জন্মে তুমি আমার বোন ছিলে।”
ওদের কিছুক্ষণ গল্প স্বল্পের পর শুরু হলো সারাহ’র মেহেন্দীর পুরো অনুষ্টান। সবাই মিলে সারাহ’কে ধরেছে বরের ছবি দেখানোর জন্য। সারাহ বলল,
” কাল তো আসবেই তখন না’হয় দেখিস।”
মৃন্ময় বলল,
” এত ঢং না করে ছবি দেখা ফটাফট। মাথায় যে চুল টুল নেই সে বোঝাই যাচ্ছে। নিশ্চয়ই বয়স ৭০-৮০ হবে। আমাদের সমস্যা নেই, আমরা ঠিকই দুলাভাই ডেকে ডেকে মুখের ফ্যানা তুলে ফেলব।”
সারাহ তবুও ছবি দেখাতে নারাজ। সে কোনোভাবেই ছবি দেখাবে না। এক বাক্য বলে দিয়েছে আগামিকাল সবাইকে বর দেখতে হবে। সারাহ’র এমন ত্যাড়ামি দেখে ছোঁয়া বলল,
” তোর বর কেড়ে নেওয়ার এক বিন্দু ইচ্ছা আমার নেই। তাও তুই ছবিটা দেখা।”
এসময় মেহেদী ডিজাইন করা মেয়েটা বলল,
” আপু হাতের মাঝে তো জামাই-এর নাম লিখতে হবে। আপনার জামাই-এর নাম কি?”
সারাহ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মুখ মোচড়াতে মোচড়াতে বলল,
” নাম টাম লেখা লাগবে না। আপনি ডিজাইন করুণ।”
দ্বীপ বলল,
” দিলদার, লিখে দিন দিলদার ওর বরের নাম। টাইটেল দিন জুকার দিলদার।”
তন্ময় হাসি আটকানোর জন্য যুদ্ধ চালাচ্ছে। ফট করেই মৃন্ময় বলে উঠল,
” জসিম, ওর বরের নাম জসিম। আপনি জসিম লিখে দিন। লটারি জিতে বড়লোক হয়ে যেতে পারবে।”
সারাহ এইবার মৃন্ময়ের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো। এসময়ে সারাহ’র ফোন বেজে উঠল। সবাই ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। সেখানে লেখা রয়েছে রোশান সিদ্দিকী। তন্ময় -এর নাম্বার টা মুখস্থ। নাম্বারটা দেখেই চোখ কপালে উঠল। সে সাথে সাথে সারাহ’কে প্রশ্ন করল,
” রোশান স্যার তোকে কল দিচ্ছে কেন?”
ছোঁয়া বলল,
” কাহিনী কী? জলদি বল।”
মৃন্ময় ফোনটা রিসিভ করে লাউডে দিয়ে সারাহ’র মুখের সামনে ধরে বলল,
” নে কথা বল। দেখি কি বলে স্যার তোকে।”
সারাহ যেন এখন একজন আসামি। সে মুখ কাচুমাচু করে সবার দিকে তাকিয়ে মিনমিন স্বরে হ্যালো বলল। ফোনের ওপাস থেকে রোশান বলল,
” তোমার বন্ধুরা এসছে সবাই?”
সারাহ’র চোখ তার বন্ধুদের দিকেই চেয়ে আছে। এমন ধরা জীবনে সে খায়নি। মিহি কণ্ঠে বলল,
” হ্যাঁ এসছে, এখন রাখি।”
রোশান ফোনের ওপাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠ ছেড়ে কেমন যেন আকৃষ্ট করা কণ্ঠে বলল,
” এত তাড়া কীসের? বন্ধুদের পেলেতো আর কিছুই খেয়াল থাকেনা তোমার। ”
” কিছু বলবেন?”
” যেহেতু আগামিকাল তুমি আমার বাড়ি আসছো। সিদ্দিকী বাড়ি তোমাকে হ্যাপিলি ওয়েলকাম করতে ওয়েট করছে। সো আজ তুমি কিছু চাও আমার কাছে।”
ছোঁয়া ফোন মিউট করে বলল,
” বল যে হাতে মেহেদি দিয়ে লিখুন সারাহ আমার বউ।”
পিহু বলল, ” হ্যাঁ আপু বলুন।”
সারাহ ফোনটা মুখের কাছে এনে বলল,
” দামি কিছু চাইনা আপনার কাছে। আপনার টাকা খরচ হোক আমি তা চাইছিনা। শুধু হাতে মেহেন্দি দিয়ে লিখুন, সারাহ আমার বউ, আর আমি সারাহ’র জামাই।”
কথাটা রোশানের কর্ণকুহরে যেতেই সে তার ভ্রু যুগল সুঁচালো হয়ে গেলো। যেন আকাশ থেকে পড়ে প্রশ্ন করে উঠল,
” হোয়াট?”
” কেন শোনেন নি।”
রোশানের রোমান্টিকমুডের দফারফা হয়ে গেলো। সে বিরক্ত কণ্ঠে উত্তর দিলো,
” মাথা খারাপ। দুনিয়া উলটে গেলেও আমি হাতে মেহেদি দিবোনা।”
সারাহ ও কম জেদী নয়। সেও জেদী কণ্ঠে বলল,
” ওই হাতে মেহেন্দি না পরাতে পারলে আকিকা দিয়ে আমার নাম পরিবর্তন করে রাখব, চিত্রনায়িকা ময়ূরী।”
রোশান ফোনের ওপাশ থেকে খানিকটা টেনে টেনে বলল,
” তোমার পছন্দের নায়িকা বুঝি। ”
” আমার পছন্দের কেন হতে যাবে? আপনার পছন্দের নায়িকা।”
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১৭
” আমার পছন্দ এত ন্যারো নয়। রুচিসম্মত এবং মানসম্মত জিনিস ই আমি পছন্দ করি।”
সারাহ এবার খুব প্রাউডলি বলল,
” তার মানে আমিও মানসম্মত জিনিস।”
এ’কথা শুনে রোশান বলল,
” তুমি জিনিস নও, তুমি আমার বউ। বাই দ্যা ওয়ে মেহেন্দী তুমি আমাকে কখনোই পরাতে পারবেনা। তোমার নাম পরিবর্তনের জন্য রুচিসম্মত নাম চয়েস করো। আকিকার গরু,খাসি আমিই কিনে দিবো।”