একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ২৫
Mousumi Akter
রোশান স্যার ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম খুলছে কিন্তু চোখের নজর রয়েছে সারাহ’র দিকে। রাগে সারাহ হাতের আঙুল কচলাচ্ছে। চোখে-মুখে হিংসার জলন্ত আ-গু’ন জ্বলজ্বল করছে। রোশান স্যার শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,
” ফুল তাহলে তুমি নিবাই না? তাইতো? ”
সারাহ মনে মনে বলল, মানে কি? ফুল আমি না নিলে কি এই বুড়ো লোকের কিচ্ছু যায় আসেনা। এইজন্যই বন্ধুরা বলেছিলো জীবনে রোমান্টিক কেউ না আসলে জীবন মদিনার মায়ের ছেড়া কাঁথার মত হয়ে যাবে। নীমপাতার মত তেতো ভদ্রলোক আসলে প্রতিদিন আমাবশ্যা হয়ে যাবে। আমি যে রাগ করেছি সে নিয়ে এই লোকের মাথা ব্যাথা নেই। জানে যে উনার বউ উনারে মেনে নিচ্ছেনা, জোর করে বিয়ে করেছে। তাহলে বউ এর মন জয় করার জন্য হলেও তো এই লোক আমার রাগ ভাঙানোর জন্য এতক্ষণ সাধাসাধি করে এখানে সিলেটের বন্যা বইয়ে দিবে। ওমা সেসবের কোনো কিছু নেই। আমি জীবনেও এই বুড়ো, তিতো নীমপাতা, অরোমান্টিক ভদ্রলোককে কোনদিন মেনে নিবোনা। আমি রাগ করব, যেকোনো উপায়ে আমাকে সাধাসাধি করে যে আমার রাগ ভাঙাতে পারবে না আমি জীবনেও তাকে নিবে নিবোনা। মনে মনে খানিক্ষণ বিড়বিড় করে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” তা আপনাকে আর কীভাবে বুঝাবো, আমি ফুল নিবোনা। এককথা বারবার বলতে ভাল লাগেনা আমার।”
রোশান গায়ের শার্টটা খুলে কোট স্ট্যান্ড এর ওপর রেখে সারাহ’র সামনে এসে দাঁড়ালো। সারাহ’র থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” শুধু শুধু নষ্ট হবে ফুলগুলো। তাহলে জিনাত কে দিয়ে দিই? ”
সারাহ জিনাত’কে দেওয়ার নাম শুনেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। গোল গোল চোখে রোশান স্যারের দিকে তাকিয়ে বিস্ফোরিত কণ্ঠে বলল,
” বললেই তো পারতেন ফুলগুলা আপনার মামাতো বোনের জন্য এনেছেন। যান দিয়ে আসুন।”
রোশানের হাসি পাচ্ছে। তাও খুব কষ্টে হাসি চেপে ধরে রেখেছে সে । সারাহ’র এই রাগ সে ভীষণ ভাবে ইনজয় করছে। সারাহ’র বিস্ফোরিত চোখ-মুখ গম্ভীর রেখে বলল,
” আচ্ছা ঠিকাছে।”
বলেই অয়্যারড্রব থেকে একটা ট্রাউজার আর গেঞ্জি নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করল। ট্রাউজার আর গেঞ্জি পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখল, সারাহ ফ্লোরে সুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। রোশান কিছুক্ষণ ট্রাউজারের দুই পকেটে হাত গুজে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখের চশমাটা খুলে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” আমি জানি তুমি ঘুমোওনি। উঠে খাটে যাও।।”
সারাহ দাঁত কামড়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। সে রোশানের পাশেও সুতে রাজিনা। রাগে সমস্ত শরীর ফেটে যাচ্ছে সারাহ’র। আজ কেন অকারণ তার রাগ হচ্ছে সে জানেনা? এই রাগের কারণ ও জানেনা। অকারণ তার রাগ হচ্ছে। রাগের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। মাথার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে। রোশান জানে সারাহ ঘাড়ত্যাড়া মেয়ে। এভাবে বলে উঠানো যাবেনা। সে দরজার সিঁটকিনি লাগিয়ে দিলো। সিঁটকিনির শব্দ শুনে সারাহ কিছুটা চিন্তিত হলো। দরজা লাগিয়ে কি করবেন উনি? আমি ঘুমিয়ে পড়েছি ভেবে সুযোগ নিতে চাইছেন। এমন কিছু হলে ঘুম থেকে উঠে যাবো। সে দাঁত কামড়ে ফ্লোরে পড়ে এসব উদ্ভট কথা-বার্তা সারাহ ভেবে চলেছে। এমন মসয় আচমকা সারাহ’র শরীরের কারো হাতের স্পর্শ লাগল। সারাহ বুঝতে পারল এটা রোশান। রোশান তাকে কোলে তুলে খাটের উপর সুইয়ে দিয়ে বলল,
” যে মেয়ে সারারাত ঘুমোয়না, সে মাত্র পাঁচমিনিটে ঘুমিয়ে গেলো? ঘুমের এত উন্নতি কীভাবে হল?”
সারাহ রোশানের কথার কোনো উত্তর দিলোনা। চোখ বন্ধ করে পড়ে রইলো খাটের সাথে। রোশান এক নজরে তাকিয়ে রইলো সারাহ’র মুখের দিকে। গভীর কিছু ভাবছে সারাহ’র দিকে চেয়ে। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ সারাহ চোখ খুলে দেখল, রোশান তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখ পড়ল দু’জনের। সারাহ সাথে সাথে উঠে বসল। থতমত খেয়ে বলল,
“সমস্যা কি আপনার? আমাকে ডিস্টার্ব করছেন কেন? ”
রোশান স্যার হালকা কেশে গম্ভীর মুডে সারাহ’র উদ্দেশ্য বলল,
” সকালে জিনাত’কে বলে ফুলটা ফিরিয়ে আনব। জিনাত’কে বলব, তোমাকে ফুলটা দিয়ে দিতে।”
সারাহ ছ্যাঁৎ করে উঠে বলল,
“আমি কি বলেছি, ওইফুল লাগবে আমার।”
” রাগতো ওই ফুল নিয়েই করেছো।”
সারাহ আবারও রাগি কণ্ঠে বলল,
” এই নিয়ে আর কথা বলতে চাইনা। আমি ঘুমাব।”
রোশান রুমের লাইট অফ করে সারার পাশে সুয়ে মোলায়েম কণ্ঠে বলল,
“আমি ইচ্ছা করে দিইনি। ও বলছিলো ওর বমি পাচ্ছে। ফুলের ঘ্রাণ নিতে চায় ও। অনেক অনুনয় করে চাইছিলো একটি ফুল। ওখানের সবচেয়ে নষ্টফুলটা দিয়েছিলাম। ট্রাস্ট মি! দেওয়ার সময় গিল্টি ফিল হচ্ছিলো। ”
সারাহ উলটা দিকে ঘুরে বলল,
“আপনাকে আমি ভালবাসিনা, তাই কাকে ফুল দিলেন আর না দিলেন আই রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার। গুড নাইট। ”
” তুমি কোন সাইডে ঘুমোবে? শুনেছি স্বামীর কোন সাইডে ঘুমালে যেন ভাল হয়।”
সারাহ গড়গড় করে বলে উঠল,
” যে সাইডে বাতাস বেশী, ওই সাইডে ঘুমালে ভাল হয়। গরমা লেগে অসুস্থ হয়না। স্বামীর টাকা খরচ হয়না, ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগেনা।”
কি একটা অদ্ভুত কথা! সারাহ’কে এখন কিছুই বলে লাভ নেই। তাই রোশান আর কথা বাড়ালো না। রোশানের চোখে ঘুম নেই। ঘড়িতে রাত একটা বাজে। সারাহ’র রাগি চেহারাটা বারবার চোখের ওপর ভাষছে। ওই রাগে কি ভালবাসা ছিলো। এত জেলাসি কেন ওর চোখে তারায়। এমন সময় আচমকা সারাহ রোশানের গায়ের ওপর হাত রাখল। নিজের একটি পা রোশানের গায়ের ওপর তুলে দিয়ে রোশান’কে জড়িয়ে ধরল। ঘুমের মাঝে কোলবালিশ ভেবে রোশান’কে বেশ শক্তভাবে জড়িয়ে ধরল। রোশানের বুকে মাথা গুজে নিশ্চিন্তে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো। রোশান সারাহ’র এই পা’গ’লা’মি দেখে সারাহ’র মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল,
” পবিত্র আলিঙ্গন এত মধুর কেন মিসেস সিদ্দিকী?”
পরেরদিন সকাল ছয়টায় ঘড়ির এলার্ম বাজল। সারাহ’র ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ভাঙতেই সাইডে তাকিয়ে দেখল বিছানা ফাঁকা, রোশান বিছানায় নেই। সারাহ বিছানায় নিজের ফোন খুঁজতে গিয়ে দেখল, বিছানায় একটা বক্স রাখা। বক্সের ওপর একটা কাগজ রাখা। সেই কাগজের ওপর সারাহ’র ফোন। সারাহ উঠে বসল। বক্সটা টা খুলে দেখল, এক বক্স চকলেট সাথে কিছু তাজা বেলি ফুল। এইবার কাগজটা খুলে দেখল লেখা আছে,
“শুভ সকাল সারাহ সিদ্দিকী।
জানি রেগে আছো, কথা বলতে চাওনা আমার সাথে। বাধ্য হয়ে চিরকুটে আলাপণের পথ বেছে নিলাম। আসলে আমি রাগ ভাঙাতে জানিনা। গতকাল সারারাত ভেবেও একটা শব্দ মাথা থেকে বের করতে পারিনি, ঠিক কি বললে তোমার রাগ কমবে। হয়ত তোমার মন ভালো করা কোনো বাক্য আমি বলতেও পারব না। তাই আত্মসমর্পণ করছি। তোমার চকলেট ভালো লাগে তাই চকলেট গুলো রাখলাম আর হাঁটতে গিয়ে বাগান থেকে সদ্য ফোঁটা বেলি ফুল এনেছি। ”
সারাহ মৃদু হেসে বেলির ঘ্রাণ নাকে নিয়ে মনে মনে বলল,
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ২৪
” ঢং, এত সুন্দর করে সাত সকালে বউ-এর মন ভালো করতে জানা পুরুষ নাকি আবার মন ভালো করা একটি কথাও বলতে জানেনা৷ যে পুরুষ জানে মেয়েরা ফুল,চকলেট আর পুরুষের কেয়ারে মুগ্ধ হয়,সে পুরুষ আবার কীভাবে বলে, সে মন ভালো করতে জানেনা।”
সারাহ আর একটি কাগজে খুব সুন্দর করে লিখে রাখল,
” ধন্যবাদ ফর ইওর প্রায়োরিটি। ”