একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ২৯

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ২৯
Mousumi Akter

রাত এগারোটা বাজে। মেসের ছেলে-মেয়েদের জন্য রাত এগারোটা আহামরি কোনো রাত নয়। গ্রামের মানুষের এক ঘুম হয়ে যায় রাত এগারোটায়। কিন্তু শহরে মেসে থাকা ছেলে -মেয়েদের জন্য রাত এগারোটা মানে কেবলই সন্ধ্যা। তন্ময় পরপর তিনটা টিউশনি শেষ করেছে। লাস্ট টিউশনিটা ছিলো ছোঁয়াদের এক ভাড়াটিয়ার মেয়ে। তন্ময় অন্য টিউশনিগুলা সপ্তাহে তিনদিন পড়ালেও ছোঁয়াদের বাসার ভাড়াটিয়ার মেয়েকে শুক্রবারও মিস দেয়না। স্টুডেন্ট এর মা-বাবার কাছে তন্ময় এজন্য খুব প্রশংসনীয়। এত ভাল একজন ছাত্র তন্ময়, টিউশনিতে অভিজ্ঞতাও অনেক ভালো। এই যুগে কেউই সপ্তাহে সাতদিন পড়ায়না। রেগুলার স্টুডেন্ট-এর মায়ের এত প্রশংসা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত তন্ময়। কিন্তু স্টুডেন্ট এর মা জানেনা তন্ময় এ বাসায় কেন পড়াতে আসে। কারণ টা একমাত্র ছোঁয়া। কেবল ছোঁয়াকে দেখতে পারবে বলেই এই টিউশনিটা করানো। পড়ানো শেষ হলে তন্ময় ছোঁয়াকে মেসেজ করল,

” পড়ানো শেষ আমার। বাইরে এসো।”
তন্ময়ের মেসেজ পেয়ে ছোঁয়ার ঠোঁটে মৃদু হাসি। ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে ছোঁয়া বাইরে এসে রিপ্লাই করল,
” এসছি।”
তন্ময় বাইরে এসে দেখল, ছোঁয়ার গায়ে একটা সাদা টি-শার্ট, পরণে কালো প্লাজু, মাথায় একটা সাদা রঙের ক্যাপ, চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া। ছোঁয়া সিঁড়িতে দাঁড়িতে ফোন চাপছে। তন্ময় এসে একটা শুকনো কাশি দিলো। শব্দ শুনেই ছোঁয়া চোখ তুলে তাকালো। দুই ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিৎ ফাঁকা। খানিকটা মুগ্ধতা, খানিকটা অবাককরা চাহনিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়া। এইযে সিমসাম পোশাকে তন্ময়কে এত মোহনীয় দেখাচ্ছে কেন? ধবধবে ফর্সা শরীর, নাকের ডগায় কালো মিচমিচে তিলটা থেকে যেন ছোঁয়া চোখই সরাতে পারছেনা। টিভির পর্দায় যে হ্যান্ডসাম, সুদর্শন নায়কদের দেখানো হয় তারাতো কেউ তন্ময়ের মত সুন্দর নয়। তন্ময়ের তো সিনেমা জগৎ এ থাকা উচিৎ। আল্লাহ কি সব সৌন্দর্য্য একটা মাত্র ছেলের ভেতরে ঢেলে দিয়েছেন।
ছোঁয়াকে ওভাবে তাকাতে দেখে তন্ময় কিছুটা লজ্জা পাচ্ছে। ঠোঁটে লাজুক হাসি চেপে রেখে ছোঁয়াকে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” কি দেখছো?”
ছোঁয়া চোখের দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে বলল,
” আমাকে তুমি বলবিনা। আমার কেমন যেন লাগে।”
তন্ময় মোহনীয় চোখে ছোঁয়ার লাজুক চোখের পাতায় তাকিয়ে বলল,
” নিজের বউকে কেউ তুই বলে নাকি।”
ছোঁয়া ভীষণ লজ্জা পেলো। সে অন্যদিকে ঘুরে বলল,
” আমি তোর বউ নাকি। ”
তন্ময় মৃদু স্বরে বলল,

” এই মুহুর্তে তোমার লজ্জারাঙা মুখের দিকে তাকিয়ে ফিল করলাম, আমার বউ সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একমাত্র আমার সামনে যে এভাবে লজ্জা পাবে। আমার বউনা হলে তুমি এভাবে লজ্জা পাচ্ছো কেন?”
ছোঁয়া চোখ-মুখ থেকে লজ্জা আড়াড়ের বৃথা চেষ্টা করল। ঝাঝালো কণ্ঠে বলে উঠল,
” লজ্জা বা বাল পাচ্ছি। যা তুই অনেক রাত এখন।”
ছোঁয়া! ছোঁয়া! ছোঁয়া! তিনবার ডাকল তন্ময়। কি সুন্দর মধুর আবেদনময়ী ছিলো সে ডাক। ছোঁয়া ভেতর থেকে উল্লাসিত। আনন্দে তার তন্ময়কে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে। পছন্দের মানুষ ডাকলেও এত সুন্দর শোনায়।
ছোঁয়া নিজের ভাল লাগা ভেতরে চেপে ধরে বলল,

” বল।”
তন্ময় ফিসফিস করে বলল,
“সমস্যা কি ছোঁয়া?”
“কোন সমস্যা?”
তন্ময় আবারও ফিসফিস করে ছোঁয়ার দিকে ঝুকে বলল,
“আমাকে বুঝিস না কেন তুই?”
ছোঁয়া তন্ময়ের বুকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,
“কি বুঝব তন্ময়?”
কেমন যেন দু’জনে দু’জনের হৃদয়ের অনেকটা কাছাকাছি এই মুহুর্ত। কিছু মুহুর্ত অটোমেটিকই এমন তৈরি হয়ে যায়। তন্ময় ভালবাসা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,

“আমি তোমাকে ভালবাসি ছোঁয়া। এটা কেন বোঝোনা।”
“কিন্তু আমি বাসিনা তন্ময়। তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। ”
তন্ময় ছোঁয়ার হাত ধরে ফেলল খপ করে। তন্ময়ের স্পর্শ পেয়েই কেঁপে উঠল ছোঁয়া। হৃদয়ে ছোট্ট ঝড় উঠল ভালবাসার। তন্ময় ছোঁয়ার হাত ধরে বলল,
“বেষ্টফ্রেন্ডরা কি বেষ্ট হাজব্যান্ড-ওয়াইফ হতে পারেনা। একটা সুযোগ তো দাও ছোঁয়া।”
ছোঁয়া হাত মোচড়ামুচড়ি করে বলল,

“প্লিজ তন্ময়! দিন দিন তোর পা-গ-লা-মি বাড়ছে ছাড়া কমছে না। কেমন নির্লজ্জ, বেহায়া হয়ে যাচ্ছিস।”
“ভালবাসা তো দিন দিন বাড়ে ছোঁয়া। ধরে নাও, আমি তোমার পা-গ-ল, বেহায়া,নির্লজ্জ প্রেমিক।”
ছোঁয়া অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,
” এমন বেহায়া প্রেমিক লাগবে না আমার।”
আচমকা তন্ময় ছোঁয়ার গালে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে বলল,
” আমার গভীর স্পর্শ দিয়ে গেলাম। দেখি কীভাবে আমাকে ছাড়া থাকতে পারো।” বলেই তন্ময় হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো। ছোঁয়া চোখ বড় বড় করে গালে হাত দিয়ে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।

রাত বারোটা বাজে। দ্বীপ, আর মৃন্ময়ের মাথা খাটের ওপর, পা ওয়ালে বাঁধানো। মৃন্ময় তরীর সাথে কথা বলার জন্য পিহুর নাম্বারে বারেবার কল দিচ্ছে। পিহু বারবারই ফোন কেটে দিচ্ছে। মৃন্ময় রাগে গটমট করতে করতে বলল,
” আমার বোন না রা’ক্ষ’সী বুঝিনা। কর্কস মহিলা একটা। নিজের তো অনুভূতি নেইই। ভাই-এর অনুভূতি ও বোঝেনা। জানে যে আমি ফোন রিসিভ করলেই বলব, ‘ তরীর সাথে কথা বলিয়ে দিতে। সেটা বুঝেই ফোন কেটে দিচ্ছে।”
দ্বীপ ফোন চাপতে চাপতে বলল,
” বোন বড় হইছে। দেখ কার সাথে প্রেম করছে। তুই বা ডিস্টার্ব করছিস কেন?”
মৃন্ময় খুব কনফিডেন্টলি বলল,
” ওসব ও বোঝেনা।”
” বুঝলেও তোকে বলবে?”

মৃন্ময় ওয়াল থেকে পা নামিয়ে দ্বীপের পেটের ওপর উঠিয়ে বলল,
” প্রেম করলে করুক, কিন্তু তোর মত চরিত্রহীন কারো সাথে যেন না করে।”
দ্বীপ মৃন্ময়’কে লা’ থি মেরে বলল,
“শালা যদি তোর বোন না হতো, একটা চান্স নিতামই।।ভাগ্য ভাল বোনটা তোর।”
মৃন্ময় দ্বীপের হাত থেকে দ্বীপের ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,
“দেখি কোন মাদারবোর্ড -এর বোনের সাথে চ্যাট করছিস। কোন বলদের বোন তোর সাথে কথা বলে।”
দ্বীপ মৃন্ময়-এর মাথায় একটা চাটি মেরে বলল,
” শালা ভাবি হয় তোর। সম্মান দিয়ে কথা বল।”
মৃন্ময় ভ্রুঁ কুচকে দ্বীপের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
” ভাবি? কার ভাবি? এক রাতের মাঝে পয়দা হলো কইত্তে?”
দ্বীপ মৃদু হেসে বলল,
” গতকাল থেকে।”
মৃন্ময় তন্ময়’কে উদ্দেশ্য করে বলল,

” এইযে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জাতির ক্রাশ তন্ময় ভাই। আপনি কি জানেন গুরু, দ্বীপের প্রেম হলো কবে, কখন।”
তন্ময় খাতায় ম্যাথ করছিলো। মৃন্ময়ের কথায় কলম থামালো। মুচকি হেসে বলল,
” আমিতো গতকালই ওকে স্বান্তনা দিচ্ছিলাম। কখন কি ঘটালো।”
মৃন্ময় দ্বীপের ফোন থেকে ফোন আড়ালে নিয়ে মেসেজ লিখল,
” জা’ন একা একা ঘুম আসছে না। নিড ইউ।”
মেসেজ লিখে নিজে নিজেই জোরে হেসে উঠল। দ্বীপের সন্দেহ হল। দ্বীপ মৃন্ময়কে খুব ভাল করেই চিনে। নিশ্চয়ই কোনো অঘটন ঘটিয়েছে। মৃন্ময়ের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে মেসেজ রিমুভ ফর এভ্রিওয়ান করতে গিয়ে ওয়ানলি মি করে ফেলছে। দ্বীপ ফোন দূরে ছুড়ে মেরে বলল,

” দেখ কি করলাম, মেসেজ রিমুভ করতে গিয়ে এভ্রিওয়ানের পরিবর্তে, ওয়ানলি মি করেছি। দিলি তো আমাকে মেয়েটার কাছে চরিত্রহীন বানিয়ে। এই মেয়ে হাত থেকে ছুটে গেলে আমি মৃন্ময়ের ঘুমন্ত অবস্থার ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিবো। ইশরে! মেয়েটা কত সুন্দ্র দেখতে। সারাক্ষণ আমার চোখের সামনে ভাষছে।”
তন্ময় বলল,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ২৮

” দেখিস যেন ফেইক আইডি না হয়।”
দ্বীপ হতাস হয়ে বলল,
” এটা যদি কোনো এড়ের আইডি হয়। আমি সেই এড়েকে বিয়ে করব। তবুও আর সিঙ্গেল থাকব না।”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৩০