একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৩৮+৩৯

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৩৮+৩৯
Mousumi Akter

পরেরদিন খুব ভোরে ঘুম ভাঙল সারাহ’র। নরমালি এত ভোরে তার ঘুম ভাঙেনা কখনো। ঘুম ভেঙেছে তবুও চোখ বন্ধ করে ঘুমোনোর চেষ্টা করছে পুনঃ রায়। কিন্তু ঘুম আর প্রেম কোনটাই কি জোর করে হয়। এই দুইটা জিনিস কখনো জোর পূর্বক হয়না। সারাহও চেষ্টা করে পারলনা আর ঘুমোতে। তবে চোখ জোড়া বন্ধ করেই রেখেছে, মস্তিষ্ক সজাগ। চোখ বন্ধ অবস্থায় ভারী কিছু একটা অনুভব করছে তার শরীরে। কেউ একজন যে তার ওপর ভর করে আছে সেটা বুঝতে বেশীক্ষণ লাগল না।

সেই কেউ একজন যে কে সেটা বুঝতেও সময় লাগলনা। মুহুর্তের মাঝে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সারাহ’র মুখখানা। মনে পড়ল গতরাতের সমস্ত ঘটনা। ইশ!কি লজ্জা। এতবড় লজ্জা কই লুকাবে সারাহ! কীভাবে এই মানুষটার সাথে দ্বিতীয়বার কথা বলবে সে। সাথে সাথে লজ্জায় দুইহাত দিয়ে মুখ ঢাকল৷ কোনভাবেই এই মুখ আর সে দেখাতে পারবে না। এত বেশী লজ্জা লাগছে মনে হচ্ছে আকাশ ভেদ করে উপরে উঠে যেতে পারলেই বেঁচে যেত। এখনি লজ্জায় মনে হচ্ছে ম’রে যাবে সে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তখনই অনুভব করল পেটের ওপর উষ্ণ নিঃশ্বাস পড়ছে। সারাহ তখনই চোখ খুলল। চোখ খুলে আবিষ্কার করল একটা সাদা চাঁদরে ঢেকে রয়েছে সে আর রোশান স্যার। রোশান স্যার তার পেটের ওপর মুখ গুজে ঘুমোচ্ছেন। নাক আর ঠোঁটের স্পর্শ লেগেছে পেটে। লজ্জায় সারাহ কোনো কথা ই বলতে পারছে না। সেকেন্ডে সেকেন্ডে ফোঁস ফোঁস করে ওঠা মেয়েটা লজ্জায় একেবারে ভেঙেচুরে গিয়েছে৷ খানিকটা সময় অতিবাহিত হল কিন্তু রোশান স্যারের ঘুম ভাঙল না৷ সারাহ খুব সাবধানে রোশান স্যারের মাথা সরিয়ে খাট থেকে নামার চেষ্টা করল। সাথে সাথে রোশান স্যার সারাহ’র পেট কোমরসহ জড়িয়ে ধরে চাঁদর টান মেরে ফেলে দিলো। চোখ বন্ধ অবস্থায় ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল,

” কোথায় যাচ্ছো?”
ঘুম ঘুম কণ্ঠ যেন মাদকের ন্যায় শোনালো। যেন একজন নেশাগ্রস্থ মানুষ। সারাহ লজ্জারাঙা চোখে রোশান স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখল, রোশান স্যারের পরণের প্যান্ট কোমরের একদম নিচে। মেদহীন পেট, আর শারিরীক ফিটনেস যেন বহুগুনে ফুটে উঠেছে আজ৷ সারাহ আগে পরে তাকে এভাবে খালি গায়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায় দেখেনি। আজই প্রথম। সারাহ আজ আবিষ্কার করল, খালি গায়ে তার শারিরীক সৌন্দর্য্য বহুগুন প্রকাশ পায়।
সারাহ লাজুক মুখে অন্যদিকে তাকিয়ে ব,

” উঠতে হবে।”
রোশান স্যার আবারও ঘুম ঘুম কণ্ঠে জবাব দিলেন,
“কোথাও যেতে হবেনা। ”
সারাহ রোশানের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বলল,
” বই পড়তে বসব।”
রোশান স্যার তখন চোখ খুললেন। ঘুম ঘুম চোখে সারাহ’র লজ্জারাঙা মুখের দিকে তাকিয়ে অভিভূত হল। নেশালো কণ্ঠে বলল,
” ক্লাস তো নিচ্ছি তোমার। স্পেশাল ক্লাস, প্রাক্টিক্যাল ক্লাস। বই না পড়লেও চলবে। ” বলেই সারাহ’র মসৃণ পেটে ঠোঁট ডোবালো।
লজ্জায় সারাহ এইবার ম’রে’ই যাবে৷ দ্রুত মুখ ঢাকল দুইহাত দিয়ে। রোশান স্যার সারাহ’র লজ্জারাঙা মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,

” আমার বউ সুন্দর জানতাম, কিন্তু লজ্জা পেলে এত সুন্দর লাগে জানতাম না। নারীর অর্ধেক রুপ লজ্জায়। ”
সারাহ লজ্জামিশ্রিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
” বাকি অর্ধেক কীসে?”
রোশান স্যার আবারও সারাহ’র পেটে চুমু খেলেন৷ দুষ্টু হেসে জবাব দিলেন,
” বাকি অর্ধেক আমার আদর আর ভালবাসায়।”
সারাহ আবার ও ভীষণ লজ্জা পেলো। সে রোশানের থেকে পালাতে চাইছে। পালানোর কোনো রাস্তা খুঁজে না পেয়ে বলল,

” দেখুন ছাড়ুন আমাকে, এক্ষুনি পড়তে বসব আমি।”
রোশান স্যার সারাহ’র কপাল, গাল, ওষ্টে এক নাগাড়ে কতগুলো চুমু অঙ্কন করে বলল,
” আই ওয়াজ টিচিং ইউ। ইউ উইল নট ফাইন্ড এ বেটার টিচার দ্যান মি মিসেস সিদ্দিকী।”
সারাহ আবারও লজ্জারাঙা চোখ রোশান স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” এটা কি পড়াচ্ছেন? আর কীসের ক্লাস এটা হুম।”
” রোমান্সের ক্লাস। এখন থেকে নিয়মিত একাডেমিক ক্লাসের পাশাপাশি রোমান্সের ক্লাস শেখাব তোমাকে। ইটস মাই স্পেশাল ক্লাস ফর ইউ।”

সারাহ আবারও ভয়াবহ লজ্জা পেল। এই থমথমে গম্ভীর মানুষ যে এত অসভ্য সেটা সারাহ’র জানা ছিলনা। দেখলে মনে হত এসব কিছুই সে বোঝেনা। কিন্তু সে যে এই বিষয়েও ফার্স্ট এখন বুঝতেছি। সারাহ লজ্জামিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
” সবাইকে বলে দিবো কিন্তু, একাউন্টিং এর টিচার রোশান স্যার আমার সাথে পঁচা কথা বলে।”
রোশান দ্রুত সোয়া থেকে উঠল। সারাহ কে বলল,
” এই তুমি কাজের খালাদের আমাদের মাঝে কি হয়না হয় বলেছো কেন?”
সারাহ নিজেও উঠে বসে বলল,

” কই বলিনা তো।”
” তাহলে উনারা জানল কীভাবে এতদিনে আমাদের মাঝে কিছু হয়েছে কীনা!”
সারাহ মুখ কাচুমাচু করে বলল,
” আসলে ওনারা খুব চালাক। আমি ফ্যামিলি প্ল্যানিং নিয়েছি কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি৷ আমি বলেছিলাম আমাদের মাঝে তেমন কিছু হয়নি।”
রোশান বিছানা ছেড়ে উঠল। ওয়াশ রুমে যেতে যেতে বলল,
” এসব কাউকে বলতে নেই। এগুলা খুব প্রাইভেট ব্যাপার। আর বলবা না ঠিক আছে।”.
সারাহ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল যে ঠিক আছে।

সেদিন বৃষ্টির পর মৃন্ময় আর তরীর মন কাছাকাছি এসেছিলো। অনুভূতির অনেক কাছাকাছি এসে, দু’জন উপলব্ধি করেছিলো দু’জন দু’জনকে ভালবাসে। সেই ভালবাসার তীব্রতা বিগত কয়েকদিনে বেড়ে চলেছে বহুগুন। তরীর জীবনের সব চেয়ে মিষ্টি মধুর সময় অতিবাহিত করছে এই মুহুর্তে। কে জানতা ম’রা গাছে নতুন করে ফুল ফুটবে। যে মেয়েটা হাসতে ভুলে গিয়েছিলো সে আবার নতুন করে হাসবে। কাউকে নিয়ে রঙিন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখবে। লাস্ট কয়েকদিন তরীর ঠোঁটে সব সময় মৃদু লাজুক হাসি থাকে, গান শুনতে ভাল লাগে, নাচতে ইচ্ছা করে। আসলে মন সুস্থ থাকলে পৃথিবীর সবই ভাল লাগে। মানসিক শান্তিই হল মেইন।

মানসিক শান্তি থাকলে পৃথিবীর কোনো কষ্টই যেন কষ্ট বোধ হয়না। মানসিক শান্তির জন্য একজন বিশ্বস্ত মনের মানুষ ই যথেষ্ট। গত দু’দিন ধরে মৃন্ময়কে ব্যস্ত দেখাচ্ছে। তরীর সাথে কথা হলেও সে ভীষণ ব্যস্ত। বাসায় মৃন্ময়ের সাথে মৃন্ময়ের দু’জন বন্ধুও এসেছে। ওদের মাঝে একজনের মন ভীষণ খারাপ। কেন তা তরী জানেনা। সে ছোট মানুষ। এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করাও উচিৎ নয় বলে কারো কাছে কিছু জিজ্ঞেস ও করেনি। এখন সকাল সাতটা বাজে। তরী খুব দ্রুত সকালের নাস্তা বানিয়ে ডায়নিং রেখে বারবার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে মৃন্ময়ের দিচ্ছে। কেন যে মৃন্ময়কে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। তখন দিশা নাইট ড্রেস পরেই বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।

দিশাকে কেমন যেন উন্মাদের মত লাগছে আজ। বিগত কয়েকদিনে সে বুঝে গিয়েছে তরী আর মৃন্ময়ের মাঝে কিছু একটা ঘটে গিয়েছে। আর সত্যটুকুই দিশা মেনে নিতে পারছে না। মানুষ যখন অন্যায় পথে ছোটে ঠিক ভুলের পার্থক্য ভুলে যায়। দিশা টাকার লোভে তরীর বাবাকে বিয়ে করলেও মনের দিক থেকে তার মৃন্ময়ের মত হ্যান্ডসাম ছেলেই পছন্দ। তখন টাকার লোভে পা’গ’ল হয়ে তরীর বাবাকে বিয়ে করেছিলো। এখন মৃন্ময়ের একটু স্পর্শ পেতেই পা-গ-ল। দিশা উ’ ন্মাব দ হয়ে আছে মৃন্ময়কে কাছে পাবার জন্য। আনেকবার শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বুঝিয়েছে কিন্তু মৃন্ময় পাত্তা দেয়নি। কিন্তু এখন মৃন্ময় আরো হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। সে পুরাপুরি তরীর আয়ত্তে চলে গিয়েছে। লাস্ট কয়েকদিন দিশা পা-গ-লের মত আচরণ করছে। তরীকে সহ্যই করতে পারছেনা। ডায়নিং এ তরীকে দেখে অগ্নিচোখে তাকালো একবার। তারপর বের হয়ে গেলো ফ্ল্যাট ছেড়ে। তরী খানিকটা অবাক হল দিশাকে দেখে।
নিজেকে আটকে রাখার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে প্রশ্ন করল,

” যাচ্ছো কোথায়?”
দিশা পৈশাচিক একটা হাসি দিয়ে বলল,
” কেউ একজন আমাকে ডেকেছে। সামওয়ান স্পেশাল। ”
বলেই বের হয়ে গেল। তরীর কাছে অবাক লাগল। তার বাবাতো ভেতরেই আছে, তাহলে গেল কোথায়?
মৃন্ময়দের দো’তলার একটা রুম পড়ে রয়েছে। দিশা সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণের মাঝে মৃন্ময় হাজির হল সে রুমে। মৃন্ময় সে রুমে প্রবেশ করতেই দিশা দরজার আড়াল থেকে এসেই দরজা লাগিয়ে দিলো। অতিব্যাস্ত হয়ে দরজা লাগানোর জন্য সিটকিনিতে জোরে একটা শব্দ হল।
সিটকিনির শব্দে কেঁপে উঠল মৃন্ময়। সে দিশাকে দেখে চমকে গিয়ে বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করল,

” কি আশ্চর্য আপনি এখানে? আর এ ধরণের পোশাকে?”
দিশা কামুক দৃষ্টিতে মৃন্ময়ের দিকে তাকালো। আচমকা গিয়ে মৃন্ময়কে জড়িয়ে ধরে বলল,
” তুমি কেন বোঝোনা তোমাকে কত ভালবাসি আমি। কেন বোঝোনা তোমাকে চাই আমি। প্লিজ আমাকে ভালবাসো। এই নরকময় জীবন থেকে বাঁ,চাও আমাকে। আমি ভালবাসার মানে আগে বুঝিনি। তোমাকে দেখার পর থেকে বুঝেছি, টাকার চেয়ে মনের মানুষের মূল্য অনেক বেশী৷ আমাকে বাঁচাও মৃন্ময়। এখান থেকে পালিয়ে নিয়ে চলো।”
মৃন্ময় দিশাকে খুব জোরে ধাক্কা মেরে নিজের থেকে দূরে সরালো। অগ্নিচোখে দিশার দিকে তাকিয়ে এক দলা থু থু দিশার মুখে মেরে বলল,

” তুইতো দেখতেছি যশোরের পতিতা পল্লি থেকে উঠে এসছিস। এই বেয়াদব খা’* ন*- কি, মা** গি মহিলা। তোর পোশাকের কি অবস্থা এ। এইভাবে এইখানে এসেছিস কেন? এখানে তো তরীর আশার কথা ছিলো কিন্তু তুই কেন? বুঝছি তুই তরী সেজে টেক্সট দিয়েছিস আমাকে। এই কয়টা লাগে তোর। বুইড়া দিয়ে হচ্ছেনা। যে মেয়ের টাকার লোভ সে কোনদিন টাকা ছাড়া ভালবাসার মূল্য বোঝেনা।”
দিশা মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
” তুমি কি পুরুষ নাকি কোনো সমস্যা আছে। আমার মত সুন্দরী মেয়ে এমন পোশাকে দাঁড়িয়ে তোমাকে কাছে ডাকছে আর তুমি উপেক্ষা করছো। ”
মৃন্ময় আবারও কয়েকটা গা’লি দিয়ে বলল,
” এসব রাস্তার মেয়ে উলঙ্গ হয়ে সুয়ে থাকলেও মৃন্ময়ের **** আসবে না। মৃন্ময়ের ফিলিংস এতটাও নড়বড়ে নয় কেউ সুয়ে পড়লেই সেও সুয়ে পড়বে। আমার মুডের রুচি আছে। ”
দিশা রাগান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,

” রুচির প্রসঙ্গ যখন আনলে তাহলে বলো আমাকে রেখে তরীকে কেন? তুমি তরীকে পছন্দ করতে পারো আর আমাকে নয়? তরীর চেয়ে হাজারগুন সুন্দরী আমি, হাজারগুন স্মার্ট আমি। এমন কি আছে যা তরীর মাঝে আছে আর আমার মাঝে নেই। তরীকে স্পর্শ করতে আমার খারাপ লাগেনা, যত খারাপ লাগা আমার বেলায়।”
মৃন্ময় চোয়াল শক্ত করে দিশার গালে চার থেকে পাঁচটা থা*প্প*ড় মে-রে বলল,
” কি বললি তুই? আমি তরীকে স্পর্শ করি? তুই যে নোংরা ইঙ্গিতে তরীর ক্ষেত্রে বললি, এমন কিছু আর কোনদিন বললে, তোর জিভ আমি ছি’ড়ে নিবো। তরীকে আমি স্পর্শ করতে গেলে আমার সমস্ত শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয়। যেন ভুমিকম্পন হয় আমার মনে। যদিও সেই স্পর্শ ভালবাসার। তরী তোর মত সেক্সুয়াল সাব্জেক্ট এ এক্সপার্ট নয়, এমনকি এসব ও বোঝেও না। ”

দিশার চোখে আ-গু-ন জ্বলছে। সেই আ-গু-ন চোখে নিয়ে বললে,
” তরীর জন্য তুমি আমাকে রিজেক্ট করলে, অপমান করলে, তুলনা করলে, আমিও কোনদিন তোমাকে আর তরীকে এক হতে দিবোনা। ”
মৃন্ময় দিশার দিকে অগ্নিচোখে তাকিয়ে বলল,
” যদি আল্লাহ স্বয়ং বাঁধা না দেন, তবে তরীক হবে আমার বউ। হবে কি, আমি ওকে আমার বউ বলে কবুল করে নিয়েছি।”
দিশাও সমান ভাবে রাগান্বিত চোখে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
” তরীর জন্য আমি তোমাকে পেলাম না। তোমার সামান্য স্পর্শটুকুও পেলেও আমার অশান্ত হৃদয় শান্ত হত। আমি তরীকে খু’ন করে ফেলব। ”
মৃন্ময় দাঁত কিড়মিড় করে আরোও দু’ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলল,

” খু’ন তুই হবি আমার হাতে। কেউ আটকাতে পারবে না।” বলেই মৃন্ময় দরজা খুলল ঘরের। দরজা খুলতেই দেখল সিঁড়ি বেয়ে তরীর বাবা আর তরী ওপরে উঠে আসছে। আর তখনই দিশা এলোমেলো চেহারা নিয়ে রুম থেকে বের হল। দু’জনে মুখোমুখি হল তরী আর তরীর বাবার। মৃন্ময় আর দিশাকে এ অবস্থায় দেখে তরীর বুকের ভেতরটা অদ্ভুত এক যন্ত্রণায় মোচড় দিয়ে উঠল। ওরা দু’জন এভাবে কেন? তরীর বাবাও অবাক চোখে দু’জনের দিকে তাকালো। তখনই মৃন্ময় মেজাজ খারাপের সাথে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
” দেখুন আপনাকে আমি ভাই বলে ডাকি। সেই সম্পর্কে আপনার ওয়াইফ আমার ভাবি হন। কিন্তু উনি চরিত্রে ভীষণ সমস্যা।”
তখনই দিশা কান্নাকাটি করে তরীর বাবাকে এসে জড়িয়ে ধরে বলল,

” ও মিথ্যা বলছে। ও একটা চরিত্রহীন ছেলে।”
তখনই মৃন্ময় পায়ের থেকে স্যান্ডেল খুলে দিশার দিকে এগিয়ে নিয়ে বলল,
” মিথ্যা বললে জু’তা দিয়ে গাল সোজা করব।”
ওদের চেচামেচিতে বাড়ির ভাড়াটিয়ারা সব একত্রিত হল। মৃন্ময়ের মা-বাবা বোন, তন্ময় আর দ্বীপ ও বাসায় ছিলো। সবাই দো ‘তলার সিঁড়িতে একত্রিত হল।
তরীর বাবা মৃন্ময়ের দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে বলল,
” তুমি কোন সাহসে আমার বউ এর দিকে জু-তা নিয়ে আসছো৷ আমার বউকে আমি চিনি। কত কম বয়সে আমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছে। ওর চরিত্রে কোনো সমস্যা নেই। তুমি কি করেছো ওর সাথে।”
তখন দিশা কাদতে কাদতে বলল,

” ও তরীর দিকে খারাপ নজর দিয়েছে। তরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছে। আমি বুঝাতে এসছিলাম তরী ছোট। ওকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ক্ষতি না করতে। যতই হোক আমার মেয়ে হয় তরী। ওকে বুঝাতে আসলে ও আমার সাথে জবরদস্থি করার চেষ্টা করে।”
দিশার জলজ্যান্ত মিথ্যা শুনে মৃন্ময়ের র*ক্ত টগবগ করে উঠল। দাঁত কিড়মিড় করে দিশার দিকে তেড়ে গেলো। তন্ময় আর দ্বীপ মৃন্ময়কে আটকালো। মৃন্ময় চিৎকার করে বলল,
” আমি তোকে খু*ন করে ফেলব। কেউ আটকাতে পারবেনা। মিথ্যাবাদী একটা।”
তরীর বাবা মৃন্ময়ের বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,

” আপনাদের ভদ্রলোক ভেবেছিলাম। কিন্তু আপনার ছেলের চরিত্র এত খারাপ জানা ছিলোনা।”
মৃন্ময়ের বাবার মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে ভাড়াটিয়াদের সামনে। তরীর বাবাকে বললেন,
” শান্ত হন। আমার ছেলে অন্যায় করলে তার বিচার আমি করব।”
তন্ময় আর দ্বীপ একই সাথে বলে উঠল,
” মৃন্ময় এ ধরনের ছেলে নয়। এই মহিলা প্রথম থেকেই কু নজর দিচ্ছিলো মৃন্ময়ের দিকে।”
দিশা বলে উঠল,
” তাহলে কি তরী ও কু নজর দিচ্ছিলো। তরীর পেছেন কেন লেগে আছে ও। চরিত্রহীন একটা ছেলে ও। বাড়ির মেয়ে ভাড়াটিয়াদের দিকে কু ‘নজর দেয়। তরীর সর্বনাশ করতে চাইছে। আমি আটকাতে গেসি বলে আমার ও সর্বনাশ করতে চেয়েছে।”
তরীর বাবা বললেন,

” এদের চরিত্র এত খারাপ আগে জানতাম না। লজ্জা করেনা আপনাদের।”
মৃন্ময়ের বাবা মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
” তুমি এখানে কি করছিলে মৃন্ময়৷ আর তরীর সাথে কোনো সম্পর্ক আছে তোমার।”
মৃন্ময় এর উত্তরের অপেক্ষায় আছে সবাই। সবার মাঝে কোনো দ্বীধাছাড়া উত্তর দিলো,
” আমি তরীকে ভালবাসি বাবা। আর আমি ওর দিকে কু’নজর দিইনি। এই দিশা যা বলছে তা মিথ্যা।”
মৃন্ময়ের বাবা পরের প্রশ্ন করলেন,
” তরী ও তোমাকে ভালবাসে? নাকি তুমি ওর পেছনে ঘুরতেছো।”
দ্বীপ বলল,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৩৭

” জি আঙ্কেল ভালবাসে। দু’জন দু’জনকে ভালবাসে।”
মৃন্ময়ের বাবা রাগান্বিত হয়ে তরীর বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন,
” নিজের মেয়েকে জিজ্ঞেস করেন আমার ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে কীনা! আমার ছেলেকে আমি চিনি। ওর চরিত্রে সমস্যা নেই। আপনার মেয়ে যদি আমার ছেলেকে ভাল বেসে না থাকে, আমি এখনি সবার সামনে জু-তা দিয়ে পেটাব আমার ছেলেকে। জিজ্ঞেস করুন আপনার মেয়েকে।”
তরীর বাবা তরীকে জিজ্ঞেস করল,
” তুই ও কি ওই ছেলেকে ভালবাসিস।”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪০