একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪
Mousumi Akter

নিজের মেয়ের সমবয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করে ভাড়া বাসায় এসে উঠলেন জুবায়ের আহমেদ।জুবায়ের আহমেদ যে আজ বিয়ে করে সরাসরি বউ নিয়ে আসবেন সে-কথা স্বপ্নেও জানত না তার একমাত্র মেয়ে তরী।বাবার ২য় বিয়ে কোনো সন্তানের জন্য সুখকর সংবাদ নয়।কিন্তু তরী বাবার ২য় বিয়ে স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে।তবে অস্বাভাবিক লেগেছে বাবার পাশে থাকা মেয়েটির বয়স দেখে। নিজের চোখ-কে যেন সে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার বাবা বিয়ে করবে ভাল কথা, তাই বলে তার বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করবে? তার চেয়েও অবাক করা ঘটনা তাদের দু’জনের নাকি লাভ ম্যারেজ।

খুব কম হলেও দু’জনের বয়সের পার্থক্য হবে ৩৫ বছর।বয়সের এত গ্যাপে দু’ জনের মাঝে প্রেম-ভালবাসার সৃষ্টি হল কীভাবে সেটা তরীর ছোট্ট মস্তিষ্কে বোধগম্য হচ্ছে না। তরী ফ্যাল ফ্যাল নয়নে, বিস্ময় ভরা বদনে তাকিয়ে দেখছে তার বাবা আর বাবার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির হাসি-খুশি মুখ। তরীর বাবা মেয়েটির কাঁধে হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে রেখেছেন।গা ভর্তি তরীর মায়ের সব গহনা।সাথে একটা স্যুটকেস ও আছে।মা মারা যাবার আজ দু’বছর পূর্ণ হল।মা মারা যাবার পর থেকে জীবনের সব সুখ -শান্তি হারিয়ে গিয়েছে । মা বেঁচে থাকতেও তরীর বাবা তরীর প্রতি খুব একটা সহনশীল ছিলনা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

খুব একটা ভাল ব্যবহার কখনোই করত না। তরীর মায়ের সাথেও খুব একটা ভাল ব্যবহার করত না।মা মারা যাবার পর থেকে বিয়ে করার জন্য তৎপর হয়ে পড়ে জুবায়ের আহমেদ।পারিবারিকভাবে বিভিন্ন মেয়ে দেখা হয়েছে কিন্তু তিনি পারিবারিক পছন্দে বিয়ে করবেন না।বহু আগে থেকেই তার নজর সব সময় কম -বয়সী সুন্দরী নারীর দিকে।দু’বছর ধরে ঘুরতে ঘুরতে গত তিনমাস ধরে এই কম বয়সী মেয়েটির সাথে সম্পর্ক। মেয়ের মা-বাবা মেনে না নেওয়ার জন্য মেয়েটি বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে।গ্রামের মানুষ যাতে আজেবাজে কথা বলতে না পারে তাই জুবায়ের আহমেদ বাসা ভাড়া নিয়েছে।সেখানে নিজের মেয়ে তরীকে নিয়ে সাতদিন আগে উঠেছিলো।আর আজ তার নতুন বউ নিয়ে উঠেছে। জুবায়ের আহমেদ তার পাশে থাকা মেয়েটিকে ফিসফিস করে বলছে,

মেয়েটি লাজুক হেসে জবাব দিল,
“তুমি পাশে থাকলে সব জায়গা-ই সুন্দর আমার কাছে।”
তরী এইবার আরো অবাক হল।তার চোখ দু’টো কপালে উঠল।এই টুকু মেয়ে কীনা তার বাবাকে তুমি করে বলছে।
তখন-ই জুবায়ের আহমেদ ডাকল,
” তরী, কোথায় তুমি?”

তরী চোখ -মুখ স্বাভাবিক করে নিজের রুম ছেড়ে ডায়নিং এ এসে দাঁড়াল। জুবায়ের আহমেদ বলল,
” ওর নাম দিশা, তোমার নতুন মা।আর দিশা আমার একমাত্র মেয়ে তরী।”
তরী চোখ তুলে তাকাল দিশা নামক মেয়েটির দিকে। দিশাকে নিয়ে তার মনে হাজার টা প্রশ্ন। কৌতুহলী মন নিয়ে তাকিয়ে আছে তরী। দিশা বলল,

” কিছু বলছো না যে তরী, আমাকে দেখে কি তুমি খুশি হওনি?”
তরী সব সময়ের জন্য শান্ত-শিষ্ট।খুব একটা হাসাহাসি, উত্তেজিত ভাব এসব কিছুই তার মাঝে নেই। যাকে এক কথায় বলে ইন্ট্রোভার্ট মেয়ে। দিশা’র কথায় স্বাভাবিক ভাবে বলল,
” অখুশি হইনি তবে অবাক হয়েছি। আসুন ভেতরে আসুন।”
জুবায়ের আহমেদ বলল, ” তরী দ্রুত ইলিশ মাছ ভাজি করো, আর মুরগী মাংস রান্না করো।দু’টোই দিশার পছন্দের খাবার।ভাত যেন নরম না হয়।দিশা ঝরঝরা ভাত ছাড়া পছন্দ করে না।”
বলেই জুবায়ের আহমেদ নিজের রুমে প্রবেশ করলেন। রুমে যেতে না যেতেই তরীর কানে ভেষে এল দিশার কন্ঠ,
” ছাড়ো আমায়,লজ্জা করছে।এখন না পরে।”

তরীর কান ঘৃণায় জ্ব’লে উঠল।রিরি করে উঠল তার শরীর। লজ্জা আর ঘৃণায় দ্রুত জায়গা পাল্টালো।
কিচেনে গিয়ে ভাত বসিয়ে দিয়ে, ইলিশ মাছ ভাজি করতে করতে ভাবছে, ‘ নতুন বউ-এর প্রতি কত কেয়ার আর যত্ন তার বাবার। অথচ তার এক বিন্দু পরিমাণ যত্ন তার প্রতি নেই।কোনদিন জিজ্ঞেস করেনি কি ভাল লাগে, কি খারাপ লাগে।মা মারা যাবার পর বিগত দু’বছর কেউ তরীর অসুস্থতা, পছন্দ -অপছন্দের খোজ, ভাল-মন্দ কিছুর খোঁজ নেয়নি। এই দুনিয়াতে এমন কেউ নেই যে তরীর একটু ভাল থাকার কথা জিজ্ঞেস করবে। হয়ত এমন কেউ আর তার জীবনে আসবে।রান্না শেষ হয়ে গেলে তরী জুবায়ের আহমেদ-কে ডেকে বলল,

” বাবা রান্না শেষ, ডায়নিং এ খাবার দিব?”
জুবায়ের আহমেদ তার বেডরুমের দরজা খুলে বললেন,
” খাবার রুমে দিয়ে যাও।”
তরী খাবার গুলো নিয়ে একে একে রুমে দিয়ে আসল।
জুবায়ের আহমেদ আবার দরজা লাগিয়ে দিলেন।সম্ভবত নতুন বউ-এর গালে তুলে খাইয়ে দিবে।খাবার দিয়ে আসার পাঁচ মিনিটের মাঝে জুবায়ের আহমেদ আবার তরীকে ডাকল।বেশ কঠিন গলায় ডাকল। তরী আবার জুবায়ের আহমেদের রুমে প্রবেশ করল।জুবায়ের আহমেদ এর রুমে যেতেই জুবায়ের আহমেদ তরীর গালে স-শব্দে একটা থা*প্প*র মেরে বলল,

“ইচ্ছা করে ভাত নরম করেছো তাইনা? সৎ- মা সহ্য করতে পারছো না। সে আসতে না আসতেই তার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করেছো।যদি দিশার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করো তোমাকে সাত দিনের মাঝে আমি বিয়ে দিয়ে দিব। কথাটা কান খুলে শুনে রেখো।দিশা ওর বাবার আদরের রাজকুমারি।এখানে যেন ওর কোনো কষ্ট না হয়।”
নিঃশব্দে তরীর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।সে তার বাবার দিকে তাকিয়ে ভাবছে,
‘প্রতিটা মেয়েই তার বাবার রাজকুমারী হয়, শুধু আমিই বাদে।’

কলেজ ক্যাম্পাসে পায়চারী করছে তন্ময়, মৃন্ময়, দ্বীপ আর ছোঁয়া। ওরা বুঝতে পারছে না গম্ভীর রোশান সিদ্দিকী সারাহ-কে কেন ডেকে নিয়ে গিয়েছে। ঘন্টাখানিক সময় তো অলরেডি অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে।ওদের মাথায় ঢুকছে না এই কাহিনীর আসল রহস্য। সারাহ’কে ফোন দিলেও আর ফোন তুলছে না। মৃন্ময় আর দ্বীপ চঞ্চল বেশী। ওরা দু’জনে এই এক ঘন্টায় এক হাজার টা কারণ খুজে বের করেছে। তন্ময় মেধাবী, বিচক্ষণ ছেলে। ওর টেনশন ফ্রী আছে। কারণ তন্ময় জানে একজন লেকচারার বড়জোর দু’টো জ্ঞান দিবে তার বেশী কিছুই বলবে না।
ছোঁয়া তন্ময়কে বলল,

” এই তুই এত চুপচাপ, শান্তশিষ্ট আছিস কীভাবে? দেখছিস আমরা সারাহ-র জন্য টেনশনে ম’রে যাচ্ছি।”
তন্ময় শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বলল, ” আমার জন্য তো টেনশনে ম’ র’ তে দেখলাম না কোনদিন তোকে। মাঝে মধ্য আমার জন্য ও তো একটু টেনশন করতে পারিস।”
ছোঁয়া দ্বীপের দিকে তাকিয়ে বলল, ” দেখ দ্বীপ আমার সাথে ফ্লার্ট করছে? কিছু বল।”
দ্বীপ তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ” পরীক্ষা শেষ হোক, শালার লুচ্চামি বের করব। এখন কিছুই বলতে পারছি না কারণ পরীক্ষায় দেখে দেখে লেখা লাগবে।”

মৃন্ময় বলল, ” শালা তুই তো আরো বড় ধান্দাবাজ, এইভাবেই বুঝি মেয়ে পটাস। তাইতো বলি, আমার তো চেহারা সুরত অতটাও খারাপ না। মামি, চাচী, খালা,ফুফু, বুন্ডি, আপুরা সব দ্বীপের জন্য পা- গ- ল কেন? ”
দ্বীপ বলল, ” চেয়ে দেখ, না-গি-নের মত ভয়ংকর রুপে এগিয়ে আসছে সারাহ। মনে হচ্ছে মানুষের মাঝে আজ ঝা- টা দিয়ে পে-টা-বে নিশ্চিত। ”
তন্ময় বলল, ” সারাহ-কে দেখেই মনে হচ্ছে প্রচন্ড রেগে আছে।”
ছোঁয়া বলল, ” সকালে এসেই বলল, আমাদের জাহান্নামে পাঠাবে।আমাদের জন্য ওর সর্বনাশ হয়েছে।কাহিনী টা কি?”

মৃন্ময় বলল, ” সারাহ যে রাগি আমাদের জন্য ওর কোনো ক্ষতি হলে,আজ সিওর ওর পায়ের জু-তা আমাদের গালে যাবে। ছোঁয়ার তো চিন্তা নেই, ছোঁয়ার গালের জু-তা-র বাড়ি তন্ময় গাল বাড়িয়ে নিয়ে নিবে।”
তন্ময় বলল, ” পিঞ্চ মারা বন্ধ কর, জীবনে তো কাউকে ভালবাসো নাই, বাসলে বুঝতে।”
এমন সময় সারাহ ওদের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। রাগে চোখ দু’টো ছুটে যাচ্ছে ওর। থর থর করে কাঁপছে সমস্ত শরীর।হাতে থাকা প্রশ্ন, ফাইল, কলম ওদের গায়ের উপর ছুঁড়ে মেরে বলল,
” তোদের মত কু* ত্তা মার্কা বন্ধু- বান্ধব কপালে জুটেছিলো বলেই আজ এত বড় সর্বনাশ হল আমার।”
মৃন্ময় সহজ-সরল মুখে সারাহ-র দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করল,

” কেন আপু? কি করেছি আমরা? কি অপরাধ আমাদের?”
সারাহ অগ্নি চোখে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“শোন রাগাবি না আমাকে, মানুষের মাঝে জু’ তা খুলে পে’ টা’ ব।”
দ্বীপ বলল, ” আপু আজ সকাল থেকে আপনাকে এত হট লাগছে কেন? এত হট কেন হয়ে আছেন? এইদিকে কলেজের চকলেট বয় হট লেকচারার ডেকে নিয়ে যাওয়াতে আরো হট লাগছে।কাহিনী কী?”
ছোঁয়া বলল, ” ওসব হট স্যার টার দেখে ওর কিছু যায় আসেনা, ওর জন্য আরিয়ান ভাই আছে।”
সারাহ দ্বীপের দিকে তাকিয়ে বলল, ” ওই স্যার কে গিয়ে বলে দিব কিন্তু এসব বলছিস।, আর মৃন্ময়ের বাচ্চা তোর জন্য আজ আমি ধরা খেয়েছি। তোকে বলেছিলাম আমি সর্দি ফেলতে যাব। সর্দি কি তোর গায়ে গিয়ে পড়ছিলো।”
মৃন্ময় দুষ্টুমি করে বলল, ” আমার না আরেক টু হলে আমাদের ড্যাশিং হিরো রোশান সিদ্দিকী’র গায়ে গিয়ে পড়ছিলো।”

দ্বীপ বলল, ” স্পেশাল কি এক্সাম নিল? কিস টিস দিছে নাকি।”
সারাহ রাগে গটমট হয়ে বলল, ” তওবা, অস্তাগফিরুল্লাহ। উনি স্যার, স্যার কীসের সমতুল্য জানিস না।”
মৃন্ময় বলল, ” আগের স্যার রা ছিল পিতার সমতুল্য, তার পরের স্যার রা এল কাকার সমতুল্য, আর এখনের স্যার তো সোজা ভাই এর সমতুল্য। তোরা অনায়সে বর এর নজরে দেখতে পারিস।কপাল খারাপ আমাদের। শালার ম্যাডাম গুলা সব বিবাহিত। কম বয়সী যে গুলা আছে তাও সিনিয়র।সিনিয়র হলেও সমস্যা নেই। কিন্তু মাইয়্যারা ভাই সেল্ফিস। ছেলেরা ইজিলি ছাত্রী বিয়ে করবে।কিন্তু এই মহিলা গুলা জীবনেও ছাত্র বিয়ে করবে না।তাই আমাদের ছেলেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ আমরা আর বিয়ে করব না।শোন, ছোঁয়া আর সারাহ সমস্ত মহিলাদের জানিয়ে দিস, তোদের জন্য একটা দুঃসংবাদ আমরা ছেলেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা আর বিয়ে করব না। ”

সারাহ রাগে রাগে বলল, “তাতে মেয়েদের পাকা ধানে মই গেল।’
ছোঁয়া বলল, “ছেলেরা চিতায় উঠেও মেয়ে মানুষের দিকে নজর দেয়। ওরা আবার বিয়ে না করে থাকবে।”
সারাহ বলল, “গে হলে যা হয় আরকি।”
তন্ময় বলল, ” চুপ সবাই। সারাহ সকাল থেকে রেগে আছে। ওকে আর ক্ষেপাস না।ঠান্ডা মাথায় শোন কি হয়েছে।” বলেই তন্ময় সারাহ’র হাত ধরে মাঠে বসাল।একে একে ওরা সবাই বসল।
তন্ময় বলল, ” কি হয়েছে সারাহ, আমাদের খুলে বল। তোকে রাগাতে সবার ভাল লাগে। কিন্তু তোর কোনো সমস্যা বিপদে আপদে আমরা জীবন দিয়ে হলেও তোর পাশে থাকব।”
মৃন্ময় বলল, “হ্যাঁ সত্যি করে বল, কি হয়েছে সারাহ। আমরা আছিতো তোর চিন্তা কীসের?”
দ্বীপ বলল, “কোনো সমস্যা হয়েছে তোর, ওই স্যার লাইব্রেরিতে নিয়ে কোনো অসভ্যতা করেছে।স্যার বলে মাফ করব না।একদম আলুভর্তা বানিয়ে দেব।”

ছোঁয়া বলল, “সেই ছেলে কি দেখতে এসেছিলো?”
সারাহ’র চোখে পানি এল। সারাহ’র পরিবার বাদে একমাত্র বিশ্বস্ত জায়গা ওর বন্ধুমহল। এই বন্ধুমহলের কাছেই একমাত্র রাগ,দুঃখ, সমস্ত আবেগ প্রকাশ করতে পারে।চোখের পানি ছেড়ে বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলল,
” তোরাই তো বলেছিলি, দেখতে আসলে কিচ্ছু হয়না। আজকাল যুগে কেউ পাত্রীর সাথে কথা না বলে বিয়ে করেনা। কই সেসব তো কিছুই হলনা। সে ছেলে বিয়ের আগে আমার সাথে এক মিনিট ও কথা বলেনি। ”
তন্ময়, ছোঁয়া, দ্বীপ, মৃন্ময় চারজনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। চারজন-ই চরম অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
” তার মানে কি? তোর বিয়ে হয়ে গিয়েছে।”

সারাহ’র কাঁন্নার মাত্রা বাড়ল।এইবার আরো আবেগপ্রবন হয়ে কাদতে কাদতে বলল,
” হ্যাঁ, গতরাতেই। ১৫ দিন পর আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে নিবে।”
ছোঁয়া কপালে হাত দিল।মৃন্ময়, দ্বীপ, তন্ময় হতবাক হল। সারাহ’কে কি বলবে বুঝতে পারছে না।দ্বীপ বলল,
” আরিয়ান ভাই জানে? আর তুই এভাবে বিয়েটা করলি কেন?”
” বিয়ে না করে উপায় ছিলনা। বাবা ম’রে যাবার হুমকি দি’চ্ছি’লো।”
মৃন্ময় বলল, ” আরিয়ান ভাই জানে? জানিয়েছিস কিছু? ”
” সব জানে, কিন্তু আমি তার থেকে কোনো রেসপন্স পাইনি।সব তো তোরা জানিস-ই খালু বাবাকে অপমান করেছে। এত সবের পরেও বাবার সু’ ই’ সাই’ ডের হুমকি রেখেও আরিয়ান ভাইকে মেসেজ দিয়েছিলাম যে, ‘ চলুন আমরা পালিয়ে যায়। পরিবার পরে মেনে নিবে।’

কিন্তু উনি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন ফ্যামিলির বাইরে গেলে দুই পরিবারের শ’ ত্রু’ তা কোনদিন কমবে না। আমি যেন বিয়েটা করে নিই।”
মৃন্ময় বলল, ” বাহ! মাদারবোর্ড। প্রেম করার জন্য সারাজীবন পিছ পিছ ঘুরলি আর এখন বিয়ের সময় পরিবারের কথা ভাবতে আইছে।প্রেম করার আগে ওর বাপ-মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করেছিলো।”
দ্বীপ বলল, ” তুই তাহলে ওই ছেলের জন্য কাদছিস কেন? তোর কি চোখের পানি এত সস্তা। এমন থার্ড ক্লাসের জন্য ফেলবি।তুই কেন ওই ছেলের সাথে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিতে গেলি। ও তোর পায়ে ধরে ঝুলবে। শোন,ছেলেদের ভালবাসায় ঘাটতি থাকলে এইভাবে অনায়াসে ছেড়ে দেয়। ওই ছেলে তোকে মন থেকে ভালবাসলে পরিবারের দোহায় দিতনা।নিজের মা-বাবাকে কনভেন্স করেই ছাড়ত।তোর বাবার পা ধরত প্রয়োজনে।তোকে পাওয়ার জন্য যু’ দ্ধ ঘোষণা করত।এর জন্য এক ফোঁটাও চোখে পানি ফেলিস না সারাহ। তুই এমনিই সুখি হবি দেখে নিস।”
” আরিয়ান ভাই এইভাবে আমার হাত ছেড়ে দিবে ভাবিনি।”
ছোঁয়া বলল, ” মানুষ যতটা বলে আসলে অতটা করেনা সারাহ।এইজন্য আমি কাউকে বিলিভ করিনা।” তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল।

তন্ময় বলল, ” পৃথিবীর সবাই এক নয় ছোঁয়া।”
তন্ময় সারাহ’র দিকে তাকিয়ে বলল, ” প্লিজ এভাবে কাদিস না সারাহ। তুই কাদলে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। ”
” আমার সাথে এমন কেন হল তন্ময়। কি অপরাধ ছিল আমার।কেন অচেনা অজানা একজন মানুষের সাথে বিয়ে হল আমার। কেন যাকে ভালবাসলাম তাকে পেলাম না।”
” চেনা মানুষ অচেনা হবে অচেনা মানুষ আপন হবে এটাই তো দুনিয়ায় নিয়ম।কখনো সাময়িক দুঃখ মানুষের চীরস্থায়ী সুখের কারণ হয় সারাহ। Allah has better plan. ”
ছোঁয়া বলল,

“এত কাদছিস কেন সারাহ। তুই একটা প্রতিবাদি মেয়ে। অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা। যে চিট করল তার জন্য কাদছিস।তোর সাথে কিন্তু এটা যাচ্ছেনা।একদম যাচ্ছেনা।”
“খারাপ লাগছে, কষ্ট হচ্ছে, ঘৃণা হচ্ছে। সব এক সাথে হচ্ছে আমার।আমি কি করব এখন ছোঁয়া।”
“আরিয়ানের কাছে যেতে চাস।”
“কখনো না।কষ্টে মরে যাবো তবুও বেঈমানের কাছে যাব না। তার চেয়ে বড় কথা যেভাবেই হোক বিয়েটা আমার হয়ে গিয়েছে। এই মুহুর্তে তাকে আমি মেনে নিতে পারছি না।কোনদিন পারব কীনা জানিনা। কিন্তু আরিয়ানের কাছেও যাবনা।”

মৃন্ময় বলল,
“কেন মেনে নিতে পারছিস না? দেখতে কেমন?”
সারাহ’র চোখের সামনে ভেষে উঠল রোশানের শ্যামসুন্দর চেহারা।পুরু ভ্রু জোড়া।গোল গোল চোখ দুটো।সারাহ রোশানের চেহারা কল্পনা করে উত্তর দিল,
“সুদর্শন।”
ছোঁয়া বলল,
“আরিয়ানের মত?”
“তার চেয়েও বেশী সুদর্শন। অত ফর্সা নয় তবে ফর্সার চেয়েও অধিক সুন্দর সে। যাকে এক বাক্য উপমা দেওয়া যায় শ্যামসুন্দর পুরুষ।”
দ্বীপ বলল,
“বয়স কেমন?”
“ত্রিশ এর বেশী হবেনা।”
মৃন্ময় বলল,
“হাইট?”
৫ ফুট ৮- ১০ হবে।
তন্ময় বলল,
“শিক্ষাগত যোগ্যতা? ”

“ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে বি.বি.এ এমবিএ শেষ করেছে।”
মৃন্ময় বলল,
“পেশা।”
“চাকরি করে ভাল কোনো চাকরি।”
ছোঁয়া বলল,
“কেয়ারিং আছে?রোমান্টিক আছে।”
“আছে তবে রোমান্টিক নয়। আমার মত এত কথা বলেনা।তন্ময়ের মত কথা কম বলে।অনেক কিছু মিল আছে তন্ময়ের সাথে।তন্ময় ফর্সা সে ফর্সা নয়।”
সারাহ’র মন ভাল করতেই ওর বন্ধুমহল এসব করছে।সারাহ যেন সহজেই ওর স্বামীকে মেনে নিতে পারে।অতীত ভুলতে পারে।সে চেষ্টাই করছে সকলে মিলে।
মৃন্ময় বলল,
“আরে ভাই সেতো বলিউডের নায়ক।এমন ছেলে কপালে জুটেছে তাও তুই ওই সাদা বান্দরের জন্য কাদছিস। ”
ছোঁয়া বলল,

“ভাই আমি শুনেই ফিদা।এমন নয়ক ছিল তোর কপালে।”
তন্ময় বলল,
“আমাদের রোশান স্যারের সাথে ৯০% মিল কিন্তু।প্রফেশন ছাড়া সব মিল।”
সারাহ’ বুক ধুক করে উঠল।এইজন্য তন্ময় এত মেধাবি।কীভাবে যেন সব বুঝে যায়।সারাহ মুখ মলিন করে বলল,
“আমি মেনে নিতে পারছি না।কিছুতেই না।”
তন্ময় বলল,
“কেন?”
“আমার একটু সময় লাগত তন্ময়। হুট করে একজনের থেকে প্রতারিত হয়ে অন্য কাউকে এক্সেপ্ট করতে পারবি তোরা কেউ।”
“এটা অবশ্য ঠিক।কেউ কারো পরিস্থিতি বুঝেনা।তবে দেখিস খুব দ্রুত ওই সাদা বান্দর কে ভুলে যাবি।
জীবনে বেটার কিছু পেতে খারাপ সব অটোমেটিক ডিলিট হয়ে যাবে।আমার মন বলছে তোর জীবনে উত্তম কেউ এসছে।”

ছোঁয়া বলল,
” তোর বর যদি কেয়ারিং হয়। তুই এমনিই আরিয়ানকে ভুলে যাবি।”
এমন সময় মৃন্ময়ের ফোন বেজে উঠল।মৃন্ময়ের বোন পিহু ফোন দিয়েছে।মৃন্ময় ফোনে কথা বলে ফোন কাটল।
দ্বীপ বলল,
“কে ফোন দিয়েছে?”
“কি আর বলব ভাই।আজ কাল কাকু আর দাদুরা জিতে যাচ্ছে।আমাদের কপালে বউ নেই।”
“কেন?”
“বাসায় নাকি নতুন ভাড়াটিয়া এসছে। তার বয়স ৫০ এর বেশী। সে নাকি এক কচি মেয়ে বিয়ে করে এনেছে।তার বাসর সাজাতে যেতে বলছে।চিন্তা করা যায়।তাও আবার লাভ ম্যারেজ।”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৩

দ্বীপ বলল, “তোর বাসায় তাহলে যেতে হবে একদিন।শিখে আসব কাকা কীভাবে পটালো মেয়ে।”
বাড়ি যাওয়ার সময় হল। সবাই সারাহ কে বোঝাল আবার ও।যাওয়ার সময় ছোঁয়া বলল,
“সারাহ একদম আরিয়ানের নাম ভুলে যা। জন্ম মৃত্যু বিয়ে কিন্তু আল্লাহর হাত। দেখবি তুই সুখি হবি।এই মানুষ কে তুই ভালবাসবি।অতীত একদম ভুলে যা।”
সারাহ কোনো উত্তর দিলনা।শুধু একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল।

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪ (২)