একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪১
Mousumi Akter
কেটে গিয়েছে পনেরো দিন। ঘটে গিয়েছে কতশত ঘটনা। হাজারো মন খারাপের গল্প জমে গিয়েছে। হাজারো বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় ছটফট করছে প্রেমিক হৃদয়কুল। কেউ বা প্রিয়জনকে নিজের করে পেয়ে এক সমুদ্রসমান প্রেমের জোয়ারে ভাষছে।
রোশান স্যার এম. এম. কলেজের পাশেই একটা তিনতলাবিশিষ্ট বাসা ভাড়া নিয়েছেন। বাসার দো’তলায় পূর্ব পাশের ফ্ল্যাটটা উনি নিয়েছেন। আর পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাটে অন্য একটা ফ্যামিলি নিয়েছে। রোশান-সারাহ গতকালই বাসায় এসে উঠেছে। বাড়িতে পারিবারিক অশান্তি আর ঝামেলার জন্য সারাহ ‘কে একটা সুস্থ জীবন উপহার দিতেই রোশান স্যারের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত। দু’দিন ধরে বাসার জিনিসপত্র গোছগাছ করে আজ একটু ফ্রেশ হয়েছে দু’জন। এখনো পর্যন্ত পাশের ভাড়াটিয়ার সাথে দেখা সাক্ষাত হয়নি তাদের। সারাহ ছটফটে মানুষ। একা থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। মনে মনে প্রার্থনা করছে তার পাশের ফ্ল্যাটে যেন আন্টি টাইপ কেউ না থেকে তার বয়সীই কোনো মেয়ে থাকে। তাহলে একটু আড্ডা দেওয়া যাবে৷ না ‘হলে এভাবে একা একা থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়৷ সারাহ সেই দুপুর থেকে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে।ও ফ্ল্যাটে কি জীবিত মানুষ কেউ থাকে। কখনোই বের হয়না। বের হোক বা না হোক, আমিই রাতে যাবো। গিয়ে নিজে নিজে পরিচিত হয়ে নিবো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তখন বিকাল পাঁচটা বাজে। রোশান স্যার বাজার করার জন্য ফ্ল্যাট থেকে বের হয়েছে আর তখনই পাশের ভাড়াটিয়ার সাথে দেখা৷ ৫০-৬০ হবে বয়স লোকটার। বিশাল বড় একটা ভুড়ি। পাঞ্জাবি পরেছে বুকের থেকে ভুড়ি বেশী বড় দেখা যাচ্ছে। রোশান স্যার কখনোই কাউকে নিয়ে বাজে মন্তব্য বা বাজে নজর দেননা। তবে সারাহ! সে কি বসে থাকার পাত্রী। এসব দেখলে সে হাসবে না তাই কখনো হয়! সারাহ রোশানকে বিদায় দেওয়ার সময় লোকটার দিকে তাকিয়েই ফিক করে হেসে দেয়। সারাহ’র এই হাসির কারণ বুঝতে রোশানের বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি৷ সে সারাহ’কে চোখ রাঙিয়ে চুপ করতে বলল। সারাহ’কি চুপ করার মেয়ে। এমনিতেই সারাক্ষণ তার হাসি পায়। আর এমন সিরিয়াস মুহুর্তে তার আরোও বেশী হাসি পায়। এইযে রোশান সিদ্দিকী চোখ পাকালো আর এখন হাসতে হাসতে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। চোখ না পাকিয়ে থামতে বললে হয়তো থামতে পারত। কিন্তু যেহেতু চোখ পাকিয়েছে ব্যাপারটা সিরিয়াস। আর সিরিয়াস বলেই অস্বাভাবিক হাসি পাচ্ছে তার। হাসতে হাসতে ম’রে যাবে এখনি। লোকটা রোশানের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন,
” আপনারা নতুন এসছেন?”
রোশান স্যার অমায়িক হাসি দিয়ে বলল,
” জি।”
লোকটা নিজ থেকেই বললেন,
” আমরাও নতুন এসছি। ”
” কবে এসছেন?”
” এইতো ৫ দিন হবে৷ মাঝে দশদিন অন্য এক জায়গা ছিলাম।”
রোশান কিছুটা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
” পাঁচদিন, দশদিন এভাবে কেন?”
লোকটা বললেন,
“চলুন বাইরে যেতে যেতে বলি। ”
রোশান সম্মতি জানাল। এবং শান্ত কণ্ঠে সারাহ’কে বলল,
” দরজা লাগিয়ে দাও।”
সারাহ দরজা লাগাতে লাগাতে উঁকি মেরে বলল,
” আমার জন্য যেন একটা জারবেরা ফুল আনতে ভুলবেন না যেন। ”
রোশান চোখের ইশারায় বুঝালো,
” ঠিক আছে।”
সারাহ দরজা লাগিয়ে দিয়ে আবারও হাসতে শুরু করল। রোশান আর ভুড়িওয়ালা লোকটা নিচে নামল। নিচে নেমে একটা চায়ের দোকানে বসল। রোশান বুঝল লোকটা অশান্তিতে আছে। নিজ থেকেই কিছু শেয়ার করতে চাইছে। রোশান লোকটাকে বলার সুযোগ দিয়ে বলল,
” আচ্ছা কিছু বলতে চাইছিলেন মেবি।”
লোকটা একটা দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
” আমার মেয়েটাকে নিয়ে বড় বিপদে আছি। একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিতে পারলেই বাঁচি।”
রোশান কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কেন?”
” ও অল্প বয়সে একটা রিলেশন এ জড়িয়েছে। ছেলেটার চরিত্র ভাল নয়। মেয়েটাকে ভুল ভাল যা বুঝিয়েছে তাই বুঝে বসে আছে। বাবা হিসাবে তো আমি জেনে বুঝে এমন ছেলের হাতে মেয়ে বিয়ে দিতে পারিনা৷ ছেলেটা ভাদাইমা। লেখাপড়া ও করেনা। বিড়ি সিগারেট খেয়ে বেড়ায়। তাই একটা পাত্র খুঁজছি।”
রোশান সিদ্দিকী চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। গভীর ভাবে কিছু ভেবে লোকটাকে স্বন্তনা দিয়ে বলল,
” বিয়েই কিন্তু সমাধান নয়। এতে আরো ওর লাইফটা নষ্ট হতে পারে। প্রতিটা মেয়েই একটা বয়সে এমন ভুল করে থাকে। তবে এ সময় ওদের হাত ছেড়ে দেওয়া যাবেনা। তাহলে পৃথিবীতে নরকময় একটা জীবনে তলিয়ে যাবে ওরা। যেখান থেকে আর বেরোতে পারবে না। সে সময় নিজের ভুলের জন্য আফসোস করবে৷ এখন ওদের বুঝাতে হবে। মেয়েকে ভালবেসে, মাথায় হাত রেখে বুঝান।ভালবেসে বুঝালে অবশ্যই বুঝবে। মা-বাবাকে বন্ধুর মত হতে হবে। আপনি বন্ধুর মত ওকে বুঝান। অবশ্যই বুঝবে। তাছাড়া আগে পড়াশুনা নিয়ে বুঝাতে হবে। ওর এখন পড়াশুনার বয়স। প্রেম ভালবাসা বিয়ে এসব নিয়ে ভাবলে হবেনা। ওর ব্রেইনে একটা সুন্দর ক্যারিয়ারের চিন্তা ঢুকাতে হবে। ”
লোকটা বললেন,
” বুঝিয়েছি অনেক। কিন্তু কাজ হয়না। আমি বাধ্য হয়ে বাসা চেঞ্জ করে বেড়াচ্ছি। ছেলেটা এমন ভাবে বস করেছে, সে আমার কাছেই থাকতে চাইছে না। সুযোগ পেলেই ওই ছেলের কাছে চলে যাবে৷ অমন ছেলের কাছে চলে যাওয়ার থেকে একটা পাত্র দেখে বিয়ে দেওয়ায় উত্তম। আসলে আমার তেমন আপণ কেউ নেই। যদি আপনার আপন কেউ থাকে, চেনাজানা কোনো পাত্র থাকে প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন।”
রোশান চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
“আপনি চাইলে ওকে আমার স্ত্রীর কাছে পাঠাতে পারেন৷ ও খুব ভাল বোঝাতে পারে। অল্প সময়ে বন্ধুত্ব করতে পারে মানুষের সাথে৷ ও ঠিক বুঝিয়ে ফেলবে। আপনার মেয়েকে একদম চেঞ্জ করে দিবে৷ আপনি একটু শান্ত হন।”
লোকটা আবার ও হা হুতোস করর বলল,
“ও কারো সাথে কথা বলতে চায়না। কারো কথা শোনা তো দূর।”
” আমরা একবার চেষ্টা করে দেখব, না’হলে পাত্র দেখব।”
লোকটা নিশ্চিন্ত হল।
সন্ধ্যা সাতটা বাজে। সারাহ সোফায় বসে হিন্দি গান দেখছে। পাশাপাশি ছোঁয়ার নাম্বারে ট্রাই করেই যাচ্ছে৷ সেদিন তন্ময়ের সাথে কথা বলে যাওয়ার পরে আজ বিষটা দিন ছোঁয়ার নাম্বার অফ। যশোরের বাসায় তালা ঝুলছে৷ কোথায় হারিয়ে গেল ছোঁয়া। তবে জানা গিয়েছে যে ঢাকায় ওদের যে বাড়ি আছে সেখানেই গিয়েছে। সারাহ’র মনয়া ভীষণ খারাপ। ওর কোনো বন্ধুই আজ ভাল নেই৷ শুধু ও একাই ভাল আছে। এমন ভাল থাকা সে চায়নি। সে চেয়েছিলো বন্ধুদের নিয়ে একসাথে ভাল থাকার কথা। কোথায় হারিয়ে গেল তরী, কোথায় আজ ছোঁয়া। তন্ময় আজ আধাপা-গ-ল হয়েছে। সেদিন মৃন্ময়কে টাকা পয়সা দিয়ে ওর বাবা থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। সেই মুহুর্ত থেকে শহরের অলিগলি কোথাও বাদ রাখেনি তরীকে খুঁজতে। তাছাড়া মৃন্ময় এমন একটা আধাপা-গ-ল ছেলে।যার ভালবাসার ব্যাপারে লজ্জাশরম কিছুই নেই। সে কয়েকদিন মাইকিং করিয়েছে। শহরের অলিগলিতে মাইকিং করিয়েছে তরীকে নিয়ে৷ কত লোকজন যে হাসাহাসি করেছে তার হিসাব নেই।
এমন সময় কলিং বেল এর শব্দ হয়। সারাহ রিমোট রেখে দরজার কাছে যায়। দরজা না খুলেই জিজ্ঞেস করে,
” কে আপনি?”
দরজার ওপাস থেকে উত্তর আসে,
” এম এম কলেজের একাউন্টিং এ লেকচারার। ভেতরে আসতে পারি ম্যাম।”
সাথে সাথে সারাহ দরজা খুলল মুখে হাসি নিয়ে৷ দরজা খুলতেই দেখল,
একটা জারবেরা ফুলহাতে দাঁড়িয়ে আছে তার শ্যামসুন্দর পুরুষ। সারাহ মনে মনে ভাবছে এখনি রোশান স্যার তাকে কোনো রোমান্টিক কবিতা শুনিয়ে, কপালে চুমু খেয়ে, তাকে পাজা কোলে তুলে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে দুই ঠোঁটের মাঝে জারবেরা রেখে বলবে নাও। মনে মনে অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু কল্পনা করে ভেতরে ভেতরে লজ্জা পাচ্ছে সারাহ। লজ্জায় ঠোঁটজোড়া কাঁপছে। সারাহ তার ধ্যানে আছে। অথচ রোশান স্যার তার সব কল্পনায়, সব চিন্তায় পানি ঢেলে দিয়ে কোনো কথাবার্তা না বলে ফুল হাতে নিয়ে হড়হড় করে সোফায় গিয়ে বসল। সামনে রাখা সেন্টার টেবিলের ওপর ফুলটা রেখে সারাহ’কে বলল,
” এক গ্লাস পানি হবে?”
রাগে সারাহ’র সমস্ত শরীর জ্বলে পু’ড়ে যাচ্ছে। ফুলটা তাকে না দিয়ে ধপ্পাস করে গিয়ে সোফায় বসে পড়ার কি দরকার। একটা মানুষ এত আনরোমান্টিক কীভাবে হয়। সারাদিন যে উনার ইনবক্সে দুনিয়ার রোমান্টিক সেন্ড করে ওগুলা কি উনি দেখেন না? দেখেও কি কিছু শেখেন না৷ কি অদ্ভুত মানুষ। এই বুইড়া মন মানসিকতার মানুষের সাথে ঘর সাংসার তার জীবনেও হবেনা। মুহুর্তের মাঝে সারাহ’র মুড অফ হয়ে গেলো। ভেতরে ভেতরে থমথম করছে রাগে। এক গ্লাস পানি ঢেলে এনে সেন্টার টেবিলের ওপর ধপাস করে রাখল। পানি রাখার স্টাইল দেখে রোশানের সন্দেহ হল। সে চোখ উলটে সারাহ’র দিকে তাকালো। চোখ-মুখ যে থমথম করছে রাগে সেটা বুঝাই যাচ্ছে। রোশান কোনো প্রশ্ন না করে পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো। সারাহ’র মুডের এ অবস্থা কেন ইচ্ছা করে জিজ্ঞেস করছেনা। ভাবসাব বোঝার চেষ্টা করছে অভিজ্ঞতার সাথে। রোশান পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে সারাহ’র দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
” এটা তুলে রাখো।”
সারাহ থমথম মুখে জবাব দিলো,
” আপনার মানিব্যাগ আমি রেখে কি করব। আপনার টা আপনিই রাখুন না।”
রোশান মানিব্যাগটা সারাহ’র দিকে এগিয়ে রেখেই পরবর্তী উত্তর দিলো,
” ঘরের বউ হল লক্ষী। বাসায় ফিরে বউ এর কাছে মানিব্যাগ দিবো, আবার অফিস যাওয়ার সময় তার থেকে চেয়ে নিবো। ব্যাপারটা সুন্দর না!”
সারাহ মুখ বাঁকিয়ে বলল,
” আপনার এসব মূল্যবান সম্পত্তি আমাকে দিবেন কেন? কবে হারিয়ে যাবে তার ঠিক নেই। ”
রোশান উঠে দাঁড়ালো। সারাহ’র হাতের মধ্যো মানিব্যাগ গুজে দিয়ে বলল,
” একটা মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তার জীবন, তার মন। সেটাইতো তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। নিজের জীবনের চেয়েও কি মূল্যবান জিনিস আর কিছু আছে মিসেস সিদ্দিকী? ”
সারাহ ফোঁস করে উঠে বলল,
” আপনার অমূল্য সম্পদ রাখুন আপনার কাছে। আপনার একটা আনরোমান্টিক বুইড়া লোকের সাথে আমি বলেই সংসার করছি। সারাদিন কোরিয়ান ড্রামার রোমান্টিক সিনগুলা আপনার ইনবক্সে পাঠায় ওগুলা কি দেখেন না। এইযে একটা জারবেরা ফুল এনেছেন, এনে সেন্টার টেবিলে ফেলে রেখেছেন অযত্নে। কেন ওটা আমার চুলে গুজে দিয়ে, একটা চুমু দিয়ে আই লাভ ইউ বললে কি অসুবিধা হত।”
রোশান ভ্রু কুঁচকে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে আছে। সারাহ নিঃশ্বাস ছাড়ছেনা। এক নাগাড়ে রাগান্বিত ভাবে কথা বলেই যাচ্ছে। রোশান আকস্মিকভাবে উঠে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়েই সারাহ’র চুলের খোপায় জারবেরা ফুলটা গুজে দিলো। সারাহ কেবল ই বলতে যাবে যে, এখন দিতে হবেনা। তখনই রোশান সারাহ’র মুখ বন্ধ করে দিতে জোরপূর্বক সারাহ’র ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিত করল। এভাবে পুরা পাঁচ মিনিট কেটে যাওয়ার পর সারাহ ধাক্কা মেরে রোশানকে সরিয়ে দিয়ে বলল,
” উফফ বাবাগো! আরেকটু হলে দম বেরিয়ে যেত আমার।”
রোশান গম্ভীর চোখে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে বলল,
” আর আনরোমান্টিক বলবে?”
সারাহ মাথার ফুলটা খুলে রোশানের দিকে ছুঁড়ে মেরে বলল,
” অসভ্য, জঘন্য ধরণের পুরুষ মানুষ যাকে বলে। সমস্যা আছে আপনার ভেতর, চারিত্রিক সমস্যা। ”
রোশান শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল,
” বুঝলাম না মিসেস সিদ্দিকী। আমি ভদ্র থাকলে বলেন, আমার ভেতর সমস্যা আছে, আবার একটু রোমান্সে মনযোগী হলেও বলেন সমস্যা আছে। তাহলে আমি কি করলে আপনি খুশী হবেন। ”
” ওয়াক থু, ওইরকম বিশ্রীভাবে কেউ চুমু দেয়। মনে হল হাঁসে শামুক খাচ্ছে। ”
রোশান মৃদু হেসে বলল,
” সি ইউ মিডনাইট।” বলেই ওয়াশরুমে প্রবেশ করল।
” আজ একটা রাতকানার সাথে বিয়ে হলেও ভাল হত। কথায় কথায় বলতে পারত না, সি ইউ মিডনাইট।”
কিছুক্ষণের মাঝেই সারাহ’র ফোনে ফোন আসে। সারাহ ফোন রিসিভ করতেই বলে,
” ম্যাম আপনার একটি পার্সেল আছে। প্লিজ নিভে আসুন। আমি আপনার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।”
সারাহ ভীষণ অবাক হল এইবার। সে জানে যে তাকে বরাবর গিফট দেয় এবার ও সেই গিফট দিয়েছে। কিন্তু এতদিনের গিফট গুলা স্বাভাবিক ছিলো। এবার কীভাবে দিলো। লোকেশন তো জানার কথা নয়। জাস্ট দু’দিন এখানে আসা হয়েছে। এই ঠিকানা কেউ জানেনা। সারাহ’র কৌতুহল এবার দ্বিগুন বেড়ে গেল। সে অতি আগ্রহী হয়ে নিচে নামল। ছিপছিপে গড়নের একটা লম্বা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সারাহ নিজের পরিচয় দিতেই ছেলেটি একটা জারবেরা ফুলের ডালা সারাহ’র হাতে তুলে দিলো। সারাহ রিকুয়েষ্ট করে বলল,
” প্লিজ বলবেন ভাইয়া এটা কে পাঠিয়েছে?”
ছেলেটা জানাল,
” কেউ একজন গদখালী গিয়ে স্পেশাল অর্ডার দিয়ে এসছিলেন একটু আগে। সেটাই দিতে এসছি। ”
সারাহ’র মনে বারবার কেন যেন রোশান স্যারের নামটাই ভেষে উঠছে। কোথায় যেন রোশান স্যারের সংযোগ আছে।আজই তো সারাহ রোশান স্যার কে জারবেরা ফুলের কথা বলছিলো আর আজই ফুল এলো। ফুলের ডালায় রাখা একটা চিরকুট। সারাহ নিচে দাঁড়িয়েই চিরকুটটা খুলল। চিরকুটে লেখা রয়েছে,
” জানো আজ গদখালী গিয়েছিলাম শুধু তোমার জন্য। শুধুমাত্র তাজা তাজা জারবেরা আনতে। তোমার জারবেরা পছন্দ, আমি কি যেমন তেমন নিস্তেজ ফুল আনতে পারি? জারবেরা আনতে গিয়ে ভীষণ অবাক হলাম জানো! এত এত হাজার হাজার ফুলের মাঝে তোমার চেয়ে সুন্দর ফুল দেখলাম না। তাই তোমার চেয়ে অসুন্দর জারবেরা কেই নিয়ে এলাম তোমার জন্য। আর শোনো, কানে কানে বলতে চাই, ‘ ভালবাসি তোমায়।”
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪০
এত সুন্দর চিরকুটের মালিক কে? উনি? সত্যিই এটা উনি ননতো। এতগুলা দিন কি উনিই লুকোচুরি খেলছিলেন?উনি হলে সারা শহর জুড়ে নেচে বেড়াব আমি, গেয়ে বেড়াব আমি। সবাইকে জানিয়ে দিবো আমি পা-গ-ল উনার জন্য।
সারাহ নিচ থেকে উপরে তাকাল। ফোন হাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে, রোশান স্যার, যেন শ্যামবরণ একজন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন।