একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৯

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৯
Mousumi Akter

সারাহ’র হাত ভর্তি মেরুন রঙের স্টোন বসানো ভারী ধরণের গর্জিয়াস চুড়ি। আজ সে মেরুণ রঙের জরজেট শাড়ি পরেছিলো। শাড়ির সাথে ম্যাচিং করা চুড়ি, ম্যাচিং কানের দুল, ম্যাচিং লিপিস্টিক, ম্যাচিং নেইলপালিস। ছোট্ট ভ্যানিটি ব্যাগ টাও মেরুন রঙের। বাদামি রঙের সিল্কি চুল গুলো ছেড়ে রাখা। পাঁচ ফিট পাঁচ হাইটের বেশ লম্বা চিকনা মেয়েটা শাড়ির সাথে ম্যাচিং হাই হিল পরে লম্বায় প্রায় বরের সমান সমান হয়ে গিয়েছে৷ পাঁচ ফিট নয় হাইটের রোশান সিদ্দিকী’র কান সমান হয়ে গিয়েছে। আজ সারাদিন এত ঝামেলার মাঝেও যে কতবার মুগ্ধ চোখে রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র দিকে তাকিয়েছে তার হিসাব নেই৷ মানুষ সিনেমার নায়িকাদের দেখে মুগ্ধ হয়।

মাঝে মাঝে রোশান সিদ্দিকী ভাবে অত দামি মেকাপ অত দামি ক্যামেরায় নায়িকাদের যতটুকু সুন্দর লাগে তা সারাহ’র সৌন্দর্য্যর কাছে কিছুই না। সৃষ্টিকর্তার এক নিঁখুত সৃষ্টি সারাহ। রোশান সিদ্দিকী প্রায় প্রায় বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে থাকে তার অপূর্ব সুন্দর বউ এর দিকে। গোধুলি লগ্নে পপশ্চিমাকাশের কমলা রঙের আলোয় সারাহ’কে যেন ভুবন ভোলানো এক সুন্দরী রমনি দেখাচ্ছে। সারাহ দু’হাত নাড়াচ্ছে আর কিছু একটা বলছে। গাল ভর্তি যেন বড় কিছু অর্জনের জন্য প্রাপ্তির হাসি। সে প্রচুর হাসছে। রোশান সিদ্দিকী এর হাতে আইসক্রিম। সে সারাহ’কে আইসক্রিম খাইয়ে দিচ্ছে আর অপূর্ব চোখে সারাহ’কে দেখছে। সে প্রায় প্রায় সারাহ’কে এভাবে দেখে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সারাহ আইসক্রিম খাচ্ছে আর কি যেন ননস্টপ বলে যাচ্ছে। একবিন্দু পরিমাণ থামছে না। সারাহ সেন একজন বক্তা আর রোশান স্যার একজন মনযোগী শ্রতা। এমন সময় রোশান সিদ্দিকী আচমকা সারাহ’র হাতটা আলতো পরশে চেপে ধরল। সারাহ’র হাতটা ধরার সাথেই শরীরে বিদ্যুৎ তরঙ্গের ন্যায় ঝংকার মেরে উঠল। সে যতবার ই সারাহ!কে স্পর্শ করে ততবার ই এমন হয়। কখনো কারণ বুঝতে পারেনা। সারাহ তখন ও মৃন্ময় আর তরীকে নিয়ে কথা বলেই যাচ্ছে। কথা বলতে বলতে সারাহ’র নজর হঠাৎ ছাদে গেল। ছাদে তাকাতেই দেখল দিশা তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সারাহ’র মুখটা মুহুর্তের মাঝে বন্ধ হয়ে গেল। সে রাগান্বিত চোখে রোশান স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ও আপনার দিকে তাকালো কেন?”
রোশান স্যার বেশ অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,

” হু?”
সারাহ সাথে সাথে দু’হাত কোমরে বেঁধে বলল,
” আপনি আগে বলুন কেন তাকালো?”
রোশান স্যার রাগান্বিত বউ এর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমার দিকে কে তাকালো আমি তো খেয়াল করিনি, আমি তো তোমার দিকে তাকিয়ে আছি।”
” তাহলে ও কেন ছাদ থেকে আপনার দিকে তাকালো?”.
রোশান স্যার ছাদের দিকে তাকাতে যেতেই সারাহ রোশান স্যারের চোখের ওপর হাত রেখে বলল,
” না, না, না, আপনার তাকাতে হবেনা। আমি ছাদে যাচ্ছি আজ দিশার একদিন কি আমার একদিন।” বলেই সারাহ পায়ের হাই হিল খুলে ফেলে শাড়ির কুঁচি ধরে দ্রুত পায়ে গেটের ভেতর প্রবেশ করেই সিঁড়ি বেয়ে ছাদের দিকে রওনা হল। রোশান সিদ্দিকী বুঝল আজ এ শহরে যু’দ্ধ হবে। ভয়াবহ যু’ দ্ধ। মান ইজ্জত কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। সে সারাহ’র হিলটা হাতে তুলে দ্রুত পায়ে সিঁড়িতে উঠল। সারাহ কেবল দো’তলা অব্ধি গিয়েছে। তখন ই রোশান সিদ্দিকী সারাহ’কে তাদের দরজার সাথে চেপে ধরে বলল,

” কোথায় যাচ্ছেন ম্যাডাম? ”
সারাহ রাগান্বিত চোখে রোশান সিদ্দিকী’র দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমাকে এভাবে আটকালেন কেন? আশ্চর্য! ছাড়ুন। আমি ছাদে যাবো। দিশার চুল আমি আস্ত রাখব না। ওর জন্য আমার বন্ধু মৃন্ময় অনেক কষ্ট পেয়েছে। কথা দিয়েছিলাম যেদিন ওই দিশাকে পাবো সেদিন ওর সব চুল আমি ছি’ ড়ে ফেলব। আমার বন্ধুকে দেওয়া কথা আমি রাখব ই। আর এখন আপনার দিকে নজর দিচ্ছে। কি সাহস ওর। কত সাহস ওই মহিলার।”
সারাহ’কে দরজায় চেপে রেখে রোশান সিদ্দিকী’র ঘরের তালা খোলা শেষ করল। দরজার সিঁটকিনি খুলেই সারাহ’কে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করেই ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলো। সারাহ বিরক্ত মুখে রোশানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” কি আশ্চর্য আমাকে কোলে নিয়েছেন কেন এখন? আমার প্রচুর ঝ’গ’ড়া’র মুড এখন। দিশাকে কি কি বলব সব ঠোঁটের আগায় চলে এসছে। পরে ভুলে যাবো সব। সব গুলা পয়েন্ট এখন মুখস্থ আমার।।শিঘ্রি ছাড়ুন আমাকে। প্রচন্ড রাগ থাকতে থাকতে দিশার ব্যবস্থা করতে হবে।”
রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র গালে নাক ঘষে বলল,
” কিন্তু ম্যাডাম আমার প্রচুর রোমান্সের মুড এখন। তোমাকে কি কি রোমান্টিক কথা বলব সব ঠোঁটের আগায় চলে আসছে। পরে ভুলে যাবো সব। সব গুলো পয়েন্ট মুখস্থ এখন আমার। শিঘ্রি রোমান্স করতে হবে। রোমান্স এর মুড থাকতে থাকতে রোমান্স করতে হবে।”
” আপনি এখন মশকরা করছেন আমার সাথে।”

সারাহ’র কথা শেষ হতে না হতে রোশান সিদ্দিকী সারাহ’কে কোলে তুলে সোজা বেডরুমে নিয়ে গেল। বেডরুমের ও দরজা লাগিয়ে দিলো। সারাহ কে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে নিজেও সারাহ’র ওপর ভর দিয়ে ঝুঁকে সুয়ে পড়ল। সারাহ রোশান সিদ্দিকী’র ভাব সাব কিছুই বুঝতে পারছেনা। রোশান সিদ্দিকী’র নাক তার নাকের সাথে মিশে আছে। উষ্ণ নিঃশ্বাস উপচে পড়ছে সারাহব্র মুখে। সারাহ অটোমেটিক দূর্বল হয়ে পড়ল। অদ্ভুত না ব্যাপার টা! রোশান সিদ্দিকী তাকে একটা চুমু অবধি দেয়নি। তাহলে এমন অদ্ভুত ফিলিংস কেন হচ্ছে? সারাহ রোশান সিদ্দিকী’র বুকে ধাক্কা মে’রে বলল,
” উঠুন। আমি ছাদে যাবো।”

রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র দুই হাতের আঙুলের ভাজে আঙুল রেখে বিছানার সাথে চেপে ধরে সারাহ’র গলায় ঠোঁট ডুবিয়ে রাখল অপেক্ষণ। সারাহ’র পা দু’টো বিছানায় ছটফট করছে। তাতে সারাহ’র পায়েলের রিনিঝিনি শব্দ হচ্ছে। মিনিট তিনেক পরে রোশান সিদ্দিকী ঠোঁট তুলল।।সারাহ’র ফর্সা গলায় র’ক্ত জমে গেছে। রোশান সিদ্দিকী চিত্র শিল্পীর ন্যায় গলায় তার ঠোঁটের চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। নেশাক্ত রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র কানে ঠোঁট মিশিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
” তোমার নূপুরের শব্দ আমাকে আরো নেশাক্ত করে তোলে।” বলেই সারাহ’র ঘাড়ে আবার ঠোঁট ডুবালো। শিহরনে সারাহ’র শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। শরীর সমস্ত পশম দাঁড়িয়ে গেল। সে রোশান সিদ্দিকী’কে নিজের সবটুকু বল প্রয়োগ করে জড়িয়ে ধরল। চারদিক থেকে অদ্ভুত এক সুগন্ধি ভেসে আসছে। কোথায় যেন অতিথি পাখি স্বর তুলে গান গাইছে। মাতাল করে তুলছে দুজনের দেহ। যা কেউ শুনতে পাচ্ছেনা। একে একে খুলে গেল রোশান সিদ্দিকী ‘র শার্টের সমস্ত বোতাম। শার্ট পড়ল বিছানার এক কোনায়। সারাহ’র শাড়ি পড়ে রইলো ফ্লোরে। দু’জনে ডুবে গেল গভীর প্রেমের মহাসমুদ্রে। যে প্রেম সমুদ্রে উথাল পাথাল ঢেউ এর মত দোল খেতে লাগল। কিছু উষ্ণতা মানুষ আনন্দ দেয়। ভালবাসা গভীর থেকে গভীর করে।

তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে গিয়েছে। সারাহ গোসল শেষ করে টি-শার্ট আর প্লাজু পরে সোফায় বসে ড্রামা দেখছে আর ফোনে সেল্ফি তুলছে। রোশান সিদ্দিকী গোসল শেষ করে সাদা রঙের একটা টাওয়াল পরে ড্রয়িং রুমে এল। চুল গুলো ভেজা আর এলোমেলো। সারাহ সেল্ফি তুলতে গিয়ে খেয়াল করল তার গলায় দাগ হয়ে গিয়েছে। হুবহু দেখতে ঠোঁটের মত। সে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল রোশান সিদ্দিকী দাঁড়িয়ে আছে। সারাহ তাকাতেই রোশান সিদ্দিকী বলল,
” এখন কি সেল্ফি তোলার টাইম নাকি টিভি দেখার টাইম। ”
সারাহ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
” আমার গলায় দেখুন কি করেছেন?”
রোশান সিদ্দিকী একবার চোখ বুলিয়ে বলল,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৮

” এখন এসব নিয়ে আলোচনার সময় নয়। যাও পড়তে বসো। তোমাকে ম্যাথ করাব আমি। ”
সারাহ রোশান সিদ্দিকী’র থমথমে চেহারা দেখে বলল,
” কাজ শেষ? উদ্দেশ্য সফল। অমনি আগের রুপে ফিরে গিয়েছেন।”
সারাহ’র এই ঠোঁট কাটা কথা শুনে রোশান সিদ্দিকী অদ্ভুত চোখে সারাহ’ র দিকে তাকাল। এর মানে হল, ” লজ্জা থাকলে জীবনে এই মেয়ের লেখাপড়া শেষ না হলে রোমাঞ্চ এর ধারে কাছেও যাবোনা।”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫০