একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৩
Mousumi Akter
ভোর পাঁচটা বাজে। কুয়াকাটা’র সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে আছে তন্ময়,মৃন্ময়,দ্বীপ সাথে তরী। ওরা অপেক্ষা করছে সূর্যদ্বয়ের জন্য। একমাত্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতেই সূর্য কন্যার উদয় দেখা যায়। গতকালের সমস্ত বিষাদ ওরা ভুলে যেতে চায়। বিশাল সমুদ্রে দুঃখ গুলো বিসর্জন দিতে চায়। সমুদ্রের বিশালতার দিকে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তার সুন্দর সৃষ্টিকে অনুভব করতে চায়। যার সৃষ্টি এত সুন্দর নিঃসন্দেহে তার চিন্তাভাবনা পরিকল্পনার চেয়ে উত্তম চিন্তাভাবনা পরিকল্পনা আর কিছুতে হতে পারেনা। তাই তিনি যা করেছেন তার পেছনে উত্তম কিছু নিহিত আছে। ওরা অপলক তাকিয়ে আছে সমুদ্রের দিকে। ভোরের সমুদ্র শান্ত- শিষ্ট , নিশ্চুপ কিশোরীর মত আছে। বহু মানুষ ভীড় জমিয়েছে সূর্য দেখার জন্য। কেউ কেউ সমুদ্রে পা ভেজাচ্ছে। প্রতিটা মানুষের মনে কত উচ্ছাস। এখানে যারাই আসে শত বিষাদ যেন সমুদ্রের বুকে এলে ফুল হয়ে যায়। দ্বীপ মৃন্ময় কে খোঁচা মেরে বলল,
” তোর ফিলিংস কি? বউ নিয়ে প্রথম সূর্যদ্বয় দেখার ফিলিংস তো অন্যরকম হওয়ার কথা। দেখেছিস আমরা বন্ধু হিসাবে কত ওয়াও জাতি। তোকে নববধূ সহ সূর্যদ্বয় দেখাতে নিয়ে এসছি। ”
মৃন্ময় দ্বীপ’কে একটা লা’থি মেরে বলল,
” আমার এখন সূর্যদ্বয় দেখার ফিলিংস হচ্ছেনা।”
দ্বীপ ভ্রুঁ জোড়া উঁচিয়ে বলল,
” তাহলে কি ফিলিংস হচ্ছে?”
মৃন্ময় দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” শালা আমার। এখনো বউকে একটা কিস ও করতে পারি নাই। জাস্ট একটা কিস তাও পারি নাই। কত সাধনার বউডারে একটু জড়াইয়া ও ধরতে পারি নাই। তোদের মত বন্ধু জাতি থাকার চেয়ে না থাকা বহুগুন উত্তম। যে বন্ধুজাতি আমারে এখনো বউ এর সাথে ফুলসজ্জার ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি, সেই বন্ধুজাতিকে ধীক্কার জানাই।”
দ্বীপ চোখ উল্টে তাকিয়ে বলল,
” হালা লুইচ্চা কাহিনী তাইলে এইতা। আচ্ছা! বলবি তো আর তর সহ্য হচ্ছেনা। ”
মৃন্ময় বলল,
” তুই হইলে তো গাড়িতেই লুচ্চামি শুরু করতি। আমার মত ভদ্র পোলা এখনো এ দেশে জিবীত আছে তাই এ দেশ এখনো রসাতলে যায়নি। যা দ্রুত বাসর ঘর সাজানোর ব্যবস্থা কর।”
দ্বীপ মৃন্ময়কে জ্বালাতে বলল,
” রাত আসতে এখনো অনেক দেরি। রাত আসুক তারপর পাবি।”
” আরে হ্লার পো আমি টায়ার্ড। আমার বউ ও টায়ার্ড। আমাদের এখন রেস্ট দরকার। ঘুমোতে চাই। কিন্ত বিয়ের পর প্রথম ঘুম ফুল দ্বারা সজ্জিত বিছানা ছাড়া ঘুমানো সম্ভব নয়। তাই দ্রুত ঘর সাজা। ”
তন্ময় বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি সরাসরি সমুদ্রের দিকে। তন্ময়ের চিন্তা ভাবনা ম্যাচুরিটি দ্বীপ আর মৃন্ময়ের থেকে অনেক টা আলাদা। যাকে মাঝে মাঝে আগামি দিনের রোশান সিদ্দিকী বলে ডাকা হয়। রোশান সিদ্দিকী’র অনেক গুন ই তস্র মাঝে আছে। রোশান সিদ্দিকী ভালবাসা প্রকাশ করতে জানেনা তন্ময় ছোঁয়াকে ভালবেসে ভালবাসা প্রকাশ করেছে বহুবার। তন্ময় মহাসমুদ্রে তাকিয়ে ভাবছে আজ ছোঁয়া আসবে৷ আবার দেখা হবে। ও কি আমার হয়েই আসবে?
নাকি আবার ও বিচ্ছেদের তীব্র যন্ত্রণা দিতে ফিরে আসবে? ও কি আমার জন্য ফুল নিয়ে আসবে নাকি কাঁটা? ও হাজারবার আমাকে অপমান করলেও ছুঁড়ে ফেললেও আমি ওকে গ্রহন করব। ভীষণ ভালবেসে গ্রহন করব। পৃথিবীর কেউ জানেনা তন্ময় এর বাবা জীবীত। সে কোনদিন কারো সামনে বাবা জীবীত এ পরিচয় দেয়নি। রাগে ঘৃণায় জিদে কোনদিন বাবার নাম উচ্চারণ করেনি। পৃথিবীর সবাই জানে ছোট বেলায় তন্ময় এর বাবা মারা গিয়েছে। বাবার অঢেল অর্থ থাকলেও কোনদিন অধিকার নিয়ে যায়নি সে। আজ যদি বাবা ভাল হতেন তন্ময়ের একটা সুন্দর পরিবার হত। হয়ত ছোঁয়ার বাবা ও মেনে নিতেন তাদের ভালবাসা। পৃথিবীর সবার চোখে ছোঁয়া খারাপ হলেও তন্ময় জানে তার প্রতি ছোঁয়ার কি গভীর ভালবাসা। গিফট দেওয়ার বাহানায় দামি ব্রান্ডের একাধিক শার্ট, টি-শার্ট, জুতা গিফট করে যায় যে মেয়েটা সে কি সত্যি ভালবাসেনি। বিভিন্না বাহানায় ডাবল খাতা, বই,নোটস কিনে আমাকে এক সেট করে দেওয়া মেয়েটা কি সত্যি ভালবাসেনি। ছোঁয়ার ভালবাসা গভীর। গভীর থেকে গভীর। যেটা কেউ জানেনা।
দ্বীপ তন্ময়কে ডাকল,
” এই রোশান সিদ্দিকী ভার্সন ২।”
তন্ময় ফিরে তাকালো। দ্বীপ বলল,
” দেখ সূর্য উঠছে।”
তন্ময় দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
” পৃথিবীর বুক এখন আলোকিত হবে, কিন্তু আমার বুক তো অন্ধকারে ঢাকা। ”
দ্বীপ বলল,
” আরে তো সূর্য আজ চাঁদ হয়ে ধরা দেবে। ওইদিকে রোশান স্যার আর সারাহ ও আসছে। এই সমুদ্র কাপলে ভরে যাবে। এই সিঙ্গলে দ্বীপ শুধু বসে বসে কপাল চাপড়াবে। এই ছাড়া আছে কি আমার কপালে। আমি আর সমুদ্র আজ থেকে বিএফ এন্ড জিএফ। আই লাভ ইউ মহা ডার্লিং সমুদ্র। ”
মৃন্ময় বলল,
” মেসেঞ্জারে সারাদিন যে ফুস ফুস করে ভয়েসে চুম্মা পাঠাইস সেইডা কে? আর কতকাল একাধিক জিএফ থাকতেও সিঙ্গেল হওয়ার নাটক করবি? শালা জিএফ এইটাও টিকবে না।”
দ্বীপের ফোনের স্ক্রিনে দারুণ সুন্দরী একটি মেয়ের ছবি। দ্বীপ মোবাইলের স্ক্রিনে থাকা মেয়েটিকে টানা কয়েক টা চুমু দিয়ে বলল,
” এইটা আমার প-রী। এইটারে হারালে প্রা*ণ দিবো অকালে।”
তন্ময় বলল,
” ফেসবুকে কাউকে এভাবে বিশ্বাস করা উচিৎ নয়। কোনো ছেলেও তো হতে পারে।”
দ্বীপ বলল,
” না, আমি ওর কণ্ঠ ও শুনেছি। ”
মৃন্ময় বলল,
” তাও যাচাই করে নিস।”
তন্ময় বলল,
” আজকাল মানুষ কণ্ঠ ও এডিট করতে পারে। অন লাইন জগৎ বড়ই অদ্ভুত! কাউকে বিলিভ করিস না।”
দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত দশটা। যে কোনো কারণে রোশান সিদ্দিকী আসতে পারবে না। তাই ছোঁয়া আর সারাহ এক সাথেই আসছে। ওরা রাতের মাঝেই চলে আসবে। দূরে থেকেও কীভাবে যেন ওরা বেলি ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজিয়েছে লোক ভাড়া করে। সাথে দ্বীপ আর তন্ময় ছিলো। তখন রাত দশটা দশ।
দ্বীপ আর তন্ময় দাঁড়িয়ে আছে রুমের দরজায়। দ্বীপের দাবি টাকা না দিয়ে বাসর ঘরে প্রবেশ করতে পারবি না। তন্ময় বলল,
” ঝামেলা না বাড়িয়ে ক্র দাবি দাওয়া যা আছে মিটিয়ে বাসর ঘরে প্রবেশ কর। আফটার অল তোর ই লেট হচ্ছে। ”
মৃন্ময় বলল,
” তোরা কি আমার ভাবি না শালি যে টাকা দিবো। ধান্দা বাদ দিয়ে ভালোই ভালোই দরজা খোল। ”
দ্বীপ বলল,
” আয় তোর ভাবির দায়িত্ব পালন করছি। ”
বলেই দ্বীপ মৃন্ময়ের কানে কানে বলল,
” প্রথম রাতে গল্প করতে হয় শুধু বুঝেছো দেবর জি। ”
তন্ময় হো হো করে হেসে উঠল। তরী ও হেসে উঠল। মৃন্ময় বলল,
” দুইটা টাকার জন্য এত কাহিনী। ধর হ্লা টাকা। বলেই দুই টাকার নোট দিলো। ”
দ্বীপ টাকার দিকে তাকিয়ে হা করে থেকে বলল,
” ভীক্ষা।”
ততক্ষণে মৃন্ময় দ্বীপের হাত থেকে চাবি কেড়ে নিয়ে দরজা খুলে বলল,
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫২
“গুড নাইট।”
দ্বীপ বলল,
” বউ নিবিনা। ”
মৃন্ময় বলল,
” আবার জিগায়।”
বলেই তরীকে কোলে তুলে নিয়ে গান গাইতে গাইতে ঘরে ঢুকল,
” আজকে আমার বাসর রে।”