একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬১
Mousumi Akter
আজ ছয় মাস পর রোশান-সারাহ তাদের বাড়িতে যাচ্ছে। নিজের মায়ের সাথেই এক প্রকাশ অভিমান করেই সারাহ’র হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে চলে এসছিলো রোশান সিদ্দিকী। বাড়ি ছেড়ে আসার পর তার মা অসংখ্য বার তাকে ফোন দিয়েছিলো বাড়িতে ফিরে আসার জন্য অথচ সারাহ’কে ফোন করে খারাপ খারাপ কথা শুনিয়েছে। সারাহ’র মা-বাবাকে পর্যন্ত ফোন করে আজে বাজে কথা শুনিয়ে ছেড়েছে। মাঝে মাঝে সারাহ ভীষণ কষ্ট পেয়েছে কিন্তু রোশান সিদ্দিকী সেই কষ্ট ভুলিয়ে আবার ও সারাহ’কে হাসিয়েছে। ছোট্ট একটা ব্যাগে সারাহ কয়েকটা থ্রি-পিস ঢুকালো। রোশান সিদ্দিকী ব্যাগ দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
” ব্যাগ কেন?”
সারাহ হাসিখুশি মুখে বলল,
” কতদিন পরে যাচ্ছি। তা থাকব না।”
রোশান সিদ্দিকী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” নো। যাবো আর ব্যাক করব ব্যাস। আম্মু ফোন দিয়ে রিকুয়েষ্ট করেছে না হলে যেতাম না। দেখা গেলো কুলাঙ্গার টার জন্য বাবা বা দাদু সমস্যায় পড়ল। সে জন্য ই শুধু যাচ্ছি। নইলে আমি যেতাম না।”
সারাহ মুখ কাচুমাচু করে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” প্লিজ নিইনা দুইটা থ্রি-পিস। দেখা গেল ওখানের কি পরিস্থিতি হল থেকে আসা লাগল। তখন কি করব।”
রোশান সিদ্দিকী মুখ গম্ভীর করে বলল,
” যা ইচ্ছে করো। আমি নিচে বাইক বের করছি। দ্রুত এসো। ”
রোশান সিদ্দিকী নিচে নামার সময় তরীর বাবা কয়েকবার ডাকলেন। কিন্তু রোশান সিদ্দিকী ফিরেও তাকালো না। তরীর বাবা আজ একটু ক্ষেপে গেলেন। রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন,
” আপনাকে ভদ্রলোক ভেবেছিলাম। বিশ্বাস করে আমার মেয়েকে ছেড়েছিলাম। এক সপ্তাহ হয়ে গেল আমার মেয়ের আর কোনো সন্ধান নেই। আজকের মাঝে আমার মেয়েকে হাজির করবেন।”
পেছন থেকে সারাহ বলল,
” ভুড়িটা নিয়ে দরজা আটকে দাঁড়িয়ে না থেকে সরে দাঁড়ান। ”
তরীর বাবা অদ্ভুত চোখে পেছন ফিরে তাকালো। এ কেমন উদ্ভট আচরণ। এমন আচরণ তো সে কখনো পায়নি। সারাহ’র এমন আচরণে তরীর বাবার মুখের অবস্থা আলুর মত। সে কপাল কুঁচকে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
” এ কেমন ধরণের আচরণ? ”
সারাহ বলল,
” ইয়ার্কি করেছি। আপনি দেখতে একদম আমার নানার মত। মাঝে মাঝে ভুলে যাই আপনি আমার নানা নন।”
তরীর বাবা বিরক্ত মুখে সারাহ’কে বলল,
” আপনারা তো চলে যাচ্ছেন দেখি। আমার মেয়ে কোথায়? সেটা না বলে কোথায় যাচ্ছেন।”
সারাহ মুখ বাঁকিয়ে বলল,
” এমন ভাবে মেয়ে মেয়ে করছেন যেন মেয়েকে কত ভালবাসেন। কাল আপনার মেয়ে আর জামাই আসবে। জামাই এর জন্য চেইন বা আংটি কিছু বানিয়েছেন। ”
এমন সময় দিশা এসে বলল,
” সেটা আমরা বুঝব। তরী কোথায় আগে সেটা বলো।”
সারাহ সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় বলল,
” তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের সাথে ভেগে যায়নি তরী। এত টেনশনের কিছু নেই।”
সারাহ’র হাতে ব্যাগ দেখে দিশা বলল,
” তুমি একা যাচ্ছো নাকি উনিও।”
সারাহ হাত থেকে ব্যাগ ফেলে দিলো সিঁড়িতে। দিশার দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলল,
” উনি মানে কি? এ অভদ্র মহিলা উনি মানে কি? তোমার উনি এইযে এই ভুড়ি আলা নানা। নাট রোশান সিদ্দিকী। আর একবার যদি রোশান সিদ্দিকী’র দিকে নজর দিস আমি তোর ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে দিবো আর লিখব চরিত্রহীন মহিলা। আমার জামাই এর পিস পিস ঘুরছে কিন্তু পাত্তা দিচ্ছে না।”
তরীর বাবা বলল,
” আচ্ছা অভদ্র তো তুমি। সে কি তোমার স্বামীর দিকে নজর দিছে।”
নিচ থেকে রোশান সিদ্দিকী বাইকের হর্ণ বাজাচ্ছে। সারাহ নেমে যেতে যেতে বলল,
” কচি মেয়ে বিয়ে করে তো আপনার কোনো হুঁস নেই। এমন একটা ভং ধরছেন যেন মেয়েকে কত ভালবাসেন। আমি ফিরে আসি,আপনার জন্য ধামাকা অপেক্ষা করছে। ”
বলেই সারাহ চলে গেল। তরীর বাবার একটা খটকা লাগছে। ওরা তরীকে কার সাথে বিয়ে দিলো। তখন মেয়েকে বোঝা মনে করে ওদের হাতে ছেড়ে দিলাম। সত্যি বিয়ে দিয়েছে কীনা এটা জানলেই আমার শান্তি। ওই ছেলের সাথে আবার ভেগে না যায়। আমার চিন্তা তো ওদের বুঝাতে পারছি না।
রাত দশটা বাজে। রোশান সিদ্দিকী’র বাইক গিয়ে থামল তাদের ওঠানে। রোশানের বাইক থামতেই রোশানের দাদু আর বাবা এগিয়ে এলো। সারাহ ওনাদের সালাম দিয়ে কথা বলল। রোশান বাইক থেকে নেমে তাকিয়ে দেখল বাড়িতে কিছু অচেনা মানুষ। রোশানের বাবা বলল,
” দেখো বাবা। কোন গুন্ডা মাস্তানের মেয়ে ধরে এনেছে। বাড়ি ঘেরাও করেছে তারা। দেখো ওদিকে দুই গাড়ি পুলিশ এসছে। ”
রোশান সিদ্দিকী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” এই চরিত্রহীন লম্পট এর সাথে কোন মেয়ে এসছে বাবা। আমি সেটাই ভাবছি। তোমার ছেলের যে চরিত্র! ” এতটুকু বলেই রোশান সিদ্দিকী থেমে গেলো। সারাহ দু’পা এগোতেই দেখল জিনাত দাঁড়িয়ে আছে সাথে তার শ্বাশুড়ি আছে। সারাহ ওর শ্বাশুড়িকে সালাম দিলো। সারাহ’র শ্বাশুড়ি খুব একটা ভালভাবে উত্তর দিলোনা। সারাহ তা নিয়ে কিছু মনে করল না। সে জিজ্ঞেস করল,
” আম্মা, ওশানের বউ কোথায়?”
” ওশানের ঘরেই আছে।”
এরই মাঝে রোশান সিদ্দিকী এসে গেল। রোশান সিদ্দিকী আসতেই তার আম্মু বলল,
” বাবা মেয়েটা দেখতে সুন্দর আছে। বড়লোকের মেয়ে। দেখো কথা বার্তা বলে মেয়েটাকে এ বাড়িতে রাখা যায় কীনা! মেয়েটা এ বাড়িতে থেকে গেলে ওশানের আর ভবিষ্যৎ এর চিন্তা করা লাগবে না। ”
রোশান সিদ্দিকী বিরক্ত চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ভাবতেই অবাক লাগে! আমার আম্মু এত লোভী। জাস্ট কিছুই বলার নেই। ”
বলেই রোশান সিদ্দিকী ওশানের ঘরের দিকে পা বাড়াল। সে সাথে সারাহ ও পা বাড়াল। ওশানের ঘরে পা রাখতেই রোশান সিদ্দিকী আর সারাহ’র সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল ওশানের সাথে থাকা মেয়েটিকে দেখে। ঘরে কয়েকজন পুলিশ ওশানের সাথে কথা বলছে। ওশানের সাথে থাকা মেয়েটাও কথা বলছে। রোশান সিদ্দিকী আর সারাহ দু’জন দু’জনের দিকে তাকাল। সারাহ’র মাথা কাজ করল না ছোঁয়াকে দেখে। এখানে ছোঁয়া ওশানের সাথে কেন?
সারাহ একজন পুলিশকে ধাক্কা মেরে ফেলে ছোঁয়ার সামনে দাঁড়াল। ভীষণ অবাক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
” ছোঁয়া তুই? ”
ছোঁয়াকে আজ অন্যরকম লাগছে। সে যেন সারাহ’কে চিনতেই পারছে না। সারাহ’র দিকে তাকালো ও না। সে আবার ও পুলিশের সাথে কথা বলা শুরু করল। খুব শক্ত গলায় পুলিশকে বলল,
” আমি এডাল্ট। আমি আমার ডিসিশন নিয়েছি। এখানে আমার বাবা কেন পৃথিবীর কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারেনা। আমার বাবাকে জানিয়ে দিন আমি এবং আমার স্বামীকে ডিস্টার্ব করলে আমি তার নামে মামলা দিতে বাধ্য হবো। আশা করছি আমার বাবার পাঠানো গুন্ডাদের এরেস্ট করে এখান থেকে যাবেন আপনারা। আপনাদের এ অতি বাড়াবাড়ি আমার অসহ্য লাগছে। ”
পুলিশ অফিসার বলল,
“দেখুন আপনি এখান থেকে না গেলে আমরা ওশানের মা-বাবাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হবো। ওনাদের নামেও মামলা হয়েছে।”
রোশান সিদ্দিকী পুলিশ অফিসারকে সালাম দিয়ে বললেন,
” একটু বাইরে আসুন প্লিজ! ”
পুলিশ অফিসার বাইরে গেল। রোশান সিদ্দিকী কি বলল তা কেউ জানেনা। ঘন্টা খানিক কথা বলার পর পুলিশ অফিসার এসে বলল,
” ছোঁয়া আপনি কি ভেবে ডিসিশন নিয়েছেন। আপনি কাকে বিয়ে করেছেন জানেন? সে একজন লম্পট৷ এখনো সময় আছে প্লিজ ফিরে চলুন।”
সারাহ বলে উঠল,
” বিয়ে মানে কীসের বিয়ে? আমি জানি ছোঁয়া ইচ্ছা করে ওশানের সাথে আসেনি। ও আমার বন্ধুর বউ। ওর রিলেশন তন্ময় এর সাথে। এটা আমরা সবাই জানি। বিশ্বাস না হলে আমার স্বামীর কাছে শুনে দেখুন। এই ওশান কিছু একটা করেছে। নিশ্চয়ই ও কোনভাবে ব্ল্যাকমেইল করেছে ছোঁয়াকে। আমি চিনি ছোঁয়াকে ওর রুচি এত নিচে নামবে না। তাছাড়া কেন? কিসের জন্য ও ওশানের সাথে আসবে। ওশান একটা লম্পট।”
পুলিশ অফিসার বলল,
” আপনি এতটা উত্তেজিত হলেতো হবেনা। আপনার বান্ধবীর কাছে শুনে দেখুন। সে কি বলে।”
” আমি ওর কাছে কি শুনব। আপনি এই ওশান কে ধরে নিয়ে রিমান্ডে দেন। সব সত্যি বের হয়ে আসবে। এই ওশান ই সব করেছে।”
পুলিশ অফিসার ছোঁয়াকে বলল,
” এখন কি নিজের বান্ধবীর নামেও মামলা দিবেন মিস ছোঁয়া। নিজের বাবার নামে তো দিতে চাইলেন। আপনার বান্ধবীর তো প্রচুর কনফিডেন্স আপনাকে নিয়ে। সেই কনফিডেন্স কে নোবেল ছুঁড়ে দিন আপনার মুখটা খুলে।”
সারাহ পুলিশ অফিসারের প্রতি বিরক্ত হয়ে বলল,
” বুঝলাম না আপনারা ওকে কেন প্রেশার দিচ্ছেন? ও কি এসবে জড়িত নাকি? বললাম না এই ওশান কে নিয়ে কিছু করেন।”
ওশান বিরক্ত হয়ে সারাহ ‘কে বলল,
” ভাবি ভদ্রভাবে কথা বলো। আমাকে নিয়ে অনেক কিছু বলে যাচ্ছো আমি সহ্য করছি কিন্তু।”
সারাহ ছোঁয়াকে বলল,
” এই ছোঁয়া তুই কিছু বল। তুই সত্যটা বলে দে। রোশান স্যার তোকে সেইফ করবে। প্লিজ বল কিছু। তুই শুধু একবার মুখ খোল, এই ওশান লম্পট কে পুলিশ কি করে দেখিস।”
ছোঁয়া চোয়াল শক্ত করে বলল,
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬০
” তুই এইবার একটু থামবি সারাহ। সব সময় বা-ল পাকনামি করিস তুই। বাচালের মত অতিরিক্ত কথা বলা অভ্যাস শুধু। তুই কি আমার গার্ডিয়ান এত কথা বলছিস? তোকে আমি ডেকেছি এখানে মাসিমাগিরি করে আমার গার্ডিয়ান সাজতে। তোর ও যে বয়স আমার ও সেই বয়স। তোকে একবার ও বলেছি মাতব্বরি করতে। সব সময় ভাবিস তুই যা বলিস তোর পাকনামি সব ঠিক। শোন সারাহ এটা আমার লাইফ, আমার ডিসিশন, আমার ভাল মন্দ তোর চেয়ে আমি ভাল বুঝি। একটুও নাক গলাবি না আমার ব্যাপারে। বিরক্তিকর যত্তসব।”