একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬২

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬২
Mousumi Akter

সারাহ’র সর্বাঙ্গ যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। সে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ছোঁয়ার দিকে। মুহূর্তের মাঝে দু’চোখের তারা পানিতে ভরে গেলো। স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠলো অতীতের মিষ্টি মধুর সম্পর্কের কথা। সম্পর্কটা এমন ছিল, যেন দুই দেহে এক প্রাণ। সারাহ’র চোখজোড়া পানিতে ভরে উঠল। চোখ জোড়া দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
একদিন কলেজ থেকে সারাহ কে একটা বাজে কথা বলেছিলো একটি মেয়ে। যার ফলে ছোঁয়া তার সাথে অনেক ঝামেলা করে গায়ে পর্যন্ত হাত তুলেছিলো। সব সময় সারাহ’র পছন্দের পোশাক পরেছে ছোঁয়া। সারাহ’র পছন্দের খাবার খেয়েছে, সারাহ’র পছন্দের জায়গা ঘুরতে গিয়েছে। কোথাও ঘুরতে গেলে সারাহ’র পছন্দে সব করেছে। সব কিছুতেই সারাহ’কে আগে গুরুত্ব দিয়েছে।

সারাহ’র স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠলো পুরনো আরো অনেক অনেক স্মৃতি। দু ‘বন্ধুর যতবারই দেখা হয়েছে দু’জন দু’জনকে খুব শক্তভাবে জড়িয়ে ধরেছে। ম্যাচিং ড্রেস বাদ দিলে ওদের কোনো ড্রেসই নেই বলা চলে। দু’জনে হেসেছে গান গেয়েছে, ঘাড়ের উপর হাত দিয়ে হেঁটেছে। একজনের হাতের আঙুলের ভাজে আরেকজন হাত দিয়ে হেঁটেছে। এক বেঞ্চে ছাড়া দু’জন বসেনি। বসেছে একসাথে, চলেছে এক সাথে, কত হাসাহাসি দু’জনে করেছে তার ঠিক নেই। জীবনে দ্বিতীয় কোন নারী বন্ধু নেই ওদের। আজ ছোঁয়ার এই ব্যবহারটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সারাহ’র। হৃদয়টা ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে তার। রোশান সিদ্দিকী দূর থেকে দেখছে সারাহ’ সর্বাঙ্গ কাঁপছে। রোশান সিদ্দিকী বুঝতে পারল ছোঁয়ার সামান্যতম খারাপ আচরণ সারাহ সহ্য করতে পারবেনা। সেখানে ছোঁয়ার করা এমন আচরণ ছোঁয়া ভালভাবে নিতে পারেনি। সারাহ এখনই অসুস্থ হয়ে পড়বে। রোশান সিদ্দিকী ছুটে এসে সারাহ’ হাতটা ধরল। শান্ত গলায় বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” প্লিজ সারাহ কুল!”
সারাহ রোশান সিদ্দিকীর দিকে তাকালো। দু’চোখ পানিতে ভর্তি। হাউমাউ করে কেঁদে দিলো রোশান সিদ্দিকী’র দিকে তাকিয়ে। কেঁদে কেঁদে বলল,
“আমাকে কি সব বলল দেখলেন। আমার না বিশ্বাস ই হচ্ছেনা৷ এটা সেই মেয়ে। যাকে প্রথম দেখায় আমার বোন লেগেছিলো। আমার সুখের কারণ লেগেছিলো। দ্বিতীয় কোনো বন্ধুর প্রয়োজন পড়েনি জীবনে। ”
রোশান সিদ্দিকীর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কি হচ্ছে এখানে বুঝে উঠতে পারছে না। কি বলা উচিত তাও জানেনা। শুধু বলল,

“তুমি ধৈর্য ধরো। সময় সব কিছুর উত্তর দিবে।”
সারাহ’র যে হৃদয় ফেঁটে যাচ্ছে। চোখের পানি যে হৃদয়ের ভায়বহ আর্তনাদের সেটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। মনের মাঝে যখন ভয়ানক কষ্ট হয়, তখনই মানুষ এভাবে কাঁদে। কিছুক্ষণ কান্নাকাটির পর নিজের চোখের পানি মুছলো। ছোঁয়াকে একটাজোরে একটা ধাক্কা মা’ রলো। মে’রে বলল,
“ওশানকেই যদি ভালবাসিস, তাহলে তন্ময়ের সাথে কি ছিলো?”
“কিছুই না। তন্ময় আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। ”
সারাহ শক্ত গলায় বলল,
“একদম মিথ্যা কথা বলবি না ছোঁয়া। তন্ময় আমার ফ্রেন্ড। কিন্তু তোর শুধু ফ্রেন্ড নয়। তন্ময় তোর ফ্রেন্ডের থেকে অনেক কিছু। ”
ছোঁয়া বিরক্ত গলায় বলল,

“আমি কি তোর কানে কানে গিয়ে বলেছি, আমার ফ্রেন্ডের থেকে বেশি কিছু? ”
সারাহ খুব রেগে গিয়ে বলল,
“তুই আমার কানে কানে বলিস নি মানে? একশবার আমাকে বলেছিস। তন্ময় কে ভালবাসিস বলেই আমাকে নিয়ে কুয়াকাটা গিয়েছিস। তন্ময়ের সাথে ঘুরেছিস। তারপরও বলবি তুই আমার কানে কানে বলিস নি? তাছাড়া সবকিছু কি কানে কানে বলা লাগে? ”
” আমি কি একা ঘুরেছি, তুই ঘুরিস নি? ”
” হ্যাঁ আমি ঘুরেছি। তন্ময় এর কোলে মাথা রেখে ঘুমোইনি, হাতে হাত রেখে হাঁটিনি, তন্ময়ের সাথে ঘনঘন কোথাও হারিয়ে যায়নি, বারবার গালে তুলে খাইয়ে দিইনি এগুলো তুই করেছিস ভালো করে মরে করে দেখ, তুই তন্ময়কে চুমু খেয়েছিস। তুই তন্ময়কে স্বপ্ন দেখিয়েছিস, বিয়ের স্বপ্ন। ভালবাসার স্বপ্ন। তন্ময় তোকে ক্ষমা করলেও আমি তোকে ক্ষমা করব না ছোঁয়া।”
ছোঁয়া আবার ও বিরক্ত গলায় বলল,

” আমি কি তোর ক্ষমা চেয়েছি? তুই বরাবরই স্বার্থপর টাইপের মানু।ষ তোর যদি এতই তন্ময়কে পছন্দ তন্ময়কে বিয়ে না করে রোশান স্যার এর মত শিক্ষিত বড়লোককে কেন বিয়ে করেছিস? ভেবেছিস তুই থাকবি এরকম আলিশান একটা বাড়িতে আর আমি থাকবো তন্ময়ের বাড়ির ভাঙা ঘরে৷ তন্ময়ের বাড়ির যে অবস্থা! গরু ছাগল বসবাস করতে পারবেনা। ”
সারাহ খুব দুঃখ পেল তন্ময়ের দারিদ্রতা নিয়ে কথা শোনানোর জন্য। সারাহ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
” একদিন তন্ময়ের সব হবে। যা তুই ভাবতেও পারবি না।”
” তন্ময় কে এতই পছন্দ তাহলে তুই কেন তন্ময়কে বিয়ে করলি না। রোশান স্যার এর মত বড়লোক শিক্ষিত দেখে বিয়ে করে তো দিব্যি সংসার করছিস। ”
সারাহ ছোঁয়ার গালে জোরে একটা থা-প্প-র মা-র-লো। থা-প্প-ড় মে’রে বলল,

” তুই ছোঁয়া হলে আজ গায়ে হাত তুলতাম না। আমি একজন অমানুষের গায়ে হাত তুলেছি। তুই আর মানুষ নেই। অমানুষ হয়ে গিয়েছিস। ছোঁয়া কখনো এমন ছিল না। তুই একটা জঘন্য মানুষ হয়ে গিয়েছিস। ছোঁয়া আমি কখনো তোর সাথে আর কথা বলবো না।তোর কোনো ক্ষতি চাইনি বলেই এই লম্পটকে বিয়ে করতে নিষেধ করছি। কিন্তু তুই আমাকে এত খারাপ খারাপ কথা শোনাবি ভাবতে পারিনি। আমার ফোন থেকে আমার মন থেকে তোকে আজ এখুনি ডিলেট করে দিলাম। তন্ময়ের জীবনে যা হয় হোক, তুই ও সুখী হবিনা বলে দিলাম।”
ছোঁয়া তাচ্ছিল্যর স্বরে হেসে বলল,

“তোর কি আমাকে হিংসা হচ্ছে সারাহ? আমি কেন তোর জা হয়ে এলাম।”
” আমার হিংসা হবে কেন? আমার কষ্ট হচ্ছে। তুই মানুষ হিসেবে মানুষকে ঠকালি। মানুষ ঠকানোর মতো জঘন্য কাজ করেছিস। তন্ময় কতটা কষ্ট পাবে তুই ভেবে দেখেছিস? আমাকে কত বড় আঘাত দিয়েছিস ভেবেছিস? তোর আর ভাবতেই হবেনা। আজ, এখনি আমাদের শেষ সাক্ষাত।”
ছোঁয়া ওশানের হাত ধরে টানতে টানতে বলল,
” চলো আমরা এখান থেকে চলে যাই। এখানে এত অশান্তি ভালো লাগছে না।”
বলেই ছোঁয়া ওশানের হাত ধরে চলে গেল। সারাহ ছোঁয়ার দিকে আর তাকালো না। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে রইলো।

কেটে গিয়েছে পাঁচ বছর।
তরী সকালে ঘুম থেমে উঠে চাল বসিয়ে দিয়েছে। শাশুড়ির কাছে জিজ্ঞেস করছে,
“মা কি রান্না হবে?”
মৃন্ময়ের আম্মু বলল,
” যা ইচ্ছা হয়, তাই রান্না করো।”
তরী ফ্রিজ খুলল। ফ্রিজে রাখা চিংড়ি মাছটা দেখে ওর খুব মন খারাপ হচ্ছে৷ পিহু চিংড়ি মাছটা ভালো খায়। শুনেছি ও গর্ভবতী, নিশ্চয়ই এখন ওর চিংড়ি খেতে ইচ্ছা করে। ও কি এখন চিংড়ি খেতে পারে? কি খেতে ইচ্ছা করছে ওর। খুব দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে পিহুকে। কেমন আছে ও? কোথায় আছে? ভালো আছে তো!

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬১

সকাল থেকে পিহু সুয়ে আছে। খুব মাথা ঘুরাচ্ছে আর বমি পাচ্ছে। শ্বাশুড়ি বাঁজখাই গলায় বলে উঠল,
” সে নবাবজাদির মেয়ে কি আজ উঠবে না। বেলা পেরিয়ে গেলে ভাত রান্না করবে। আমার ছেলে কি ওর বাপের মাথা খেয়ে অফিসে যাবে।”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here