একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬
Mousumi Akter
” তা আমাকে তোমার এত পছন্দ আগে বলোনিতো।”
ফোনের ওপাশ থেকে থমথমে পুরুষালী কন্ঠের এমন কথার জন্য কিঞ্চিৎ পরিমাণ প্রস্তুত ছিলনা সারাহ।তবে এই মুহুর্তে অনুভব করতে পারছে ফোনের ওপাশ থেকে এমন অপমানজনক অনেক কথা-ই তাকে হজম করতে হবে।ফোনের ওপাশ থেকে রোশানের ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নের কোনো জবাব তাৎক্ষনিকভাবে সারাহ দিতে পারল না।সে থম মেরে রইল।এই মুহুর্তে কি উত্তর দিয়ে চরম অপমানের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় সেই কুটিল বুদ্ধি আটছে। যে ভাবেই হোক ঝ-গ-ড়া করে হোক আর তর্ক করে হোক এই অপমানের হাত থেকে রক্ষা পেতেই হবে।সারাহ’কে চুপ থাকতে থেকে রোশানের দিক থেকে দ্বিতীয় অপমানজনক প্রশ্ন বিস্ফোরিত হল।রোশান আবারও বলল,
“কি ব্যাপার! কি মিথ্যা গুছিয়ে বলা যায় সেই প্ল্যান করছো। ”
সারাহ এইবার যেন চমকালো।হৃদয়আত্মা সহসা কেঁপে উঠল।কারণ সে মনে মনে যা ভাবছে তার বিপরিত পাশের মানুষ সেটা টের পেয়ে গিয়েছে।নিজের মনের খারাপ ভাবনা বিপরিত পাশের মানুষ টের পেয়ে যাওয়া হল জীবনের আরেকটা মহাবাঁশ।সারাহ এভাবে হেরে জেতে নারাজ।অপমানের চিনচিন ব্যাথা বুকে নিয়ে সে গর্জে উঠে বলল,
“শখ কত! উনার মত অসম্ভব বুড়ো মানুষ কীনা হবে আমার পছন্দের মানুষ। মানুষের শখ দেখে আশ্চর্য হই আমি।”
ফোনের ওপাশ থেকে কয়েক সেকেন্ডের নিরবতা ভেঙে রোশান আবারও থমথমে কন্ঠে জবাব দিল,
” আমি একটুও আশ্চর্য হচ্ছিনা তোমার মিথ্যা শুনে!তুমি যে মিথ্যা বলবে এটা আমি কনফার্ম ছিলাম। বাই দ্যা ওয়ে বুড়ো আবার অসম্ভব হয় কীভাবে?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রোশানের প্রতিটা কথা যেন বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে সারাহ’র দেহ মনে।সে আবার-ও ফুঁসে উঠে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
“অসম্ভব রকমের বুড়ো মানে হল ভীষণ বুড়ো।মানে অনেক বুড়ো।”
“ওহ আচ্ছা।”
“আর শুনুন এত আনন্দিত হওয়ার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি যে আনন্দে গদগদ হচ্ছেন।আমাকে একজন ডিস্টার্ব করছিলো।কোনো গাঞ্জাখোর টোর কিছু একটা হবে।এসব ভাদাইমা ছেলেরা ডিস্টার্ব করলে আর থামতে চায়না।আমি যে তার সাথে কথা বলতে আগ্রহী নই বা জীবনেও কথা বলব না এটা বুঝানোর তাগিদে আপনার নামে আল্লাহর দুনিয়ার মিথ্যা বলেছি, বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলেছি যেন আমাকে আর ডিস্টার্ব না করে।”
“তার মানে স্বীকার করছো তুমি মিথ্যা টা খুব সুন্দর ভাবে বলতে জানো।”
সারাহ’র মাথায় আবার ও বজ্র পড়ল।সে আবার-ও ধরা খেয়ে গেল।রোশানের মত বুদ্ধিমান বিচক্ষণ ছেলে প্রতিটা কথা খেয়াল করে শুনে তারপর উত্তর দিচ্ছে।সারাহ-র কাঁচা বুদ্ধি, যেটা বলছে সেটাতেই ধরা খাচ্ছে।সারাহ রোশানের সামনে নিজের মান -সম্মান বাঁচাতে আবারও উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
“আমিতো শুধু ওই ছেলেকে মিথ্যা বলেছি।”
রোশান আবার-ও বিচক্ষণতার সাথে উত্তর দিল,
“আচ্ছা তাহলে আমাকে সত্য বলেছো?”
সারাহ পড়ল মহাবিপদে।প্রতিটা কথার জালে ফেঁসে যাচ্ছে।বিরক্ত হয়ে জবাব দিল,
“আরে ধুর, আপনাকেও মিথ্যা বলেছি।”
রোশান এইবার গভীর কন্ঠে বিদ্রুপের সুরে বলল,
“ইউ আর গ্রেট।”
কথাটা যে সারাহ-কে অপমান করে বলা হয়েছে তা সারাহ খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে।অপমানে মুখের বদন থমথমে আকার ধারণ করল।সারাহ আবার ও গর্জে উঠা কন্ঠে বলল,
“আপনি কি এতই সুদর্শন আর সুপুরুষ নাকি যে আমার সারাদিন চেয়ে থাকতে ইচ্ছা করবে।নায়ক আমির খান আসলেও তো আমি সারাদিন চেয়ে থাকব না।আর সেখানে আপনি কে?আমি জীবনেও কোনদিন আপনাকে পছন্দ করব না এটা মাথায় রাখুন।মাথায় না থাকলে লিখে রাখুন প্রয়োজনে।”
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে সারাহ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল।বুক ধড়ফড় করছে তার।অস্থিরতায় ঠোঁট কামড়ে ধরে রেখেছে।ফোনের ওপাশ থেকে আবার কি উত্তর আসবে তার ঠিক নেই।সারাহ খুব ভাল ভাবে বুঝে গিয়েছে রোশান অত্যান্ত বিচক্ষণ ছেলে,মেধাবী আর ট্যালেন্ট।শুধু শুধু তো আর বিসিএস ক্যাডার হয়নি সে।আমার মত গাঁধার সাথে বাবা যে কেন এমন ট্যালেন্ট মানুষ -এর বিয়ে দিতে গেল সারাজীবন এমন ধরা খেয়ে খেয়ে জীবন যাবে।গুছিয়ে, সাজিয়ে মিথ্যা বললেও ধরা খেয়ে যাবো এর মাঝে কোনো মিথ্যা নেই।আমার জন্য বলদ সলদ কোনো ইজিবাইক চালক ই ভাল ছিল।যার মাথার উপর কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারতাম।এসব ভাবতে ভাবতেই ফোনের ওপাশ থেকে রোশান গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“আমার মস্তিষ্কের অবস্থা এতটাও খারাপ হয়ে যায়নি যে সব লিখে রাখতে হবে।”
“তাহলে মনে রাখবেন খুব ভালভাবে আপনাকে আমি পছন্দ করিনা।”
“সুন্দরী মেয়েরা কালো ছেলে পছন্দ করেনা,এ আর নতুন কী!”
সারাহ যেন আবার-ও আপমানিত হল।ইচ্ছা করছে রোশান কে একদম গি-লে ফেলতে। যাচ্ছে তাই ধরনের বাজে লোক একটা।নিজে জানে অনেক সুদর্শন দেখতে।জেনেও এমন একটা ভাব নিয়ে অপমানিত করার কি দরকার।সারাহ এসব কথার টপিক্স এড়াতে বলল,
“ফোন কেন দিয়েছেন জানতে পারি? মাত্রই তো গেলেন।”
রোশান একটা শীতল নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“রাতের খাবার খেয়েছো?”
রোশানের এই প্রশ্নে সারাহ’র হৃদয় কিছুটা চমকালো।চোখ দু’টো ছানাবড়ার মত হয়ে গেল।এতক্ষণ ধরে কীনা সে যার সাথে ননস্টপ ঝ’গ’ড়া চালাচ্ছিলো সে কি সুন্দর তার কাছে খাবার খেয়েছে কীনা জিজ্ঞেস করছে।এই গম্ভীর মানুষটার কয়টা রুপ আল্লাহ জানে।কেমন ত্যাড়ামার্কা কথা বলে তার মাঝে আবার যত্নশীল কথাবার্তা। এটা কী অপমানের নতুন টেকনিক?সারাহ বুঝে উঠল না রোশানের মতিগতি।তাই আগের রুপে স্থির থেকেই জবাব দিল,
“এটা জিজ্ঞেস করতে ফোন দিয়েছেন?”
রোশান সব সময় থমথমে মুডে থাকে। সে প্রতিটা কথার উত্তর থমথমে মুডেই দিচ্ছে।এবার ও থমথমে মুডে বলল,
“তাহলে কি জিজ্ঞেস করলে ভাল হত?”
সারাহ এবার থতমত খেয়ে উত্তর দিল,
“না মানে জাস্ট এটুক জিজ্ঞেস করতেই ফোন দিয়েছেন?”
“লেট মি ফিনিশ।”
সারাহ কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“কি ফিনিশ করবেন?”
রোশান আগের ন্যায় থমথমে মুডে উত্তর দিল,
“কথা শেষ করার আগেই এত প্রশ্ন করো কেন?প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত বেশী কথা বলো তুমি।”
“বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবেন না।আপনার মত পাকা ধানে মই যায়নি আমার।তাই চুপ থাকব।মুখ পোড়া বুড়ো কোথাকার।”
রোশান এইবার চোয়াল শক্ত করে বলল,
” দিস ইজ ঠু মাচ! বই পড়তে বসেছিলে।”
“না।”
কেন?”
সারাহ মাথায় এইবার দুষ্টু বুদ্ধি আঁটল।সে বুঝে গিয়েছে রোশান কোন ধরনের ছেলে। তাকে চেতানোর জন্য কি বলা উচিৎ। সারাহ মনে মনে বলল, আমাকে তীব্র অশান্তি দিয়ে বিয়ে করার কি জ্বালা তা হাড়ে হাড়ে টের পাবেন।সারাহ নাটকীয় ভঙ্গিমায় বলল,
“কীভাবে পড়ব আমি সদ্য বিবাহিত এক নারী।”
“বিয়ের সাথে বই পড়ার কি সম্পর্ক?” রোশান এবার-ও চোয়াল শক্ত করে কথাটা বলল।রোশানের কথা শুনে সারাহ আবার ও নাটকীয় স্বরে বলল,
“বর যদি ঘন ঘন আসে তাহলে কি আর পড়াশুনা হয় স্যার।আপনি বুঝবেন না পুরুষ মানুষ নতুন বিয়ে করলে কি দুষ্টুমি করে তার বউ এর সাথে।”
সারাহ’র এইসব নির্লজ্জ কথায় রোশানের মস্তিষ্ক ভো ভো করছে। সে তো সারাহ’র ওখানে একবার ই গিয়েছে। তাহলে এসব বলছে কেন সারাহ।সে কান থেকে ফোন সরিয়ে কিছুক্ষণ দম নিয়ে কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“বর ঘন ঘন আসে মানে?”
সারাহ মলিন কন্ঠে বলল,
“বুঝেন না স্যার।নতুন বর এত সুন্দর বউ রেখে কি দূরে থাকতে পারে।নতুন বউ এর কাছে তো ঘন ঘন আসবেই।ছেলে মানুষ যে অসভ্যর অসভ্য।আপনি তো বোঝেন ই।বর আসলে তাকে সামলাবো নাকি বই সামলাবো।তাই পড়তে পারিনি।”
রোশান চোখের চশমা খুলল।তার মাথা ভো ভো করে ঘুরছে।তার সদ্য বিবাহিত বউ যে এক ধাপ উপরে তা বুঝতে বাকি নেই।রোশান নিজের সম্পর্কে এমন অদ্ভুত কথাবার্তা জীবন প্রথম শুনল।আগে পরে সে কাউকে এমন সুযোগ দেয়নি।কয়েকটা শুকনো কাশি দিয়ে চাপা কন্ঠে বলল,
“তুমি না.. ”
“আমি কি স্যার?”
“ন্যারো মাইন্ডেড পুরাই।”
“আমি কি করেছি?”
রোশান চাপাকন্ঠে উত্তর দিল,
“কিছু না..
সারাহ আরেকটু রাগিয়ে দিতে বলল,
“এত রেগে যাচ্ছেন কেন? তখন আপনাকে পছন্দ হয়নি বলেছিলাম বলে।”
“সত্য শুনতে অভ্যস্ত আমি।”
“আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়েছে? সত্য বলবেন।”
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫
“পছন্দ হলেও মাতামাতি করব না।অপছন্দ হলেও ঢোল পেটাব না।ইমম্যাচিউর কথাবার্তা আমি একদম বলিনা।
আগামিকাল এক্সাম খারাপ হলে তোমাকে দেখে নিব।ভেবোনা বার বার ফেল করলে পড়াশুনা অফ করাব।তুমি রোশান সিদ্দিকীর ওয়াইফ মাইন্ড ইট।মাথা থেকে এসব কু-বুদ্ধি ঝেড়ে ফেলে খেয়ে পড়তে বসো। গুড নাইট।”