এমপি তামিম সরকার পর্ব ২

এমপি তামিম সরকার পর্ব ২
কাফাতুন নেছা কবিতা

তামিম নিজের খোলা জীপে বসে লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখতে থাকে সুবহাকে। যতক্ষণ না বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গন ত্যাগ করে তার জীপটি ততক্ষণ সে এক দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে থাকে সুবহার দিকে।
সুবহা স্টেজে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো শরীরটা থরথর করে কাঁপছে। চারপাশের হাজারো চাহনি তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। ভেতরে ভেতরে আতঙ্কের ঢেউ উঠছে এমন কেউ, যার নাম শুনেই পুরো শহর কাঁপে, যার আইন সে নিজে তৈরি করে , সে কিনা সরাসরি তাকে ‘লেডি’ বলে ঘোষণা দিলো!

ভয় আর আতঙ্কে সুবহা এক চুল পরিমান ও নড়ে না সেখান থেকে। কিছুক্ষণ পর প্রিন্সিপাল সাহেব একজন লেডি শিক্ষক দিয়ে তাড়াতাড়ি এসে তাকে নামিয়ে আনেন। সহপাঠী এবং শিক্ষকেরা কেউ কিছু বলতে সাহস করে না। শুধু চোখে চোখে সব প্রশ্ন করে।
সুবহা নির্বাক। কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসে কলেজ থেকে।
—————————সেদিন রাতে————————–
আরশি নগরের তামিমের সব চেয়ে পছন্দের জায়গা হলো পোড়া বাড়ি। খানিকটা রাজা বাদশাদের আমলের মতো। স্যাত স্যাতে দেওয়াল! শ্যাওলা ধরা, খোলা ছাদ! আর গাছে ভরপুর! একদম মনোমুগ্ধকর একটি জায়গা!
তামিম সুন্দর মতো নিজের ফোনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে!!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সেখানে চলছে সেই দিনের প্রোগ্রামের ভিডিও রেকর্ডিং। তামিম একবার পেছন দিকে ফিরে তাকায় নিজের পঞ্চ পান্ডবের দিকে। তামিম তাকানোর সাথে সাথে তারা ৫ জনই দূরে চলে আসে আর চারপাশে ভাগ হয়ে দাড়ায়!
“কালকেই মেয়ে’টার সব ডিটেইলস চাই। নাম, বয়স, পরিবার, কোথায় থাকে, কী করে, সব!”
পঞ্চ পান্ডব ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ে। কারণ তারা জানে, তামিম যখন কোনো কিছু চায়, তখন সেটা আকাশের চাঁদ হলেও এনে দিতে হয়।
তামিম হালকা হেসে আবার স্ক্রিনের দিকে তাকায়। চোখে সেই ভয়ংকর রূপবতী নারীর ছায়া।

” এ কোন মরণ খেলার ইংগিত পাচ্ছি রে!”
” খেলা? মাহির সতর্ক হয়ে প্রশ্ন করে।
“হুম। দিলের খেলা, মহব্বতের খেলা!”
তামিম তার কালো চশমা খুলে ফুঁ দিয়ে আবার পরে ফেলে!
” এই ফাঁদে পড়লে হয়ে যাবে আমার সর্বনাশ!”
কালা মানিক একটু ভাব নিয়ে বলে…..” ভাই আপনার জন্য তো কেউ ফাঁদ খুড়ে শান্তি পাবে না। দিনশেষে দেখবেন নিজেই সেই ফাঁদে পরে আছে। ”
কালা মানিকের কথা শুনে বোমা সাকিব ওর মাথায় একটি গাট্টি মারে……” তুই ও কালা তোর চিন্তা ও কালা। ভাই প্রেমেরের কথা কয়ছে”
সবাই খুব উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠে আর তামিম আবার সেই
স্ক্রিনে দৃষ্টি নিক্ষেপ বলে………..’
” welcome to my life pori!”

—————————-শিকদার বাড়ি————————
আজ বাসায় ফিরে মাকে কিছু বলতে পারেনি সুবহা! অবশ্য অন্যান্য দিন ও যে বলে এমনটা নয়। সুবহা খুবই চাপা স্বভাবের একটি মেয়ে। শান্ত, বচন ভঙ্গি সুন্দর, সবার কথা শুনে আর খুব মিষ্টি স্বভাবের। মইনুল হোসেন এবং ফাতেমা বেগমের বড় মেয়ে সুবহা।সুবহার বাবা একজন ব্রাকব্যাংকের কর্মকর্তা হওয়ায় তেমন বেশি বাবার সাথে ঘনিষ্ঠতা নেই সুবহার। কিন্তু বাবা বলতে অন্তপ্রাণ মেয়েটি। তাই বাবার মতোই ব্যাংকার হতে চায় সে। কিন্তু তার এই পড়াশোনার লক্ষ্যভেদ করে ঢুকে পরেছে আর অন্য চিন্তা।
সুবহা রাতভর বিছানায় ছটফট করে। বারবার তামিম সরকারের সেই মৃদু অথচ হুমকিময় শব্দগুলো মনে পড়ে,,
“She is my lady!”
“ওর আশেপাশে কোনো ছেলেকে দেখেছি, সে যেন নিজ দায়িত্বে নিজের কাফনের কাপড় কিনে রাখে!”
এ কথাগুলো সুবহার মনকে তছনছ করে দেয়। সে সারা রাত খুব ভয়ে কাটায়। আর অনেক উল্টো পাল্টা চিন্তা করতে থাকে।
সে জানে, এটা কোনো সাধারণ হুমকি নয়। এটা তার জীবনের শুরু হতে চলা এক অন্ধকার অধ্যায়ের ঘোষণা।
——————————-পরদিন সকাল——————–

প্রতিদিনের মতো আজকে ও ঠিক সকাল ৮:৪৫ এ কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয় সুবহা। আর তাকে নিতে এসেছে তার তিন বান্ধবী কলি, কাকলি আর মানতাসা। কলি আর কাকলি জমজ হওয়ার পর ও তাদের মুখমণ্ডলে বেশ ভিন্নতা রয়েছে। যার ফলে তাদের মধ্যে প্রায়ই কে বেশি সুন্দর এটা নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ চলে।
সুবহা এবং তার বান্ধবীরা কলেজে যাবার জন্য বের হয় আর রিক্সা খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোনো রিক্সাই পায় না তারা
এরই মধ্যে তাদের সবার সামনে একটি কালো রঙের বিএমডব্লিউ উপস্থিত হয়।
দুটো অপরিচিত লোক বেরিয়ে আসে।একজন এগিয়ে এসে বিনয়ের সাথে বলে,

” ভাবি! আপনার জন্য গাড়ি পাঠিয়েছেন তামিম ভাই।”
সুবহার মুখ শুকিয়ে যায়। হাঁটু কাঁপতে থাকে।
ভয়ে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। যদি কেউ দেখে ফেলে সেই ভয়ে।
” ভাবিসাপ উঠেন না ক্যালা?”
হঠাৎ অপরিচিত দুজন লোক সুবহাকে ভাবি আর আরেকজন ভাবিসাপ ডাকায় বেশ বিব্রত হয়ে পড়ে সুবহা,! কিন্তু সুবহা সঠিক বুঝে না, দ্বিতীয় জন তাকে কী ডাকলো? ভাবি সাব না-কি ভাবিসাপ?
সুবহা খুবই বিনয়ের সাথে বলে…..”দেখুন আমি যেতে পারবো না। আপনারা প্লিজ চলে যান!”
কালা মানিক আবার বলে উঠে…….” ভাবি আপনি যদি না আসেন ভাই কিন্তু কাম ফালাইয়া আইবো আপনারা নিতে!”

চোখ দিয়ে অঝরে পানি গড়িয়ে পড়ে সুবহার।কারণ যাকে গোটা শহর ভয় পায়, সে কেন এতো মেয়ে থাকতে তার পিছনেই লাগলো।সুবহা কোনোদিন কল্পনাও করেনি, তার জীবনে এমন ঝড় আসবে তামিম সরকার নামের। সুবহা আর কোনো কিছু চিন্তা না করে তার তিন বান্ধবীকে নিয়ে সোজা জোরে জোরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে থাকে।
——————————সরকার বাড়ি———————–
আরশি নগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিশাল ডুপ্লেক্স বাড়িটি,”’সরকার ভিলা”। যাকে সবাই সরকার বাড়ি নামেই বেশি চিনে!
সাদা মার্বেলের মতো চকচকে ফ্লোর, বিশাল লন, কাচের জানালা দিয়ে দেখা যায় শহরের ব্যস্ততা।
এই বাড়ির প্রতিটি ইটে, কাঠে, মার্বেলে মিশে আছে ক্ষমতার ঘ্রাণ।
তানভীর সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব এতটাই ব্যাপক যে, এখানে দেশের হাই প্রোফাইল লোকরা ও ঢুকতে সাহস পায় না”

, সরকার ভিলার বৈঠকখানায় চলছিলো তানভীর সরকার ও তামীমের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা!
” আমি চাইনা আপনি এই রাজনীতির জন্য কোনো বিপদে পড়েন বাবাজান! বিভিন্ন নেতাদের চোখ আপনার উপরে!”
তামিম ঠোঁটে এক চিলতে হাসি টেনে বলে,,…….
“আমার ফোন নাম্বারটা দেখলেই যেখানে তাদের প্যান্ট ভিজে যায় সেখানে নজর! আব্বাজান আমি এমপি তামিম সরকার পরে, আগে আপনার ছেলে অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী তানভির সরকারের ছেলে! আমার পিছনে লাগা সোজা না!”
তানভীর সরকার হালকা হেসে বলেন,,

এমপি তামিম সরকার পর্ব ১

” আপনি শুধু আমার ছেলে না! আমার অমূল্য সম্পদ!”
তামিম আর তানভীর সরকারের কথার মাঝেই ছোটো করে তামীমের ফোনে একটি টেক্সট আসে, যেটা দেখার পর পরই তামীমের মুখের নকশা বদলে যায়। আর সে উঠে বেরিয়ে আসতে থাকে সরকার ভিলা থেকে।

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩