এমপি তামিম সরকার পর্ব ২০
কাফাতুন নেছা কবিতা
ভালোবাসা যখন পাগলামিতে পরিনত তখন তাকে থামানো মুশকিল হয়ে যায়। দুনিয়া একদিকে আর প্রিয় মানুষকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আরেকদিকে।
তামিম সুবহার প্রতি এতোটায় দূর্বল হয়ে পড়েছিলো যে একদিন ও তাকে চোখের আড়াল করলেই তামিমের সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়। অন্য দিকে তামিমের এই পাগলামো সুবহার মনে তার প্রতি এতোটায় ভয় সৃষ্টি করেছিলো যে সুবহা তামিমের থেকে যতটা সম্ভব নিজেকে দূরে রাখতে চায়ছিলো। কিন্তু নিয়তি হয়তো তামিমের পক্ষে ছিলো। তাই সুবহা খুব করে চেয়ে ও তামিমের থেকে নিজেকে আড়াল করতে পারছে না!
তামিম আলতো করে সুবহাকে জড়িয়ে ধরে রাখে।আর আকাশ থেকে গোলাপের পাপড়ির ভারি বর্ষণ হতে থাকে। তামিমের পঞ্চপাণ্ডব উপর থেকে যে যার মতো হেলিকপ্টার দিয়ে ফুল দিতেই থাকে আর ভিডিও কলে একজন আরেকজনের সাথে কথা বলতে থাকে।
কালা মানিক :” আমি ও কাউরে জড়ায়া ধরবার চায় রে!”
সাকিব:” বিদ্যুৎতের খাম্বারে ধর গা যাইয়া।সেই ফিল পাবি!”
সাকিবের কথা শুনে সকলে হেসে উঠে।
কালা মানিক:” সাকিব্বাহ! তোরে আমি এমন জায়গায় পাঠামু, জিন্দেগীতে আর ফেরত আইতে পারবি না!”
সাকিব:” পাট ক্ষেতে পাঠাছ, লগে একটা ছেড়ি ও দিস!”
কালা মানিক :” শা*লা লুই”চ্চা!”
মাহির:” কথা বাদ দিয়া ফুল ছিটা শা’লার ভাইরা! ভাই নাহলে আমাগো চাম’ড়া ছিড়া ফালাইবো!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বেশ অনেক ক্ষণ ধরে তামিম সুবহাকে জড়িয়ে ধরে থাকে। আর পরদিকে সুবহার অস্বতির মাত্রা ও বাড়তেই থাকে। এক পর্যায়ে সুবহা নিজের চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেই এবং বেশ অনেকটা সাহস নিয়ে তামিমের সাথে কথা বলার জন্য প্রিপারেশন নেই!
” আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে তামিম!”
এই প্রথম বার সুবহা নিজ থেকে তামিমের সাথে কথা বলার জন্য বললো। বোবার মুখে বুলি ফুটেছে দেখে তামিম ও খুব খুশি হয়।
তামিম সুবহার গলা থেকে নিজের মুখ উঠায়, আর নিজ হাতে সুবহার চুল থেকে পাপড়িগুলো সরাতে সরাতে বলে!
” আমি তো চায় তুমি কথা বলো সুবহা।অনেক কথা বলো আমার সাথে। মন খুলে কথা বলো!”
” তামিম আমি….! ”
তামিম সুবহার ঠোঁটে আঙুল দেয়!
” এখানে না! তোমরা জায়গা ভিতরে, বাইরে বাইরের মানুষরা কথা বলবে। ঘরের বউ না!”
তামিমের মুখে বউ ডাক শুনে শুকনো ঢোক গিলে সুবহা। আর তৎক্ষনাৎ নিজের চোখ নামিয়ে অন্য দিকে নেই।
সুবহার চোখ নামানো দেখে তামিম বুঝে যায় তার মনের অবস্থা!
” আজ বাদে কাল বউ তো হবায়! এখন থেকেই ডেকে অভ্যাস করছি!”
—শিকদার বাড়ি—
সুবহা চলে যাওয়ার পর তার মা খুব টেনশনে পরে যায়। না জানি এবার কোন ক্ষতি করে তার মেয়ের। সুবহার হাতের দিকে তাকালে ভয়ে কলিজা কেপে উঠে সুবহার মায়ের! ফুলের মতো মেয়েটার এ-কি দষা হলো আজ।
সুবহার মার চিন্তার মাঝেই সুবহার বাবা ও বাড়ি ফিরে আসে। স্বামীকে এই অসময়ে বাড়ি ফিরতে দেখে সুবহার মায়ের কপালে কিংচিত চিন্তার ভাজ পরে।
” কী -গো! তুমি এতো তাড়াতাড়ি! ”
সুবহার বাবা সোফাতে যেয়ে বসে। আর এক গ্লাস পানি খেতে চায়!
পানি খেয়ে সুবহার মামা উনার স্ত্রীকে তার পাশে বসতে বলেন!
” আমাকে প্রোমোশন দিয়ে বড় অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সুবহার মা!”
” আলহামদুলিল্লাহ! সে তো ভালো কথা!”
সুবহার বাবা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সোফাতে গা এলিয়ে বসে।
” প্রোমোশনটা তামিম সরকারের নির্দেশে দেওয়া হয়েছে।! ”
” এ কি বলছো?”
” হুম! অফিসে ঢুকেই বুঝতে পারলাম সবার মাঝে একটা আতংক চলে এসেছে। আমার এই ২৫ বছর চাকরি জীবনে কেউ এতো ভয় নিয়ে কথা বলেনি আমার সাথে!”
” আমার মেয়েটার কী হবে গো?”
” সুবহাকে পালাতে হবে! ”
” মানে?”
” মানে খুব সোজা সুবহার মা! আমি জেনে-বুঝে এমন ভয়ংকর মানুষের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিবো না। হতে পারে সে সরকারের ছেলে। কিন্তু তার এই বেপরোয়া জীবনি, এতো মানুষের রক্ত লেগে থাকা হাতে আমি আমার মেয়েকে তুলে দিতে পারবো না!”
” বাংলাদেশ থেকে সুবহাকে বের করতে পারবে তুমি?”
” না পারলে এখানেই থাকবে। কিন্তু অন্যের ঘরনি হয়ে!”
তামিম সুবহার হাত ধরে তাকে নিয়ে সোজা ছাদে চলে যেতে থাকে। । ছাদে আসতে আসতে সুবহা লক্ষ্য করে রিসোর্টের দেওয়ালে দেওয়ালে তামিম এবং তার বাবার ছবি লাগানো। তার মানে এটা তামিমের প্রাইভেট রিসোর্ট! সরকারের ছেলের পক্ষে নিজের রিসোর্ট থাকা তেমন আহা মরি কিছু নয়।
সুবহা চারপাশটা ভালোভাবে দেখতে থাকে! যেতে যেতে সুবহার চোখ আটকে যায় উপরের দেওয়াল গুলো দেখতে দেখতে। কয়েকটা দেওয়ালে তামিমের সাথে সুবহার ছবি টাঙ্গানো। সব ছবি গুলোই তামিম যতবার সুবহার কাছে এসেছে ততবার তোলা হয়েছে।
তামিম সুবহাকে পছন্দ করতো এটা সুবহা জানে, কিন্তু সুবহার এতো এতো ছবি তামিম সংগ্রহ করে রাখতে পারে এটা সুবহার জানা ছিলো না।
তামিম সুবহাকে নিয়ে সোজা ছাদে চলে আসে। আর এক কিনারে হেলান দিয়ে দাড়ায়!
” বলো হবু বউ কী বলবা!”
” বিয়েটা.. কী….!”
” এই শুক্রবারেই হবে!”
তামিমের কথা শুনে সুবহা বুঝে যায়। তামিম তাকে এই শুক্রবারেই বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত! কিন্তু এখন বিয়েটা হলে সারা জীবনের জন্য তার পায়ে শিকল পরে যাবে।
” বিয়েটা কি কয়দিন পরে করা যায়!”
” কেন অন্য কাউকে পছন্দ? নাম বলো তাকে দুনিয়া থেকে সরি’য়ে দেই!”
” না! না! এসব কিছু নয়!আসলে….!”
” সোজাসাপ্টা বলো!”
” আমি অনেক কষ্ট করে রাত জেগে পড়েছি, আর তো মাত্র একটা মাসই বাকি পরীক্ষার জন্য! এই এক মাস কী আমাকে সময় দেওয়া যায়?”
তামিম নিজের চশমা খুলে পাঞ্জাবির হাতা উপরে উঠাতে থাকে।
” আমি যে ভালো মানুষ না এটা জানো তো?”
সুবহা কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করে ফেলে!
” তোমার বয়স যতো না, ততবেশি খু*ন করার রেকর্ড আছে আমার! আমারে ঠকানোর কথা চিন্তা ও করো না রাতপরী। ভালোবাসি বলে যে তোমাকে কিছু করবো না এটা ভেবো না!”
তামিমের এমন কাটছাট কথার উত্তরে সুবহা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারে না!
” কাছে আসো!”
তামিমের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে সুবহা!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৯
” আসতে বলছি!”
সুবহা তামিমের খুব কাছে এসে দাড়ায়! তামিম সুবহার কমরে হাত দিয়ে তাকে নিজের বুকের সাথে লেগে দাড় করায়!
” আমাকে ঠকাবা না তো রাতপরী? ”
সুবহা মাথা নেড়ে না করে!
” আচ্ছা তাহলে একটা চু’ম্মা দাও!”
” কীহ!”
” দিবা না?”
তামিমের চোখ রাঙ্গানো দেখে সুবহা রাজি হয়ে যায়। কিন্তু তামিম সুবহার থেকে বেশ লম্বা হওয়ায় কীভাবে কী করবে বুঝতে পারে না সে। তারপর নিজের পা হালকা উঁচু করে তামিমের গালে চু’মু দেয়।