এমপি তামিম সরকার পর্ব ২৪
কাফাতুন নেছা কবিতা
খুব কম সময়ই এমন যায়, যখন সরকার বাড়িতে র’ক্তের বন্যা বয়না! তামিম ঠান্ডা মস্তিষ্কে থাকে এবং তার রাগ কন্ট্রোলে থাকে!
কিছু মানুষ থাকে না? যাদের সারা জীবনটায় কেটে যায় হ্রদয়হীন, ভালোবাসা হীন, মমতহীন ভাবে! কিন্তু তারা যখন কারো মায়ায় আটকায়, তখন পুরো পৃথিবীটায় এক করে ফেলতে পারে তাকে নিজের কাছে রাখতে।
তামিমের বেলায় ও ঠিক তাই হয়েছিলো! সে জীবনের ২৮ টি বছর একজন হিংস্র মানুষ হিসেবে কাটিয়ে দিলে ও সুবহা তার জীবনে আসার পর তার পাথরের মতো মন ও গলতে শুরু করে দেয়।
তামিমকে দেখলে সবাই ভয় পায়, কিন্তু তামিম চায় এই সবার মধ্যে সুবহা যেনো না পড়ে। তামিম চায় সুবহা তাকে ভালোবাসুক! খুব ভালোবাসুক! তাকে নিজের বুকে আগলে রাখুক! তার আঁচলে বেধে রাখুক তামিমকে।
হাজারটা খু’ন করে ও যার বিন্দু মাত্র কষ্ট লাগে না, সে মানুষটি একদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলো, অনেক কষ্ট পেয়েছিলো, যেদিন সে শাড়ি পড়ার অপরাধে সুবহার গালে থাপ্প’ড় এবং আগু’ন দিয়ে তার হাতের অনেক টুকু অংশ পু’ড়িয়ে দিয়েছিলো!
তামিম কখনো কোনো মেয়ের গায়ে হাত তু’লেনি! সব সময় মেয়ে মানুষকে সম্মানের চোখে দেখেছে। কিন্তু যেদিন সে সুবহার গা’লে চড় মারে সেদিন নিজেই নিজের হাত কাঁচে বা’রি মেরে কেটে ফেলে।
তামিম তার ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে না ঠিকিই! কিন্তু সুবহার জন্য জন্য তামিম যেকোনো ভাষায় নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে ইচ্ছুক!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
——- পরেরদিন————-
ইলেকশন যত ঘনিয়ে আসছে তামিমের ব্যস্ততা ও তেমন বেড়ে যাচ্ছে! কিন্তু ৫ দিন পর সে তার শখের নারীকে নিজের করতে চলছে সেটা সব সময় তার মাথায় চলে।
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে তামিম! আজকে তাকে যেতে হবে পার্লামেন্টে। বিরোধী দলের নেতারা আজকে নতুন করে কোন ধামাচাপা দেওয়া বিষয় তুলে আনে সেটা দেখার জন্যই তামিমের সংসদে যাওয়া। কিন্তু তামিম একা নয়! সাথে তানভির সরকার ও যাচ্ছে। কারণ সামনে এমপি নির্বাচন! আর জনগণের ভোটের মাধ্যমে এমপি নির্বাচন হওয়ার পর সংসদে মন্ত্রী নির্বাচন হয়! ৩০০ আসনের মধ্যে যেই দল বেশি সংখ্যায় ভোট পায় সেই দল ক্ষমতায় আসে।এবং তারা নিজেদের মধ্যে থেকে একজনকে মন্ত্রী নির্বাচন করে। তামিম এমপি নির্বাচনে জয় লাভ করবে এটাতে শতভাগ সিউর সে। কিন্তু সংসদে এই ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৯০ টি আসনের ভোট তানভীর সরকারের দলের পক্ষে যেনো আসে এটা নিয়ে তামিমের পরিকল্পনার শেষ নেই। এর মাঝে ও তামিমের একটি খটকা লেগেই থাকে। তাদের দল ক্ষমতা অর্জন করার পর প্রধান মন্ত্রী হিসেবে তানভির সরকারের জায়গায় নিজেদের কার চালাকিতে অন্য কাউকে দিবে কি-না এটা নিয়ে ও বেশ সন্দেহ বাতিক আছে তামিমের মনে!
কিন্তু তাদের চিন্তার কোনো বিষয় নয়! যেখানে টাকা দিয়ে বাঘের চোখ পাওয়া যায়, সেখানে মাননীয় ইস্পিকার খুরশেদ আলমকে যে কেনা হয়নি সেটা বলায় বাহুল্য! সব কিছু যেন তানভীর সরকারের পক্ষে হয় সেটা নিয়েই তামিমের লীল চক্র!
প্রতিদিনের মতো আজকে ও সেম একই গেটআপে বের হয় তামিম! কিন্তু আজকে সাদা পাঞ্জাবিতে একদম যুবরাজ লাগছে তাকে!!
তামিম নিচে নেমে দেখে তানভীর সরকার তার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে নিচে!
“আসসালামু আলাইকুম আব্বাজান! শুভ সকাল! ”
” ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবাজান! ঘুম ঠিকঠাক হলো!”
।
” জ্বী আব্বা! ”
” চলেন তাহলে বের হই, নাস্তা পার্ট অফিসে করবো!”
” জ্বী ঠিক আছে আব্বা!”
তানভির সরকার এবং তামিম সরকার বের হয়ে যায় এবং তাদের পিছু থাকে হাই সিকিউরিটি জোন! গাড়িতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপে মগ্ন থাকে তানভির এবং তামিম সরকার!
————সংসদ ভবন ———-
তামিম এবং তানভীর সামনে পিছনে ডেস্কে বসে! তাদের আশেপাশে বাকি এমপি এবং বিরোধী দলের এমপিরা বসে! সকাল ১০:৩০ এ সংসদের আলোচনা শুরু হয়!
মাননীয় স্পিকার আসার পর সকলে দাড়িয়ে তাকে সম্মান প্রদান করেন, এবং ধীরে ধীরে কার্যকম শুরু হয়!
আজকের পার্লামেন্টের বিষয় ছিলো তানভীর সরকারের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ! মখলেস বসু আজকে খুব কড়া একটা মুড নিয়ে বসে। না তানভির সরকারকে আজকে হেনস্থা এবং আসন্ন প্রধান মন্ত্রী নির্বাচন থেকে সরাতেই হবে।
মখলেস বসু:” মাননীয় স্পিকার! একজন প্রধান মন্ত্রী যদি সরকারের টাকা মে’রে নিজের পকেট ভরায় তাহলে দেশে কীভাবে চলবে?”
মখলেস বসুর কথা শুনে তানভীর সরকার চুপচাপ বসে থাকলে ও তামিম খুব কড়া নজরে ঘাড় বাকিয়ে তাকায় তার দিকে!
তিনি আরো বলেন,” তানভীর সরকার গত ১৫ বছরে দেশের সাধারণ জনগণের টাকা মে’রে নিজের পকেট ভরিয়েছে,, এই সরকারের উচিত তাকে মন্ত্রীত্ব থেকে বাতিল করা! এবং আসন্ন নির্বাচনে তানভীর সরকারের দলকে বহিষ্কার করা! এমন চো’র দ্বারা কী দেশ চলে মাননীয় স্পিকার! ”
” আই অবজেক্ট মাননীয় স্পিকার! ”
তামিম দাড়ানোর সাথে সাথে মখলেস সহ বিরোধী দলের নেতারা একটু ঘামতে শুরু করে! তামিম চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে! এটা সংসদ না হয়ে যদি অন্য কোথায় হতো এতো ক্ষণে মখলেস বসুর চার টুকরো লা’শ বুড়িগঙ্গায় ভাসতো!
” প্রোসিড!”
” ধন্যবাদ, মাননীয় স্পিকার! ”
তামিম একটু বাঁকা হাসি দিয়ে মখলেস বসুর দিকে তাকায়, আর তার নোট সামনে নিয়ে বলতে শুরু করে!
” মাননীয় স্পিকার! গত ১৫ বছর ধরে আমার মন্ত্রী তানভির সরকার এই দেশ এবং দশের জন্য কী কী করেছে সেটা জনগণের জানা! এবং রাজস্ব করের প্রতিটি হিসাব উনি দিতে পারবে! কিন্তু মাননীয় স্পিকার, যিনি আসলেই চু’রি করে কানাডার বেগুন পাড়ায় নিজের কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি গড়েছে সে কী নিজের যতচু’রির হিসাব দিতে পারবে!”
তামিমের কথায় বাকি নেতারা তাদের ডেস্কে হাত দিয়ে তালি দিতে থাকে। যার অর্থ তারা তাকে সার্মথন করছে এবং একমত! অপরদিকে মখলেস বসু ঘামতে শুরু করে!
” মাননীয় স্পিকার! গত ১৫ বছর যাবত তানভির সরকার নিজের সম্পত্তির হিসাব দিতে পারবে! কিন্তু আমার বিপক্ষ বন্ধ তো তার গার্লফ্রেন্ডের হিসাবই দিতে পারবে না, সেখানে সম্পত্তির হিসাব দিবে কীভাবে? ”
তামিমের কথায় মোখলেস বসু আপত্তি প্রকাশ করলে ও তা ওভাররুল হয়ে যায়। তাকে থামিয়ে তামিমকে বলতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়!
” মাননীয় স্পিকার, বিষয়টি এমন হলো না, বউ আমার কিন্তু সংসার করছে আরেকজন! মানে নিজের লুঙ্গিতে গিট্টু না দিয়ে অন্যের লুঙ্গি সামলাতে যাচ্ছি, এদিক দিয়ে নিজের লুঙ্গি খুলে সম্মান শেষ! ”
আবারো সংসদে ডেস্কে করতালির ধ্বনিতে মতোরিত হয়!
” মাননীয় স্পিকার, যার বউ তার সামলানো উচিত! নিজের অবৈধ বউ ঘরে রেখে আরেকজনের বৈধতা নিয়ে কথা বলা আর হে*গে নিজের গু নি’জে খাওয়া একই কথা!”
মোখলেস বসু :” আই অবজেক্ট মাননীয় স্পিকার! যদি তামিম সরকার এর কোনো প্রমাণ না দেখাতে পারে তার এমপি পদ বালিক করা হোক!”
তামিম সুন্দর মতো কিছু নথি পেশ করে সকলের সামনে। যার দ্বারা এটা প্রমাণ হয়ে যায়, যে মোখলেস বসু একজন অর্থপাচার’কারী! তাই আসন্ন নির্বাচনে তার মন্ত্রীত্ব বাতিল ঘোষণা করা হয়! এবং তার সকল সম্পত্তি দুদক দ্বারা যব্দের ব্যবস্থা ও তামিম করে।
সংসদ শেষে তামিম এবং তানভীর সরকার বাকি নেতাদের সাথে পার্ট অফিসে যায়! নির্বাচনে আর ১ মাস বাকি! এর মাঝে তামিম কোনো ঝামেলা চায় না!
প্রায় সারাদিনই তামিমের কাটে ভিষণ ব্যস্ততার মাঝে! এর মাঝে তেমন কারো কোনো খোঁজ ও নেইনি সে। কিন্তু হঠাৎ তার ফোনে একটি নোটিফিকেশন আসে। যেটা দেখার পর তামিমের মাথা ৯০ ডিগ্রিতে ঘুরে যায়! তার রাগের পারদে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়!
তামিম উঠে, তার জীপ নিয়ে বেরিয়ে পরে। সাথে তার পঞ্চ পান্ডব ও যায়!
সুবহার হাত পুড়ে যাওয়ার ফলে বাসা থেকে বের হয় না সে! সারাদিনই বাসায় কাটে তার। কিন্তু বিকেল বেলা, কলি কাকলি তাকে জোড় করে বাইরে নিয়ে যায়, তার মন ভালো হবে বলে! সুবহার মা ও খুব জোর করে। মেয়েটার মন একটু হলে ও ভালো হবে।
সুবহা নরমাল চিকেন কুর্তি পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বেরিয়ে পরে বান্ধবীদের সাথে। তারা তিনজন মিলে আরশি নগরের ছোটো লেকের পাড়ে যায়! বিকেল বেলা বাতাসে গাছ পালা দুলতে থাকার দৃশ্য দেখা মনোমুগ্ধকর।
আজ অনেক দিন পর সুবহার মন ভালো হয়ে যায়! কিন্তু সেদিকে বিকেলবেলা প্রায় বখা’টে ছেলেরা আড্ডা দেয় এবং মেয়েদের টি’জ ও করে।
সুবহা এবং তার বান্ধবীরা ফুসকার দোকানে দাঁড়ায়, ওর্ডার দিয়ে সুন্দর মতো দাড়িয়ে থাকে! কিন্তু কিছু ব’খাটে ছেলেরা তাদের উদ্দেশ্য করে অনেক কমেন্ট করে। যেটা স্বাভাবিক নয়! সুবহা এবং তার বান্ধবীরা উঠে অন্য দিকে যেতে থাকে।শুধু শুধু ঝামেলার দরকার নেই।
অনেক ক্ষণ হাটার ফলে পা একটু ব্যাথা লাগে সুবহার৷ আর হাতে ও বেশ টান টান ভাব অনুভব করে!!সুবহা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকে। হঠাৎ বেখেয়ালি ভাবে হাটার জন্য সামনে কারো একজনের সাথে ধাক্কা খায় সে, তালসামলাতে না পেরে, যখনই পড়ে যেতে ন্যায় তখনই সামনে থাকা ব্যক্তিটি তার কোমর ধরে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেই।
হঠাৎ এমন হওয়া রাগান্বিত হয়ে সামনে তাকাতেই সুবহার পুরো শরীর ভয়ে ঠান্ডা হয়ে আসে!
সামনে থাকা ব্যক্তিটির চোখ অসম্ভব লাল। খুব শক্ত করে তামিম সুবহার হাত ধরে!
তামিম সুবহার হাত খুব শক্ত করে ধরে তাকে নিয়ে গাড়ির কাছে যায়! আর ধাক্কা মে’রে গাড়িতে বসায়!
খুব জোরে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত পার্টি অফিসে চলে আসে তামিম! সারা রাস্তা সুবহা খুব ভয়ে থাকে। আজকে না জানি কী হয় তার সাথে।
তামিম গাড়ি থামিয়ে সুবহাকে টেনে নিয়ে তার চেম্বারে ঢুকে। সেখানে পূর্ব হতেই তার কয়েকজন লোক ছিলো!
তামিম চেম্বারে ঢুকে সুবহাকে ধা’ক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়, এবং দরজা লক করে এক পা এক পা করে সামনে বাড়ায়!
তামিমকে এগোতে দেখে সুবহা উঠে পিছাতে থাকে।
” কার পারমিশন নিয়ে বের হয়ছিলি?”
” কাহ…..কারো… নাহ!”
তামিম সুবহার কোমর ধরে, একহাত দিয়ে টেবিকে থাকা জিনিসপত্র ফেলে দিয়ে সুবহাকে টেবিলে ফেলে তার উপরে ভর দিয়ে ঝুঁকে পড়ে। তামিম সুবহার বাহুতে খুব জোরে চাপ দিয়ে ধরে। যার ফলে পোড়া জায়গায় আবারো ব্যাথা পায় সুবহা!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ২৩
” আমার…আমার লাগছে তামিম!”
” লাগুক! তোকে যে জানে মার’তাছি না এটায় অনেক!”
” প্লিজ মাফ করে দেন!”
সুবহা খুব জোরে জোরে কেঁদে উঠে।
” আমার ডিকশিনারিতে মাফ বলতে কোনো শব্দ নাই সুবহা! দোষ করছিস, শা’স্তি পাইতে হয়বো এখন!”
তামিম নিজের পাঞ্জাবির হাতা উপরে উঠাতে থাকে।আর সুবহার ভয় বাড়তে থাকে।
