এমপি তামিম সরকার পর্ব ২৫
কাফাতুন নেছা কবিতা
তামিম নিজের পাঞ্জাবির হাতা উপরে উঠাতে থাকে আর সুবহার ভয় আরো বাড়তে থাকে!!
তামিম সুবহার মুখের কাছে নিজের মুখ আনতেই সুবহা চোখ বন্ধ করে নেই। চোখ বন্ধ করতেই সুবহার দু-চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে। তামিমের সেদিকে কোনো ধ্যান নেই! তার রাগের কাছে কোনো কিছু মেটার করে না!
তামিম সুবহার ঠোঁট ছুঁই ছুঁই সামান্য একটু গ্যাপ!
” আসতাগফিরুল্লাহ!”
তামিম হুট করে উঠে দাড়ায়, এবং সুবহার পাশে হেলান দিয়ে বসে।
তামিম উঠে দাঁড়াতেই সুবহা একটু একটু করে চোখ খুলে।
” বিয়ের আগে, এতো কাছে আসলে গুনাহ হয় সুবহা!”
সুবহা চোখ বাকিয়ে তামিমের দিকে তাকায়! একটু আগে তো তামিম নিজেই সুবহাকে জোড় করতে যাচ্ছিলো! আর এখন এমন ভাবে বলছে যেনো সুবহা নিজেই তামিমের কাছে এসেছে!
জাতে মা’তাল, তালে ঠিক লোকদের মতো ভয়াংকর লোক মনে হয় না দুনিয়াতে কেউ আছে! এরা নিজের জাত ও ঠিক রাখে আবার ভর সন্ধায় মা’তাল ও হয়!
তামিম উঠে সুবহাকে দাড় করায়! এবং তাকে নিয়ে সোফাতে বসায়! সুবহা মুখ গুমড়া করে বসে থাকে! তামিম কিছু বলার আগেই সুবহা খুব শক্ত ভাবে তামিমের দিকে।
” আপনি অনেক ভয়ংকর তামিম!”
সুবহার কথা শুনে তামিম হেসে উঠে। আর সুবহার বাহু ধরে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেই। তামিম নিজের হাতে সুবহার চোখের পানি মুছে দেয়।
” আমার ভালোবাসা এর থেকে ও ভয়ংকর সুবহা!”
তামিম সুবহার চুল ঠিক করতে করতে বলে…
” তোমার উচিত হয়নি আমার চোখে পড়া! প্রেমিকা হয়ছো তাতেই এই অবস্থা! বউ হইলে কেমন সামলাবা আমাকে?”
” আমার ইচ্ছে বিরুদ্ধেতে বিয়ে করবেন তামিম?”
সুবহার কথা তামিমের কান অব্দি যেতেই তার মস্তিষ্কের রগ গুলো আবার জেগে উঠে! কিছু ক্ষণের জন্য চুপচাপ হয়ে যায় তামিম। তার চোয়াল এতো টায় শক্ত যে যে-কোনো সময় সুবহাকে গি’লে খেতে প্রস্তুত।
তামিম উঠে চোখ বন্ধ করে উল্টো দিক ফিরে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” বাড়ি যাও সুবহা! ”
তামিম তার লোক দ্বারা সুবহাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেই। আর নিজে চেয়ারে গা এলিয়ে বসে।
বেশ অনেক ক্ষণ তামিম চুপচাপ বসে থাকে।যতক্ষণ না সুবহাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে তার লোকরা তাকে ইনফ্রম করছে!
সুবহা বাড়ি যাওয়ার সাথে সাথে তার লোকেরা তাকে জানিয়ে দেই যে সুবহা সাবধানে বাড়ি পৌঁছে গেছে।
তামিম তার চেয়ারে খুব আরাম করে বসে সি’গার ধরিয়ে ধো’য়া উড়াতে থাকে!
” মাহির……..! ”
” জ্বী ভাই!”
” —————-! ব্যবস্থা কর!”
” ওকে ভাই!”
সুবহা বাড়ি আসতেই তার মা-বাবা হাজার টি প্রশ্নের তীর ছুরে দেয় তার দিকে। সুবহা এসবে এখন অভ্যস্ত! কিন্তু মাঝে মাঝে নিজেকে নরদমার নোংরা কীটের মতো হয় সুবহার!
বাবা-মা যখন একজন সন্তানকে অন্য চোখে দেখা শুরু করে তখন তার জন্য পুরো পৃথিবীটা কালো অন্ধকারে ভেসে যায়!
সুবহা নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কান্নায় ভেঙে পরে। এভাবে কী একজন মানুষের জীবন চলে? এমন কী কেউ নেই যে তাকে এমপি তামিম সরকারের হাত থেকে রক্ষা করবে?
সুবহার পক্ষে লড়াই করা সহজ নয়! একজন এমপির বিরুদ্ধে লড়াই করলে ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করা যায়? তামিমের দু- সেকেন্ড ও লাগবে না তাকে এবং তার পরিবারকে পৃথিবীর ম্যাপ থেকে গায়েব করতে!
আজকাল সততা টাকার নোটের ভারিতে চাপা পড়ে যায়। বলা সহজ প্রতিবাদি হয়ে লড়াই করো।কিন্তু যে দেশের মন্ত্রীর হাত রাঙ্গানো, যে দেশে আপনি প্রতিবাদি হয়ে ঠিক কত দিন বাঁচবেন এটা বলায় বাহুল্য!
সুবহা তার পরিবারের কথা ভেবে মুখ বুঝে সব সহ্য করলে ও আজকে তার পরিবারের চোখেই সব থেকে বেশি দোষী সে নিজেই!
একেই বোধ হয় বলে, নিজের হাতে বি’ষ পান করে মরা!
———সরকার বাড়ি———-
” কিন্তু তামিম তো অন্য কাউকে পছন্দ করে ঝর্না!”
” কিন্তু বিয়ে তো আমাকেই করবে ফুপি!”
” তামিম আমার অবাধ্য ছেলে! ওর যাকে পছন্দ ও বিয়ে করতে পারবে! মা হিসেবে আমি জোড় করবো না! আর আমার ছেলের খুশিতে কেউ আসলে সেটা ও সহ্য করবো না!”
কথাটি বলেই আয়েশা বেগম চলে যায় রান্নাঘরে। আর ঝর্ণা বসার ঘরেই বসে থাকে।
” একটা মেয়ে পারে না এমন কোনো কাজ নেই ফুপি! তাই তামিম ভাইকে বশ করা খুব বেশি কঠিন হবে বলে মনে হয় না আমার!”
(ঝর্ণা তামিম সরকারের ফুপাতো বোন! ছোটোবেলা থেকেই তামিমের এই বেপরোয়া চলাফেরা দাপটের সাথে উঠাবসা তার পছন্দ! তাই সে মনে প্রাণে ঠিক করে ফেলেছিলো তামিমের বউ হবে। কিন্তু তামিম আশেপাশে আসতেই তার ভয় বেড়ে যেতে। কারণ তামিম কথা কম আর খু*ন বেশি করে। তাও তামিম সরকারের বউ হওয়ার লোভ সে সামলাতে পারে না! তামিম একটি মেয়েকে পছন্দ করে যেনে তার রাগের সিমা বেড়ে যায়। যে করেই হোক তামিমকে তার চায়!)
রাত ১১: ৩০! সুবহা তখন তার রুমেই ছিলো। হঠাৎ খুব বিশ্রি পোড়া গন্ধ তার নাকে ভেসে আসে। গন্ধের অস্বস্তি খুঁজতে যেতেই সুবহা নিজের বাবা-মায়ের চিৎকার শুনে নিচে দৌড়ে আসে। নিচে আসতেই আশেপাশের মানুষের আর্তনাদ তার কানে ভেসে আসে।
” আগু’ন সুবহা! জলদি বের হো!”
সুবহা তার মা-বাবা এবং ভাইয়ের সাথে হন্তদন্ত হয়ে বের হতেই চারপাশে দেখে আঁতকে উঠে।
তাদের বাড়ি ছাড়া আসেপাশের সকল বাড়িতে দাউ দাউ করে আগু’ন জ্বলছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মানুষ গুলো হঠাৎ চুপ হয়ে উল্টো দিকে তাকিয়ে থাকে।
সুবহা পিছনে তাকাতেই দেখে তামিম তার জীপের সামনে হাত ভাজ করে চোখে কালো চশমা দিয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আর আশেপাশে তার লোকরা দাড়িয়ে আছে!
সুবহা বাইরে আসা মাত্র তামিম একটি মাইক হাতে নেই!
” প্রিয় এলাকা বাসি! যদি প্রিয় থেকে পো’ড়া এলাকা বাসি না হতে চান, তো সুন্দর মতো মঈন উদ্দিন শিকদারের বড় মেয়ে সুবহা শিকদারকে বলুন নিজ ইচ্ছেতে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হতে!”
তামিম মাইক নামিয়ে সুন্দর মতো আবার হেলান দিয়ে দাড়ায়! আর সকল বাড়ির লোকরা সুবহাকে ঘেরাও করে দাড়ায়, আর কেঁদে কেঁদে তাকে আকুতি মিনতি করতে থাকে।
তামিমের এই অমানুষের রুপটি দেখে আজকে ভয় না বরং ঘৃণার সৃষ্টি হলো সুবহার মনে!
” সাকিব…..! ”
” ভাই!”
” উড়াই দে!”
তামিমের নির্দেশ মতো, সাকিব তার বানানো স্পেশাল বো’মা নিয়ে সামনে এগোতে থাকে। সাকিবকে সামনে এগিয়ে আসতে দেখে সকলের কান্নার পরিমাণ বেড়ে যায়। তারা সুবহাকে অনুরোধ করে আরো গভীর ভাবে।
এতোগুলো মানুষের বুক ফাটা আর্তনাদ দেখে সুবহা তামিমের দিকে ছুটে যায়।
সুবহাকে কাছে আসতে দেখে তামিম দু-কদম বাড়িয়ে সামনে দাড়ায়!
” আমি আপনাকে বিয়ে করতে চায় তামিম!”
” নিজ ইচ্ছেতে?”
” জ্বী! ”
” আমি কী তোমাকে জোড় করেছি?”
‘ নাহ!”
তামিম নিজের চশমা খুলে ফুঁ দিয়ে আবার পরে ফেলে!
” মুসলমানের এক কথা! নিজ ইচ্ছেতে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হইছো! পরে আবার বইলো না আমি জোড় করছি!”
তামিমের কথা শুনে সুবহার চোখের পানি গড়িয়ে পরে। এতো গুলো বাড়ি জা*লিয়ে মানুষদের কষ্ট দিয়ে, তাদের প্রানে মা’রার ভয় দেখিয়ে, নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বলানোকে কী নিজ ইচ্ছে তে রাজি হওয়া বলে?
তামিম এসে সুবহার চোখের পানি মুছে দেয়! আর হাটু পেরে বসে!
” নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করবা আমাকে?”
সুবহা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ২৪
তামিম তার পকেট থেকে একটি ডায়মন্ডের রিং বের করে সুবহার হাতে পড়িয়ে দেয়!
চারপাশে আগু’ন জ্বলছে দাউ দাউ করে আর মাঝে তামিম হাঁটু পেরে বসে সুবহাকে প্রপোজ করছে! দৃশ্যটি কোনো সিনেমার শুটিং এর থেকে কম নয়!