এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩২

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩২
কাফাতুন নেছা কবিতা

” তামিমের চয়েস আছে বলতে হবে! মেয়ে আপনার জলজ্যান্ত পরী! ”
” আমার না! আমার ভাইয়ের! ”
” ও হ্যাঁ! যেই ভাইকে টপকিয়ে এই বাড়ির লোভে সুবহার মা’কে বিয়ে করেছিলেন!”
” আস্তে বলুন! আমার এতোদিনের প্ল্যান নষ্ট হয়ে যাবে!”
” যাই বলেন, হারামি আপনি আছেন আমাদের মতো!”
সুবহা উপরে এসে খুব কান্নায় ভেঙে পরে। এখনো মায়ের চল্লিশা ও হলো না তার আগেই মেয়ের আবার বিয়ে। এক বিয়ের জন্য মা ম’রলো, আরেক বিয়ের জন্য যে আরো কত জনকে ম’রতে হবে কে জানে! কিন্তু মায়ের ইচ্ছের কথা শুনে কিছুটা আবেগি হয়ে যায় সুবহা!
যদি কোনো বাবা-মা মৃত্যুর আগে তার সন্তানদের জলন্ত আগু’নে নিজের হাত পোড়াতে বলে সন্তানরা সেটায় করবে! বাবা মায়ের থেকে দুনিয়াতে আপন যেমন কেউ হয় না! তেমনি তাদের এক একটি ইচ্ছে পালন করা ও ফরজ হয়ে যায়!

” কালকে নমিনেশন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন বাবাজান! ”
” জ্বী আব্বা! ”
” কাল তাড়াতাড়ি জমা দিয়ে আসবেন, না-হলে কী হবে বুঝতে পারছেন তো?”
” চিন্তা কয়রেন না আব্বা! এমপি নির্বাচনে আমিই জয় লাভ করবো! আর মন্ত্রী নির্বাচনে আপনি! ”
” পরিস্থিতি কেমন খামখেয়ালি লাগছে আমার কাছে বাবাজান! কিছু তো একটা হতে যাচ্ছে! হঠাৎ করে বিরোধী দল এতো চুপচাপ হয়ে গেলো।”
” তা তো হয়ছে আব্বা! ”
” মানে?”
” আপনার কী মনে হয়? সুবহার আকাশের সাথে বিয়ে হতে যাওয়া, বিয়ে না হয়ে সুবহার মুখ বন্ধ রাখা, ওর মায়ের অকাল মৃত্যু এসব কী এমনি এমনি হয়তাছে?”
তামিমের কথা শুনে তানভির সরকার এবার একটু নড়েচড়ে বসে! আসলেই তো! একদিনের ব্যবধানে এতো কিছু হয়ে গেলো কীভাবে!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” সুবহার বিয়ে হয়নি?”
” না আব্বা! ”
” তুমি কখন জানলে এটা?”
” ওর মায়ের জানাজা শেষেই আব্বাজান!”
তামিম উঠে দাড়ায়! আর নিজের ফোন থেকে কিছু একটা বের করে তানভীর সরকারকে দেখায়!
” একটা রিকুয়েষ্ট করলে রাখবেন বাবাজান? ”
তামিম তানভির সরকারের হাঁটুর কাছে এসে মেঝেতে বসে।
” আপনি হইলেন আমার জন্মদাতা! আপনি হুকুম করেন, রিকুয়েষ্ট অনেক লজ্জা লাগলো শুনে।!”
” সুবহা মা-কে আপনার বউ হিসেবে দেখতে চায়! মরার আগ অব্দি তার হাত ছাড়বেন না!”
তামিম মাথা নিচু করে ফেলে!
” সত্যি বলতে আব্বা, আমার লজ্জা লাগতাছে আপনার কথা শুনে! আপনি আব্বা মানুষ! ছেলের প্রেমিকাকে নিয়ে বলছেন, আসলেই লজ্জা পেলাম!”
তামিমের কথা শুনে তানভির সরকার এবার শব্দ করেই হেসে ফেলে!তানভির সরকারের হাসি দেখে তামিম ও খুব খুশি হই!।।।

” আপনি জানেন আপনার আম্মা আর আমার বিয়ে কীভাবে হয়েছিলো?”
” তিন কবুল বলে!”
” হ্যাঁ! কিন্তু জোড় করে। আপনার আম্মা আমাকে ঘাস ও ঢালতো না আগে। তাকে তুলে নিয়ে নির্বাচন কাউন্সিলর অফিসে বিয়ে করতে হয়েছিলো আমার!”
” আব্বা আমি উঠাতাছি! আমার এখন আসলেই লজ্জা লাগতাছে!”
তামিম উঠে তাড়াতাড়ি বাইরের দিকে পা বাড়ায়!
” বাবাজান! ”
তানভির সরকারের ডাকে তামিম থমকে দাড়ায়!

” আমি কিন্তু আমার ভালোবাসার মানুষের সাথেই ঘর করছি! তার হাত ছাড়িনি, আশা করি আপনি ও ছাড়বেন না!”
তামিম পিছনে না ফিরেই দ্রুত পায়ে বাইরে চলে যায়! নিজের মা-বাবার প্রেমের কথা শুনতে ও লজ্জা লাগে তামিমের! কিন্তু এটা সত্যি যে তানভির সরকার আর আয়েশা সরকারের প্রেম সিনেমাকে ও হার মানাবে! তামিম ছোটোবেলা থেকেই দেখে আসছে, তানভির সরকার নিজের স্ত্রীর জন্য কতোটা পাগল। বয়স হয়ে গেলে ও আয়েশা সরকারের সাথে মাঝে মাঝেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন রাত বরাতে। এখনো ও মনে হয় তানভির, আয়েশা যুবক যুবতী! তাদের ভালোবাসার মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি এখনো!!

” তামিমকে জানালে আমাদের আঞ্জুমান মুফাফসলের টিকিট ধরিয়ে দেবে!”
” কিন্তু ওকে জানাতেই হবেই।”
” আপনার মাথায় আসলে কী চলছে সালাউদ্দিন ভাই!”
” খেলা! ভয়ংকর খেলা! “।।।
কামাল হোসেন, মঈনুল উদ্দিন, সুবহার বাবা এবং উপস্থিত তিন জনই একজন আরেকজনের দিকে তাকায়! ।।
” ওর চা-পাতির নিচে কা’টা পড়বো আমরা সবাই!”
” তার আগেই নিউজ বের হবে। সঠিক সময়ে নমিনেশন পত্র জমা না দেওয়াতে নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়লো তামিম সরকার! ”
” মানে?”

” আকাশকে দিয়ে সুবহার বিয়ে ঠিক করার কারণ ছিলো,তামিমকে ম্যান্টালি ডিস্ট্রেক্ট করা! কিন্তু হলো না! শা*লা তার আগেই উপস্থিত হলো! কিন্তু কালকে নমিনেশন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন, তাই বিয়েটা কালকেই হবে! তামিম বিয়ে ভাঙ্গাতে আসবে! আর ওদিকে আজমল শেখ নমিনেশন পত্র জমা দিবে। ব্যাস! জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান মন্ত্রী হওয়া থেকে শওকত হোসেনকে কেউ আটকাতে পারবে না! না থাকবে তামিম! আর না থাকবে তার ভয়! তার আগেই সবাইকে হাত করে নিবো। মাঝ খান থেকে শুধু বুড়িটা গেলে!
তানভির সরকারকে আটকাতে তামিমকে আটকানো জরুরি! আর একবার সুবহার সাথে আমার সব হয়ে গেলে, তামিম নিজেই নিজেকে শেষ করে দিবে! আরশি নগরে রাজত্ব পাবো আমি! গত ১৫ বছরের হিসাব চুকিয়ে ছাড়বো!”
” তাহলে কালকেই সব করা যাক?”

” শুরু করেন! মাঝ খান দিয়ে বলির পাঠা হলো এই মা মেয়ে!”
” কিন্তু সৌরভের যদি ঙ্গান ফিরে? সুবহাকে যদি সত্যিটা বলে দেই?”
” তার আগেই ওর খেল খতম করে দিন! না-কি ছেলের জন্য কষ্ট হচ্ছে? ”
” নিজের ছেলে হলে লাগতো! ”
” মানে কী এটা ও আপনার রক্ত না! মিয়া আপনার তো পেটে পেটে শয়তানী!”
” সুবহা, সৌরভ আমার বড় ভাই, সাহেবের ছেলে মেয়ে। সুবহার তিন বছর আর সৌরভের ৬ মাস বয়সে ওদের বাবা মা’রা যায়!”
” মা’রা যায় না-কি? ”
” মা’রতে হয়েছিলো! এই বাড়ি সুবহার বাবার ইনকাম করা টাকা সবই আমার হবে! তামিম সুবহার জীবনে না আসলে আমি সারাজীবন ভদ্রলোকের মুখোশ পরে কাটিয়ে দিতাম! কিন্তু যেখানে ও সুবহার জন্ম থেকে এই অব্দি সকল ডিটেইলস বের করছিলো, কোনো না কোনোদিন আমার অপরাধ ও বের হতো!”
” বহুত হা’রামি আছেন আপনি! ”

———- পরেরদিন ————-
” মায়ের মৃত্যুর এখনো ৪০ দিন ও হলো না আব্বু! তার আগেই বিয়ে?”
” কিছু মানুষ ম’রার পর অনেক আশায় থাকে, তাদের স্বপ্ন কীভাবে পূর্ন হবে! আমরা যদি করি তাহলে তাদের আত্মা শান্তি পাই! তুই সমাজ, দুনিয়ার কথা ভুলে যা! ”
” আপনার কষ্ট হচ্ছে না আব্বু? মা নেই, ভাই নেই, এখন আমি ও চলে যাচ্ছি! ”
” পৃথিবীর নিয়ম এটাই মা! কেউ কারো জন্য থেমে থাকে না! তুই রেডি হয়ে নে!”
সুবহার বাবা চলে যায় তাকে রেডি হতে বলে! সুবহা ও চুপচাপ বসে থাকে।
” ম্যম আপনার হাতে এটা কীসের ব্যান্ডিজ?”‘
বিউটিশীয়ানদের কথা শুনে সুবহা নিজের হাতের দিকে তাকায়! সাথে সাথে তার মেমোরিতে দু-দিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে।
” তামিমের কথা তো ভুলেই গেছিলাম!”
” সরি ম্যাম বুঝতে পারিনি!”
” কিছু না! ”

মায়ের মৃত্যুর শোকে সুবহা এটা ভুলেই গেছিলো যে তামিমের নামের কেউ একজন তার জীবনে আছে। মোটামুটি ভয় সুবহা পেয়ে যায়! কবুল না বলাতে গু*লি খেয়েছিলো দুটো, বলাতে যে কয়টা খেতে হবে!
সুবহা ও মন শক্ত করে বসে থাকে! এমন ভয় নিয়ে বেঁচে থাকা জীবন তার ও ভালো লাগছে না! এর থেকে তামিমের হাতে ম’রাই ভালো! বিয়ে বিয়ে খেলাতে হাঁপিয়ে উঠেছে সে।
কোনো আয়োজন, বা তেমন কোনো কিছুই করা হয়নি যেটা সাধারণ বিয়ে গুলোতে হয়! কোনো আনন্দ বা রঙ্গের ছোয়া নেই এখানে! কেবল একটি বিষাদ ময় পরিবেশ!
মোট ১৭ থেকে কাজী সহ ১৮ জন আসে সুবহাদের বাড়িতে! সুবহাকে ও নিচে নামানো হয়!
সবে মাত্র কাজী রেজিস্ট্রার খুলে সব লিখতে শুরু করে। যে যার মতো বসে পড়ে ঠিক তখনই খুব জোড়ে জোড়ে গান বেজে উঠে!

” আজই আমার গার্লফ্রেন্ডের বিয়া….!”
মোটামুটি সবাই একটু বিরক্ত হয়! কারণ না ছিলো বিয়ের কোনো আয়োজন আর না ছিলো কোনো মিউজিক সিস্টেমের ব্যবস্থা! তাহলে কোথায় থেকে আওয়াজ আসছে! ধীরে ধীরে আওয়াজটি জোড়ালো হতে থাকে।
কয়েকজন লোক মিউজিক সিস্টেম নিয়ে সুবহাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। আর চারপাশে দাড়িয়ে পড়ে। তার কিছু ক্ষণ পরই জোড়ে জোড়ে গাড়ির ব্রেকের সাউন্ড পাওয়া যায়! যেমনটা কার রেসিং প্রতিযোগিতায় হয়!
তার মধ্যেই দ্রুত পায়ের শব্দ ও স্পষ্ট হয়! সকলে দরজার দিকে তাকালে ও সুবহা চোখ বন্ধ করে ফেলে। কারণ সুবহা জানে কার আগমন হতে চলছে। এই কয়েকদিনে তামিমের ছায়ার সাথে ও সুবহা পরিচিত হয়ে গেছে!
” মা ম’রার এখনো দুই দিন ও হলো না তার মধ্যে আবার ও বিয়ে করতে বসলি!”
হাতে রিভ’লবার নিয়ে তামিম এবং তার পঞ্চ পান্ডব সাথে আরো কিছু বডি গার্ডরা দ্রুত পায়ে ভেতরে চলে আসে।
সকলে ভয়ে দাড়িয়ে গেলেও সালাউদ্দিন হকের মুখে ছিলো অন্য রকম হাসি যেন সে এটায় চেয়েছিলো!

” জামাই চলে এসেছে সাইটে দাড়ান!”
তামিম এসে সোজা কাজীর সাইট কাটিয়ে সুবহার সামনে দাড়িয়ে পড়ে।
” বাহ রে রাত পরী! কী লীলা খেলা তোর! বিয়ে করার এতো শখ তোর ৪০ দিন তো অপেক্ষা করতি! সেদিন যদি কসম না কাটতাম থা’প্পড়িয়ে তোর চাপার দাঁত ভেঙে ফেলতাম!”
” গু’ লি করতে বাঁধেনি, থাপ্প’ড় দিতে বাঁধলো কেন!”
” বাহ! বোবার মুখে বলি ফুটেছে দেখি! এতোদিন তো জ্বী জ্বী আর স্টার জলসার নায়িকাদের মতো কাঁপা-কাঁপি ছাড়া তেমন কিছুই দেখলাম না বা*ল! বিয়ের খুশিতে মুখে খই ফুটেছে দেখি!”
সুবহা তামিমকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার লোকরা সৌরভকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে ভেতরে নিয়ে আসে। সুবহা তার ভাইয়ের কাছে যাওয়ার আগেই তামিম তাট হাত ধরে ফেলে। আর রিভলবারটি সৌর’ভের দিকে নিশানা করে।

” চা’লাই দেই! কী বলিস?”
” তামিম, প্লিজ!”
” আমার অবর্তমানে আরেক জনকে কবুল বলতে গেছিলি! তোর লিলা খেলার শেষ নাইরে সুবহা!”
তামিম সুন্দর মতো সোফাতে বসে পরে। আর সুবহার হাত টান দিয়ে তাকে ও সোফাতে বসায়!
” আরে আয় বিয়ে করবি না!”
তারপর কাজীর দিকে রি’ভলবার পয়েন্ট করে!
” এই কাজী বিয়ে পড়াবো শুরু কর! তামিম সরকারের সাথে সুবহা শিকদারের বিয়ে! ”
তামিম সোফাতে গা এলিয়ে দিয়ে সুবহার দিকে তাকায়! পা থেকে মাথা অব্দি খুব কড়া নজরে তাকিয়ে দেখে! তামিমের এমন তাকানো দেখে সুবহা খুবই বিরক্ত হয়!

” বাবা কাবিন?”
” এক টাকা লেখেন”
” ভাই এক টাকা?”
” হুম! বউ টিকিয়ে রাখার জন্য, কোটি কোটি টাকা বা কিডনি, লিভার, রীতপিন্ড কাবিনে লেখার দরকার নাই! আমি এমনিতে ও ওরে ছাড়বো না!”
কাজী চুপচাপ দেননোহরের জায়গায় এক টাকা লিখে ফেলে আর সুবহাকে কবুল বলতে বলে! কিন্তু সুবহা চুপচাপ বসে থাকে। আর প্রচন্ড ঘামতে থাকে। তামিম বেশ বিরক্ত হয়!
” চল কবুল বল! তাড়াতাড়ি,, সারাদিন নাই আমার হাতে!”
তামিমের ধমক খেয়ে একটু সময় নিয়ে সুবহা কবুল বলে ফেলে!
আর সাথে সাথে তামিমের পঞ্চ পান্ডব আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে জোড়ে জোড়ে।
তারপর তামিম ও কবুল বলে! তখন ও তাদের উল্লাসের শেষ নাই!
কাজী রেজিস্ট্রার সামনে দেই! তামিম সেটা নিয়ে সুবহার সামনে ধরে৷

” চল সাইন কর!”
সুবহা একবার তার বাবার দিকে তাকায়, একবার তাকায় তার ভাইয়ের দিকে! সুবহার বাবা চেয়ে ও কিছু বলতে পারছে না! চোখের সামনে নিজের সাজানো প্ল্যান মাটি হতে দেখে রাগে কটমট করে সে।
” তাড়াতাড়ি! ”
সুবহা কাঁপা কাপা হাতে সাইন করে দেই! তারপর তামিম ও সাইন করে দেই।
” বিয়ে শেষ, খোদা হাফেজ! ”
তামিম সুবহার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
” সুবহা…! ‘”
” বাবা!”
তামিম দাড়িয়ে সুবহার বাবার দিকে তাকায়!

” আরে আমার হা’রামি শশুর যে। আফসোস আমার মতো জাত হা’রামি লোকের পাল্লায় পড়লেন!”
তামিম সুবহার দিকে তাকিয়ে আফসোস করে।
” হাইরে সুবহা! হুদাই এতো কানতাছোস! নিজের মায়ের খু’নির জন্য ও কেউ কান্দে না-কি? ”
তামিমের কথা শুনে সুবহা চোখ বড় বড় করে ফেলে!
” জানতাম বিশ্বাস হইবো না তোর! স্বচক্ষে প্রমাণ দেখবি! না-হলে তো ভাববি সব তোর জামাইয়ের জাওরা’মি!”
” ওর কথা বিশ্বাস করিস না সুবহা! ও মিথ্যা বলছে!”
“নিজের দোষ ঢাকতে আমার আব্বুকে কেন দোষী সাজাচ্ছেন? ”
” হে খোদা উঠাইয়া নাও! না-হলে দড়ি পাঠাও, আমি আইতাছি!”
তামিম নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে আর সুবহার সামনে ধরে!

—-দুই দিন আগে.———–
সুবহার মায়ের ঙ্গান ফিরে আসার সাথে সাথে তিনি হুল্লোড় শুরু করে দেন!
” আপনারা কেউ আমার মেয়েকে বাঁচালেন না কেন? ওর তো বিয়ে হয়নি! সুবহার বাবা তুমি কেন চুপ ছিলে। ”
সুবহার মা সুবহার বাবার কাছে যেতেই মাটিতে পড়ে থাকা নিজের রক্তাক্ত ছেলেকে দেখতে পায়! আর তার কাছে যায়! সকলের কাছে খুব রিকুয়েষ্ট করে তার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য! কিন্তু কেউ এগিয়ে আসে না! এমনকি সুবহার বাবা ও না!
ঠিক তখনই কাজী বেশ ধরে বসে থাকা সালাউদ্দিন হক উঠে আসে। আর সুবহার বাবার সামনে দাড়ায়!
” এই বুড়ি বেঁচে থাকলে আমরা ফাঁসবো! ”
কাজীর তাগড়া কন্ঠস্বর কানে আসতেই সুবহার মা পিছনে ফিরে তাকায়! কাজীর বেশে সালাউদ্দিন হককে দেখে খুব ভয় পেয়ে যায়!

” আপনি…”
” জ্বী! আমি! সালমান হকের ছেলে। ”
সুবহার মা সুবহার বাবার কাছে যায়!
” এসব কী হচ্ছে সুবহার বাবা?”
” যা হবার তাই হচ্ছে! ”
” তার মানে তুমি ইচ্ছে করে সুবহার সাথে এমন করলে। ”
সুবহার বাবা এমন সালাউদ্দীন হক উচ্চস্বরে হাসতে থাকে! ।।
” আমি এখনই তামিমকে বলে দিবো! ও আমার মেয়েকে বাঁচাবে!”
নিচ থেকে সৌরভ তার হাত উপরে উঠিয়ে আধো আধো স্বরে মা বলে ডাকে।
সুবহার মা নিজের ছেলের কাছে যেতেই খুব জোড়ে রড দিয়ে তার মাথায় বা’রি দেওয়া হয়! মাথায় হাত দিয়ে সুবহার মা পিছনে ফিরে তাকায়!
” সুবহার বাবা…! ”
মাটিতে টলিয়ে পড়ে সুবহার মা!”
তারপর আরো তিন-চারটে বা’রি মা’রা হয় সুবহার মায়ের মাথায়! যতক্ষণ না মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়!

———বর্তমান ————–
তামিমের ফোনে পুরো সিসিটিভির ফুটেজ দেখে মাথা ঘুরে উঠে সুবহার! না সেখানে কোনো আওয়াজ বা তেমন কোনো স্পষ্ট কথা ভেসে উঠেনি! শুধু সুবহার মায়ের দৌড়াদৌড়ি আর তার সাথে ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনার ফুটে উঠে!
কতোটা নীরদয় ভাবে মা’রা হয় সুবহার মা’কে। তাও নিজের সারা জীবনের সঙ্গী দ্বারা!
সুবহার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যেতে নেই সুবহা! ঠিক তখনই তামিম সুবহাকে ধরে ফেলে!
” কষ্ট পাস না রাত পরী! এখন থেকে আমিই তোর অভিভাবক! ”
তামিম সুবহাকে কোলে তুলে সামনে যেতে থাকে।
” কয়টা বাজে তামিম!”
সালাউদ্দিনের কথা শুনে তামিম শয়তানি হাসি দিয়ে তাকায় তার দিকে।

” তোর জন্য তো ১২ টায় বাজে! ”
” হুমমমম! আহারে তামিম! প্রেমিকার বিয়ে আটকাতে এসে। নমিনেশন পত্র জমা দিতে ভুলে গেলি!”
তামিম এবং তার পঞ্চ পান্ডব উচ্চ স্বরে হেসে উঠে।
” আরে বলদা রে। তোর কী তামিম সরকারকে বলদ মনে হয় যে, তোর প্ল্যান বুঝবে না! নমিনেশন আমার প্রথম দিনই জমা দেওয়া শেষ। কিন্তু প্রকাশ করতে বারণ করি! তোর মতো কু’ত্তা কী করে সেটা তো দেখার একটু শখ আমার ও আছে!”
সালাউদ্দিন হক তামিমের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ে। মানে এতো কিছু । এতো বুদ্ধি সব বৃথা!
” কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী থাকবে। তামিমের হবু বউকে কেউ বিয়ে করতে চাইলো আর সে তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো!”
” আমারে দেখলে কী আজকে জন্ম নিছি মনে হয়? তোর মতো নেড়ি কু’ত্তার সাথে নির্বাচনের আগে খু’নাখু’নি করে আমার আব্বার পরাজয় নিশ্চিত করবো? এতো কাঁচা খেলোয়াড় তামিম না! তামিমের গোল্ডেন চাপা’তিতে তোদের নাম উঠে গেছে, দেখি কোনদিন পরপারের টিকিট ধরিয়ে দেই! ”
তামিম সুন্দর মতো সুবহাকে নিয়ে যেতে থাকে। আর পুলিশ এসে উপস্থিত তিনজনকে গ্রেফতার করে।

তামিম সুবহাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। উদ্দেশ্য সরকার বাড়ি! সারারাস্তা সুবহা চুপচাপ থাকে। একটি টু-শব্দ ও করে না! এতো বড় ধাক্কা সামলাতে হয়তো অনেকটা সময় লাগবে তার! তামিম চুপচাপ সুবহাকে ধরে বসে থাকে।
২৩ মিনিটের মধ্যে তামিম সুবহাকে নিয়ে সরকার বাড়িতে প্রবেশ করে। সেখানে প্রায় সকলেই উপস্থিত ছিলো!।
তামিম সুবহাকে নিয়ে নামতেই ব্যান্ড-পাটি বেজে উঠে!
” আমার আব্বা আমার থেকে ও এডভান্স! ”
তামিম সুবহাকে কোলে নিয়ে সদর দরজায় দাড়ায়!
” আজকে আবার কী হয়ছে বাপ?”
” জানেনই তো আম্মা! ”
” আজকে ও হার্ট অ্যাটাক করছে!”
তামিম মাথা নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি দেই।
” ভেতরে আসেন বাবাজান! ”
” জ্বী আব্বা! ”

তামিম সুবহাকে নিয়ে ভেতরে এসে সোজা সোফাতে বসায়!
” আব্বা জান! আজকে কিন্তু বিয়ে করেই বউ আনছি!”
” আলহামদুলিল্লাহ! ”
আয়েশা সরকার এসে সুবহাকে উপরে নিয়ে যায়! এমনিতেই দু-দিন আগে গু’লি খেয়েছে! আজকে এতো কিছু! এতো চাপ সুবহার শরীর নিতে পারে না! সে চুপচাপ আয়েশা সরকারের সাথে উপরে চলে যায়!
উপরে এসে সুবহা দেখতে পায় তামিমের ঘরটি! আধুনিক ধাচের তৈরি! পুরো ঘরটি ফুল দিয়ে সাজানো! যে কেউ দেখলে বলবে আজকে নতুন দম্পতির রাত! পরক্ষণেই সুবহা দেখতে পায় তার একটি ছবি তামিমের রুমে।
” আমার ছেলে, তোমার জন্য আগে থেকেই সব আনিয়ে রেখেছে। আশা করি কিছুর কমতি পড়বে না! পড়লে বলো কেমন?”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩১

সুবহা মাথা নেড়ে হ্যা বলে।
“আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও! আমি তামিমকে পাঠাচ্ছি! ”
সুবহাকে রুমে রেখে চলে যায় আয়েশা সরকার! তামিম তখন ও বাবার সাথেই নিচে।
” তামিম উপরে যেয়ে দেখ তো বাপ! সুবহার কিছু লাগে কী-না! ”
তামিম মনে মনে খুব খুশি হয়! ঠিক এই সময়টার জন্যই এতোদিন ধরে অপেক্ষা করছিলো তামিম!
” জ্বী আম্মা! ”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩৩