এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫
কাফাতুন নেছা কবিতা

আরশি নগরের বাতাসে বাতাসে নির্বাচনের হাওয়া প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথে এখন তামিম সরকারের প্রেমের হওয়াটা ও খুব জোড়েই বয়ছে। কিন্তু সকলের আফসোসের বিষয় হলো তামীম সরকারের মতো নির্দয় লোকের পাল্লায় পড়লো কে? এতোটা হতোভাগা কে আছে এই আরশি নগরে।
——–সরকার বাড়ি———-

নেতাদের সাথে তানভীর সরকারের কথোপকথনের মাঝেই তামীম সরকার নিচে নেমে আসে। আর তাকে নামতে দেখে উপস্থিত নেতাদের ঘাম ছুটতে থাকে।
” আপনারা বসুন!”
তানভীর সরকারের কথা মতো সবাই বসে। কিন্তু মনে ভয় রয়েই গেছে। তামিম আসবে আর কিছু করবে না এটা ভাবা মূর্খতা।
” আব্বাজান! চোখটা দুই মিনিটের জন্য বন্ধ করেন!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তামিমের কথা মতো তানভীর সরকার চোখ বন্ধ করে নেই। কারণ তিনি ভালোমতোই জানেন এখন এখানে কী হতে যাচ্ছে। চোখের সাথে সাথে যদি কানটা ও বন্ধ করতে পারতেন তাহলে হয়তো তানভীর সরকার একটু স্বস্তি পেতেন।
কিছু ক্ষণ পর তানভীর সরকার চোখ খুলে। আর বড় বড় চোখ মেলে তাকায় সামনে চাপা’তি হাতে দাড়িয়ে থাকা র’ক্তে চুপসে পরা তামিমের দিকে। তামিমের পুরো শরীর তা’জা রক্তে ভরা। পরক্ষণেই তানভীর সরকারের কানে গোঁড়ানো আওয়াজ আসে। তিনি নিচে তাকায়। আর শুকনো ঢোক গিলে।
খালেদা রশিদ নিজের কা’টা গলা নিয়ে এখন ও নিচে চাতক পাখির মতো গঙরাচ্ছে। একটু যদি বাঁচতে পারে সে। তামিম তার হাতে থাকা সিগা’রটি শেষ করে এক কো’পে খালেদ রশিদের মাথা আ’লাদা করে দেয়।
বাকি নেতারা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। তামিম তাদের সামনে এসে দাড়ায়। তামিম দাড়ানো মাত্র কয়জনের পেন্ট ভিজে যায় ভয়ে।

” আমার আব্বা হয়তাছে আমার জান! যেই মাথা দিয়ে আমার আব্বাজানকে মা’রার পরিকল্পনা করছিলো সেই মাথা আলাদা হওয়া দরকার ছিলো। ”
নেতারা তামিমের কথা শুনে আর নিচে পড়ে থাকা বাকি ৭ জন নেতার মর্মান্তিক মৃ’ত্যুর দৃশ্য দেখে শুকনো ঢোক গিলে।
” আমার আব্বার দিকে যেই চোখ দিয়ে তাকাইবো তার চোখ খুলে আমি মারবেল খেলবো!”
তামিম নেতাদের ওয়ার্নিং দিয়ে সরকার বাড়ির মুল ফটকে চলে যায়। আর সামনে বসে পড়েন। আর তানভীর সরকার এক বালটি দুধ তামীমের শরীরে ঢেলে দেয়। এটা প্রথম বার নয় যে এমন করছে তানভীর সরকার। তামীম যতবার বাড়িতে র’ক্তের বন্যা বহায়, ততবার তানভীর সরকার তাকে দুধ দিয়ে গোসল করায়।
এরপর তামিম সোজা চলে যায় তার রুমে, আর তানভীর সরকার অন্দরমহলে।

” আইয়ুব!”
” জ্বি কর্তা!”
” লা’শগুলো কে সরা আর বাড়িটা পরিষ্কার কর। আমার তামিম নিচে নামতে নামতে যেনো সব পরিষ্কার হয়ে যায়!”
“আগ্গে কর্তা”!
———-বিকেলবেলা———–

তানভীর সরকার আর অন্যনেতারা সরকার বাড়িতে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। সকালে তামিমের করা কান্ডে এখন ও সবার চোখে মুখে ভয় লেগে আছে। ঠিক তখনই তামিমের রুমের দরজা লক খোলার শব্দ হয়। খুব সুন্দর করে রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে তামিম।তামিম বরাবরই একই রকমের স্টাইল ফলো করে।
হয় পাঞ্জাবি না হয় আঁটসাঁট কালো শার্ট আর স্লিম-ফিট প্যান্ট। যেন প্রতিটি সেলাইয়ে গাঁথায় আছে দাপটের ঘোষণা। এক হাতে ফোন, অন্য হাত পকেটে; চোখে কঠোরতা আর মুখে দুর্নিবার দাপট। হাতে মোটা সর্নের ব্রেসলাইট! আর চোখে চিরো চেনা সেই কালো সানগ্লাস। তামিমকে নামতে দেখে
চারপাশের মানুষগুলো নিঃশব্দে সরে দাঁড়ায়, যেন হাওয়া থেমে যায় তার এক পা ফেলার শব্দে। তামিম নামতে নামতে বলে…..।
“ক্ষমতা মানে চেয়ারে বসে থাকা না… ক্ষমতা মানে আমি হাঁটলে রাজপথ নিজে থেকে ফাঁকা হয়ে যাওয়া।”
কথাটি বলতে বলতে তামিম চলে যায়। আর নেতারা ওইভাবেই তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে

সারা সকাল দুপুর খুব ভয়ে কাটে সুবহার। এখন কীভাবে সে বাড়ি থেকে বের হবে। কারণ সুবহা সচারাচর বাড়ি থেকে বের হয় না কলেজ ছাড়া। আর কীভাবেই বা তামিম সরকারের মুখোমুখি হবে এটা ভেবেই সুবহার কপালে চিন্তার ভাজ পরে। আরশি নগরে বড় হওয়ার পাশাপাশি তামিম সরকারের ভয় তার মনে ও ছিলো। যাকে পুরো শহরের মানুষ যমের মতো ভয় পায় তার সাথে কীভাবে সে দেখা করবে। আর কীভাবেই বা তার মুখোমুখি হবে।
সুবহার চিন্তার মাঝেই গাড়ির হর্নের আওয়াজ তার কানে আসে। সে সাথে সাথে বেলকনিতে যেয়ে দাড়ায়। নিচে তাকানো মাত্র তার ভয় আরো বেড়ে যায়। তামিমের দু-জন লোক গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে তাকে নেওয়ার জন্য। কিন্তু সুবহা কীভাবে তার মা-কে বলে বের হবে এটায় খুঁজে পায় না।
সুবহার চিন্তার মাঝেই তার মা তাকে ডাকতে আসে উপরে। মা-কে উপরে আসতে দেখে সুবহার ভয় আরো বেড়ে যায়। তাহলে কী সব জেনে গেলো তার মা?

” সুবহা!”
” জ্বী মা!
” তোর বান্ধবী কাকলি এসেছে তোকে নিতে। তোদের কোচিং এ যে বিকালে টেস্ট পরীক্ষা আছে বলিস নি তো!”
মায়ের কথা শুনে বেশ হতভম্ব হয়ে যায় সুবহা। তার জানা মতে এমন কিছুই তো আজকে নেই। তাহলে?
” কীরে? যাবি তো না-কি? ”
” জ্বী আম্মু!”
সুবহা তার মায়ের সাথে নিচে মেনে আসে। সুবহা আসার সাথে সাথে কাকলি তার হাত ধরে নিয়ে যায়।
” আন্টি আসি তাহলে আমরা!”
” আচ্ছা মা! সাবধানে যেয়ো তোমরা!”
কাকলি সুবহাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হয়।
” সুবহা! তামিম স্যার তোকে যেতে বলেছে! তুই যা আমি আসছি!”

কাকলির কথা শুনে সুবহার ভয় আরো বেড়ে যায়। তারমানে এসব তামিমের কারসাজি।
সুবহা বের হওয়ার সাথে সাথে তামিমের লোক গাড়ির দরজা খুলে দেয়।
” ভাবিসাপ এতো লেট ক্যালা! ভাই অনেক ক্ষন ধয়রা অপেক্ষা করতাছে কয়লাম!”
সুবহা কোনো কথা বলে না। এদিক ওদিক ভালো মতো দেখে তাড়িতে উঠে পড়ে। আর মনে মনে অনেক দোয়া পরতে থাকে যেনো তামিমের সাথে তার দেখা না হয়। গাড়ি তার গতি যত দূর বাড়াচ্ছিলো সুবহার হৃদ স্পন্দন তত বেড়ে যাচ্ছিলো।

বেশ অনেকটা পথ যাওয়ার পর গাড়ি আরশি নগরের জঙ্গলে পোড়া বাড়ির সামনে থামে। সুবহার গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে একজন লোক এসে তার গাড়ির দরজা খুলে দেয়। সুবহা ভয়ে ভয়ে নেমে পরে। নেমে দেখে বেশ অনেক জন লোক মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। সুবহাকে একজন পথ দেখিয়ে তার সাথে যাওয়ার জন্য বলে। সুবহা সেই লোককে অনুসরণ করে সামনে এগোতে থাকে।
তামিম পিছনে হাত দিয়ে উল্টো দিকে ফিরে তাকিয়ে আছে।
” ভাই! ভাবি সাব আইছে!”

তামিম হাতের ইশারা দিয়ে সবাইকে চলে যেতে বলে। আর সুবহা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে। তামিম পিছনে ফিরে তাকায় সুবহার দিকে। লাল সিম্পল মিরর ড্রেসে আকাশ থেকে নেমে আসা পরী লাগছিলো সুবহাকে।
সুবহাকে দেখা মাত্র তামিমের মুখের নকশা পরিবর্তন হয়ে ফিল্মের রোমান্টিক হিরোদের মতো হয়ে যায়। সে ধীরে ধীরে সুবহার দিকে কাছে আসতে থাকে। তামিমের প্রতিটি কদমে যেনো সুবহার হ্রদস্পন্দন বেড়ে যায়। সে ভয়ে ঘামতে থাকে। শুকনো ঢোক গিলতে থাকে। তামিম সুবহার খুব কাছে এসে দাড়ায়।সুবহা ভয়ে নিজের জামা খামচে ধরে। সুবহা তামিমের থেকে বেশ খাটো হওয়ায় তামিম একটু ঝুঁকে সুবহার ডান গালে চু’মু খায়। তামিমের এমন কান্ডে সুবহার চোখ বঠ বড় হয়ে যায়।

” আসতে অসুবিধা হয়নি তো?”
সুবহা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝায়।
” দেখো আমি মানুষ ভালো না। যা বলবো অক্ষরে অক্ষরে পালন করবা। না-হলে আমার হাতেই তোমার জানা’জা উঠবে!”
তামিমের কথা শুনে সুবহার ভয় আরো বেড়ে যায়। সে শুধু তামিমের কথায় মাথা নেড়ে হ্যাঁ সম্মতি জানায়। নিজ থেকে মুখ ফুটে একটা কথা ও বলে না।
” এখন বাড়ি যাও! এই মাহির। তোর ভাবিকে বাড়ি দিয়ে আয়!”
মাহির এসে খুব সম্মানের সাথে সুবহাকে সাথে নিয়ে যায়। সুবহা যতক্ষণ না যায় তামীম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
” তোমার চোখে দেখলাম, আমার সর্বনাশ! ”
তামীম সানগ্লাসটা খুলে ফু দিয়ে আবার পরে ফেলে। আর সিগা’র টানতে টানতে রঙ্গমঞ্চ খানার দিকে যায়!

সারা রাস্তা সুবহা নিজের গালে হাত দিয়ে রাখে। তামিম যে হঠাৎ তাকে চু’মু খাবে এটা সে কল্পনা ও করতে পারেনি।
সুবহা বাড়ি ফিরার সাথে সাথে তার মা জিজ্ঞেস করে পরীক্ষা কেমন হলো। আর এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে শেষ হলো। সুবহা কোনো রকম বাহানা করে নিজের রুমে চলে আসে আর দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজা বন্ধ করে খুব জোড়ে জোড়ে সুবহা কান্না করতে থাকে। বার বার তামিমের বলা কথা গুলো তার মনে পরে যাচ্ছিলো। সে যদি তামিমের কথা না শুনে তাহলে তার মৃ’ত্যু নিশ্চিত এটা তো সুবহা বুঝে গেছিলো। অবশ্য তামিমের ভয়াবহতার কথা সুবহা এর আগে ও শুনেছে। যাকে সবাই ভয় পায় সেই পরলো সুবহার গলায়। সুবহা নিজের নিয়তির কথা ভেবে খুবই ভেঙে পরে। সবহার কান্নার মাঝেই তার ফোনে ভিডিও কল আসে তামিমের। তামিমের ছবি ভেসে উঠার সাথে সাথে সুবহার কান্না আরো বেড়ে যায়। এভাবে দুইবার কল ধরে না সুবহা। ঠিক তখনই তার ফোনে মেসেজ আসে।

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪

” আমাকে খা’রাপ হতে বাধ্য করো না। you can’t handle me!”
তামিমের টেক্সট পাওয়ার সাথে সাথে সুবহা তাকে কল ব্যাক করে। আর ভয়ে ভয়ে তাকায় তার দিকে।তামিম কিছু না বলে কিছু ক্ষণ সুবহার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর ফোন কেটে দেয়।আর সুবহা ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার তার ফোনে টেক্সট আসে!
” see you to night! ”
টেক্সট টা দেখা মাত্র সুবহার আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। টু-নাইট মানে? তামিম আসবে রাতে?

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬