এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫১

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫১
কাফাতুন নেছা কবিতা

” পৃথিবীতে সব থেকে ভয়ংকর মানুষ কে জানিস?”
বিশাল মনিটরের সামনে বসে উস্কির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে পঞ্চ পান্ডবকে জিজ্ঞেস করে তামিম!
” না ভাই!”
পঞ্চ পান্ডব একসাথে বলে উঠে!
” একজন ব্যর্থ প্রেমিক!”
পঞ্চ পান্ডব কী বলবে কিছু বুঝতে পারে না! শুধু তামিমের দিকে তাকিয়ে থাকে! তারা কী তামিমের কথায় হ্যা বলবে না-কি না বলবে সেটা ও বুঝে উঠতে পারে না!

” আমি ও একজন ব্যর্থ প্রেমিক! এখন বল সব থেকে ভয়ংকর মানুষ কে? ”
” আপনে ভাই!”
তামিম উঠে আড়মোড়া দিয়ে মনিটরের স্ক্রিনের সামনে দাড়ায়। তারপর সুবহার ছবিতে হাত রাখে!
” আমার খু’নের সংখ্যা ও তোর বয়সের থেকে বেশি সকাল! আর তুই আমাকে ঠকালি!”
তামিম টি-টেবিল থেকে বড় ম’দের বোতলটি হাতে নেই! তারপর স্ক্রিনে ছুড়ে মা’রে!
” কথায় আছে বাঘে ছুঁইলে ১৮ ঘা, আর প্রেমে ছুঁইলে ৮৮! আমাকে ভয়ংকর প্রেমে ছুইছে রে! তোদের ভাবি ভাবতে ও পারতাছো না, তার জীবন কতটা নরক বানিয়ে দিবো আমি!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সুবহা দরজা বন্ধ করে প্রচুর ঘামতে থাকে। তামিম যেহেতু এসেছে, তাকে যে সহজে ছাড়বে না এটা সুবহা বুঝে গিয়েছিলো! কিন্তু এটা তো বাংলাদেশ নয়, যে সবাই এমপি তামিম আর প্রধানমন্ত্রী তানভির সরকারের কথায় চলবে! এক বুক নিঃশ্বাস নিয়ে সুবহা ঘাম মুছে টেবিলে বসে পরে। আর বাকিদের জানায় পথে ভুলে একজন চলে এসেছিলো!
খাওয়া শেষ করে সুবহা নিজের রুমে চলে যায়, নাহ! এখন ভয় পেলে চলবে না! এটা ভয় পাওয়ার সময় না! তামিমের বিপক্ষে লড়তে হলে তাকে এক বুক ভর্তি সাহস নিয়ে থাকতে হবে! কিন্তু কোথাও না কোথাও সুবহার সাহস সঞ্চয় হয়ে ও হচ্ছে না! কারণ তার বেঈমানির শাস্তি তাকে তামিম দিবে এটা শত ভাগ নিশ্চিত সে। অন্য কাউকে বিয়ে না করার পর ও তামিম যেখানে তাকে দু’টো গু’লি করেছিলো সেখানে বেইমানীর ফল স্বরুপ কয়টা গু’লি করবে এটাই ভেবে পায় না সুবহা!
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বিকট আওয়াজ ভেসে আসে বাইরে থেকে! আঁতকে উঠে সুবহা! মনে হচ্ছে বাইরে বিস্ফোরণ হয়েছে!

সুবহা ভয়ে ভয়ে জানালা দিয়ে বাইরে দেখার চেষ্টা করে। মনে একটা সংশয় থেকেই যায়! যদি তামিম থাকে। তার সামনে পরে যায়? তাহলে সে কীভাবে নিজেকে বাঁচাবে।
সুবহা জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাতেই তার প্রাণ পাখি বের হওয়ার উপক্রম হয়ে উঠে।
তামিম তার জানালার সামনে হাত ভাজ করে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে! দৃষ্টি তার সুবহার জানালার দিকেই!সুবহা জানালা খুলে তামিমের দিকে তাকাতেই তামিমের মুখে একটা পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠে!
” কতদিন.. ভেবেছি শুধু দেখবে যে তোমায়….!”
ভয়ে সাথে সাথে সুবহা জালাল বন্ধ করে দেই!
”আহারে আমার বউ, আমার টেনশনে শুকিয়ে গেছে! ”
তামিমের কথা শুনে উপস্থিত তার লোকেরা হাসতে থাকে!
” হো ভাই! ভাবি সাপ আপনেরে হবুত মিস করতাছে! ‘
” আমার সারা শরীর ওকে মিস করছে! এখন বল কে বেশি মিস করতাছে?”
” আপনে ভাই! ”

এতোদিন পর তামিমকে দেখে সুবহার আত্মা বের হয়ে আসার উপক্রম হয়ে উঠে! সুবহা ভয়ে ভয়ে অন্য দিকের জানালার পাশে যায়! বাইরের পরিস্থিতি বুঝার জন্য!
পর্দা সরাতেই সুবহার ভয় আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়! তাদের বাড়িটিকে হিসেবের বাইরে গাড়ি ঘিরে রেখেছে! একটার পর একটা এমন ভাবে রাখা যেনো পা ফেলার মতো ও কোনো রাস্তা নেই আর!
ভয়ে সুবহার সারা শরীর তির তির করে কাঁপতে থাকে! কিন্তু না! দমে গেলে হবে না! সুবহা নিচে যাওয়ার আগে বাইরে থেকে মাইক দিয়ে ভেসে আসে তামিমের গলা!

” আমার পলাতক বউ! আপনি কি স্বেচ্ছায় নামবেন? না-কি আমি আমার স্টাইলে নামাবো?”
সুবহা ফ্লোরে বসে পরে নিজের মাথা ধরে। তামিম তাকে ছাড়বে না! আর এখান থেকে পালানোর কোনো পথ ও নেই! সুবহা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ তার মনে পরে ইমারজেন্সি লাইনের কথা! সুবহা সাত-পাঁচ না ভেবেই ফোন নিয়ে পুলিশের হট লাইনে কল করে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো নেটওয়ার্ক বিন্দু পরিমাণে ছিলো না! সুবহা ওয়াইফাই অন করে দেখে সেখানে একই অবস্থা!
ভয়ে শুকনো ঢোক গিলতে থাকে সুবহা! তাহলে কী তামিম জ্যামার দিয়ে তাদের নেট বন্ধ করে দিলো? অবশ্য যে পুরো এলাকা জালিয়ে দিতে পারে তার জন্য এসব তো কোনো কিছুই নয়!
সুবহা চোখ বন্ধ করে বেডে বসে পড়ে। ঠিল তখনই তার ফুপ্পি, আর ফুফা চলে আসে রুমে! সাথে রোজ আর রকি ও!

তারা সকলেই প্রচন্ড ভয়ে ছিলো। আশেপাশের বাড়িগুলো একটার থেকে আরেকটা বেশ দূরে হওয়ায় জোরো চেচিয়ে যে হ্লেপ চাইবে সেটার ও কোনো উপায় খুজে পায় না তারা!
ক্রমশ দরজার বেল বাজতেই থাকে! তার তাদের ভয় ও! সুবহার ফুফি নিজের স্বার্থে তো সুবহাকে সুইজারল্যান্ডে নিয়ে এসেছে! কিন্তু এর পরিমাণ যে কতোটা ভয়াবহ সেটা উনি ও জানে!
সুবহার ফুফি সুবহাকে নিয়ে নিচে নামে!
” তুই পিছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যা সুবহা!”
” আর তোমরা?”
” তুই না থাকলে তামিম আমাদের কিছু করবে না! তুই চলে যা! প্লিজ!”

আজকে সুবহা তার ফুফির গলায় কেমন যেন একটা কর্কশতা দেখলো! এতোদিন তো এই ফুফিই তামিম দের বাড়িতে কাজের লোক সেজে তাকে সরকার বাড়ি থেকে বের করার জন্য সাহায্য করলো! তামিমকে ভুলিয়ে সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য বারবার ফোর্স করতো। সেই সুবহার মা মা’রা যাওয়া থেকে পালানো অব্দি পুরো সময়টায় তো সুবহার ফুফি নিজের জীবন ঝুঁকি নিয়ে সুইজারল্যান্ড থেকে এসে শুধু মাত্র তার পাশে থাকলো ছদ্মবেশে, তাকে তামিমের মতো ভয়ংকর লোকের হাত থেকে রক্ষা করতে
তাহলে আজকে হঠাৎ তামিম আসাতে এতো পাল্টে গেলো কীভাবে?
” প্লিজ সুবহা! যা!”

রীতিমতো সুবহাকে তাড়াহুড়ো করে পিছনের দরজা দিয়ে বের করে দিয়েছিলো তার ফুফি!
সুবহা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে তামিম নেই! কিন্তু জানালা দিয়ে দেখেছিলো গাড়িতে ঘেরা! হয়তো এদিকটায় আপাতত কেউ আসেনি! সুবহা মনে মনে প্রচুর সাহস সঞ্চার করে! চারপাশ টা বেশ অন্ধকার! কিন্তু বাইরের পরিবেশটা ভিষণ ঠান্ডা! সুবহার শরীরে হালকা কাঁপনি শুরু হয়!
সে কোনো রকম সামনে পা বেরিয়ে দু-কদম হাঁটতেই কিছু একটার সাথে বাড়ি খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পরে যায়!

সুবহা পরে যাওয়ার সাথে সাথে গাড়িগুলোর আলো জ্বলে উঠে। হাত দিয়ে চোখ ঢেকে ফেলে সুবহা! হঠাৎ এতো আলো জ্বলে উঠার ফলে চোখে সহ্য হয়নি তার! আস্তে আস্তে তামিমের কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ সুবহার নাকে ভেসে আসতে লাগে। ভয়ে ভয়ে হাত সরিয়ে সামনে তাকাতেই মুখ ফুটে অস্পষ্ট ভয়ের স্বর বের হয়ে আসে সুবহার!
কালো লেদার জ্যাকেট, জিন্স আর টিশার্ট পরিহিত পরিহিত সামনে দাড়ানো তামিমকে কে-ড্রামার ভিলেন টাইপ হিরোদের থেকে কম লাগছিলো না! কিন্তু সুবহার ভয় বাড়িয়ে দেয় তামিমের হাতে থাকা তার গোল্ডেন চাপা’তি!
সুবহা ভয়ে ভয়ে তামিমের মুখের দিকে তাকায়! প্রচন্ড রাগে মানুষের মুখের আদল যেমন হয়, তামিমের ও ঠিক তেমনই হচ্ছিল! চোয়াল শক্ত আর চোখ দুটো মোটামুটি লাল!
তামিম এক পা এক পা করে সুবহার সামনে যেতে থাকে আর সুবহা একটু একটু করে ঘাসে ভর দিয়ে পিছনে যেতে থাকে!

” কেউ একটা নোবেল প্রাইস আনরে! আমার বউ কী এক্টিং টাই না করলো রে!”
তামিম সুবহার খুব কাছে আসতেই, সুবহা তামিমকে জোরে ধাক্কা দিয়ে দৌড় দেয়! কিন্তু কোথায় ও যেতে পারে না! তার আগেই তামিমের লোকেরা তাকে ঘিরে ফেলে!
সুবহা ভয়ে ভয়ে পিছনের দিকে যেতে থাকে। ঠিক তখনই তামিম তাকে পিছন থেকে ধরে ফেলে!
” আর কতো পালাবি? তামিমের থেকে পালানো কী এতো সোজা?”
সুবহা নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়! কিন্তু অসফল হয়! তামিম যেনো আজকে নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে সুবহাকে ধরেছে!

” আমাকে… ছে….!”
” চুপপপপপপ! ও কতোদিন আমার থেকে দূরে থাকছে রে?”
” ৪৫ দিন ভাই!”
তামিমের পঞ্চ পান্ডব একসাথে বলে উঠে!
” ৪৫ দিন! হুম…!”
তামিম সুবহাকে ঘুড়িয়ে খুব জোরে থাপ্প’ড় বসিয়ে দেয় তার গা’লে!
তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পরে যায় সুবহা! তামিম আবার সুবহার বাহু ধরে তাকে টেনে তোলে!
” এটা আমার সাথে বেইমানি করার জন্য! ”
” আহহহা!”

আবার থাপ্পড়ে পরে যায় সুবহা! তামিম আবার তার হাত ধরে টেনে তুলে!
” এটা আমার থেকে পালানোর জন্য! ”
” আহহহা!”
” এটা আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলার জন্য! ”
” তা….!”
” এটা আমাকে কাঁদার জন্য! ”
প্রায় ৪৫ টি থাপ্প’ড় পরে সুবহার দু-গালে! থাপ্প’ড় গুলোর গতি এতোটাই জোরালো ছিলো যে সুবহা শেষের কয়েকটা থাপ্প’ড় মা’রার সময় নিজের সেন্স হারিয়ে ফেলে!
” এই বান্দির বাচ্চা চোখ খোল! চোখ খোল বলতাছি! এখনো ৫ টা থাপ্প’ড় এক্সাটা মা-রা বাকি আছে আমার! চোখ খোল তুই!”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫০

তামিম সুবহাকে খুব জোরে জোরে ঝাকিয়ে তোলে। কিন্তু সুবহার কোনো সারা শব্দ নেই! এতো গুলো থাপ্প’ড় খাওয়ার পর সুবহা যে দম ফেলছে এটাই বোধ হয় অনেক!
” এটা তো কিছুই না শখের বউ! তামিম সরকার কতোটা ভয়ংকর সেটা তুই এবার টের পাবি!”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫২