এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫৭

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫৭
কাফাতুন নেছা কবিতা

‘ আই হেট ইউ! ‘
‘ আই লাভ ইউ টু!’
তামিম এক ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সুবহার দিকে! সুবহার গলায় তামিমের দেওয়া লাভ বাইটটায় তামিম কি’স করে গভীর ভাবে!! চোখ বন্ধ করে ফেলে সুবহা!!
” আমি তো আপনাকে ধোঁকা দিয়েছি, তারপর ও ছেড়ে কেন দিলেন না আমায়?”
” পারবো না আমি ছাড়তে তোকে!”
সুবহা চোখ বন্ধ করে থাকলে ও তার চোখের পানির গুলো বন্ধ থাকে না! গড়িয়ে পড়তে থাকে! তামিম সুবহার চোখের পানি মুছে দিয়ে দু-চোখের পাতায় চু’মু খায়!!

” তুই কী আমাকে এক মুহুর্তের জন্য ও ভালো বাসিস নি সকাল?”
চোখ খুলে সুবহা তামিমের মুখের দিকে কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থাকে! তামিম ও সুবহার দিকে তাকিয়ে থাকে!
” ঘুমাবো আমি!!”
তামিম কিছু না বলে ছেড়ে দেয় সুবহাকে! সুবহা ও উল্টো দিক হয়ে শুয়ে পড়ে! ড্রীম লাইটে সুবহার মুখ স্পষ্ট দেখা না গেলে তার চোখ দুটো চিকচিক করছিলো! তামিম সুবহার চোখের ভাষা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলো! তামিম কিছু ক্ষণ চুপচাপ থেকে এটা বুঝতে পারে, কোথায় তো কোনো কিছু মিসিং হচ্ছে তার! সেদিন হসপিটালের ছাদে সুবহার বলা একটি কথাও মিথ্যে মনে হয়নি তামিমের! তাহলে কয়েকদিনের ব্যাবধানে এমন কী হয়েছিলো যার জন্য সুবহা এমন করলো? তামিম কোথায় ও কোনো গাফিলতির চিহ্ন খুঁজে পায়!
সুবহা চুপচাপ চোখ বন্ধ করে ফেলে! কিছু ক্ষণের ব্যাবধানে তলিয়ে যায় গভীর ঘুমে! সুবহা ঘুমিয়ে যেতেই তামিম সুবহার চোখের সাইটে হাত দিয়ে দেখে, ভেজা ভেজা লাগছে! তামিম বুঝতে পারে কোথায় কোনো গাফিলতি হয়েছে তার দ্বারা!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” বাপ রে শীত তো আমার বাপের নাম ভুলাইয়া দিলো রে.. যদি ও জানি না আমার বাপ কেঠা! হালাই পয়দা কয়রাই ফালাইয়া থুইয়া গেছে গা!”
”কিন্তু ভাই আমাকে এতো রাতে বাইরে ডাকলো কেন রে সাকিব! ভিতরে তো মেলা জায়গা!”
সাকিব আর মাহিরের কথার মাঝেই তামিম খালি গয়ে নিচে নেমে আসে। যেখানে তার পঞ্চ পান্ডবই শীতে থর থর করে কাপছে সেখানে তামিম শুধু একটি টাউজার পরে চলে আসে!
” মাহির! ”
” ভাই!’
” সরকার বাড়ির সব জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ আর হসপিটালের দুইদিনের সিসিটিভির ফুটেজ আমার এখনই লাগবো! শামসুরে জলদি পাঠাতে বল!”

” জ্বী ভাই!”
তামিমের কথা মতো মাহির কাজে লেগে পরে সাথে টাকলা মফিস ও! কিন্তু বাকি তিনজন চুপচাপ তামিমের সাথে থাকে। তামিম একটার পর একটা সিগা’র টানতেই থাকে আর পায়চারী করতেই থাকে! তার মাথা যেনো ফেটে যাচ্ছে টেনশনে!!
” ভাই আপনের শীত লাগতাছে না?”
” মনে আগুন জ্বালতাছে রে আমার! শরীরে ঠান্ডা কোনো ব্যাপারই না!”
” ভাই আপনে কী ঠিক আছেন? কোনো হালায় কী কিছু করলো? আমারে কন খালি! এখনই উড়া’য় দিমু!”
তামিম সিগা’রটি ফেলে দিয়ে আকাশের দিকে তাকায়!
” মাঝে মাঝে ভাবি সেদিন যদি ওর বিয়া হয়ে যাইতো, তামিম সরকার কী করতো! এক মুহুর্তে শেষ হয়ে যাইতাম আমি! এখন যদি দেখি আমার গাফিলতির জন্য ওই কষ্ট পাইছে, নগদে মইরা যামু! ”
” বিয়া আর কেমনে হইতো ভাই! ভাবি নিজেই তো আমারে লোকেশন পাঠাইছিলো! বউ রাজি না থাকলে বিয়া হয় না-কি! ”
সাকিবের এক বাক্যই যথেষ্ট ছিলো তামিমের পুরো মাথায় শর্ট সারকেট করার জন্য

” কী বললি আবার বল!”
” বউ রাজি না থাকলে…!”
” না এর আগে…!”
” বিয়া আর কেমন হইতো!”
” তার পরে আ’বাল!”
” ভাবিসাপ হের বিয়ার দিন আমারে লোকেশন পাঠাইছিলো, আর আপনারে তাড়াতাড়ি তাকে নিতে আসতে বলছিলো!”
” সুবহহহহহহহহহহহহহহাা!”
তামিম কিছু না বলে হাটু পেরে বসে পড়ে! আর সুবহার নাম নিয়ে খুব জোড়ে জোড়ে ডাকতে থাকে। তামিমের এমন আচরণে তার পঞ্চ পান্ডব তার সাথে বসে পরে! তারাও বুঝতে পারে না হঠাৎ তামিমের হলো টা কী!

” ভাই! ”
” ভাই!”
” ও ভাই!”
” কী হয়ছে ভাই!”
” ভাবিসাপরপ ডাকমু ভাই?”
সুবহার কথা শুনতেই তামিম মাহিরের দিকে তাকাই!
” সিসিটিভি ফুটেজ পাইলি?”
” জ্বী ভাই!”
ঠান্ডা মাটিতেই তামিম বসে পড়ে, আর ফোন হাতে নিয়ে দেখতে থাকে!

যেদিন তামিমকে সুবহা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রুম থেকে বের করে দেই তার ঠিক পরপরই তার ফুফি সুবহার আর তামিমের রুমে নক করে। এর পর আর কিছু দেখা যায়নি। কারণ তামিমের রুমে কোনো ক্যামেরা লাগানো নেই! পুরো বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকলে ও তামিম তার রুমে লাগায়নি! কারণ সুবহার প্রাইভেসি আছে। তারপর দেখে সকাল থেকে সুবহা খুবই গম্ভীর হয়ে যায়! তামিম বাকি ফুটেজ গুলো চেক করে তেমন কিছু পায়নি! শুধু সুবহার ফুফির তাদের রুমে যাওয়া ছাড়া আর সুবহার চারপাশে ঘুরঘুর করা ছাড়া! তারপর তামিম হসপিটালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে। নিরাপত্তার জন্য হসপিটালের কোনো পেসেন্টের রুমে সিসিটিভি নেই! বা থাকে না! কিন্তু বাইরে সব জায়গায় থাকে! তামিম লক্ষ্য করে তার পরের দিনের ফুটেজে। সুবহা তার ভাইয়ের কেবিনের বাইরে যেয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে পড়ে! আর তার হাত থেকে পার্স পড়ে যায়! হাত কাঁপতে থাকে তার। তারপর রুমে ঢুকে পরে সুবহা ঢুকতেই দু-জন বেরিয়ে আসে। ভিতরে কী হয়েছে সেটা আর জানা হয়নি তামিমের!

কিন্তু একে একে দুই করতে তামিমের বেশি ক্ষণ সময় লাগে না! তামিম তার আগের দিনের ফুটেজ চালু করে। যেখানে করিডোরে সুবহা ছিলো তামিমের সাথে! তামিম লক্ষ্য করে সুবহা বার বার আড় চোখে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো! তার মুখে ও আলাদা টান ছিলো তামিমের জন্য! ভাই অসুস্থ অথচ সুবহা তামিমকে দেখে ব্লাশ করছিলো! তার তামিমের দিকে তাকানোর মধ্যেই ছিলো আলাদা অনুভূতি!
” এই দুউ নার্সের খোঁজ লাগা!”
” জ্বী ভাই!”
” সাকিব?”
” এখনই উড়াইতেছিল ভাই!”
” কারে উড়াবি?”
” কেন নার্সরে!”
” শা’লার ভাই! আপাতত উড়াউড়ি বাদ দে! আর যা বলি কর! বউ আমার এক পিস! কিন্তু আমি ও তামিম সরকার! হুমমমমম!”

খোড়াতে খোড়াতে তামিম রুমে এসে সুবহার মুখ বরাবর বসে! কম্ফোর্টার দিয়ে ছোটো বাচ্চাদের মতো মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে! গালে থাপ্প’ড়ের দাগ স্পষ্ট! ৪৫ টি চ’ড়! এতো সহজে ও দাগ যাবে না! তামিম উঠে সুবহার পায়ের কাছে বসে! ডান পায়ের তালু হালকা বের করে! ব্যান্ডেজ খুলে ভালো ভাবে দেখে!
ইস! কী অবস্থা! মনে হচ্ছে মাংস ও গ’লে গেছে!! তামিম সুবহার পা নিজের কোলে নেই! তারপর আলতো করে তাতে মলম লাগিয়ে আবার ও ব্যান্ডেজ করে দেয়!
এক নীরব দর্শকদের মতো তামিম চেয়ে থাকে সুবহাট মুখের দিকে!
” তোর মা ম’রলো! বাপ ও নেই! ভাই ও না বাঁচা! তার উপরে জামা’ই পাইলি হারামিতে পিএইচডি করা!”
তামিম উঠে সুবহার পাশে শুয়ে পড়ে!

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫৬

সুবহার উ’ন্মুক্ত কোমরে হাত দিয়ে তাকে নিজের কাছে নিয়ে নেই! খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সুবহাকে! একটু নড়ে উঠে সুবহা আবার ও ঘুমে তলিয়ে যায়!
” আমি খারাপ! খুব খারাপ! কিন্তু তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না! সরি!”
তামিম সুবহাকে ধরেই ঘুমিয়ে পরে! তার ও ঘুমের প্রয়োজন! এই ৪৫ দিন সে ও ঘুমাইনি ঠিক মতো! তামিম ও সুবহাকে ধরে শুয়ে পড়ে!!

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫৮