এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫৮
কাফাতুন নেছা কবিতা
—ঘড়ির কাটা বলছে তখন সময় ১১:৪৫ মিমিট! তামিম সুবহা এখনো ও গভীর ঘুমে!!
উন্মুক্ত শরীর একজন আরেকজনকে খুব শক্ত করে আলিংগন করে ঘুমাচ্ছে! কাপড়ের কোনো লেস নেই তাদের শরীরে!
তামিম থেকে থেকে সুবহাকে আরো শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরছে, এতে করে সুবহার মোটামুটি নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়! এক পর্যায়ে ঘুম আলগা হয়ে আসে সুবহার! সে চোখ মেলে দেখে তামিম এখনো ঘুমাচ্ছে! ঘুমন্ত তামিমকে দেখে কিছু ক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকে সুবহার! তারপর হঠাৎ করে তামিমের শরীরের দিকে নজর যায় সুবহার! পরক্ষণেই নিজের দিকে তাকায় সুবহা! তারপর জীব বের করে চোখ বন্ধ করে ফেলে!
” সর্বনাশ হয়ে গেছে! ”
” আমার ও! ”
হঠাৎ তামিমের কন্ঠস্বর কানে আসতেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় সুবহা! হুট করে চোখ খুলে ফেলে তামিম! তামিম চোখ খুলতেই সুবহা কম্ফোর্টার দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে!!
” প্রেমের এই খেলা, খেলবো সারা বেলা, যদি তুই রাজি…!”
” আই হেট ইউ! ”
” আই লাভ ইউ টু! ”
তামিম ও কম্ফোর্টারের ভিতরে ঢুকে যায়! সুবহা চোখ মুখ বন্ধ করে আছে! তামিম সুবহার উম্মুক্ত শরীরের উপরে শুয়ে পড়ে!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” আপনি অনেক ভারি! ”
” আর তুই জীবন্ত কঙ্কাল! ”
সুবহা কিছু টা কপাল কুঁচকায়! স্বামী তাদের বউদের অনেক কিছুই বলে থাকে! কিন্তু জীবন্ত কঙ্কাল কয় জন বলে?
তামিম উঠে সুবহার শরীর থেকে কম্ফোর্টার ফেলে দেই! আর সুবহাকে কোলে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে!
বাথটাব দেখে সুবহার তামিমের হিংস্রতার কথা মনে পড়ে যায়! চুপচাপ তাকিয়ে থাকে সে-দিকে! তামিম সুবহার দিকে তাকিয়ে তার মনের গতি বুঝতে পারে! তাই সুবহাকে নিয়ে সোজা ঝর্নার মাঝে দাড় করায়!
পানি ছেড়ে দিয়ে তামিম ও দাড়িয়ে পড়ে সুবহার সাথে! সুবহা মাথা নিচু করে রাখে! হঠাৎ করেই বাথটাব দেখে সুবহার আরো অস্বস্তি লাগা কাজ করে! তামিম তাকে এতো কষ্ট দিবে এটা সে কল্পনা ও করতে পারেনি! চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে! ঝর্নার পানিতে সুবহা ভেবেছিলো হয়তো তামিম বুঝবে না সে কাঁদছে! কিন্তু তামিম ঠিকই বুঝে যায়! সুবহার গাল এবং নাক মোটামুটি লাল আভা ধারণা করে! তামিম সুবহার কোমর ধরে তার সাথে মিশিয়ে নেই! তারপর সুবহার কপালে চু’মু খায়!
” তোকে ছাড়া আমি পাগল হয়ে গেছিলাম! যা করেছি রাগের বসে! মন থেকে করিনি!”
সুবহা কিছু না বলে চুপচাপ থাকে! অনেক কষ্ট নিজের কান্না আঁটকে রাখে!
” আই হেট ইউ! ”
তামিম সুবহার গাল ধরে তার ঠোঁট চু’মু দেয়!
” আই লাভ ইউ টু! ”
তামিম কিছু ক্ষণ সুবহাকে ভেজা অবস্থায় দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে!
” তুই অনেক হ’ট সুবহা!”
সুবহা ভ্রু কুঁচকে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে! তামিমের মা-রা ৪৫ টি থাপ্প’ড়ের কথা সুবহা এখন ও ভুলেনি! বেশিক্ষণ কথা বললেই দাঁতের ব্যাথা জেগে উঠছে! তাই সুবহা চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে!
তামিম সাওয়ার জেল নিয়ে সুবহার গলায়, পিঠে লাগাতে থাকে! এক পর্যায়ে তামিম সুবহাকে জড়িয়ে ধরে!
” আমার সামনে বস্ত্রহীন ভাবে দাড়িয়ে থাকতে লজ্জা লাগছে না তোর!”
সুবহার এবার টনক নড়ে। প্রচন্ড আবেগে সে ভুলেই গেছিলো জামাকাপড়ের কথা!
” সেম কথা যদি আমি জিজ্ঞেস করি?”
” তোকে যেদিন থেকে দেখেছি, সেদিন থেকে লজ্জার মা-কে সালাম দিয়ে দিছি!”
তামিম সুবহাকে বেশি ঘাটায়! এমনিতেই কাল রাতে সুবহার উপরে ঝড় চালিয়েছে তামিম! এখন আর বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না!
তামিম একটা টাওয়াল দিয়ে সুবহাকে পেচিয়ে দেয়! আর নিজে ও কোমরে একটা টাওয়াল পেচিয়ে নেই!
” তুই যা আমি আসছি!”
তামিম সুবহাকে যেতে বলার সাথে সাথে সুবহা সামনে একটু একটু করে পা বাড়াতে থাকে! কিন্তু ঠিক মতো হাঁটতে পারে না! তামিম সুবহার হাটার গতি দেখে নিজেকে সাব্বাসি দেই! যাক জীবনে সে একটা ভালো কাজ করেছে! বউকে হাঁটার মতো অবস্থায় রাখেনি! তামিম নিজেই নিজের উপরে গর্ববোধ করে! পরক্ষণেই সুবহাকে কোলে তুলে নেই!
হঠাৎ তামিম ধরায় সুবহা শক্ত করে তার গলা জড়িয়ে ধরে!
তামিম সুবহাকে বিছানায় বসিয়ে ড্রেস বের করে দেয়! আর নিজে ওয়াশরুমে চলে যায়! সুবহা ড্রেসটি হাতে নিয়ে একটু সন্দেহের নজরে তাকায়! পুরোপুরি তার মাপের লং সিম্পল ফ্লোরাল প্রিন্টের ড্রেস! সুবহা একটু চিন্তায় পরে যায়! তামিম এগুলো করলো কখন? সে তো আঠার মতো চিপকে ছিলো সুবহার সাথে! সুবহা আর কিছু চিন্তা না করে ড্রেস পরে। সুন্দর মতো রেডি হয়ে বসে থাকে!
১০-১১ মিনিট পর তামিম রেডি হয়ে বাইরে আসে! সে ও কালো পড়েছে! সুবহা ও কালো!! সুবহা তামিমকে দেখে সাথে সাথে তার চোখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নেই! বিষয়টি তামিম ও লক্ষ্য করে!
তামিম এসে সোজা সুবহাকে কোলে তুলে নেই! তারপর বাইরে হাঁটতে থাকে! কথা নেই বার্তা নেই, এভাবে হুটহাট সুবহাকে কোলে তুলে নেওয়াকে সুবহা ও ভালো চোখে দেখে না!
তামিম সুবহাকে নিয়ে সোজা ডাইনিং এ চলে যায়! সেখানে তার পঞ্চ পান্ডব আগে থেকেই বসে ছিলো! সুবহা তামিম আসতেই তারা তাদের গুড মর্নিং জানায়! যদি ও এখন দুপুর প্রায় তাও জানায়!
তামিম সুবহাকে সোজা নিজের কোলে বসায়! সুবহাকে কোলে নিয়ে বসাতে সাকিব নিজের কোলে তাকায়! আর হাত দিয়ে নিজের হাঁটুতে মালিশ করতে থাকে! বিষয়টি সকলের নজরেই যায়!
” আজকে একটা বউ থাকলে, কোলে নিয়া খাইতাম!”
সাকিবের কথায় সকলে হাসলে ও সুবহা প্রচন্ড লজ্জা পেলো!
” আজ অব্দি কামের বেডি ও তোরে পাত্তা দেই নাই, আর বউ!”
” কালললললা!”
” বোমমমাাাা!”
সাকিব আর মানিক আবারো ও খাবার টেবিলে লেগে গেছিলো প্রায়! কিন্তু তামিমের চোখ রাঙ্গানিতে দু-জনেই শান্ত হয়ে যায়!
তামিম সুবহাকে নিজ হাতে খাওয়ায়! পেটে খিদে খাকায় সুবহা ও বাধা দেয় না! বরং চুপচাপ খেয়ে ফেলে!
সুবহা লক্ষ্য করে তামিমের হাতে ছোটো ছোটো অনেক কাটা দাগ! তার মধ্যে একটা দাগ একটু বর! সুবহা সাহস করে কিছু বলতে ও পারছে না, আর না চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে তার!
খাওয়া শেষে তামিম আবার ও সুবহাকে কোলে করে রুমে দিয়ে আসে। আর কিছু ক্ষণের জন্য বাইরে চলে যায়! তামিম যাওয়ার পর সুবহা তার চলে যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিলো!
চোখ বন্ধ করে ফেলে সুবহা! খুব জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে থাকে! গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে! দরজায় পিন দেওয়ার আওয়াজ আসতেই সুবহা চেখের পানি মুছে ফেলে! আর স্বাভাবিক ভাবেই বসে থাকে! তামিম এসে একদম সুবহার পাশে বসে!
” এটা খেয়ে নে!”
” এটা?”
” যা ভাবছিস, তাই!”
সুবহা তামিমের হাত থেকে মেডিসিন নিয়ে খেয়ে ফেলে! আর চুপচাপ বসে থাকে! তামিম ও কিছু না বলে চুপচাপ সুবহার পাশে বসে থাকে!
” একটা কথার উত্তর দিবি সকাল!”
সুবহা তামিমের দিকে তাকায় এক জিজ্ঞেস দৃষ্টিতে!!
” তোর বিয়ের দিন, লোকেশন পাঠাইছিলি কেন?”
” আপনার হাতে গু’লি খেতে মন চেয়েছিলো তাই!”
তামিম সুবহাকে ধরে নিজের কোলে বসায়! আর গালে কি’স করতে থাকে!
” ভালোবাসিস আমাকে? ঠিক না?”
” নাহ!”
” মিথ্যা কথা!”
” বাসি না ভালো আপনাকে!”
” তুই ভালো বাসিস আমাকে!”
” বাসি না!”
” বাসিস!”
” নাহ!”
তামিম সুবহার গালে একটা করে চু’মু দিতে থাকে আর তাকে একই প্রশ্ন বার বার জিজ্ঞেস করতে থাকে! সুবহা ও বার বার নিজের গাল মুছতে থাকে আর একই ভাবে না না করতে থাকে! প্রায় ২৭ টি চু’মু তামিম সুবহার গালে দেয়! সুবহা ২৭ বারই নিজের গাল মুছে ফেলে! তামিম বুঝে যায়, সুবহা ভাঙ্গবে, তবু মচকাবে না!
তামিম সুবহাকে কোলে নিয়ে নিচে নামতে থাকে! সুবহা ও তামিমের গলা জড়িয়ে ধরে! দু-জনের মুখে একটু ও কথা নেই!
তামিম নিচে আসতেই, তার পঞ্চ পান্ডব ও তার সাঘে বেরিয়ে পরে! যেনো আগে থেকেই তারা জানে, আজ তাদের গন্তব্য স্থান কোথায়!
তামিম এসেই সুবহাকে নিয়ে সোজা তার জীপে বসে পরে! বিদেশে ও যে তামিমের জীপ আছে, তাও তাদের পাঁচ জনের মাপের এটা দেখে সুবহা একটু অবাক হয়!
সাকিব গাড়ি চালাতে শুরু করে।
সুবহা লক্ষ্য করে লোকালয় থেকে তামিমের ভিলাটি একটু দূরের!
১০ মিনিট পর তামিমের গাড়িটি থামে! উঁচু পর্বত চূড়ার নিচে! তামিম নেমে সুবহাকে কোলে নিয়েই উপরে হাটতে থাকে! তার পঞ্চ পান্ডব ও পিছু পিছু আসতে থাকে!
তামিম সুবহাকে নিয়ে একদম উঁচু পাহাড়ে চলে যায়! আর একটু শেষের দিকে দাড় করায়!
” আমাদের বিয়ে হলো, কিন্তু সংসার হলো না!”
তামিমের হঠাৎ এমন কথায়, একটু অবাক হয় সুবহা!পরক্ষণেই সুবহা লক্ষ্য করে তামিম একটু একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছে!
” আপনি পিছনে যাচ্ছেন কেন?”
” তোকে মুক্তি দিতে! ”
” মানে!”
” তোরে এই জন্মে না পাওয়ার আক্ষেপ আমার মিটবে না রে! ”
সুবহা তামিমের পিছিয়ে যাওয়া দেখেই বুঝে যায়, তামিম ঠিক কী করতে চাইছে! সুবহা পিছনে তাকিয়ে দেখে তামিমের পঞ্চ পান্ডব ও হাতে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। চুপচাপ সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে! তামিমের ধারে কাছে ও কেউ আসছে না!
” আপনি পড়ে যাবেন তামিম! সামনে আসুন!”
” পড়ে তো আমি অনেক দিন আগেই গেছি সকাল! তোর প্রেমে! এখন জগৎ, দুনিয়া আমারে আর টানে না!”
” প্লিজ নাহ! আমার কথা শুনুন!”
” মুসলমানদের যদি পর জন্ম বলে কিছু থাকতো, আমি বার বার তোকেই চাইতাম, আমার বউ হিসেবে! ”
” আপনি কেন এমন করছেন তামিম?”
” পুরো পৃথিবীকে জানিয়ে দিস, তামিম সরকার নামের একজন ব্যর্থ প্রেমিক ছিলো! তোকে না পাওয়ার আক্ষেপ আমার থেকেই গেলো!”
” তামি..!”
” জানিস সকাল! আমি আজ অব্দি কোনো মেয়ের দিকে তাকাই নি! কিন্তু তোর দিকে তাকাইছি! তোকে দেখলে শান্ত লাগতো আমার ! আমি তোকে খুব ভালোবাসি সকাল! কিন্তু আমি জানি তুই আমাকে কোনো দিন ও ভালো বাসতে পারবি না! আর আমি বেঁচে থাকতে তোকে অন্য কারো হতে দিবো না! কিন্তু এবার তোর মুক্তির পালা! আমার মতো খারাপ লোকের জন্য তোর জীবন নষ্ট হোক আমি চায় না!
” কী করতে চাইছেন আপনি?”
” যুগে যুগে এটাই হয়ে এসেছে সকাল! পাপিষ্ঠ পুরুষদের শেষ ঠিকানা পরপারে হয়! আমি পাপি! তুই পবিত্র! আমাদের প্রেম টা ও অপূর্ণ থাকলো! ”
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫৭
” তামিম প্লিজ! ”
,” পরপারে তোর জন্য অপেক্ষা করবো আমি!”
” মানে?”
” আমার হয়ে থাকিস! আলবিদা পরী!”
” তামিমমমমমমমমমমমমমম!”