এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬১
কাফাতুন নেছা কবিতা
” তোমারে আমি ভালো ভাবছিলাম সুবহা! ”
” আপনাকে ও আমি খারাপ ভাবছিলাম তামিম!”
” শয়তান ছেমরি! ”
সুবহা তামিমের গাল ধরে তার ঠোঁ’টে ঠোঁ’ট বসিয়ে দেয়!! সুবহার হঠাৎ এমন কান্ডে তামিম মোটামুটি বোকা বনে যায়!
” এতোদিন, সিরিয়ালের নায়কা দের মতো কাপাকাপি করলি, আর আজকে ডাইরেক্ট চু’ম্মা নিয়ে নিলি! কত রঙ্গ দেখাবি রে সুবহা! ”
তামিমের কথা শুনে সুবহা তামিমের মাথার চুল ধরে টান দিয়ে উঠে!!
” আহহহহহ! কিছু কইলেই মা’রে! ”
” শয়তান সরকার! ”
” শয়তান ছেমরি! ”
তামিম সুবহা প্রায় মারামারি করার মতো প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, ঠিক তখনই তামিমের ফোন বেজে উঠে!!
” বউয়ের হাতে মা’ইর খাইতাছি, এই সময় কোন বল’দে ফোন দিলো!”
তামিম ফোন হাতে নিতেই সুবহা তা টান মে’রে নিয়ে নেই! তার তামিমের উপরে উঠে বসে!!
” না ঠিক আছে! পারফেট পিজশন!”
” কচু!”
” আমি খাই না!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সুবহা মুখ বাঁকিয়ে তামিমের ফোন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা শুরু করে!! যতগুলো সোশাল মিডিয়া আছে প্রায় প্রতিটার ইনবক্স ভালো মতো দেখে!! প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হওয়ার সুবাদে তামিমের যেই পেজ আছে, সুবহা সেখানে ও ঘাটাঘাটি শুরু করে!! সব কিছু ঠিক পেয়ে সুবহা খানিকটা হতাশ হয়ে যায়!! কিন্তু হাল ছাড়লে তো হবে!! সারাজীবন তামিমকে কথা শোনানোর জন্য হলে ও একটা না একটা কেলেঙ্কারি বের করতেই হবে তাকে! কিন্তু সুবহা বরাবরই হতাশ হয়!!
” আপনি ছেলে জাতের কলঙ্ক! ”
” কেন বউ? পারফরম্যান্স ভালো লাগেনি? আবার করি?”
” হে খোদা!!!!! ”
তামিম সুবহার হঠাৎ এতো রেগে যাওয়ার কারণ খুঁজে পায় না!
” আপনি কী আজ অব্দি একটা প্রেম ও করেননি? না-কি সব ডিলিট করে ফেলেছেন?”
” আমি তো জন্মের পর থেকেই জানতাম তুমি আমার বউ হবা! আলতু ফালতু মেয়েদের সাথে প্রেম করতে যাবো কেন? ”
সুবহা চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দমানোর চেষ্টা করে! আবার তামিমের সোশাল মিডিয়াতে ঢুকে!! সবই রাজনৈতিক কথা বার্তা!! পরক্ষণেই সুবহা তামিম ইনস্টাগ্রামের পোস্টে ঢুকে!! তামিম তো বিবাহিত! যদি সিঙ্গেল সেজে কোনো পোস্ট পায় তাহলেই সাবান ছাড়া তামিমকে ধুয়ে দিবে বলে ঠিক করে!!
কিন্তু সুবহার চিন্তা আবার ও ভুল প্রমানিত হয়! তামিম তার বায়োতেই লেখে রেখেছে!,” আলহামদুলিল্লাহ ম্যারেড!”
আর সুবহার লাল শাড়ি পড়া ব্লুর ছবি এড কালেকশনে এড করা!!
” আপনি আমার ছবি আপলোড দিয়েছিলেন?”
” তুমি কী অন্য কারোটা আসা করেছো?”
” যেখানে আমার দিকে তাকালে ও আপনার রাগ হয়! সেখানে…!”
” ছবিটা ঝাপসা করা সকাল! আমি চাই সকলে জানুক তামিম সরকার বিবাহিত!”
সুবহার চোখে হালকা পানি চলে আসে! যেখানে বেশিরভাগ পুরুষ তাদের বউদের কারো সাথে পরিচয় করাতে চাই না! বউ থাকলে ও অস্বীকার করে বেড়ায়, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হয়ে ও তামিম কী সুন্দর ভাবে সবাইকে জানাতে চায়, সে বিবাহিত!
” তাছাড়া মাউয়ারা আমার হটনেস দেখে এতো জালাতো, তাই ভাবলাম,তোর পিক দিয়ে রাখি, আর কেউ জালাবে না!”
” শয়তান সরকার! ”
সুবহা তামিমের গলা টিপে ধরে, আর তামিম হাসতে থাকে!! ঠিক তখনই আবার ও ফোন বেজে উঠে!! সুবহা ফোনে দেখে বো’মা সাকিবের নাম লেখা তাও দাঁত বের করা ছবি দিয়ে সেভ করা!! সুবহা পারছে না রীতিমতো হেঁসে মাটিতে গড়াগড়ি খাবে!! সাকিবের নামের সাথে তার ব্যক্তিত্বের কোনো মিল নেই!! ধরতে গেলে তামিমের পঞ্চ পান্ডবই সুন্দর গঠনের অধিকারি! কিন্তু কালা মানিক, পেট মোটা রফিক আর টাকলা মফিস তাদের নামের মতই! একজন কালো, যেয়ে হাজারটা নাইট ক্রিম মেখে ও ফর্সা হতে পারেনি! কালা মানিক বরাবরই কৃষ্ণ বর্নের ছেলেদের মতো হ্যান্ডসাম! কিন্তু সে তার রং বরাবর অখুশি! মেয়েদের মতো রূপ চর্চা করে ও কোনো লাভ হয়নি! তাই এক পর্যায়ে হাল ছেড়েই দিয়েছে!!
আরেকজনের মাথায় চুল নেই! নেই মানে একদমই নেই! হাজারটা তেল ব্যবহার করে ও তার মাথায় চুল গজায়নি, কবি-রাজের থেকে জড়িবুটি তেল এনে ও দিয়েছে, কোনো লাভ হয়নি! হুজুরের থেকে নিজের টাক মাথায় ফুৃ ও দিয়েছে! যদি কুনজর লাগার জন্য চুল না বের হয়! কিন্তু না কোনো লাভ হয়নি!!! আর পেট মোটা রফিক নিজের পেটের দিকেই হেরে গেছে! মোটামুটি সুর্দশন হলে ও তার পেট কখনো কমে না! এই একজায়গাতেই সে আটকে গেছে!! ডায়েট, ব্যায়াম, কোনো কিছুই তার পেট কমাতে পারেনি!
তাদের দলে একদম ফিটফাট হচ্ছে মাহির আর সাকিব! মাহির ডিসিশন নেওয়াতে এক্সপার্ট! হুট করে ডিসিশন নিয়ে বাজিমাত করা তার সভাব! এদের মধ্যে সাকিব একটু ভিন্ন! বো’মা বানানো ছাড়া তার আর কোনো আলাদা নে’শা নেই!!
তামিম সুবহাকে হাসতে দেখে ফোন নিয়ে নেই! সাকিবের ৩২ পাটি বের করা ছবিটি তামিমই তুলেছিলো! তাই সে তেমন কোনো রিয়েকশন দেয় না! যদি সাকিব জানতে পারে, তার বিকেল বেলা হওয়া নতুন মা তার ছবি দেখে হেঁসেছে, তাহলে হার্ট অ্যাটাক করে মার’বে!
” হ্যালো ভাই! কী করেন?”
” আ’কাম করতাছি তোর মায়ের সাথে! ”
সুবহা চোখ বড় বড় করে তাকাই তামিমের দিকে!! তারপর তামিমের হাতে জোড়ে চিমটি কাটে!
” আহহহ! কিছু কইলেই মা’রে! আজব বেডি মানুষ! বিয়া করছি আ’কাম করবো না?”
সুবহা তামিমের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে! আর ফোন টেনে নেই!!
” বাবা সাকিব!”
” আম্মা আসসালামু আলাইকুম! খিদা লাগছে নিচে আইয়েন!”
” ওলায়কুম আসসালাম বাবা! এখনই আসছি!”
সুবহা ফোন কেটে দিতেই তামিম উঠে বসে!
” শা’লার ভাই রা জীবনে আমারে সালাম দেয় নাই, আর তুমি আসতেই এতো পল্টি খাইলো!”
সুবহা কিছু না বলে খালি হাসতে থাকে!
” হাসো! হাসো তোমরাই তো হাসার দিন!”
” কেন? হিংসে হয়!”
তামিম মেয়েদের মতো মুখ বাকিয়ে উঠে দাড়ায়! আর সুবহাকে ও কোলে তুলে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়!!
” পরাণ যায়….! খিদায়ে পরাণ যায়..পরাণ যায়!”
” কী-রে শা’লার ভাই, রাক্ষস হয়লি না-কি! ”
” হবুত খিদা লাগছে রে মাহির! কথা কইস না! খিদার কথা শুনে ও খিদা লাগে!”
” ওই তো ভাই-আম্মা আইতাছে! ”
সকলে সুন্দর মতো দাড়িয়ে যায়! সুবহার চেয়ার টেনে দেয়!
” আম্মা আপনে এখানে বসেন!”
সুবহা তামিমের হাত ছেড়ে দিয়ে সুন্দর মতো বসে পরে! আর তামিম চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে!
” আরে ভাই আপনে আহেন না কেন? ”
” তোগোরে দেখলে গিরগিটি ও লজ্জা পাইবো! কী মাসুম ভোলাভালা সাজতাছে আমার বউয়ের সামনে! ”
” আপনি আমার নিষ্পাপ ছেলেদের কিছু বলবেন না সরকার সাহেব!”
” কাম সারছে! সব কয়টা একটিম! ”
সকলে খুব জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে! আজকে তারা বেশ ভালো মতো তামিমকে জব্দ করতে পেরেছে!
খাওয়া দাওয়া শেষে সকলে মিলে বাইরে চলে যায়! পঞ্চ পান্ডব বোন ফায়ারের ব্যবস্থা করে! তামিম সুবহা ও সেখানে চলে যায়!
বেশ অনেক ধরে তামিম সুবহার হাত ধরে গার্ডেন এরিয়াতে হাঁটতে থাকে! আর পঞ্চ পান্ডব তাদের পিছনে! হঠাৎ তামিম নিজের হাত সুবহার হাত থেকে সরিয়ে তার মুখোমুখি দাড়ায়!
‘ তুই কী আমাকে সত্যি ভালোবাসিস সকাল?”
” জ্বী!”
” কতটা?”
” অনেক!”
” আমাকে ছাড়া থাকতে পারবি?”
” একদমই না! মা-রা যাবো!”
তামিম জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলে, উপরে তাকাই!
” কিন্তু তোকে তো আমাকে ছাড়াই থাকতে হবে রে সকাল!”
সুবহা কিছু না বলে শুধু তামিমের মুখ বরাবর তাকিয়ে তার কথার অর্থ বোঝার চেষ্টা করে!
” ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরে থাকলে কতটা কষ্ট হয় এবার তুই বুঝবি!”
” মানে?”
” তোকে ছাড়া আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি এই ৪৫ দিন! সেটা তুই বাকি জীবন ধরে অনুভব করবি! আমি ম’রে ও বেঁচে ছিলাম, শুধু তোকে এই একই কষ্ট বোঝানোর জন্য! ”
তামিম খুব জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে!
” তাহলে এতো কাছে কেন এলেন?”
তামিম কিছু না বলে সুবহার দিকে তাকিয়ে থাকে! সুবহা তামিমের হাত ধরতেই তামিম নিজের হাত ছাড়িয়ে নেই!
সুবহা খুবই হতাশার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তামিমের দিকে!
” দূরেই যদি চলে যাবেন এতোটা কাছে এলেন কেন?”
” তোর কর্মের ফল বোঝাতে!! ”
” সবই কী নাটক ছিলো?”
” পুরোটায়!”
সুবহার চোখে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে!! তার একটু বিশ্বাস হচ্ছে না এটা তামিম! যেই তামিম তাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো!!
” আমাকে ভালোবাসলেন না কেন তামিম?”
” এমনি!”
তামিম সুন্দর মতো নিজের পকেট থেকে তার চশমা বের করে সামনে যেতে থাকে! সাথে পঞ্চ পান্ডব ও! সুবহা ও আর সামনের দিকে পা না বাড়িয়ে পিছনে পা বাড়ায়! সুবহা ও চলে যেতে থাকে! কিছু দূর যেয়ে সুবহা আবার ও পিছনে ফিরে তাকায়! এই ভেবে যদি তামিম তার দিকে তাকায়! তাকে বুকে জড়িয়ে নেই! সব মজা বলে হাসতে থাকে! কিন্তু নাহ! তামিম তাকায়নি! সে চলে যাচ্ছে, সুবহা ও নিজের চোখের পানি মুছে যেতে থাকে!
চোখের পানিতে সুবহার গলা প্রায় ভরে গেছে! কিছু তেই থামছে না!
একরাশ হতাশা নিয়ে সুবহার মনে কিছু লাইন চলছিলো!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬০
” অনেক গুলো বছর পেরিয়ে যাবে..! ”
” তোমার সঙ্গে আমার.. আর দেখা হবে না!”
” এক শহর.. একই পথ.. অথচ দেখা হবে না!”
” পথ ভুলে ও কেউ কারো দিকে হাঁটবো না!”
” আমাদের অসুখ- বিসুখ হবে.. কিন্তু দেখা হবে না!”