এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৬

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৬
কাফাতুন নেছা কবিতা

তামিম সুবহাকে নিয়ে ভিলাতে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পর পঞ্চ পান্ডব ও চলে আসে! ততক্ষণে সব সার্ভেন্টরা তাদের প্যাকিং সম্পূর্ণ করে রাখে! আজ তাদের বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার দিন!
” আহারে আমার ধলা বউডারে রাইখা যাইতে হইবো রে!”
” ভাত পায় না চা খায়, সাইকেল নিয়ে হা’গতে যায়!”
” সাকিবের বাচ্চা! ”

কালা মানিক আর সাকিবের মধ্যে আবার ও যু’দ্ধ লাগতে লাগতে লাগেনি! কারণ তামিম এমনিতেই সুবহা অসুস্থ! এই সময় যদি তারা কোনো ক্যা’চাল করে, তামিম সকলকে পরপা’রে টিকিট ধরিয়ে দিবে!
অন্য দিকে তামিম সুবহাকে নিয়ে তাদের বেডরুমে চলে যায়! আর দু’জনে সুন্দর মতো রেডি হতে থাকে! সুবহার শরীর অসুস্থ্য থাকায় তামিম তাকে ছোটো বেবিদের মতো রেডি করে দেয়! তামিমের ওই কেয়ারিং বিষয়টি সুবহার খুব ভালো লাগে!!
সুবহা তামিমের গলা জড়িয়ে ধরে!তামিম ও সুবহার মাথায় হাত বুলাতে থাকে!! মাথার সিতির ভাঁজে একটা চু’মু দেয়!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” তামিম!”
” ইয়েস পরী!”
” আপনি আমাকে পরী ডাকেন কেন?”
” শাঁক’চুন্নি ডাকলে কষ্ট পাবা তাই!”
সুবহা তামিমের কথা শুনে হেঁসে উঠে! সে জানে তামিম মজা করছে! পুরো দুনিয়ার সামনে তামিম সব থেকে বেশি কড়া মেজাজের মানুষ হলে ও একমাত্র সুবহার সামনেই সে সব থেকে বেশি রশিক মানুষ! এমন একটা সময় নেই যখন তামিম সুবহাকে হাসায় নি!
তামিম ও যে দিনশেষে এতোটা স্বাভাবিক মানুষ হবে কারো সামনে এটা কল্পনা ও করা মুশকিল ছিলো!!
সুবহার মনে শুধু একটাই ভয় কাজ করছে! তামিম যদি আবার দেশে ফিরে সেই পূরানো রূপ ধারণা করে! তখন??

” তামিম, আপনি কী আবার সেই পুরনো তামিম সরকার হয়ে যাবেন?”
” আমি বরাবরই এমনই ছিলাম সকাল!”
তামিমের কাটকাট কথায় সুবহা বুঝতে পারে, তামিম সরকার কখনো বদলানোর মানুষ নয়! কিন্তু দিনশেষে সে তো সুবহার স্বামী! তার জন্য ও কী সব সময় এমন ঠান্ডা থাকবে না?
” সকাল?”
” হুম!”
” আমার মনে সব সময় একটা কথায় আটকে গেছে! ”
” কীহ?”
” তুই পালালি! কিন্তু তোর ভাইকে কেন সাথে নিলি না? ওকে সেখানেই কেন রাখলি?”
সুবহা তামিমের মুখ বরাবর তাকিয়ে দু-হাত তামিমের গালে রাখে!

” আমি ভেবেছিলাম, আপনি আমাকে ঘৃণা করবেন! আমার সাথে জড়িত কোনো কিছু নিয়ে আপনার আর চিন্তা হবে না! তাই ভাইকে লন্ডনেই রেখেছিলাম!”
” আমি চাইলে ও তোকে ঘৃণা করতে পারবো না পরী! তুই আমার রক্তে মিশে গেছিস! ”
সুবহা খুব অবাক চোখে তামিমের দিকে তাকিয়ে থাকে! এই মানুষকে সে ভুল বুঝে এসেছিলো?’
সুবহা তামিমের মুখ হাল্কা নিচে নামিয়ে তামিমের ঠোঁটে চু’মু দেয়! তামিম ও চোখ বন্ধ করে সুবহাকে কি’স করা শুরু করে!
প্রায় অনেক ক্ষণ যাবত তামিম সুবহা একে অপরকে কি’স করতে থাকে! তারপর সুবহা তামিমকে জড়িয়ে ধরে!!

” তামিম!”
” জ্বি পরী!”
” আই হেট ইউ! ”
” আই লাভ ইউ টু! ”
তামিম সুবহার ঠোঁট মুছে দেয়! তারপর তার চুল ঠিক করে! সুবহা ও তামিমের শার্ট ঠিক করে দেয়!
” একটা রিকুয়েষ্ট করা যাবে?”
” একটা কেন একশোটা করো!”
” আপনি তো আমাদের বাড়িটি পুড়ি’য়ে দিয়েছেন, ওটা কী ঠিক করে দিবেন? ওটা তো আমাদের নিজের বাড়ি ছিলো না! ভাড়ার বাড়ি ছিলো! বাড়িওয়ালার কতো লস হলো!”
তামিম সুবহার গাল ধরে উঁচু করে!

” সুবহা! তুই অনেক ইনোসেন্ট বউ!”
সুবহা তামিমের কথার অর্থ বুঝতে না পেরে শুধু তাকিয়ে থাকে!
” আচ্ছা তোর ফুপিদের নিজের বাড়ি সুইজারল্যান্ডের মতো একটি এক্সপেন্সিভ জায়গাতে! আর তোরা ভাড়া থাকতি বিষয়টি কেমন ওড না?”
” ফুপা অনেক রিচ ছিলো, আর এখানের নাগরিক! ”
” হ্যাঁ! এতোটাই রিচ ছিলো যে, গাঁ’জা সাপ্লাই করে চলতো!”
” মানে!”
” আমার বলদ বউরে! ওগুলো সব তোর টাকা ছিলো! তোর বাপকে পরপারে পাঠিয়ে সব দখল করে। তারপর এখানে চলে আসে! আর শিকদার বাড়িটি ও তোদের! ”
” তাহলে ভাড়া দিতে হতো কেন?”
” ওগুলো তোকে আর তোর মা-কে দেখানোর জন্য! সবই নাটক! “”
” মা তো সব জানতো তাহলে কেন বলেনি?”
” তোর মা জানতো সব বিক্রি হয়ে গেছে! তোর সত বাপ তাকে বলদ বানাই! নয় ছয় বুঝিয়ে সব হাতিয়ে নেই! তোর মা জানতো বাড়িটি বিক্রি হয়ে গেছে! আর মইনুল উদ্দিন অনুরোধ করে সেখানেই ভাড়ার মাধ্যমে আছে! আসলে বাড়িটি তোদেরই ছিলো! তোদের তো চার চাকার একটা ছোটো গাড়ি ও ছিলো তাও সন্দেহ হতো না?”
সুবহা মাথা নেড়ে না বুঝায়!

” তুই না বলদামিতে পিএইচডি করা সুবহা! গাঁধি দের সর্দারনি! ”
সুবহা চুপচাপ তামিমের কথাগুলো হজম করতে থাকে! হঠাৎ করে এতো সত্যি সামনে আসছে তার! সঠিক বুঝতে পারছে না কী রিয়েকশন দেওয়া উচিত!
” এতোদিন ওই লোকটা কেন আমাদের সাথে ছিলো? ”
” তোর ২০ বছর হলে সব কিছু তোর নামে হতো! তাই! সে দিন গুনছিলো! আফসোস তার আগে আমার এন্ট্রি হলো তোর জীবনে!”
সুবহা বেশ হতাশায় পড়ে যায়! তার মনে আরো অনেক প্রশ্ন ছিলো! কিন্তু মুখ ফুটে বলার মতো শক্তি পাচ্ছে না! তার মা এই ঠুনকো জীবনে কত কিছু সহ্য করেছে! সে সম্পর্কে সুবহা কিছুই জানতে পারেনি! মেয়ে হিসেবে নিজেকে খুব ব্যর্থ লাগছে তার! চোখ ভর্তি পানি চলে আসে!
তামিম সুবহার চোখের পানি মুছে দিয়ে তার কপালে চু’মু দেয়!

” যখন বাবা মা সাথে থাকে তাদের মূল্যটা আমরা বুঝিনা! যখন দূরে চলে যায়, তখন বুঝি কী হারালাম!”
তামিম সুবহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে! কিন্তু তাকে কান্না করতে বারন করে না! এতোদিনের চাপা কষ্ট বের হওয়ায় উচিত!
” আমার মা কতো কষ্ট সহ্য করলো আমাদের দুই ভাই বোনের জন্য! কিন্তু তার এক ছিটেফোঁটা ও আমাদের চোখে পড়েনি!”
” সুবহা! ও সুবহা! প্লিজ কাদিস না!”
” মায়ের কথা খুব মন পড়ছে তামিম!”
” মা এমন একটা জিনিস সকাল, পৃথিবীর যেই প্রান্তেই যা মা-কে লাগবেই! যতই বয়স হোক, মা-কে ছাড়া হবে না! তুই জানিস আমি আমার আব্বাকে কেন এতো সম্মান করি?”

” কেন?”
” কারণ আমার আব্বা, আমার আম্মাকে সম্মান করে! শুধু সম্মান নয়, আমার মায়ের জন্য আব্বা জান হাসতে হাসতে জীবন দিতে পারবে! তুই যেমন আমার শখের, আমার আম্মা ও আমার আব্বার ভিষণ শখের রমনী! আমার আম্মা আমার থেকে ও তিনগুন বেশি পাগলামি করেছে আম্মার জন্য! ”
সুবহা খুব মনোযোগ সহকারে তামিমের কথাগুলো শুনতে থাকে! সুবহা নিজের চোখে ও দেখে তানভীর সরকার, আয়েশা সরকারের জন্য এ বয়সে ও কতোটা কেয়ারিং! এখন ও ভয় পায় তাকে! বিষয়টি আসলেই সুন্দর!
তামিমের কথা গুলো শুনে একটু হলে ও সুবহার মন ভালো হয়ে যায়! তামিম সুবহাকে নিয়ে সুন্দর মতো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য রওনা দেয়! যেখানে তাদের প্রাইভেট জেট রাখা!

প্রাইভেট জেটের ভেতরে বসে সুবহা অবাক চোখে সব কিছু দেখছে! এটা প্রথম বার ছিলো যখন সুবহা প্রাইভেট জেটে উঠেছে! তার ধারণা ছিলো এটা ও প্লেনের মতোই হবে কিন্তু উন্নত মানের! কিন্তু সুবহার এই ধারণা ভুল প্রমানিত হয় ভিতরে এসে! রীতিমতো ফাইভ স্টার হোটেলের একটি ফ্লোর বলা চলে! যেখানে সকল সুবিধা থাকে একটা আয়তনের মধ্যে!!

কিন্তু সুবহার আরো অবাক করার বিষয় হচ্ছিল, প্লেনে ওইফাই সংযোগ দেখে! সুবহা জানতো প্লেনে ওইফাই থাকে না! কোনো প্লেনেই থাকে না! এবং ছোটো প্রাইভেট জেট গুলোতে ও নয়! কিন্তু বড় জেট গুলোতে যে থাকে এটা ও সুবহার অজানা ছিলো! পুরো জেট আস্তে আস্তে ঘুরে দেখে! তামিম সুবহাকে রেস্ট নিতে বলে নিজে তার পঞ্চ পান্ডবদের কাছে চলে যায়! কিন্তু এতো ক্ষণ কী বসে থাকা যায়? সুবহা একটু একটু করে উঠে হাঁটার চেষ্টা করে! আর পুরোটা ঘুড়ে দেখার চেষ্টা করে!
হাটতে হাটতে একসময় সুবহার নাকে একটা অদ্ভুত ধরনের ঘ্রাণ ভেসে আসে! ধরতে গেলে খুবই বি’শ্রী!
সুবহা সেই ঘ্রাণ অনুসরণ করে ভিতরে যেতেই দেখে তামিম এবং তার পঞ্চ পান্ডব এক সাথে নিকো’টিনের ধোঁয়া ছড়াচ্ছে!!
সুবহা খুব চোখ মুখ শক্ত করে একদম ভিতরে ঢুকে যায়!
তামিম সুবহাকে দেখা মাত্র তার সিগা”র সাথে সাথে ইস্ট্রেতে ফেলে দেয়! আর ভদ্রলোকের মতো দাড়িয়ে পড়ে!!
বাকিরা ও তাই করে!

” এ-কী! আপনারা ধুম’পান করছেন?”
” ধুম’পান কই ভাবি-মা? আমরা তো বি:ড়ি খাইবার লাগছি!”
সুবহা সাকিবের কথায় পুরোপুরি বোকা বনে যায়! আসলে সুবহার জানা ছিলো না যে, ধু’মপান আর বি:ড়ি খাওয়া আলাদা বিষয়!!
সুবহা রেগে বাইরে চলে যায়! তামিম বুঝতে পারে আজ সুবহা খুব চটে গেছে!
” একটু শান্তিতে বি’ড়ি ও টানতে দেয় না! কপাল রে ডাইনি একটা বউ পাইছি!”
তামিম নিজের দুঃখ প্রকাশ করে, সাথে সাথে বাইরে চলে আসে! সুবহাকে রাগানো যাবে না! এমনিতেই সে অসুস্থ! আরো অসুস্থ করা যাবে না!!

” ও বউউউউউ! ”
” একদম নাটক করবেন না! ”
” করলাম টা কী বউ!”
” আপনি ধুম’পান করেছেন!”
” আমি খাই নায় সুবহা! শুধু একটু টেস্ট করছিলাম মাত্র! ”
সুবহা তামিমকে পাত্তা না দিয়ে রুমে যেতে থাকে! তামিম সুবহার হাত ধরে আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সুবহা তামিমের গাল বরাবর ধীরে একটা চ’ড় বসিয়ে দেয়! তারপর চলে যায়! তামিম গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকে! আর তার পঞ্চ পান্ডব এসে হাজির হয়! তারা অবশ্য আড়াল থেকে সবই দেখেছিলো!

” ভাই?”
” কিছু কইলেই মা’রে! ”
পঞ্চ পান্ডব মুখ বন্ধ করে নিজের হাসি থামানোর চেষ্টা করে! এখন হাসলে তামিম তাদের মাঝ আকাশ থেকেই ফেলে দিবে!
তামিম ও হনহনিয়ে কিং রুমে চলে যায়! যেখানে সুবহা দরজা বন্ধ করে বসে থাকে!
তামিম এস বিসমিল্লাহ বলে দরজায় নক করে! কিন্তু সুবহা খোলে না! তারপর বেশ কয়েকবার জোড়ে জোড়ে ধাক্কা দেয়! সহ্য করতে না পেরে সুবহা আস্তে আস্তে করে উঠে দরজা খুলে খুব রাগি লুকে তাকায় তামিমের দিকে!

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৫

” থাপ্প’ড় খাওয়ার পর ও চলে আসলেন?”
” মরে’ছো প্রেমের চ’টকানা, হের লাইগ্গা কী তুমি প্রেম দিবানা? ”
” ডিপজলের খালাতো ভাই! ”
” হুমমম! তাহলে তো ডিপজলের মতো খলচরিত্র গুলো ও তো করতে হয়!”
” ম..মানে?”
” আহো..ভাতিজি আহো..!”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৭