এমপি তামিম সরকার পর্ব ৮৫
কাফাতুন নেছা কবিতা
”তেজ দেখাস, তামিম সরকারকে তেজ দেখাস! অনেক সহ্য করছি তোকে! বের হো আমার চোখের সামনে থেকে! ”
গালে হাত দিয়ে চুপচাপ উঠে দাড়ায় সুবহা! কোনো কথা নেই! কোনো প্রশ্ন নেই! কোনো অভিযোগ নেই! তামিমের দিকে একবার ফিরে ও তাকায় না সে! মাথা নিচু করে দরজার সামনে আসতে থাকে! তামিম ও দাড়িয়ে থাকে ঠিক সেভাবেই!
কোনো প্রকারের কোনো অভিযোগ ছাড়াই বাড়ির বাইরে চলে আসে সুবহা! সুবহা ভেবেছিল হয়তো তামিম তাকে আটকাবে! কিন্তু না তামিম তাকে আটকাইনি!
রাত তখন ১ টার কাছাকাছি, চুপচাপ জনশূন্য রাস্তায় হাঁটতে থাকে সুবহা! হাতে কোনো টাকা নেই, যাওয়ার জায়গা নেই! আপন বলতে কেউ নেই, কোথায় যাবে সে! তাই দৃষ্টি সামনের দিকে রেখে হাঁটতে থাকে! আল্লাহর দুনিয়া বিশাল বড়! হয়তো তার জন্য ও কোথাও না কোথাও একটু আশ্রয় রাখা আছে!
পেটে খুদা, গলা শুকিয়ে কাঠ, এভাবে প্রায় ঘন্টার পর ঘন্টা হেঁটেই চলছে সে! চারপাশে শুধু জোড়ে বাতাসের প্রতিধ্বনি ভেসে আসছে, কোনো মানুষের নিঃশ্বাসের আওয়াজ অব্দি পাওয়া যাচ্ছে না!
বেশ কিছু ক্ষণ পর সুবহা লক্ষ্য করে বাতাসের ধ্বনি ভেদ করে প্রায় ৫-৬ টা গাড়ি এসে তার চারপাশে গোল হয়ে দাড়ায়!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
একসাথে এতো গুলো কাস্টমাইজড করা ব্ল্যাক কার দেখে সুবহা বুঝে যায় এগুলো কার গাড়ি! সরকারের ছেলের বডি গার্ডদের গাড়ি এগুলো সেটা সুবহা দেখেই বুঝতে পেরেছে!
মাঝের একটা গাড়ি থেকে তামিম তাড়াতাড়ি করে নেমে আসতে থাকে! হাতে তার গোল্ডেন চাপাতি! এতোদিন পর কী নিজের বউকে খুন করার জন্য তামিম সরকার তার গোল্ডেন চাপাতি হাতে নিয়েছে?
সুবহা চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে! আর তামিম তার সামনে এসে দাড়ায়!
”চল বাড়ি চল!’
তামিমের কোনো কথার উত্তর দেয় না সুবহা! একটু আগে সে নিজের মুখে বের হতে বলেছে, এখন কেন সুবহা যাবে তার সাথে?
”কী হলো কথা কানে যায় না? গাড়িতে উঠঠঠ!”
সুবহা তামিমের পাশ কাটিয়ে সামনের দিকে হেঁটে যেতে থাকে!
তামিম সুবহার ঘা’ড় চেপে ধরে তার গোল্ডেন চাপাতিটি সুবহার গলায় ধরে!
” তেজ দেখাস? আমাকে তেজ দেখাস! তোর বয়সের থেকে আমার খু’নের সংস্যা বেশি, আর তুই দুই দিনের ছেমরি আমাকে তেজ দেখাস! মেরে লাশ গায়েব করে ফেলবো”
তামিম চোখের চাহুনি বলে দিচ্ছে সে কতটা রেগে আছে আজ সুবহার উপরে! সুবহা ও তামিমের মতোই ত্যাড়ামি করে রইল! কোনো কথার উত্তর দেয় না তার!
”কী-রে কথা বল?”
কথায় আছে অল্প সুখে কাতর, আর অধিক সুখে পাথর! সুবহার বেলায় ও ঠিক তেমন টাই হলো! তামিমের কথায় সে এতোটাই আঘাত পেয়েছে যে মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয় না!
আর অন্য দিকে তামিমের রাগের পারদ ফেটে পড়তে থাকে!
তামিম সুবহার বাহু ধরে টেনে হিছড়ে নিয়ে যেতে থাকে গাড়ির কাছে! সুবহা নিজের হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়, কিন্তু কোনো লাভ হয় না, তামিম রিতীমত তাকে টেনেই গাড়িতে তোলে!
নিজের কোলে শক্ত করে ধরে রাখে তাকে! সুবহা কয়েকবার উঠার চেষ্টা চালিয়ে যায়, কিন্তু পারে না! এক পর্যায়ে চুপচাপ বসে থাকে তামিমের কোলে!
গাড়ি চলতে থাকে আপন গতিতে! তামিম সুবহা কারো মুখে কোনো কথা নেই! বেশ অনেকটায় সময় লাগে সরকার বাড়িতে পৌঁছাতে!
তামিম সুবহাকে ছোটো বেবিদের মতো ক্যারি করে সরকার বাড়ির ভিতরে আসতে থাকে! সুবহা ও চুপচাপ থাকে!
তামিম সুবহাকে নিয়ে সোজা তাদের রুমে চলে যায়! দরজা লক করে সুবহাকে খাটে বসায়! তামিম ও তার পাশে এসে বসে! সুবহার দৃষ্টি তখন ও নিচে!
” আমি কিন্তু রাগ কন্ট্রোল করার লোক না সকাল! ”
সুবহা উঠে দাঁড়ায়! আর তামিমের দিকে তাকায়! চোখ বেয়ে অজস্র অশ্রু বয়ে চলছে তার!
” বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছেন, গেছিলাম! আবার কেন আনলেন? অপমান করার জন্য? এখন ও মন ভরেনি অপমান করে? এর পর কী পায়ে পড়লে খুশি হবেন আপনি?”
তামিম উঠে সুবহার মুখ বরাবর দাড়ায়! আর খুব জোড়ে সুবহার গাল বরাবর আবারও চ’ড় বসিয়ে দেয়! ফ্লোরে ছিটকে পড়ে সুবহা! প্রচন্ড রাগে ফুলতে থাকে সে! গালে হাত দিয়েই তামিমের দিকে তাকায়!
” আপনি ভালোবাসার যোগ্য না তামিম সরকার! থাকবো না আমি আপনার সাথে! তালাক দিবো আপনা…!’
পুরো কথাটি শেষ করার আগেই ফুলদানি নিয়ে ড্রেসিং টেবিলে ছুড়ে মা’রে তামিম! প্রচন্ড রাগে হাঁপাতে থাকে সে!
” এই জন্মে তুই তালাক পাবি না!”
কথাটি বলেই রুম থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে পরে তামিম! আর অপরদিকে কান্নায় ভেঙে পড়ে সুবহা! হাটু মুড়ি দিয়ে কাঁদতে থাকে সে! এক সময় মাথায় কারো হাত অনুভব করায় উপরে তাকায় সুবহা!
” মা..!”
আয়েশা সরকারকে জড়িয়ে ধরে সুবহা! আয়েশা ও সুবহার মাথায় হাত বুলাতে থাকে!
” আমার ছেলেটা ভালোবাসার কাঙ্গাল রে মা! এমন ছিলো না ও জানিস! পরিস্থিতি, আমরা, ওকে এমন করে তুলেছি! না-হলে গিটারের জায়গায় হাতে অ’স্ত্র কেন তুলে নেবে বল!”
আয়েশা সরকারের কথায় সুবহা তার দিকে তাকিয়ে থাকে! গিটারের জায়গায় অ’স্ত্র? কোনো কিছুই মাথায় ঢোকে না তার!
আয়েশা সরকার উঠে দাড়ায়! আর সুবহার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করেন…!
–আজ থেকে ১১ বছর আগের কথা! ২৬শে জানুয়ারি ২০১৪ সাল! তামিমের আব্বা নির্বাচনে দাড়ায়! সরকার ভাই থেকে যখন সে একদম একজন ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষ হয়ে যায়, তখন আমারই জন্য সে নির্বাচনে দাড়ায়!
সরকার ভাই নির্বাচনে দাড়িয়েছে আর জয়ী হবে না এটা তো দূর স্বপ্ন! হলো ও তাই! সংসদে ৩৫০ টি আসনের মধ্যে ‘একতাই বল’ বিপুল হারে ভোট পায়! আর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হয় তানভীর সরকারকে! সেদিন আমরা সবাই খুব খুশি ছিলাম, তামিমের আব্বা প্রধানমন্ত্রী হয়ছে, দেশ চালাবে! আমার ছেলে তামিম, তাসকিন ও খুব খুশি হয়!
তামিম ছিলো একদম ঠান্ডা প্রকৃতির ছেলে! ১৭ বয়সেই অনেক বুদ্ধিমান ছিলো তামিম! সারাক্ষণ গিটার নিয়ে থাকতো, ইচ্ছে ছিলো বড় মিউজিশিয়ান হবে! তার গানের গলা ও ছিলো মারাত্মক সুন্দর! আর আমার ছোটো ছেলে তাসকিন, সে ছিলো ভাই ভক্ত! বড় ভাইয়ার আচার আচরণ সব অনুকরণ করতো! সে সব সময় চাইতো তামিমের মতো হবে! তামিম সারাক্ষণ তার ভাইকে সাথে নিয়ে থাকতো!
জানো, নির্বাচনের পর ২৭ শে জানুয়ারি ছিলো তামিমের আব্বার শপথ গ্রহণের সময়! সকাল ১১ টায় তার শপথ গ্রহণের সময় ধার্য করা হয়! তামিম আমি আর তাসকিন ঠিক করি, সেদিন আমরা এতিমখানাতে খাওয়াবো! তামিমের আব্বা শপথ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এতিমখানাতে আসে বাচ্চাদের থেকে দোয়া নিয়ে যাবে!
তামিমের আব্বা বের হয় শপথ গ্রহণের উদ্দেশ্যে, আর আমরা তিনজন এতিমখানার উদ্দেশ্যে!
সবকিছুই ঠিক চলছিলো, বাচ্চাদের খাওয়ার সব কিছু আমি নিজে দেখতে লাগলাম, কো’পা শামসুর বাবা ছিলো তখন এতিমখানার দায়িত্বে! গরু থেকে শুরু করে সব কিছু সে কাটতো, তামিম তাসকিন চলে যায় সোজা সেখানে, গরু কাটা দেখবে বলে, আমি ও তাদের বাঁধা দেয় না, বাচ্চাদের সাথে থাকলে তাদের ও মন মানুষিকতা পরিবর্তন হবে!
আমি ও চলে যায় তাদের সাথে, যখন চাপাতি দিয়ে মাংস কাটা হচ্ছিল, তখন বিকট আওয়াজ আসে বাইরে থেকে! দুই-তিন জন বাইরে চলে যায়, কী হয়েছে দেখার জন্য, কিন্তু অনেকক্ষণ যাওয়ার পর ও আর কেউ আসে না! শামসুর বাবা ও চলে যায়, তারপর সে ও আসে না! আমি, তামিম, তাসনিক কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করে যখনই বাইরে যেতে চাই, তখনই দেখি ১২-১৩ জন হেটে আমাদের সামনে আসছে!
তারা এসেই আমাকে সালাম জানায়, আমি ও উত্তর দেই! তখন বুঝতে পারিনি, আসলে কী হতে যাচ্ছিল আমাদের সাথে!
তারপর আমাদের কিছু লোক ভিতরে আসে! তারা আসাতেই তাদের উপরে ঝাপিয়ে পড়ে বহিরাগত লোকরা! প্রচন্ড মারা:মারি হতে থাকে! আমি তামিম আর তাসকিনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পথ খুজছিলাম! কিন্তু চারপাশে এতো লোক ভরে গেছিলো, কোন দিক দিয়ে বের হবো বুঝতেই পারি নি!
এক এক যখন আমাদের সমস্ত লোকগুলোকে মে’রে ফেলা হয়, তখন বাকি ছিলাম শুধু আমরা! লোক গুলো এক এক করে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে, আর আমার ভয় বাড়তে থাকে! তামিম তাসকিনকে কীভাবে বাঁচাবো?
তারা আমাদের ঘিরে ফেলার পর, দেখি পিছন থেকে আরে সাত জন আসছে, বিরোধী দলের নেতা, তার কয়েকজন লোক, থানার অসি, তাদের দেখা মাত্র বুঝে যায়, আজকে আর শেষ রক্ষা হবে না আমাদের!
আমি তাদের হাতে পায়ে ধরে প্রচন্ড মিনতি করতে থাকে! আমাকে মে’রে ফেললে ও আমার ছেলে দুটোকে যেনো ছেড়ে দেয়! কিন্তু না, তারা সেটা করেনি! আমার ছেলেদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়!
তারপর আমার শাড়ি টান দিয়ে খুলে ফেলা হয়!
বাকি কথাটুকু শেষ করার মতো আর সাহস পায় না আয়েশা সরকার! নিজের মুখে নিজের অসম্মানের কথা কীভাবে শিকার করবে সে!
সুবহার ও চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে!
” আমার আয়েশা ঠিক ততটাই পবিত্র, যতটা পবিত্র একজন নবজাতক শিশু হয়!”
তানভীর সরকারের কথা কানে ভেসে আসতেই দরজার দিকে তাকায় সুবহা এবং আয়েশা সরকার!
তানভীর সরকার এসে আয়েশা সরকারের চোখের পানি মুছে দেয়! তারপর তাকে বিছানাতে বসায়! গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে নিজের হাতে খাওয়ায় তাকে! তারপর ও আয়েশা সরকারের কান্না থামে না! পূরনো ঘা আজকে আবার ও সজাগ হলো তার!
”আমার আয়েশার শাড়ি খুলে ফেলেছিলো জানো’য়ার গুলো! তাকে অসম্মান করার লক্ষ্যে, কিন্তু ছেলে হয়ে মায়ের অসম্মান কীভাবে দেখবে সন্তানরা? সেই মাংসা কাঁ’টার জায়গা থেকে একটা চাপাতি তুলে নেয় তামিম! যেটা তার গোল্ডেন চাপা’তি এখন! সেই চা-পাতি দিয়েই এক এক করে সকলকে মা’রতে থাকে তামিম! কিন্তু তামিম ছিলো একা! আর ওরা অনেক জন! আমার ছেলের পক্ষে সম্ভব হয়নি, লড়াই করা! তাসকিন প্রচন্ড ভয়ে কাঁপতে থাকে!
আলাউদ্দিন শেখ, একটা বড় ছু’রি নেয় তামিমকে মা’রার জন্য! কিন্তু তামিমের পিঠে ঢুকিয়ে দেওয়ার আগেই আমার তাসকিন এসে দাড়ায়! ভাইকে বাঁচানোর জন্য! পুরো ছু’রিটা আমার তাসকিনের পেটে ঢুকে যায়!
তামিম নিজের হাতে চাপা’তি ফেলে দেয়, ভাইকে ধরে ফেলে! তাকে কোলে তুলে নেয়, যদি ডাক্তারের কাছে নিতে পারে, বেঁচে যেতো ছেলেটা! কিন্তু জানো’য়ার গুলো আমার ছেলেকে বাঁচতে দেয় নি! ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তামিমকে! ছিটকে পড়ে তাসনিক মাটিতে! তামিম তাদের হাতে পায়ে ধরে কিন্তু কোনো লাভ হয় না! কয়েকজন তামিমকে ধরে রাখে, আর কয়েকজন আয়েশাকে! ”
তানভির সরকার নিজের পুরো কথাটি শেষ করতে পারে না, মোচড় দিয়ে উঠে তার বুক! আয়েশা সরকার সুবহার দিকে তাকায়!
” আমাকে আর তামিমকে ধরে রাখা হয়! আর আমাদের চোখের সামনে আমার ছেলেটাকে দুই টুক’রো করা হয়! কত ছটফট করলো ছেলেটা! আমি আর তামিম কত চেঁচালাম! কেউ আসলো না জানো! আমার ছেলেটা কত কষ্ট পেয়ে মর’লো! তারপর তাদের টার্গেট হই আমি! জানো’য়ার গুলো আসতে থাকে আমার দিকে! দু’জন হাত ধরে রেখেছিলো, কিছু করতল পারছিলাম না, তামিম বার বার বলছিল, আমার আম্মাকে ধরে না, আমাকে মা’রো দরকার হলে, কিন্তু তাদের পাষণ্ড হাসি বলে দিচ্ছিল ছেলের সামনে মায়ের ইজ্জ’ত যাওয়ার কথা! আমার খুব কাছে আসতেই একটা ইট আলাউদ্দিন শেখের চোখ বরাবর লাগে, চোখ ধরে বসে পড়ে সে,
দূর থেকে, সাকিব তার চোখের এই অবস্থা করে! ছোটোবেলা থেকেই সাকিবের হাতের নিশানা একদম পাকা! তারপর তার পিছু পিছু, মাহির, রফিক, মানিক,মফিস বের হয়ে আসে! মাহির ইশারা করতেই দু’জন চা’পাতি নিয়ে আমার কাছে আসে আর তিনজন তামিমকে বাঁচাতে যায়! কিন্তু বড় বড় লোকদের সাথে তারা পাঁচ জন ঠিক ভাবে পেরে উঠছিলো না! ঠিক তখন শামসু আসে তার, তার বাবার সাথে থেকে থেকে কাটা’কাটিতে দক্ষ হয়ে যায়! তার দক্ষ হাতেই কয়জনকে কো’প মারে, তারপর বাকি বাচ্চারা ও চলে আসে!
সে যাত্রায় আমি বেঁচে গেলে ও তামিম বাঁচতে পারেনি! তাকে ধরে নিয়ে যায় অসি! আর আমি আমার তাসকিনের কাটা লা’শ নিয়ে হসপিটালে যায়! যত কোনো জাদু হয়! কিন্তু ছেলেটা তো সেখানেই মা-রা যায়!
এতোকিছুর পর আমি খোঁজ করতে থাকি তামিমের বাপের! এতো কিছু হয়ে গেলো, অথচ সে জানলো না! খোঁজ নিয়ে জানতে পারি,
তামিমের বাপ হসপিটালে! বো’ম ব্লা’স্ট হয় তার গাড়িতে! ভাগ্য ভালো থাকায় সে বেচে যায়! কিন্তু অবস্থা করুন! একদিকে স্বামী মৃত্যুের সাথে লড়াই করছে, আরেকদিকে, ছোটোছেলে মৃত, বড় ছেলের কোনো খোঁজ নেই! আমি পাগল হয়ে গেছিলাম, সব থেকে খারাপ ভাগ্য ছিলো, আব্বার বাড়িতে চলে যায় আমি, সেটাই ছিলো আমার শেষ আশ্রয়! আব্বা আর চাচারা মিলে আমার তাসকিনকে মাটি দেওয়ার ব্যবস্থা করে! পোড়াবাড়ির ভিতরে আমার তাসকিনকে মাটি দেওয়া হয়! কোনো কবরস্থানে জায়গা পায়নি ছেলেটা! অর্ধেক লা’শ ছিলো তাই! তাসকিনের মাথা খুঁ’জে পাইনি! হসপিটাল থেকে সরানো হয়! কিন্তু আমার আব্বার দাপটে অর্ধেক লা’শ নিয়ে এসে মাটি দেয়! তখন ও জানতাম না আমার তামিম কোথায়! খুজতে বের হলাম, কিন্তু যখন জানলাম আমার শেষ আশ্রয়! আমার আব্বাকে ও মে’রে ফেলা হয়!আকাশ ভেঙে পড়ে আমার মাথায়! যাওয়ার সব রাস্তা শেষ আমার!
কী করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম, কিন্তু অবাক করার বিষয় ছিলো, কোনো মিডিয়া এটা কাভার করে নাই! তখন বুঝলাম, কত বড় হাত এটার পিছনে! জোর যার মুলুক তার! সবই পাওয়ারের খেলা!
আমি পাগলের মতো তামিমের সন্ধান করতে থাকি, তারপর দুইদিন পর খবর আসে তাকে আরশিনগরের থানাতে নেওয়া হয়েছে! আমি সেখানে ছুটে যায়!
থানায় যাওয়ার পর তারা তামিমের সাথে আমাকে দেখা করতে দেয়নি! আমার ছেলে কী অবস্থায় আছে জানতাম না, ১৮ বছরের নিচে হলে তো কিশোর উন্নয়নে দেওয়া হয়! কিন্তু আমার ছেলে ছিলো হাযোতে! আমাকে বলা হয় যদি ছেলেকে চাই, তাহলে যেন প্রেস ব্রিফিং করে বলে দেয়, তানভীর সরকার পদত্যাগ করেছে! আমি জেদ ধরি আমার ছেলেকে দেখতে দিলে আমি সব শর্ত মানবো! তারা আমার জেদের কাছে হার মানে! তামিমকে দু’জন কনস্টেবল ধরে বাইরে নিয়ে আসে!
আমার ছেলেটা হাঁটতে পারছিলো না, দাগে ভর্তি ছিলো মুখ চোখ! আমি ছেলের কাছে গেলাম, সে শুধু বললো,
” আম্মা ওরা আমাকে পানি খাইতে দেয় নাই!”
বুকটা ফেটে যাচ্ছিল আমার! আমার ছেলেটাকে কত অত্যাচার করা হয়েছে! পানি ও খেতে দেয় নাই! ওসিকে বললাম তাকে পানি দিতে! দিলো না! এক ফোটা পানি দিলো না আমার ছেলেকে!
আমি বের হয়ে সোজা হসপিটালে আসি!
তানভীর তখন সবে মাত্র চোখ খুলেছে! দুইদিন পর চোখ খুললে ও সে হাটার মতো শক্তি পায়নি! আমি সোজা তানভীরের কেবিনে চলে যায়! তাকে বলি যদি বেডার মতো বেডা হয় উঠে দাঁড়াইয়া আমার সাথে যাবে, আমার ছেলেকে ছাড়াবে! আর শপথ ও গ্রহণ করবে! তানভীর আমার কাঁধ ধরে উঠে দাড়ায়! খুড়াতে খুড়াতে থানায় যায়, তানভীরকে দেখা মাত্র তারা আমার ছেলেকে নিয়ে আসে!
তামিমের মুখ কত শুকনো ছিলো! এতে দাগ! এতো মা’র মেরেছিল আমার ছেলেটাকে! আমি পানি খাওয়ায় ছেলেকে! তারপর সাথে নিয়ে আসতে চাই! কিন্তু তামিম বাঁধা দেয়, আরো পাঁচ জন আছে তার সাথে!
তাদের ও বের করতে বলে! তামিমের সাথে তাদের ও বের করা হয়! তারপর আমরা সোজা সংসদে চলে যায়! তানভীর শপথ গ্রহণ করে! প্রধানমন্ত্রী হয় সে!
কিন্তু তারপর থেকে শুরু হয় তামিমের ধ্বংসের খেলা! সেদিন সে ১৩ জনকে পরপারে পাঠায়! যেটা দূর্ঘটনা বলে জানানো হয়! ”
আয়েশা সরকার জোরে নিঃশ্বাস ফেলে! সুবহা চুপচাপ আয়েশা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকে! ছোটোবেলা শুনেছিলো, তানভীর সরকার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ১৩ জন নেতার লা’শ পাওয়ায় যায়! এটা ও শুনেছিলে, তামিম সরকার ছিলো এটার পিছনে! কিন্তু স্বাক্ষী প্রমাণ না থাকায় কে’স বন্ধ হয়ে যায়! দূর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়! রাতারাতি মিডিয়া ও সব খবর নষ্ট করে ফেলে!
” আমি এমনই এক হতভাগ্য পিতা, যে নিজের সন্তানকে মাটি দিতে পারিনি! যার জন্য বড় ছেলে ও স’ন্ত্রাসী হয়ে যায়! মানুষের বাবারা তাদের ছেলেদের সফলতা হিসাব করে রাখে, আর আমি হিসাব করি আমার ছেলে আজকে কয়টা খু’ন করেছে! তারপর সেগুলো ধামাচাপা দেয়! ”
সুবহার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয় না! আজকে সে এমন কিছু জানলো যেটা অনেক আগেই তার জানা দরকার ছিলো!
আসলে তামিম সরকাররা কখনো নিজ থেকে খারাপ হয় না! তাদের এই সমাজ, এই সিস্টেম, ক্ষমতায় থাকা জানো’য়ার গুলো খারাপ বানায়! তামিম ও তো আর পাঁচটা ছেলের মতো হতে পারতো, কিন্তু না! সে হলো খু’নি! তারপর থেকে তামিম সরকার হয়ে যায় ৮-৮০ সকলের ভয়ের কারণ! বাবার সাথে ছায়ার মতো থাকে সে!
” আমার পোলা, বহু বছর আমার কোলে মাথা রাখে নাই জানো! কারণ মাথা রাখলেই তার তাসকিনের কথা মনে পড়তো, দুই ভাই একসাথে কোলে মাথা দিয়ে টিভি দেখতে! কিন্তু আজকে আরেকজন নাই! তামিম সব সময় পোড়াবাড়িতে থাকে কেন জানো? তার ভাইকে পাহারা দিতে!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৮৪
যে তার মনে না হয়, সে একা! আর সেখানেই রঙ্গমঞ্চ খানা তৈরি করে! ভাইয়ের খু’নিদের এক এক করে সেভাবেই মা’রে! যেভাবে তাসকিনকে মা-রা হয়েছিলো!””
তামিম, রঙ্গমঞ্চ খানা, গো’ল্ডেন চা’পাতি, পোড়াবাড়ি, ২০১৪ সালের ২৭ শে জানুয়ারি, এক এক করে পুরো ইতিহাস সুবহার চোখে ভেসে উঠে! একটা কষ্ট পেয়ে তামিম সরকার আজকে ভয়ংকর এমপি তামিম সরকারে পরিনত হয়েছে?
তামিম সরকার রা নিজ থেকে খারাপ হয় না! এই সমাজ তাদের খারাপ করে তোলে!
Baki part koi