এলিজা পর্ব ১৬

এলিজা পর্ব ১৬
Dayna

চারিদিকে অন্ধকার নিস্তব্ধ আকাশ। দূরে দু একটা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে।
গাঁ ছমছম । মৌলবি সাহেব হাপাতে হাপাতে বললো,আর পারছি না আর পারছি না।ধংস হবে ।ওদের অভিশপ্ত রাজ্য শীঘ্রই শেষ হবে।
মৌলবী সাহেব এর পূরো শরীর থেকে অঝরে ঘাম ঝরছে।বার বার ঢেক গিলছে।
বয়স প্রাই ৬০,, শরীরে মোটামুটি বল শক্তি আছে,, কিন্তু আজ যে সে ক্লান্ত।

রাস্তার দুপাশের ঝোপঝাড় থেকে,, চপর চপর পায়ের আওয়াজ।কেউ ধেয়ে আসছে। মৌলবি ভাবছে ওরা নয়তো?
,, হঠাৎ করেই দু’পাশের ঝোপঝাড় থেকে বেড়িয়ে আসে,, দুটো ছেলে। মৌলবী সাহেব এর কলিজা কেঁপে উঠে। মুখোশধারী দু’জন ছেলে।দেখতে লম্বাটে শরীর কালো পোশাক। চেনার কোন উপায় নেই ।কালো মুখোশ পরিধান করা। তাদের হাতে রা,ম দা।
একজন মুখোশ’ধারী বললো,
মৌলবী সাহেব এত তারা কিসের ?আমাদের সাথে একটু কথা বলুন এরকম করছেন কেন? বললো একজন মুখোশ,ধারী।
সে যে কথা বলার ভঙ্গিমা,, যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে।
কারা তোমরা আমার পথ কেন আটকাচ্ছো, যাইতে দাও যাইতে দাও‌।
মুখোশ’ধারী বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আহহা অহা কি করে যেতে দেবো বলুন তো,, আপনাকে যেতে দিলে তো খেলা বন্ধ হয়ে যাবে। বলেই একজন মুখোশধারী ভয়ংকর ভাবে হেসে উঠে।
এই হাসি তে যেন চন্দ্র তারাও ভয় গেছে ।
,,এ কোন অচেনা গলা এই গলা আগে তো শুনিনি। কি চায় এরা।
দুটো ছেলে কি ভয়ং’কর ভাবে হাঁসছে। দেখছে আর ভাবছে মৌলবী।ভয়ে আদমরা হয়ে যাচ্ছে।
মৌলবীর বুঝতে আর বাকি রইলো তার সময় ক্ষনিয়ে এসেছে।
মনে মনে কলেমা পরতে থাকে। মৌলবীর পাগড়ি সব মাটিতে লুটিয়ে যায়,।জীবন বাঁচানোর চেষ্টা সবাই করে। মনের অজান্তে এক দিকে এক দৌড়।সামনে থেকে হঠাৎ,, কেউ থমকে দারায়। হাতে রাম দা,, নিয়ে তেরে আসছে ।মৌলবী মাটিতে পড়ে যায়। চেনা যাচ্ছে না, কালো মুখোশ,, অবাক করা বিষয় হচ্ছে এ কোন ছেলে নয়। একজন মেয়ে মানুষ। কে সে।

এককদম , দু, কদম পেছনে এগোতেই। ছেলে দুটোর সাথে ধাক্কা লেগে যায়। মৌলভি মাটিতে পরে যায়।
কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো ,আমাকে মেরে কি পাবি তোরা ,, তোদের এই খেলা শেষ করতে আল্লাহ কাউকে না কাউকে ঠিক পাঠাইবো।
কথা শেষ হওয়ার আগেই,পেছন থেকে সেই অচেনা মুখোশধারী মেয়েটি ,, এলোপাথাড়ি ছুরি,র আঘাতে শেষ করে দেয়।
মৌলবী সাহেব,, মাটিতে লুটিয়ে পড়ে,, কয়েকটা হেঁচকি তুলে।
মৌলবী সাহেব এর চোখ বুঝবে বুঝবে, ঠিক তখনই,, খু”নির গুলোর দিকে তাকায়।
মুখোশধারী ছেলে দুটো , একে অপরের হাত রেখে, এমন ভঙ্গিমা ,, করলো যেন , তারা তাদের কাজ হাসিল করেছে।

তাদের হাত দুটোর উপরে মেয়ে টিও হাত রেখে,, মুখোশ টি খুলে ফেলে।
মৌলবী সাহেব মৃত্যুর আগে ,, মেয়েটি দেখে নেয়।
মৌলবী সাহেব যা দেখলো তা দেখার জন্য কাশ্মীম, কালেও প্রস্তুত ছিলো না ।
,, মৌলবি সাহেব,, বিড় বিড় করে বলতে বলতে থাকলো। তোদের এই পাপের খেলা বন্ধ হইবো।
বলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ,,
শান্তা দরজাটা খোল।
শান্তা : আমি পরতেছি তুমি যাও।
মেয়েটা কোন কথা শোনার নয়।
সাত সকালে কে আসলো?
দরজায় খুলেই জবেদা, বেগম তার ছেলেকে দেখে অবাক হয়ে যায়।
জবেদা বেগম : শায়ান বাবা তুই ?? কাউকে কিছু না বলে চলে আসলি?? শহরে কিছু হয়েছে??
শায়ান : মা– এত গুলো প্রশ্ন একসাথে করলে কোন টা রেখে কোনটার উত্তর দেবো। বলেই ব্যাগটা মায়ের হাতে দেয়,,
মনে পরছিলো তোমাদের তাই চলে আসলাম।তোমাদের এসে সারপ্রাইজ দিবো ভাবলাম, আর দেখলে কেমন ঘাবরে দিলাম।

জবেদা : পাগল ছেলে।
ফরিদ : কে এসেছে আমার বাপজান এর গলা পাচ্ছি -।
হ্যাঁ বাবা আমি। খুব মনে পরছিলো তোমাদের। তাই চলে আসলাম তোমাদের কিছু না জানিয়ে।
শায়ান বললো,মা আমাকে পানি খেতে দাও।
সমস্ত পথ শায়ান কিভাবে এসেছে তা শুধু শায়ান ই জানে। পিপাসায় কাতর।
ফরিদ সাহেব ঘরে আছেন ও ফরিদ সাহেব। ডাকছে মাস্টার সাহেব।
মাস্টার সাহেব আপনি?——

মাস্টার সাহেব: এদিকে তো মহাবিপদ হয়ে গেছে আর আপনি কিছু জানেন না??–
ফরিদ : কেন কি হইছে হেঁয়ালি না করে বলেন ।
মাস্টার সাহেব: মৌলবী সাহেব, রে কারা যেন খু,,ন করেছে।
চট করে শায়ান এর হাত থেকে কাচের গ্লাস টা মাটিতে পরে যায়।
,, সকলের চোখ মুখ ছানাবরা হয়ে যায়, মৌলভী সাহেব খু,,ন হয়েছে।
ফরিদ মাস্টার কে নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যায় মৌলবীর বাড়ি।
এটা কি করে হতে পারে,, এটা কি করে হতে পারে,,
এ আমি কি করলাম। রাতে যদি একবার মৌলবী চাচার কথা শুনতাম । আমি কি তাকে বাঁচাতে পারতাম?হয়তো পারতাম,, কে করলো এমন ‌।একজন মৌলবির সাথে ই কার কি শত্রুতা।হাজার টা প্রশ্নে শায়ান এর মাথা ধরে যায়। মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে।

শায়ান আর মৌলবী দের বাড়ি যায়নি । তার পায়ের হাটার জোর শক্তি চাপসে গেছে‌।
ক্লান্ত শরীরে – কি বলতে চেয়েছিলো মৌলবী ‌। ভাবতে থাকে শায়ান।
জয়তুন: শুনছেন ,, ওঠেন ওঠেন,, আর ঘুমাইতে হইবো না।
রমজান : সাত সকালে ডাকছো কেন??
মৌলবী সাহেব রে কারা যেন খু,,ন করছে।
কিহহহহ–

চোখ চাপরে ,, ঘুম থেকে উঠে এলো অপূর্ব, সূর্য!!
এলিজা বললো,কি বলতেছো মামি? মৌলবী চাচা কে খু,ন করছে।
এলিজার পূরো শরীর কাঁপতে থাকে।
তার সাথে কার কি শত্রুতা?? কে মারলো।
রমজান শুনেই মৌলভীর বাড়িতে চলে যায়।
অপূর্ব : কালকে আমরা একটা ভুল করেছি। তোকে মৌলবীর সাথে পাঠানোর উচিত ছিলো।
সূর্য :হ্যাঁ আমি তো বলেছিলাম,, কিন্তু তুই ই তো যেতে দিলি না। কিন্তু কে বা কারা এমন করলো।
উঠানে বের হয় কথা বলতে থাকে। অপূর্ব সূর্য মৌলবি কে নিয়ে আলাচ আলোচনা করছে।
অপূর্ব:তুই খোঁজ নে মৌলবীর জমজ ভাই গুঞ্জন এর‌।
সূর্য : তোর কি মনে হয় ওনার সত্যি কোন ভাই আছে। আমার তো মনে হয় ,,ওনার কোন ভাই ই নেই। ঢাকা আমরা যাকে দেখেছি। তিনি ই হয়তো ইনি ,,আর নিজের কোন কর্মের ফল ই হয়তো পেয়েছে ,, না হয় পারিবারিক শত্রুতা। বললো সূর্য
অপূর্ব: তুই কি বলতে চাইছিস মৌলভী আমাদের মিথ্যা বলেছে?
সূর্য : তা নয়তো কি,, কাল যখন ওনার সাথে কথা বলি উনি তখন ভয়ে ভয়ে কথা বলছিলো।

সন্ধ্যা থেকে মুষল ধারে বৃষ্টি নামছে ,, এই বৃষ্টি সেই বৃষ্টি যাকে বলে শীত নামিয়ে নিয়ে আসে। শীতের পূর্বাভাস পরলেও হঠাৎ যেন কালো মেঘে আকাশ টা অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে ।
,,,, জয়া সন্ধ্যা থেকে অপেক্ষা করছে , জাহাঙ্গীর ঘরে নেই।

এলিজা পর্ব ১৫

কখনো কাউকে কিছু না বলে কোথাও যায়না আজ হঠাৎ কোথায় গেলো তাও এত বৃষ্টির মধ্যে।,,
ফুপি– এত চিন্তা করো না চলে আসবে।
বললো চাঁদনী
হঠাৎ করে মানুষ টা কোথায় যাবে কাউকে কিছু না বলে-কি

এলিজা পর্ব ১৭