এলিজা পর্ব ১৭

এলিজা পর্ব ১৭
Dayna

শ্যামলী- বাঁটি হাতে আচার নিয়ে দৌড়ে এলিজার কাছে যেতেই ,, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সূর্যের সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপাশ করে পরে যায়।
শ্যামলী পরে গিয়ে বললো,
ওরে মা কি দানব রে বাবা।
সামনে দাঁড়িয়ে,, লম্বাটে,, একটা ছেলে।পরনে কালো প্যান্ট,,সাদা টি-সার্ট-কালো জ্যাকেট,, সবসময় একটা ভিলেন ভিলেন ভাব থাকে সূর্যের মধ্যে।

শ্যামলী :এত বড় দানবের মতো শরীর নিয়ে আমাকে ধাক্কা দিলেন কেন।
সূর্য :ওয়ে নিজে এসে আমার সাথে ধাক্কা খেয়েছো। চোখে দেখো,না অন্ধ মেয়ে।
শ্যামলী : আপনি অন্ধ ইচ্ছা করে আমার আচার গুলো নষ্ট করে দিলেন।বদমা,শ লোক একট।
সূর্য :মুখ সামলে!
শ্যামলী :কি করবেন শুনি।
সূর্য :মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো,,
শ্যামলী : একটা মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানেন না।
সূর্য: যেই না চেহারা হুমমমমম।
বলেই মুখ কুঁচকে দেয় সূর্য,।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শ্যামলী : নিজে কি কালা পাঠা আবার আমাকে বলছে।
সূর্য : কি সাহস রে বাবা তালে তাল মিলিয়ে ঝগড়া করছে।এই শোনো তুমি ইচ্ছে করে আমাকে ধাক্কা দিয়েছো।
হিরোর মত ভাব নিয়ে সূর্য বলতে শুরু করলো,,,,কারন ঢাকার সব মেয়েরা আমার জন্য পাগল,,কোন না কোন বাহানায়, ওরা আমার সাথে কথা বলতে চায়,,আর তুমি ও আমার সাথে,,কথা বলবে কিভাবে তাই ধাক্কা দিলে।
শ্যামালী বললো,রাক্ষসের মত চেহারা নিয়ে কি ভাব।
শ্যামলী,, মেঝে থেকে উঠতে উঠতে যাবে ঠিক তখনই ।
সূর্য হাত বাড়িয়ে দেয় বললো,হাতটা ধরো বুঝেছি আমাকে ছাড়া তুমি উঠতেই পারবে না।
আমি একাই পারবো কোন রাক্ষসকে দরকার নাই।

সূর্য ,শ্যামলীর ঝগড়া শুনে বেড়িয়ে আসে। এলিজা- অপূর্ব,,
এলিজা : তোরা ঝগড়া করছিস কেন বলতে যাবে ঠিক তখনই,অপূর্ব মুখ চেপে ধরে।
অপূর্ব ফিসফিস করে বলল,বিরক্ত করছো কেন করতে দাও ওদের ঝগড়া।
এলিজাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। অপূর্ব ধুতনিটা কাদের উপর রাখলো ।লাল টুকটুকে গালে চুমু খায়।
এলিজা :ছাড়ুন না!সুযোগ পেলেই আপনি –চুমু খেতে শুরু করেন,জড়িয়ে ধরেন।
অপূর্ব মৃদু হাসি হেসে বললো, আমার বউকে আমি যখন ইচ্ছা ধরবো, যখন ইচ্ছা চুমু খাবো।তাতে তোমার ,,কি??
এলিজা : দেখে ফেলবে কেউ।
অপূর্ব চিৎকার করে বললো, এই কে আছো বলতেই এলিজা মুখটা চেপে ধরে।
এলিজা :আপনি ও না একদম বাঁচ্চা, দের মত করেন।
সূর্য গলায় কাশি দিয়ে বললো,আমরা কিন্তু কিছু দেখেনি।
এলিজা লজ্জা পেয়ে ঘরের ভেতর চলে যায়,, শ্যামলী, সূর্য, অপূর্ব আওয়াজ করে হেসে উঠে।

———– রাত ১০ টা
,, ঢাকাতে আজ মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে । চারদিক।নিশ্চুপ।কি যেন কি হচ্ছে।মনের মধ্যে শুধু কুহ ডাকছে। মেঘলা আকাশ যেন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। কি যেন কি হচ্ছে ।
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কখন থেকে অপেক্ষা করছ জয়া।ভাবছে, মানুষ টি কখন আসবে। এই বয়সেও তোরঝোপ গেলো না তার।
হঠাৎ ই কারো আগমন ঘটলো। কে যেন দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ির মধ্যে ঢুকছে‌। কালো রেইনকোট পরনে।
ভালো দেখাও যাচ্ছে না।
,, ঠক ঠক দরাজায় আওয়াজ আসছে কেউ এসেছে নিশ্চয়।কিন্তু লোকটা কে? অপূর্বর বাবা নয়তো,।
হয়তো চলে এসেছে,,
জয়া দরজা খুলবে।তার আগে ভয়ার্ত কন্ঠে প্রশ্ন করে। কে আপনি?
আমি জাহাঙ্গীর দরজা খোলো।
দরজা খুলে দেয়।

জয়া :আপনি কোথায় গেছিলেন?
জাহাঙ্গীর কিছু বলছে না চোঁখে আতংকের ছাপ।
জয়া কে গ্রাহ্য না করে ঘরে চলে আসে। রেইনকোট টা পাল্টে নেয়,।
জাহাঙ্গীর :খাবার খেতে দাও
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছে জয়া। মানুষ টি হঠাৎ অদ্ভুত আচরণ করছে কেন।
,, খাবার খেতে খেতে বললো, অপূর্ব কে চিঠি পাঠাও খবর দাও ।আমি অসুস্থ,।ওরা যেন কালকের মধ্যে চলে আসে।
জয়া :হয়েছি কি বলবে তো?এরকম করছো কেন?
জাহাঙ্গীর কর্কট মেজাজে বললো,
আমি আমার ছেলেকে ছাড়া থাকতে পারি না, এটা জানো না, নাকি??
জয়ার বুক কেঁপে উঠে।
ছেলের জন্য ভালোবাসা আছে, তা সত্য কিন্তু তাকে ছাড়া দুদিন থাকতে পারছে না,, কোথাও গড়মিল আছে।
রাত ফুরিয়ে সকাল হয়ে যায়__

–তিলকনগর —–
অপূর্ব ঘরের বাহিরে চৌকির উপর বসে চা খাচ্ছে। তৎক্ষণাৎ বেড়িয়ে আসলো পাখি।
পাখির ভাব দেখে বুঝতে পেরেছি কোন বাহানা নিয়ে এসেছে।
পাখি :দুলাভাই আপনার সাথে একটা কথা আছে ,.
অপূর্ব :আমার শালিকার একটা না , হাজার টা কথা শুনব!
পাখি : নিমতলা প্রতি তিন মাস পর পর মেলা বসে, গ্রামের সব মানুষ মেলা দেখতে যায়, বাচ্চাদের খেলনা থেকে শুরু করে বই ফুল সমস্ত জিনিস সেখানে পাওয়া যায়। চলেন আমরা সেখানে সবাই মিলে যাই।
অপূর্ব মৃদু হেসে বলল,
শালির আবদার তো রাখতেই হবে।

সূর্য, এলিজা,পাখি শ্যামলি সবাই মিলে মেলার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে।
মেলার একপাশে নাগরদোলা। কেউ ফুল বিক্রি করছে। কেউ আসবাবপত্র বিক্রি করছে,। কেউ নাগর দোলনায় দোল খাচ্ছে।তো,কেউ জিনিস পত্র কিনছে, সব মিলিয়ে মেলা জমজমাট।
পাখি এটা ওটা কিনছে । এলিজা,, কিছু কিনছে না ।অপূর্ব বললেও না করে।
শ্যামলী আর সুর্য,, একসাথে এটা ওটা কিনছে।
অপূর্ব,, দেখতে পায় দূরে একটা বেলিফুলের দোকান।
অপূর্ব :বেলিফুল কত করে ?
সাহেব সকাল থেকে একটাও বিক্রি হয়নি। আপনি যা দেন।
অপূর্ব একটা মালা কিনে ৫০০ টাকা ধরিয়ে দেয়।
লোকটি ভিষন খুশি হয়।

,, অপূর্ব মেলা ভর্তি মানুষের সামনে এলিজাকে বেলিফুলের মালাটা পরিয়ে দেয়।
এলিজা : কি করছেন সবাই দেখছে।
এলিজা-লাজুক ঠোঁটে হাসলো।
অপূর্ব : যদি সবার সামনে না পরাতাম তবে কি তোমার,, মুখের ঐ লাজুক হাসি দেখতে পেতাম।
__শায়ান খোশ মেজাজে বসে আছে।
শান্তা শায়ান কে উদ্দেশ্যে করে বললো,
তুই বাড়িতে কেন আসছিস আমি কিন্তু জানি।
শায়ান ব্যাগ থেকে কিছু বের করছে আর বলছে ,বল কেন এসেছি,?
শান্তা :আগে চকলেট দে!
তোর কথা তুই বলবি তাতেও ঘুষ দিতে হবে??
শান্তা:তা নয়তো কি।

শান্তা চকলেট হাতে পেয়ে বললো, আমাদের মনে পরেছে তাই আসছিস ,,বলেই হেসে উঠলো শান্তা।
শায়ান :বড্ড পেকেছিস।
শান্তা :এই বেলিফুল কার জন্য?
এলিজার জন্য।
শান্তা : কোন এলিজা?
তিলকনগর কয়টা এলিজা আছে।
শান্তা : উফ বলনা।
শায়ান :রমজান আলির ভাগ্নি।
শান্তার হাত থেকে, ধপাস করে চকলেট গুলো পরে যায়।
শায়ান অস্থির হয়ে বললো
শায়ান :কি হয়েছে বল না কি হয়েছে ?শান্তা চুপ করে থাকিস না বল?
শান্তা বললো,ভাইয়া এলিজা আপুর বলেই.. চোখ মেঝের দিকে স্থাপন করলো।
শায়ান : কি হয়েছে আমার এলিজার বল। চুপ থাকিস না বল।
শান্তা : তার বিয়ে হয়ে গেছে,, শহরের একজন পুলিশ অফিসার এর সাথে।

শায়ান ধপাস করে,হাঁটুঘেরে ফ্লোরে বসে পরে। দুহাত দিয়ে,নিজেই নিজের চুল গুলো কে টেনে ধরে। এ আমি কি শুনলাম। এটা আমি কি শুনলাম। ঘরের সমস্ত জিনিস তছনছ করে দেয়। সমস্ত কিছু লুটপাট করে, ফেলে।
ভাইয়ের এরকম অবস্থা দেখে শান্তা অঝরে মুখ চেপে,কান্না করছে।
চিৎকার করে বুক ফাটিয়ে শায়ান কান্না শুরু করে।
শায়ান : মজা করছিস তাই না বল শান্তা তুই মজা করছিস । শান্তা কান্না চোখে ,না সূচক মাথা নাড়ে।,
শায়ানের ভেতরে দুমরে মুছরে যাচ্ছে। কি হবে আমার কি হবে। কি নিয়ে থাকবো। কি করবো এখন আমি।
শায়ান বেখেয়ালি ভাবে,আলি বাড়ির উদ্দেশ্যে দৌড়াতে শুরু করে। পাগলের মত দৌড়াতে থাকে।একটা ভ্যানের সাথে ধাক্কা খেয়ে ,পাশে ধাকা ধান ক্ষেতের মধ্যে পরে যায়।
ছেলেটা কি পাগল নাকি। বলছে ভ্যাঁনে থাকা লোক।

ক্ষেতে থাকা কাচ ভাঙাতে পা কেটে র’ক্ত ঝড়তে থাকে। সেদিকে খেয়াল ই করলো না। পা কাটার ব্যাথার থেকেও মনের, ব্যাথা আজ দ্বিগুন।
উঠেই আবার দৌড়াতে থাকে।দৌড়াতে দৌড়াতে পৌঁছে যায় আলি বাড়ি।
এলিজা এলিজা, বলে চিৎকার করতে থাকে ।
বেড়িয়ে আসে জয়তুন।
জয়তুন: শায়ান বাবা তুমি।
এলিজা কোথায়?
জয়তুন :ওরাতো মেলায় গেছে।
শায়ান জয়তুন এর কথা শেষ হওয়ার আগেই দৌড়ে চলে যায় মেলাতে।
এদিক সেদিক দেখছে পূরো মাথা যেন ঘুরছে ।শরীরর রক্ত চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। প্রকৃতি যেন ,, শায়ান এর এরকম অবস্থা দেখে হায় হায় করছে।
দেখতে পেলো এলিজা কে।
কালো শাড়ি পরা, চুল বেনুনি করা, দাড়িয়ে হয়তো ওর স্বামীর সাথে ই হাঁসছে। শায়ান
এলিজা বলে এক চিৎকার করে উঠলো।
সবাই থমকে যায়।নাগর দোলনার ঘুরপাক বন্ধ করে দেয়। কেনাকাটা রেখে সবাই শায়ান এর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মেলার জমজমাট যেন নিমিষেই ধ
থমকে যায়।
শায়ানের পা থেকে র’ক্ত পড়ছে।

ঘৃনা জড়িত কন্ঠে বলতে থাকলো, কালনাগিনী ,বলেই এলিজা-কে এক ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে যায় এলিজা মাটিতে।
অপূর্ব ক্ষিপ্ত হয়ে অসরক ভাবে মারতে শুরু করে শায়ান কে । তোর এত বড় সাহস কু,ত্তার বাচ্চা।আমার বউয়ের গায়ে হাত তুলেছিস। এলিজাকে শ্যামলি উঠিয়ে নেয়।
অপূর্ব কে সূর্য জোড় করে এক পাশে নিয়ে যায়।
শায়ান মার খেয়েছে সেদিকে কোন খেয়াল ই নেই। উঠে দাঁড়িয়ে,ঝাপটে এলিজার পায় পরে যায়,তার কান্নায় আকাশে কালো মেঘ জমে যায়।,চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়।
কাঁপা কন্ঠে বলতে থাকলো,,
শায়ান : এটা তুমি কি করলে এলিজা-কেন আমার সাথে এমনটা করলে ।কেন? কি অপরাধ করেছিলাম ,,আমি! ভুল কি ছিল আমার ভালোবাসায়!!

,, কেন আমার জীবন টা ক্ষতবিক্ষত করে দিলে ।কেন?এলিজা-থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
কি করে বাঁচবো আমি তোমাকে ছাড়া। গত ,সময়টাতে যে একটু একটু করে , তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি। বলেই ,, অঝর বৃষ্টির মত তে কান্না শুরু করে।
সবাই হা করে তাকিয়ে দেখছে কেউ কেউ কানা ফুসফুস করছে, কেউ নানান কথা বলছে,,
,, তুমি যে ছিলে আমার প্রহরী রানী, স্বপ্নের রানি, তুমি যে ছিলে শখের নারী,, তবে কি আমি আমার শখের নারীকে সত্যিই হারিয়ে ফেলেছি।
এলিজার চোখ থেকে পানি ঝরতে থাকে।
আশেপাশের সবাই এক যেন, ব্যার্থ প্রেমিক কে দেখছে।
,,শায়ান: তুমি ফিরে চলো !চলে এসো আমার সাথে!তোমার একটা কেন হাজার টা বিয়ে হলেও আমার তোমাকেই লাগবে।

এলিজা পর্ব ১৬

একবার বলো,, ঐ পুলিশ তোমারে জোর করে বিয়ে করছে,, বলো।, না হয় একটা বার বলো পরিস্থিতির জন্য বিয়ে করেছো,, একটা বার বলো।
আমি তোমাকে নিয়ে অনেক দূর চলে যাবো,।
এলিজা শায়ান কে সরানোর চেষ্টা করলে শক্ত করে ধরে রাখে,, পা দুটো,,
পাশ থেকে কেউ কেউ বলছে ভালোবাসার কি নিষ্ঠুর পরিহাস,,

এলিজা পর্ব ১৮