এলিজা পর্ব ৪০+৪১+৪২
Dayna
উল্টা পাল্টা দোয়া পরতে পরতে তিনজনই লুকিয়ে যায়। রেলিং এর আড়ালে।
চোখ বুঝে বুঝে দোয়া পরছে।এমন সময় ই কেউ পেছন থেকে গায়ে হাত দেয়।দূর্জয় তারেক,বাবু কেউ পেছনে ফিরছে না।
বাবু ফিস ফিস করে বলছে।তাকাস না ওটা জ্বীন। আমরা ফিরবো না দেখিস এমনিতেই চলে যাবে। ওমনি দূর্জয় সাহস নিয়ে পেছনে ঘুরে দেখে অন্তিম।
আরে ভাইয়া আপনি! এত রাতে নিজের বাড়িতেই লুকিয়ে লুকিয়ে ঠুকছেন কেন! আমরা তো ভয় পেয়ে গেছি! ( বললো দূর্জয়)
অন্তিম ; হুসসসস। বাবা জেগে যাবেন। যাইহোক,তোরা কখন এলি?
আমরা সেই কখন এসেছি। কিন্তু আপনাকে তো দেখলাম না।
অন্তিম সহ সবাই অতিথি ঘরে চলে যায়। অন্তিম বরাবর ই খুব রাগী। কিন্তু সবার সাথে রাগ দেখান না। বোনদের প্রচুর ভালোবাসে।কেউ চোখ তুলে তাকালে সেই চোখ উপরে ফেলে।
এখন খুব শান্ত হয়ে সবার সাথে বসে আছে। আমাদের সাথে এটা ওটা বলছে।
কালকে আমার জন্মদিন।ঘটা করে আয়োজন করা হবে। গ্রামের অসহায় মানুষদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে।সাথে গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবে।
সাথে আমার কিছু বন্ধুরা।
তোরাও কিন্তু থাকবি। আলাদা করে বলে দিলাম।( বললো অন্তিম)
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ। নতুন সূর্যর আগমন। সাথে নতুন একটি দিন।গ্রামের সবাই একে একে সিকদার বাড়ি আসছে। সবার জন্য প্যান্ডেল করা হয়।
অন্তিম এর কিছু বন্ধু এসেছে।
চারদিকে ছোট ছোট বাঁচ্চারা দৌড়া দৌড়ি করছে। সব মেয়েরা বউয়ের মত সেজে ঘোরাফেরা করছে।
তবে কেউ অন্তিম কে খুঁজে পাচ্ছে না।
অন্তিম এর বন্ধুরা এদিক সেদিক খুঁজলেও কোথাও পাচ্ছে না।
এই ঘর ঐ ঘর খুঁজতে খুঁজতে চোখ পরে রঞ্জনার ঘরের দিকে।
সবাই দেখে অবাক। অন্তিম ওর বোনের ঘরে।
নিজের হাতে ওর বোনদের সাজাচ্ছে।মালাইকাকে সাজিয়ে বসিয়ে রেখেছে।প্রিয়াও সাজিয়েছে।যদিও প্রিয়া এখন পর্যন্ত নাবালিকা মেয়ে।সবার আদুরে। কিন্তু তাকেও অন্তিম পাহারা দিয়ে রাখে।
অন্তিম রঞ্জনা কে সাজাচ্ছে। উপদেশ স্বরুপ অনেক কিছু বলছে। ওদের ভাইবোনের সম্পর্ক এতটা অটুট সবাই অবাক হয়।
আমরা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দেখছি।
হঠাৎ চোখ পরে অন্তিম এর তার বন্ধুদের দিকে।
অন্তিম শান্ত স্বরে বললো,দাড়িয়ে কেন ভেতরে আয়।
আমি আমার রাজকন্যাদের সাজাচ্ছি। কেমন লাগছে বল।
অন্তিম ওর বোনদের এমন ভাবে আগলে রাখে।যেমনটা বাবা রাখে।বলা হয় বড় ভাই বাবার সমতুল্য।
আপুদের অনেক ভালো লাগছে। আসলে তোকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে এসেছি। এসেই দেখলাম তুই ওদের সাজাচ্ছিস।তাই আর ডাকলাম না। (বললো নয়ন অন্তিম এর বন্ধুদের মধ্যে একজন)
রঞ্জনা বললো,দাদাভাই আজকে আমি রান্না করবো।
এটা শুনে অন্তিম এর বন্ধুরা কানা ফিসফিস শুরু করে দিয়েছে।
অন্তিম মৃদু হেসে বললো, আচ্ছা করিস।তবে তেলের বা আগুনের আচ যেন শরীরে না লাগে।
নয়ন সহ সবাই বাহিরে বের হয়ে ফিসফিস করছে। অন্তিম ওদের উদ্দেশ্য করে বললো,আমি জানি তোরা কি বলছিস। আমার বোনের রান্নার স্বাদ ভালো না। কিন্তু তোরা খেয়ে কিন্তু প্রসংশা করবি।
নয়ন: এই ভাই বি’ষ খেতে পারবো কিন্তু তোর বোনের রান্না……
অন্তিম বললো, একটা দিবো কানের নিচে সা*লা।ও যা রান্না করবে চুপচাপ খেয়ে
নিবে।
নয়ন সহ সবাই অন্তিম এর দিকে আ করে তাকিয়ে ছিল। বোনের জন্য এত দরদ তো রান্না করতে দেয়ার দরকার কি! তাও আমাদের খেতে হবে।
বলেই মুখ কুঁচকে দেয় নয়ন।
অন্তিম এর জন্মদিন বাবর রাজ্য আজ উল্লাসিত।
আনন্দে ভরপুর। গ্রামের প্রতিটি মানুষ আজ খুব আনন্দিত। কারন, সিকদার বাড়ি কোন অনুষ্ঠান হলে তারা পেট পূরে ভালো মন্দ খেতে পারে।তবে জন্মদিন উপলক্ষে কারো কাজ থেকে বাবর কোন উপহার নেননা।সবাই বলে এটা তার বাবার নিয়ম। কাউকে নেমন্তন্ন করলে , কাউকে আহার করালে অনেক বড় সওয়াব,তাই এটার বিনিময় বাবর কিছু নেননা।
চারদিকে জমজমাট ।কেউ নাচচে।তো কেউ গাইছে। কেউ লুকোচুরি খেলছে।
আনন্দে উল্লাসে দিন গড়িয়ে রাত হয়ে যায়। সিকদার বাড়ির ভির ধিরে ধিরে কমে গেলো।
বাবর সিকদার, একজন উকিলের সাথে বসে কথা বলছে।
কল্যানি পান চিপোচ্ছে। আর শাশুরির সাথে কথা বলছে।
ওমন সময় হাজির হয় রঞ্জনা। সবাই দাদির ঘরে আড্ডা দিচ্ছে। কল্যানি ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।প্রিয়ার শরীর ভালো না তাই ওর ঘরে যায়।
রঞ্জনা,মালাইকা , সাথে রঞ্জনার বান্ধবীরা দাদীর ঘরে বিভিন্ন গল্পে মশগুল হয়ে আছে।
জয়গুন বিবি রঞ্জনা কে উদ্দেশ্য করে বললো,মনা, আমার অনেক ইচ্ছা। আমার মৃত্যুর আগে তোর বিয়েটা দেখে যেতে পারলে হয়।তুই বউ সাজবি ।পায়ে আলতা দিবি,টিকলি পরবি ,লাল বেনারশী পরবি।
রঞ্জনা দাদির উদ্দেশ্যে বললো, আঁচ্ছা দাদী তুমি কোনদিন কাউকে ভালোবেসেছো ?
কাপা কন্ঠে জয়গুন বিবি বললো, বাসছি ই তো।আর সেই ছিলো তোদের দাদা। কত ভালোবাসতো আমায়। আমি একবার বলছিলাম আমার বিয়েটা যদি নদীর তীরে হয়।আর তোদের দাদু আমারে ঠিক তেমন ভাবেই বিয়ে করে।
রঞ্জনা মসৃন হাঁসলো।বললো,তারমানে তুমি ভালো ই রোমান্টিক ছিলা বুড়ি !
পাশে থাকা সবাই খিল খিল করে হেসে উঠে।
তৎক্ষণাৎ ঘরে উপস্থিত হয় বাবর।বাবর বললো,- –
রঞ্জনা,আর মাত্র ৭ দিন বাকি। এরপর তোমার পরিক্ষা।আর তুমি পরাশুনা বাদ দিয়ে গল্পগুজব করছো?
রঞ্জনা কথা না বাড়িয়ে।পড়ার ঘরে চলে যায়।
এদিকে দুর্জয় বার বার রঞ্জনা কে খুঁজছে।ভয় ও হচ্ছে যদি কোথাও থেকে রাক্ষুসে মামা,আর ভাইটা চলে আসে।এতবড় বাড়ি কোথায় থাকে বলাতো যায়না।
এদিক সেদিক খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে দেখে রঞ্জনা পড়ার টেবিলে পড়ছে।
ছোট জানালা দিয়ে দেখতে পেলো ঝুঁকে ঝুঁকে পড়ছে।
খাটের উপর মালাইকা ঘুমোচ্ছে।তাও বই বুকের মধ্যে জড়িয়ে। হয়তো পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছে। দূর্জয় ঘরের ভেতর প্রবেশ করার জন্য, আশেপাশে পরোখ করলো, কেউ আছে কিনা দেখলো। কেউ নেই। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রঞ্জনার ঘরের ভেতর ঠুকতেই দেখলো দরজা খোলা।
ছোটবেলায় একবার ঘরের ভেতর থেকে দরজা লক হয়ে যায়।সেদিন রঞ্জনা অনেক ভয় পেয়েছিলো ।অজ্ঞান ও হয়ে যায়। তারপর থেকে ঘরের দরজা খোলা রাখে। দূর্জয় ঘরের ভেতর প্রবেশ করে পেছনে দাঁড়িয়ে রইলো।
কি বলবে ভাবতে ভাবতে
রঞ্জনা হঠাৎ বলে উঠলো, কিছু বলবেন? দূর্জয় অবাক হয়ে যায়।ভাবলো,আমি আসলাম সেটা ও কি করে বুঝলো?
রঞ্জনা কাট গলায় বললো,
আমি সবার উপস্থিতি অনুভব করতে পারি।
আপনি কি বলতে চান তাও আমি জানি । তবে আপনার সেই কথা গুলো না বলাই ভালো।কারন আমি আমার বাবার মুখে কখনো চুলকানি মাখাতে পারবো না।
আমার বাবা আমার সবকিছু।তার শিক্ষা আমার আমার মধ্যে আছে।আমি চাই জীবনে সফল হতে।আর এই সফলতার বাঁধা হিসেবে কেউ দাড়াক তা আমি চাই না। আপনি আমার ভাই হন।আমি আপনাকে সম্মান করি।ব্যাস এতটুকু যথেষ্ট। আপনি আর দ্বিতীয় বার আমার চোখের সামনে আসবেন না। তাহলে আমি আমার বাবার কাছে বলতে বাধ্য হবো।
দূর্জয় কথা গুলো শুনে থম মেরে যায়। কি বলবে না বলবে বুঝতে না পেরে রঞ্জনার ঘর থেকে পদত্যাগ করবে,ঠিক তখনই পেছন ঘুরে দেখে অন্তিম দাড়িয়ে আছে ।
তৎক্ষণাৎ দূর্জয়ের শরীর থেকে ভয়ের আচ্ছন্নে অঝরে ঘাম ঝরতে থাকে।
অন্তিম চোখ দুটো লাল করে, হিং,স্রের মত ফস ফস করতে করতে , দূর্জয়ের শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে নিচে নামিয়ে ফেলে।
দূর্জয় বার বার বলতে ছিল ভাইয়া একবার আমার কথাটা শুনোন, একবার আমার কথাটা শুনোন।
অন্তিম দূর্জয় এর কথায় গ্রাহ্য না করেই পেটাতে থাকে।
বাড়ির সকলে বেড়িয়ে আসে।বাবর সহ বাড়ির কাজের লোক সবাই।
বাড়ির বললো,
ওকে মারছিস কেন ? কি হয়েছে ?
অন্তিম বললো,
ও আমাদের রঞ্জনার দিকে খারাপ নজর দিয়েছে।
কথাটা শোনা মাত্রই বাবর ও পেটাতে শুরু করে।সবাই ভয়ার্ত দৃষ্টিতে দেখছে।
দূর্জয়ের সব বন্ধুরা নিচে নেমে আসে।
বাবর কর্কট মেজাজে বললো,
আমার মেয়েদের দিকে যে দৃষ্টি খারাপ করে তাকাবে। তার এরকম অবস্থা হবে।সে আমার যেইহোক।
বাবর সিকদার তার মেয়েদের দিকে কেউ খারাপ নজর,বা খারাপ মন্তব্য করলে তাকে শেষ করে দেয়।
তৎক্ষণাৎ দূর্জয়ের বন্ধু সহ ওদের গ্রাম থেকে বের করে দেয়া হয়।
অন্তিম শেষ বারের মত দূর্জয় কে হুঁশিয়ারি সংকেত দেয়।
অন্তিম খেয়াল করলো,সিড়ির কর্নারে মালাইকা বসে বসে ফোপাচ্ছে।অল্প কিছুতেই মালাইকা আতং’কিত হয়ে যায়।ভয়ে কাঁপতে থাকে।অন্তিম মালাইকাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
শান্ত স্বরে বললো, সবকিছুতে ভয় পেতে নেই। কখনো কখনো হিং,স্র ও হতে হয়।এত ভীতু কেন তুই?
মালাইকা কাঁদতেই থাকে।
এভাবে দেখতে দেখতে কেটে যায় অনেক দিন।
রঞ্জনার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন এর ফলাফল প্রকাশ করেছে।
বাবর রাজ্য খুশিতে আপ্লুত হয়ে উঠে।
গ্রামের সবাইকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে অন্তিম। চারদিকে মানুষের কোলাহল। সবাই এসে রঞ্জনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।
রঞ্জনা বরাবরই মেধাবী।
তার বাবার স্বপ্ন,তার দুই মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরবে কিন্তু মালাইকা একদম যেতে রাজি নয়।সে শহরে যাবে না।তাই আর কেউ মালাইকাকে জোড় করেনি।
আজকে আবেদন এর ফলাফল দিয়েছে। রঞ্জনা ঢাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই খুশিতে গ্রামের সবাই উৎসব পালন করছে।
কারন বাবররাজ্য থেকে এই প্রথম বার কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরাশুনার সুযোগ পেয়েছে। তাও বাবর সিকদার এর মেয়ে।
আজ বিকেলের ট্রেনে রঞ্জনা কে ঢাকায় নিয়ে যাবে,অন্তিম। ঢাকার শহরে রঞ্জনা একা। তাবে রঞ্জনা কে অনেকেই চিনে শুধুমাত্র তার নাচের জন্য। ঢাকাতে এই পর্যন্ত অনেক বার প্রোগ্রাম হয়েছে।
বিকেলে শহরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়। রঞ্জনার সব বন্ধুরা আসে বিদায় জানাতে।
মালাইকা এক কোনে দাঁড়িয়ে ফোপাচ্ছে।প্রিয়া কোন মতেই রাজি নয় তার বোন দূরে যাবে।
বাবরের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে। কিন্তু রঞ্জনাকে বুঝতে দিচ্ছে না।কারন সে চায় তার মেয়েরা জীবনে অনেক বড় হোক।তাদের পরিচয় তারা বাচুঁক।
(বর্তমান)
সূর্য থেমে যায়। রুশরাজ্যে কোন কারনে নিস্তব্ধ হয়ে আছে। কিছু দূরে শেয়াল ডাকছে। বাদুর গুলো একটু পর পর এইগাছ থেকে ঐ-গাছে যাচ্ছে।
শীতল হাওয়া বইছে।
কিন্তু তারমাঝে অপূর্ব ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে। সূর্য বলছে না কেন। তারপর কি হয়েছিল । অপূর্বর ভেতর যে আগুন জ্বলছে।
অপূর্ব ধৈর্য হারা হয়ে সূর্য কে প্রশ্ন করেই ফেললো,কি হয়েছিল তারপর?
সূর্য ভারি একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেললো। পকেট থেকে সিগারেট ধরায়।চোখ গুলো জ্বলজ্বল করছে ।
সূর্য শান্ত স্বরে বললো,, যেদিন রঞ্জনা ঢাকায় আসে সেদিন ই রঞ্জনার জীবনে কালো ঝড় নেমে আসে।
রঞ্জনা ঢাকায় চলে আসে।
আমি আর রায়হান, সাথে সৈকত সবাই ঢাকা কলেজে যাচ্ছিলাম।বাসে ছিলাম।গরমে ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছিলাম। জ্যামে বসা ছিলাম।গরম সহ্য করতে না পেরে জানালা টা খুলে দেই।
তখনই আমার চোখ পরে বাস স্টেশনে। আমার হৃদয় সেদিন থমকে যায়।ভেতরে ধুকবুকানি টা হঠাৎ বেড়ে যায়।এ যেন স্বর্গের পরি নেমে এসেছে মানুষের রুপ ধারন করে। আমি রায়হান সৈকত কে, কিছু না বলেই বাস থেকে নেমে রঞ্জনার বাসের পেছনে ছুটতে থাকি। তবে রঞ্জনা আমাকে দেখছিলো।
বাস গিয়ে থামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। কিভাবে রঞ্জনার জীবনর বৃত্তান্ত জানবো সেই ভেবে কিছু মেয়েদের প্রশ্ন করি।
তারা আমাকে না বললেও আমি ওর ব্যাপারে জানতে পারি।ওর পরিবারের ব্যাপারে জানতে পারি।
সেদিন রঞ্জনা আমাকে সবার সামনে অপমান করলেও ওর চোখের কোন এক কোনে আমার জন্য এতটুকু হলেও ঘৃনা দেখতে পাইনি। আমি খেয়াল করলে দেখতে পাই ওর পিছনে অন্তিম ভাই। তবুও আমি কিছু বুঝতে পারিনি।
প্রতিদিন বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতাম। একনজর আমার প্রেয়সী কে দেখার জন্য।
এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পরে , একদিন একটা পার্সেল আসে।আমি অবাক হই।কৌতূহল নিয়ে পার্সেল টা খুললে দেখতে পাই একটা চিরকুট।
সেই চিঠিটা আর কারো নয়
রঞ্জনার ছিল।
ওর চিঠি পেয়ে পূরো শরীর কেঁপে উঠে ছিলো। তবে যা দেখেছিলাম তাতে আমি পুরোপুরি অবাক হই।
ভুবনমোহিনী সুন্দরী*রঞ্জনা সে কিনা আমার সুন্দর্য প্রকাশ করেছে।সেদিন নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়েছিল। রঞ্জনা আমাকে অচিন পাহাড়ে ডেকে ছিলো।
আমি গিয়েছিলাম,তবে একা নয় , রায়হান আর সৈকত কে সাথে নিয়ে যাই। রায়হান আমাকে উৎসাহ দিতো।
অচিন পাহাড়ে রঞ্জনা আমার অপেক্ষায় ছিলো। লাল রঙের স্কার্ট,সাথে লম্বা চুলের বেনুনি।ভারী মিষ্টি লাগছিল দেখতে। সবার নজরে ছিলো রঞ্জনার দিকে।সবাই রঞ্জনার রুপে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো। আমি রঞ্জনার সাথে কথা বলতে পারিনি।ওর সামনে স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারিনি ।
আমার অপেক্ষায় না থেকে রঞ্জনাই বলতে শুরু করে। রঞ্জনা কথায় কথায় আমার প্রশংসা করতো।আমি অবাক হতাম।স্বর্গপরী রঞ্জনার মুখে যেদিন সু-দর্শন কথাটি শুনেছিলাম সেদিন থেকে নিজেকে সু দর্শন মনে করতাম।শ্যামবর্ন সূর্য সেদিন হয়ে ওঠে সুদর্শন।
রঞ্জনার সাথে অনেকক্ষন কথা বলি।খুব শান্তি পাচ্ছিলাম।
এভাবে কিছুদিন কেটে যায়।আমি নিজেকে দুনিয়ার সব থেকে ভাগ্যবান পূরুষ মনে করতাম। কিন্তু এই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
“বলেই সূর্য ভারি একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেললো। হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছে। অপূর্ব আড় চোখে সূর্য কে পরোখ করে।
সাপে,র মত ফসফস করছে।অথয রঞ্জনাকে হারানোর বেদনা ভেতর থেকে সূর্য কে পুড়িয়ে দিচ্ছে।
সূর্য কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করে ।
আমাকে রঞ্জনা ওর পরিবার সম্বন্ধে সবকিছু বলে। রঞ্জনা কখনোই চাইতো না ওর মা বাবাকে না জানিয়ে একা একা বিয়ে করবে।আমিও চাইতাম না।তবে হঠাৎ রঞ্জনার মনে আমার মায়া, ভালোবাসা গ্রা,স করে।
আমাকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারতো না।
একদিন কলেজের ল্যান্থলাইন থেকে রঞ্জনা আমাকে ফোন দিয়ে বিয়ের কথা বলে।আমি অবাক হই মনে মনে খুব খুশিও হই। মনে মনে নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ব হতো। হাজারো সুদর্শন পুরুষ কে উপেক্ষা করে শ্যামবর্ন সূর্য কে বেছে নিয়েছে।
আমি রাজি হই বিয়ে করতে। রঞ্জনার খুব ইচ্ছে ছিল সমুদ্রের তীরে বিয়ে হবে।আমিও রঞ্জনা কে না জানিয়ে ঘটা করে বিয়ের আয়োজন করি।
সেদিন আমার জন্মদিন ছিল। রঞ্জনা আমার জন্য কিছু উপহার দিতে আসতে চায়।ঠিক তখনি রঞ্জনার নাচের প্রোগ্রাম চলে আসে।সেটাও ঠিক সেদিন। আমি রঞ্জনা কে জানাই তুমি প্রোগ্রাম শেষ করে তবেই এসো।
নাচের প্রোগ্রাম শেষ করতে করতে রাত হয়ে যায়।আমরা সেই রাতেই বিয়ের আয়োজন করি।যমুনা নদীর তীর চাক চমৎকার করে সাজাই। বিভিন্ন লাইট বসাই।যাতে আমার রঞ্জনা দেখা মাত্রই অবাক হয়।
নাচের প্রোগ্রাম শেষ হবে রাতে,তাই ভেবে আমি রায়হান সৈকত কে ওর কাছে পাঠিয়ে দেই যাতে ওর কোন সমস্যা না হয়।
যমুনা নদীর তীরে আমরা সবাই অপেক্ষা করতে থাকি। জমজমাট ছিলো যমুনা নদীর তীর।
এক ঘন্টা – দু ঘন্টা এরকম কয়েকঘণ্টা কেটে যায়। রঞ্জনার কোন খবর নেই।
রাত অনেক হয়ে যায়।আমি ভেবেছিলাম হয়তো নাচের প্রোগ্রাম শেষ হয়নি।
এরকম কয়েক প্রহর অপেক্ষায় থাকার পর। চলে আসে রায়হান আর সৈকত।
ওদের একা আসতে দেখে আমার ভেতরে যন্ত্রনা শুরু হয়ে যায়। রায়হান আমাকে যা বললো তাঁতে আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিল। রায়হান বললো,আজকে রঞ্জনার কোন নাচের প্রোগ্রাম ছিলো ই না। আমি থমকে গিয়েছিলাম।পূরো শরীর থেকে ঘাম ঝরতে থাকে।হ্রদয়ের স্পন্দন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আশেপাশের সবাই আমার হাকা,কার দেখতেছিলো।
ঠিক তার কিছুক্ষণ পর। যমুনা নদি থেকে একটা টলার এসে আমাদের কাছেই ভীরে।
টলারে থাকা লোকগুলো কালো মুখোশধারী ছিলো।চিনতে পারিনি। তারা কয়েকজন মিলে আমাদের দিকে একটা মমি ছুরে দেয়।
সবাই আতংকিত হয়ে যাই।
সবাই কৌতুহল নিয়ে মমিটির দিকে এগোয়।কেউ মমিটি খুলে দেখতে সাহস পায়নি। তৎক্ষণাৎ রায়হান মমিটি খুললো। তারপর আমি যা দেখেছিলাম ঠিক ঐ মুহুর্তেই যেন আমি জীবন্ত লা,শ হয়ে গিয়েছিলাম।
সেই মমিতে আর কারো নয় রঞ্জনার লা,শ ছিলো, রঞ্জনার লা,শ।
সূর্য অঝরে কান্না শুরু করে।
অপূর্ব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে। অপূর্ব অস্থির হয়ে উঠে দাঁড়িয়। পায়চারি করতে শুরু করে।
সূর্য হিং,স্র ভঙিতে বললো,ওরা বন্ধু নয় বিশ্বাস ঘাতক ছিল। বিশ্বাসঘাতক।
অপূর্ব অবাক হয়ে যায়,
ভেতরের ধুকবুকানি টা বেড়ে যায়। রাত হয়ে যাচ্ছে অথচ সূর্যর সত্যটা যেন শেষ ই হচ্ছে না।
অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে, তারপর কি হয়েছিল।
সূর্য কাপা কন্ঠে বলতে শুরু করে, আমার হাহা,কার সবাই দেখছিলো। আমার বুকফাটা কান্না। আমার কান্নায় সেদিন যমুনা নদী শান্ত হয়ে গিয়েছিল।
রায়হান পুলিশ টিমকে ফোন দিয়ে শা,শ ময়নাত,দন্তের জন্য নেয়া হয়। রিপোর্ট আসে। রঞ্জনা কে একাধিক-জন ধর্ষ,ন করে।এরপরে মে,রে ফেলে।
আমার জীবন টা সেদিন ই থমকে গিয়েছিল।আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।
রঞ্জনা কে,মৃত দে,হ ছুয়ে প্রতিক্ষা করেছিলাম।ওর সাথে যারা খারাপ করেছিল তাদের সবাইকে দেখে নিবো। কিন্তু আমি কোন ভাবেই জানতে পারছিলাম না ,যে কারা এরকম টা করেছে। আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যাই। সুস্থ হয়ে উঠতে ৬ মাস সময় লেগেছিল।
তারপর আমি রঞ্জনার মৃত্যু নিয়ে তদন্ত শুরু করি।
তবে সৃষ্টিকর্তা চেয়েছিলেন কিনা জানিনা। হঠাৎ এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে, হাঁটতে ছিলাম রাস্তায়। তখন আমার দেখা হয় মজিবুল চাচার সাথে। যিনি ছিলেন রঞ্জনাকে আনতে যাওয়া গাড়ির ড্রাইভার। আমি তাকে পাঠিয়ে ছিলাম রঞ্জনাকে আনতে কিন্তু সেদিন তাকে জিজ্ঞেস করলে উনি অস্বীকার করেন।আমি জোর করিনি।
কারন উনি ছিলেন আমাদের বিশ্বস্ত ড্রাইভার।
তবে অবাক করা বিষয় ছিল উনি ৬ মাস ধরেই নিখোঁজ ছিলেন।মানে কোথাও খোজ পাচ্ছিলাম না।সেদিন হঠাৎ তার সাথে আমার দেখা হয়।
উনি আমাকে নির্জন রাতের আহ্বান জানান।আমি আগ্রহ পাই।হয়তো কিছু বলবে।তবে উনি যা বললো তাতে আমি অবাক হয়ে যাই।সেদিন উনি রঞ্জনা কে নিয়ে আসতেই মাঝপথ থেকে দূর্জয় ও ওর বন্ধুরা মিলে সেই গাড়ি আক্রমণ করে। চাচার মেয়েকে আগেই অপহরণ করে নেয়।
মজিবুল চাচাকে ভয় দেখিয়ে, রঞ্জনা কে এক গহীন বনে নিয়ে যাওয়া হয়।
চাচা বলেন, পেছনের ছেলে গুলো কথা বলতে গিয়ে মুখ ফসকে দূর্জয় নামটা বেড়িয়ে আসে। তখনই আমি জানতে পারি ওরাই রঞ্জনা কে হ,ত্যা করে।
আমি মনস্থির করি এর প্রতিশোধ আমি নেবোই।
এক প্রহর ও আমি ঘুমোতে পারিনি। প্রতিশোধের আগুনে ধীরে ধীরে পুড়ে উঠছিলাম। প্রতিদিন বারে যেতাম- নে,শা করতাম।আর ঠিক সেখানেই আমার রেখার সাথে পরিচয় হয়।আমি টাকা দিয়ে রেখাকে কিনে নেই। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি দূর্জয় ওরা ঢাকা কলেজে পরে।
রেখা দেখতে আকর্ষণীয়।তাই রেখা ওর রুপের ফাঁদে ফেলে। এরকম অনেক দিন কেটে যায়।ওরাও ধীরে ধীরে রেখার প্রতি আকৃষ্ট হয়।
এই সুযোগ কাজে লাগালাম। একদিন রেখা একটা পার্টির নাম করে ওদের ডাকে। ম,দের সাথে অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ খাইয়ে কাবু করে ফেলে। ওদের নিয়ে যাওয়া হয় সেই জঙ্গলে যেখানে রঞ্জনা কে হ,ত্যা করা হয়।সেই জঙ্গল আর অন্য কোন জঙ্গল নয়।এই রুশরাজ্যে।
ওদের আনা হয়। দূর্জয়ের চোখের সামনে ওর তিন বন্ধু কে হ,ত্যা করি।
ঠিক তখনি আমার কানে যা শুনেছি, তৎকালীন সময় আমি নিস্তেজ হয়ে যাই।
দূর্জয় উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো, রঞ্জনাকে ধর্ষন করার পেছনে তোর বন্ধুদের হা,ত ও আছে।
আমি অবাক হয়ে যাই।আমি হাঁটুঘেরে বসে পরি।
বার বার জিজ্ঞেস করি কে ছিলো। দূর্জয় বললো না।
আমি দূর্জয় কে বললাম,তুই সত্যি বললে,তোকে ছেড়ে দেবো। দূর্জয় নিজের প্রানের লোভে আমাকে সত্যিটা বলে।
সেদিন রঞ্জনার গলা নকল করে আমাকে সৈকত ফোন করেছিলো ।ওর সাথে ছিলো রায়হান,ওর সাথে ছিলো মুন্না
অপূর্ব দাঁড়ানো থেকে ধপাস করে মাটিতে বসে পরে।কি শুনছে এসব।
সূর্য কর্কট স্বরে আবার বলতে শুরু করে, এটা জানার পর আমার রাগ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। আমি ধিরে ধিরে হায়,না ওয়ে উঠি।
দূর্জয় কে এলোপাথাড়ি ছু,রি দিয়ে খু,ন করে ফেলি।
এরপর আমার পরবর্তী পরিকল্পনাতে ছিল রায়হান।
সেদিন তোরা যখন টুর থেকে ফিরেছিলিস আমি খোঁজ পাই। রায়হান সকালে বাড়ি পৌঁছাবে ঠিক তার আগেই মিথ্যা বলে এই রুশরাজ্যে নিয়ে আসি। তারপর ওকেও শেষ করে দেই।একে একে মুন্না আর সৈকত কেও শেষ করি।
অপূর্ব থম মেরে বসে আছে ।কোন কথা বলার শক্তি নেই। চারদিকের সবকিছু অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। অপূর্বর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে ।
সূর্য নিশ্চুপ, অপূর্ব হতভাগ হয়ে আছে।
রাত শেষ হওয়ার দিকে।
সূর্য আবার একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে।
অপূর্ব ভেজা কন্ঠে প্রশ্ন করলো, ২৭ বছরের ছেলেদের অপহরণ, তারপর ওদের হা,র্ট বের করে নৃশংস মৃত্যু, এর পিছনে কি তুই আছিস??
সূর্য খিল খিল করে হেসে
বললো, রঞ্জনার হত্যা,র পেছনে কোন বয়স ছিল না।
এসবের পেছনে কে আছে তা আমার জানা নেই।
রায়হান কে, অপহ,রণ করার পরিকল্পনা আগেই করেছিলাম কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। ততদিনে ওর ২৭ তম বয়স হয়। তবে আমি জানি না এর পেছনে কে বা কারা!!
এই পর্যন্ত ৪০ টা হৃদয়হীন লা,শ পাওয়া গেছে তারমধ্যে
৬ টা, আমার হত্যাকা,ন্ড।
এলিজা পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯
বাকিদের পেছনে কে আছে সেটা অজানা।
অপূর্ব অবাক দৃষ্টিতে সূর্যর দিকে তাকিয়ে আছে।কতটা সহজে কথাগুলো বলছে।
কে এই সূর্য তার রুপের কি এর নির্মম পরিবর্তন।
যদি সূর্যর সবকিছুর পেছনে হাত না থাকে তবে কে আছে???—