এলিজা পর্ব ৫১+৫২
Dayna
দক্ষিনা শীতল হাওয়া বইছে। কুয়াশায় আচ্ছন্ন। সূর্য মামার আজ কোন খবর নেই । সকাল অনেক কিন্তু সূর্য ওঠার নাম নেই । আকাশে মেঘের হাতছানি।
অপূর্ব ঘুমোচ্ছে। গতকাল রাতে অনেক দেরি করে বাড়ি ফিরেছে। ঠান্ডায় বাহিরে থাকায় জ্বর হয়েছে। রাতে শরীর আগুনের মত গরম ছিলো। এলিজা সারারাত ঘুমোয়নি।রাতে একটু পর পর অপূর্বর শরীরে হাত দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা দেখেছে। অপূর্বর কিছু হলে এলিজা নিস্তেজ হয়ে যায়।
অস্থির হয়ে যায় কি করবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে অপূর্বর পায়ের কাছে বসে আছে। সরিষার তেল ম্যাসাজ করছে।আর বিড় বিড় করে কিছু বলছে।পরনে মিষ্টি রঙের শাড়ি।সাথে চাদর।চুল গুলো বেনুনি করা। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় মনোরা হাতে গরম দুধ নিয়ে এলিজা বলে আনিয়েছে। মনোরা খেয়াল করলো এলিজার চোখ থেকে পানি পরছে।আর বিরবির করে কিছু বলছে। মনোরা এলিজার পেছনে এসে দাড়ায় । ইতস্তত বোধ করেই প্রশ্ন করলো, বউমনি কি হয়েছে কি বলছো? সামান্য জ্বর হয়েছে । ঠিক হয়ে যাবে। এলিজা মনোরার দিকে একবার দৃষ্টি স্থাপন করলো। মনোরা পরিস্কার দেখতে পেলো,এলিজার চোখের রক গুলো একদম লাল হয়ে আছে।এলিজা তেল হাতে নিতে নিতে বললো, আমার আয়ু আমার স্বামীর হয়ে যাক। আমার সুস্থতা তার হয়ে যাক।তার অসুস্থতা আমার হয়ে যাক। এই প্রার্থনা করছিলাম। মনোরা এলিজা কে বললো, ভাগ্যগুনে অপূর্ব তোমার মতন বউ পেয়েছে। যে স্বামীর সামান্য জ্বরে নিজের মৃত্যু কামনা করে,তার জীবন ভিক্ষা চায়। তোমাদের এই বন্ধন কোনদিন ছিন্ন না হোক।বলেই মৃদু হেসে চলে যায় মনোরা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অপূর্ব ঘুমাচ্ছে। এলিজা তেলের বাটিটা দূরে রেখে অপূর্বর শরীরের তাপমাত্রা দেখে। আগের থেকে শরীর শিতল হয়েছে।রাতে অনেকবার জলপট্টি দেয়া হয়েছে।এলিজা অপূর্বর কপালে চুমু খায়। মৃদু হেসে বললো,পরপারেও যেন আমি আপনার সাথে থাকতে পারি। অপূর্বর শরীর ক্লান্ত থাকায় কোন কিছু অনুভব ই করলো না। এলিজা চাদরটা শক্ত করে পেঁচিয়ে বারান্দায় যায়।
শীতল হাওয়াতে তার কপালের সামনে থাকা চুল গুলো উড়ছে।সামনে কিছু বড় বড় গাছ পালা। বাতাসে হেলে দুলে পাতাগুলো নড়ছে।হঠাৎ আওয়াজ পায় বাহিরে কোলা’হল। এলিজা নিচে নামে। চারদিক পরোখ করতে দেখতে পায়।সবাই বিয়ের আয়োজন করছে। মমতাজ সোফাতে বসে একা একা বক বক করছে।তার ছেলের বিয়েতে সে একদমই খুশি নয়।এলিজা উপেক্ষা করলো।বাড়ির বাহিরে নামলো। বায়েজিদ বসে বসে লাকরী কাটছে। বায়েজিদ এর একটা চোখ নেই। এলিজাকে দেখেই বায়েজিদ মৃদু হাসে। বায়েজিদ এর বয়স ১৯ । অপূর্ব কাজ দিয়েছে। তবে জাহাঙ্গীর এসব পছন্দ করেন না। তিনি কারো উপর দয়া দেখান না বরং কেউ দেখালেও তাতে রাগান্বিত হয়। এলিজা বায়েজিদ কাছে আসতেই বায়েজিদ অমৃদু হাঁসি দিয়ে ওঠে।
হাসি মুখে বললো, বউমনি আপনে এইহানে।কন কি করতে হইবো!
এলিজা মৃদু হেসে বললো, কিছু করতে হবে না।বাহিরে কে কি করছে দেখতে আসলাম।
বায়েজিদ আমতা আমতা করে বললো, বউমনি সকাল থেইকা কিছু খায়নি যদি…
এলিজা ভ্রু কুঁচকে বললো, সকাল থেকে না খেয়ে আছিস।আমাকে আগে বলবি না।তুই বোস আমি খাবার নিয়ে আসছি।
এলিজা রান্না করে চলে যায়। বায়েজিদ এর জন্য খাবার বাড়ছে।বাড়িতে অনেক মানুষ জড় হয়েছে।সবাই কোন না কোন কাজ করছে।বাহিরে প্যান্ডেল করছে।কেউ ঘর সাজাচ্ছে।
এলিজা খাবার টা রেখে মনস্থির করলো একবার অপূর্ব কে দেখে আসবে।ঘুম থেকে উঠেছে কিনা।উপরে যেতেই সামনে পরে জাহাঙ্গীর হাতে সিগার নিয়ে। কর্কট মেজাজে বললো,বাহিরের মানুষের জন্য দরদ দেখানো ভালো নয়।
এলিজা মনোভাব নিয়ে বললো, নিজেকে ভালো রাখার জন্য কখনো,কখনো,অন্যকেউ ভালো রাখতে হয়। বাড়ির কাজের লোকদের সাথে সবসময় সদাচরণ করতে হয়। জাহাঙ্গীর কিছু বললো না। এলিজা উপরে চলে যায়। অপূর্ব ঘুমোচ্ছে। এলিজা ডাকলো না। টেবিলের উপর থেকে দুধ টা নিয়ে নিচে নামলো।গরম করে পরে নিয়ে যাবে।
বায়েজিদ এর জন্য রুটি ,ভাজি দিয়ে যায়।সাথে পানি। বায়েজিদ খুব খুশি হয়। বায়েজিদ এলিজার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁসি দিয়ে বলল, বুউমনি তুমি না খুব ভালো।
এলিজা তৎক্ষণাৎ ঘরে এসে দুধ নিয়ে উপরে চলে যায়। অপূর্বর কপালে হাত দিয়ে জ্বর পর্যবেক্ষন করে দেখে শরীর অনেক টাই শীতল হয়ে আসছে। জানালা থেকে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। জানালা বন্ধ করতে যাবে ঠিক তখনই অপূর্ব পেছন থেকে এলিজার ডান হাত ধরে টেনে ধপাস করে বুকের উপর সুইয়ে দেয়।
এলিজা লাজুক মুখে বললো, কি করছেন । তারমানে আপনি সজাগ!আপনি না অসুস্থ! শরীর একদম নিস্তেজ তাই ভেবে ডাকিনি।আর আপনি…
অপূর্বর চোখ গুলো লাল।ডান হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো খাড়া করে বললো,ঘুম সেই কখন ভেঙেছে।জ্বর তো কি হয়েছে।আমি এতক্ষন সব দেখেছি শুনেছি।
এলিজা লাজুক মুখ নিয়ে অপূর্বর বুকের উপর দিয়ে সরতে চায়। অপূর্ব শক্ত করে ধরে রেখেছে।
এলিজা মৃদু হেসে বললো, কি শুনেছেন আর কি দেখেছেন শুনি।
অপূর্বর এলিজাকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকের উপর থেকে সড়িয়ে বিছানার উপর সুইয়ে দিয়ে বললো, এই যে নিজের আয়ুর অর্ধেক যেন আমার হয়ে যায়। আমার যাতে কিছু না হয়। অঝরে কেঁদেছেন। জ্বর হয়েছে ভালো ই হয়েছে।না হয় আপনার এই ভালোবাসা গুলো তো প্রকাশ হতো না ।
এলিজা দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললো, আপনি সবসময় আমার সাথে মজা করেন। অপুর্ব আওয়াজ করে হেসে বললো, লজ্জা পেলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে।তার উপর মিষ্টি রঙের শাড়ি। তোমার সুন্দর্যর কাছে যে পরিরাও হার মানবে ম্যাডাম।
এলিজা অপূর্ব কে সড়িয়ে উঠে দাড়ায়। উল্টো দিকে ঘুরে বললো, অনেক কাজ পরে আছে।পাখির বিয়ের আয়োজন করতে হবে।
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো, যখনি আমার প্রেম প্রেম পায় তখনি তোমার কাজ চলে আসে।
হাত মুখ ধুয়ে নিন।দুধটা গরম আছে খেয়ে নিন। আমি নিচে যাচ্ছি।বলেই এলিজা-চলে যায়।
অপূর্ব জাহাঙ্গীর এর সাথে বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে।বিয়েটা এই বাড়িতে বসেই হবে।পাখির বাড়ির লোকদের এখানে আনা হোক। সাথে পাখির কিছু বন্ধু বান্ধব। জাহাঙ্গীর অপূর্বর প্রস্তাবে রাজি হয়।সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। মমতাজ শেষ বারের মত চাচ্ছে তার ছেলের সাথে কথা বলে যদি বিয়েটা ভাঙানো যায়।এইঘর ওঘর খুঁজলে শ্রাবন কে কোথাও পেলো না ।পাখি কে খুঁজলো পাখিও কোথাও নেই। মমতাজ দ্রুত পায়ে জয়ার কাছে যায়।জয়া কাজে ব্যস্ত মমতাজকে উপেক্ষা করলো।অর্পার কাছে গেলেও অর্পা মমতাজ কে এড়িয়ে যায়।কেউ ই কিছু বলছে না তাহলে শ্রাবন পাখি কোথায় গেলো। হঠাৎ মাথা থেকে এসব ভাবনা ছেড়ে মমতাজ পানের বাটা নিয়ে বসে।
বিয়ের আগে কিছু স্মৃতি রাখতে চাই।যা মনে করে বিয়ের পর হাসতে পারি। বাচ্চাদের ও যাতে বলতে পারি তোদের মাকে নিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরেছি,কি কি করেছি।প্রতিটা দিন,প্রতিটা মুহূর্ত স্মৃতি করে রাখতে চাই। শ্রাবন সকাল সকাল এসব ভেবেই পাখিকে নিয়ে বাহিরে বের হয়।সাথে স্প্লেনডর বাইক।
শীতের সকালে দুজন অজানা পথে বের হয়।পাখি পেছনে বসা। অনেকক্ষন বাইক চলার পর থামে যমুনা নদীর তীরে। সকাল বেলা এখানে ধমকা হাওয়া বইছে।শীতল পরিবেশ। পাখি কালো রঙের থ্রিপিছ পরা।সাথে শীতের চাদর। শ্রাবন কালো রঙের জ্যাকেট পরনে। দুজনে নদীর তীরে বসে। শ্রাবন এটা সেটা অনেক কথা বলতে থাকে।পাখি শুনছে।পাখি কিছুক্ষণ চুপ থেকে শ্রাবনের কাদে মাথা রেখে ভারী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে আপনি আপনার জীবন জড়ালেন কেন?
শ্রাবন মৃদু হেসে বললো, তোমার এই ক্ষুদ্র জীবনে আমি আমার পরবর্তী দিনের বেঁচে থাকার শুখ ,আশা আকাঙ্ক্ষা পাই। জীবন দৈর্ঘ্যের আকারে বড়।তবে যখন মানুষ সুখ পায় তখন জীবন খুব দ্রুত কেটে যায়।আর যখন দুঃখ গ্রা,স করে তখন জীবন থেমে যায়।সাথে সময় ও থমকে যায়। শ্রাবন পাখির হাত দুটো ধরে বললো, আর তোমার কিছু হবে না। তুমি ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে।
বেলা বারতে থাকে।ধিরে ধিরে সূর্যর দর্পন দেখা যাচ্ছে। আশেপাশে মানুষ ভির করছে। তৎক্ষণাৎ শ্রাবন পাখি উঠে দাড়ায়। শ্রাবন এদিক সেদিক পরোখ করে একটা ফুলের দোকান দেখতে পায়। শ্রাবন পাখিকে বাইকের কাছে দাড় করিয়ে বললো,তুমি এখানে দাঁড়াও আমি আসছি। শ্রাবন দৌড়ে চলে যায় ফুলের দোকানে।একটা গোলাপ কিনে। শ্রাবনের ভাব ভঙ্গিবা খুব অস্থির। সারাদিন মুখে হাসি এটে থাকে। ফুল টা নিয়ে পাখির কাছে চলে আসে।
পাখি ফুলটা নিতে চাইলে শ্রাবন এক হাত থেকে অন্য হাতে টপকে মারে।
পাখি ইতস্তত বোধ করলো।
শ্রাবন অমৃদু হাঁসি দিয়ে বলল,এত সহজে কি করে দেই। শ্রাবন এদিক সেদিক দেখে।পাখির সামনে হাঁটুঘেরে বসে পরে।পাখি ভ্রু কুঁচকে দেয়।কি করছে ছেলেটা।পাখি ফিসফিস করে বলল সবাই দেখছে।
শ্রাবন মৃদু হেসে ফুলটা পাখির দিকে বাড়িয়ে বললো, তোমার জীবন টা ক্ষুদ্র। কিন্তু তোমার ঐ ক্ষুদ্র জীবনের ভালোবাসা নিয়েই আমি সারাটা জীবন থাকতে চাই।তোমার জীবনের সমস্ত সুখ দুঃখের অংশীদার হতে চাই।দিবে কি সেই সুযোগ!
আশেপাশের সবাই শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে আছে।পাখি মৃদু হেসে ফুলটা শ্রাবনের হাত থেকে নিতে নিতে বলল, আপনি না।
পাখি তারা দিলে শ্রাবণ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। লুকিং গ্লাস দিয়ে বার বার পাখিকে পরোখ করছে।
অপূর্ব জাহাঙ্গীর দুজনে মিলে বাড়ির সমস্ত কাজে সহযোগিতা করছে।
গ্রাম থেকে আসে রমজান জয়তুন। এলিজা তাদের দেখে খুশিতে আপ্লুত হয়ে ওঠে। অপূর্র তাদের সালাম করে। মৃদু হেসে প্রশ্ন করে শ্যামলী আসেনি।ওকেও তো আসতে বলা হয়েছে। জয়তুন আমতা আমতা করে বলল, ওর বাবার শরীর টা ভালো নেই।তাই আসেনি।
রমজান জয়তুন,জয়া, এলিজা সবাই মিলে বিভিন্ন আড্ডায় মশগুল হয়।
কিছুক্ষণ পর হাজির হয় শ্রাবন পাখি। সকালে কাউকে কিছু না বলে বেড়িয়েছে।পাখি ভেতরে যেতে ভয় পাচ্ছে। শ্রাবন মৃদু হেসে বললো, আমার সাথেই তো বের হয়েছো।অন্য কারো সাথে না। ভয় পাওয়ার কি আছে। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় অপূর্ব,সাদা পাঞ্জাবি,কালো জুতো পরিধান করা। অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,ডুবে ডুবে জল খাওয়া হচ্ছে,হুমম। কাউকে কিছু না বলেই বের হয়ে গেলি।এদিকে সব কাজ আমাকে করতে হচ্ছে।
শ্রাবন বললো,তুই আমার বড় ভাই। সবকিছু তো তোকেই সামলাতে হবে তাই না।
পাখি দৌড়ে ভেতরে যেতেই সামনে পরে মমতাজ।পাখি থমকে দাঁড়ায়। মমতাজ চোখ গুলো বড় বড় করে বললো, সারাদিন পাখির মত ফরফর করছো দেখছি।নাম তো পাখি।পাখির মত উড়ে চলে যেতে পারো না আমার ছেলের জীবন থেকে। অন্তত আমার ছেলেটা মুক্তি পেতো। পাখি মমতাজ এর কথা উপেক্ষা করে মৃদু হেসে বললো, উড়ে চলে গেলেও আপনার ছেলে ঠিক শিকার করে নিয়ে আসবে।বলেই চলে যায় পাখি। মমতাজ মুখ কুঁচকে দেয়।।বাড়িতে এক এক করে সমস্ত অতিথি আসতে থাকে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়।সবাই বৈঠকখানায় বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন আলোচনায় মশগুল। তৎক্ষণাৎ জাহাঙ্গীর এর ম্যানেজার বলে উঠলো,একই বাড়িতে দুজনার বিয়ে এটা একটু অন্যরকম।তবে আমার কাছে বিষয়টা ভালো লেগেছে।
অপূর্ব সোজা হয়ে বসে বললো,আমরা সবাই মিলে দুটো দুল করবো।
অর্পা বললো,তারমানে কি ভাইয়া ?
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো, ছেলে পক্ষ আলাদা আর মেয়ে পক্ষ আলাদা হবে।
জয়া বলে উঠলো,এটা দারুন হবে।তবে তাই করা হোক।
অপূর্ব বললো, আমাদের দলে থাকবে , আমাদের সকল বন্ধু বান্ধব এবং কাকি। মমতাজ মুখ অন্য দিকে ঘুরোয়।আর দলের কর্তা থাকবে আমার বাবা ।
জাহাঙ্গীর মৃদু হাসে। অপূর্ব জাহাঙ্গীর এর হাসির দিকে পরোক্ষ করলো।
এলিজা মৃদু হেসে বললো,আর আমাদের দলে থাকবে সকল মেয়েরা। আমাদের দলীয় নেত্রী হবে আমার আম্মা।
জয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো এলিজা।জয়া হেসে বললো পাগলি মেয়ে।
সবাই বের হয় বিয়ের কেনাকাটার উদ্দেশ্যে।
সবাই ঢাকা বসুন্ধরা মার্কেটে উপস্থিত হয়।সবাই এটা ওটা,গহনা শাড়ি থেকে সবকিছু কিনছে। অপূর্ব তৎক্ষণাৎ ডেকে পাঠায় সূর্য কে।বিয়ের বাহানায় সূর্য কে নিজের কাছে রাখতে পারবে।বিয়ের কিছু দায়িত্ব সূর্য কে দেয়া হয়েছে। সূর্য সহজেই রাজি হয়। অপূর্বর খটকা লাগে। সূর্যর যদি সবকিছুর পেছনে হাত থাকতো তবে কনস্টেবল রা সন্দেহ জনক কিছু পেতো। কিন্তু তারা কিছুই পেলো না ।তবে কে আছে। অপূর্ব মাথা থেকে হঠাৎ এসব চিন্তা ছুরে ফেলে দেয়।
অপূর্ব শান্ত স্বরে সূর্য কে বললো, তুই ও কিছু কিনে নে পছন্দ মত। সূর্য মৃদু হাসে।
পরদিন সকালে —-
চারদিকে ঝাড়বাতি। বিভিন্ন ফুলের বাহার। চারদিকে বাচ্চাদের ছোটাছুটি।নাচ গানে চৌধুরী বাড়ি জমজমাট হয়ে ওঠেছে। জয়ার বাবার বাড়ি থেকে সবাই এসেছে। মমতাজ এর ভাই বোন সবাই উপস্থিত হয়।
অপূর্ব শ্রাবন থানার কিছু কিছু অফিসার দের দাওয়াত করে।
সমস্ত মহিলারা একসাথে বসে হলুদ বাটছে।তারসাথে গান গাইছে।প্যান্ডেল এর মাঝখান দিয়ে আলাদা কাপর দেয়া হয়। একপাশে মেয়ে পক্ষর অন্য পাশে ছেলে পক্ষর গায়ে হলুদ হবে।
এলিজা আজ খুব আনন্দিত তার একমাত্র ছোট বোনের বিয়ে।ছুটে ছুটে কাজ করছে। হলুদের অনুষ্ঠানে হাজির হয় অপূর্ব শ্রাবনের সব বন্ধুরা। প্যান্ডেলে কলা গাছ দিয়ে বানানো ছাদনতলায় নিয়ে যায় শ্রাবন কে। এলিজা পাখিকে শাড়ি পরিয়ে তৈরি করছে।সাথে অতিথি মেয়েরা
।সব মেয়েরা হলুদ শাড়ি পরে নেয়।পাখিকে ছাদনতলায় নেয়ার জন্য নিচ তলায় নামানো হয়।ঠিক তখনি একজন প্রতি বেশি পাশ থেকে বলে উঠলো, ছাদনাতলায় নিজে হেটে গেলে অমঙ্গল হয়।
পাশ থেকে আরো একজন তার সাথে সহমত জানায়। পাশ থেকে অর্পা বলে উঠলো আমাদের দলে তো কোন ছেলেই নেই।
তৎক্ষণাৎ অপূর্ব, সূর্য হাজির হয়। অপূর্ব অহংকারী স্বরে বললো, ছেলেদের অভাব বুঝি। আমাদের দরকার বললেই হতো। পাশ থেকে একজন মেয়ে ঢং করে বলে উঠলো, আমাদের কনেকে আমরা হাটিয়েই নিয়ে যাবো কোন পুরুষের দরকার নাই।
সূর্য জ্যাকেটের হাতা কাচাতে কাচাতে বললো,খুব তেজ তো দেখছি। অপূর্ব সব মেয়েকে উপেক্ষা করে এলিজার কানে কানে এসে বললো,আজ তোমাকে হলুদ শাড়ি তে খুব সুন্দর লাগছে।চলোনা আরেকবার বিয়ে করি।
সব মেয়েরা অপূর্বর কান্ড দেখে খিলখিল করে হেসে উঠে। তখন ই জয়া এসে বললো, ওদিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে।কনেকে তারাতাড়ি নিয়ে চল। এলিজা জয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো, আম্মা পাখি কি হেটে যাবে,বলতেই অপূর্ব পাখিকে পাজা কোলে করে নেয়। সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে।এলিজা চুপ হয়ে যায়। অপূর্ব সবার দিকে পরোখ করে বললো,হা করে দেখার কি আছে পাখি আমার ছোট বোন।অর্পা যেমন আমার বোন পাখিও তেমনি। বলেই ছাদনাতলায় পাখিকে নিয়ে যায়। শুরু হয় পাখির গায়ে হলুদ।একে একে সবাই হলুদ দেয়া শুরু করে।একে অপরের গালে হলুদ দিচ্ছে।সবাই সেই নিয়ে ব্যাস্ত।কিছু মেয়েরা নাচ গান করছে। এলিজা সবার সাথে,হলুদ মাখাচ্ছে।ঠিক তখনি অপূর্ব হুট করে এসে এলিজার কমড় ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। এলিজা হতভম্ব হয়ে যায়। এলিজা লজ্জা মুখে বললো,কি করছেন সবার সামনে জড়িয়ে ধরলেন কেন! সবাই দেখছে।
অপূর্ব মুখে হাসি নিয়ে বললো,সবাই আছে কিন্তু কেউ দেখছে না।সবাই নতুন কনে কে নিয়ে ব্যাস্ত।আর এদিকে আমি আমার কনেকে নিয়ে একটু….
এলিজা মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
অপূর্ব কপালের সামনে দিয়ে এলিজার চুল গুলো সরিয়ে বললো,সবার হলুদ গালে লাগালে আমার টা লাগাবে না। এলিজা ছুটে যেতে চাইলেই অপূর্বর বা গালে থাকা হলুদ,এলিজার গালের সাথে নিজের গাল লাগিয়ে হলুদ দেয়। এলিজা
মৃদু হেসে বললো, আপনি না।
সবাই পাখিকে গোসল করায়। অপরদিকে শ্রাবন কেও গোসল করায়।শীতের দিনে গোসল। শ্রাবন কাঁপতে কাঁপতে বললো,আমি আর কোনদিন বিয়ে করবো না।সেই শুনে সব বন্ধু বান্ধব আওয়াজ করে হেসে উঠে।
একে একে সব অতিথি উপস্থিত হয়। রাত বিয়ের আয়োজন করা হয়।রাতের বিয়ের পরিকল্পনা অপূর্বর।গানের তালে তালে নাচছে মেয়েরা। বিভিন্ন বাতির আলোয় চারদিক আলোকিত।
গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অপূর্ব সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছে। তৎক্ষণাৎ অপূর্বর চোখ পরে রুমার দিকে।বিয়েতে রুমাও এসেছে।পাশে থাকা সূর্য মিটিমিটি হাসছে। সূর্য রুমার ব্যাপারে আগে থেকেই জানে। সূর্য পাশ থেকে বললো, ভাই ভয় পাচ্ছিস। অপূর্ব উল্টো দিকে ঘুরে বললো,চেপে যা। রুমা পাতলা জর্জেট শাড়ি পরা।
অপূর্বর সামনে এসেই হাত বাড়িয়ে দেয়। অপূর্ব হাতটা না দিতে চাইলেও,সূর্য অপূর্বর হাত টা বাড়িয়ে দেয়।
চারদিকে নাচ গান, এরপর খাওয়াদাওয়া মিলিয়ে বিয়ে জমজমাট। কিছুক্ষণ এর মধ্যে ই শুরু হয় বিয়ের কার্যক্রম। কাজী প্রথমে পাখির কাছে আসে।পাখি লাল বেনারশী পরে বসে আছে। কাজি বড়দের উদ্দেশ্য করে বললো, দেনমোহর কত টাকা ধার্য্য করবো? এলিজা কিছু বললো না।জয়া এলিজার দিকে পরোখ করে। তৎক্ষণাৎ পাখি বলে উঠলো, দেনমোহর হিসেবে আমি আমার স্বামীকেই চাই। সবাই পাখির দিকে তাকিয়ে হেসে ওঠে। এলিজা শান্ত স্বরে বললো, কিছু তো ধার্য্য করতে হবে। আপনি ১ টাকা লিখেন।কাজী দেনমোহর লিখে কবুল বলতে বললে পাখি কবুল বলে।সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে ওঠে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। চৌধুরী বাড়ির ভির কমতে থাকে।
এলিজা বাসর ঘর আগেই সাজিয়ে রেখেছে। সাজানোটা আরেকবার দেখতে আসে।ঘর টা ভালো করে পরোখ করে ঘর থেকে বের হতেই দেখে, অপূর্ব।
এলিজা হতভম্ব হয়ে যায়।
এলিজা অপূর্ব কে উপেক্ষা করে যেতেই অপূর্ব এলিজার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। এলিজা লাল রঙের শাড়ি পরা।চুল গুলো খোপা তার সাথে ফুল।
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো, মাশাআল্লাহ*আজ তোমাকে এত সুন্দর দেখাচ্ছে ইচ্ছা করছে আরো একবার বিয়ে করি। এলিজা মৃদু হেসে বললো, আমার মহারাজাকেও যে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।তবে শুধু আজ না আপনি আমার চোখে সবসময় সুন্দর।
অপূর্ব হেসে বলল,ধরে নিলাম ,আজ থেকে আমিও সু-দর্শন।যখন আমার স্ত্রী বলেছে।
আমার কাজ আছে বলেই,এলিজা অপূর্ব কে সরিয়ে চলে যায়। অপূর্ব নিচে নামে। সূর্য মিদুল শ্রাবন সহ সবাই বৈঠকখানায় আড্ডা দিচ্ছে।
অপূর্ব একবার বাহিরে বের হয়।এখনো কিছু অতিথি আছে। তৎক্ষণাৎ তাদের মধ্যে একজন দ্রুত পায়ে হেঁটে যেতেই অপূর্বর সাথে ধাক্কা লাগে।অপূর্ব লোকটির দিকে ঘুরলে লোকটি হাত উঠিয়ে সরি,বলে চলে যায়। লোকটির বড় বড় দাড়ি সাথে পাঞ্জাবি পরা। অপূর্ব সামনের দিকে ঘুরে চোখ বুজে কিছু মনে করার চেষ্টা করলেই, অপূর্বর খেয়াল হয় একটু আগে যে লোকটির সাথে ধাক্কা লাগে তার হাতে একটা চিন্হ ছিলো।এটা সেই চিন্হ যেটা চীপস ডুপিয়ালির হাতে ছিল।
এলিজা পর্ব ৪৯+৫০
অপূর্বর চোখ বড় হয়ে যায়।ভাবতে থাকে আমার বাড়িতে চীপস কি করছে?তাও ছদ্মবেশে কেন। অপূর্ব তৎক্ষণাৎ বৈঠকখানায় উপস্থিত হয়।যা সন্দেহ করছিলো তা নয়। সূর্য সবার সাথে বিভিন্ন কথায় মশগুল।তবে চীপস এখানে কি করছিলো?নাকি সূর্য আমার চোখে ধুলো দিয়ে ওর সাথে কথা বলেছে। এসব ভাবতে ভাবতে ই শ্রাবন অপূর্ব কে ডাকে। অপূর্ব সবার সাথে আড্ডায় যুক্ত হয়। কিন্তু অপূর্ব কে নতুন করে চিন্তা গ্রা,স করে।