ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ২৭

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ২৭
সারিকা হোসাইন

শুনশান নীরব স্তব্ধ রজনী,তারকাখচিত আকাশের নৈঋত কোন থেকে ধীরে ধীরে শুক্ল পক্ষের চাঁদ খানা বিদায় নিতে চলেছে।রাস্তার নেড়ি কুকুর গুলোর ঘেউঘেউ পর্যন্ত কর্ণ কুহরে আসছে না।চারপাশে এলোমেলো বাতাসের অস্তিত্ব খুব করে টের পাওয়া যাচ্ছে।রাজ্যের কক্ষের ভারী পর্দা গুলো সেই বাতাসের দাপটে সমান তালে উড়ে চলেছে সেই সাথে রাজ্যের ঝলমলে খুসবু যুক্ত চুল।ডিম লাইটের মৃদু নীলচে আলোয় শক্ত আলিঙ্গনে দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানব মানবী একজন আরেকজন কে আবদ্ধ করে রেখেছে।তাদের উত্তপ্ত ভারী নিশ্বাস ব্যাতিত আর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।

যুবরাজের প্রশস্ত বুকে চোখ বন্ধ করে পরম শান্তিতে মাথা রেখে যুবরাজকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে রাজ্য।যুবরাজের বুকের ধুপধাপ হার্টবিট এর প্রত্যেকটা হাতুড়ি পেটানো বাড়ি তার হৃদয়ের দরজায় কড়া নেড়ে চলেছে বিরামহীন ভাবে।সেই শব্দে বারবার শিউরে উঠছে রাজ্য আর থেকে থেকে যুবরাজের পিঠে শক্ত করে খামচে ধরছে।রাজ্যের হৃদয়ের উত্তাল বাসনা টের পেয়ে শব্দ করে হেসে ফেললো যুবরাজ।
যুবরাজের হাসি দেখে কিছুটা থতমত খেলো রাজ্য।এরপর বুক থেকে ঝটপট মাথা সরিয়ে যুবরাজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপনি একটা খারাপ আর চূড়ান্ত অসভ্য লোক,আমারই ভুল হয়েছে আপনাকে প্রশ্রয় দেয়া,এক্ষুনি বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে ফাজিল লোক কোথাকার”
কথাটি বলেই অভিমান করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো রাজ্য।এটা দেখে যুবরাজ আরো এক চোট হেসে নিজেকে স্বাভাবিক করে আদুরে কন্ঠে শুধালো
“আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেছিলে কেনো?
যুবরাজের এহেন প্রশ্নে ধক করে উঠলো রাজ্যের বুক।কি উত্তর দেবে সে এই প্রশ্নের?সে তো নিজেই জানেনা কি কারনে হঠাৎ এই বজ্জাত ছেলেকে সে এভোয়েড করেছে?
“কি হলো এনসার দিচ্ছ না কেনো সোনা মণি?ভালোবাসার ডোজ কি কম পড়েছিলো?
কথাটি বলে রাজ্যের দিকে সামান্য ঝুকে আবার ফিক করে হেসে দিলো যুবরাজ।এবার রাজ্য নিজেকে সাধু জাহির করতে মিন মিন করে বলে উঠলো

“আপনি কি বলেছিলেন আমাকে ফোনে মনে নেই?
“কি বলে ছিলাম?
“কি বলেন নি?
“আচ্ছা কি বলেছিলাম বলো তো শুনি?
“আমি বলতে পারবো না অমন অসভ্য কথা”
“কেমন অসভ্য কথা?

যুবরাজের সেই পুরোনো কথা মস্তিষ্কে হানা দিতেই লজ্জায় দুই গাল রক্তিম হয়ে কান দুটো গরম হয়ে উঠলো রাজ্যের।নিজের লাল হয়ে যাওয়া গাল দুটো দুই হাতের সহিত চেপে ধরে পুরোনো ভাবনায় ডুব দিলো রাজ্য।
রেহান আর রাজ্যের মধ্যে বয়সের ফারাক ছিলো মাত্র ছয়।তাদের দুই ভাই বোনের বয়সের ফারাক অল্প হওয়াতে দুজনের সখ্যতা ছিলো বেশ।ছোট বেলা থেকেই রেহান ছিলো শান্ত ঠান্ডা মেজাজের অধিকারী।এরকম ভদ্র বাচ্চার দেখা পাওয়া দুষ্কর এরকমটাই প্রশংসা করতো প্রতিবেশীরা রেহান সম্পর্কে।রেহান ছোট থেকেই খুবই নরম মনের মানুষ ছিলো।এদিকে রাজ্য ছিলো জেদি বুদ্ধিমতী আর কিছুটা ধূর্ত প্রকৃতির।রেহান যখন বাসায় জেদ শুরু করে ডক্টরী পড়তে বিদেশ যাবে তখন মিসেস তনুজা আর রেজোয়ান চৌধুরী রাজ্যের দিকে তাকিয়ে বুকে পাথর বেঁধেছিলেন।কারন মেয়েটা তাদের অন্ধের জষ্ঠীর মতো ।কোনো প্রকার বাছ বিচার না করেই রেজোয়ান চৌধুরী রাজ্যকে আকড়ে ধরে রেহান কে বিদেশে পড়তে পাঠান।রেজোয়ান চৌধুরী তার এক বন্ধুর সহায়তায় নিউইয়র্ক আলবার্ট আইনস্টাইন মেডিকেল কলেজ এন্ড মেডিসিন রিসার্স ইনস্টিটিউট এ রেহান কে এডমিট করতে সক্ষম হন।সে সময়ের সব কিছুই যেনো স্বপ্নের মতো সুন্দর ছিলো।রেহান নিয়ম করে সপ্তাহে তিন দিন বাড়িতে কল করতো।

হঠাৎই একদিন রেহান জানায় তার একজন দেশি রুম মেট এসেছে।কিন্তু ছেলেটা বিদেশেই বড় হয়েছে এমনকি দেখতে শুনতেও বিদেশিদের মতো।সবাই তাকে ইউভি নামে চিনে।মিসেস তনুজা আর রেজোয়ান চৌধুরী আগ্রহের বসে একদিন ছেলেটার সাথে কথা বললেন।ছেলেটার কথা বার্তায় প্রচন্ড ম্যাচিউরিটি বিদ্যমান।একজন সতেরো বছরের তরুণের কাছে এমন ম্যাচিউরিটি প্রত্যাশা করাও যেনো আশ্চর্যের বিষয়।শুধু তাই নয় ছেলেটি মানুষের উদাসী বিক্ষিপ্ত মন নিমিষেই ভালো করার উস্তাদ ও বটে।
এমবিবিএস শেষ করে রেহান যখন ইন্টার্নি করছিলো রাজ্য তখন ইন্টার বোর্ড এক্সামের প্রস্তুতি নিচ্ছে।পরীক্ষা একদম দরজায় এসে ঠকঠক করে কড়া নাড়ছে এরকম শ্বাস রুদ্ধকর অবস্থা।যে করেই হোক সবচাইতে ভালো রেজাল্ট করে তাকে তার দাদা ভাইয়ের সমকক্ষ হতেই হবে।
গভীর রাতে নিজের পড়াশোনা শেষ করে কেবলমাত্র বিছানায় শোবার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য এমন সময় টুং করে একটা মেসেজ আসে তার ফোনে।
মেসেজের শব্দে বেশ অবাক হয় রাজ্য।

“এতো রাতে কে মেসেজ দিলো?দাদা ভাই তো এতো রাতে কখনোই মেসেজ দেবার কথা নয়,তবে?
কৌতুহল বশত ফোন হাতে নিয়ে হুয়াটস এপ এ ঢুকতেই আগত মেসেজ দেখে সারা শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে যায় ষোড়শী বালিকার।সেই বার্তাটি ভালো করে নজর বুলানোর আগেই দ্বিতীয় বার্তা এসে হাজির।
“এতো রাত জেগে পড়াশোনা করে নিজের চেহারা কেনো খারাপ করছো বউ”
“তোমাকে বউ বলে সম্বোধন করছি,এজন্য আমার মোটেও অস্বস্তি হচ্ছে না এবং আমি এটার জন্য কাউকে কোনো জবাবদিহিতা করতেও রাজি নই। তুমি ই আমার ভবিষ্যৎ বউ।একবার যখন এমন অসভ্য পুরুষের নজরে পড়ে গেছো আমার থেকে আর তোমার নিস্তার নেই রাজ্য সোনা,অনেক দিন ধরে নিজেকে সামলে রেখেছি,আজকে আর সম্ভব হলো না।আমি যে বড্ড বেসামাল!”

নামের দিকে নজর দিতেই সংক্ষেপে চোখে পড়লো”YuV”।ভয়ে উচ্ছাসে কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজ দাতার নামের উপর ক্লিক করতেই গভীর দুইটি বাদামি চোখ নজর কাড়লো।ফোনের মধ্যে বিভিন্ন কারসাজি করেও মেসেজ দাতার পুরো কোনো ইমেজ খুঁজে পেলো না রাজ্য।ফিরতি বার্তা পাঠাবে কি না সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব করতে করতেই পুরোটা রাত কাভার হয়ে গেলো।সেদিন ভোর বেলায় রাজ্যের আর পড়াশোনা তে মন বসলো না।
“এতদিন জানতাম মেয়েরা তাদের প্রোফাইলে চোখের ছবি দিয়ে রাখে মানুষকে আকৃষ্ট করতে এখন দেখছি ছেলেরাও এই ট্রেন্ড ফলো করতে শুরু করেছে।কি অদ্ভুত লোকরে বাবা”
বেহুদা ভঙ্গিতে কলম কামড়ে আরো নানান ভাবনা ভেবে চলেছে রাজ্য।হঠাৎই সেই কক্ষে রেজোয়ান চৌধুরী প্রবেশ করলেন।

“কি রে মা এতো বেলা হলো এখনো রুম ছেড়ে বাইরে বের হলি না?আজ তোর কোচিং নেই?
আকস্মিক নিজের বাবার উপস্থিতি বেশ অস্বস্তিতে ফেললো রাজ্যকে।এদিকে অধিক চিন্তায় কলম কামড়ানোর ফলে সেটার দশাও বেহাল।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় রাজ্য ক্যাবলাকান্তের মতো হে হে করে হেসে কি প্রতিউত্তর করবে সেটাই যেনো খুঁজে পেলো না।শেষ মেষ নির্বোধ বালিকার ন্যায় শুধালো
“দাদা ভাইয়ের ওই বিদেশি বন্ধু আই মিন রুম মেট ছেলেটাকে তুমি কি কখনো দেখেছো বাপি?
রাজ্যের এমন প্রশ্নে কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে মৌন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ভদ্রলোক।এরপর রুম থেকে প্রস্থান নিতে নিতে বলে উঠলেন
“একবার দেখেছিলাম তাও অনেক আগে,কিন্তু ওই ছেলেকে দিয়ে তোমার কি কাজ বলোতো মা?
রেজোয়ান চৌধুরীর পাল্টা প্রশ্নে খুঁক খুক করে কেশে উঠলো রাজ্য।এরপর মিছেমিছি পড়াশোনার ভান ধরে বলে উঠলো

“এমনি হঠাৎ জানতে ইচ্ছে হলো তাই জিজ্ঞাস করলাম আর কি! ,দূর দেশ দাদা ভাই একা একা থাকছে তাই চিন্তা হলো,এর বাইরে আর কিছুই নয় বাবা”
খুবই কনফিডেন্স এর সাথে কথা গুলো বলে বইয়ে মুখ গুজে ফেললো রাজ্য।
রেজোয়ান চৌধুরী এই বিষয়ে আর কোনো গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কাজে চলে গেলেন।
কিন্তু রাজ্যের খাওয়া দাওয়া ঘুম সব হারাম হয়ে গেলো।সব সময় ওই চোখ দুটো আর মেসেজ দুটো দেখেই তার রাত দিন সমান তালে কেটে যাচ্ছে।খাবার দেখলেই কেমন একটা বমি বমি ফিল হয়,গায়ে জ্বর জ্বর অনুভূত হয় আর অযথাই হাসি পায়।নিজের এহেন কাণ্ডে নিজেকে নিজেই কঠিন শাসালো রাজ্য।সব কিছুই যখন মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যাবার উপক্রম হলো তখন কোনো উপায় না পেয়ে রেহান কে ভিডিও কল করে বসলো রাজ্য।উদ্দেশ্য একটাই বাদামি চোখের মালিক কে এক নজর দেখা।

রাজ্য যখন রেহান কে কল করে রেহান তখন ল্যাবরেটরি তে কাজ করছিল।কাজের সময় হঠাৎ ফোন আসাতে বেশ বিরক্ত হয় রেহান।কিন্তু ফোনের স্ক্রিনে রাজ্যের নাম দেখে অবাক হয়ে ফোন তুলতেই রাজ্যের মলিন মুখ দেখে রেহান উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে
“কি ব্যাপার রাজ্য তোর চেহারার এই অবস্থা কেনো?কিছু হয়েছে?
রেহানের উদ্বিগ্নতা কমাতে চতুর রাজ্য পড়াশোনার বাহানা দিলো।
“এক্সাম এর টেনশনে প্রচুর ধকল যাচ্ছে দাদা ভাই,তুমি টেনশন করো না,আমি ঠিক আছে।
কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে রেহান শুধালো
“এমন অসময়ে তো কখনো ফোন করিস না,কোনো কিছু জরুরি বলবি নাকি?কোনো ম্যাথ সলভড করতে হবে?
রাজ্য কি বলবে না বলবে কিছুই গুছিয়ে উঠতে পারলো না।কিছুক্ষন মাথা চুলকে ডানে বায়ে চোখ ঘুরিয়ে চট করে বলে উঠলো

“তোমার রুম মেট বিদেশি ছেলেটা কি তোমার খেয়াল রাখে না দাদাভাই?তুমি একদম শুকিয়ে যাচ্ছ।”
কথাটা শোনা মাত্র পাশ থেকে চট করে উঠে দাঁড়ায় যুবরাজ এরপর ক্যামেরার সামনে এসে রসিকতা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠে
“আমার যতটুকু দায়িত্ব আমি সেটা অফকোর্স পালন করছি টুনটুনি। বাকিটা পূরণের জন্য ওর একটা বউ দরকার।আমি আবার বউয়ের দায়িত্ব পালন করতে পারবো না দুঃখিত”
ধবধবে সাদা ডাক্তারি ইউনিফর্ম পরিহিত হ্যাঙলা পাতলা গড়নের ফর্সা ছেলেটিকে এক নিমিষের জন্য দেখে হার্টবিট মিস করলো রাজ্য।যদিও মুখমন্ডল মাস্কে ঢাকা।তবুও তার চোখ দুটিই তার সৌন্দর্য প্রকাশ করে চলছে বাধাহীন ভাবে।ঘন মোটা বাঁকানো ভ্রু আর ঘন ঘন ঝলমলে কালচে বাদামি রঙের চুল।পুরো চেহারা না দেখলেও রাজ্য বুঝে গেলো ছেলেটি সাংঘাতিক সুদর্শন।যুবরাজের কন্ঠ আর চেহারার অকৃষ্টতায় মুগ্ধ হয়ে সব মিলিয়ে কথার তালগোল পাকিয়ে ফেললো রাজ্য।

প্রথম বারের মতো চোখে চোখে দেখা হলো দুজনার।রাজ্য দ্রুত চোখ নামিয়ে কিছু না বলেই হুট করে ফোনের লাইন কেটে সুইচড অফ করে গাঁয়ে কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।
এদিকে রেহান কোনো কিছুই বুঝতে না পেরে আরো বার দুয়েক ট্রাই করলো কিন্তু ফোন ঢুকলো না।
দুপুর গড়াতেই শরীর কাঁপিয়ে 102 ডিগ্রি জ্বর এলো রাজ্যের।প্যারাসিটামল খেয়েও কোনো ভাবেই জ্বরের লাগাম টানা যাচ্ছে না।রাত বাড়তে বাড়তে জ্বর আরো বাড়তে লাগলো।উপায় না পেয়ে কেঁদে কেটে রেহানের কাছে সবটা খুলে বললেন তনুজা।
হঠাৎ জ্বরের কারন কারোরই বোধগম্য হলো না।এক পর্যায়ে জ্বরের ঘোরে আবোল তাবোল বকতে শুরু করলো রাজ্য।

রেজোয়ান আর তনুজা রাজ্যকে হসপিটালে এডমিট করলেন রেহানের পরামর্শ অনুযায়ী।
তিনদিন পর সেই জ্বর কমে কিছুটা সুস্থ হলো রাজ্য।
বাসায় ফিরে দিন রাত যুবরাজের মেসেজের দিকে তাকিয়ে চোখের নিচে কালি পরে গেলো।তবুও সেই কঠিন হৃদয়ের পুরুষের কোনো ফোন বা মেসেজ কিছুই এলো না।
একপর্যায়ে যুবরাজের প্রত্যাশা বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হলো রাজ্য।দেখতে দেখতে পরীক্ষা চলে এলো।পড়াশোনার চাপে যুবরাজকে এক প্রকার ভুলেই গেলো সে।
শেষ পরীক্ষার দিন এক্সাম শেষ করে বাড়ি ফিরতেই ফোন হাতে নিয়ে রেহান কে কল করতে ডাটা অন করলো রাজ্য।সাথে সাথেই মেসেজ নোটিফিকেশন আসলো।
মেসেজ ওপেন করতেই চক্ষু বিস্ফারিত হবার উপক্রম।
“আমাকে দেখেই যদি হসপিটালে এডমিট হতে হয় তবে দেশে ফিরে যখন পেটে একটা বাচ্চা দিয়ে দেবো তখন কি উপায় হবে চাঁদু?

মেসেজ দেখে রাগে,দুঃখে, অভিমানে,জেদে আগ্রাসী হয়ে উঠলো রাজ্য।কোনো কিছুর বাছবিচার না করেই ব্লক করে দিলো যুবরাজের নম্বর।সেদিনই তনুজাকে সাথে নিয়ে কিনে আনলো নতুন সিম।রেহানকে পর্যন্ত সেই নম্বর দিলো না।এভাবেই এক পর্যায়ে যুবরাজকে বেমালুম ভুলে গেলো রাজ্য।আর আজ এতোগুলো বছর পরে সেই মানুষটি তার সামনে।যাকে সে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছে।রেহান হারিয়ে যাবার পর অবশ্য পুরোনো সেই নম্বরে অনেক ট্রাই করেছে রাজ্য।কিন্তু কোনো ভাবেই তার নাগাল পাওয়া যায়নি।।
রাজ্যের ধ্যান ভাঙলো যুবরাজের আঙ্গুলির তুড়ি বাজানোর শব্দে।ভাবনা থেকে হকচকিয়ে বের হয়ে যুবরাজের দিকে লাজুক দৃষ্টি পাতে রাজ্য।
রাজ্যের লাজুক মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে প্রশান্তিতে হৃদয় ভরে ওঠে যুবরাজের।যুবরাজ রাজ্যের কাছে এসে গলা খাকরি দেয়।

“এহেম,এহেম।কল্পনা করতে করতে তো রাত কাবার দিয়ে ফেললে।আমার আর আজ ঘুম হলো না।”
কথাটি বলেই অসহায় মুখশ্রীতে প্যান্টের পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো যুবরাজ।
রাজ্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদুরে কন্ঠে যুবরাজ বলে উঠলো
“তোমাকে আমি শাস্তি দেবো রাজ্য,কঠিন শাস্তি,তুমি কি শাস্তির জন্য প্রস্তুত?
যুবরাজের এমন শীতল কথায় মোমের মতো গলে গিয়ে রাজ্য শুধায়
“কি শাস্তি?
“লাইট অফ করো তোমাকে ঘুঘু পাখি দেখাবো।”
“ছি ছি আমি ওসব দেখবো না,নির্লজ্জ্ব লোক কোথাকার”
“দেখতে তোমাকে হবেই।
“আমি কিন্তু চিৎকার করবো”
“করো”

মৃদু কন্ঠে কথাটি বলে ডিম লাইট অফ করে পুরো কক্ষ অন্ধকার করে ফেললো যুবরাজ।
ভয়ে রাজ্য চোখ বন্ধ করে নিজের জামা খামচে ধরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
যুবরাজ সামান্য হেসে পকেট থেকে একটা ডায়মন্ড এর পেন্ডেন্ট বের করে রাজ্যের গলায় পরিয়ে দিতেই যুবরাজের উষ্ণ হাতের স্পর্শে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠে রাজ্য।
রাজ্যের কানের কাছে মাদকতা মিশ্রিত কণ্ঠে ফিসফিস করে যুবরাজ বলে উঠলো

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ২৬

“তোমাকে পাবার বাসনার আট বছর পূর্তি হলো আজ।তুমি শুধু আমার রাজ্য।তোমার উপর একমাত্র যুবরাজ শাহীরের দখলদারি ছাড়া আর কারো আধিপত্য চলবে না।তোমার ত্রি সীমানায় আমি একটা পিপিলিকার আগমন পর্যন্ত বরদাস্ত করবো না।
তুমি আমার একান্ত ব্যাক্তি গত সম্পত্তি।তুমিই আমার ময়না,টিয়া,চড়ুই,ঘুঘু সব সব সব……..

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ২৮