কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৪৪
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা প্রায়। ইউশার হুশ ফিরল কেবল। দূর্বলতায় চুইয়ে থাকা চোখজোড়া টেনেহিঁচড়ে খুলে ছাদের দিকে চাইল সে। কপাল কুঁচকে বসল একটু। তারপর ঝট করে আশেপাশে তাকাল। হাঁ করে বলল,
“ হসপিটাল,আমি হসপিটালে!
ধড়ফড়িয়ে উঠতে গেলেই হাতে টান পড়ল। সুচের মতো কিছুর তোড়ে টনটন করল পেলব ত্বক। ব্যথায় ককিয়ে উঠল ইউশা। পরপর ভালো করে দেখল চারিপাশ।
মাথার পাশে স্যালাইন ঝুলছে। প্রায় শেষ ওটা। হাতে ক্যানোলা লাগানো। ইউশার মাথায় বাজ পড়ল। কতক্ষণ ধরে ও হাসপাতালে আছে?
কপালের এক পাশ চেপে ধরে ঘন শ্বাস নিলো মেয়েটা। দুপুরের কথাগুলো আস্তেধীরে ভেসে উঠল চোখে। ও কি জ্ঞান হারিয়েছিল? হাসপাতালে কে আনলেন,অয়ন ভাই বুঝি?
মনের মধ্যে নাম উঠতে না উঠতেই কেবিনে পায়ের শব্দ শোনা গেল। কাচের দরজা ঠেলে ঢুকল সফেদ এপ্রোন জড়ানো সুদর্শন ছেলেটা। বিষণ্ণ চোখ তুলে চাইল ইউশা।
প্রিয় পুরুষের মুখখানা দেখে নিভন্ত যন্ত্রণায় গুমড়ে উঠল দৃষ্টি। অয়নের ঠোঁটে হাসি নেই। নিঃশব্দে এসে বেডের পাশের টুলে বসল। ইউশা
জিভে ঠোঁট চুবিয়ে মাথা নোয়াল। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন ছুড়ল সে,
“ কী লুকোচ্ছিস আমার থেকে?”
ইউশা ঘাবড়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ কী, কী লুকোব?”
“ সেটাইত জানতে চাইছি। কী লুকোচ্ছিস, কেন লুকোচ্ছিস! প্রতিদিন তো নিয়ম করে খাওয়া-দাওয়া করছিস,তাহলে ডাক্তার কেন বলল তোর শরীর দূর্বল! প্রেশার ফল করেছে। কেন?”
ইউশা ফোস করে শ্বাস ফেলল। যেন আতঙ্কের দানবীয় ভারটা বুকের জায়গা ছেড়ে দিয়েছে।
অয়ন নিজেই বলল,
“ ইউশা দ্যাখ,আই এ্যাম আ ডক্টর। শিশুবিদ হলেও হিউম্যান বডি নিয়ে আমার যথেষ্ট ধারণা আছে। তুই আমাকে বল তোর কোথায় সমস্যা? বা কী ফিল হচ্ছে তোর? কোথায় খারাপ লাগছে? বল না ইউশা,আমার সাথে এত হেজিটেশন কীসের?”
ইউশা আহত চোখে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। পরপর হাসল মাথা নুইয়ে। অয়ন অবাক হয়ে বলল,
“ হাসছিস?”
ইউশা হাতটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ এটা খোলো অয়ন ভাই। ব্যথা করছে।”
স্যালাইন শেষ হওয়ায় খুলে দিলো অয়ন। ইউশা মূহুর্তে নেমে দাঁড়াল। ব্যস্ত গলায় বলল,
“ আমার এখন ফিরতে হবে। সন্ধ্যে হওয়ায় সবাই নিশ্চয়ই চিন্তা করছে। অয়ন ভাই তুমি কিন্তু বাড়িতে কিছু জানিও না। মা কেঁদেকেটে অস্থির হয়ে যাবেন। আচ্ছা, আমার ব্যাগটা কোথায়?”
অয়ন হতাশ চোখে বলল,
“ তার মানে তুই বলবি না!”
ইউশা মুচকি হেসে বলল,
“ তুমি ডাক্তার অয়ন ভাই। ওষুধপত্র শরীর,রোগ এসবের বাইরে গিয়ে কখনো কিছু ভাবতে পারবে কিনা জানি না। যদি পারো, ভেবে দেখো। তখন ঠিক নিজেই উত্তর পেয়ে যাবে।”
তারপর
এক পা বাড়িয়েও ফিরে চাইল সে। কাঠ গলায় বলল,
“ তবে আমি চাই না, আমার আসলেই কী হয়েছে এই প্রশ্নের উত্তর তুমি কোনোদিন খুঁজে পাও।”
ইউশা বেরিয়ে গেল। অয়ন তাজ্জব হয়ে চেয়ে রইল সে পথে। এইত, ওর চোখের সামনেই বড়ো হয়েছে মেয়েটা। অয়নের সাথে হেসেছে,গল্প করেছে। কত শত আবদার করেছে এক সময়। অথচ আজ! আজ সেই ছোট্ট মেয়েটাকে এত অচেনা লাগছে কেন? এমন
কঠিন কঠিন কথা কবে শিখল ও!
ইউশা বাড়ি ঢুকতেই মায়েরা হামলে পড়লেন। কী হয়েছে, এত দেরি কেন,ফোন কেন তুলিসনি এমন হাজারটা প্রশ্নের বানে বিমর্ষ ইউশা আরো বিধ্বস্ত হয়ে পড়ল। কোনোরকম সব সামলে যখনই ঘরের পথ ধরল,উড়তে উড়তে হাজির হলো তুশি। চপল পায়ে ছুটে এসে বলল,
“ তুমি আজ কোথায় ছিলে? আমি সারাদিন তোমার জন্যে অপেক্ষা করেছি।”
ইউশা ক্লান্ত গলায় বলল,
“ একটু ব্যস্ত ছিলাম।”
তারপর পা বাড়াতে গেলেই তুশি বলল,
“ ইউশা, আমার তোমার সাথে কিছু কথা ছিল। আমরা কতদিন গল্প করি না।”
“ গল্প পরে করব তুশি। আমার ভালো লাগছে না। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”
যেতে নিলে ফের বাধ সাধল তুশি।
বলল,
“ না না। তা কী করে হয়? তোমার মন খারাপ জেনেও আমি তোমাকে একা ছেড়ে দেবো? চলো, আমিও তোমার ঘরে যাই।”
ইউশার ধৈর্য গুড়িয়ে গেল। বিরক্তিতে চ্যাঁচিয়ে উঠল এবার,
“ বললাম তো আমার ভালো লাগছে না। সব সময় আমার সাথে এত চিপকে থাকো কেন? তোমার নিজের কোনো কাজ নেই? সারাক্ষণ শুধু ইউশা ইউশা আর ইউশা।”
তুশির মুখ কালো হয়ে গেল। ইউশা রুক্ষ গলায়, বলল
“ প্লিজ যাও এখান থেকে।”
তুশি দু পল থম ধরে থেকেই তেতে উঠল,
“ কেন যাব? যাব না। বেশ করেছি চিপকে থেকে। আরো থাকব। আমার ইউশা ছাড়া কে আছে! আমার বন্ধু,আমার বোন,আমার সুখ-দুঃখ সবই তো ইউশা। তাহলে আমি কেন ইউশা ইউশা করব না?”
ইউশা নিভে গেল। নিঃশব্দে চেয়ে থেকে হেসে ফেলল আস্তে। এই মেয়েটাও না! একটু রাগও করতেও পারে না।
বলল,
“ আচ্ছা বাবা,আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
তুশি হাতটা ধরে বলল,
“ আসবে তো? আবার দরজা আটকে রাখবে না বলো।”
“ রাখব না। খিদে পেয়েছে তো। এসে খাব। যাই?”
তুশি মাথা নাড়ল। ঠোঁট ফুলিয়ে শ্বাস ঝাড়ল ইউশা।
মোলায়েম কণ্ঠে বলল,
“ সরি তুশি,তোমার ওপর চিৎকার করে ফেললাম। খুব হার্ট হয়েছ তাই না?”
মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়ল মেয়েটা,
“ ধুর,আমি হার্ট-ফার্ট হইনা ভাই। আমি না,খুব শক্ত মেয়ে। এসব চিৎকার-টিৎকারে কোনো ফারাকই পড়ে না।”
“ কিন্তু তাও আ’ম সরি। আমার এত রিয়্যাক্ট করা উচিত হয়নি।”
“ আরে ইউশা,
সালমান খানের একটা কথা আছে জানো?
দোস্তি মে নো সরি,নো থ্যাংকিউ। আর তুমি তো আমার বোনের চেয়েও হাজারগুণ বেশি ভালো বন্ধু। তাহলে সরি কেন বলছো?”
ইউশা ঠোঁট ছড়িয়ে হাসল। এক হাতে ওর চিবুক ছুঁয়ে বলল,
“ তুমি খুব ভালো তুশি।”
“ আর তুমি আমার থেকেও ভালো। যাও যাও চটপট ফ্রেশ হয়ে এসো। তারপর আমরা অনেক কথা বলব।”
ইউশা মাথা নেড়ে ওপরে উঠে গেল।
প্রতিটি কদমের সাথে ঠোঁটের হাসিটা উধাও হলো তার। সাথে একবার করে ঢোক গিলল মেয়েটা। বুকের উত্তাপে প্রত্যেকটা নিঃশ্বাস গলিয়ে ভাবল,
“ আমি কেন নিজের ব্যর্থ প্রেমের হতাশা অন্যের ওপর দেখাচ্ছি? কেন আমি অয়ন ভাইকে এড়িয়ে যাচ্ছি? অয়ন ভাইয়ের তো কোনো দোষ নেই। মানুষটা আদৌ জানে না, আমি তাকে ভালোবাসি। যদি শুরু থেকেই বলে দিতাম,হয়ত আজ সে তুশির প্রেমে মজার সুযোগই পেতো না। অনুভূতি তো এরকমই। কখন,কার ওপর গলবে তা মানুষ নিজেও বলতে পারে না। ঠিক যেভাবে একদিন আমি অয়ন ভাইকে মনে জায়গা দিয়েছিলাম,অয়ন ভাইও তুশিকে সেভাবে জায়গা দিয়ে ফেলেছে। কাউকে ভালোবাসা যেমন অন্যায় নয়,তেমনই কাউকে না ভালোবাসাটাও অন্যায় হতে পারে না। না ইউশা,তুমি নিজের দুঃখ, নিজের ফ্রাস্ট্রেশন অয়ন ভাইকে দেখাতে পারো না। তুমি সহজ হও। আগের মতো হও। নিজেকে কবর না দিয়ে,নিজের দুঃখকে কবর দাও। একজন ভালো না বাসলেও,এ বাড়ির বাকি সবাই যে তোমায় খুব ভালোবাসে। তাদের জন্যে হলেও আবার ফিরে এসো নিজেতে। আবার হাসো, আবার…!”
অয়ন বাড়ির চৌকাঠ পেরোতে গিয়ে থমকাল একবার। ইউশার জন্যে মনের মধ্যে লেপ্টে থাকা খারাপ লাগাগুলোকে ঝাড়ার চেষ্টা করল মাথা নেড়ে। মেয়েটার কী হয়েছে ও সত্যিই জানে না। কিন্তু বুঝতে পারছে এটুকু,একটা জোরদার গণ্ডগোল আছে কোথাও। অথচ ইউশা সেটুকুও শোনার সময় দিতে নারাজ। হাসপাতাল থেকে একা চলে এলো। বাইরে এসে ওকে আর কোথাও পেলো না অয়ন। ওর আর এসব ভালো লাগছে না। আবার আগের ইউশাকে চায় সে। সেই হাসিখুশি, চঞ্চল চেরির মতো মিষ্টি মেয়েটাকে ফেরত চায় অয়ন। অন্ধকার চেহারা মুছে ঠোঁটে হাসি টানল ছেলেটা। ভেতরে ঢুকে একবার চাইল চারিদিক। গোটা বসার ঘর ফাঁকা। সন্ধ্যায় অন্তত মামুনি,ছোটো মা, দিদুন থাকেন। আজ কেউ নেই? যাক,ভালোই হলো। অয়ন স্টোর রুমের সামনে গিয়ে ডাকল,
“ তুশি! তুশি!”
মেয়েটা ছুটে এলো হাওয়ার মতো। তবে স্টোর রুম নয়, এ বাড়ির লাইব্রেরি থেকে এসেছে। সেই সাথে ওপরের কোনো এক ঘর হতে আরো একটা শরীর বেরিয়ে এলো সবেগে। কিন্তু ওপরে পিলার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইল সে।
তুশি সোজা গিয়ে অয়নের সামনে দাঁড়াল। বড়ো শ্বাস টেনেটুনে বলল,
“ আমাকে ডাকছিলেন?”
অয়ন ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ লাইব্রেরিতে কী করছিলে?”
“ ডিকশনারি খুঁজছিলাম।”
“ ডিকশনারি? কেন?”
“ বইয়ে অনেক কঠিন কঠিন ইংরেজি। পড়তে গেলে চাপা ভেঙে যাচ্ছে। বড়ো মা বলল,ডিকশনারিতে নাকি সব পাওয়া যায়।”
“ তা যায়। কিন্তু তুমি খুঁজবে কী করে? আমি যখন বাড়িতে আসি,আমাকে দেখালেই তো পারো।”
তুশি কিছু বলল না। অয়ন নিজেই বলল,
“ উম,সব থেকে বেস্ট হয় তোমার নিজের একটা ফোন হলে। ফোনে যেকোনো কিছু খুঁজে পাওয়া খুব সহজ। আমি দেখছি কী করা যায়!”
সার্থ ওপরের ঠোঁটে নিচের ঠোঁটটা চেপে, চুপ করে তাকিয়ে রইল। কপালে বিশদ গাঢ় ভাঁজ। বিড়বিড় করে বলল,
“ ছেলে-মেয়ের বিয়ে পড়াচ্ছে নাকি! দুটো মানুষের এত কীসের কথা?”
তখনই শুনতে পেলো তুশির প্রশ্ন,
“ ফুল এনেছেন?”
অয়ন হেসে ঘাড় নাড়ল। বুকের ভেতরটা তার ভরে গেল ভিন্ন এক সুখে। তুশি ওর আনা ফুলের জন্য অপেক্ষা করছিল?
এদিকে তুশির মনে অন্য চিন্তা। ইউশার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে কিচ্ছু ঠিক নেই। সকালে অয়ন ভাইয়ের সাথেও মেয়েটা ঠিক করে কথা বলছিল না। দুজনের মাঝে কি কিছু হয়েছে? ঝগড়া টগরা করেছে বোধ হয়। এখন তুশি যদি এই ফুল নিয়ে ইউশাকে দেয়,আর বলে অয়ন ভাই তোমার জন্যে এনেছেন, নিশ্চয়ই ভীষণ খুশি হবে। মান-অভিমান ভুলে আবার দুটোর মিলমিশও হবে তখন। নিজের মতো ভেবে তুশি মাথা ঝাঁকিয়ে হাসল। ততক্ষণে পকেট থেকে কাগজে মোড়ানো বেলির গাজরা বের করল অয়ন।
তুশি ডান হাত পাতল,কিন্তু ও ধরল বাম হাতের দিকে। মেয়েটা এবার বাম হাত পাতল,অয়ন ফুল ধরল ডান হাতের দিকে। কয়েকবার এমন ডান-বাম হওয়ায় হতভম্ব বনে দুজন মুখ দেখল নিজেদের। পরপরই স্বশব্দে হেসে ফেলল ওরা। সার্থ নিজেও হাসল।
পরমুহূর্তেই চিবুক কটমটিয়ে বলল,
“ সিলি একটা ব্যাপার নিয়ে কীভাবে হাসছে। এটা হাসার মতো কিছু?”
পাশ থেকে কেউ মিনমিনিয়ে বলল,
“ আর ইউ জেলাস ভাইয়া?”
সার্থ ভ্রু নাঁচাল,
“ জেলাস,আমি? আমি তো এটাই বুঝতে পারি না মানুষ জেলাস কেন হয়!”
কথাটা ও বেখেয়ালে বলেছিল। চকিতে পাশ ফিরল এইবার।
ইউশা নিষ্পাপ মুখে দাঁড়িয়ে। যেন কিচ্ছুটি বোঝে না। ও গম্ভীর গলায় বলল,
“ তুই এখানে কী করছিস?”
“ আমি? ওইতো,ওদের দুজনকে দেখছিলাম। দেখো ভাইয়া,তুশির জন্যে অয়ন ভাই ফুল এনেছেন।”
“ তো?”
“ না মানে…ওদেরকে ইদানীং কেমন কাছাকাছি দেখা যায় না ভাইয়া? খেয়াল করেছ তুমি?”
পরপরই ইউশা এদিক ওদিক চেয়ে,ফিসফিস করে বলল,
“ আমার মনে হয় কী জানো ভাইয়া, অয়ন ভাই বোধ হয় তুশিকে পছন্দ করেন।”
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো করে তাকাল সার্থ।
ইউশা মিনসে গলায় বলল,
“ হতে পারে তুশিও করে।”
সার্থর মুখটা ঝিম ধরে গেল। কেমন নিস্তব্ধ হয়ে রইল কিছুক্ষণ। পরক্ষণেই গলা ঝারল সে।
কাঁধ উঁচিয়ে বলল,
“ করলে করে। আমাকে বলছিস কেন? আই ডোন্ট কেয়ার অফ হার।”
“ কিন্তু ভাইয়া,তোমার মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে কথাটা শুনে তোমার বুক ফেটে যাচ্ছে।”
সার্থ তপ্ত চোখে চাইল। মেঘমন্দ্র স্বরে বলল,
“ মার খাস না কতদিন?”
ইউশা মাথা নুইয়ে বলল,
“ সরি!”
সার্থ কিছু বলতে গেলেই কানে এলো তুশির কণ্ঠ। উচ্ছ্বাসে গলেগলে বলছে,
“ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। মনে করে এনে দেয়ার জন্যে।”
অয়ন বলল,
“ আমাদের মধ্যে আবার ধন্যবাদ কখন এলো?”
সার্থ দুই ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
“ ওয়াও, আমাদের মধ্যে! একচুয়েলি হচ্ছেটা কী ওখানে?”
ইউশা বলল,
“ একবার নিচে নেমে দেখবে ভাইয়া?”
সার্থ চোখ রাঙাতেই ও মিনমিন করল,
“ আমি তো এমনি বলেছি। তোমার ইচ্ছে করলে তুমি এখানে দাঁড়িয়েই দেখো। আমি যাই।”
ইউশা চলে গেল। এদিকে
তুশির হাসিটা একটু কমেছে। তার বদলে অস্বস্তির একটা বিশদ চিহ্ন বসেছে মুখে। অয়নের কথাটা কেমন শোনাল না! এরপরপরই ভাবল,ও তো একটু আগে ইউশাকেও এরকম কিছু বলেছিল। হতে পারে উনিও সেভাবে বলেছেন। অত গভীর কিছু না। আর গভীর কিছু হবেই বা কী করে? অয়ন ভাই তো আগাগোড়া ইউশাতেই মগ্ন। ও
বলল,
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৪৩
“ আচ্ছা ভাইয়া,আমি এখন যাই তাহলে। আবার পরে কথা হবে।”
অয়ন ঘাড় নাড়তেই চপল পায়ে নিজের ঘরে ঢুকে গেল তুশি। সে পথে নিষ্পলক চেয়ে রইল ছেলেটা। তারপর নজর সরিয়ে ঘাড় নুইয়ে হাসল। শ্বাস ফেলে হাঁটা ধরল ঘরে। তবে ওই দৃষ্টির মানে যেন পরতে পরতে পড়ে ফেলল সার্থ। চোখের তীক্ষ্ণতা নিয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াল সে। কোথাও গিয়ে মনে হলো ইউশাই ঠিক। কিংবা দিদুন!
এর মানে অয়নের মনে তুশিকে নিয়ে সত্যিই কিছু আছে?
