কালকুঠুরি পর্ব ২১

কালকুঠুরি পর্ব ২১
sumona khatun mollika

নুসরাত সামিরের কথা শুনে একটু হাসলো, রসিকতা করে বলল,
– তাহলে এখনো মরোনি কেন,, বউতো মরতে বলেছে,,,
সামির বাকা চোখে তাকিয়ে বলল,,
– এই জন্যই বলি,, শালা জীবনের কোনো দাম-ই নাই, অপমান করছেতো করছে আবার মরতে বলছে,, এখানে কি চাই?

– তোমার ভাই পাঠিয়েছে । কড়া নির্দেশ, বিনা অনুমতিতে বাইরে যেতে পারবেনা।
সামির উঠে বসে নিজের হাতের ক্যানোলা খুলে ফেলল, নুসরাত উঠে দাড়িয়ে বলল,,
– এখন আবার কিসে কামড়ালো , উঠছো কেন?
– মাইনষের ঘরে থাকতে আমার নইজ্জা করে,, তাছাড়া বউ নিয়া ঘরে ওঠার বদলে গেস্ট রুমে কে ওঠে?
– তাহলে কাল নাটক করে মাহাকে নিচে নামালে কেন?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সামির উঠে দাড়িয়ে বলল,,
– বিয়া করছি একা ভ্যাটকাইয়া পইরা থাকার জন্য নাকি,,
– এই যুগে এই তোমারি একটা বিযে দেখলাম,, যেমন মানুষ তেমন বিয়ে।
– একদম, ইউনিক,, এইযে চড়ওয়ালী, ওঠো চলো ঘরে যাও।
নুসরাত উঠে দাড়িয়ে বলল,,
– এখনি যাওয়া দরকারি নাকি,, তোমার ভাই মানা করেছে,,
– সেজন্যইতো আরো আগে যাবো। ত্যাড়ামি করা আমার ব্রেনগত অভ্যাস,, সর,,

কথাটা বলেই সে নিজ মতো বেরিয়ে গেল, নুসরাত পথ আটকে বলল,,
– তোমার বউকে কার জন্য রেখে যাচ্ছ? সাথে করে নিয়ে যাও,
– আমি কোনো হিরোটিরো নই, যে কথায় কথায় বউকে কোলে তুলে দৌড়াব,, আরে বাড়িতে বাপ চাচা, বাচ্চারা আছে,৷ আমারতো মানইজ্জত বলে কিছু আছে নাকি!

নুসরাত চোখ উল্টে বিরক্ত প্রকাশ করল, সামির লুঙ্গি উচিয়ে বেরিয়ে গেল। সাদা লুঙ্গিতে রক্তের শুকনো দাগ চটচট করছে।
নুসরাত হাফ ছেড়ে মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,, চলো আমি সাহায্য করছি,,
– আমি পারবো আপু। মাথার ব্যাথা কমেছে।

বলেই মাহা আর নুসরাত ওপরে চলে গেল। দুপুর গড়িয়েছে, মাহা গোসল সেরে এসে দেখে সামির কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। লাল শার্ট আর রঙচটা জিন্সের প্যান্ট,, হাতে ঘড়ি, গলায় চেইন সবি আছে।
সমির পেছন ঘুরে একটা ঔষধের পাতা এগিয়ে দিয়ে বলল,,
– ধর এটা খাবে, ৩ বেলা ৩ টা ২ দিন । আর ওখানে গিয়ে বোসো,,

মাহা কোনো জবাব দিলনা। তোয়ালেটা বারান্দায় মেলে দিয়ে এসে চুল আঁচড়াতে লাগল। সামির ভ্রু কুচকে আবারো বলল,,
– আমি তোমাকে বসতে বললাম,,

মাহা নিরুত্তর, ঠাই দাড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। সামির হাতের ওষুধের পাতাটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে পেছন থেকে মাহাকে জাপটে ধরে বিছানায় এনে বসালো, মাহার ওড়না টেনে দুই হাত পেছনে খাটের স্ট্যান্ডের সাথে বাঁধল ,,
সামনে দাড়িয়ে একটা ক্রিমের ঢাকনা খুলতে খুরতে বলল,,

– ছুড়ি মানুষ এত ঠ্যাটা ক্যান কথা কানে যায়না! আমার ত্যাড়া বেটিছুড়ি ভিষণ অপছন্দ!
– তাহলেতো ত্যাড়ামির লেভেল আপ করতে হয় বলুন,,
– তুমি বাঙ্গি ভালোই জাউড়া,, দ্যাখ কেমনে মুখটা ভ্যাটকায়া রাখছে! জঘন্য দেখা যাচ্ছে!
– ঠিক আপনার ভাষার মতো,
– চুপ করে থাক, বেশ্যি বকে,

বলতেই মাহা চুপ করে গেল,, সামির মাহার মুখ বরাবর বসল,, বাহাতে মাহার ডান কাঁধের চুলগুলো সরিয়ে জামার হাতা সরিয়ে কাটা জায়গায় মলম লাগিয়ে দিল। রাফি যখন মাহার মুখে রুমাল চেপে ধরেছিল তখন মাহার কাধে আচড় লেগেছিল। মাহা বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করল,,
– দয়া করে ছুবেন না, আমার ঘাড় এতখন ঠিক ছিল এখন জ্বলে যাচ্ছে ।
– জ্বলার জন্যইতো মলম লাগিয়ে দিচ্ছি।
– ধন্যবাদ
– ধন্যবাদ দেয়ার জন্য তোকেও ধন্যবাদ সোডিয়াম ক্লোরাইড।

মাহা চোখদুটো অন্য দিকে ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইল। সামির হাত নামিরে বামগাল টেনে হাসলো৷ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মাহার উম্মুক্ত ঘাড়ের দিকে। সেখানে চকচক করছে ছোট্ট একটা কালো কুচকুচে তিল।
উঠে দাড়িয়ে বলল,,
– থাক, আসছি,, একদম খাওয়াদাওয়া কোরোনা, বাইরে যেওনা, এখানেই বসে থাকো।
– কাকে জবাই করতে যাচ্ছেন?
– উহুম,, দেখা যাক কোনো বাঙ্গি, লাউ, কদু পাই নাকি!

মাহা ওভাবেই বসে রইল। সামির বাইকের চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে বাইরে চলে গেল। একটু পর টুংটাং করতে করতে সিভান ঘরে এলো। হাতে সামিরের গিটার। ছাদে ফেলে এসেছিল সে ফেরত দিতে এসেছে। মাহাকে ওভাবে বাঁধা দেখে সে ছুটে এসে বলল,
– সেকি, কাকা তোমাকে এভাবে বেঁধে রেখে গেছে কেন কাকি সুন্দরী!

মাহা হালকা গাল টেনে হাসলো। সিভান বুকের বামপাশে হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে বলল
‎- হায়য়এ এভাবে হেসোনা সুন্দরী, নইলে গলায় দেব দড়ি।
মাহা ভ্রু কুচকে বলল,,
– কেন?
– ওমা,, তুমি যানোনা? তোমায় হাসলে ভিষণ সুন্দর লাগে।
– তাই নাকি?
– হুমম। থামো, তোমার হাত খুলেদি।

কথাটা বলতে বলতেই সিভান মাহার হাতের বাঁধন খুলে দিল। সামনে বসে বলল,,
– তোমার শরীর এখন ভালো?
– হ্যা আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
– খেয়েছ দুপুরে?
– না।
– আমিও খাইনি। দুজন খেতে খেতে গল্প করব কেমন, তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে?

মাহা ডানপাশে ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা জানালো। সিভান বিছানার ওপর উঠে দাড়িয়ে বলল,,
– আমি সব জানি,, বাবা, কাকাদের ওপর তোমার অনেক রাগ,, হওয়াই উচিৎ ওরা তোমার সাথে ভুল করেছে। আমার সামনে তোমার জোর করে হাসার প্রয়োজন নেই।
– তুমি কি করে বুঝলে আমি জোর করে হাসলাম?
– আমিওতো হাসি,, সবসময় হাসি। নকল হাসি।

– কেন?
– সে পরে একদিন বলব। চলো খেতে চলো। বাড়িতে তেমন কেও নেই নুসু মা ঘুমাচ্ছে। জরিনাকে বলছি খাবার দিতে।
– আচ্ছা। তুমি এখনো খাওনি কেন?
– বাবার জন্য বসে ছিলাম। এইতে একটু আগেই ফোন দিয়ে বলল আসবেনা ফিরতে রাত হবে।

মাহার সিভানকে বেশ পছন্দ হয়। এতসব ঝোকঝামেলার মধ্যে সিভান বাচ্চাটার আচরণে সে একটু স্বস্তি পায়। রুম থেকে বেরিয়ে করিডরে দাড়িয়ে পুরো বাড়িটা একবার নজরদারির চেষ্টা চালায় সম্ভব হয়না। বাড়িটা যেন এক রহস্যময় গোলকধাঁধা। নির্মানকাল হয়ত অনেক আগের। দরজাগুলা দেখে তাই মনে হয়। তবে সাজানো গোছানো থাকায় অতটা বোঝা যায় না।

নিচে একটা বড়সড় ডাইনিং টেবিল৷ ১২ কি ১৩ জন বসা যাবে। জরিনা টেবিলে খাবার গুছিয়ে রাখছে। সিভান মাহার হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে আসে। মাহার পড়নে নীল রঙের থ্রি পিস। ডাইনিং টেবিলে পাশাপাশি বসলে,, জরিনা খাবার বেরে দিতে দিতে বলে,,
– আপায় কি রানতে পারেন? বড় আপায় কিছ্ছু পারেনা। শুধু পারে হুকুম চালাইতে। তবে মানুষখান সেই ভালা।

মাহা কোনো কথা বললনা। সে আপাতত চারপাশে দেখতে ব্যাস্ত। সিভান চেয়ারের ওপর উঠে দাড়িয়ে বলল,,
– নজর চুরিয়ে দেখার দরকার নেই। খাওয়া শেষে পুরো বাড়ি পরিদর্শন করে নিও। আমি আছিতো সাথে।
মাহা বাহাতে সিভানের গাল নেড়ে দিল। সিভান তরকারি দেখে বলল,,
-আজকে আবার খাসির মাংস কে রেঁধেছ ?

জরিনা বলল,,
– নুসরাত আপায় রানতে কইছে। মেয়ের সাব খাইতে চাইছিলো। চাচাজানও কইছে মাংস কষা খাইতো। তাইতো রানছি সিভু বাবা।
সিভান গ্লাস থেকে একটু পানি খেয়ে জরিনার দিকে তাকিয়ে বলল,
– বলি হওয়ার জন্য তৈরি থেক। ইনু কিন্তু বাড়িতে নেই।
– আই পলাইলাম সিভু বাবা

ইনু কে সিভান? প্রশ্নটা কানে ঢুকতেই সিভান একবার মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,,
– আমার ফুপু হয়। ইনায়া।৷ কাকা হয়ত আনতে গেছে।
-ওহ,,, চিনেছি। আগেও একবার দেখা হয়েছে।
-দেখা সাক্ষাৎ পরে কোরো। আমার খিদে পেয়েছে, খাইয়ে দাওনা।

মাহা সিভাসকর খাইযে দিচ্ছে, সিভান একবার করে খাচ্ছে একবার করে পানি গিলছে, মাহা চুপচাপ দেখছে। হাতের গ্লাস রেখে সিভান টেবিলের ওপর চড়ে বসে। প্লেট থেকে এলোমেলো হাতে এক লোকমা ভাত তুলে মাহার দিকে এগিয়ে ধরে।
মাহা নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে। চোখ দিয়ে ঝড়ে পরে অজানা বারিধারা। সিভানের হাত থেকে খাবার মুখে নিতেই গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে নোনা জল। শক্ত থাকতে চেয়েও পারছেনা ।

কত রোগ বিমারি গেছে,, চোখ খুলে তাকাতে পারেনি,, বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনি। কিছু খেতে পারেনি। কই চাচি বা মুহিব ভাই রা তো কেও এভাবে এক লোকমা মুখের সামনে ধরেনি।
তারাতো রক্তের সম্পর্কের ছিল৷ ছোট ভাইটার কথা বড্ড মনে পরে,,, দুজন যখন একসাথে খেতে বসত,, মাহার ছোট ভাই মুগ্ধ তখন এভাবে হাত এগিয়ে দিত।

‎সিভান বাহাতে মাহার গাল মুছে বলল,,
– তুমি কাদতেও পারো,, তুমিনা অনেক স্ট্রং!
তাইনা? কেদোনা।

মাহা চোখের পানি মুছে খাওয়াতে মনোযোগ দেয়। খাওয়া শেষে দুজন পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। মাহা বলে,,
– পুরোনো যুগের রাজা, জমিদারের কাহিনির সুটিং করলে বেশ হিট হবে।

সিভান বলল,,
– হ্যা,, আমাদের এই বাড়ি অনেক পুরোনো। তবে বাড়িটা মোটেও ভালো নয়। এই বাড়ির সকলেই পঁচা।
– কেন??
– দাদু,, বাবা, কাকা সবাই যে যার কাজ করে,, আমি একা হয়ে যাই। আজ কতদিন যানো ঘুরতে বের হইনি,, সেইযে তোমার সাথে পদ্মা পাড়ে দেখা হয়েছিল,, আর কোথাও ঘুরতে যাইনি৷

– কেন??
– কেন আবার,, বাইরে নাকি বিপদ আছে। আর তারা সময় পেলেতো আমাকে সময় দেবে। সবসময়ই ব্যাস্ত!!
মাহা বুঝলো সিভান বড্ড অবহেলিত এক বাচ্চা। সে সময় চায় কিন্তু কেও তাকে সময় দেয় না। একা একা বড় হওয়া যাকে বলে।
মাহার হাত ধরে পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখাতে থাকে সিভান।
সুফি বেগমকে অন্য গাড়িতে কাশেমের সাথে তুলে দিয়ে ইনায়াকে নিজের গাড়িতে তুলে বেশ কিছুক্ষণ আগে বেরিয়েছে সামির। গলি বদলের সময় ইনায়া জিজ্ঞেস করে,,

– এদিকে কোথায় যাচ্ছি সামির ভাই, বাড়িতো,,,
– তোরকি ভয় হয় আমি তোর সাথে খারাপ কিছু করব?
ইনায়া মুচকি করে হেসে বলল,,
– হয়। তবে এই খারাপের ভ্যারাইটিটা অন্য রকম।

সামির বাড়ি থেকে সামান্য দূরে, পদ্মা নদীর পাড়ে গাড়ি দাড় করালো। বেলা নেমেছে। মেষ বিকেলের কঠোর রোদ কমে মৃদু হয়েছে। নদীর পানির দিকে দৃষ্টি আটক রেখেই সামির জিজ্ঞেস করল,,
– যদি দেখিস আমি তোর সাথে খারাপ করেছি?
– করতেই পারেন। সামির সিকান্দার এর দ্বারা সব সম্ভব।
– খোঁচা মারছিস?
– আপনাকে খোঁচা মারার আগে সেই জবান ঝলসে যাক।

সামির কিছু বলতে গিয়েও পারলোনা। শুধু বলল,,
– আমি খারাপ মানুষ। কিন্তু তোর ভালো চাই।
– সেই ভালো আমার চাইনা, যেই ভালো তে সামির সিকান্দার নেই।
– বাড়ি চল।
পুরো পথটুকু কেও কোনো কথা বলেনি। বাড়ির সামনে এসে ভেতরে ঢোকার সময় , দেখে সিভান আর মাহা চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাকে এভাবে দেখে ইনায়ার কেমন অস্বস্তি হয়। সিভান জোড়ে করে বলে ওঠে,,,
– কাকি সুন্দরী, ওই দেখ ইনু। !

সামির ওপরে উঠে যাওয়ার সময় বলে,,
– আমি কোনোদিন ক্ষমা চাইনা। যদি চাইতাম তোর কাছে বাধ্য থাকতাম ক্ষমা চাওয়ার জন্য। আমি তোর সাথে হয়তো একটু বেশিই খারাপ কিছু করেছি। তুই আমাকে ক্ষমা করিসনা।
ইনায়া মাহাকে এক দর্শনেই চিনে ফেলে। কিছু বলার আগেই সিভান চেচিয়ে বলে,,,
– ইনু, এই দ্যাখ তুমিতো বাড়ি ছিলেনা, এটা বাঙ্গি কাকার বউ! এটা আমার কাকি সুন্দরী।

সিভানের কথায় দুইজনেই অসন্তুষ্ট হয়। মাহার বিরক্ত লাগে সামিরের বউ কথাটা শুনতে। কিন্তু ইনায়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। মুখের হাসি মিইয়ে যায়। চোখের পলক ফেলে ভাঙা কণ্ঠে সালাম দিল। মাহা জবাব নিলে সে মাথা নিচু করে ভেতরে চলে গেল।
মাহা বুঝতে পেরেছে, কাকার বউ কথাটা শুধু তার নয় অন্য জনেরো খারাপ লেগেছে।

ভেতরে গিয়ে চেঞ্জ করে আবার আপন হুলিয়ায় ফিরে সামির ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। মাহা ঘরে ছিলনা। ডাকেওনি। যেন তার কোনো উপস্থিতি নেই, ঘরে ফিরে দেখে ইনায়া দড়জার সামনে দাড়িয়ে আছে। মাহা তার সামনে গিয়ে দাড়াতেই সে জিজ্ঞেস করে,
– আপনি তো সামির ভাইয়ের বান্ধবী তাইনা?
– না। মিথ্যা পরিচয়ে দেখা করেছি তোমার সাথে।
– জানি। শুনেছি। আপু,, মানুষ টা বড্ড অগোছালো। বেপরোয়া ব্যবহার , উগ্র, দুরন্ত একটা ফানুস । একটু গুছিয়ে নিও।

‎মাহার মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে জিজ্ঞেস করে,,
– আঘাত টা কি সামির ভাই করেছে?
– তোমার সামির ভাই যে আঘাত করেছে এটা তার তুলনায় বালিকণা।
ইনায়া আর কিছু বললনা। রাত গড়িয়েছে। সামির বাহির থেকে এসে সোজা খাবার টেবিলে। প্লেট উল্টো করে খাসির মাংস দেখে তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। রাত প্রায় ১২ টা বাজে। ইনায়া নিশ্চয়ই এখন জেগে নেই। মাহাযে তাকে রেঁধে খাওযাবে এটা চিন্তা করাও বিলাসিতা।

জরিনাকে ডাকার জন্য চেযার থেকে উঠতেই যাবে, ইনায়া পেছন থেকে একবাটি সিদ্ধ ডিমের তরকারি এগিয়ে দেয়। ।
সামির তার দিকে একবার তাকায়। বরাবরের মতোই শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে বাটিটা এগিয়ে দিচ্ছে ইনায়া। সামির কোনো কথা না বলে খেতে শুরু করে। খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে চাওযার আগেি ইনায়া গামছা এগিয়ে দেয় । সামির হাত মোছে।
ইনায়া ডাকনা দিয়ে খাবার গুছিয়ে চলে যেতে লাগলে সামির পিছু ডাকে,,

– ইনু,,,
ইনায়া ঘুরে তাকায় ,, সামির তার দিকে দুকদম এগিয়ে যায় ।। বড্ড কষ্ট করে চোখের পানি ধরে রেখেছিল। সামিরের চোখ বরাবর তাকাতেই অবাধ্য চোখদুটো আর বাঁধা মানলোনা।
কাঠকণ্ঠে বলল,,,
– আমার এখন কি করা উচিৎ ? কান্না করা উচিৎ, না রাগ করা উচিৎ ? আমাকে ছাড়াই বিয়ে করে ফেললেন? একটাবারো জানালেন না? দাসী বান্দিরও একটা দাম থাকে।

সামির শুধু আস্তে করে বলল,,
– আমি তোর ক্ষতি চাইনি।
– ক্ষতি? দীর্ঘ প্রতিক্ষিত ভালোবাসা হারানো কি ক্ষতি নয়?
– না নয়। ঘরে যা। আমার জন্য তোর জেগে থাকার প্রয়োজন নেই। । সব ঠিক হবে কিনা জানিনা। তবে এসব বেড়াজালে তোকে আঁকড়াতে চাইনি।

কালকুঠুরি পর্ব ২০

– আপনি অজান্তেই আমার অনেক বড় ক্ষতি করে দিলেন সামির সিকান্দার।
বলেই ইনায়া দৌড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। । ।
সামির লম্বা একটা দম ফেলে বলল,,
– আমি এক জ্বলন্ত শিখা,, আমার কাছে এলে তুই হৃদ দহনে ঝলসে যেতি।

কালকুঠুরি পর্ব ২২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here