কালকুঠুরি পর্ব ২৩

কালকুঠুরি পর্ব ২৩
sumona khatun mollika

আকাশে কালো মেঘ জমেছে। কুসুমদোলা বাতাস মেঘগুলো কে সরাতে চেয়ে ও পারছেনা। হঠাৎই আকাশের বুক চিরে কান্না বেরিয়ে আসে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির শব্দে ছন্দে ছন্দ মিলিয়ে।

মাহা বারান্দায় দাড়িয়ে ছিল। সিকান্দার বাড়ির চারপাশে বাগান তবে যত্নের অভাবে জঙ্গল মনে হয়। অধর ধরার বৃষ্টি পেয়ে তৃপ্ত তৃষ্ণার্ত মাটি। নুসরাত দড়জা ঠেলে ভেতরে ঢুকে,, মাহা ওড়না টেনে মাথায় তোলে। ঘুরে দেখে নুসরাত আর ইনায়া এসেছে। তাদের দেখে ভেতরে এসে বসে মাহা। নুসরাত বলে,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– খালি বসে বসে ভালো লাগছিলনা। ভাবলাম তুমিও একা একা বিরক্ত হচ্ছো। ভালো করে কথাই বলা হয়নি।
ইনায়া চুপ করে খাটের অন্য পাশে উঠে বসল । ঘরটা কেমন অচেনা অচেনা লাগছে। এই ঘরতো এমন সাজানো গোছানো ছিলনা। সবসময় এখানে সেখানে এটা ওটা পরে থাকত। এখন চারপাশ পরিষ্কার, কোথাওকিছু অগোছালো নেই। ইনায়ার ধ্যান ভাঙল নুসরাতের প্রশ্নে,,

– তোমার বাবা মা তাও কত বছর আগে গত হয়েছেন মাহা?
– ১২ বছর। যখন আমার বয়স ১০ আর ১১ এর মাঝামাঝি।
– তুমি মনে হয় কথা কম বলো তাইনা? দুদিন ধরে ঘরে একাই আছো,, প্রশ্ন না করলে আগ বারিয়ে কিছু বলনা,,
– আমার জবান সেই কবেই ক্লান্ত হয়ে গেছে। যেখানে আমার কথার কোনো দাম নেই সেখানে চুপ থাকা শ্রেয়।
ইনায়া মাঝখান থেকে বলে ওঠে,,,
– সামির ভাইয়ের সাথে বিয়েতে তোমার মত ছিল?

মাহা তুচ্ছ হাসি দিয়ে বলল,,
– মত? আমার মত? আমার কিছুই করার ছিলনা । বলেছি, অনুরোধ করেছি, পায়ে ধরেছি, কিন্তু কেও গ্রাহ্য করেনি। করত, বাবা মা থাকলে করত। দোষ না করেও জাবতজীবন কারাদন্ডে দন্ডিত আমি।
ইনায়া জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তার কথা শুনে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,,
– সামির ভাই তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছে? তোমার সাথে কি জবরদস্তি করার চেষ্টা করেছিল? তোমাদের মধ্যে কি,,,,,

– সেটা হলেও হতো। । উনি আমাকে স্পর্শ পর্যন্ত করেন নি, অথচ ভরা সমাজে ঘোষণা দিয়েছেন আমি নষ্টা।
নুসরাত চুপ কর মাহার কথা শুনছিল। সামিরকে তার প্রথম থেকেই খুব একটা বেশি পছন্দ নয়। মাহা নুসরাত কে জিজ্ঞেস করল,,,
– আপনাকে আগে দেখতাম বার্সিটিতে। সেভাবে কখনো পরিচয় হওযা হয়নি। আপনার কি এ্যারেন্জ ম্যারেজ আপু?
– আমার পালিয়ে বিয়ে। জীবন একেক জনের কাছে একেক রকম। দেখ তোমার মা বাবা নেই। আর আমার থেকেও নেই। বেঁচে আছি না মরে গেছি খোঁজই নেয় না। তোমার ভাসুরো আজকাল সময় দিতে পারেনা। ব্যাস্ত থাকে । সিভানটাকে নিয়েই দিন পার হয়ে যায়।

ইনায়া বড্ড আগ্রহ নিয়ে মাহার রূপ পর্যবেক্ষণ করছিল। নিজেই নিজেকে বলছিল,,,
সামির ভাইয়ের দোষ নাই। যে কোনো পুরুষ মাহাকে দেখে বিমোহিত হয়ে যাবে। দড়জা ঠেলে ভেতরে ঢুকে সুফি বেগম আর সিভান।
সিভান দৌড়ে মাহার কোলে ঢুকে যায়। নুসরাত বলে,,,
– লোকে ঠিকি বলে,, নতুন পেলে মানুষ পুরনো কে ভুলে যায়। সারাদিন কাকি সুন্দরীর কাছেই থাক। নুসুকে ভুলেই গেছিস তুই।

সিভান মাথা নেড়ে বলল,,
– তোমাকে ভুলতে পারি,, তুমি আমার একটামাত্র নুসু মা।
সুফি বেগম ইনায়ার পাশে বসলেন। মাহার ওপর তার খুব একটা মায়া নেই। মনে মনে একটু রাগ বলা চলে। তিনি বেশ ভালোই জানতেন ইনায়া ছোট থেকে সামির কে ভালোবাসে। তার জায়গায় এখন নাকে নথ পরে মাথায় ঘোমটা তুলে মাহা বসে আছে। নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পরে সুফি বেগম এর ফোনে কল আসে। ওপাশ থেকে ভেসে আসে করুণ আওয়াজ,

– মা বাঁচাও মা, আমার বাচ্চাটাকে নিয়ে যাবে মা, মা, ভাইরে কওনা মা, আমার নারী ছেড়া ধন অরা নিয়ে যাবে। আমি গলায় দড়ি দেব মা,,
বলতে বলতেই ফোন কেটে যায়। সুফি বেগম টেনশনে পরে যায়। নিচে সিয়াম বসে ছিল। সবাই মিলে দৌড়ে নিচে গেল, সুফি বেগম ব্যাপারটা সিয়ামকে জানালে সিয়ামের জবাব আসে,,,
– কিসের বিচার নিয়াস বলত! আজ ঝগড়া হয়েছে কাল আবার মিল হয়ে যাবে। আরে সাথি এখন ওই বাড়ির সম্পত্তি। তাছাড়া সাফিন ভাই আসুক দেখছি কি করা যায়।

মাহা ঘোমটার আড়াল থেকেই বলল,
– ওই বাড়ির সম্পত্তি মানে? মেয়েদেরকে আপনারা বিক্রয়যোগ্য সম্পত্তি মনে করেন? আরে কতখনে মেয়র সাহেব আসবে কতখনে ওখানে পৌঁছবেন, ততখনে যদি একটা ক্ষতি হয়ে যায়!
‎- ব্যাক্তিগত ব্যাপারে নাক না গলাও সেটাই বেটার। তাছাড়া বড়দের পারমিশন বিনা আমি এখন কি করব?
– আশ্চর্য, উনিতো আপনার বোন হয়! ভাই হিসেবে আপনার কোনো দায়িত্ব নেই?

ততখনে গান গাইতে গাইতে ভেতরে ঢুকে সামির সিকান্দার। সুফি বেগম কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছেন। সামির ডুকেই জিজ্ঞেস করল,,
– এ বাবা ইন্নালিল্লাহ্ কে মরল রে? কোন বাঙ্গি টা টপকালো?
সিভান এগিয়ে গিয়ে বলল,,
– এ কাকা,, জানো আজকেও খালামনি মেল্লা জোরে জোরে কাঁদছে। ইতিকে নাকি মেরে ফেলবে,

– উমমম কিই??
সুপি বেগম আকুতি করে বলতে লাগল,,
– বাঁচা সামির বাপ আমার, ইতিরে নাকি কারা নিয়া যাবেগা, আমার ছুড়িটা মরেই যাবে।
সামির ভ্রু কুচকে সিয়ামের দিকে তাকালো। সিয়াম নিরেট কণ্ঠে মাথা নেড়ে বলল,,
– সাফিন ভাইরে কল দে। আব্বা আর ভাইরে না জিজ্ঞেস করে কি করব?

মাহার চরম বিরক্তি লাগল। সামির বলল,,,
– হ্যা তাইতো,, ভাঙা টিন তো গোলমাল করতে মানা করেচে, আমাকে এমনিও পুলিশ বাঙ্গিগুলা টার্গেট করছে,, কি আর করার! ,,

বলেই সামির লুঙ্গি উচিয়ে ওপরে নিজের রুমে চলে গেল। মাহা ঘেন্নার নজরে তার ওপরে ওঠার দিকে তাকিয়ে রইল। কেমন ভাই এরা, বোনটাকে নির্যাতন করছে জেনেও কিচ্ছু বলছেনা। সুফি বেগম কাঁদতে কাঁদতে অস্হির,, সিয়াম নুসরাত এর কোনো কথাও শুনছেনা। সিভান চুপ করে এক পাশে দাড়িয়ে আছে।
রান্নাঘরে গিয়ে ঘোমটা উচিয়ে এক গ্লাস পানি পান করল মাহা। পেছন থেকে জরিনা সবজি কাটতে কাটতে আফসোসের সুরে বলল,,

– আহারেহ, মাইয়াডারে না মাইরা দম নিবোনা। সেইযে বিয়ার পর থে চলতাছে, এহনো মাইয়াডারে মারপিট করে, কপাল খারাপ দেইখাই সিকান্দার বাড়িত পয়দা হইছিল!
– তুমি জানো পুরোটা? কি হয়েছে আসলে?
– কি হয়নাই তাই কন ভাবিজান। এমন পিটা পিটে সাথি আপারে। শিশু বাচ্চাডারেও পিটে। এই বাড়ির কেও তাগো সাহায্য করেনা। সামির ভাই মাঝমধ্যে যায়, কিন্তু হেগর কোনো সাহায্য করে না। করতে চাইয়াও পারেনা। উপরমহল যে উদাসীন,,।

পুরো ঘটনাটা শোনার পর মাহার দেহ শিউরে উঠলো, আহারে কত কষ্ট করছে ওইটুক বাচ্চা, মাকে মার খেতে দেখছে, বাবাকে অন্যায় করতে দেখছে, ওর ভবিষ্যৎ টাতো নষ্ট হয়ে যাবে!
একটুপর দেখা যায়,, সামির আবারো লুঙ্গি আর শার্ট পড়ে বাইকের চাবি নিয়ে চলে গেল। মাহা মনে মনে ভিষণ ক্ষিপ্র হলো। চুপচাপ ঘরে গিয়ে পড়তে বসল। ঘন্টা দেড়েক পরে, নিচে সিয়ামের চিৎকার শুনে মাহা বাইরে বেরিয়ে এল।

সাফিন সোফায় বসে, সিয়াম চিৎকার করে সামিরকে গালাগাল করছে। সামিরের জামাকাপড়ে রক্ত লেগে। ডানহাত ধরে দাড়িয়ে আছে সাথি। বাহাতে আহত শিশু বাচ্চা ইতি। মাথায় ব্যান্ডেজ । সাথির ঠোঁট কাটা। কপালে আঘাতের চিহ্ন। ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে মাহা নিচে নেমে আসে। সুফি বেগম দৌড়ে গিয়ে ইতিকে কোলে টেনে নেয়। সিয়াম রেগে কটোর আচরণ করে সামিরকে বলে,,,

– তোকে কে বলেছিল ওদেরকে নিয়ে আসতে? এনেছিস যখন ভালো কথা । তুই ওর বাবাকে খুন করেছিস কেন?
সামির নিরুত্তর। সাফিন ধীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,,
– তোকে বলেছিলাম, ঝামেলা নাকরতে। কেন মেরেছিস?
সামির ভ্রু কুচকে জবাব দিল,,,
– আমি কাওকে জবাব দিতে বাধ্য নই। মন চেয়েছে, মেরে দিয়েছি।

আবু সালার সিকান্দার এতখন চুপ করে থেকে এখন উঠে দাড়িয়ে বললেন,,
– মন চেযেছে মানে? তুইযে ওদের মেরেছিস, এদের নিয়ে এসেছিস, এটাকি ভিষণ বীরত্বের কাজ মারাচ্ছিস!! দযা দেখাচ্ছিস? আমাদের জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হয়নি? ওরা এখন আমাদের পিছে কুত্তার মতো লেগে যাবে,

– লাগুক। ওরা আপনার পিছে লাগলে সোজাসাপ্টা পাদ মেরে দিন। দেখবেন আর মুখ মারাবেনা।
সাফিন নিরেট কণ্ঠে দমকে উঠলো,,
– চোপ শুয়োরের বাচ্চা *। পাবলিকলি মারার কি দরকার ছিল? কি নাজানি করেছিল? এসব তো আগে থেকেই করে,, ।

– ভাঙা টিনের মতো মড়মড় মারায়োনা। বাঙ্গির পোলা সীমা ছাড়ায় গেছে,, ইতিরে বেইচ্চা দিতে নিছিলো, আজি আসার কথা নিতে । শুধু তাইনা, সাথিরে ক্যামনে মারছে দেখছ? সাথির কথা বাদ দাও ইতিরে মদের বোতল দিয়া মারছে মাথাটা দেখছ একবারো?

– সেটার বিহিত তো ঠিকাছে, কিন্তু পাবলিকের মধ্যে মাডার করার কি দরকার ছিল? লোক জানজানিটা কেন করলি?
নুসরাত এগিয়ে গিয়ে বলল,
– ভুল কি করেছে ভাই। ওই লোকের এটাই পাওনা ছিল,

ইনায়া সাথির পাশে দাড়িয়ে বলে,,,
– ওরা যদি আমার আপাকে লোকের মধ্যে মারতে পারে, অর্ধনগ্ন করে শশুড় ভাসুরের সামনে মারতে পারে তাহলে সামিরভাই কেন তাকে সন্মানের সাথে পাবলিকের সামনে মারতে পারবেনা।
সালার সিকান্দার মাথায় হাত চেপে বসে রইলেন। সিয়াম চুপ করে দাড়িয়ে রইল। সাফিন একটা কল রিসিভ করার পরই চোখমুখ বেকিয়ে বসে রইল।

সামির সোজা নিজের ঘরে গিয়ে গোসল সেরে এসে নিচে দাড়ালো। ততখনে সিকান্দার বাড়ি পুলিশের উপস্থিতিতে ভরপুর৷ । মাহবুব উদ্দিন জোরে করে হাফ ছেড়ে বলল,,,
– সামির সিকান্দার,, ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট। আশা করি এবার আর আপনাকে প্রমাণ দিতে হবেনা আপনি খুন করেছেন।

সামির নিরুত্তর। । মাহবুবের বিরুদ্ধে কোনো যথাযোগ্য প্রমাণ না থাকায় , তার সাসপেন্ড ডেট ওভার করে দেয়া হয়েছে। সামির কোনো কথা ছাড়াই নিচে নেমে আসে। মাহা নিকাবযুক্ত হিজাবের নিচ থেকে তাকিয়ে থাকে।
সিভান এসে মাহবুব উদ্দিন এর হাত টেনে বলে,,
– পুলিশ কাকু,, আমার কাকা কিছু করেনি। কাকা খালুকে সাজা দিয়েছে৷ দ্যাখ, ইতিকে কিভাবে মেরেছে ওরা। দ্যাখ। আমার কাকাকে ছেড়ে দাও পুলিশ কাকু।

মাহবুব সিভানের হাত ধরে বলল,,
– তোমার কাকা দোষ করেছে বাবু। আইন নিজ হাতে তুলে নিয়েছে। তাকে সাজা পেতে হবে।
মাহবুব উদ্দিন ঘাড় তুলে মাহার দিকে তাকায় সামির এসে তার সামনে দাড়িয়ে বলে,,
– অপরাধী ওখানে নয়,,, এখানে,, চলুন, আমি ধরা দেব জন্যইতো পাবলিকভাবে স্পেশাল করে কুত্তামারা মাইর মারছি।

সামিরকে বড্ড শান্তভাবে সাথে নিয়ে চলে যায় পুলিশ এরা। সাফিন শান্ত হয়ে বসে থাকে। সালার সিকান্দার বারবার তাকে জিজ্ঞেস করে,,
– এখন উপায়? ছাড়াবো কি করে একে,
– রাগিব দেওয়ান কে কল করো। বল সামিরকে জেল থেকে ফিরিয়ে আনতে।
– বলার আগেই করেছি। সে আপাতত শহরের বাইরে। ।
– তাইলে আরকি, হাতপা গুটিয়ে বসে থাক। ওযে খুন করেছে এটা পুরা মহল্লার মানুষ দেখেছে।

সিযাম সাফিন, সালার সিকান্দার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। মাহা গভীর বাবে কিছু একটা চিন্তা করে ইনায়াকে জিজ্ঞেস করে,, উনারা সারাদিন কোথায় থাকেন?
– তোমার বর মাত্র জেলে গেল,
– ওমন কাজ করলেত যাবেই। ঘুরে আসুক। মাইন্ড ফ্রেশ হোক।
ইনায়া কিছু না বলে ওপরে চলে গেল। মাহা সাথির কাছে গিয়ে বসল। নরম কণ্ঠে বললো,

– ব্যাথা কমেছে আপু? ইতিকে ওষুধ দিয়েছেন? আমি দিচ্ছি।
সাথি মাহার হাত টেনে ধরে বলল,
-মাহা, সামিররে বাচানি দরকার কি করি কওত।
– আপনি ইতির যত্ন নিন। উনি ফেরত চলে আসবেন। উনার বাপ, ভাই আচেতো।
– আরে আল্লাহ! সামনে ছুড়ার পরীক্ষা। আমার টেনশনে মাথা ব্যাথা করতাছে।

মাহা ইতিকে কোলে করে ওপরে চলে যায়। এদিকে থানার বাইরে হইচই লেগে যায়, সামিরকে ছেড়ে না দিলে থানা উড়িয়ে দেব বলে পরিবেশ গমগমে করে তোলে ছেলেরা। মাহবুব উদ্দিন সামিরকে জিজ্ঞেস করে,
– ১ ৪ শিকের ওপারে বসার অনুভূতি কেমন মি, সামির সিকান্দার ?
– এক্কের ঝাক্কাস!
– খুব ভালো। থাকুন বসে ।

‎সামির গাল টেনে হাসে। সালার সিকান্দার থানায় এসে মাহবুব উদ্দিন কে বলে সামিরকে ছেড়ে দিতে। প্রয়োজনে তাকে ২ লাখ টাকা দেয়া হবে। কিন্তু মাহবুব উদ্দিন তাতে কর্ণপাত করলনা। সামির গলা উচিয়ে বলল,,
– আরে ছেড়ে দেন,,, ২ লাখ কেন কোটি দিলেও মারাইবো না। যতইহোক, শেয়ালের থেকে মুরগী চুরি করেছি আমি, শেয়াল মামার লাগ হয়েথে!
দুদিন এভাবেই গেল। শাযেখকে মেরে দেযার রাগে এমপি তামিম খন্দকার ও সামিরের হয়ে সুপারিশ করলেন না।

বিকেলের তপ্ত ছায়ায় পথঘাট স্তব্ধ, ৷ থানার ভেতরে প্রবেশ হলো সাথি আর ইতির। মাহবুব উদ্দিন তাদের সন্মানের সহিত বসতে দিল। ইতির সাথে দু একটা কথা বলল। সাথি বলল,,
– দেখেন মাহবুব ভাই, সামির পুরা গাপলা বাধাইছে আমার জন্য । দযা করে ওরে ছেড়ে দেন। ও যদি না থাকত এতখন আপনি আমাদের মৃত দেখতে পেতেন৷ অনুরোধ করছি ছেড়ে দেন। আর যদি আমার কথা যথেষ্ট না হয় তাহলে এইযে,,,

বলেই একটা কাগজ এগিয়ে দিল সাথি। মাহবুব উদ্দিন কাগজটা খুলে পড়তে লাগল,,, নাম ধাম কিচ্ছু নেই।
ইন্সপেক্টর মাহবুব উদ্দিন,,
আমার কথাটা মন দিয়ে বোঝেন,,, সামির সিকান্দার নির্দোষ নয়। অপরাধী। কিন্তু এই ঘটনায় তাকে দোষী সাবস্ত করা চলেনা। ভুক্তভোগী সাথি আর শিশু ইতির প্রতি যে নির্যাতন হয়েছে সেই হিসেবে তাকে আরো ভযানক মৃত্যু দিতে হতে। সামির সিকান্দার শাস্তিযোগ্য অপরাধী তবে এবারে তাকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ জানাচ্ছি। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই সাথির থেকে নারি ও শিশু নির্যাতনের কেস ফাইল করবেন। তাছাড়া কিছুদিন পর থেকে তার মিড টার্ম পরীক্ষা। যদি ব্যাপারটায় একটু বিশেস নজর দেন ভালো হয়। কারণ পুরো ঘটনাতে ইতি বাচ্চাটার ওপর নেগেটিভ প্রভাব পরেছে। সে সামির সিকান্দার কে খুজে খুজে অস্হির। তার মানসিক দিকটা বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি। আশা করি এসবের মধ্যে ব্যাক্তিগত ব্যাপার টানবেন না।

আসসালামু আলাইকুম।
মাহবুব উদ্দিন সাথির দিকে একবার তাকালো। সাথি তার দিকে তাকিয়ে বলল,,
– আর এমন হবেনা। এবারের মতো ছেড়েদিন। নযত কেস ফাইল করুন।
মহবুব উদ্দিন জোড়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে হাবিলদারকে বলল,,
– সামির সিকান্দার কে ছেড়ে দিন।
ইতি খুশিতে হাত তালি দিয়ে উঠল। মাহবুব উদ্দিন তার মাথায় হাত দিয়ে বলল,
– তুমি খুশিতো? তোমার মামুকে বলবে এরপর থেকে ভালো হয়ে চলতে।

ইতি মাথা নেড়ে হ্যা জানালো। সামির বড্ড অবাক হলো, সামান্য সাথির কথা তে দাগী আসামী কে ছেড়ে দিল। থানা ছাড়তে ছাড়তে রাত সাড়ে ৯ টা বেজে গেল। থানা থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়িতে ফিরে গেল। ওপরে ওঠার সময় সাথি বলল,
– তোকে ছাড়িয়ে আনতে মাহা সাহায্য করেছে। মাহান চিঠি দেখেই মাহবুব উদ্দিন তোরে ছাইড়া দিছে।
সামির সোজা রুমে চলে গেল। মাহা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে। সামির বিনা নোটিশ ভেতরে ঢুকে ধাম করে দড়জা লাগিয়ে দিল। বিদ্যুৎ গতিতে মাহার সামনে দাড়িয়ে বলল,

– তুমি ওই শালারে চিঠি কেন লেখছিলা?
– মন চেয়েছে।
– মনের গুষ্টি মারি! বেশি চাড় দিয়ে ফালাইছি তোমারে, আর যদি কখনো এসব দেখি তাহলে ঠ্যাঙ ভেঙে লুলা করে দেব৷
মাহা কোনো জবাব করলনা। সামির তার দিকে দিঘোরে তাকিয়ে রইল। মাহার দিকে এগিয়ে গিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে বলল,
– তুমি আমার বউ তাইনা? মানে তোমার সাথে লুতুপুতু করলেও দোষ নাই।
– মানে?

সামির পেছন থেকে মাহাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-তুমি আজ আমাকে বাঁধা দিয়েও ছাড় পাবেনা। কারণ এখন তুমি সুস্থ সবল।
মাহার শিড়দাড়া বেয়ে ঠান্ডা কিছু ছড়িয়ে পড়ে। সামির আচমকা তাকে পাঁজা কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে যায়, মুখের ওপর ঝুঁকে বলে,
-অনেক ছাড় দিয়েছি, ভালোমানুষি আমার পোষাচ্ছে না। তুমি যত ইচ্ছে অভিশাপ করতে পারো, আমি পরোয়া করিনা।

কালকুঠুরি পর্ব ২২

কথাগুলো শেষ করে সামির নিজের অধিকার খাটাতে শুরু করে। মাহা চেযেও তাকে বাধা দিতে পারেনা। কারণ সামিরের সবচে বড় শক্তি আর যুক্তি সে তার ৩ কবুলে বাধা স্ত্রী। সেটা মাহা মানুক চাই নাই মানুক।

কালকুঠুরি পর্ব ২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here