কালকুঠুরি পর্ব ২৮
sumona khatun mollika
গন্তব্যে পৌছানের পর মাহা সামনে তাকিয়ে হা হয়ে যায়। মোটামুটি বেশ বড়সড় বাড়ি। তবে অনেক পুরোনো। ভূত বাংলো বলা যেতে পারে। মাহার মনে হলো সত্যি হয়তো মারতে নিয়ে এসেছে।
তার ভাবনা ফুটো করে কাশেম বলল,,,
– ভাবিই??
– কাশেম ভাই? আপনি এখানে?
– হ্যা। আপনারা দেরি করে ফেললেন যে,, আসুন ভেতরে আসুন ।
– এই ভুত বাংলোর মধ্যে কে থাকে কাশেম ভাই?
– এটা ভূত বাংলো নয়। এটা একটা পরিত্যক্ত বাড়ি। পরিত্যক্ত বলতে গোডাউন হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। ভয় পাচ্ছেন নাকি? এখানে ঢুকতে হবেনা। পাশের বাড়িতে যেতে হবে। আমার বাড়ি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মাহা তাকিয়ে দেখল পাশে একটা দুইতলা বাড়ি খুব একটা লাইটিং করা নেই। তবে এখানে আসার জন্য সাজগোজের কি দরকার ছিল!! হ্যা ফুল হাতা ব্লাউজ আর হিজাবের জন্য পর্দা লঙ্ঘন হযনি , কিন্তু মাহার শাড়িটাতে খুব একটা সুবিধা লাগছেনা।
সামির জিজ্ঞেস করল,, কি হলো? এসো। ওখানে দাড়িয়ে কার অপেক্ষা করছ? কাশেমদের বাড়ির সামনে চতুর্ভুজ এক স্তম্ভে লেখা,, ” হালদার বাড়ি, স্বাগতম” একিভাবে ওই বাড়িতেও লেখা ছিল, ” কালকুঠুরি কু-স্বাগতম”। হালদার বাড়ির ভেতরে ঢুকেই মাহা বেশ অবাক হলো সেখানে অনেকজনের উপস্থিতি। নারী পুরুষের মেলা মনে হচ্ছে। উপস্হিত জনতার অনেকেই মাহার চেনা। রাগিব দেওয়ান, তার বউ সোনালী দেওয়ান,, এমপি তামিম খন্দকার ও তার বউ, লিমনসহ কয়েকজন ছেলে ও আরো ৫ কি ৬ জন মহিলা মাহাকে দেখে এমপি তামিম খন্দকার একবার রাগিবের দিকে তাকালো। সে স্হির চিত্তে বসে আছে । কোনো রিয়েকশন নেই।
রাগিবের বউ সোনালী মাহার সাথে কুশল বিনিময় করল,, কাশেমের বাবা, করিম হালদার, বেশ বয়স্ক । দেখে কাশেমের বাপ কম দাদা বেশি মনে হচ্ছে।
রাতের খাওযা দাওয়া শেষ হতে প্রায় ১২টা বেজে গেল। রাগিব দুরে দাড়িয়ে সামিরকে বলল,,
– এ ছুড়া,, তোর বউরে নিযাইছস ক্যান?
-মন চাইছে আনছি । অয় আইসা লাভ না হলেও ক্ষতি হইবনা।
– কেমন লাভ?
– আমি বুঝব। আমার ৫ লাখ?
– গাড়িতে তুলে দেযা শেষ।
-আর দেরি না করি কাজে যাই। তোমাগ লদকালদকি শেষ হইলে বাড়িত যাও।
– বুঝিস,, সত্তরের ওপরে পুলিশ থাকবে কিন্তু ওখানে।
– হেড তো ইন্সপেক্টর মাহবুব উদ্দিন তাইনা?
– হুমমম
– কান টানলে মাথা আসে শুনেছো?? কানটা আমার কাছে,, মাথা অবশ্যই এখানেই আসবে।
– ওই শালাও চালাক কোনোমতে খালি বক্সটা পার হইলেই হয়।
– ভুলে যাচ্ছ কেন মনা,, কামডা কে করতাছে? সামির সিকান্দার! চলোহ।
মাহা, কাশেম আর সোনালী মিলে একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে দাড়ালো। পেছন থেকে চেনা এক সুর ডেকে উঠলো,, ” মাহা?? ”
মাহা পেছনে ফিরতেই দেখে মাহবুব উদ্দিন !
– তোমরা এখানে কি করছো?
– আপনি এখানে??
– আমার ডিউটি আজ এখানে।
তাদেরকে কথা বলতে দেখে সামির ইশারা করলে সোনালী আর সোমা মিলে কি একটা বিষয়ে ঝগড়া করতে লাগল। উপস্থিত সকল পুলিশের নজর তাদের দিকে সেই সুযোগে মোটামুটি সাইজের একটা বক্স সামিরের হাত থেকে একটা পুলিশের হাতে পাচার হয়ে গেল। বক্সটা সে পুলিশের গাড়িতেই রেখে দিল। তারপর সামির কে ইশারা করতেই সামির লাফ দিয়ে ঝোপের ভেতর লুকিয়ে পেছন দিয়ে বেরিয়ে সামনে চলে এল।
মাহবুব উদ্দিনের কেমন সন্দেহ হলো সামির সিকান্দার মানেই ঝামেলা সে এখানে নিশ্চয়ই কোনো গোলমাল আছে।
মাহবুব উদ্দিন ইশারা করতেই পুলিশ গুলো আরো কড়া নজরদারি শুরু করল। তবে ততখনে সামির তার কাজ করে দিয়েছে ।
এই বক্সটা কোনো সামান্য বক্স নয়। ওই বক্সে ৮ কেজি মতোন ড্রাগস প্যাকেজ করা ছিল। এতগুলো পুলিশের নজর চুরিয়ে বক্সটা পার করা সহজ কাজ নয়। সাহসেরো একটা ব্যাপার আছে ।
মাহবুব উদ্দিন জিগ্যেস করল,,
– কি ব্যাপার এই মধ্য রাতে সবাই এখানে কেন আপনারা?
– শখ,, জঙ্গলে জঙ্গলে মঙ্গল অভিযান এ আইছি,,আপনে বাহাত কই থে আইলেন??
– সাবধানে বাড়ি যাইয়েন। রাস্তা টা ভালোনা।
– জ্বে। আপনেও সাবধানে ডিউটি কইরেন, জায়গাটা ভালোনা। এই চলো,, আর তোমরা দুজন বাড়ি গিয়ে চুলোচুলি কইরো। চলো।
মাহা আগামাথা কিছু বুঝলনা। বাড়ি ফেরার রাস্তায় জিজ্ঞেস করল,,
– আচ্ছা এখানে এসেছিলাম কি করতে?
– বাল ছিড়তে ,,
– আজব! এভাবে কথা বলছেন কেন?
– দুঃখিত মেডাম এখানে আসিয়াছিলাম নাইট পার্টিতে,, আর কিছু কাজে। কার্য সম্পাদন করিয়া এখন ফিরিয়া যাইতেছি।
মাহা আর কিছু বললনা বাড়ি ফিরতে রাত ৩ টা বেজে গেল। সামির জামাকাপড় না বদলেই সোজা বিছানায়। মাহা বলল,,
– এই,, জামা চেঞ্জ করে আসুন জঘন্য গন্ধ আসছে, ছিঃ। মদ গিলেচেন তো গিছেছেন গা দিয়ে এমন জঘন্য গন্ধ বেরোয় কেন,, যান যান যান,,
– সরোতো বাল,, কালকে পরীক্ষা আছে ঘুমাতে দেও।
মাহা কিছু বলতনা। কিন্তু গন্ধ টা খুবই তীব্র। সামিরের অভ্যাস আছে জন্য কিছু মনে হচ্ছে না। মাহার কথা অশুনা করতনা কিন্তু তার ভিষণ ঘুম ধরেছে,, তাই শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
মাহা করলকি,, বাথরুম থেকে গোসল করার মগ ভরে পানি এনে সামিরের মাথায় ঢেলে দিল। হুড়মুড় করে উঠে বসলো সামির,,
– বাঙ্গির বাচ্চা কি করলি বে!
– তো কি করব কখন থেকে বলছি যান গোসল করে আসেন,,
রাগে নাকের পাটা ফুলে উঠেছে সামিরের দাঁতে দাঁত চেপে মাহার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর বাঁকা হেসে বলল,,,
– গোসল করতে বলছ তো?
– হ্যাহ্যা।
– ঠিকাছে করছি গোসল।
কথাটা বলেই সামির চোর ধরার মতো করে মাহাকে জাপটে ধরে টানতে টানতে বাথরুমে নিয়ে গেল। ছুটোছুটি করেও মাহা নিজেকে ছাড়াতে পারছেনা।
বাথরুমে গিয়েই ঝর্নার ট্যাপ অন করতেই দুইজন মুহূর্তে কাকভেজা হযে গেল। মাহার কামিজ ভিজে শরীরের অবয়ব ফুটে উঠেছে । সামির তাকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরে বলল,, কি, মজা না? আর করবে গোসল!
মাহার হাতটা একটু ছাড় পেতেই না চাইতেও সামিরের গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। সামির বামগাল টেনে হেসে বলল,, এবার আমার পালা,,
– আমি জানতাম আপনি একটা অসভ্য ইতর, অবশ্যই আমার গায়ে হাত তুলবেন।
– না মেরেও শোধ তোলা যায় ।
– আমার হাত ছেড়ে দিন ব্যাথা লাগছে। নয়ত কাল চায়ের সাথে বিষ দিয়ে মেরে দেব! বেয়াদব একটা লোক ছেড়ে দিন বলছি! এমমম…
আর কোনো কথা বলে সামির সোজা মাহার ঠোঁটে আক্রমণ করল। এতগুলো চড়ের বদলে একটু সাজাতো দেয়াই যায় । মাহার শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম তবুও সামির তাকে ছাড়ছেনা। সামির ইচ্ছে করে মাহার ঠোঁটের একপাশে কামড় মারতেই মাহা ছটপট করে উঠলো। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরল অশ্রুকণা। ঝর্নার পানি তা বইয়ে নিয়ে গেল অজানা ঠিকানায় । সামির ততখানি শক্তি খাটাযনি কিন্তু ছটফট করার কারণে কামড়টা বেশ জোড়েই লেগেছে। মাহাকে ছেড়ে দিতেই মাহা জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগল। সামিরের ভেতর কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো,,
দম ফেলে ঠান্ডা কণ্ঠে বললো,, আস্তে দম নাও। আমাকে উত্তেজিত কোরোনা। আমার অনুভূতি টা কিন্তু জায়েজ। কিন্তু তোমার ওপর আজ আর জোর খাটাবনা তখন তুমি আমার কথা রেখেছ এখন আমি রাখছি।
কথা গুলো বলেই সামির হাতের জোর নরম করল । বাইরে গিয়ে টাওয়েল নিয়েসে নরম হাতে মাহার মাথা মুছে দিল। তারপর বলল ,,,
– আর এরকম কোরোনা। আমি শোধ তুললে সইতে পারবেনা ।
মাহা নিঃশব্দে জামা বদলে নিজের জায়গায় গিয়ে শুয়ে পরল। সামির অপলক সেদিকে তাকিয়ে ভাবল,
এর নাম বেডি মানুষ , আমারে যে থাবড়া মারতে মারতে চোপা ব্যাক্যায় ফালাইলো,, আমি একটু ছুইছি তাতেই ভ্যাক!! , । সামির মাথা মুছে নিজের জায়গায় গিয়ে শুয়ে পরে।
পরেরদিন সকালে ডাইনিং টেবিল এ বসে সামির ইতি, সিভান আর সাথি হাসাহাসি করছে। মাহা চুপচাপ বসে আছে। ইনায়া কলেজ গেছে। জরিনা খাবার পরিবেশন করছে।। সিভান কিছু একটা ভেবে বলে,,,
– এ কাকা,, বাবা কোথায় জানো?
– তোর বাপ কই আমি ক্যামনে জানবো?
– তোমরা যখন বাড়ি ফিরেছ বাবা তকন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিল। এখনো ফেরেনি।
– দ্যাখ গিয়ে কুত্তার দৌড়ানি খাইছে নাকি!!
ইতি মুখে হাত চেপে হাসতে লাগলো। সাথি তাকে হাসতে মানা করছে সামির উল্টে বলছে,, জোরে জোরে হাস।। হাহাহা করে হাস,, সিভু তুিও হাস। হাসলে হার্ট ভালো থাকে ম আরে হাস হাস,,
এমন সময় নুসরাত দড়জা খুলে দিলে সিকান্দার বাড়ির গেট ভেদ করে ভেতরে ঢুকে সাফিন। নুসরাত অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,,
– এটা কে ভাই?? এমন বউ সেজে এসেছে কেন!
কে তুমি? কার বউ?
সাফিন সরু কণ্ঠে বললো,,,
– আমার বউ।
– কিই?
উপস্হিত জনতা হা করে দড়জার দিকে তাকিয়ে আছে। সিভান নিষ্পলক চেয়ে আছে অচেনা নারীটির দিকে। একি সেত অচেনা নয়। তাকে একবার না দুইবার কোথায় যেন দেখেছে,,
সিভান চেচিয়ে উঠলো,, — একি তুমি!
মাহা জিজ্ঞেস করল,
-তুমি চেন সিভান??
– কাকি সুন্দরী,, এইত সেই মহিলা,, স্কুলে যাওয়ার পথে আমাকে চড় মেরেছিল ।
সামির জিজ্ঞেস করল
– চড়?? কেন মেরেছিল?
– আমি কাইশসার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, আইসক্রিম খেতে খেতে এই মহিলার সাথে ভুর করে ধাক্কা লেগে গেছিল তাই চড় মেরেছিলো। বাবা, একে মা হিসেবে মানিনা। একে বের করে দাও।
সাফিন চোখ গরম করে বলল,
– চোখ নামিয়ে কথা বল,, আমি তোর জন্য মা নিয়াসিনি আমার বউ নিয়ে এসেছি। তুই একটা ভুলের পরিণাম অবৈধ তুই। খাবি দাবি চুপ থাকবি। আমার ব্যাপারে নাক গলাবিনা।
মাহা সিবানকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-চুপ করুন! বাচ্চার সামনে কি ধরনের ভাষার ব্যাবহার করছেন!
– সামির তোর বউকে বলবি জ্ঞান কম দিতে। আমি কারো জ্ঞান নেইনা।
শান্ত কণ্ঠে কথা গুলো বলে রাহা নামের মেয়ে টার হাত ধরে উপরে উঠে গেল সাফিন। সিভানের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরল নোনা পানি। মাহা তাকে জড়িয়ে শান্তনা দিচ্ছিল। সামির তার বাহাত টেনে সামনে বসিয়ে বলল,,
– মাগি মাইনষের মতো কান্দোস ক্যা,, এর চে বেশি কষ্টে আমি মানুষ হইছি। দেখতে পাসনা? জাইনে রাখ ছুড়া মাইনষের কাঁদতে নাই। কাইটা লবণ মাখায় দিলেও কাঁদতে নাই। মা দিয়ে কি হবে? কিচ্ছু না। ওই চুড়ির কাছে যাবিনা। বাপ যদি কোবাই আমারে বলতে পারবিনা পরে। যা স্কুল যা।
কালকুঠুরি পর্ব ২৭
– যেতে হবেনা। আমিও ভার্সিটি যাবনা। আমরা আজকে গুরতে যাব কেমন। নুসরাত আপু যাবেন তো না?
– আরে হ্যা হ্যা হ্যা অবশ্যই। টি-বাঁধে গিয়ে পেযারা মাখা খেয়ে আসব কেমন? কিযে মজা হবে তাইনা ইতি?
ইতি মাথা নেড়ে হ্যা জানালো। সামির আর কিছু না বলে চলে গেল।
সিভান মাহাকে জড়িয়ে ধরে বসে রইল। সাথি, নুসরাত সকলে মিলে তাকে শান্তনা দিতে লাগলো।
কিন্তু সিভানের ছোট্ট মন তা মানতে রাজি নয়। ঘরে গিয়ে মায়ের ছবি াকড়ে ধরে বসে রইল ।
