কালকুঠুরি পর্ব ৩

কালকুঠুরি পর্ব ৩
sumona khatun mollika

সকাল সকাল বাড়িতে ঝড় তুলে দিয়েছে মাহার চাচি। মুহিব বাড়ি নেই। মাহাকে অপয়া অলক্ষ্যে বলে ভিষণ গালাগাল করছে। অথচ মাহার দোষ হলো সে কেন একটা বেড়াল ছানাকে খেতে দিয়েছে। সাদা বাদামীর মিশ্র রঙের বেড়ালটা ভিষণ কিউট দেখতে। কিছুটা বিদেশি বিদেশি ছাপ। মাহা নিজের ঘরে বসে পড়ছিল। দেখে জানালা টপকে একটা বেড়াল বেতরে ঢুকছে। মাহার সামনে বসে করুন কণ্ঠে মিউমিু করছে ।

ছোট্ট মিষ্টি ছানাটার বয়স বেশি না। তার হয়ত খিদে পেয়েছে। মাহা তাকে কোলে তুলে রান্নাঘরে নিয়ে যায়। নিজের ভাগের মাছের লেজ থেকে একটুখানি ছিড়ে দিলে বাচ্চা তা খেতে থাকে। চাচি সেটা দেখতে পেয়ে ভিষণ ক্ষেপে যায়। তখন থেকে উরাধুরা বকতে থাকে। মাহা চুপ করে শোনে।
কি আর করবে,, তার যে কোনো খুটি নেই,, নেই সেই শক্তি,, জোড়ের খুঁটি কবেই ভেঙে গেছে!!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মুহিব বাড়ি ফিরে দেখে মাহার মনটা খারাপ। মাহা মুহিবের কাছে পড়া দেখিয়ে নিতে গেলে মুহিব বলে,, ” তোর মন খারাপ কেন? কিছু দরকার? মা কিছু বলেছে?
মাহা কোনো জবাব দেয়না। মুহিব তার জবাব বুঝে যায়। ভার্সিটির জন্য বের হওয়ার সময় মাকে বলে,,
– তোমাকে শেষ বারের মতো বলছি মাহাকে আর বকাবকি করবেনা। নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
তবে চাচি তার কথা শুনছে কোথায়!! এদিকে টি বাধ এ,,, ( রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড, রাজশাহী)

সিয়াম কে নুসরাত জিজ্ঞেস করছে,,,
– আচ্ছা,, তোমার বাবা কি তোমাকে আজীবন আইবুড়ো করে রাখবে? বিয়ে দেবেনা? কতদিন আর এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করে বেরাব?
– কাল বড় ভাই সাফিন সিকান্দার আসবে,, সে আসলে তো আর তোমায় বিয়ে করা হয়েছে!! একেই তুমি,, বিরোধীদলের সভাপতির বোন।

কিছুক্ষন পর নুসরাত আবার বলল,,
– তুমি সত্যি আমায় ভালোবাসো?
– কোনো সন্দেহ?
– কোনো গ্যারেন্টি?
– পদ্মায় ঝাপ দেব?
সিয়াম বাকা হাসে। নুসরাত বলে,,,
– আরে বিয়ের জন্য বাড়ি থেকে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। আমার আর সহ্য হচ্ছে না।
সিয়াম তার দিকে তাকিয়ে বলে,,
– চলো বিয়ে করে ফেলি,, বর বউ পরে সাজব।
– হ্যাহ??

সিয়াম মাথা নাড়িয়ে বলল,,
– করবে আমায় বিয়ে? সিয়াম সিকান্দার এর বউ হবে??
নুসরাত মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়।
– তাহলে চল…
– সাক্ষী?
– সামির আছেতো!

নুসরাত একটু মুখ বাকালো,, সামির সিকান্দার টার সাথে তার টম এন্ড জেরি সম্পর্ক। পারলে একে অপরকে বোম মেরে উড়িয়ে দেয়।
কাজী অফিসে গিয়ে বাইক থেকে নামতেই সামির বলে,,
– চলে এসেছে কালোজাদুর তান্ত্রিক। বাঙ্গির বড় নাতিন, সবাই প্রণাম কর তরা,,, কাইশসা মালা লিয়ায় যা।
কাশেম, সামির আর কয়জন ছেলেপেলের সাক্ষী তে সিয়াম আর নুসরাতের বিয়ে হয়ে গেল। সিয়াম ভেবেছিল সালার সিকান্দার বড্ড ওভার রিজেক্ট করে দেবেন। কিন্তু তিনি সাদরে তাদের গ্রহণ করলেন। এখানেও সামিরের কৃতিত্ব। সামির সবসময়ই নীল লুঙ্গি পড়ে। লুঙ্গি একহাতে উচিয়ে ধরে নুসরাতের দিকে বাকা হয়ে বলর,,
– ও আমার ভাবিগো…. বাচকে রেহনা রে বাবা, বাচকে রেহনা রে,,, বাচকে রেহনা রে বাবা তুজপে নাজার হেয়। ,,,

তার ফোনে একটা কল ঢুকে,, অপরপাশ থেকে এমপি তামিম খন্দকার বলল,,
– সামির,, তর বড় ভাইকে লিতে যাবিন্যা? বইসা আছে মনে হয়!
– ওর তো কাল আসার কথা ছিল। আসছি।
সামির সোজা কল লাগাল সাফিন সিকান্দার কে,,
-হ্যালো ভাঙা টিন,, তুমি কোই?
– ভার্সিটি।
– জ্বালা বারা! আসতেছি।

অন্যদিকে,,, ভার্সিটি,,,
মাহা সহ কয়েকজন জুনিয়র কে আটকে রেখেছে একদল ছেলেপেলে। দেখল চোখে সানগ্লাস হিরোর মতো দেখতে কিন্তু বড্ড খারাপ একটা ছেলে জুনিয়র এক মেয়ে কে প্রচন্ড রকম বিরক্ত করছে।
ছেলেটা যখনি মেয়েটার ঘাড়ে হাত দিতে যাবে মাহা হুট করে ছেলেটার হাত ধরে ফেলে। ছেলেটা ভ্রু কুচকে মাহার দিকে তাকাতেই তার চক্ষু স্হির হয়ে যায় মাহার দুই চোখে। মাহা তার হাত ছেড়ে দিতেই ছেলেটা সানগ্লাস নামালো। তার চোখদুটো একদম সিয়াম সিকান্দার এর মতোন। আর যাই হোক মাহা ওই চোখদুটো চিনতে ভুল করার কথা না।

ছলেটা মাহাকে জিজ্ঞেস করল,,
– তোমার সাহস খুব বেশি মেয়ে। তুমি জানো আমি কে?
– যেই হন না কেন, মানুষ রূপি হারামি এটাত বোঝাই যাচ্ছে।
– বাহ,, নজরে খুব দূরদর্শী তুমি।
– শুকরিয়া।

ছেলেটা বাকা হেসে চলে গেল। তার সাথে বাকি ছেলেগুলো ও। মাহা মেয়েটাকে বলল,,
– তুমি কিছু বলছিলে না কেন?
-আপু তুমি ওনাকে চেননা।
– কে উনি? আযরাইল?
– আয়রাইল না ইবলিশ! আজরাইল তো ছোটটা।
– তাই নাকি? কে উনি.
-মেয়র আবু সালার সিকান্দার এর বড় ছেলে আবু সাফিন সিকান্দার। কেবল আজকেই দেড় বছরের মাথায় জেল থেকে ফিরছে।

মাহা বেশ বিরক্ত হয়ে যায়। আবার সিকান্দার!! মাহা জিজ্ঞেস করে,,
– খুব ভয় পাও না ওদের?
– হ্যা আপু।
– আল্লাহর থেকেও বেশি?

মেয়েটা মাথা উচিয়ে বলল,,
– নানা তওবা তওবা।
– তাহলে? তুমি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছো মানে তুমিও সেই অন্যায়ের ভাগিদার।

মেয়েটা মাহার কথা শুনে চলে গেল। মুহিব এগিয়ে এলে,, মাহা জিজ্ঞেস করে,,
– মুহিব ভাই?? সাফিন সিকান্দার কেন জেলে গেছিল??
– আব… বউ মার্ডারের অভিযোগে।
– মানে, সাফিন সিকান্দার নিজের বউকে খুন করে জেলে ছিল?
– হ্যা ,,, ।
মাহা মোটামুটি ধারণা করেই ফেলল সিকান্দার দের প্রত্যেকেই এরকম তবে সিয়াম সিকান্দার ও কি এরকম! তার নামেতো এমন বাজে রেকর্ড নেই। নাই সে জুনিয়র দের বিরক্ত করে!

ভার্সিটিতে গিয়ে সামির সোজা প্রিন্সিপালের রুমে চলে গেল। সেখান থেকে বের হতেই সাফিন সামির কে জড়িয়ে ধরে বলল,,
– কেমন চলছে,,,
– এ,, ভাঙা টিন তুমি ছাড়া,, একদম মজা নেই।বাঙ্গির নাতিগুলারে সামলানি মেল্লা জালার। আমি ফুটো মস্তানই ঠিক ছিলাম।

সাফিন বাকা হাসল। পেছন থেকে মিরন নামের এক ছেলে বলল,, ভাই এইযে ওই মেয়েটার ফাইল । সাফিন ফাইল খুলে দেখতে লাগরে সামির বলল,,
– আরে,, এতো ডিপজলের মা। সোডিয়াম ক্লোরাইড !

সাফিন বলে,
– তুই চিনিস?
– হ্যা,,, খাস্সা করে চিনি।
– কিভাবে??
সামির ঘাড় চুলকে বলল,,
– ওই মানে,, সেদিন সুগার লেবেল হাই হয়ে গেছিল তো,, থাবড়া মেরে পুরা শরীর নোনতা করে দিছে আরকি।
– ওই মাগী তরে চড় মারছে!!
– এ্যা,,, ভাই!! উহু ,,,, মুরুব্বি মানুষ তাই সন্মান দিয়ে বলছি,, যারে যা খুশি কও। প্রয়োজনে মরা নানিরে কইয়ো, কিন্তু ওই আইটেম,, জুনিয়র ডায়নারে কিছু কবা না। হের শোধ নিজে তুলমু। বাড়ি চল!

সামির গাড়ি বের করতে গেলে,, সাফিন কাশেম কে ডেকে বলে,,
– কেসটা কি? সোডিয়াম ক্লোরাইড মানে?
– ভাই,, ভাইয়ে আমাক বুইলেছে , মাহা আপা তরকারিতে লবণের মতো। আমি কিছুই বুঝিনাই কিন্তু মন দিয়ে শুনছি।

সাফিন কিছু বলেনা। দুইভাই বাইকে করে যেতে যেতে রাস্তায় সাফিন বলে
-তোর মতিগতি ঠিক সুবিধার লাগছেনা।
– লাগবেওনা।
-কেন?
সামির বাইকের গতি বাড়িয়ে তারছেড়া কণ্ঠে গাইতে লাগল,,

এ,,, পড়েছি ভালোবাসায়,
আরকে আমাকে পায়
আমিও এবার পার্কে বেড়াবো
কখনোবা সিনেমায়,, হায়,,

সাফিন বলল,
– থাক,, তুই আর কয়টা মেয়ে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবি,,, সানডে, মানডে, টুইসডে কোনদিন তো বাদ নেই!!!
সামির বলল,,
– কি যে বলনা ভাঙা টিন! আমিতো সিঙ্গেল মানুষ, বাচ্চা ছুড়া, ওই শনিবার ইলমার সাথে, রবিবার ইশিতার সাথে, সোমবার সুমনার সাথে, মঙ্গলবার তেজের সাথে বুধবার মিথুর সাথে আর বৃহস্পতিবার মায়ার সাথে একটু পলিটিকাল মিটিং করি ,,, শুক্রবার তো,,, ঘুম ধরে খুব,,

– লেডি হজমার! কোথাকার!
– আরে ধুর, মনতো কাওকে দিইনি। তাছাড়া আমি শাদিগত দিক দিয়ে ভার্জিন। খুনগত দিক দিয়ে ভার্জিন, । বউগত তো নাই বলি।
সফিন মাথা নেড়ে হাসলো।

আমি চৌদ্দ শিকের এপারে আর মেজিস্ট্রেট মাহাদিবা ফারনাজ মাহা ওপারে। আমাকে আজই মাত্র৷ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে শিফট করা হয়েছে।
মাহা নিজে আমাকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করার আপিল পাশ করিয়েছে। আমি আসলে রাগের মাথায় শাশুড়ী মায়ের মাথা ফাটিয়ে খুন করেছি।
মাহাদিবা ফারনাজ মাহা, আমার থেকে পুরোটা শুনে তারপর বলল,,৷ মারলে কেন বিচার দিতে পারতে। ”
আমি বললাম,
– খুব জ্বালাতো
-আমার চেও বেশি কষ্ট সহ্য করেছ? গুলি খেয়েছ?

কালকুঠুরি পর্ব ২

কথাগুলো শুনে বেশ আগ্রহ হলো, আমি তাদের পুরো ঘটনা শুনতে চাইলাম৷ তাছাড়া তাদেরকে চেনেনা, বর্তমানে রাজশাহীতে এমন মানুষ নেই।সামির সিকান্দার এখানকার বিখ্যাত লোক। । তার হাতেও সময় ছিল, তাই সে শুনিয়ে গেলেন পুরোটা। এখান থেকে বাকিটা আমি বলছি,, সামির সিকান্দার আর মাহাদিবা ফারনাজ মাহা কতটা ভয়ানক ছিল।

কালকুঠুরি পর্ব ৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here