কালকুঠুরি পর্ব ৪৮
sumona khatun mollika
মাহা ভুমিকে ঘুম পারিয়ে সেতুকে পড়তে বসিয়েছে । সেতু হঠাৎ পড়ার মাঝে জিজ্ঞেস করে,,
– আপাজান?
– বলো
– আমার একটা কথা মাথায় ঢোকেনা, আপনে এইযে এই বাড়িতে থাকেন, আমার, ভুমির আবার নিজের ভরণপোষণ করেন, টাকা গুলো কি শেষ হবেনা? বা আপনে যে আপনের বাপের সম্পত্তি ব্যাবহার করতেছেন, আপনার চাচা জানবেনা?
– না।
– কিন্তু কিভাবে কি?
– একটা কথা জানো সেতু? চালাকেরো চালাক থাকে। আমার চাচা, টাকাওয়ালা। চরম বুদ্ধি ওয়ালা কিন্তু এডুকেশনাল স্ট্যাটাস ভিষণ খারাপ। সেদিন ওখান থেকে পালিয়ে আসার পর,, কয়েকদিন মাহবুব উদ্দিন এর ঘাড়ে বসে দিন গেলো, বাবু নিয়ে আলাদা বাঁচতে হলে অবশ্যই নিজের খরচ চালাতে হবে। কিন্তু পড়াশোনা, বাবু, সবকিছুর পাশাপাশি কোনো কর্ম করা সোজা কথা না। পরে আমার মনে পরে,, চাচা দলিলের পড়াশোনা অতো বোঝেনা। সিগনেচারও করেনা টিপসই দেয় । ঘুমের ঘোরে মাহবুব উদ্দিন তার টিপছাপ নিয়ে আসে। ব্যাস। এক সপ্তাহ পরে, বাড়িতে নোটিশ চলে যায় ,, মৃত অ্যাডভোকেট মীর মেহেদী উদ্দিন এর স্হাবর অস্হাবর সকল সম্পত্তি তার ভাই মীর মফিদ উদ্দিন এর সহমতে, শেষ উত্তরাধিকারী মাহাদিবা ফারনাজ মাহার নামে স্থানান্তরিত করা হইল। যদি কোনো কারণে মাহাদিবা ফারনাজ মাহার মৃত্যু হয় বা মানসিক বিকৃতি ঘটে তবে এ সকল সম্পত্তি রাজপাড়া সংলগ্ন দক্ষিণ পাড়ার গোরস্থানের নামে অনুদিত হইবে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– কি বলেন আপাজান! মুহিব ভাই তারপর মধু আপা এরা জানেনা?
– জানলেও লাভ নেই। কাগজটা একদম লিগাল। তাছাড়া মুহিব ভাইয়ের বরাবরি সম্পত্তির দিকে অতো মনোযোগ ছিল না৷ মধুরো বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
– একদম মুভির মতোন৷
– তারপর শোনোই না,, উকিল আর পুলিশ পরেরদিন বাড়িতে গেলে সাফিন সিকান্দার কে কল করলে সেও তাকে এ বিষয়ে কোনো সাহায্য করে না। তারতো মাথায় হাত ! জানো যেদিন জানতে পারি, রাগিব দেওয়ান এর কাছে আমাকে ৩০ লাখ টাকায় চাচা বেঁচে দিচ্ছে , সেদিন জেন আমার ভেতরটা কাঁচের মতো ভেঙে গুড়িয়ে গেছে । জানি তারা আমাকে পছন্দ করে না, আল্লাহর কি রহমত আমার কোনো ক্ষতি তিনি হতে দেননি। তার রহমতেই আমি আর ভুমি আজকে জীবিত ।
– আপাজান,
– হুউ?
-আপনি কি সত্যি সামির ভাইজানরে কখনো ভালোবাসেননি?
– জানিনা সেতু। জানো সেতু? আমি জানিনা তাকে ভালোবাসি কিনা তবে, রোজ সকালে যখন তার ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখতাম, আমার না কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হতো। একটা কথাই বারবার মনে হতো,, ইশশশ যদি সামির সিকান্দার একটু ভালো হতো? আমি সব ভুলে যেতাম। যখনি তার কোনো ভালো আর সুন্দর দিক ফুটে উঠত ঠিক পরের বেলাতেই তার বাজে রূপটাও কাঁটার মতো চোখে বিঁধত। উল্টোপাল্টা অগোছালো ১টা বছরে তাকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করার ফুরসত পাইনি।
– আপনার মনে হয় আপনি পারতেন? পারতেন তারে ঠিক করতে?
– নারীদেরকে সৃষ্টিকর্তা এক অপার ক্ষমতা দিয়েছেন। যদি তারা চেষ্টা করে শেষ থেকে শুরু করা মোটেও কঠিন নয়।
– অনেক ভারী কথা বললেন আপাজান।
মাহা আরগা করে একটু হাসলো । সেতু কি একটা ভেবে একবার হাসলো তারপর নিজে নিজেই আওড়ালো,,
– আপাজান,, বাঙ্গি ভাইজানের কয়টা রহস্য কিছুতেই বুঝিনা।
– কি??
– আপনে যে বলছিলেন ভাই আপনারে কিসব অদ্ভুত নামে ডাকত! ডিপজলের মা, পানি সুন্দরী , সোডিয়াম ক্লোরাইড তারপর আফুজান্স,, এদের মধ্যে আপনার জানি কোনটা প্রিয়?
– সামির সিকান্দার এর দুটো ডাক আমার এখনো কানে বাজে, ভার্সিটির দিনকার, ” ও বোরখাওয়ালী মেডাম ” আর,,
– আর??
– দিবা,,,
– এটাতো হাস্যকর না।
– আমার বাবা ডাকতো দিবা বলে,,
– এক মিনিট, আপনার বাবা আপনাকে দিবা বলে ডাকত? সেটা সামির সিকান্দার জানলো কি করে?
আপনাদের প্রথম দেখা কবে ছিল.? ছোটকালে?
– নাতো। আমি তাকে প্রথম দেখেছি সেদিন যেদিন বখাটেদের হাত হতে সে আমাকে বাঁচিয়েছিল।
– ওহ।
– যাও গিয়ে ঘুমাও। আর পড়াশোনা ঠিকমতো করছোনা কেন? এমন করলে বিয়ে দিয়ে দেব ধরে।
– সেটারিতো অপেক্ষা করছি। সামির সিকান্দার এর মতোন একটা বাঙ্গি কপালে জুটুক!
বিরবিরিয়ে বলা কথা টা মাহা শুনতে পেলনা। ঘুরে জিজ্ঞেস করল,,
– কিছুকি বললে??
– উমমম?? না। শুভ রাত্রি।
– হুমম।
সেতু রুমের লাইট নিভিয়ে চলে যায় । মাহা ভুমির পাশে গিয়ে শুতেই ভুমি ঘুমের ঘোরে চোখমুখ বেকিয়ে ফেলে মাহা একটু চিন্তিত হয়ে যায়। হঠাৎ করে বাচ্চাটা আব্বু বলে চিৎকার করে ওঠে। মাহা তাকে জড়িয়ে ধরলে ভুমি ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে।
– কি হয়েছে মা?
– আব,,,, আব্বুউ,,
– আব্বুর কি হয়েছে?
– আব্বু কই আমাল আব্বু কই! আব্বু দাও।
মাহা তাকে মাথা নেড়ে শান্তনা দিতে দিতে বলে,, যাব। আব্বু যাবতো। এখন ঘুমিয়ে যাও। সকালে আব্বু যাব। কোনোমতে শান্তনা দিয়ে তাকে ঘুম পারিয়ে দেয় মাহা।।।
পরদিন,, । কখন মাহা বেরিয়ে গেছে টের পায়নি। তাই সকাল থেকে তার মনটা খারাপ। সেতু বলেছে তাকে ভার্সিটি নিয়ে যাবে। সুন্দর মতো খয়েরী রঙের একটা বোরখা পড়ে সে একদম রেডি। এক কর্নারে বসে বসে পুইপুই বাজাচ্ছে। সেতুটা সেই কখন গেছে আসছেইনা এখনো, একাধারে পুইপুই বাজিয়ে সে বিরক্ত । পাশে বসা তিতিনকে সঙ্গে করে ছাদে চলে গেল সে। ছাদে একঝাঁক কবুতর রয়েছে। পাশের বাসার রতন শেখ পালে এই কবুতরগুলো । সাদা, কালো, অ্যাশ, নানা রঙের লাল পায়ের কবুতরগুলো দেখতে দারুণ লাগে। ছাদে কেও নেই। টুকটুক করে হেটে এক কর্নারে থেকে দানার বয়াম থেকে একমুঠ দানা নিয়ে এসে সামনে ছুড়ে দেয় । আকাশের দিকে তাকিয়ে আটকা আটকা গলায় ডাকে,,
– আ,,, আ,, আয়,, আয়,,
তিতিন এক কর্নারে শুয়ে লেজ নারাচ্ছে। চোখের পলকে একঝাঁক কবুতর দিয়ে জায়গাটা ভরে গেল। ভুমির মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। কবুতর গুলোর মধ্যে বসে নিজে নিজেই বলছে,,
– আমি আব্বু যাব। তোম,, তোমলা আব্বুকে ডেকে দাও। থাওলে, তাওলে, আলো দান, দানা দেব ।
কবুতরগুলো খাওয়া শেষে উড়ে যায় । একটা সাদা কবুতর সেখানেই বসে রয়। ভুমি তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
– আমাল আব্বু কই? জানো? আব্বু?
কবুতরটা কথার জবাবে নিজের মাথা নোয়াল যেন সে সিজদা দিচ্ছে । তা দেখে ভুমি তিতিন কে নিয়ে আবারো নিচে চলে যায়। দৌড়ে জায়নামাজ বিছিয়ে দাড়ায় যখন খেয়াল হয় পড়নের বোরখায় ময়লা ভরেছে, ঠুস করে বোরখাটা খুলে নিরুদ্দেশে ছুড়ে মারলো। বলা যায় এই অভ্যাস, সে সামির সিকান্দার এর মেয়ে হিসেবেই পেয়েছে। সামির সিকান্দার ও নিজের গায়ের জামা খুলে এথায় সেথায় ছুড়ে মারত।
ভুমি জায়নামাজ বিছিয়ে দুই পা ছড়িয়ে সেখানে বসে পরল। মোনাজাত ধরার মতো করে হাত উচিয়ে দুমিনিট ভাবলো, আম্মুতো দোয়া পরে সেতো দোয়া পারেনা। হুট করে মনে পরে একটা দোয়া সে পারে,, অমনি সে তার বয়ান শুরু করল আল্লাহর দরবারে । ,
” বিত,,, বিথ,, বিথমিল লা হি লহমানিল লহিম, আল্লাহ হাফেজ, আত.. আত.. আথথালা মলাইকুম.. এ আল্লাহ, আমাকে আব্বু ভিলান কে দিয়ে দিন, আল্লাহ আর উমম, একটা লাল জামা দিয়ে দিন, তক্কেট দিয়ে দিন ,, আল্লাহ । আল্লাহ হাফেজ আল্লাহ ”
সেতু মুখে হাসি চেপে রাখতে পারছেনা। মোনাজাত ছেড়ে ভুমি হাসাহাসি করা সেতুর পায়ে একটা চড় মেরে বলে,,
– থেতুর বাচ্চা হাস, হাস, হাসছিস কেন?
– তো হাসবোনা? তুই আল্লাহর কাছে চক্কেট চাইছিস?
– আব্বুও তেয়েথি।
– চাইতে হবে কেন? তোমার আব্বুতো আছে ভুমি।
– আমাল কাছে আব্বু কই? নেই।
– চলে আসবে, চিন্তা কোরোনা। চলো এখন যাই?
– তলো,,
ভুমিকে অন্য একটা বোরখা পরিয়ে,, দুজন হাত ধরাধরি করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় । তারা আপাতত যে বাড়িতে থাকছে সেটা লালকুঠি থেকে সামান্য দূরে৷
খুব ভেবে চিন্তে মাহা এই বাড়িতেই ভাড়া থাকে।
বাড়িওয়ালা নাজির শাহ , মাহা আর ভুমিকে অনেক স্নেহ করেন। এই টুকুনি মেয়ে কে বোরখা পরতে দেখে তিনি বেশ খুশি হন। যেমন গাছ তেমন তার ফল।
ভার্সিটিতে নাহিদের মৃত্যু টা এখনো সতেজ,, কোটার বদলে মেধার লড়াইয়ে বরাবরি জিতে যায় কোটা সেক্টর। দেশের বেশ বড় অংশ মুক্তিযোদ্ধা
পৌষ্য কোটায় চারকি, ভর্তি সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে। শক্ত জনমত প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় এর বিরুদ্ধে তেমন আওয়াজ তোলা হয়না। সামির এ বিষয়ে তেমন কোনো রায় দেয় না দেখে কিছু জনতা বেশ উত্তেজিত । তাদের কথা হচ্ছে , সামির কেন তাদের হয়ে কিছু বলেনা, কেন? সে ছিল পুরো ভার্সিটির সেরা বড় ভাই। সেখান থেকে ট্যালেন্টে প্রফেসর হয়েছে। তার জন্য কি সে আগের সব ভুলে যাবে? সবাইতো আর সামির সিকান্দার এর মতো ট্যালেন্টপুল পাবেনা। সামির জানে শুনেছে তার পিঠপিছে এসকল কানাঘুষা করা হয়। কিন্তু এদিকে মনোযোগ দেওয়ার তার সময় নেই৷
আজকে ভুমি ভার্সিটিতে দৌড়াদৌড়ি করছেনা। একটা বড় গাছের নিচে চুপ করে বসে আছে। সেতু তাকে রোজ এখানে বসিয়ে রেখে লাইব্রেরি তে যায়। কিছুসময় পর কাজ হলে আবার ফিরে আসে। ভুমির কিছুই ভালো লাগছে না। হঠাৎ সে লক্ষ্য করে ওই বাঙ্গি বানান শেখানো লোকটা বাইকে করে আসছে। ভুমি তিতিনকে রেখেই দৌড়াতে শুরু করে । সামিরের দ্রুত পায়ে হাঁটার সাথে তার তাল মিলছেনা। না পেরে চেচিয়ে ওঠে,,
” ও লাল শার্টওয়ালা লোক… ”
একটুও আটকায়নি। স্পষ্ট বলেছে, লাল শার্টওয়ালা লোক,, সামিরের বুকটা ধক করে ওঠে। এটা এই একটা টোন যেটা সামিরের মতো কেও নকল করতে পারেনা। সামির বিদ্যুৎ গতিতে পিছু ঘুরে তাকায় । লালশার্টওয়ালা সেখানে সামির বাদে কেও ছিলনা। পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখতে পায় সেই বোরখাওয়ালী বেবি তার দিকে ছুটে আসছে। বাতাসের বেগে তার লাল হিজাব উড়ছে পেছনে। সামির একপা দুপা করে এগিয়ে যাচ্ছে সামনে। হঠাৎ হোচট খেয়ে ভুমি উল্টে পরে যায় । সামির দৌড়ে তাকে তুলে জড়িয়ে ধরে । ভূমিও তাকে জড়িয়ে ধরে আব্বু আব্বু বলে কেঁদে ওঠে ।
এই মেয়ে টা বাপের মতো ত্যাড়া। উল্টো বাঙালি । অন্য রা আম্মু বলে কাদে আর এ আব্বু বলে। ভুমির হাতটা একটু ছিলে গেছে । সামির হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,,
– ইশশহ! দৌড়ানোর কি দরকার ছিল? ব্যাথা পেয়েছ বাবা?
– উমমম উমম।
সামির ভুমিকে কোলে করে তুলে নিয়ে গিয়ে তার হাতে যত্ন করে মেডিসিন লাগিয়ে দেয় । জরিয়ে ধরে পিঠে চাপড় দিয়ে কান্না থামায়। অফিসে বসে থাকা অন্য প্রফেসররা হা করে তাকিয়ে দেখে, সামির সিকান্দার ! একজন নিষ্ঠুরতম ব্যাক্তি কতসুন্দর একটা বাচ্চাকে আদর করছে। সামির ভুমিকে কোলে করে বাইরে চলে যায়।
ভুমি তার গলার লকেটটা নাড়াচাড়া করছে। সামিরের গালে চুক করে একটা চুমু বসিয়ে দেয় সামহা। সামির দুই সেকেন্ড ধন্যে ধরে থেকে ফিচ করে হেসে বলে,,
-দুষ্টু আছিস মাইরি। তুমি তখন আমাকে কি বলে ডাকলে?
– লালশাটওলা লোক,,
-কেন?
– এ্যাই, তুমিতো লাল শাটই পলে আচো।
– এ্যাহ! হাহাহা। তাইনাকি?
-হুমম৷
– কি হয়েছে? এটা চাই?
– উমমম।
– আম্মু পিটবে না?
– তো কি হয়েথে। দাও।
সামির তাকে কোলের ওপর বসিয়ে গলার থেকে একটা লকেট খুলে ফেলে। দুটো দেখে সামহা হা করে তাকিয়ে রইল । সামির জানে সামহা তার কথা কিছু বুঝবেনা। তবুও বলে,,
– জানো সামহা ? এটা ছোটবেলায় কেনা। আর এটা তখন কিনেছিলাম যেদিন আচ করতে পেরেছি আমি বাবা হবো। লোকে সোনা দানা, রূপা ব্লা ব্লা দেয় কিন্তু আমি, এই সস্তা একটা লকেট কাস্টমাইজ করিয়েছিলাম। আমি কিন্তু মোটেও গরিব নই। এটা রূপার। আর আমারটাও রূপার। চাচির সাথে বেড়াতে গিয়ে জবরদস্তি কিনেছিলাম। চাচিও মরে গেছে । আর, আমার বাবা হওয়াও হয়নি। তোমার মতো আমার একটা বোরখাওয়ালী মেডাম ছিল। জামা হাতে গোনা তবে বোরখা অনেকগুলো । আমার ব্যাক্তিগত মালটার হাতে হেব্বি পাওয়ার ছিল জানো, এক চড়ে উগান্ডা ভ্রমণ করাতো। কতডি খাইছি খেয়াল নাই। সেও নাই। আমার এখন কিছুই নাই। লকেটটা তোমাকে দিলাম। তুমি আমাকে আব্বু বলে ডাকলে কেন?
সামহা লালচে ঠোঁট দুটো হা করে সামিরের কথা শুনলো। মাথা দুলিয়ে আবারো বলল,,
– আব্বু? তুমি আমাল আব্বু নাকি?
সামির হোহো করে হেসে তার ফোলা গালটায় গভীর একটা চুমু দিয়ে বলল,,
– হ্যা বললে আমার বউয়ের ভূত আমাকে কেলাবে।
তোমার আব্বুর নাম কি?
– ভিলান।
– ভি?? ভিলান? হাহাহা। ভেরি ইন্টারেস্টিং ভিলানের বাচ্চা থামহা।
সামহা নিজের গাল ডলে মুছতে লাগল। আম্মুও তাকে এত গভীর পাপ্পি দেয়না। সামির ইশারা করে জানতে চায় কি সমস্যা ? সামহা এক আঙুল দিয়ে অন্য গালে ইশারা করে। সামির অন্য গালেও জোরসে চুমু বসিয়ে দেয় । সামহা জীব দিয়ে দুষ্টু করে ঠোঁট চেটে বলে,,
– এবাল ঠিকাছে।
– বাপরে, হেব্বি চালাক তো তুই। দুষ্টু একটা!
মাহার কাজ শেষ হওয়ায় সে আগে ভুমিকে নিতে এসেছে। মাহা খেয়াল করে ভুমি কার সাথে যেন কথা বলছে, কনুই পর্যন্ত হাতা গুটানো লোকটার। দু এক মিনিট লক্ষ্য করতেই মাহার চোখদুটো বড় হয়ে যায় ।
সামিরকে সামনে দেখেই মাহার বুকটা ধড়াস করে ওঠে। আচমকা কোনো শকিৎ নিউজ পেলে যেমনটা হয়ে থাকে। নিকাবের আড়ালেই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরে বুকফাটা আর্তনাদের অশ্রু। চারপাশের সবকিছু কেমন দুলে ওঠে।
হুপ করে একটা মোটা গাছের আড়ালে দাড়ায়। দুচোখ ভরে দেখে সামির তার মেয়ের সাথে হাসাহাসি করছে । অথচ সে জানেইনা সেটা তারি অংশ । হুট করে মাহার মনে অজানা আশঙ্কা জেঁকে বসে । সামহাকে কিছুতেই সামিরের আশেপাশে ভিরতে দেওয়া যাবেনা৷ সঠিক সময় না আসা পর্যন্ত আর সামিরের দেখা দেওয়া যাবেনা সামিরকে।
সেতু গিয়ে সামহাকে নিয়ে আসে। মাহা সেতুকে বারণ করে সামহাকে আর ভার্সিটি নিয়ে যেতে।
সেতুও তার পরেরদিন থেকে সামহাকে আর ভার্সিটি নিয়ে যায় না।
সেদিন রাতে,,
সামিরের ওপর কার্তিকের লোকেরা এট্যাক করে। ঘুরে ফিরে টেনে নিয়ে যায় সেই কালকুঠুরি তে। সামির আর কাশেম মিলে প্রায় তেরজনের মতো রোককে শুইযে ফেলেছে । ।
লাস্টে যে বেঁচে ছিল, সে সামিরকে জঘন্য একটা গালি দিতেই সামির ক্ষেপে বোম হয়ে যায় । মা তুলে গালি দেওয়ার দোষে সামির তাকে কিল ঘুষি দিয়ে তার বুকের ওপর চড়ে বসে৷
তারপরও যখন লোকটা মুখ বন্ধ করে না, সামির রেগে তার বুকের ভেতর খামচা মেরে আঙুল গেথে দেয় । কাশেম অবাক হয়ে যায় ! সামিরএতটা হিংস্র কখনো হয়নি। রক্তের ছিটায় সামিরের চেহারাটা ভয়ানক দেখাচ্ছে । অগোছালো হয়ে পা ছড়িয়ে বসে সামির সিগারেটে আগুন ধরায়। ক্লান্ত ভয়াবহ দৃষ্টি মেলে দেখে তার জীবন থেকে সুখ ছিনিয়ে নেওয়া কালকুঠুরি কে। কাশেম পাশে বসে জিজ্ঞেস করে,,
কালকুঠুরি পর্ব ৪৭
– এসব ধ্বংস লীলা বন্ধ কবে হবে ভাই /?
সামির ধোয়া উড়িয়ে জবাব দেয়,,
– ধ্বংসলীলায় মেতেও তাকে পাইনি।
ধ্বংস লীলা বন্ধ করেও তাকে পাইনি।
এই জনম,
আমি নিজ হাতেই ধ্বংস করে দেব।
