কোন গোপনে মন ভেসেছে গল্পের লিংক || মিসরাতুল রহমান চৈতী

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ১
মিসরাতুল রহমান চৈতী

পতিতালয়ে সব থেকে প্রথম যেই মেয়ে আসবে সবার আগে ছুঁয়ে দেখবে এমপি রাতুল আহাম্মেদ। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি পতিতালয়ের পরিচালিকার সামনে পা এর উপর পা দিয়ে বসে আছে।
পরিচালিকা সামান্য মাথা নিচু করে বিনয়ের সুরে বলল, “এই মেয়েটাকে মাত্র এনেছি, স্যার। এখনও পুরোপুরি মানিয়ে নেয়নি।”
এমপি রাতুল আহাম্মেদ সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলল, “তা নাকি? দেখি কেমন মাল এনেছিস এবার!”
পরিচালিকা দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “এইদিকে, স্যার।”

রাতুল আহাম্মেদ তার সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে চেপে নিভিয়ে ধীর পায়ে পরিচালিকার পেছনে হাঁটতে লাগল। আশপাশের অন্য মেয়েরা তাদের কাজ ফেলে এক ঝলক তাকিয়ে দেখল, তারপর চোখ নামিয়ে নিল। এ বাড়ির নিয়ম সবাই জানে— নতুন মুখ মানেই বিশেষ আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।
পরিচালিকা একটা পুরোনো কাঠের দরজার সামনে এসে থামল। দরজার ওপারে নিঃশব্দ কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সে আস্তে করে দরজাটা খুলল।
ঘরের কোণে একটা চৌকির উপর বসে ছিল মেয়েটি। বয়স খুব বেশি হলে,, পনের বছর হবে,, কি সুন্দর গা এর রং লম্বা রেশমি চুল ডাগর ডগার আঁখি। আঁখিজোড়া ভিজে আছে। ভয়ে জবুথবু হয়ে বসে আছে। থেকে কেঁপে উঠছে কান্নার ফলে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাতুল দরজার ফ্রেমে দাঁড়িয়ে এক ঝলক দেখল। তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল, কিন্তু সেই হাসিতে কোনো উষ্ণতা ছিল না— ছিল শুধুই দখলদারিত্বের নেশা।
ধীরে ধীরে ঘরের ভেতরে পা রাখল সে। মেয়েটি আরও কুঁকড়ে গেল, যেন দেয়ালের সঙ্গে মিশে যেতে চায়। তার নিঃশ্বাস দ্রুত হয়ে আসছিল।
রাতুল হাত পকেটে ঢুকিয়ে অনায়াস ভঙ্গিতে বলল, “নাম কী?”
মেয়েটি কোনো উত্তর দিল না।
পরিচালিকা পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “স্যার, এখনও খুব ভয় পাচ্ছে। আপনি একটু সময় দিলে ঠিক হয়ে যাবে।”
রাতুল একটু বাঁকা হেসে বললো,, ওকে আমি নিয়ে যেতে চাই আমার সাথে করে।
পরিচালিকা বললো,, স্যার এইখান থেকে মেয়ে নেওয়া সম্ভনা।
ক্ষিপ্ত নয়নে তাকিয়ে রাতুল বললো,,, জানতো কার সাথে কথা বলছো সো যেইটা বলছি সেইটাই করো নয়তো তোমাদের এই পতিতালয় উঠিয়ে ফেলতে এক সেকেন্ড ও সময় নিবো না।
পরিচালিকা মাথা নিচু করল, কিন্তু মুখে কিছু বলল না। তার হাত কাঁপছিল। এই এমপি রাতুল আহাম্মেদের ক্ষমতা সে ভালো করেই জানে। একবার তার রাগ উঠে গেলে পুরো পতিতালয় মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারে। রাজি হয়ে গেলো কিন্তু মোটা অংকের টাকা দাবি করলো।
রাতুল আহাম্মেদ চোখ কুঁচকে পরিচালিকার দিকে তাকাল। তার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটল। রাতুল পকেট থেকে সিগারেট বের করল, কিন্তু আগুন ধরানোর আগেই বিরক্ত হয়ে আবার রেখে দিল। এক মুহূর্ত চিন্তা করল, তারপর গলায় খসখসে শোনালো—

“কত?”
পরিচালিকার চোখ চকচক করে উঠল। সে আঙুলের ইশারায় এক মিলিয়নের (দশ লাখ) সংকেত দিল।
ঠিক আছে কাল পেয়ে যাবে এখন মেয়েটিকে আমার সাথে নিয়ে যাচ্ছি বলে মেয়েটির সামনে গিয়ে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিয়ে বের হয়ে গেলো।
রাতুল মেয়েটিকে কোলে তুলে দ্রুত গাড়ির দিকে হাঁটতে লাগল। মেয়েটি ছটফট করে উঠল, কিন্তু রাতুলের শক্ত হাতের বাঁধনে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারল না। আশপাশের মেয়েরা নির্বাক তাকিয়ে রইল, কিন্তু কেউ কিছু বলার সাহস করল না।
গাড়ির দরজা খুলে সে মেয়েটিকে সীটে বসিয়ে দিল, তারপর নিজেও পাশে বসল। ড্রাইভার কিছু বলার আগে রাতুল গম্ভীর স্বরে বলল, “চলো, বাড়ি।”
গাড়ি চলতে শুরু করল। মেয়েটি ফুঁপিয়ে কাঁদছিল, কিন্তু তার চোখে একটা অদ্ভুত আতঙ্কের সঙ্গে সঙ্গে অজানা এক চিন্তার ছায়া ছিল।

রাতুল সোফায় গা এলিয়ে বসে ছিল, হাতে গ্লাসভর্তি দামি মদ। তার সামনে তারই বেডে চুপচাপ বসে আছে মেয়েটি। সে ভয়ে কাঁপছিল, যা রাতুল খেয়াল করল।
“নাম কী?”
কোনো উত্তর এল না।
রাতুল একটা ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো নাম কি?
রাতুলের ধমকে মেয়েটি ভয়ার্থ কন্ঠে বললো,, চৈতী।
রাতুল মদের গ্লাসটা টেবিলে রেখে ধীরে পায়ে চৈতীর কাছে গিয়ে দাঁড়াল। মেয়েটি ভয়ে আরও সঙ্কুচিত হয়ে গেল, যেন নিজেকে আরও ছোট করে ফেলতে চাইছে।
রাতুল একপাশে মাথা কাত করে চৈতীর মুখের দিকে তাকাল। তারপর আলতোভাবে তার চিবুকটা ধরে উপরের দিকে তুলল, চৈতী যেন তার চোখে চোখ রাখতে বাধ্য হয়। তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো অনেক রাত হয়েছে এইখানে চুপ করে শুয়ে পড়ো কাল তোমার সব কথা শুনবো।
চৈতী কোন কথা না বলে শুয়ে পড়লো।
রাতুল সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা বের করে ঠোঁটে চেপে ধরল, তারপর লাইটার জ্বালিয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছাড়তে ছাড়তে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। গভীর রাত, চারপাশ নিস্তব্ধ। শুধু দূরে কোথাও কয়েকটা কুকুরের ঘেউ ঘেউ শোনা যাচ্ছে।

সে ঠান্ডা বাতাসে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল, তারপর নিচের দিকে তাকাল। বাংলোর বাগান অন্ধকারে ডুবে আছে, কিন্তু তার প্রশিক্ষিত চোখ কিছু একটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করল— হয়তো অভ্যাসবশত।
তার মাথার মধ্যে চৈতীর ভয়ভরা মুখটা ভেসে উঠল।
“হুম… চৈতী…” সে নিজেকে মনে মনে বলল। “কী যেন আছে এই মেয়ের মধ্যে?”
রাতুল দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চৈতীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। নরম আলোয় তার মুখটা যেন আরও মায়াবী লাগছিল। এত শান্ত, এত নিষ্পাপ… কিন্তু তার চোখের গভীরে যে আগুন লুকিয়ে ছিল, সেটা রাতুল ভুলতে পারছিল না।
সে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে চৈতীর মুখের কাছে ঝুঁকল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

“নেশা ধরানোর মতোই…” রাতুল নিজেই নিজের মনে বলল।
তার হাত সামান্য বাড়িয়ে চৈতীর চুল সরাতে গিয়ে দেখলো একটা তিল সে একটু ঝুঁকে তিলটাতে গভীর চুম্বন করলো।
রাতুলের ঠোঁট চৈতীর তিল ছুঁতেই মেয়েটার শরীর কেঁপে উঠল। ঘুমের ভান করা চৈতী চোখ শক্ত করে বন্ধ রেখেছিল, কিন্তু এই অপ্রত্যাশিত স্পর্শে তার নিঃশ্বাস গতি হারাল।

রাতুল মৃদু হাসল, তার ঠোঁটের কোণে এক ধরনের তৃপ্তির ছাপ ফুটে উঠল।
রাতুল ধীরে ধীরে চৈতীর পাশে শুয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। চৈতীর শরীর আরও কেঁপে উঠল। ঘুমন্ত চৈতীর ঠোঁটটা নিজের ঠোঁটের সাথে মিশিয়ে দিলো। বেশ কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে চৈতী কে ধরেই ঘুমের রাজ্যে চলে গেলো।

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ২