কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৩৮
মিসরাতুল রহমান চৈতী
সব বিপদ কাটিয়ে অবশেষে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছাল। রাতুলকে রুমের ভেতরে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। তার মুখ ফ্যাকাশে, নিঃশ্বাস ধীরস্থির, কিন্তু শরীরটা বেশ উত্তপ্ত। ডাক্তার ব্যাগ খুলে দ্রুত কিছু ওষুধ বের করে দিলেন।
“জ্বরটা বেশি, তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ডাক্তার বললেন।
আসিফ ক্লান্ত শরীরে চৈতীর পাশে সোফায় বসে পড়ল। চৈতীও যেন কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারল, সত্যিই তারা এখন নিরাপদ। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে, একরকম স্বস্তির অনুভূতি নিয়ে।
“সব ঠিক হয়ে যাবে, তাই তো?” আসিফের দিকে তাকিয়ে বলল চৈতী।
আসিফ মাথা ঝাঁকাল। “ইনশাআল্লাহ। তবে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। আমরা যতই নিরাপদ ভাবি, ওরা এখনো খুঁজছে।”
চৈতী চুপ হয়ে গেল। তার চোখ ঘরের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু মন পড়ে আছে অন্য কোথাও। রাতুলের দিকে তাকাল একবার। কপালের ওপর ভেজা কাপড় রাখা হয়েছে, গায়ে হালকা কম্বল। নিঃশ্বাস স্বাভাবিক মনে হলেও মুখের রেখাগুলো বলে দিচ্ছে, ভেতরে কোথাও একরকম যন্ত্রণা লুকিয়ে আছে।
“এত কাছ থেকে মৃত্যু দেখতে পারবো ভাবিনি,” চৈতী ফিসফিস করে বলল।
আসিফ এক মুহূর্ত চুপ করে থাকল, তারপর মৃদু স্বরে বলল, “মৃত্যু কাছাকাছি থাকলে জীবনকে নতুনভাবে বোঝা যায় । কিন্তু আমরা এখনো বেঁচে আছি, সেটাই বড় কথা।”
চৈতী কিছু বলল না। চোখ বন্ধ করে পেছনের সব ঘটনার কথা ভাবছিল। সত্যিই, কত বড় ঝড় সামলে এসেছে তারা!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হঠাৎ ডাক্তার ব্যাগ গুছিয়ে পাশে বসে রইলো।
আসিফ চৈতীর দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাবী একটু বিশ্রাম নেন অনেক ধকল গেছে আজ।”
চৈতী মাথা নাড়ল। “আমি ঠিক আছি। রাতুল যদি জেগে ওঠে, তখন থাকতে হবে।”
আসিফ আর কিছু বলল না। চুপচাপ একটা সিগারেট বের করে হাতে ঘুরাতে লাগল, কিন্তু ধরাল না। ঘরজুড়ে নীরবতা নেমে এল।
নিঃশব্দে বয়ে চলল রাতের বাতাস, কিন্তু যেন সেই নীরবতার ভেতরেও কিছু অজানা আশঙ্কা রয়ে গেল।
চৈতী সোফা থেকে উঠে রাতুলের কাছে গিয়ে বসলো শক্ত-পোক্ত দেহের মানুষটা আজ কিভাবে কাতর হয়ে শুয়ে আছে।
চারোদিকে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়ছে। ফজরের আজনা শুনা যাচ্ছে।
ডাক্তার একটা ব্যথার স্প্রে বের করে পা এ স্প্রে করে নিলো।
আসিফ ডাক্তারকে নিয়ে পাশের রুমে চলে গেলো।
চৈতী কাঁপা কাঁপা হাত বাড়িয়ে দিয়ে ছুঁয়ে দিলো রাতুলের কপাল। এখনো জ্বর টা আছে।
চৈতীর ঘাড়টা ব্যথায় টনটন করছে রাতুলের পাশে শুয়ে পড়লো চৈতী কখনো যে ঘুমিয়ে পড়লো বুঝতেও পারেনি।
সকালের তপ্ত রোদ জানালা গলে ঘরের ভেতর এসে পড়েছে। সেই উজ্জ্বল আলোতেই ঘুম ভেঙে গেল রাতুলের। মাথাটা ভার হয়ে আছে, যেন অসহ্য ব্যথায় চোখ-মুখ কুঁচকে উঠল সে। কিছুক্ষণ বোঝার চেষ্টা করল, কোথায় আছে। চারপাশটা ভালো করে দেখতেই চিনতে পারল—এটা ওরই গ্রামীন বাড়ি।
এই বাড়িটি রাতুল বহু যত্নে, নিভৃতে গড়ে তুলেছিল, একান্ত নিজের মতো করে। বাইরের কেউ জানত না—শুধুমাত্র আসিফ ছাড়া।
বুকের ভেতর পরিচিত উষ্ণ একটা শ্বাস টের পেয়ে ঘাড় কাত করল রাতুল। পাশে তাকাতেই চোখ আটকে গেল—চৈতী ওর বুকে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। নিঃশ্বাসের ভারী ওঠানামায় চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের পাশে এসে পড়েছে।
রাতুল নিঃশব্দে তাকিয়ে রইল। কতদিন পর এভাবে, এত কাছ থেকে চৈতীকে দেখছে সে? এই মুহূর্তটা যেন স্বপ্নের মতো মনে হলো। সব ঝড় পেরিয়ে, সমস্ত বিপদ ঠেলে এই জায়গায় এসে পৌঁছেছে তারা। এক মুহূর্তের জন্য সব কষ্ট, ভয়, আতঙ্ক ম্লান হয়ে গেল—শুধু থেকে গেল এক রকম প্রশান্তি, যেন সময়টা একটু ধীর হয়ে গেছে তাদের জন্য।
রাতুল গভীর শ্বাস নিল। হয়তো এতদিন পরে সত্যিই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় এসেছে।
হাতটা বাড়িয়ে চৈতীর এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিলো।
খুব শখ জাগলো চৈতীর কপালে তার তপ্ত ওষ্ঠখানা ছোঁয়ে ভালোবাসার স্পর্শ করতে নিজেকে সংযত করলো দীর্ঘ শ্বাঃস ফেলে চৈতীর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাইলো যেনো হাজ বছরে আমরণ তৃষ্ণনা মেটাচ্ছে।
আস্তে আস্তে ওঠার চেষ্টা করলো রাতুল অস্ফুটস্বরে ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো রাতুলের আর্তনাদ এর শব্দে চৈতী ধড়ফড়িয়ে উঠলো।
দেখলো রাতুল একা একা বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করছে চৈতী রাতুলের কাছে গিয়ে বললো এ কি আপনি একা একা কেন নামছেন আমাকে ডাকতে পাড়তেন চলুন আমি নিয়ে যাচ্ছি বলে চৈতী রাতুলের ভরটা কাঁধে নিয়ে নিজে ওয়াশরুমে দিয়ে আসলো।
রাতুল ফ্রেশ হয়ে ভিতর থেকে বললো–”চৈতী?”
জ্বী!বলুন
আলমারিতে দেখবে আমার জামা আর টাওয়েল রাখা আছে একটু নিয়ে আসো তো।
চৈতী আলমারি খুলে জামা আর টাওয়েল টা নিয়ে ওয়াশরুমের দরজার সামানে এসে দরজাটা নক করলো।
রাতুল বাঁকা হেসে দরজাটা খুলে চৈতীর হাতসহ্ টেনে ওয়াশরুমের ভিতরে নিয়ে এসে জামা আর টাওয়েল টা রেখে দিয়ে শাওয়ার টা অন করে দিলো ভিজে গেলো দুজন এক সাথে।
চৈতীর ভিজন্ত দেহটাকে দেখে রাতুলের মনে হচ্ছে এক শরবরের ফুটে উঠা কোন এক শ্বেতপদ্ম। রাতুল মোহনিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চৈতীর দিকে।
লজ্জায় আড়ষ্ট হচ্ছে চৈতী। যেন লুকাতে পাড়লেই বাঁচে।
রাতুল তার নেশালো কন্ঠে বললো,, ওহে রমনী যেইদিন তুমি আমার হয়ে যাবে দিন হয়ে যাবে রাত ভালোবাসার কথা বলবো আমরা সারা রাত।
চৈতী নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বললো আমি আসছি তারপর চলে যাওয়ার জন্য এগিয়ে যেতে নিলে রাতুল হাতটেনে সামনে দাঁড় করলো চৈতীকে তারপর বললো আর কত দিন আমাকে দূরে সড়িয়ে রাখবে চৈতী আমাকে বলতে পারো? আমার মনে যে প্রচন্ড দহন হয় এই দহন টা কেন দেখো না আমি আর পারছিনা চৈতী আমি তো মানুষ আমার কষ্ট হয় সেই কষ্টটা কেনো দেখো না?
চৈতী কেঁদে দিয়ে বললো,, আমি ট্রায় করছি বিশ্বাস করুন কিন্তু আমি ছোঁয়ার আগে শত নারী যে আপনাকে ছুঁয়ে দিয়েছে আমি কি করে মনে নিবো বলতে পারেন? আমি যখনই আপনাকে ছুঁয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছি ততবার আমার মনটা বলে উঠেছে,, আপনার শরীরে মিশে আছে অন্যনারীর স্পর্শ ঘৃণা লাগে আমার তখন।
কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৩৭
রাতুল চৈতীকে একটানে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,, আমরা চোখে যেইটা দেখি,, কানে যেইটা শুনি সেইটা ঠিক না চৈতী তার আড়ালেও সত্যি লুকিয়ে থাকে আজ আমি তোমাকে সেই সত্যিটা বলবো,, যাও ভিতরে যাও আমার একটা শার্ট পড়ে নিয়ো আমি আসছি। আজ সত্যিটা জানার পর তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবে তাইই মাথা পেতে নিবো। যাও আসছি।
চৈতী চলে গেলো চৈতীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাঃস ফেলেলো।
রাতুল কি এমন সত্যি বলবে যাতে ঘুরে যাবে তাদের সম্পর্কের মোড় জানতে হলে গল্পের সাথে থাকুন।