কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৪২

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৪২
মিসরাতুল রহমান চৈতী

সকালে চৈতীর ঘুম ভাঙ্গে আর ঘুম ভাঙ্গতেই শরীরে এক তীব্র যন্ত্রনা বোধ করে তারপর ধীরেধীরে ওঠে বসতেই তলপেটে চিন্ চিন্ করে ব্যথা হচ্ছে। ফ্লোরে তাকিয়ে দেখলো তার জামা কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মাথাটাও অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ হচ্ছে।
চৈতী দুহাতে মাথাটা চেপে ধরলো ঠিক সেই সময় রাতুল ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে এসে দেখে চৈতীর এই রকম অবস্থা।
সে দ্রুত এসে চৈতীকে জড়িয়ে ধরে বলে চৈতী কি হয়েছে বলো আমাকে?
চৈতী ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।

হুঁশ কি হয়েছে কাঁদছো কেনো পেটে কি বেশি ব্যথা করছে না কি মাথা?
আমি কিছু মনে করতে পারচ্ছি না কি করেছি কিভাবে কি হলো কিছু না?
ইট’স অলরাইট চৈতী কি হয়েছে তাতে সমস্যা নেই আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি তোমার জুসে কেউ একজন ড্রিংক মিশিয়ে দিয়েছিলো – তাই কিছু মনে নেই।
কিন্তু আ.. চৈতী কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিলে রাতুল চৈতীর মুখে আঙ্গুল দিয়ে বললো হুঁশ আর একটা কথা নয় কাল যা হয়েছে সেইটা ভুলে যাও চৈতী। তোমার রেস্ট এর দরকার রেস্ট নেও কাল যা হয়েছে তার জন্য না তুমি দায়ী না আমি দায়ী দুইজন কেবল পরিস্থিতি শিকার আর কিছুনা চলো এখন ফ্রেশ হয়ে নিবে নাস্তা করে কমপ্লিট বেড রেস্ট নিবে।
রাতুল চৈতীকে কোলে তুলে নিতে গেলো আয়নায় রাতুলে পিঠটা চোখে পড়ে পিঠে নখের চিহ্ন। চৈতী রাতুলকে বললো,, আপনার পিঠ।
রাতুল ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো,, সুইটহার্ট সব তোমার দেওয়া লজ্জায় আড়ষ্ট হলো চৈতী। রাতুল চৈতীকে বললো– এখন লজ্জা পাচ্ছো কেনো কাল তো আমাকে গিলে খেতে লজ্জা পাওনি।
ছিহ্!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাতুল চৈতীকে ওয়াশরুমের ভিতরে নিয়ে দাঁড় করিয়ে বললো তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও আমি তোমার জামা কাপড় নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
চৈতী দরজা লক করে দিলো। অনেকক্ষণ পর চৈতী দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো আমার ড্রেস দিন রাতুল ড্রেস দিলো তারপর ড্রেসটা পড়ে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই রাতুল চৈতীকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়। নিচ থেকে একজন সার্ভমেন্ট এসে খাবার দিয়ে গেলো রাতুল নিজেও খাচ্ছে চৈতীকেও খাওয়াচ্ছে।
খাওয়া শেষ হতে সার্ভমেন্ট খাবের ট্রেটা নিয়ে গেলো রাতুল চৈতীকে একটা নাপা খাইয়ে দিয়ে বললো আমি যাচ্ছি আসতে দেরি হবে।
কোথায় যাবেন?
ফিলিস্তিন এর জন্য একটা প্রেস কনফারেন্স ডেকেছি। দেখি বাংলাদেশ থেকে কি করা যায়? আসছি আল্লাহ্ হাফেজ বলে চলে গেলো রাতুল।

সারাদেশের আলোচিত সংবাদ সম্মেলন।
ঢাকার একটি অভিজাত কনফারেন্স রুম, চারপাশে ঝকঝকে আলো, চ্যানেলের মাইক্রোফোন গুলোর ঠাসাঠাসি টেবিল জুড়ে। ক্যামেরার ফ্ল্যাশ বারবার ঝলসে উঠছে। সামনে বসে রাতুল—আজ তার চোখে সেই আগুন, যেটা গোটা জাতিকে জাগিয়ে তুলতে পারে।
পাশে বসে আসিফ। চোখে বিস্ময়—এই রাতুলকে সে কখনো দেখেনি।
রাতুল ধীরে উঠে দাঁড়ায়।
তার কণ্ঠ ভারী, চোখ দুটো টসটস করছে জলে।
> “আজকের এই মঞ্চ থেকে আমি কোনো রাজনীতি করবো না। আমি কোনো দানবীর সাজবো না। আজ আমি এখানে একজন মানুষ হয়ে দাঁড়িয়েছি। একজন মুসলিম হয়ে নয়, একজন ফিলিস্তিনি হয়ে নয়—একজন মানুষ হয়ে!”
ঘর নিঃশব্দ।

> “গতকাল রাত ৩টা ৪৭ মিনিটে গাজার এক মা—যার নামও আমরা জানি না—তিনটা শিশুকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রেখেছিলেন। তার আশেপাশে চারদিক ধ্বংসস্তূপ, আগুন, আর কান্না। হঠাৎ একটা মিসাইল এসে সেই মায়ের বুকটাই উড়িয়ে দিলো। তিনটা শিশু ছিটকে পড়লো দূরে। কী ছিলো তাদের অপরাধ? শুধু এই যে তারা মুসলিম? না, শুধু এই যে তারা বেঁচে ছিলো ফিলিস্তিনে?”
রাতুল থেমে চোখ মুছে নেয়।
> “আজ সেই মেয়েটি—সেই মা—নেই। শুধু আছে শিশুগুলোর আতঙ্কিত চোখ। আমি যখন সেই ছবি দেখছিলাম, আমার নিজের স্ত্রী চৈতীর মুখ মনে পড়ছিল। যদি ও থাকতো সেইখানে? আমি কি বাঁচাতে পারতাম? আমি কি বলতাম—ওর জীবন কম দামী?”
রাতুল কণ্ঠ একটু চড়িয়ে বললো—

> “এই সভ্যতা কী এতটাই পঁচে গেছে যে রক্ত মুছে ফেলতে এখন জাতিসংঘের পাস লাগবে?”
সবচেয়ে পাথর হৃদয় সাংবাদিকও তখন চোখ নিচু করে ফেলেছে।
> “আমি জেনেছি, আজ গাজার হসপিটালে ডাক্তার নেই। যাদের বাঁচিয়ে রাখা উচিত ছিলো, তারা নিজেরাই লাশ। আজ কবর খুঁড়ছে শিশুরা, নিজেদের মা-বাবার জন্য। আজ দুধ খাওয়ার বয়সে তারা পেটের ক্ষুধায় কংক্রিট চুষে খাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করতে চাই—মানবতা কোথায়? মিডিয়ার ক্যামেরা কই? পৃথিবীর বিবেক কই?”
একজন পুরুষ সাংবাদিক মাথা নিচু করে চোখ মুছলো।
> “আপনাদের কাছে অনুরোধ—এই সংবাদ কভার করবেন না ‘ইস্যু’ হিসেবে, কভার করুন ‘জীবন’ হিসেবে। একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন, আপনাদের নিজের বোনটাকে কবর দেওয়া হচ্ছে কবর না খুঁড়েই—কারণ সেই এলাকাতে আর মাটি অবশিষ্ট নেই। একবার ভাবুন, হাসপাতালের বেডে পড়ে থাকা ছোট্ট একটা শিশু বলছে—‘আমাকে বাঁচালে আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো, আমার মতো আর কাউকে যেন মরতে না হয়।’ কিন্তু তাকে কেউ বাঁচাতে পারলো না।”

রাতুল থামলো। তার কণ্ঠ স্তব্ধ। চোখ দুটি লাল হয়ে উঠেছে।
> “আজ বাংলাদেশ কিছু করতে না পারলেও—চুপ তো থাকতে পারি না। আমি এই মুহূর্তে ঘোষণা দিচ্ছি—আমার ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে একটি হেলথ রিলিফ টিম প্রস্তুত হচ্ছে, যারা সীমান্ত দিয়ে গাজাতে ঢোকার চেষ্টা করবে। সঙ্গে থাকবে ওষুধ, খাবার, আর মানবতা।”
ঘরজুড়ে হঠাৎ করতালির রোল উঠলো, কিন্তু সেটা যেন শোকের ভিতর এক প্রতিবাদের শব্দ। অনেকে চোখ মুছছে, কেউ কেউ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আসিফ চুপচাপ বসে, কিন্তু তার চোখ ভেজা।
> “এই প্রেস কনফারেন্স নয়—এটা আমার প্রাণভিক্ষা। এই সভ্যতার কাছে, এই দেশের কাছে—ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য একটু কান্না ধার দিন, একটু প্রতিবাদ ধার দিন। ওরা আর পারছে না। এবার আমাদের পারা উচিৎ।”
রাতুল ধীরে বসে পড়ে। আর কেউ কোনো প্রশ্ন করলো না। কোনো রিপোর্টার আর মাইক তুললো না।
আজ শব্দ ছিলো না—শুধু কান্না ছিলো।
রাতুল একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো –
“উই আর দ্য পিপল অফ বাংলাদেশ। উই আর নট জাস্ট আ ক্রাউড—উই আর আ স্টর্ম হোয়েন ইট’স নিডেড।
উই আর নট আফ্রেইড অফ ডেথ। উই হ্যাভ সীণ টু মাচ ব্লাড টু বি স্কেয়ার্ড অফ ইট নাও।
সো ডোন্ট ট্রাই টু সাইলেন্স আস উইথ ফিয়ার। ইট ওয়ান্ট ওয়ার্ক।”

অর্থ:
“আমরা বাংলাদেশে বাস করা মানুষ। আমরা শুধু এক দল জনতা নই—আমরা প্রয়োজনে ঝড়।
আমরা মৃত্যুর ভয় পাই না। আমরা অনেক রক্ত দেখেছি, তাই এখন মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
তাহলে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করো না। এটা কাজ করবে না।”
“ইফ নিডেড, উই উইল ব্লিড ফর প্যালেস্টাইন।
উই উইল ক্যারি দেয়ার পেইন অন আওয়ার শোল্ডার্স, অ্যান্ড দেয়ার ভয়েস ইন আওয়ার থ্রোট।
আওয়ার হার্টস বিট উইথ গাজা, উইথ এভরি চাইল্ড হু ক্রাইস, উইথ এভরি মাদার হু ফলস।”
অর্থ:
“প্রয়োজনে, আমরা ফিলিস্তিনের জন্য রক্ত দেবো।

আমরা তাদের কষ্ট আমাদের কাঁধে তুলে নেবো, এবং তাদের কণ্ঠ আমাদের গলায় ধারণ করবো।
আমাদের হৃদয় গাজার সঙ্গে কাঁপে, প্রতিটি শিশুর কান্নার সঙ্গে, প্রতিটি মায়ের দুঃখের সঙ্গে।”
“আই অ্যাম আর্জিং—নো, আই অ্যাম ডিম্যান্ডিং—এভরি মুসলিম কান্ট্রি:
ওয়েক আপ! ইউনাইট! টেক ইমিডিয়েট অ্যাকশন!
দিস ইজ নো লংগার জাস্ট অ্যাবাউট পলিটিক্স। দিস ইজ অ্যাবাউট হিউম্যানিটি।
ইফ উই ক্যান্ট স্ট্যান্ড আপ নাও, দেয়েন হোয়েন উইল উই?”
অর্থ:
“আমি আহ্বান করছি—না, আমি দাবি করছি—প্রতিটি মুসলিম দেশকে:
জাগো! এক হয়ে যাও! দ্রুত পদক্ষেপ নাও!
এটা আর শুধু রাজনীতি নয়। এটা মানবতার বিষয়।
যদি আমরা এখন দাঁড়িয়ে না পারি, তাহলে কখন পারব?”
“রিমেম্বার—হিস্ট্রি নেভার ফর্গিভস সাইলেন্স।
এন্ড উই রিফিউজ টু বি দ্য সাইলেন্ট ওয়ান্স।”
অর্থ:

“মনে রেখো—ইতিহাস কখনো নীরবতা মেনে নেয় না।
এবং আমরা নীরব থাকতে অস্বীকার করি।”
রাতুল প্রেস কনফারেন্স শেষ করে আসিফকে নিয়ে বের হয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো।
আসিফ বললো–”ভাই কাল ভাবীকে কে ড্রিংক খাওয়াতে পারে? ”
খু্ব সিম্পল নাহিদ হাসান। ফাঁদটা ছিলো আমার জন্য কিন্তু ভুলবশত সেইটা চৈতীর দিকে চলে যায় শালা খানকীর বাচ্চারে আমি পরে দেখে নিবো। আসিফ নাহিদ হাসানের বাড়ির সামনে লোক লাগাবি আর আর বাড়ির ভিতরে ও লোক লাগাবি যাতে ২৪ ঘন্টার খবর আমি পাই।

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৪১

ঠিক আছে ভাই আমি করে দিবো।
হুম গুড এখন গাড়িটা ঠিক ভাবে চালিয়ে নিয়ে যা পতিতালয়ে দেখতে হবে ওদের কাজ কত দূর এগিয়েছে?
আসিফ গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলো।

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৪৩