খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ২২
আনিকা আয়াত
“ নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা আপু। খুব সুখী হোন। ”
কণ্ঠে উচ্ছ্বাস ঢেলে গদগদ সুরে বলল চৈতী। রিয়াদ স্যারের সঙ্গে তৃধার বিয়ে এই খবর-ই এখন ভার্সিটি জুড়ে ব্রেকিং নিউজ। এমন কোনো স্টুডেন্ট নেই যে যানে না। স্যার থেকে শুরু করে স্টুডেন্ট সবাই। ওরাও শুনেছে তাদের খবর। শুনার পর থেকেই চৈতীর হৃদয়ে কেনো জানি খুশির দোলা দেয়। কত ভাগ্যবতী হলে, এরকম অসাধারণ একজন ব্যক্তিত্বের মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পায়। অবশ্য সৌন্দর্য,টাকা কোনো কিছুতেই কমতি নেই তৃধার। দুদিন পর বিয়ে সেই নিয়েই প্রত্যেকের চোখে- মুখে উত্তেজনা। বিয়ের পর সংসার কতটা সুইট হবে। সকলের ক্রাশ রিয়াদ স্যার বিয়ের পিরিতে বসছে এটাও অনেক রমনী মেনে নিতে পাচ্ছে না। কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। প্রত্যেক স্যার-ম্যামও উপস্থিত থাকবেন সেখানে। অনেক বড়সড় আয়োজন যে। ভার্সিটির অধ্যাপক বলে কথা। তার মধ্যে সুন্দরী নিজের ছাত্রী কে বিয়ে করছেন। সকলের মধ্যে চাপা কৌতুহল তো থাকবেই। তৃধার চোখ-মুখে খুশির ঝলক দেখা গেলো।
“ থ্যাংক ইউ চৈতী। তোমরা ভীষণ ভালো মেয়ে।”
“ আপু এখন আমরা যাই।”
অনিচ্ছায় মিনমিনে কণ্ঠে বলল স্নিগ্ধা।
অর্পণর দৃষ্টি শান্ত অথচ তীক্ষ্ণ! সে কিছুটা দূরে গিয়ে সকলের জন্য টিকেট কিনছে। এমনকি ওদের জন্যও। তৃধা পথ আটকে বলল,
“ নাহ! কিসের চলে যাওয়া। দেখা যখন হয়েছে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। অবশ্যই আমার কথা শুনতে তোমরা বাধ্য। তোমাদের বাকি বন্ধু কই?”
অর্পণ বাদে বাকিরা ততক্ষনে হইচই বাঁধিয়ে নাগরদোলায় উঠে পড়েছে। শিহাব একপাশে বসে পৃথার হাত ধরে টেনে উঠালো নিজের পাশে। হুড়মুড়িয়ে সমুদ্র ৩২ টা দাঁত কেলিয়ে শিহাবের কোলে বসে পড়ে। ছেলেটা রেগে শক্ত থাবায় নামিয়ে দেয়। বেচারা মুখ ফুলিয়ে হামিমের সঙ্গে বসলো। চৈতী একপলক ওদিক তাকিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ জিনিয়া সামনেই। শ্রাবণও হয়তো এসে পড়েছে।”
স্নিগ্ধা তাড়া দিতেই ধমকে উঠে তৃধা,
“ বলিনি গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে? ”
“ কি?”
বিস্মিত নয়নে বলল স্নিগ্ধা।
“ কাল বাদেই আমার গায়ে হলুদ। তোমাদের দাওয়াত রইলো বড় আপুর পক্ষ হতে। ভদ্র মেয়ের মতো তোমরা সবাই চলে আসবে ওকে? খবরদার তোমাদের মুখে “ না ”শব্দ শুনতেও চাই না। কথা একটাই যাবে মানে যাবে। বুঝলা? আমাকে ছুঁয়ে বলো বিয়েতে আসবে। কাকে পাঠাবো বলো। ”
তৃধা নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু ওরা দুজনেই কাচুমাচু করছে। কি এক জ্বালা হলো! এভাবে দাওয়াত দিলেই যাওয়া যায়? অসম্ভব! এটা কখনোই হয়না। তাছাড়া আত্মীয় অথবা বন্ধুও তো নয়। কোন সম্পর্কে যাবে? ছিহ ছিহ! ভাবতেই লজ্জায় আড়ষ্ট হচ্ছে। বড়লোকের মেয়ের বিয়ে নিশ্চয়ই অনেক মানুষ থাকবে। অস্বস্তি তে জমে যাচ্ছে চৈতী। না না এভাবে যাওয়া যায় না। ওদের চুপসে যাওয়া মুখ দেখে তৃধা গাল ফুলালো। বলল,
“ শুনো ভালোই ভালোই বলছি ইনভাইট গ্রহণ করো। নইলে, বিয়ে টিয়ে ক্যান্সেল। করবো না বিয়ে।”
সমুদ্র বসা থেকেই চিৎকার করে,
“ তোমরা রাজি হইতে পারো না? এত ভাবার কি আছে? ওর স্বাদের বিয়া নষ্ট কইরো না। কত কাঠখড় পেরিয়ে, সাধনার স্বপ্ন পূরণ হতে যাইতাছে। ”
স্নিগ্ধা হাত কচলে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলল,
“ আপু এভাবে হয়না। বিষয়টা খারাপ দেখায়। আপনারাই এনজয় করুন। ”
তৃধা খপ করে চৈতীর হাত ধরলো। জোরাজোরি করে বলল,
“ বলো না চৈতী। আসবে। তোমার বড় বোনের বিয়ে হলে আসতে না?”
চৈতী চুপ। ভালো লাগছে না। কি একটা উটকো ঝামেলায় ফেঁসে গেলো। বিরক্তে মাথা নত করে কিছু বলবে তার আগেই তৃধা মুখ কালো করে বলল,
“ আচ্ছা তোমাদের মর্জি। স্যারকে বরং না করে দেই। আমার কথার গুরুত্ব-ই নেই। বিয়ে হয়ে কি হবে?”
কথাটি শুনেই আঁতকে উঠল দুজনে। তৃধা কল দিচ্ছে সত্যি সত্যি। রিং হতেই স্নিগ্ধা ধরে ফেললো সেই হাত। চৈতীর দিকে মন খারাপ নজরে চেয়ে বলল,
“ যাবো আপু। স্যার কে জানানোর কি প্রয়োজন। কিন্তু থাকতে পারবো না।”
খুশিতে কল কেটে দুপাশ থেকে ওদের জরিয়ে ধরলো। চৈতীর মুখে অন্ধকার সবই যেনো নজরে পরলো সামনের ব্যক্তির। তৃধা বলল,
“ ঠিক আছে। অর্পণ বাদে সবাই তাহলে চলে আসিস। ও তো যাবে না।”
সঙ্গে সঙ্গে অল্প কদমে হেঁটে ওদের নিকট আসলো। খেঁকিয়ে উঠে বলল,
“ কে বললো যাবো না? অবশ্যই যাবো। কালকেই যাবো। ”
আকস্মিক ঘটনায় সকলে বিস্মিত হলো। গোল গোল চোখে তাকিয়ে বলল,
“ তুই না সারাক্ষণ বলিস, যাবো না! যাবো না! হুট করে কি হলো?”
অর্পণ গায়ের শার্ট টেনে কাঠকাঠ গলায় বলল,
“ আমার মন চাইছে তাই যাবো। এনি প্রবলেম? ”
চৈতীর ভেতরে ভেতরে অস্বস্তি। মেয়েটা এখানে আর দাঁড়াতে পাচ্ছে না। যেতেও পাচ্ছে না। স্নিগ্ধা বিদায় জানাতেই অর্পণ রুক্ষ গলায় ডাকলো,
“ অনেক রংঢং করছস এইবার উঠ। ”
তৃধা উঠলো তবে দুজনকে শক্ত করে ধরে। বেচারী গুলো কয়েকবার না করলেও কাজ হলো না। অবশেষে স্নিগ্ধা উঠলেও চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো চৈতী। কারণ, জায়গা একটাই আছে, যেখানে ডোন্ট কেয়ার ভঙ্গিতে অর্পণ বসে পড়লো। মেয়েটির জন্য বেশ জায়গা ফাঁকা রেখে চেপে বসলো। জড়তায় চৈতী ঠাই দাঁড়িয়ে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে,
“ আপু তোমরা যাও। আমি এখানেই থাকি। প্লিজ!”
“ না তুই আয়।”
তৃধার আগেই স্নিগ্ধা চিল্লিয়ে উঠে। শিহাব হয়তো ব্যাপারটা ধরতে পারলো। তার কথার আগেই তৃধা টেনে বসালো অর্পণের পাশে। মেয়েটা আকস্মিক ঘটনায় হকচকিয়ে উঠে। আরেকটু জোড়াজুড়ি হলে, অর্পণের কোলেই বসে পড়তো সে। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে মাঝখানে ক্ষীণ জায়গা রেখে কাঠ হয়ে রয়। নাগরদোলা চলতে শুরু করলে সকলের মুখ থেকে তীব্র আওয়াজে চিৎকার ভেসে উঠে। রাইডে চড়ার এই একটা ঝামেলা, ধুরু ধুরু বুকে ভয় জেঁকে ধরলেও ব্যাপাক আনন্দ পাওয়া যায়। নাগরদোলা যখন উপর থেকে নামতে শুরু করে তখন-ই সকলের জান যায় যায় অবস্থা। অর্পণের মাঝখানে আর খালি জায়গা নেই। দুজনে চলে এসেছে একদম কাছাকাছি।
চৈতী চোখ বন্ধ করে চিল্লিয়ে অতিমাত্রা ভয়ে অর্পণের উরু শক্ত করে চেপে ধরলো। বেচারা চমকে উঠে। সেই হাতের দিকে তাকিয়ে কি হলো কে জানে? নিজের শক্ত খসখসে ডান হাত বাড়িয়ে আলগোছে ধরলো মেয়েটির ডান হাত। চলন্ত নাগরদোলায় মেয়েটির মাথা ওর বুকের খুব নিকটে। ভয়ে অতশত খেয়াল নেই চৈতীর। আগের রাউন্ডে জিনিয়াকে জরিয়ে ধরে দারুণ এনজয় করছে। এবারও পাশে কে মনেই নেই তার। চিল্লিয়ে একদম গায়ের সঙ্গে গা মিলিয়ে অর্পণের কলার খামচে ধরে বুকে মুখ লুকালো। আকস্মিক ঘটনায় শিউরে ওঠে ছেলেটা। চোখে একরাশ বিস্ময় নিয়ে মাথা নুইয়ে নিজের বুকে লেপ্টে থাকা রমনীকে দেখলো। ঘন কালো চুল থেকে এক অদ্ভুত ঘোরলাগা সুঘ্রাণ নাকে ঠেকতেই অর্পণ হতভম্ব হয়ে যায়। আনাচন মন না চাইতেও,অদৃশ্য মায়ার জালে ফেঁসে ধীরে ধীরে মাথা ঝুঁকে মেয়েটার চুলে নাক ঠেকালো। আঁখি বুঁজে এক লম্বা নিশ্বাসে তার দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেলো সেই মা/তা/ল করা ঘ্রাণ। ছেলেটি দিক হারায়। সেভাবেই চুলে মুখ ডুবিয়ে, চোখ বুঁজেই বাম হাতে চৈতীকে আলতো করে জরিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“ ভয় নেই। পাশে আছি।”
কণ্ঠস্বর চৈতীর কর্নে পৌঁছাতেই এতক্ষণের সমস্ত ভয় এক ঝটকায় উধাও হয়ে গেলো। চোখ দ্বয় খুলে নিজের অবস্থান বুঝতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তৎক্ষনাৎ অর্পণের গায়ে দেওয়া ম্যান পারফিউমের তীব্র ঘ্রাণ নাসিকায় পৌঁছে ঘোর লেগে যায়। মেয়েটি দেরী করলো না। মাথা সটান করে, ছেলেটার কলার ছেড়ে ঘাড় ঘুরায়। অর্পণের কপাল কুঁচকানো দেখে রাগে গা জ্বলছে। ঝট করে এক ধাক্কায় দূরে সরালো অর্পণকে। মেয়েটার আকস্মিক পরিবর্তন দেখে ভুরু আরোও গভীর ভাবে কুঁচকে গেলো। এরপর চৈতীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলতেই বুঝতে পারলো, ভেতরে ভেতরে লজ্জায় পেয়েছে। হয়তো, অন্যকেউ ভেবে কাছে এসেছিল! কিন্তু কে সে? শ্রাবণ? ভাবতেই চোখ-মুখ শক্ত হলো তার।
চৈতী নিজেকে গুটিয়ে আশপাশ চো/রা চোখে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। যাক কেউ এদিকে তাকিয়ে নেই। সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু ভেতরে লজ্জায়, জড়তায় মুরছা ধরলো। ছি! কিভাবে পারলো ওসব করতে? আর এই বদ ছেলেও বাঁধা দিলো না। দিবে কিভাবে? পেটে যে, কুবুদ্ধি। মেয়েটা একদম কর্ণারে গিয়ে শক্ত করে সিট চেপে দাঁতে দাঁত শক্ত করলো। দোয়া করল এই মুহুর্তে থেমে যাক। কিন্তু শয়-তান অর্পণ যে, পাক্কা দুই রাউন্ড সমান ভাড়া করেছে। সবই বন্ধুদের সায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেই ভাবনা থেকে হুট করে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটবে তা কে জানতো? মেয়েটাকে লজ্জায় আড়ষ্ট হতে দেখে অর্পণ বাঁকা হেঁসে বেহায়া নজরে তাকিয়েই রইলো। একটু আগের দৃশ্য মনে করতেই হুট করে অনুভব করলো তার শান্তি লাগছে। প্রশান্তির ঢেউ খেলে যাচ্ছে প্রতিটি লোমকূপে।
গটগট শব্দ তুলে সিলিং ফ্যান চলছে। আবছা অন্ধকার রুমে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে মেয়েটি। শীতের সকালে ৮ টা বাজলেও মনে হয়, ভোর ৫ টা। মাত্রারূপে হাড়কাঁপানো শীত হলেও একদম লো স্পিডে ফ্যান চলছে। স্নিগ্ধা নড়েচড়ে গায়ের কম্বল মুড়ি দিয়ে আবারও ঘুমিয়ে গেলো। বাইরের রুম থেকে টুংটাং ধ্বনি কানে বাজছে। হয়তো, আয়েশা জামান সকালের নাস্তা বানানোর কাছে ব্যস্ত। সকালটা ওর মতোই শান্ত! স্নিগ্ধা। মৃদুমন্দ হাওয়ায় শরীর শিরশির করে উঠে। অর্ণব যাওয়ার পনেরো দিন পেরিয়ে গেছে। অথচ নেই কোনো আপডেট। মিষ্টিকে তৃষ্ণার কাছে দুদিন পর পর পাঠায় খবর নিতে। কিন্তু ফলাফল শূন্য! অর্ণব এক ঝামেলার মধ্যে আছে।
যোগাযোগ করার টাইম পাচ্ছে না। সিলেট ফিরার পর, শুধু একবার নাকি কল করেছিল, তাও দু মিনিটের জন্য। হতাশায় স্নিগ্ধা আর ঘাটে নি। চুপচাপ শান্ত হয়ে আকুল হৃদয়ে অপেক্ষা করছে। সেই হাঁসি, মোটা ফ্রেমের চশমার আড়ালে গভীর শীতল দুটি আঁখি। গায়ের শক্তপোক্ত গড়ন। আর্মিতে ট্রেনিং দেওয়ার ফলে, অর্পণের থেকে ও অনেক সতেজ। পেশীবহুল শরীরের দিকে নজর দিলেই আড়ষ্ট হয় মেয়েটি। ওই বুকের নিচে পড়লেই মেয়েটি কপোকাত! নিজের ভাবনায় নিজেই লজ্জায় লাল হয়। প্রতিনিয়ত পরিশ্রম এবং ব্যয়ামে অসাধারণ দেহ বানিয়েছে। একদম টগবগে যুবক। যার দেহে এখন র/ক্ত গরম। মানুষটা কেমন আছে এটা যদি একবার জানতে পারতো, তবে শান্তি পেতো। অর্পণকেও বলা যায়, কেমন তিরিক্ষি মেজাজ দেখায়। যেনো, দা কুমড়ো সম্পর্ক। অদ্ভুত এক মানুষ।
আয়েশা জামান নাস্তা রেডি করে মইনুল হোসেন এবং মিষ্টিকে দিলেন। আজ বুধবার। কালকেই গায়ে হলুদ তৃধার। বাসায় এসে বাবা-মাকে জানিয়েছে। আয়েশা জামান নাকচ করে দেয়। মেয়ের মুখে এসব শুনে রাগে রি রি করেন। ভার্সিটি গিয়ে তবে পাখা গজিয়েছে? আগে বন্ধু এখন আবার বড় আপু? বিয়েতে দাওয়াত দেওয়ার মতো সম্পর্কও গড়ে উঠেছে। মেয়েকে কড়া গলায় কথা শুনিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। স্নিগ্ধা আর বলেনি। কারণ, ওর ইচ্ছে নেই। জিনিয়া গাইগুই করে রাজি হলেও চৈতী কাঠকাঠ গলায় বলেছে, যেতে পারবে না। ওসবে আনন্দ – উল্লাস তার জন্য নয়। ঢাকা এসেছে পড়াশোনার জন্য। এর ব্যতীত কিছুই নয়। মাকে বুঝিয়ে স্নিগ্ধা পড়তে বসে। এটাও বলে,
“ শহরের বাজে কারো সঙ্গে আমি জড়াই নি। তোমার মেয়েকে তুমি বিশ্বাস কর না? ভরসা করো না? মনে রেখো, স্নিগ্ধা কখনও তোমাদের মুখ কালো করবে না! গর্বের সঙ্গে বাঁচতে পারবে। আমার জন্য ভিন্ন শহরে ট্রান্সফার হয়েছে আব্বু। এমন কিছু করবো না, যাতে আব্বু কষ্ট পায়। একটু তো বিশ্বাস কর। সেই ছোট থেকে শুধু সন্দেহ আর সন্দেহ। আমি ক্লান্ত আম্মু। এবার একটু স্বাধীন ভাবে চলতে দাও। আমি বড় হয়েছি। ”
আয়েশা জামান কটমট করে তাকায়।
“ খুব বড় হয়েছিস তাই না? তোর ভালো চাই বলেই এত বড় বড় কথা শুনালি? আজকাল কত মেয়ের লাইফ শেষ হচ্ছে ধারণা আছে? শুধু মাত্র বখাটে ছেলের পাল্লায় পড়ে।
আর এখানে তো অভাব নেই বাজে ছেলের। তোর জন্য কত টেনশন হয় জানিস? বুঝবি না আমার কষ্ট। শুধু সন্দেহ দেখলি! ”
মইনুল হোসেন তার মেয়ে স্ত্রীকে ঠান্ডা করতে করতেই রাত পেরিয়ে গেছে। ভোর রাতের দিকে অবশ্য আয়েশা জামান শান্ত হয়।
মিষ্টি খাওয়া শেষ করে স্কুলের জন্য রেডি হয়ে বোনের দরজায় করাঘাত করে,
“ আপু! উঠবি না? দরজা খুল। আমার ব্যাগ তোর রুমে।”
প্রচন্ড গতিতে লাগাতার ধাক্কায় স্নিগ্ধা বিরক্তে উঠে বসলো। বালিশের পাশ থেকে ফোন বের করে দেখলো, সকাল সাড়ে ৮ টা। ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে দাঁতে দাঁত শক্ত করে,
“ সকাল সকাল চিল্লাচিল্লি করছিস কেনো? এ বাসায় কি শান্তির মা ম/রে গেছে?”
“ করলার জুস! দরজা খুলবি নাকি ভাঙবো।”
“ ভাং। ”
বলেই গায়ে হুডি জড়িয়ে হেলেদুলে পা বাড়ালো দরজার নিকট। ক্যাচ করল খুলে গর্জে উঠে,
“ এইযে হাত দেখেছিস? থাপড়িয়ে কান গরম করে দেবো। আমার রুমে কেনো ব্যাগ রাখলি?”
মিষ্টি ভেংচি কাটলো। ব্যস্তপায়ে রুমে ঢুকে ব্যাগ গুছিয়ে নেয়। এরপর মইনুল হোসেনের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লো স্কুলে। আয়েশা জামান শব্দ করে জিনিসপত্র রাখছে। স্নিগ্ধা ফ্রেশ হয়ে মুখে প্রসাধনী মেখে লম্বা চুলগুলো বিনুনি করে নেয়। টেবিল থেকে হাত ঘড়ি পড়লো। কাঁধে ট্যুট ব্যাগ ঝুলিয়ে ঠোঁটে নোড লিপস্টিক দিয়েই বেরিয়ে পড়ল। টেবিলে বসা আয়েশা জামান বলল,
“ নাস্তা করে যাও। ”
স্নিগ্ধা ব্যস্ত ভঙ্গিতে পায়ের জুতো পড়ে বলল,
“ আম্মু! খেতে ইচ্ছে করছে না।”
“ আসো খাইয়ে দিচ্ছি। ”
“ উহু আম্মু। ”
আয়েশা জামান চোখ গরম করে তাকাল। স্নিগ্ধা না চাইতেও মুখ ফুলিয়ে এগিয়ে এসে বসলো। মায়ের হাতের রুটি এবং সবজি খেয়ে চটপট উঠে পড়ে বলল,
“ হয়েছে! এবার তুমি খাও।”
বলেই দৌঁড়ে বেরিয়ে যায়।
ক্যান্টনমেন্ট থেকে অল্প দূরে একটি আর্মি জীপ এসে থামলো। সেখান থেকে লাফিয়ে চারজন টগবগে সাহসী, তেজী যুবক নেমে আসে। গায়ের ইউনিফর্মে বুকের মাঝে নেমপ্লেটে লেখা “ অর্ণব শেখ।” কোমরে ঝুলছে গু/লিযুক্ত পি/স্তল। মাথার ক্যাপটা খুলে লম্বা শ্বাস নিলো সে। তার দুপাশে লেফটেন্যান্ট সৌরভ, দিহান এবং সিফাত। গত কয়েকদিন ধরে মিশনে থাকায় এক বিন্দুও সময় পায়নি। এ বছর শেষেই চারজনের প্রমোশন হওয়ার কথা। লেফটেন্যান্ট থেকে ক্যাপ্টেন। অর্ণব ক্যাপটা হাতে নিয়ে শক্ত মুখে গেইটের ভেতর প্রবেশ করলো। তৎক্ষনাৎ পেছন থেকে সৌরভ বলল,
“ অর্ণব! সিফাত তো বিয়ে করেই নিলো। তুই কবে করছিস?”
পা জোড়া আপনা আপনি থেমে যায়। মৃদু হেঁসে পেছন ঘুরে বলল,
“ ওসব বিয়ের অনেক দেরী। মেয়ে রাজী হলো কিভাবে সিফাত?”
লেফটেন্যান্ট সিফাত বড় বড় কদম ফেলে অর্ণবের কাঁধে চাপ্পড় মে/রে গদগদ কণ্ঠে বলল,
“ সেই কিশোরী বয়সের প্রেম। আমার-ই চাচাতো বোন। বুঝলি? তাই এবার আর রক্ষা পেলাম না। সবাই মিলে ওই রা-ক্ষুসিকে গলায় ঝুলিয়ে দিলো। ”
“ দাঁড়া এখন-ই ভাবীকে জানাচ্ছি। তোর হাড়গোড় ভেঙ্গে জলে ভাসাবে।”
সৌরভের কথায় প্রত্যেকে উচ্চস্বরে হেঁসে। অর্ণব মৃদু হেঁসে হঠাৎ আনমনা হয়ে গেলো। হাঁটার তালে তালেই চোখে ভাসলো স্নিগ্ধার মায়াবী শীতল মুখ। ভাসা ভাসা চোখে লাজুক হাঁসতো। অস্থিরতা বেড়ে অর্ণবের ভেতরটা খামচে ধরলো। চোখ বন্ধ করতেই হাঁসফাঁস করে হৃদয়টা। স্নিগ্ধার দেওয়া গিফট এখনও খুলা হয়নি। ভেবেছিল, সিলেট ফিরে খুলবে কিন্তু আসার পরেই কর্ণেল মিশনে পাঠায় তাদের। এই দেশ, এই সম্মানের চাকরির সুবাদে ভেতরের ইমোশন সব ফেলে ছুটে গিয়েছিল দূরে। মেয়েটার সঙ্গে না করেছে যোগাযোগ। আর না গিফট খুলার সময় পেয়েছে। তবে, এখন ফিরেই দেখবে। মেয়েটি মায়া-মমতার নিয়ে স্পেশাল ভাবে কি দিয়েছে তাকে।
সঙ্গের তিনজন বড়বড় কদমে উপরে চলে যেতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। আকাশ পানে তাকিয়ে অর্ণব বিড়বিড় করে,
“ মিস ইউ স্নিগ্ধা! আপনাকে ভীষণ ভাবে মিস করছি। ”
অতঃপর কি মনে হতেই কল করলো তৃষ্ণার নম্বরে। রিসিভ হতেই অস্থিরতায় বলল,
“ কেমন আছিস?”
“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া। তুমি কেমন আছো?”
অর্ণব হালকা ঢোক গিলে জবাব দেয়,
“ভালো। শুন একটা কাজ দিবো। করতে পারবি?”
“ দাঁড়াও! আম্মুকে ডাকি। তোমার জন্য একদম পা/গল হয়ে গেছে। নাও কথা বলো আগে।”
তৎক্ষনাৎ সাবধানে করলো বোনকে,
“ নাহ। সময় নেই। তৃষ্ণা!”
কপাল কুঁচকে পড়ার টেবিলে বসলো মেয়েটা। বলল,
“ বলো।”
“ মিষ্টিকে ডেকে দিতে পারবি?”
ইতস্ততভাবে কথা বলেই হাঁসফাঁস করলো। তৃষ্ণার কপাল আরোও কুঁচকালো।
“ মিষ্টি? কিন্তু কেনো?”
“ পড়ে বলছি আগে ডেকে দে। যা।”
তৃষ্ণা ফোন কানে তুলে ব্যস্তপায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে। হঠাৎ বলল,
“ মিষ্টিও দুদিন পরপর তোমার খবর কেনো নেয় বলো তো। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কিছু তো হয়েছে। যা আমি জানিনা।”
বলেই থামলো। ফের সন্দিহান দৃষ্টিতে বলল,
“ ভাইয়াাা! বাই এনি চান্স! ওই পুঁচকে মেয়েটাকে তোমার ভাল্লাগে? এমা! শেষে কিনা ও?”
অর্ণবের মেজাজ চটে যায়। রুক্ষ গলায় বলল,
“ চুপ। এসব বাজে ভাবনা মাথাতেও আনবি না। ওর কাছে একটা জিনিস কিনতে দিবো। ভেবেছিলাম, সামনের জন্মদিনে সারপ্রাইজ হবি তুই। কিন্তু সব ঘেটে দিলি। ”
বোকা তৃষ্ণা বুঝতেই পারলো না ওর ভাই সুকৌশলে বিষয়টা চাপা দিয়েছে। উল্টো মেয়েটা খুশিতে চিৎকার করলো। নাচতে নাচতে বলল,
“ সত্যি ভাইয়া। আমার লক্ষী ভাই। কত ভালো তুমি। আচ্ছা মিষ্টি কেই বলো। মনে কর আমি কিছু জানিনা। তবে, দামী গিফট দিতে হবে।”
“ অবশ্যই.”
বলেই মিটিমিটি হাঁসলো অর্ণব। দ্রুত খুশিতে মেয়েটি মিষ্টিকে ডেকে দেয়। তৎক্ষনাৎ কানে তুলেই বলল,
“ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া!”
সালামের উত্তর নিয়ে কেমন যেনো হয়ে গেলো ও। আকাশ পানে তাকিয়ে অশান্ত বুকে হাত বুলালো। চোখ বন্ধ রেখে অস্থির কণ্ঠে বলল,
“ দুষ্টু মিষ্টি! স্নিগ্ধার নম্বর লুকিয়ে মেসেজ কর আমাকে। কুইক! প্রমিজ ঢাকা ফিরে বড়সড় ট্রিট দেবো। ”
হাঁসলো মিষ্টি। তৃষ্ণা কোণা চোখে লক্ষ্য করছে। অর্ণবের কথা শুনেনি। তবে ভাবছে। মিষ্টি অতন্ত্য বুদ্ধিমত্তার সহিত জবাব দেয়,
“ নিশ্চয়ই ভাইয়া। দিয়ে দিবো। ”
অণর্ব হেঁসে কল কেটে দেয়।
চৈতী ব্যস্ত ভঙ্গিতে হাঁটছে চিকন গলিতে। স্টুডেন্টকে পড়ানোর আজ ইচ্ছে না থাকলেও যেতেই হবে। কেনো জানি মন স্বায় দিচ্ছে না। তবুও ক্লান্ত দেহটা টেনেটুনে ২৫ মিনিটের পথ হেঁটে নির্দিষ্ট চারতলা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়াল। মুখে মৃদু হাঁসি ঝুলিয়ে গেইটের ভেতর প্রবেশ করে। ফ্ল্যাট আসতেই প্রতিদিন মিথিলা দরজা খুললেও আজ তার ব্যতিক্রম হলো। দরজা খুলেন আহিতের বাবা ইলিয়াস খান।
“ অবশেষে আসলে চৈতী। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”
বিরক্তে রি রি করলো শরীর। তবুও চৈতী সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। কিন্তু সামনের লোকটা অদ্ভুত নজরে তার গায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা অন্যদিকে ঘুরলেও বুঝতে পারছে, তাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছেন তিনি। চৈতীর আগাগোড়া বিশ্রী কালো চোখ দিয়ে বাজেভাবে দেখছে, এটা ভাবতেই মেজাজ চটে মাথা গরম হচ্ছে ।
এ লোকের সঙ্গে তার বেশী দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। গুটি কয়েক দিন বাসায় আসে ছুটিতে। বরিশাল নাকি কিসের বিজনেস। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই মেয়েটা লক্ষ্য করে, বাকি মানুষের মতো উনার দৃষ্টিতে স্নেহ নেই। বরং কুদৃষ্টি তে রয়েছে শুধুই কা/মনা। সেই থেকেই মেয়েটা ভয়ে থাকে। চায়না, লোকটা বাসায় থাকুক। কয়েকবার মিথিলাকে জানাতে চেয়েও থেমে গেছে। কোনো মেয়েই নিজের স্বামীর প্রসঙ্গে অপরিচিত একটি মেয়ের মুখ থেকে খারাপ কথা শুনতে রাজি নয়।
পাছে যদি তাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে বদনাম করে? এ শহরে কেউ নেই তার। কে রক্ষা করবে? নিজের ইজ্জত সহ পড়াশোনাও শেষ হয়ে যাবে। সেই নিয়ে শত কল্পনা জল্পনা করে চুপ থেকেছে। তবে, চৈতী থেমে থাকেনি। অন্য টিউশন খুঁজার চেষ্টা করছে। এই ভাঙা মাস পড়িয়ে বাদ দেওয়ার চিন্তা ওর। নিহাৎ একটু বেশী টাকা এজন্যই ওসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলেছিল। তাছাড়া এ মাসে লোকটা আর আসেও নি। আজই হয়তো এসেছে।
চৈতী প্রত্যেকবারেই লক্ষ্য করেছে, যতই শালীনতা বজায় রেখে উড়না সম্পূর্ণ গায়ে জরিয়ে আসুক না কেনো লোকটার দৃষ্টি খুবই বাজে। বেহায়ার মতো সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকে। আজও ওই কুদৃষ্টি উপেক্ষা করতে পারলো না। যা একপ্রকার কষ্ট দেয়। কিন্তু প্রত্যেকবার মিথিলা থাকায় সাহস পায় সে। নিজের মতো পড়িয়ে চলে যায়। লোকটা পড়ার ছলে কথা বলতে আসলে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যায়।
চৈতী ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করে আশেপাশে তাকাল। কিন্তু মিথিলাকে দেখতে পেলো না। মেয়েটি সন্দিহান চোখে এগিয়ে আহিতের রুমে উঁকি দিল। কিন্তু রুম খালি। ওরা কই তাহলে? বাসায় কি কেউ নেই? তবে জানালো না কেনো মিথিলা? তৎক্ষনাৎ কপাল কুঁচকে গেলো তার। পেছন ঘুরে কি মনে হতেই বুক কেঁপে উঠে। অজানা ভয়ে হৃৎস্পন্দনের মাত্রা অস্বাভাবিক হতেই ঘামতে শুরু করলো। মিথিলা, আহিত ওরা আজ কোথায়? খালি বাসায় একা পেয়ে এই সুযোগে সামনের বাজে লোকটা কিছু করে বসবে না তো? করলেও রক্ষা পাবে কিভাবে? এ কোন বাঘের গুহায় নিজ ইচ্ছায় আটকা পড়লো? মেয়েদের সবচেয়ে দামী সম্মান-ইজ্জত চৈতী কিভাবে রক্ষা করবে? ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতি তে আগে কখনওই পড়েনি সে। কপাল বেয়ে দৃশ্যমান হলো, বিন্দু বিন্দু ঘামের দেখা। মেয়েটা চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলো। তবুও এই নির্জন বাসায়, ভয় আরোও দ্বিগুণ কাবু করে ফেলছে। নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার প্রয়াস চালিয়ে ঠোঁটে প্লাস্টিকের হাঁসি ঝুলিয়ে বলল,
“ আহিত কোথায় ভাইয়া? ”
লোকটা ততক্ষনে শক্ত কাঠের দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়েছে। কা/মুক চোখে ঠোঁটে বিশ্রী হাঁসি ফুটিয়ে ধীরপায়ে ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। যত পা বাড়াচ্ছে, ততই যেনো চৈতীর ছোট্ট কায়া শিউরে উঠছে। মেয়েটি চট করেই এবার পুরোপুরি বুঝে ফেললো। নিশ্চয়ই ভালো উদ্দেশ্য থাকলে, আগেই চলে যেতে বলতো। আজ সর্বনাশ ডেকেছে নিজের। কেনো আসলো ও? বিপদ বুঝি এভাবেই আসে? এই শহরে অপরিচিত ফ্ল্যাট থেকে পালাবে কিভাবে? নিজের ব্যাগ চেপে ধরে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। লোকটি ওর একদম নিকটে এসে ঝুঁকে গেলো। চৈতীর মুখে ফু দিয়ে বিশ্রী হাঁসি টেনে বলল,
“ ওদের কি প্রয়োজন চৈতী? শুধু শুধু রোমান্টিক মুহূর্তে প্রবলেম ক্রিয়েট করবে। উটকো ঝামেলা কিছুসময়ের জন্য বিদেয় করেছি। তারপর আমাকে পেয়ে ভালো লাগছে না? আমার কতদিনের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। তোমাকে সম্পূর্ণ নিজের করে পাচ্ছি চৈতী। ”
খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ২১
বলেই থামলেন তিনি। গায়ের শার্টে হঠাৎ হাত দিলেন। এরপর একটা একটা করে খুলতে খুলতে বলল,
“ সামনে জলজ্যান্ত আ-গুন ঘুরঘুর করলে কোনো ব্যাটা ঠান্ডা থাকে? এই রূপ প্রথম যেদিন দেখেছিলাম, ওদিন-ই মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সুযোগে ছিলাম কবে এমন দিন পাবো। টসটসে সুস্বাদু এই নিখুঁত দেহে আমার হাত না পেলে যে অনর্থ ঘটবে। তোমার মসৃণ ঠোঁট দুটো ছিঁড়ে খাবো চৈতী। কাছে এসো। ভালোবাসার সাগরে ভেসে যাই। হাতে সময় কম। ভুলেও বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করবে না। চিৎকার চেঁচামেচি করে আমার মাথা খারাপ করলে জ্যান্ত ক/বর দেবো। এর থেকে বরং আনন্দ করো। তবে, সুখের মুহূর্তে চিৎকার করলে ক্ষতি নেই। বরং আনন্দ পাবো। এতেই দুজনের লাভ। ভয় পেও না স্বাভাবিক হও। আজকের বিশেষ মুহূর্ত কেউ জানবে না প্রমিজ। এই বদ্ধ দেয়ালের আড়ালে শুধু তুমি এবং আমি। ”